এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।
ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদকালে বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে প্রায় 40 বছর ধরে যে সমস্ত হিংসাত্মক প্রচেষ্টা চলেছিল, তা সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন নামে পরিচিত। চরম প্রতিবাদ সৃস্টির মাধ্যমে ব্রিটিশ ব্যবস্থাকে বিকল করা ও ভারত মাকে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করাই ছিল সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য। এই সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা ছিল অতি সক্রিয়। তারাই মিটিং-মিছিল, ধর্মঘট, পিকেটিং, ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ব্যাপক আকার দান করেছিলেন। তাদের সক্রিয়তা ব্রিটিশ সমাজের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
অনুশীলন সমিতি –
বাংলায় স্বদেশী আন্দোলনের যুগে সতীশ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে 1902 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় অনুশীলন সমিতি। প্রকাশ্যে এই সমিতি ছিল শরীরচর্চা ও পড়াশোনার কেন্দ্র। তবে বঙ্গভঙ্গের পরে এই সমিতি গোপনে সশস্ত্র বিপ্লবীবাদের আদর্শ প্রচার করতে থাকে।
যুগান্তর দল –
ভগিনী নিবেদিতা ও অরবিন্দ ঘোষের উৎসাহে 1906 সালে যুগান্তর দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের এখান থেকে অস্ত্রশিক্ষা ও শারীর শিক্ষা দেওয়া হতো। এখান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ ও বোমা তৈরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলত।
এন্টি সার্কুলার সোসাইটি –
স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে স্কুল এবং কলেজ থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের সাহায্যের জন্য ছাত্রনেতা শচীন্দ্র প্রসাদ বসু 1905 খ্রিস্টাব্দে এন্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেও ছাত্র-ছাত্রীদের অস্ত্রশিক্ষা দেওয়া হতো এবং সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা হতো।
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (B.V) –
1928 খ্রিস্টাব্দের কলকাতা জাতীয় কংগ্রেসের সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে যে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠিত হয়, তার মধ্যে থেকে সদস্য সংগ্রহ করে ঢাকায় হেমচন্দ্ৰ ঘোষ এর নেতৃত্বে গঠিত হয় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স। এই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর সদস্যরা একাধিক সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যথা –
- এই দলের সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র বিনয় কৃষ্ণ বসু বাংলা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ও ঢাকা পুলিশ সুপারকে গুলি করে হত্যা করেন।
- বিনয় বসু এবং দলের অপর দুই সদস্য বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তের সঙ্গে রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করেন এবং কারা বিভাগের অধিকর্তাকে হত্যা করেন।
ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী –
অত্যাচারী বিচারপতি কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে, বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী ভুল করে ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যা করেছিলেন। প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করলেও, ক্ষুদিরাম ধরা পড়ে এবং ফাঁসিতে প্রাণ দেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন –
মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণ ছাত্রদল (যথা – গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত প্রমুখ) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন এবং টেলিফোন টেলিগ্রাফ লাইন ধ্বংস করে সেখানে এক স্বাধীন বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বীণা দাস –
ছাত্রী বীণা দাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান চলাকালীন গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। বিচারে তার 9 বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল।
রশিদ আলী দিবস –
1946 খ্রিস্টাব্দের 11 ফেব্রুয়ারি আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন রশিদ আলীকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলে, ছাত্রসমাজ উত্তাল হয়ে ওঠে এবং ব্যাপক বিক্ষোভ ও ধর্মঘট সংঘটিত হয়। একইসঙ্গে 12 -ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে তারা রশিদ আলী দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
উপসংহার –
এভাবেই ভারতের ছাত্র সমাজ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের দ্বারা ভারতের বৃহত্তর গণ আন্দোলনের ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছিল এবং আত্মবলিদানের মাধ্যমে বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন