পললশঙ্কু ও বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্য

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে পললশঙ্কু ও বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্য কী? এই প্রশ্ন দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, পললশঙ্কু ও বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্য কী? প্রশ্নটি আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।

পললশঙ্কু –

পর্বত থেকে সমভূমিতে নেমে আসার সময় নদীর গতিপথের ঢাল হঠাৎ কমে যাওয়ায় নদীর গতিবেগ হ্রাস পায়। ফলে নদী আর পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে আসা নুড়ি, বালি, কাঁকর, কাদামাটি, শিলাচূর্ণ, পলিমাটি প্রভৃতি বহন করতে পারে না। তখন নদী তার দুই তীরে এগুলো সঞ্চয় করে এবং বিভিন্ন ভূমিরূপ তৈরি করে। নদী তার বাহিত বোঝা সম্পূর্ণ বহন করতে না পেরে পর্বতের পাদদেশে পলি, বালি, কাঁকর, শিলাখণ্ড প্রভৃতি সঞ্চয় করে হাতপাখার মত একটি ত্রিকোণাকার শঙ্কু আকৃতির ভূমিরূপ গড়ে তোলে। একে পলল ব্যজনী বা পলল শঙ্কু বলে।

পললশঙ্কুর গঠন –

  • নদীর গতিপথের ঢাল হঠাৎ কমে যাওয়ায় নদীর গতিবেগ হ্রাস পায়।
  • নদী তার বাহিত বোঝা বহন করতে না পেরে পর্বতের পাদদেশে পলি, বালি, কাঁকর, শিলাখণ্ড প্রভৃতি সঞ্চয় করে।
  • এই সঞ্চয়ের ফলে হাতপাখার মত একটি ত্রিকোণাকার শঙ্কু আকৃতির ভূমিরূপ তৈরি হয়।
  • নদী পলল ব্যজনীর ওপর দিয়ে বিভিন্ন শাখায় ভাগ হয়ে প্রবাহিত হয়।
  • পলল ব্যজনী প্রায়-গোলাকার ভূমিরূপ দেখতে অনেকটা হাতপাখার মতো হয়।

পললশঙ্কুর উদাহরণ

  • হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে ঘর্ঘরা, গণ্ডক প্রভৃতি নদীর গতিপথে পলল ব্যজনী দেখা যায়।

বদ্বীপ

নদীর নিম্নগতিতে, বদ্বীপ গঠন হলো নদীর একটি প্রধান কাজ। এই অংশে, নদীর ঢাল ও গতিবেগ কমে যায়, ফলে নদীতে ভাসমান পলি, বালি, নুড়ি, কাঁকর, কাদা ইত্যাদি বহন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে নদীবাহিত পদার্থসমূহ মোহানার কাছে অগভীর সমুদ্রতলে জমা হতে থাকে। সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সংস্পর্শে এই পদার্থগুলো আরও জোটবদ্ধ হয়ে উঁচু হতে থাকে।

এই প্রক্রিয়ার ফলে নদী শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়। দুটি শাখার মধ্যবর্তী জমাট পলি ধীরে ধীরে ‘ব’ আকৃতির ভূমিরূপ গড়ে তোলে। এই ভূমিরূপকেই বদ্বীপ বলা হয়।

যদিও বেশিরভাগ বদ্বীপ গ্রিক অক্ষর ‘Δ’ (ডেল্টা) এর মতো দেখতে হয়, তবে কিছু কিছু বদ্বীপ বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে।

পললশঙ্কু ও বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্য

পললশঙ্কু ও বদ্বীপের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি হল —

পললশঙ্ক ও বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়পললশঙ্কুবদ্বীপ
নদীপ্রবাহনদীর মধ্য বা সমভূমি প্রবাহে পললশঙ্কু গঠিত হয়।নদীর নিম্ন বা বদ্বীপ প্রবাহে বদ্বীপ গঠিত হয়।
অবস্থানপললশঙ্কু পর্বতের পাদদেশে দেখা যায়।বদ্বীপ নদীর ঠিক মোহানার কাছে দেখা যায়।
আয়তনপললশঙ্কু আয়তনে ক্ষুদ্রাকার হয়।বদ্বীপ আয়তনে সুবিশাল হতে পারে।
উপাদানপললশঙ্কু গঠিত হয় নুড়ি, প্রস্তরখণ্ড, বালি, পলি ইত্যাদি উপাদান দিয়ে।বদ্বীপ গঠিত হয় প্রধানত পলি ও কাদা দিয়ে।
আকৃতিপললশঙ্কুর আকৃতি ত্রিকোণাকার বা পাখার মতো হয়।বদ্বীপের আকৃতি ত্রিকোণাকার, পাখির পায়ের মতো, করাতের দাঁতের মতো ও খাড়ির মতো হয়।

আরও পড়ুন – মরুদ্যান কি? মরূদ্যান কীভাবে সৃষ্টি হয়?

এই আর্টিকেলে, আমরা পললশঙ্কু এবং বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্যগুলি আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে এই দুটি ভূমি রূপ নদীর পলি দ্বারা গঠিত হলেও, তাদের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।

পললশঙ্কু নদীর মোহনায় পলি জমা হয়ে তৈরি হয়। এটি ত্রিকোণাকার বা পাখার মতো আকৃতির হয়। পললশঙ্কু সাধারণত নদীর তীরে অবস্থিত হয় এবং নদীর প্রবাহের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।

বদ্বীপ নদীর তীরে পলি জমা হয়ে তৈরি হয়। এটি বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে, যেমন ত্রিকোণাকার, পাখির পায়ের মতো, করাতের দাঁতের মতো, বা খাড়ির মতো। বদ্বীপ নদীর তীরে অবস্থিত হতে পারে অথবা নদীর মাঝখানেও তৈরি হতে পারে।

Share via:

মন্তব্য করুন