মাধ্যমিক ইতিহাস – ইতিহাসের ধারণা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Rahul

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের প্রথম অধ্যায় “ইতিহাসের ধারণা” এর থেকে “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

মাধ্যমিক ইতিহাস - ইতিহাসের ধারণা - সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন
Contents Show

মাধ্যমিক ইতিহাস – ইতিহাসের ধারণা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ইতিহাস কী?

সমাজবদ্ধ মানুষের অতীতাশ্রয়ী জীবনকাহিনীই হল ইতিহাস। এর মূল বিষয় হল সময় মানুষ ও সমাজ।অতীতের রাজনৈতিক বিষয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কাজকর্মও ইতিহাসের অন্তর্গত।

ঐতিহাসিক তথ্য কী?

মানবসমাজের বিভিন্ন ঘটনা সমসাময়িক দলিল – দস্তাবেজ বা অন্যান্য লিখিত ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের মধ্যে নিহিত থাকে। একজন ঐতিহাসিক বা গবেষক এই সমস্ত উপাদান থেকে সঠিক তথ্য নির্বাচন করে ঐতিহাসিক সত্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন। এধরনের সঠিকতথ্যই ঐতিহাসিক তথ্য নামে পরিচিত।

ঐতিহাসিকের কাজ কী?

ঐতিহাসিকের কাজ হল তথ্য উপস্থাপন ও তা বিশ্লেষণ। ঐতিহাসিক লিওপোল্ড ভন র‍্যাঙ্কের মতে, যেমনভাবে ঘটনা ঘটেছিল ঠিক তেমনটাই উপস্থাপিত করা হল ঐতিহাসিকের কাজ। অন্যদিকে ঐতিহাসিক লর্ড অ্যাকটনের মতে, ঐতিহাসিকের দেওয়া তথ্যের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ ছাড়া ইতিহাস অর্থহীন।

আধুনিক ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গুলি চিহ্নিত করো।

আধুনিক ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি হল – যুক্তিবাদী, আপেক্ষিকতাবাদী, দৃষ্টবাদী, মার্কসবাদী, প্রত্যক্ষবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। এছাড়াও রয়েছে অ্যানাল গোষ্ঠীর মতবাদ, জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, নিম্নবর্গীয় মতবাদ এবং সামগ্রিক সমাজ বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।

প্রচলিত ইতিহাসচর্চা কী?

প্রচলিত ইতিহাস বলতে বোঝায় রাজকাহিনী। রাজার যুদ্ধ জয়, দেশ শাসন, রাজস্ব আদায় ও সাংবিধানিক কাজকর্মের ইতিহাসই ছিল প্রচলিত ইতিহাসচর্চার মূল বিষয়। বিংশশতকের গোড়া থেকে এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় সমাজ ও অর্থনীতির অন্যান্য বিষয়গুলিও যুক্ত হতে শুরু করে।

নতুন সামাজিক ইতিহাস কী?

1960 ও 1970 -এর দশকে নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক আন্দোলনের কারণে ঘটনার নতুন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের সূচনা হয়। ফলে ইউরোপ ও আমেরিকায় ইতিহাসচর্চায় সমাজের অবহেলিত দিকগুলিসহ সমগ্র সমাজের ইতিহাস রচনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এভাবে গড়ে ওঠে নতুন সামাজিক ইতিহাস এবং এর বিভিন্ন দিকগুলি হল — সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, জাতি-বর্ণ ও জাতিবিদ্বেষ, হিংসা ও সম্প্রীতি।

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার প্রতিষ্ঠান ও তার মুখপত্রের নাম কী?

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার প্রতিষ্ঠানটি হল দ্য সোশ্যাল সায়েন্স হিস্ট্রি অ্যাসোশিয়েশন (১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ)। এটির মুখপত্র হল সোস্যাল সায়েন্স হিস্ট্রি।

ভারতে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার কয়েকটি কেন্দ্রের নাম লেখো।

ভারতে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার কয়েকটি কেন্দ্রের নাম হল দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার সেন্টার ফর হিস্টরিক্যাল স্টাডিজ সেন্টার।

খেলার ইতিহাস বলতে কী বোঝায়?

আধুনিক সভ্যতায় অবসর বিনোদন ও শারীরিক দক্ষতা প্রদর্শনের একটি বিশেষ ক্ষেত্র হল খেলা বা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, টেনিস, গল্ফ, দাবা, রাগবি প্রভৃতি খেলার উদ্ভব, বিবর্তন, প্রসার ও প্রভাব সম্পর্কে শুরু হওয়া ইতিহাসচর্চা খেলার ইতিহাস নামে পরিচিত।

ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলার উদ্ভবকে কিভাবে চিহ্নিত করবে?

আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে ইংল্যান্ডে স্টিক অ্যান্ড বল নামক খেলা থেকেই ক্রিকেট খেলার উদ্ভব ঘটেছে। এই খেলা ছিল প্রাক শিল্প বিপ্লব পর্বের খেলা – তাই হস্তনির্মিত ব্যাট ও স্ট্যাম্প বেল, বল হত কাঠের তৈরি। আঠারো শতকে এই খেলা একটি পরিণত খেলার চরিত্র লাভ করে।

ক্রিকেট খেলার প্রাথমিক পর্বের কয়েকটি দিক চিহ্নিত করো।

প্রিয়ার ক্রিকেট খেলার প্রাথমিক পর্বের কয়েকটি দিক হল – 1. নির্দিষ্ট মাপের বল ও ব্যাট এবং ২২ গজের পিচ ও উইকেট ব্যবহৃত হত। 2. খেলার মাঠের আকৃতি ডিম্বাকৃতি হলেও এর দৈর্ঘ্য বা আয়তনের কোনো নির্দিষ্ট মাপ ছিল না। 3. প্রথমদিকে এই খেলার সময়সীমা নির্দিষ্ট না থাকলেও পরে তিনদিনের টেস্ট বা নির্দিষ্ট ওভারের একদিনের ম্যাচ শুর হয়।

ভারতে কিভাবে ক্রিকেট খেলার সূচনা হয়?

1721 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের সূত্র ধরেই ভারতে ক্রিকেট খেলার সূচনা হয়। তবে তা ভারত ইংরেজ সামরিক বাহিনি ও শ্বেতাঙ্গদের ক্লাব বা জিমখানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আঠারো শতকের শেষে ভারতে প্রথম ক্রিকেট ক্লাব রূপে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় – ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব (1792 খ্রিস্টাব্দ )।

ভারতে কীভাবে হকি খেলার সূচনা হয়?

ভারতে মূলত ইংরেজ সৈন্যবাহিনীর হাত ধরেই হকি খেলার প্রসার ঘটে এবং কলকাতায় ভারতে প্রথম হকি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় (1885-86 খ্রিস্টাব্দ)। বিশ শতকে 1928 খ্রিস্টাব্দে অলিম্পিক গেমসে ভারত প্রথম অংশগ্রহণ করে এবং শেষপর্যন্ত ফাইনাল খেলায় হল্যান্ডের কাছে ভারত 3-0 গোলে পরাজিত হয়। ধ্যানচাঁদ ছিলেন ভারতের একজন বিখ্যাত হকি খেলোয়াড়।

পোলো খেলার সূচনা ও বৈশিষ্ট্য লেখো।

পোলো খেলার উদ্ভব হয় ইংল্যান্ডে। ঘোড়ার পিঠে চেপে পোলো স্টিকের সাহায্যে পোলো বলকে নিয়ন্ত্রণ করে বিপক্ষ দলকে পরাজিত করাই এই খেলার রীতি। ভারতে ইংরেজ শাসক ও সৈন্যদের মাধ্যমেই পোলো খেলার প্রসার ঘটেছিল।

খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝায়?

মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত ইতিহাসচর্চা খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা নামে পরিচিত। এর মূল বিষয় হল দেশী ও বিদেশি খাবার গ্রহণ বা বর্জন, দেশজ ও ঔপনিবেশিক খাদ্যসংস্কৃতির মতে সংঘাত, স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে সামঞ্ঝস্য রেখে খাদ্যাভ্যাস, বিভিন্ন ধরনের খাবারের উদ্ভব ও তার বিবর্তন আলোচনা।

ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে বাংলায় খাদ্যাভ্যাসে কী পরিবর্তন এনেছিল?

ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে বাঙালির ভাত, ডাল,সবজি, রুটি ও আমিষ (মাছ, মাংস) খাবারের পাশাপাশি পাশ্চাত্য খাবারের প্রতিও আকৃষ্ট হয়েছিল। তবে এই আকর্ষণ শহরে বসবাসকারী ইংরেজি শিক্ষিত পেশাজীবি (শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও জমিদার শ্রেণি) শ্রেণির একাংশের মধ্যেই সীমিত ছিল। এঁরা শাসক ইংরেজদের ভোজনসভায় উপস্থিত হয়ে এদেশীয় সামাজিক বিধিনিষেধ ভেঙে নিষিদ্ধ মাংস, চা, কফি, সিগারেট ও মদ্যপান করত।

শিল্পচর্চার ইতিহাস বলতে কী বোঝায়?

কলাশিল্পী যখন তার শরীরের কোনো নির্দিষ্ট বা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে আবেগ বা ভালো বক্তব্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তখন তা শিল্পচর্চা নামে পরিচিত হয়। এর চারটি দিক, যথা — সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র। শিল্পচর্চার উদ্ভব, বিবর্তন ও প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করাই শিল্পচর্চার ইতিহাস নামে পরিচিত।

নৃত্যশিল্পের ইতিহাসের কয়েকটি দিক চিহ্নিত করো।

ছন্দ বা গানের তালে তালে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালনই হল নৃত্য। শাস্ত্রীয় ও ধর্মীয় নৃত্যের পাশাপাশি ভাবাবেগ প্রকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের নৃত্য রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিপ-হপ নৃত্য, চীনের ইয়াংকো নৃত্য, ভারতের কথক, ফ্রান্স ও রাশিয়ার ব্যালে নৃত্য।

চলচ্চিত্রের ইতিহাস বলতে কী বোঝায়?

1830-এর দশকের পরবর্তীকালে বাণিজ্যিকভাবে ক্যামেরার ব্যবহার ও স্থিরচিত্রের পাশাপাশি উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে উন্নত ক্যামেরার মাধ্যমে সচল ছবি তোলার প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন ঘটে। প্রথমদিকে কোনো ঘটনা বা গল্পকে কেন্দ্র করে তৈরি এই সচল ছবি ছিল নির্বাক। শেষ পর্যন্ত বিশ শতকের গোড়ায় আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে সবাক ও সচল ছবি তৈরি হয়, যা চলচ্চিত্র নামে পরিচিত।

পোষাক-পরিচ্ছদের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধির ধারণাটি কী?

আঠারো ও উনিশ শতকে ইউরোপের কয়েকটি দেশে নারী পোষাক ছিল বেশ আঁটোসাঁটো অথচ বস্ত্রবহুল যা নারীকে স্বাচ্ছন্দের বদলে অস্বস্তি প্রদান করত। এইরূপ পোষাক পরিধানের ফলে নারীর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেত, অর্থাৎ এইরূপ পোষাক পরিধান অসুস্থতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শরীরের পক্ষে আরামদায়ক এবং হাঁটা চলার সুবিধার্থে পোষাক-পরিচ্ছদ রীতিতেও পরিবর্তন আসে।

উনিশ শতকে ভারতে পারসি ও বাঙালিবাবুদের পোষাক কেমন ছিল?

উনিশ শতকে ক্রমশ ভারতে পাশ্চাত্যরীতির পোষাক পরিচ্ছদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এক্ষেত্রে প্রথমে পারসি ও পরে বাঙালি বাবুদের পোষাক পরিচ্ছদে পরিবর্তন আসে। পারসিরা ঢোলা ফুল প্যান্ট ও কলারবিহীন লম্বা কোট পরিধান করত। আবার বাঙালিবাবুরা ধুতির উপর কোট, মাথায় টুপি ও পায়ে বুট জুতা ব্যবহার করত।

যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস বলতে কী বোঝো?

প্রিয়ার জল, স্থল ও আকাশপথের যানবাহনের মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া আসা এবং একস্থানে বসে টেলিগ্রাফ টেলিফোন-মোবাইল ফোন, চিঠিপত্র, ইন্টারনেট, ফ্যাক্স-এর মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানের খবর সংগ্রহ বা প্রেরণ ব্যবস্থার উপর গড়ে ওঠা ইতিহাসচর্চা যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস নামে পরিচিত। এই ইতিহাসচর্চায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের উপর যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাবকে চিহ্নিত করা হয়।

ভারতে রেলপথ ব্যবস্থার প্রবর্তন কীভাবে হয়?

ভৌত্তর মূলত অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্যে ইংরেজ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে রেলপথ ব্যবস্থার প্রবর্তন করে (২৬ এপ্রিল, ১৮৫৩ খ্রি.)। প্রথমে মহারাষ্ট্রের বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ছিল এর ব্যাপ্তি। পরবর্তীকালে গ্যারান্টি প্রথার মাধ্যমে ভারতে রেলপথের বিকাশ ঘটে।

ভারতে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রবর্তন কীভাবে হয়?

ভারতে রেলপথের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামরিক প্রয়োজনে টেলিগ্রাফের বিস্তার ঘটেছিল। 1851 খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রথমে কয়েক মাইল জুড়ে টেলিগ্রাফের বিস্তার ঘটলেও 1856 খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে ৪৬টি টেলিগ্রাফ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং 4,250 মাইল এলাকা টেলিগ্রাফ যোগাযোগের আওতায় আসে।

স্থানীয় ইতিহাস বলতে কী বোঝায়?

ভৌগোলিকভাবে স্থানীয় প্রেক্ষিতে স্থানীয় সম্প্রদায় বা ব্যক্তি বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইতিহাসই হল স্থানীয় ইতিহাস। স্থানীয় জনশ্রুতি, মিথ বা অতিকথ। মৌখিক পরম্পরাকে ভিত্তি করে স্থানীয় ইতিহাস রচনা করা হয়। এভাবে স্থানীয় ইতিহাসসমূহের সমন্বয়ে দেশের ইতিহাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।

শহরের ইতিহাস কী?

শহরের উদ্ভব, বিকাশ, বিস্তার ও অবক্ষয় সম্পর্কিত ইতিহাস চর্চা হল শহরের ইতিহাস। এছাড়া শহরের বাসিন্দা ও তাদের সমাজবিন্যাস এবং তাদের কার্যকলাপসহ শহরের আর্থ-রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে চিহ্নিত করাও এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য 1920-র দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শহরের ইতিহাসচর্চার সূচনা হয়।

সামরিক ইতিহাস বলতে কী বোঝায়?

রাষ্ট্রের উদ্ভব ও তার বিস্তার এবং ভৌমিক সাম্রাজ্যবাদ ও তার প্রসারকে কেন্দ্র করে প্রাচীনযুগেই যুদ্ধের সূচনা হয়।যুদ্ধ ইতিহাস অর্থাৎ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধাস্ত্রের বিবর্তন, যুদ্ধের প্রকৃতি ও প্রভাবকে বিশ্লেষণ করার প্রচেষ্টা থেকেই গড়ে উঠেছে সামরিক ইতিহাস। এই প্রসঙ্গে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ঠান্ডাযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার কথা বলা যায়।

পরিবেশের ইতিহাস কী?

পরিবেশের অর্থাৎ প্রকৃতি জগতের সঙ্গে মানবসমাজের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ইতিহাসই হল পরিবেশ ইতিহাস। পৃথিবী সৃষ্টির কাল থেকে মানুষের আবির্ভাব এবং পশুশিকারী জীবন থেকে আধুনিক মানব সভ্যতার উদ্ভবের পশ্চাতে পরিবেশের ভূমিকা ও অবদানকে চিহ্নিত করাই হল এই ইতিহাসের মূল বৈশিষ্ট্য। 1960 ও 1970 -এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনা থেকেই পরিবেশের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস বলতে কী বোঝায়?

বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশ ও বিবর্তন, প্রযুক্তির উদ্ভব ও তার অগ্রগতি এবং চিকিৎসাবিদ্যার বিবর্তন সম্পর্কিত ইতিহাসচর্চা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস নামে পরিচিত। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা কিভাবে মানবসমাজ ও সংস্কৃতিকে এই দেশের আর্থ-সামাজিক, বিজ্ঞান ও চিকিৎসা কেন্দ্রকে প্রভাবিত করেছে তার অগ্রগতির পরিমাপ করাই এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য। আদিম সভ্যতা থেকে আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার উত্তরণই হল এই ইতিহাসচর্চার পরিধি।

নারী ইতিহাস কী?

প্রচলিত পুরুষকেন্দ্রিক ইতিহাসের সংশোধন ঘটিয়ে সমাজ ও সভ্যতার ইতিহাসে নারীর অবদান ও ভূমিকার পুনর্মূল্যায়ন সংক্রান্ত ইতিহাসচর্চাই হল নারী ইতিহাস। এই ইতিহাসের প্রাথমিক পর্বে মহীয়সী নারীদের সম্পর্কে ইতিহাসচর্চা করা হলেও বর্তমানে সাধারণ নারীরাও এর অন্তর্গত। সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণকে চিহ্নিত করাই এই ইতিহাসের প্রধানতম দিক।

সরকারী নথিপত্র ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বনের কারণ কী?

সরকারী নথিপত্র ব্যবহারকালে সতর্কতা অবলম্বনের কারণগুলি হল — এগুলি মূলত সাম্রাজ্যবাদী ও প্রশাসকের দৃষ্টিভঙ্গিতে রচিত হয়েছে। তাই অনেকক্ষেত্রেই ঘটনার অন্য ব্যাখ্যাদানের মাধ্যমে ঘটনার গুরত্ব বৃদ্ধি বা হ্রাসের চেষ্টা করা হয়েছিল। তাই এগুলি ব্যবহারের সময় নিরপেক্ষ দৃষ্টি গ্রহণের পাশাপাশি সমসাময়িক অন্যান্য সাহিত্য, সংবাদপত্র প্রভৃতি তথ্যের সঙ্গে যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।

বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী সত্তর বছর থেকে কীভাবে স্বায়ত্বশাসনের ধারণা পাওয়া যায়?

সত্তর বছর থেকে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের কলকাতায় সামাজিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শের উদ্ভবের ইতিহাস জানা যায়। বিপিনচন্দ্র তাঁর এই আত্মজীবনীর ছাত্রাবাস না জনরাজ্য অংশে দেখিয়েছেন কলকাতায় মেসগুলিতে ছাত্ররা গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে মেস ম্যানেজার নির্বাচনের দায়বদ্ধতার সঙ্গে নিজেদের মেসজীবন পরিচালিত করত। এভাবে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক ধারণা থেকেই ভারতে স্বায়ত্ত্বশাসনের ধারণার ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায়।

জীবন স্মৃতি থেকে উনিশ শতকের বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসের কী কী উপাদান পাওয়া যায়?

রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি থেকে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের ঔপনিবেশিক শিক্ষার কথা জানা যায়। এই গ্রন্থের শিক্ষারম্ভ প্রভৃতি অধ্যায়ের বর্ণনা থেকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও নর্মাল স্কুল-এর শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্ধ এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পছন্দ হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি কিভাবে ব্যক্তি ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে উপাদান সরবরাহ করে?

জীবনস্মৃতি গ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তি ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই গ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথের ছোটোবেলায় শিক্ষারম্ভ, ঠাকুর বাড়ির স্বাদেশিকতা, নীতিচর্চা, সাহিত্যচর্চার কথা জানা যায়। এছাড়া ব্রাত্ম আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের বিকাশের কথাও জানা যায় এই গ্রন্থ থেকে।

জীবনের ঝরাপাতা নামক আত্মজীবনী থেকে উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাস কীভাবে জানা যায়?

জীবনের ঝরাপাতা নামক আত্মজীবনী থেকে উনিশ ও বিশ শতকের বাংলার অভিজাত পরিবারের কায়দা-কানুন, দুধ-মাধাইমার মাধ্যমে সন্তান প্রতিপালন ব্যবস্থার কথা জানা যায়। এছাড়া সমাজে নারীর আচার-ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কেও জানা যায়। উপরন্তু নারী শিক্ষার কথা, বাঙালি সংস্কৃতির ও সাহেবি সংস্কৃতির কথা এবং ব্রাত্মধর্ম ও ব্রাহ্মসমাজের কথাও রয়েছে এই গ্রন্থে।

জওহরলাল নেহরুর চিঠিপত্রে কিভাবে দেশীয় রাজ্যগুলির ইতিহাস রচনায় উপাদান সরবরাহ করে?

কন্যা ইন্দিরাকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠি থেকে আধুনিক ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির ইতিহাস জানা যায়। তিনি এই গ্রন্থে দেশীয় প্রজাদের অর্থে দেশীয় রাজাদের বিলাস-বাসন ও শৌখিন গাড়ি চড়ার সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি এই প্রজাদের অন্নকষ্ট, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবের কথাও জানা যায় এই গ্রন্থ থেকে।

সোমপ্রকাশ কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হয়ে উঠেছে?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিকল্পনায় প্রকাশিত সোমপ্রকাশ নামক সংবাদপত্র (যদিও প্রথমদিকে এটি ছিল। সাময়িক পত্র) ছিল নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশক। এই পত্রিকায় দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে নির্ভীক আলোচনা থাকত৷ এছাড়া ভারতস্থ ব্রিটিশ সরকারের নীতিও সমালোচিত হয়েছিল এবং একারণেই দেশীয় সংবাদপত্র আইনের মাধ্যমে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফটোগ্রাফ কিভাবে আধুনিক ভারতে ইতিহাসচর্চা উপাদান হয়ে উঠেছে?

আধুনিক ভারতের ইতিহাসে 1850-এর দশক থেকে ভারতের বিদ্রোহ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রসহ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিককে ফটোগ্রাফির আকারে ধরে রাখা শুরু হয়। আবার বিশ শতকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন মুহূর্তকেও ফটোগ্রাফির আকারে ধরে রাখা হয়েছে। এই ফটোগ্রাফগুলির নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ ভারতের আধুনিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাগুলি কী?

ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল — ইন্টারনেট-এর মাধ্যমে দেশ বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, গবেষণাকেন্দ্রের জার্নাল, মহাফেজখানা ও মিউজিয়ামের সংগৃহীত নথিপত্র ও গবেষণা গ্রন্থ থেকে তথ্য পাওয়া যায়। একই বিষয়ে অল্প সময়ে অল্পখরচে, অল্প পরিশ্রমে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। ফলে দ্রুত গবেষণা বা পাঠপ্রস্তুতি করা সম্ভব হয়।

ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি কী?

ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি হল — ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। কারণ, এই সমস্ত তথ্যের তথ্যসূত্র থাকে না। কোনো বিষয়ের আকরগ্রন্থ বা মূল নথিপত্র পাঠ করে তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে যতটা নিশ্চিত হওয়া যায় ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ততটা নিশ্চিত হওয়া যায় না।

ইতিহাস কী?

তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে সুদূর অতীত থেকে অদ্যাবধি মানবজাতির কার্যকলাপের লিখিত বৃত্তান্ত হল ইতিহাস।

ইতিহাসের অর্থ –

  • ইতিহাসের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘History’ যার উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘Historia’ এবং ল্যাটিন শব্দ ‘Histore’ থেকে।
  • গ্রিক ‘Historia’ শব্দের অর্থ যত্নসহকারে অনুসন্ধান এবং ল্যাটিন ‘Histore’ শব্দের অর্থ জ্ঞান। এর থেকে বলা যায় ইতিহাস হল অতীতের ঘটনাসমূহের সযত্ন অনুসন্ধানের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা।

ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য কী?

স্থান ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজবদ্ধ মানবপ্রগতির বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ হল ইতিহাস।

ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য –

  • মানবপ্রগতি – আদিম মানুষ কীভাবে ধীরে ধীরে সভ্য ও উন্নত হল তার কাহিনি হল ইতিহাস।
  • যূথবদ্ধতা – অনেক মানুষের একসাথে জোটবদ্ধ হওয়া বা বসবাস করা হল এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
  • স্থায়ী বসতি – বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর পর্যায় পার হয়ে মানুষ স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে, যা ইতিহাসের অপর একটি বৈশিষ্ট্য।

ইতিহাসকে জ্ঞানের প্রধান উৎস বলা হয় কেন?

ইতিহাস হল স্থান ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে মানবসভ্যতা ও তার সাংস্কৃতিক বিবর্তনের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ।

ইতিহাসকে ‘জ্ঞানের প্রধান উৎস’ বলার কারণ –

  • অতীত অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার – মানবসভ্যতার প্রগতির পথে যে সব বাধা এসেছিল, কীভাবে তার সমাধান করেছিল মানুষ এবং কীভাবে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়া উচিত – ইতিহাস সেই পথের নির্দেশ প্রদান করে।
  • বহু তথ্যের ভাণ্ডার – সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের পরিধির প্রসার ঘটেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, মানুষ, সমাজ, পরিবেশ বিকশিত হয়েছে। সব তথ্যই ইতিহাসের ভান্ডারে জমা আছে। এজন্য জি এম ট্রেভেলিয়ান ইতিহাসকে ‘অন্যান্য বিদ্যার জননী’ বলে অভিহিত করেছেন।

ঐতিহাসিক তথ্য কী? ইতিহাস তত্ত্ব বলতে কী বোঝায়?

ঐতিহাসিক তথ্য –

ঐতিহাসিক বা গবেষকরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির প্রকৃত সত্য উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন লিখিত বা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান থেকে তথ্যসরবরাহ করেন। এইসকল তথ্য ঐতিহাসিক তথ্য নামে পরিচিত।

ইতিহাস তত্ত্ব –

একজন ঐতিহাসিক ইতিহাস পুনর্গঠনের সময় যে-সমস্ত আদর্শ, নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাকে বলা হয় ইতিহাস তত্ত্ব।

ইতিহাসচর্চা (Historiography) বলতে কী বোঝো?

সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়, ফলে ইতিহাস সম্বন্ধে ধারণা বদলায়।

ইতিহাসচর্চা –

বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা ও লেখা হল ইতিহাসচর্চা।

  • বিষয়বস্তু – গতানুগতিক ইতিহাস লেখা হত রাজাদের গৌরব কাহিনি নিয়ে। নবজাগরণ, যুক্তিবাদ, জনগণের কথাও ক্রমশ ইতিহাসের বিষয় হয়ে ওঠে।
  • লিখন পদ্ধতি – বহু বিতর্কের পর ইতিহাসের লিখন পদ্ধতি তথ্যনির্ভর ও বিজ্ঞানভিত্তিক রূপ গ্রহণ করার ফলে ইতিহাসচর্চায় পরিবর্তন এসেছে।

আধুনিক ইতিহাসচর্চা কেন বৈচিত্র্যপূর্ণ?

আধুনিক ইতিহাসচর্চা বৈচিত্র্যের কারণ –

মানবসভ্যতার ইতিহাসের বহমান ধারা বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রূপ গ্রহণ করে। তাই ইতিহাসচর্চা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

  • ধারণা বদল – ইতিহাস যেহেতু বহমান, তাই ইতিহাসকে নির্দিষ্ট স্থান ও কালের সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায় না। ইতিহাস বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে।
  • ক্ষেত্র বদল – ইতিহাসের যুগান্তর, সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি গবেষণার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক ইতিহাসচর্চাও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আধুনিক ইতিহাসচর্চা কত রকমের ও কী কী?

আধুনিক ইতিহাসচর্চার প্রকারভেদ –

বর্তমানে প্রধানত ছয় প্রকারের ইতিহাসচর্চার পদ্ধতি রয়েছে।

আধুনিক ইতিহাসচর্চার প্রকারভেদের নাম – এই ছয় প্রকার ইতিহাসচর্চা হল –

  • জাতীয়তাবাদী
  • সাম্রাজ্যবাদী
  • কেমব্রিজ গোষ্ঠী
  • মার্কসবাদী
  • অ্যানাল গোষ্ঠী
  • নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চা।

বিষয়বস্তু ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের জন্য ইতিহাসচর্চার প্রকারভেদ ঘটেছে।

ইতিহাসচর্চায় ভিকোর মতামত কী?

ইতিহাসচর্চায় ভিকোর মতামত –

ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন ধারা বিদ্যমান। প্রথাগত ইতিহাসচর্চার বাইরে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে ভিকো-র মতামত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিখ্যাত ইতালীয় চিন্তাবিদ ভিকো ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানকে যৌথভাবে মানবিক বিদ্যাচর্চায় প্রয়োগ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি ঐতিহাসিকের সৃষ্টিশীল মানসিকতার উপর গুরুত্ব দেন। ভিকোর ইতিহাসচর্চার ফলে ইতিহাস ক্রমে সাধারণ মানুষের ইতিহাস হয়ে ওঠে।

জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চা কী?

জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চা –

নিজ দেশ ও দেশবাসীর স্বার্থে জাতীয়তাবাদী ইতিহাস লেখা হয়। এর বৈশিষ্ট্য হল –

  • স্বল্প পরিসর – এই ধরনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে কেবল একটি দেশ ও জনগণের কথা আলোচিত হয়।
  • স্বার্থ – এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় দেশ ও জনগণের স্বার্থ প্রধান হয়ে ওঠে। দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভারতে যদুনাথ সরকার, তারাচাঁদ, রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ ছিলেন জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক।

জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চার মূল কথা কী? কোন্ জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক চেক জাতির ইতিহাস রচনায় খ্যাতি লাভ করেছেন?

স্বদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে ইতিহাসচর্চা করেন জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদরা।

জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চার মূল কথা –

জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চার মূল কথা হল স্বদেশ ও স্বজাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে ইতিহাস রচনার কাজটি সম্পন্ন করা।

বলকান অঞ্চলে চেক জাতির ইতিহাস রচনা করে খ্যাতি লাভ করেছেন ফ্রান্টিসেক পালাকি।

সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য

সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • বৃহত্তর পরিসর – এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় নিজ দেশ ও তার উপনিবেশের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
  • স্বার্থ – নিজ দেশ ও জনগণের স্বার্থ এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। জাতীয়তাবাদী ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত হল এই ধারা।

অন্য দেশ দখল করা, শোষণ ও শাসন করা, নিজ দেশের স্বার্থে তাকে ব্যবহার করা প্রভৃতিকে বৈধতা দানের চেষ্টা এই ধরনের ইতিহাসচর্চার উদ্দেশ্য। রুডিয়ার্ড কিপলিং, জেমস মিল, উইলিয়ম হান্টার, ভিনসেন্ট স্মিথ প্রমুখ ছিলেন এই শ্রেণির ঐতিহাসিক।

কেমব্রিজ ঐতিহাসিক কাদের বলা হয়? এরা কার ইতিহাস দর্শনে বিশ্বাস করেন?

কেমব্রিজ ঐতিহাসিক গোষ্ঠী –

ইংল্যান্ডের একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হল কেমব্রিজ। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক-গবেষক-অধ্যাপকবৃন্দ সাধারণভাবে কেমব্রিজ ঐতিহাসিক গোষ্ঠী (Cambridge School) নামে পরিচিত। কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কেমব্রিজ ঐতিহাসিকরা হলেন – জন গ্যালাহার, গর্ডন জনসন, অনিল শীল, ফ্রান্সিস রবিনসন প্রমুখ। কেমব্রিজ ইতিহাসগোষ্ঠী স্যার লিউইস নেমিয়ার -এর ইতিহাস দর্শনে বিশ্বাস করে।

কেমব্রিজ গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চা কী ধরনের?

কেমব্রিজ গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চা –

স্যার লিউইস নেমিয়ার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশেষ ধারার ইতিহাসচর্চা শুরু করেন। এর বৈশিষ্ট্য হল –

  • প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র – এই ধারার ইতিহাসচর্চায় বিভিন্ন দেশের জাতীয়তাবাদকে অবজ্ঞা করা হয়।
  • সংকীর্ণতা – কেমব্রিজ গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চা এবং গবেষণার মান খুব উন্নত হলেও তা সংকীর্ণ স্বার্থে পরিচালিত। গণ আন্দোলন বা জাতীয়তাবাদকে অগ্রাহ্য করার জন্য তার অন্তর্দ্বন্দু ও ত্রুটিবিচ্যুতির অনুসন্ধানে তারা ব্যস্ত। জন গ্যালাহার, গর্ডন জনসন, অনিল শীল, ফ্রান্সিস রবিনসন প্রমুখ হলেন কেমব্রিজ গোষ্ঠীর ঐতিহাসিক।

মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝো?

আধুনিক ইতিহাসচর্চার যে বিভিন্ন ধারা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চা।

মার্কসবাদী ইতিহাসচর্চা –

সাম্যবাদের প্রণেতা কার্ল মার্কস অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসের (ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ) ব্যাখ্যা করেন। এই ইতিহাস দর্শনের অনুসারী ঐতিহাসিকেরা মার্কসবাদী ঐতিহাসিক নামে পরিচিত।

মানুষ, সমাজ ও উৎপাদন ব্যবস্থার শোষক-শোষিত সম্পর্কের ঘাতপ্রতিঘাতের মাধ্যমে সমাজ আবর্তিত হয়, এগিয়ে চলে। মরিস ডব, ক্রিস্টোফার হিল, রজনীপাম দত্ত, বিপানচন্দ্র, সুশোভন সরকার প্রমুখ ছিলেন মার্কসবাদী ঐতিহাসিক।

অ্যানাল স্কুল কী?

ফ্রান্সে মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেভর 1928 খ্রিস্টাব্দে ‘দ্য অ্যানালস’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।

অ্যানাল স্কুল –

  • অ্যানাল স্কুলের ঐতিহাসিকেরা ইতিহাসচর্চার ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে সামাজিক জীবরূপে মানুষের সামাজিক অবস্থান, আচার-আচরণ, সভ্যতা-সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতি বিষয়কে ইতিহাসে গুরুত্ব দিয়ে ‘Total History’ রচনার ধারাটিকে প্রসারিত করেন।
  • এই গোষ্ঠীর দুজন ঐতিহাসিক হলেন – মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেভর।

অ্যানাল গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চা কী ধরনের?

অ্যানাল গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চা –

ফ্রান্সের অ্যানাল (Annales) পত্রিকায় কয়েকজন ঐতিহাসিক তাদের মত প্রকাশ করেন। এরা ছিলেন মার্ক ব্লখ, জর্জ ব্রদেল, রয় লাদুরি প্রমুখ। এরা সবাই মার্কসবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু শুধু আর্থিক বিষয়কে অধিক গুরুত্ব প্রদানের পরিবর্তে সমাজ-সংস্কৃতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ইতিহাসের ব্যাখ্যা করেছেন এরা।

রয় লাদুরির ইতিহাসচর্চার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

1960 -এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে গতানুগতিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটে। শুরু হয় সামাজিক ইতিহাসচর্চা।

রয় লাদুরির ইতিহাসচর্চার মূল বৈশিষ্ট্য –

  • মার্কসীয় মতবাদে বিশ্বাসী হয়েও অর্থনীতিকে গুরুত্ব না দিয়ে একদল ঐতিহাসিক সমাজ-সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে ইতিহাসচর্চা শুরু করেন। রয় লাদুরি ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম।
  • রয় লাদুরি তাঁর ইতিহাসচর্চায় সামাজিক কাঠামো ও প্রক্রিয়ায় উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন – বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি, আন্দোলন, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, শিক্ষা, সামাজিক গতিপ্রকৃতি প্রভৃতির ক্রিয়া ও গতির উপর আলোকপাত করেছেন।

নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝো?

নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা –

সমাজে যারা তথাকথিত অন্ত্যজ ও দলিত নামে পরিচিত সেইসব শ্রেণির মানুষদের কথা ও কাহিনি এই ধরনের ইতিহাসচর্চার বিষয়বস্তু। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এইসব মানুষদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, নবাগত সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের বিরোধ এবং পরিণামে বিক্ষোভ-বিদ্রোহ নিয়ে এক শ্রেণির ঐতিহাসিকরা গবেষণা করেন। রণজিৎ গুহ, শাহিদ আমিন, জর্জ রুদে, গৌতম ভদ্র প্রমুখ এই শ্রেণির ঐতিহাসিক। ইতিহাসচর্চার এই নতুন ধারাকে বলা হয় নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা।

হুইগ ঐতিহাসিক গোষ্ঠী (Whig School) কাদের বলা হয়? এই গোষ্ঠীর কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।

হুইগ ঐতিহাসিক গোষ্ঠী –

মানবসভ্যতার একমুখী অগ্রগতির কথা যে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের ইতিহাসচর্চার মূল নিয়ন্ত্রক, তাদের বলা হয় হুইগ ঐতিহাসিক গোষ্ঠী (Whig School)।

এই গোষ্ঠীর কয়েকজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক হলেন জে বি বিউরি, জি এম ট্রেভেলিয়ান প্রমুখ।

যুক্তিবাদী বা প্রত্যক্ষবাদী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী (Positivist School) বলতে কাদের বোঝানো হয়? এদের মধ্যে কারা প্রসিদ্ধ?

যুক্তিবাদী বা প্রত্যক্ষবাদী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী –

ইতিহাসে সর্বতোভাবে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী ধ্যানধারণা প্রয়োগের পক্ষপাতী যেসব ঐতিহাসিক, তাদের বলা হয় যুক্তিবাদী বা প্রত্যক্ষবাদী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী (Positivist School)।

এদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিকেরা হলেন – বেনেদিতো ক্রোস, বার্কলে, লাইবনিজ প্রমুখ।

উত্তর-আধুনিকতাবাদী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী (Postmodernist School) কাদের বলা হয়? এদের কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।

উত্তর-আধুনিকতাবাদী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী –

আধুনিক যুগ পার হয়ে সাম্প্রতিককালের একমেরু বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জীবন-জগৎসংসার-সংস্কৃতি ‘সবই অনিত্য’ এবং নিয়ত পরিবর্তনশীলতার মধ্য দিয়ে ক্যালাইডোস্কোপের মতো সদাসর্বদা নতুন নতুন ‘ফর্ম’ সৃষ্টি করে চলেছে বলে যারা মনে করেন, সেই দার্শনিক ঐতিহাসিকেরা বর্তমানে পরিচিত উত্তর-আধুনিকতাবাদী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী (Post-modernist School) নামে।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন – জাক দেরিদা, মিশেল ফুকো, কেতকী কুশারী ডাইসন প্রমুখ।

সামাজিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?

সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্ব –

  • সামাজিক ইতিহাসচর্চা সামগ্রিকভাবে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্র ও জ্ঞানের প্রসার ঘটিয়েছে। গৃহভিত্তিক বিষয়, গণসংস্কৃতি, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী, নারীসমাজের কথা এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
  • শ্রেণি, শিল্পায়ন, নগরায়ণ, সামাজিক চলমানতা প্রভৃতির উপর সামাজিক ইতিহাস আলোকপাত করে।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় নানা বিষয়ের ইতিহাস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের উপেক্ষিত বিষয়গুলিকে আলোকিত করে তোলা হয়।

নতুন সামাজিক ইতিহাস বলতে কী বোঝো?

অথবা, সামাজিক ইতিহাস কী?

নতুন সামাজিক ইতিহাস –

গতানুগতিক শাসককেন্দ্রিক ইতিহাসচর্চার বাইরে মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি নিয়ে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা আবর্তিত হয়। এর বৈশিষ্ট্য হল –

  • সমাজ – এই ইতিহাসে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ইতিহাস থেকে সরে এসে সাধারণ মানুষের ইতিহাস রচনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  • সংস্কৃতি – মানুষের আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, বিনোদন, শিক্ষা, ধর্মবিশ্বাস প্রভৃতির উপর গুরুত্ব দেয়।
  • অর্থনীতি – মানুষের বিভিন্ন ধরনের পেশা সম্বন্ধে এখানে আলোচনা করা হয়।

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা কবে থেকে শুরু হয়েছে? এতে কোন্ কোন্ বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়?

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সূচনা –

সামাজিক ইতিহাস মানুষের চিরাচরিত ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যা দেয়। 1960 -এর দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপে নয়া সামাজিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে।

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার বিষয়ের উপর গুরুত্ব –

এতে যে যে বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় সেগুলি হল – মানুষের সমাজ, আচার-আচরণ, সভ্যতা-সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিক্ষা, বিনোদন, মূল্যবোধ প্রভৃতি।

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

গতানুগতিক শাসককেন্দ্রিক ইতিহাসচর্চার বাইরে মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি নিয়ে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা আবর্তিত হয়।

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা বিষয়ক গ্রন্থসমূহ –

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কতকগুলি গ্রন্থ হল- কার্ল মার্কস-এর ‘দ্য জার্মান ইডিওলজি’ (The German Ideology), গৌতম ভদ্র-র ‘ইমান ও নিশান’, দীপেশ চক্রবর্তী-র ‘রিথিংকিং ওয়ার্কিং-ক্লাস হিস্ট্রি : বেঙ্গল 1890-1940’ (Rethinking Working-Class History : Bengal 1890-1940) প্রভৃতি।

আধুনিক সামাজিক ইতিহাসচর্চায় জি এম ট্রেভেলিয়ানের অবদান কী?

জি এম ট্রেভেলিয়ানের (GM Trevelyan) অবদান –

ইংরেজ ঐতিহাসিক তথা হুইগ ঐতিহাসিকদের অন্যতম জি এম ট্রেভেলিয়ান আধুনিক সামাজিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর মতে, জনসাধারণের কাহিনিই হল প্রকৃত ইতিহাস। সামাজিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হল – ‘ইংলিশ সোশ্যাল হিস্ট্রি, এ সার্ভে অফ সিক্স সেঞ্চুরিস : চসার টু কুইন ভিক্টোরিয়া’ (English Social History, A Survey of Six Centuries : Chaucer to Queen Victoria)

ইউরোপে খেলাধুলা চর্চার ইতিহাসের পরিচয় দাও।

ইউরোপে খেলাধুলা চর্চার ইতিহাস –

খেলাধুলা চর্চার ইতিহাস তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিককালের। ইউরোপে 1960 -এর দশকে এ বিষয় নিয়ে চর্চা শুরু হয়।

  • সমাজবিজ্ঞানী – জে এ ম্যাঙ্গান, টনি ম্যাসন, অ্যালেন গ্যাটম্যান, রিচার্ড হোল্ট, রে, ভ্যামপ্লিউ প্রমুখ সমাজবিজ্ঞানী এ বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
  • সরকারি উদ্যোগ – ব্রিটিশ সোসাইটি অফ স্পোর্টস হিস্ট্রি (British Society of Sports History) এবং তার মুখপত্র ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ দ্য হিস্ট্রি অফ স্পোর্টস (International Journal of the History of Sports) প্রকাশিত হয়।

ভারতে খেলাধুলার ইতিহাস নিয়ে কী ধরনের চর্চা হয়েছে?

ভারতে খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা –

ইউরোপে 1970 -এর দশকে শুরু হলেও ভারতে খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা শুরু হয় 1980 -এর দশকে।

  • ক্রিকেট – বোরিয়া মজুমদার-এর ‘টোয়েন্টি-টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম’ (Twenty-two Yards to Freedom) ভারতীয় ক্রিকেট বিষয়ে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
  • ফুটবল – বোরিয়া মজুমদার ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গোললেস : দ্য স্টোরি অফ এ ইউনিক ফুটবলিং নেশনস’ (Goalless : the Story of a Unique Footballing Nations) হল ফুটবল বিষয়ক প্রামাণ্য গ্রন্থ।
  • অন্যান্য – জে এ ম্যাঙ্গানের ‘দ্য গেমস এথিক অ্যান্ড ইম্পিরিয়ালিজম’ (The Games Ethic and Imperialism) গ্রন্থটিও তথ্যভিত্তিক ও প্রামাণ্য। এ ছাড়া আশিস নন্দী, রামচন্দ্র গুহ-র লেখাও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খেলার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খেলার ইতিহাসের গুরুত্ব –

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খেলার ইতিহাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ –

  • সমাজ সম্পর্কিত তথ্য – খেলার ইতিহাস থেকে একটি সমাজের মানুষের মানসিকতা, শারীরিক সক্ষমতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, নারীর মর্যাদা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।
  • জাতীয়তাবোধ সম্পর্কিত তথ্য – খেলার দর্শক ও শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া থেকে জাতীয়তাবোধ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, 1911 খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান ইংরেজ ফুটবল দলকে পরাজিত করে আই এফ এ (IFA) শিল্ড জয় করলে বাঙালি তথা ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

খেলাধুলার ইতিহাসবিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

ইংল্যান্ডে 1982 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সোসাইটি অফ স্পোর্টস হিস্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে খেলার ইতিহাসচর্চা একটি সাংগঠনিক রূপ লাভ করে। ভারতে 1980-র দশকে খেলার ইতিহাস নিয়ে চর্চা শুরু হয়।

খেলাধুলার ইতিহাসবিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ –

খেলাধুলার ইতিহাসবিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল – জে এ ম্যাঙ্গান -এর লেখা ‘দ্য গেমস এথিক অ্যান্ড ইম্পিরিয়ালিজম’ (The Games Ethic and Imperialism), বোরিয়া মজুমদার -এর লেখা ‘টোয়েন্টি-টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম : এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’ (Twenty-two Yards to Freedom : A Social History of Indian Cricket), কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বোরিয়া মজুমদার -এর লেখা ‘গোললেস : দ্য স্টোরি অফ এ ইউনিক ফুটবলিং নেশনস’ (Goalless : The story of a Unique Footballing Nations) প্রভৃতি।

ভারতে ক্রিকেটের ইতিহাসচর্চায় কারা উল্লেখযোগ্য গবেষণা ও রচনা করেছেন? একটি বিখ্যাত রচনার নাম উল্লেখ করো।

ভারতে ক্রিকেটের ইতিহাসচর্চায় গবেষকগণ –

ভারতে ক্রিকেটের ইতিহাসের বিবর্তন ও বিবর্ধন নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে উল্লেখযোগ্য গবেষণাধর্মী কাজ করেছেন আশিস নন্দী, বোরিয়া মজুমদার, রামচন্দ্র গুহ, হর্ষ ভোগলে, গৌতম ভট্টাচার্য প্রমুখ।

এক্ষেত্রে একটি বিখ্যাত রচনা হল বোরিয়া মজুমদারের ‘টোয়েন্টি-টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম’ (Twenty-two Yards to Freedom) নামক গ্রন্থটি।

মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব (1889 খ্রিস্টাব্দ) কীভাবে জাতীয়তাবাদের জাগরণে অনুঘটকের কাজ করেছিল?

অথবা, খেলার ইতিহাসে 1911 খ্রিস্টাব্দ বিখ্যাত কেন?

জাতীয়তাবাদের জাগরণে মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের ভূমিকা –

1911 খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি হওয়া মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের ফুটবল দল ইংরেজ সৈন্যদের নিয়ে তৈরি ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্ট দলের বিরুদ্ধে খেলায় অবতীর্ণ হয়। সম্পূর্ণ খালি পায়ে খেলে আই এফ এ শিল্ড (IFA Shield) জয় করে মোহনবাগান।

মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব (1889 খ্রিস্টাব্দ) কীভাবে জাতীয়তাবাদের জাগরণে অনুঘটকের কাজ করেছিল?

কয়েকজন বাঙালি বিপ্লবী এই দলের খেলোয়াড় ছিলেন। মোহনবাগান দলের এই শিহরণ জাগানো সাফল্য ভারতে জাতীয়তাবাদের জাগরণে অনুঘটকের কাজ করেছিল।

মানবসভ্যতার অগ্রগতির কথা খাদ্যাভ্যাস থেকে কীভাবে জানা যায়?

খাদ্যাভ্যাস থেকে মানবসভ্যতার অগ্রগতি –

খাদ্যাভ্যাস থেকে মানবসভ্যতার অগ্রগতির কথা জানা যায়।

  • প্রাচীন যুগ – এ যুগে মানুষ বনের ফলমূল ও শিকার করা পশুর কাঁচা মাংস খেত। আগুনের ব্যবহার শিখলে মাংস পুড়িয়ে খেতে শেখে তারা। পরে রান্না করা খাবার খেতে শেখে।
  • মধ্যযুগ – এসময় মানুষ বিভিন্ন স্বাদের রকমারি খাবার খেত। রান্নায় মশলার ব্যবহার শুরু হয় এই সময় থেকেই।
  • আধুনিক যুগ – আধুনিক যুগে মানুষের খাদ্যের ব্যবহার রকমারি এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। এভাবে খাদ্যের গুণমান বিচার করে মানবসভ্যতার অগ্রগতির ধারণা লাভ করা যায়।

খাদ্য সংগ্রাহক মানুষের খাদ্য উৎপাদকে রূপান্তরিত হওয়া ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ কেন?

খাদ্য সংগ্রাহক মানুষের খাদ্য উৎপাদকে রূপান্তরিত হওয়া ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব –

  • স্বাতন্ত্র্য – জীবজগতে মানুষই একমাত্র জীব যে খাদ্য উৎপাদন করতে শিখেছিল।
  • কৃষির সূচনা – খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিকাজের সূচনা হয়।
  • স্থায়ী বসতি – কৃষির সূচনার সঙ্গে মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে।
  • উদ্বৃত্ত – মানুষ কৃষির সূচনা করলে নিজের প্রয়োজনীয় খাদ্যের অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত হয় এবং এই উদ্বৃত্তকে কেন্দ্র করে শুরু হয় দ্বন্দ্ব, যা ইতিহাসের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তাই ইতিহাসচর্চায় খাদ্যের ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসে মিশ্র সংস্কৃতি লক্ষ করা যায় কেন?

ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসে মিশ্র সংস্কৃতি লক্ষ করা যায় কারণ –

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে বিভিন্ন জাতির আগমন ও অভিবাসন ঘটেছে। আর্য থেকে শুরু করে মধ্যযুগে সুলতানি ও মুঘল যুগে আফগান, মুঘল প্রভৃতি জাতির মানুষেরা ভারতে এসেছেন। আধুনিক যুগে এসেছেন ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠীর মানুষজন। এর ফলে এদেশের মানুষজনের খাদ্যাভ্যাসে মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাব পুরো মাত্রায় লক্ষ করা যায়।

ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে খাদ্যাভ্যাসের কী পরিবর্তন হয়?

মানবসভ্যতার ইতিহাসচর্চায় খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে খাদ্যাভ্যাস –

  • ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে ভারতীয়রা পাশ্চাত্যের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে পরিচিত হয়।
  • শহরের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের একাংশ বিদেশি খাবারের প্রতি বেশিমাত্রায় আকৃষ্ট হয়। এসময় ভারতে কেকসহ বিভিন্ন ধরনের পাশ্চাত্য খাবারের প্রচলন হয়।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব –

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ –

  • জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা – খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে কোনো জনগোষ্ঠী জাতির ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস, নারীর মর্যাদা প্রভৃতি বিষয়ে নানান তথ্য পাওয়া যায়।
  • বৈদেশিক যোগাযোগ সম্পর্কে ধারণা – খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস থেকে একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বিদেশের যোগাযোগ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসে মুঘল, পোর্তুগিজ ও ব্রিটিশদের প্রভাবে নতুন নতুন খাবারের সংযোজন হয়।

হরিপদ ভৌমিক ইতিহাসে বিখ্যাত কেন? নবীনচন্দ্র দাস কে ছিলেন?

খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চায় হরিপদ ভৌমিক ও নবীনচন্দ্র দাস বিশেষভাবে স্মরণীয়।

হরিপদ ভৌমিকের ভূমিকা –

হরিপদ ভৌমিক তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রসগোল্লা : বাংলার জগৎমাতানো আবিষ্কার’ -এ উল্লেখ করেছেন বাংলার নদিয়া জেলার ফুলিয়া-নিবাসী হারাধন ময়রা হলেন আদি রসগোল্লার জনক। বাংলার খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।

নবীনচন্দ্র দাস –

কলকাতার বাগবাজারের ময়রা নবীনচন্দ্র দাস 1868 খ্রিস্টাব্দে স্পঞ্জ রসগোল্লা সৃষ্টি করেন।

শিল্পচর্চার ইতিহাস বলতে কী বোঝো?

শিল্পচর্চার ইতিহাস – আদিম মানুষের নাচ, করতালি, বিভিন্ন শব্দ করার মধ্য দিয়ে শিল্পচর্চার সূচনা হয়েছে। ক্রমশ শিল্পকলা ও তার বিভিন্ন বিভাগগুলির বিকাশ ঘটে। এই শিল্পগুলির মধ্যে প্রধান হল – সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র। এগুলির মধ্য দিয়ে অতীত জেগে ওঠে, ঐতিহ্যের এবং লোকশিল্পের সংরক্ষণ হয়।

এই ধরনের শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে সমাজ-সংস্কৃতির একটি বিশেষ যুগের চিত্র পাওয়া যায়। মানুষের জীবনধারার নানান পরিবর্তন সম্পর্কেও জানতে পারা যায়।

শিল্পচর্চার ইতিহাসে সংগীতের ভূমিকা লেখো।

শিল্পচর্চার বিভিন্ন ধারার মধ্যে অন্যতম হল সংগীত।

শিল্পচর্চার ইতিহাসে সংগীতের ভূমিকা –

সংগীত হল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ অথবা বেদনার অনুভূতির প্রকাশ। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে একটি যুগের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ফুটে ওঠে। সংগীতকার, পৃষ্ঠপোষক ও সমঝদার থেকে একটি সামাজিক চিত্র পাওয়া যায়। সংগীতের বিষয়বস্তু থেকে মানসিকতা ও সমাজচিত্র ফুটে ওঠে।

এভাবে সংগীত শিল্পচর্চার ইতিহাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সংগীতের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

সংগীত মূলত একটি বিনোদনের বিষয় হলেও সংগীতের মধ্য দিয়ে ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে জানা সম্ভবপর হয়।

সংগীতের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ –

সংগীতের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল – সুকুমার রায় -এর ‘বাংলা সংগীতের রূপ’, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীর ‘বাংলা গানের ধারা’, প্যাট্রিক মৌতাল -এর ‘কমপ্যারেটিভ স্টাডি অফ হিন্দুস্তানি রাগাস’ (Comparative Study of Hindustani Ragas) প্রভৃতি।

শিল্পচর্চার ইতিহাসে নৃত্যের ভূমিকা লেখো।

শিল্পচর্চার বিভিন্ন ধারার মধ্যে অন্যতম হল নাচ বা নৃত্য।

শিল্পচর্চার ইতিহাসে নৃত্যের ভূমিকা –

নাচ বা নৃত্য হল মানুষের আদিমতম আনন্দের বহিঃপ্রকাশ।

  • সংস্কৃতি – নৃত্যকলা একটি জনগোষ্ঠীর পরিচয় তুলে ধরে – একটি সময়ের সংস্কৃতির পরিচয় দেয়।
  • প্রকারভেদ – বিভিন্ন প্রকারের নৃত্য, যেমন – ভরতনাট্যম, কথাকলি, কুচিপুড়ি, মণিপুরি, ওড়িশি, ভাংরা প্রভৃতি আঞ্চলিক সংস্কৃতির পরিচয়বাহী।
শিল্পচর্চার ইতিহাসে নৃত্যের ভূমিকা লেখো।

এভাবে নৃত্য শিল্পচর্চার ইতিহাসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

নৃত্যের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

চারুকলার মধ্যে নৃত্যশিল্পের ইতিহাস সাম্প্রতিককালে ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নৃত্যশৈলীর মধ্য দিয়ে কোনো বিশেষ সময়পর্বের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নানান রূপকল্পের আভাস পাওয়া যায়।

নৃত্যের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ –

নৃত্যের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল – রাগিনী দেবী-র ‘ড্যান্স ডায়ালেক্টস অফ ইন্ডিয়া’ (Dance Dialects of India), গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতের নৃত্যকলা’, ক্যারল ওয়েলস -এর ‘ডান্স-এ ভেরি সোশ্যাল হিস্ট্রি’ (Dance A Very Social History) প্রভৃতি।

শিল্পচর্চার ইতিহাসে নাটকের ভূমিকা লেখো।

শিল্পচর্চার ইতিহাসে নাটকের ভূমিকা –

কোনো ঘটনাকে বর্ণনা না করে মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শনীয় করে তোলাই হল নাটক। সমাজে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বা কাহিনি অবলম্বনে নাটক রচিত হয়। নাটকের চরিত্রগুলি মানুষের খুব পরিচিত হয় এবং অভিনয় যারা করেন, তারাও পরিচিত। নাচ, গান, অভিনয়ের মাধ্যমে নাটক দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়।

নাটকের মাধ্যমে লোকশিক্ষা হয়। মানুষের মনে নাটকের কাহিনি অনেক দিন স্মৃতি হয়ে থেকে যায়।

নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

শিল্পচর্চার বিভিন্ন ধারার মধ্যে অন্যতম হল নাটক।

নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থসমূহ –

নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল- সাইমন জাকারিয়া রচিত ‘বাংলাদেশের লোকনাটক : বিষয় ও আঙ্গিক বৈচিত্র্য’, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’, আশুতোষ ভট্টাচার্য্য রচিত ‘বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস’ প্রভৃতি।

উনিশ শতকে গ্রুপ থিয়েটারগুলির গুরুত্ব কী ছিল?

উনিশ শতকে ভারত তথা বাংলায় গ্রুপ থিয়েটারগুলির ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

উনিশ শতকে গ্রুপ থিয়েটারগুলির গুরুত্ব –

  • ভারতের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের কালপর্বে গ্রুপ থিয়েটারগুলি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের প্রতিবাদের এক মঞ্চ হিসেবে গড়ে উঠেছিল।
  • সমকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক শোষণের বিভিন্ন ঘটনাবলি এই গ্রুপ থিয়েটারগুলির মাধ্যমেই জনসমক্ষে তুলে ধরা হত।

ইতিহাসচর্চায় নাটকের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

দৃশ্য ও প্রদর্শনমূলক শিল্পকলা যার মধ্যে কথাবার্তা, শিল্প প্রদর্শন, সংগীত ও নৃত্য সব কিছুর সমন্বয় ঘটে, সেইরকম একটি মাধ্যম হল নাটক।

ইতিহাসচর্চায় নাটকের ইতিহাসের গুরুত্ব –

  • ইতিহাসচর্চায় নাটকের ইতিহাসের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বা কাহিনি অবলম্বনে নাটক রচিত হয়। তাই সমসাময়িককালের বিভিন্ন দিক নাটকের মধ্যে দিয়ে উপস্থাপিত করা যায়।
  • নাটকের মাধ্যমে লোকশিক্ষা হয়। এ ছাড়া ধারাবাহিকতা ও পরিবর্তনের দিকগুলিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রেও নাটকের ইতিহাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

শিল্পচর্চার ইতিহাসে চলচ্চিত্রের ভূমিকা লেখো।

শিল্পচর্চার বিভিন্ন ধারার মধ্যে অন্যতম হল চলচ্চিত্র।

শিল্পচর্চার ইতিহাসে চলচ্চিত্রের ভূমিকা –

চলচ্চিত্র যদিও প্রথম যুগে নির্বাক ছিল, কিন্তু পরে তা সবাক হয়। কোনো ঘটনাকে বর্ণনা না করে পর্দায় দর্শনীয় করে তোলাই হল চলচ্চিত্র। এর মধ্যে গান, নাচ, কথাবার্তা সব কিছুর সমন্বয় ঘটে। সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনা বা কাহিনি চলচ্চিত্রে দেখানো হয়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে লোকশিক্ষা হয়।

চলমান ছবি বা চলচ্চিত্রের উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে থমাস আলভা এডিসন এবং লুই এবং অগাস্ত ল্যুমিয়েরের অবদান কী ছিল?

চলমান ছবি বা চলচ্চিত্রের উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে থমাস আলভা এডিসন -এর অবদান –

পৃথিবীতে চলমান ছবি বা চলচ্চিত্রের সূচনার ক্ষেত্রে থমাস আলভা এডিসনের কিনেটোস্কোপ যন্ত্রটির বড়ো ভূমিকা ছিল। প্রোজেক্টরের মতো কাজ করা ওই যন্ত্রে স্লাইড -এর মাধ্যমে চলমান ছবি দেখানো যেত।

চলমান ছবি বা চলচ্চিত্রের উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে থমাস আলভা এডিসন এবং লুই এবং অগাস্ত ল্যুমিয়েরের অবদান কী ছিল?

চলমান ছবি বা চলচ্চিত্রের উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে লুই এবং অগাস্ত ল্যুমিয়েরের অবদান –

অগাস্ত এবং লুই ল্যুমিয়ের সিনেমাটোগ্রাফি যন্ত্রের সাহায্যে চলচ্চিত্র দেখানো শুরু করেন 1895 খ্রিস্টাব্দে। এই সকল আবিষ্কারগুলি আধুনিক চলচ্চিত্রের উদ্ভাবন ও বিকাশের গতিকে সমৃদ্ধ করেছিল।

বাংলা চলচ্চিত্রের আদিপর্বের ইতিহাস বিশ্লেষণ করো।

বাংলার শিল্পচর্চার ইতিহাসে চলচ্চিত্রের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলা চলচ্চিত্রের আদিপর্বের ইতিহাস –

  • ভারতে হীরালাল সেন প্রথম সিনেমার প্রদর্শন শুরু করেন। এরপর 1931 খ্রিস্টাব্দে ‘জামাইষষ্ঠী’ চলচ্চিত্র দিয়ে বাংলা সবাক ছবির পথ চলা শুরু হয়।
  • এরপর বিশ্ববিখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ 1955 খ্রিস্টাব্দে মুক্তিলাভ করে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিলাভ করে। এ ছাড়া তপন সিংহ, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ব্যক্তিত্ব বাংলা চলচ্চিত্রের ধারাকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেন।

বাংলায় চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে হীরালাল সেনের অবদান কী ছিল?

বাংলায় চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে হীরালাল সেনের অবদান –

বাংলা চলচ্চিত্রের জনক বলা হয় হীরালাল সেনকে। 1898 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় প্রথম চলচ্চিত্র দেখানো শুরু করেন তিনি। এর জন্য তিনি যে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন, তার নাম হল রয়‍্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি। পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি না হলেও হীরালাল সেন তাঁর সংস্থার দ্বারা যেভাবে চলচ্চিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করেন তার ফলে বাংলা চলচ্চিত্রের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল।

বাংলা চলচ্চিত্রের দুজন বিখ্যাত পরিচালকের নাম লেখো।

বাংলা চলচ্চিত্রের দুজন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক –

বাংলা চলচ্চিত্রের দুজন বিখ্যাত পরিচালক হলেন –

  1. সত্যজিৎ রায় ও
  2. ঋত্বিক ঘটক।
  • সত্যজিৎ রায় – পথের পাঁচালী, অপুর সংসার, সোনার কেল্লা, চিড়িয়াখানা, মহানগর ইত্যাদি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিনেমা পরিচালনা করেন। 1990 খ্রিস্টাব্দে তিনি অস্কার পুরস্কার লাভ করেন।
  • ঋত্বিক ঘটক – তাঁর মেঘে ঢাকা তারা-সহ অন্যান্য চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের দুজন বিখ্যাত পরিচালকের নাম লেখো।

বাংলার চলচ্চিত্রকে সত্যজিৎ রায় কীভাবে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন?

বাংলা চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ রায়ের অবদান –

বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে সত্যজিৎ রায় সর্বাগ্রগণ্য। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি তাঁর চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী 1955 খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায় এবং কান, ভেনিস-সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও প্রশংসা অর্জন করে। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানের জন্য তিনি ‘অস্কার’ পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

বাংলার চলচ্চিত্রকে সত্যজিৎ রায় কীভাবে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন?

পথের পাঁচালী-র পাশাপাশি অপরাজিত, অপুর সংসার-সহ একাধিক বিখ্যাত ছবির মধ্য দিয়ে সত্যজিৎ রায় বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন।

চলচ্চিত্র কীভাবে সামাজিক সমস্যার কথা তুলে ধরে?

চলচ্চিত্রে সামাজিক সমস্যা –

সামাজিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। 1930 -এর দশকের একাধিক চলচ্চিত্রে জাতিভেদ প্রথা, পণপ্রথা এবং নারী স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম মাস্টার বিনায়কের ব্রহ্মচারী, প্রমথেশ বড়ুয়ার দেবদাস ইত্যাদি। স্বাধীনতার পরবর্তীতে দেশভাগ ও শরণার্থী সমস্যাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা, তিতাস একটি নদীর নাম, মৃণাল সেনের ভুবন সোম, সত্যজিৎ রায়ের মহানগর প্রভৃতি। পরবর্তীকালে ও বর্তমানে সামাজিক ও পারিবারিক নানান বিষয়কে কেন্দ্র করে নানান চলচ্চিত্র তৈরি হয়; যেখানে অপরাধ, প্রতিরোধ, হিংসা, যৌনতা প্রভৃতি সামাজিক সমস্যাও স্থান পায়।

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে নাটক ও চলচ্চিত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি কী কী?

ইতিহাস রচনার বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে নাটক ও চলচ্চিত্র অন্যতম হলেও তাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষণীয়।

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে নাটক ও চলচ্চিত্রের সীমাবদ্ধতা –

  • কাল্পনিক কাহিনি – ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত নাটক ও চলচ্চিত্রে অনেক সময় কাল্পনিক চরিত্র ও কাহিনি সংযোজিত হয়।
  • বিকৃতি – নাটক ও চলচ্চিত্রে অনেক সময় প্রকৃত তথ্য বা সত্য ঘটনাকে বিকৃত করা হয়।
  • ব্যক্তিগত মতামত – নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতার ব্যক্তিগত মতামত, ভাবনাচিন্তা তাদের সৃষ্টির মধ্যে প্রতিফলিত হয়। ইতিহাস রচনার জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক তথ্যের প্রয়োজন হয়। নাটক ও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে তার অভাব থাকে।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শিল্পচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শিল্পচর্চার গুরুত্ব –

  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা – শিল্পচর্চার ইতিহাস থেকে সমকালীন সমাজের নারীর মর্যাদা, শ্রেণিবৈষম্য, সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়।
  • জাতীয়তাবোধ সম্পর্কে ধারণা – আধুনিক যুগে রাজনৈতিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে শিল্পচর্চা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাচীন ও মধ্যযুগে সংগীত, নৃত্য এবং নাটক রাজার মনোরঞ্জন ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যে মঞ্চস্থ হত। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে এগুলি ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ হিসেবে দেশাত্মবোধক সংগীত (বন্দেমাতরম) ও নাটকের (নীলদর্পণ) কথা বলা যায়।

বিশ্বায়ন মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?

খেলাধুলা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্পকলার মতো পোশাক-পরিচ্ছদ একটি দেশ ও জাতির নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ।

পোশাক-পরিচ্ছদের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব –

এক্ষেত্রে গণমাধ্যমে প্রদর্শিত বিভিন্ন পোশাকের দৃশ্য প্রধানত দায়ী। ইন্টারনেট যোগাযোগ পৃথিবীকে ছোটো করেছে। পৃথিবীর একদেশের ব্যবহৃত পোশাক অন্যদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

কাজের প্রয়োজনে, রুচির কারণে, শৌখিন বিলাসিতার জন্য বিশ্বায়ন পোশাক-পরিচ্ছদকে প্রভাবিত করেছে নানাভাবে।

উনিশ শতকে ভারতে পারসি ও বাঙালিবাবুদের পোশাক কেমন ছিল?

পোশাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক, ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

উনিশ শতকে ভারতে পারসি ও বাঙালিবাবুদের পোশাকের ধরন –

  • উনিশ শতকে ভারতবর্ষে পোশাক-পরিচ্ছদের উপর পাশ্চাত্য ধ্যানধারণার প্রভাব পড়েছিল। পারসি ও বাঙালিবাবুদের পোশাকের উপর এই প্রভাব সুস্পষ্টভাবে দেখা দেয়।
  • পারসিরা এসময় ফুল প্যান্ট ও কলারহীন কোট পরতে থাকে। অন্যদিকে বাঙালিবাবুরা মাথায় টুপি, ধুতির উপর বেল্ট প্রভৃতি ব্যবহার করত।

পোশাক-পরিচ্ছদের সঙ্গে ইতিহাসের ধারণার সম্পর্ক কী?

পোশাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে নানান তথ্য পাওয়া যায়। তাই পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বলাভ করেছে।

পোশাক-পরিচ্ছদের সঙ্গে ইতিহাসের ধারণার সম্পর্ক –

  • সমাজে নারী ও পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ ভিন্ন ভিন্ন হয়। নারী-পুরুষের পোশাকের বৈচিত্র্য দেখে সমাজ রক্ষণশীল না প্রগতিশীল, নারীর স্বাধীনতা প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • ব্রিটিশ আমলে ভারতে কোট, প্যান্ট-সহ বিভিন্ন বিলিতি পোশাকের আমদানি হয়। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেক বাঙালি ধুতি-পাঞ্জাবি ছেড়ে কোট-প্যান্ট পরা শুরু করে। এ থেকে বাঙালি জনমানসে পাশ্চাত্য ধ্যানধারণার প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ভৌগোলিক পরিবেশ ও অঞ্চলভেদে মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদে নানান পরিবর্তন আসতে পারে। ঐতিহাসিকের কাজ এই পরিবর্তনগুলি চিহ্নিত করা ও তার কারণ ব্যাখ্যা করা।

পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক গ্রন্থসমূহ –

পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হল – মলয় রায় -এর লেখা ‘বাঙালির বেশবাস, বিবর্তনের রূপরেখা’, এমা টারলো-র লেখা ‘ক্লোথিং ম্যাটারস ড্রেস অ্যান্ড আইডেনটিটি ইন ইন্ডিয়া’ (Clothing Matters : Dress and Identity in India), মাইকেল ডেভিস -এর লেখা ‘আর্ট অফ ড্রেস ডিজাইনিং’ (Art of Dress Designing) প্রভৃতি।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় পোশাক-পরিচ্ছদের গুরুত্ব –

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। কারণ –

  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা – পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে একটি সমাজের রক্ষণশীলতা, প্রগতিশীলতা, নারীর মর্যাদা, নারী-পুরুষ বৈষম্য প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
  • রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে ধারণা – পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। উদাহরণ হিসেবে ‘জহর কোট’ ও ‘গান্ধি টুপি’-র কথা বলা যেতে পারে।

যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছে এরকম কয়েকটি উদাহরণ দাও।

উন্নত যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা হল সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্ত। তাই বর্তমানে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চা ইতিহাসের অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে।

ইতিহাসের উপর যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাব বিস্তারের কয়েকটি উদাহরণ –

  • 1853 খ্রিস্টাব্দে লর্ড ডালহৌসির আমলে ভারতে প্রথম রেল যোগাযোগ শুরু হয়, যা ভারতীয়দের জাতীয়তাবোধের বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • আধুনিক যুগে ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর ট্রেন, ট্রাম, বাস প্রভৃতির ব্যবহার শুরু হয় যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ ও সংযোগ গড়ে তোলে।

ভারতে রেলপথের প্রতিষ্ঠার কয়েকটি প্রভাব উল্লেখ করো।

মানবসভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটে চলেছে। ভারতে লর্ড ডালহৌসির আমলে রেলব্যবস্থা স্থাপন যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

ভারতের রেলপথের প্রতিষ্ঠার কয়েকটি প্রভাব –

  • রেলপথের প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলি একজোট হতে পেরেছিল।
  • রেলপথ নির্মাণের মধ্য দিয়ে ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হয়।
  • ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবীদের কাছে রেলপথ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ মাধ্যম।

যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস কেন ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ।

যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব –

  • দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা – যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস থেকে একটি দেশের অর্থনীতি, ব্যাবসাবাণিজ্য ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
  • প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা – যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস থেকে যানবাহন ও যোগাযোগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও প্রযুক্তি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।

চিত্রকলার গুরুত্ব লেখো।

চিত্রকলার গুরুত্ব –

  • ছবি আঁকা বা চিত্রকলার মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য, যুদ্ধের খণ্ডচিত্র, ব্যক্তির চিত্র, ব্যঙ্গচিত্র, জীবজন্তু বা অন্য কিছুর চিত্র পাওয়া যায়। আঁকা ছবির মাধ্যমে তা বাস্তবরূপ লাভ করে।
  • আঁকা ছবি থেকে শিল্পকলা, শিল্পরীতি, সংস্কৃতি, পৃষ্ঠপোষক, সময়কাল ইত্যাদি সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। ছবি আঁকা শিল্পীমনের পরিচয় দেয়। ফলে একটি অতীত সময় বা ঘটনা জীবন্ত হয়ে থাকে চিত্রটির মধ্যে। তাই ইতিহাসচর্চায় এর স্থান গুরুত্বপূর্ণ।

আধুনিক বাংলায় দৃশ্যশিল্পের বিকাশে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান কী ছিল?

আধুনিক বাংলায় দৃশ্যশিল্পের বিকাশে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান –

আধুনিক বাংলায় দৃশ্যশিল্পের বিকাশে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। চিত্রকলার ক্ষেত্রে তিনি ‘নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতি’-র উদ্ভাবক ছিলেন। কলকাতা আর্ট কলেজের হ্যাভেল সাহেবের সঙ্গে একযোগে তিনি গড়ে তোলেন বঙ্গীয় কলা সংসদ (1905 খ্রিস্টাব্দ)। দৃশ্যশিল্পের ইতিহাস নিয়ে তিনি একটি গ্রন্থও রচনা করেছিলেন ‘বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’ নামে। কাঠের মূর্তি তৈরির শিল্পকে তিনি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন, ‘কাটুম-কুটুম’ নামে যা অত্যন্ত জনপ্রিয়।

যামিনী রায়ের চিত্রাঙ্কনরীতির দুটি মূল বৈশিষ্ট্য লেখো।

যামিনী রায়ের চিত্রাঙ্কনরীতির বৈশিষ্ট্য –

ইতিহাসচর্চা ও ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্কন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছাত্র যামিনী রায়ের চিত্রাঙ্কনরীতির দুটি মূল বৈশিষ্ট্য হল –

  • যামিনী রায় তাঁর চিত্রাঙ্কনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছিলেন।
  • সহজসরলভাবে মানুষের মনের উপযোগী করে চিত্রশিল্পকে তিনি পরিবেশন করেছিলেন।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় আঁকা ছবির ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় আঁকা ছবির ইতিহাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় আঁকা ছবির গুরুত্ব –

  • সমকালীন ইতিহাসের তথ্য – আঁকা ছবি থেকে সমকালীন ইতিহাসের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতের এবং মুঘল যুগের আঁকা ছবি থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়।
  • অবিকৃত তথ্য – আঁকা ছবি থেকে অবিকৃত তথ্য পাওয়া যায় বলে পরবর্তীকালের গবেষকগণের কাছেও এইগুলি তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়। তবে এইগুলিরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চা কীভাবে সম্পর্কিত?

স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চার সম্পর্ক –

ভারতে 1850 -এর দশকে ক্যামেরায় ছবি তোলা শুরু হয়। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কালপর্বে ফোটোগ্রাফি। একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সাক্ষ্যপ্রমাণ।

1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময়ে ইউরোপীয় ফোটোগ্রাফার ভারতে এসে বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি তুলে রাখেন। এ ছাড়া 1940 -এর দশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়, নৌবিদ্রোহ প্রভৃতি ঘটনা সম্পর্কে ফোটোগ্রাফির মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়।

ফোটোগ্রাফি বিষয়ে ভারতে 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময়ে কী কী উদ্যোগ দেখা দেয়?

1850 -এর দশকের পর ক্যামেরার মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে, যা আঁকা ছবির থেকেও আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময়ে ফোটোগ্রাফি বিষয়ে উদ্যোগ –

  • ভারতে 1850 -এর দশক থেকেই বিদেশ থেকে ফোটোগ্রাফির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানি শুরু হয়।
  • 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সময়ে ফেলিক্স বিয়াতো, জন মুরে, লালা দীনদয়াল প্রমুখ বিখ্যাত ফোটোগ্রাফাররা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির গুরুত্ব লেখো।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে ফোটোগ্রাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির গুরুত্ব –

  • ফোটোগ্রাফির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছবিকে ক্যামেরাবন্দি করা যায়। এগুলি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কোনো মহান ব্যক্তি, কোনো হত্যাকাণ্ড বা অন্য কিছু হতে পারে। গৃহীত আলোকচিত্র তাই প্রামাণ্য তথ্য হয়ে ওঠে।
  • ফোটোগ্রাফি থেকে অতীতের কোনো বিষয়ের আলোকচিত্র ইতিহাসের উপাদান হিসেবে তথ্য জোগায়।
ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির গুরুত্ব লেখো।

তবে ফোটোগ্রাফকে পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য উপাদান বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন না।

কী কী কারণে ফোটোগ্রাফি আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে?

1990 -এর দশক থেকে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে ফোটোগ্রাফির ব্যবহার ব্যাপক মাত্রা পেয়েছে। গবেষকগণ এই বিষয়টিকে ইতিহাসের ‘Visual Turn‘ বলে থাকেন।

ফোটোগ্রাফি আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ –

  • ফোটোগ্রাফ অতীতের ঘটনাবলির হুবহু প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে এবং
  • সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ইতিহাসে বর্ণময়তা আনে ফোটোগ্রাফের ব্যবহার।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফের ব্যবহার কেন জটিল হয়ে উঠছে?

ফোটোগ্রাফের ব্যবহারের ক্ষেত্রে জটিলতা –

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় যত দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই ফোটোগ্রাফের ব্যবহারের বিষয়টি জটিল হয়ে উঠছে। কারণ – কম্পিউটারে ফোটো এডিটিং -এর নানা অত্যাধুনিক সফটওয়্যার -এর আবিষ্কার ও প্রয়োগের ফলে ফোটোগ্রাফে নানা ধরনের বিকৃতি বা ইচ্ছামতো পরিবর্তন ঘটানো সম্ভবপর হয়ে উঠেছে। তাই উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফের বিশ্বাসযোগ্যতার উপর সংশয় দেখা দিয়েছে।

স্থাপত্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে ইতিহাসচর্চায় সাহায্য করে?

স্থাপত্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য –

  • অমসৃণ পাথর-ইটের কাঠামো – প্রাচীন যুগে বিশেষত মিশর (পিরামিড), হরপ্পা, মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় এই ধরনের কাঠামো লক্ষণীয়।
  • মসৃণ ও কারুকার্যময় সৌধ – মধ্যযুগের ইউরোপীয় চার্চ, ভারতের তাজমহল ও প্রাসাদ ইত্যাদি স্থাপত্যশিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন।
  • ভাস্কর্য ও চিত্রকলা – নবজাগরণের যুগে ইটালি ও অন্যান্য জায়গার বিভিন্ন চার্চ ও প্রাসাদে নানা ভাস্কর্য ও চিত্রকলা দেখা যায়। এভাবে স্থাপত্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ইতিহাসচর্চায় সাহায্য করে।

স্থাপত্যের ইতিহাসের গুরুত্ব কী?

মানবসভ্যতার অগ্রগতির প্রতীক হল স্থাপত্য নিদর্শন।

স্থাপত্যের ইতিহাসের গুরুত্ব –

  • স্থাপত্য নিদর্শন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা, সমকালীন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কথা জানা যায়।
  • স্থাপত্যরীতির মধ্যে সাংস্কৃতিক সমন্বয় ফুটে ওঠে।
  • স্থাপত্যের প্রয়োজন ও উপযোগিতার পরিচয় পাওয়া যায়।

স্থানীর ইতিহাস বলতে কী বোঝো?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় স্থানীয় ইতিহাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর বিশেষত্বগুলি হল –

  • স্থানীয় গুরুত্ব – এই ধরনের ইতিহাসে স্থানীয় ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থানীয় গল্পকাহিনিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  • স্থানীয় সংস্কৃতি – স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কথা, তাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি এক্ষেত্রে প্রাধান্য লাভ করে।

এভাবে বৃহত্তর বা জাতীয় ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে স্থানীয় ইতিহাস উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় আঞ্চলিক বা স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম।

ইতিহাসচর্চায় আঞ্চলিক বা স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্ব –

  • ধারাবাহিকতা – স্থানীয় ইতিহাসে স্থানীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত চালচিত্র তুলে ধরা হয়।
  • উপাদান – জাতীয় স্তরের ইতিহাস রচনার সময়ে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাসকে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা জানতে সাহায্য – স্থানীয় ইতিহাস কোনো অঞ্চলের রাজনৈতিক উত্থানপতন ও জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।

শহরের ইতিহাস কীভাবে রচিত হয়?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় স্থানীয় ইতিহাসের মতো শহরের ইতিহাসও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

শহরের ইতিহাস রচনার উপাদানসমূহ –

  • উৎপত্তি – কোনো শাসক শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কি না, রাজধানী ছিল কি না, শহরটি ওই স্থানে গড়ে ওঠার কারণ কী ছিল, স্থাপত্যের বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করতে হয়।
  • সামাজিক – শহরে জনবসতি, সমাজতত্ত্ব, শিক্ষা-সংস্কৃতি বিষয়ে তথ্যের অনুসন্ধান প্রয়োজন হয়।
  • আর্থিক – ব্যাবসাবাণিজ্য, শিল্প, যোগাযোগ, যানবাহন প্রভৃতি বিষয়ে নানা তথ্য প্রয়োজন।

এইসব তথ্যের সাহায্যে শহরের ইতিহাস রচনা করা হয়।

শহরের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

শহরের ইতিহাসচর্চা বলতে বোঝায় প্রধানত শহরের সৃষ্টির কথা, ভৌগোলিক অবস্থান, স্থাপত্য, সংস্কৃতি, ব্যাবসাবাণিজ্য, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনাকে।

শহরের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ –

শহরের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল – ডঃ দিলীপ কুমার চক্রবর্তীর ‘দি আর্কিওলজি অফ এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান সিটিস’ (The Archaeology of Ancient Indian Cities), ডঃ অনিরুদ্ধ রায় রচিত ‘মধ্যযুগের নগর’, চার্লস টিলি ও ডব্লু ব্লকম্যান রচিত ‘সিটিস অ্যান্ড দ্য রাইজ অফ স্টেটস ইন ইউরোপ’ (Cities & the Rise of States in Europe) প্রভৃতি।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শহরের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শহরের ইতিহাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শহরের ইতিহাসের গুরুত্ব –

  • শহরের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা – শহরের ইতিহাসচর্চার ফলে শহরের পতনের কারণ, শহরের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা, ব্যাবসাবাণিজ্য প্রভৃতি বিষয়ে জানা যায়।
  • পৌর শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা – শহরের ইতিহাসচর্চার ফলে পৌরশাসন, রাজনৈতিক অবস্থা, স্থাপত্য, শিল্প-সংস্কৃতি, উন্নয়নের ধারা, বিবর্তন প্রভৃতি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।

স্বাধীন ভারতের কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজেদের সুনাম ও দক্ষতা বৃদ্ধি করেছিল?

স্বাধীন ভারতের ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান –

আধুনিক ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবর্তন ঘটেছে ব্রিটিশ আমলের সেনাবাহিনীগুলির মধ্য দিয়ে। স্বাধীন ভারতে সংঘটিত চিন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধগুলিতে ভারতীয় বাহিনী উল্লেখযোগ্য দক্ষতা দেখিয়েছিল। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের হয়ে বিশ্বশান্তি স্থাপনের যুগেও এই বাহিনী তার দক্ষতা প্রমাণ করেছিল। সবশেষে কার্গিল যুদ্ধেও (1999 খ্রিস্টাব্দ) ভারতীয় বাহিনীর সমরকুশলতা প্রমাণিত হয়েছে।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় সামরিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় সামরিক ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় সামরিক ইতিহাসের গুরুত্ব –

  • সৈনিকদের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা – সামরিক ইতিহাসচর্চায় যোদ্ধা বা সৈনিকদের অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। এ ছাড়া সেনাদের পোশাক, অস্ত্রশস্ত্র, খাবার, বেতন, রণকৌশল প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
  • যুদ্ধের খুঁটিনাটি ও আদর্শ সম্পর্কে ধারণা – সামরিক ইতিহাসচর্চার ফলে যুদ্ধের নীতি, কৌশল, খুঁটিনাটি বিষয়, প্রকৃত কারণ, আদর্শ প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তৃত জানা যায়।

পরিবেশ বিষয়ক দুটি ইতিহাস গ্রন্থের নাম লেখো।

পরিবেশ বিষয়ক দুটি ইতিহাস গ্রন্থের নাম –

পরিবেশ বিষয়ে বহু গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি গ্রন্থ হল –

  • র‍্যাচেল কারসন –এর লেখা ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ (Silent Spring) এবং
  • আলফ্রেড ক্রসবি –এর লেখা ‘ইকোলজিক্যাল ইম্পিরিয়ালিজম’ (Ecological Imperialism)

এইসব গ্রন্থগুলির মাধ্যমে পরিবেশের ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় পরিবেশের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

অথবা, পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কী?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় পরিবেশের ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব –

  • মানবসভ্যতার উপর পরিবেশের প্রভাব – পরিবেশের ইতিহাসচর্চার ফলে মানবসভ্যতার উপর পরিবেশের প্রভাব ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে মানুষের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়।
  • পরিবেশ রক্ষার জন্য আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা – ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাদের নিজেদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

মানবসভ্যতার উন্নয়নে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ইতিহাসে আলোচনার বিষয়বস্তুরূপে গুরুত্ব পেয়েছে।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা বিষয়ক গ্রন্থসমূহ –

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কতকগুলি গ্রন্থ হল – বিনয়ভূষণ রায়ের ‘উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা’, প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘হিস্ট্রি অফ হিন্দু কেমিস্ট্রি’ (History of Hindu Chemistry), ইরফান হাবিবের ‘টেকনোলজি ইন মিডিয়েভ্যাল ইন্ডিয়া’ (Technology in Medieval India) প্রভৃতি।

চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।

চিকিৎসাবিদ্যা আধুনিক ইতিহাসে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান পেয়েছে।

চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ –

চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল – ডঃ দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞান’, জে জোলি-র ‘ইন্ডিয়ান মেডিসিন’ (Indian Medicine), তপন চক্রবর্তীর ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস’ প্রভৃতি।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ।

আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার কারণ –

  • বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্রমোন্নতির ধারণা – আধুনিক যুগ হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চার ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কীভাবে ক্রমান্বয়ে আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত হল সে সম্পর্কে জানা যায়।
  • চিকিৎসাবিদ্যার ক্রমোন্নতির ধারণা – চিকিৎসাবিদ্যা কেমন ছিল এবং চিকিৎসাবিদ্যা কীভাবে আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত হল সে সম্পর্কে জানা যায়।

ভারতে আধুনিক যুগে নারীর ক্ষমতায়নের সূচনা কবে হয়? নারীমুক্তির ক্ষেত্রে কারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন?

নারীর ক্ষমতায়নের সূচনা –

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বঙ্গীয় নবজাগরণের যুগে ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়ের উদ্যোগে সতীদাহপ্রথা নিবারণ আইনের (1829 খ্রিস্টাব্দ) মধ্য দিয়ে ভারতে নারীর ক্ষমতায়নের সূত্রপাত হয়। 1856 খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে ‘হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন’ পাস হওয়ার ফলে নারীপ্রগতির উল্লেখযোগ্য অধ্যায় শুরু হয়।

নারীমুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব –

সারা দেশে নারীমুক্তি ও নারীকল্যাণের ক্ষেত্রে যারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন বীরেশলিঙ্গম পান্তুলু, জ্যোতিরাও ফুলে, সাবিত্রী বাঈ, ডি কে কারভে প্রমুখ।

নারীসমাজের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।

নারীসমাজের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ –

নারীসমাজের ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে দুটি হল –

  • জেরাল্ডিন ফোর্বস -এর লেখা ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’ (Women in Modern India) এবং
  • মালবিকা কার্লেকর -এর লেখা ‘ভয়েসেস ফ্রম উইদিন’ (Voices from Within)

নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব লেখো।

সামাজিক ইতিহাসের বিভিন্ন শাখার মতো নারী ইতিহাসচর্চা বর্তমানে প্রাধান্য লাভ করেছে।

নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব –

  • অধিকার প্রতিষ্ঠা – বিভিন্ন নারী আন্দোলনের মাধ্যমে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়।
  • উপেক্ষার প্রতিবাদ – পুরুষের প্রাধান্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ইতিহাস তুলে ধরে।
  • পারিবারিক সম্পর্ক – পরিবারে নারীর আচরণ, লিঙ্গবৈষম্য, নারী নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন করে।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার প্রধান প্রধান উপাদানগুলি কী কী?

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার প্রধান প্রধান উপাদানসমূহ –

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ব্যবহৃত উপাদানগুলি হল –

  • সরকারি নথিপত্র
  • আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা
  • চিঠিপত্র
  • সাময়িক পত্রপত্রিকা ইত্যাদি।

এই উপাদানগুলির নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ প্রয়োজন, কারণ – এই সকল উপাদানগুলির মধ্যে আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিগত মনোভাবের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়।

সরকারি নথিপত্র বলতে কী বোঝায়?

সরকারি নথিপত্রসমূহ –

যেসব তথ্যের সাহায্য নিয়ে ইতিহাস লেখা হয়, তাকে ইতিহাসের উপাদান বলে। আধুনিক ইতিহাসের উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম হল সরকারি নথিপত্র। সরকারি নথিপত্র বলতে বোঝায় পুলিশ, গোয়েন্দা বা সরকারি আধিকারিকদের রিপোর্ট, প্রতিবেদন, চিঠিপত্র ইত্যাদি।

সরকারি নথিপত্রের বিবরণ –

সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত সচিব ও আধিকারিকরা সরকারি কাজকর্ম নিয়ে বিভিন্ন চিঠিপত্র লেখেন, রিপোর্ট ও নোট দেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথিপত্র থেকে ইতিহাসের অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়।

পুলিশ, গোয়েন্দা এবং সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন বলতে কী বোঝায়?

আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে পুলিশ, গোয়েন্দা এবং সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পুলিশ, গোয়েন্দা এবং সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদনের ভূমিকা –

  • পুলিশ তার এলাকার আইনশৃঙ্খলার রিপোর্ট তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে পুলিশ ভারতীয়দের ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপের উপর নজর রাখত।
  • গোয়েন্দারা ব্রিটিশ আমলে বিপ্লবী ও আন্দোলনকারীদের গোপন খবর সংগ্রহ করত।
  • সরকারি আধিকারিকদের কাজ হল তাদের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার কাজের তদারকি করা। ব্রিটিশ আমলে সরকারি আধিকারিকগণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা সরকারের কাছে তাদের মতামত জানিয়ে প্রতিবেদন পেশ করতেন।

এই সকল নথিপত্র থেকে তৎকালীন ভারতের বিভিন্ন ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়, যা আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার কাজে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

মহাফেজখানা থেকে কীভাবে ইতিহাস জানা যায়?

যে-কোনো দেশের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সরকারি নথিপত্রের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি মহাফেজখানা (Record room) বা লেখ্যাগারে (Archieve) সংরক্ষিত এইসব নথি থেকে ঐতিহাসিক বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

মহাফেজখানা থেকে প্রাপ্ত ইতিহাস –

  • সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত সচিব ও আধিকারিকরা সরকারি কাজকর্ম নিয়ে বিভিন্ন চিঠিপত্র লেখালেখি করেন ও নোট দেন।
  • সরকারি মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারে সংরক্ষিত এইসব নথি থেকে সরকারের বিভিন্ন কাজকর্ম সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। একইভাবে বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধেও নানা গোপন তথ্য পাওয়া যায়, যার উপর নির্ভর করে ঘটনার বিনির্মাণ করাও সম্ভব।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব লেখো।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় সরকারি নথিপত্রের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব –

  • তথ্যভাণ্ডার – দেশের শাসন, আইন ও বিচার সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সরকারি মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারে সংরক্ষিত থাকে।
  • গোয়েন্দা তথ্য – পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের নথিপত্র থেকে গণ আন্দোলন, বিপ্লবীদের গতিবিধি ও তৎপরতা, জনগণের ক্ষোভ-বিদ্রোহের নানান তথ্য পাওয়া যায়।

সরকারি নথিপত্রের সীমাবদ্ধতা –

এইসব তথ্য ব্যবহারে সতর্কতা দরকার। কারণ – আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা এই উপাদানগুলিকে প্রভাবিত করেছিল।

গোপন নথিপত্র ব্যবহারের নিয়ম কী?

গবেষণামূলক কাজ বা নির্ভুল ঐতিহাসিক তথ্যের জন্য গোপন সরকারি নথিপত্র ব্যবহার করা হয়।

গোপন নথিপত্র ব্যবহারের নিয়ম –

গোপন নথির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল পুলিশ, গোয়েন্দা ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বিভিন্ন রিপোর্ট।

এই নথিগুলি ব্যবহারের সময় ঐতিহাসিকদের সতর্ক থাকতে হয়। কারণ – এই নথিগুলি ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে রচিত হয়নি। এগুলি থেকে যদি তথ্যসংগ্রহ করতে হয় তাহলে বিশ্লেষণ দরকার। কারণ বিদেশি শাসকদের ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি, শাসন ও দমনমূলক মানসিকতা এগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে।

Right to Information Act বা তথ্য জানার অধিকার আইন কী?

ভারতীয় সংবিধান তার জনগণকে বিভিন্ন অধিকার দান করেছে। তার মধ্যে তথ্য জানার অধিকার আইন বা Right to Information Act (2005) হল অন্যতম।

Right to Information Act বা তথ্য জানার অধিকার আইন –

ভারত সরকার এই আইন পাস করে জনগণকে তথ্য জানার অধিকার দান করেছে। এর দ্বারা যেকোনো ব্যক্তি যে-কোনো বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে। সরকার জনগণকে তথ্য জানাতে বাধ্য হয়।

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা কী?

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা ইতিহাসের দুই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

আত্মজীবনী –

আত্মজীবনী হল এক ধরনের অ-উপন্যাসধর্মী সাহিত্য, যেখানে রচয়িতা নিজের জীবন ও সমকালীন বিভিন্ন ঘটনাবলির বিবরণী পেশ করেন। বিভিন্ন আত্মজীবনীগুলির মধ্যে বিপ্লবী বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, সরলাদেবী চৌধুরাণীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

স্মৃতিকথা –

অতীতের কোনো ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কোনো ব্যক্তি পরবর্তীকালে তার স্মৃতি থেকে প্রাপ্ত অতীত ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে অথবা মৌখিকভাবে প্রকাশ করলে, তাকে বলা হয় স্মৃতিকথা। যেমন – দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’, এলিজার হইসেল -এর ‘নাইট’ প্রভৃতি।

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার মধ্যে পার্থক্য কী?

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার মধ্যে পার্থক্য –

আত্মজীবনী (Autobiography) ও স্মৃতিকথা (Memoir) সম্পূর্ণ এক জিনিস নয়। দুইয়ের মধ্যে অতি সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান।

আত্মজীবনী হল লেখকের সম্পূর্ণ জীবনেতিহাস। আত্মজীবনী লেখার সময়ে তিনি তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি কালানুক্রমিকভাবে পরপর লিখে থাকেন।

অপরদিকে, স্মৃতিকথায় সময়ানুক্রমিক বিবরণ সবসময় নাও থাকতে পারে। অনেক সময়ই লেখক নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার বিবরণ দিয়ে থাকেন। এর থেকে লেখকের জীবনের সকল দিকের কথা জানা নাও যেতে পারে।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানসমৃদ্ধ কয়েকটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার উদাহরণ দাও।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় লেখকের ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের পরিচয়ও ফুটে ওঠে।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানসমৃদ্ধ কয়েকটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা –

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানসমৃদ্ধ কয়েকটি আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা হল – বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, সরলাদেবী চৌধুরাণীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ প্রভৃতি।

স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয়?

অথবা, আত্মজীবনী কীভাবে ইতিহাসের উপাদান হয়ে ওঠে? কয়েকটি ইতিহাস সহায়ক আত্মজীবনীর উদাহরণ দাও।

ইতিহাসের উপাদানরূপে স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনী –

অতীতের কোনো ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কোনো ব্যক্তি পরবর্তীকালে তার স্মৃতি থেকে প্রাপ্ত অতীত ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে অথবা মৌখিকভাবে প্রকাশ করলে, তাকে বলা হয় স্মৃতিকথা (Memoir)। অপরদিকে আত্মজীবনী (Autobiography) হল এক ধরনের অ-উপন্যাসধর্মী সাহিত্য, যেখানে রচয়িতা নিজের জীবন ও সমকালীন বিভিন্ন ঘটনাবলির বিবরণী পেশ করেন। যে-কোনো স্মৃতিকথা কিংবা আত্মজীবনীতেই ব্যক্তিজীবনের আখ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বিশেষ এক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনা ও রাষ্ট্রের আখ্যান। এই কারণেই সেগুলি হয়ে ওঠে ইতিহাসের উপাদান।

ইতিহাস সহায়ক বিভিন্ন স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনীর মধ্যে বিপ্লবী বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’, সরলাদেবী চৌধুরাণীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’, দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ বীণা দাসের ‘শৃঙ্খল ঝংকার’, বুদ্ধদেব বসুর ‘আমার জীবন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার গুরুত্ব কী?

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার গুরুত্ব অপরিসীম।

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার গুরুত্ব –

  • লেখক প্রত্যক্ষদর্শীরূপে বিবরণী ও স্মৃতি রোমন্থন করেন
  • এই ধরনের লেখায় একটি বিশেষ সময়কালের সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অবস্থার আখ্যান ফুটে ওঠে।

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার সীমাবদ্ধতা –

এই উপাদান ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ – লেখকের ব্যক্তিগত মতামত এখানে প্রাধান্য লাভ করে।

বিপিনচন্দ্র পালের সত্তর বৎসর গ্রন্থ থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার কী তথ্য পাওয়া যায়?

সত্তর বৎসর হল বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী। এতে 1858 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1880 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

বিপিনচন্দ্র পালের সত্তর বৎসর গ্রন্থের তথ্যসমূহ –

  • বিপিনচন্দ্র পাল সম্পর্কে তথ্য – ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা বিপিনচন্দ্র পালের ছেলেবেলা, শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগদান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।
  • সমকালীন ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য – ‘সত্তর বৎসর’ থেকে সমকালীন শ্রীহট্ট জেলার পল্লীজীবন, পুরোনো কলকাতা, ব্রাহ্মসমাজ ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থ থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার কী তথ্য পাওয়া যায়?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি থেকে উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের গোড়ার অনেক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি গ্রন্থের তথ্যসমূহ –

  • সামাজিক – হিন্দুমেলা, চিত্রকলা, সেকালের বাঙালিদের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদির পরিচয় পাওয়া যায়।
  • রাজনৈতিক – বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলন সম্পর্কে নানান তথ্য জানা যায়।

রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে জানতেও গ্রন্থটি অতুলনীয়।

সরলাদেবী চৌধুরাণীর লেখা আত্মজীবনীর নাম কী? এই গ্রন্থ থেকেইতিহাস রচনার জন্য কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায়?

জীবনের ঝরাপাতা হল সরলাদেবী চৌধুরাণীর লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।

জীবনের ঝরাপাতা থেকে ইতিহাস রচনার জন্য প্রাপ্ত তথ্যসমূহ –

  • সমকালীন সময়ের সশস্ত্র বিপ্লবের নানান কথা ও বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এই গ্রন্থে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
  • জীবনের ঝরাপাতা থেকে সমকালীন সমাজের নারীশিক্ষা, নারীদের আচার-আচরণ, সমাজের বিভিন্ন আদবকায়দা ও ব্রাহ্মসমাজের কার্যকলাপের কথাও জানা যায়।

সরলাদেবী চৌধুরাণীর জীবনের ঝরাপাতা থেকে কোন্ সময়কালের কথা এবং কোন্ কোন্ বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের কথা জানা যায়?

সরলাদেবী চৌধুরাণীর জীবনের ঝরাপাতা –

সরলাদেবী চৌধুরাণীর আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থ থেকে উনিশ শতকের শেষ দুই দশক এবং বিশ শতকের প্রথম কয়েক বছরের বাংলা তথা ভারতের কথা জানা যায়।

জীবনের ঝরাপাতা জীবনীগ্রন্থ থেকে সমকালীন নানান ব্যক্তিত্বদের কথা জানা যায়। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, অরবিন্দ ঘোষ, মহাত্মা গান্ধি, বাল গঙ্গাধর তিলক প্রমুখ।

সরলাদেবী কর্তৃক প্রবর্তিত একটি ব্রতের নাম ও এর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করো।

সরলাদেবী চৌধুরাণী বাংলাদেশে হিন্দু জাতীয়তাবাদ জাগরণে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন।

সরলাদেবী কর্তৃক প্রবর্তিত ব্রত –

সরলাদেবীর উদ্যোগে ‘বীরাষ্টমী ব্রত’ পালিত হয়। মহা অষ্টমীর দিন গ্রামে গ্রামে পুকুরে সাঁতার প্রতিযোগিতা এবং রাখিবন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

সরলাদেবী কর্তৃক প্রবর্তিত ব্রতের উদ্দেশ্য

বীরাষ্টমী ব্রতের উদ্দেশ্য ছিল শরীরচর্চা, আত্মশক্তির বিকাশ, হীনম্মন্যতা দূরীকরণের মাধ্যমে জাতীয় মানসিকতার জাগরণ ঘটানো ইত্যাদি। এই কাজে সরলাদেবী সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন।

কে, কেন বীরাষ্টমী ব্রত পালন করেন?

সরলাদেবী চৌধুরাণীর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ জীবনের ঝরাপাতা থেকে উনিশ শতকের শেষ দুই দশক এবং বিশ শতকের প্রথম কয়েক বছরের বাংলা তথা ভারতের কথা জানা যায়।

বীরাষ্টমী ব্রত পালন –

সরলাদেবী চৌধুরাণীর উদ্যোগে বীরাষ্টমী ব্রত পালিত হয়। এই ব্রতের মূল উদ্দেশ্য ছিল শরীরচর্চা, আত্মশক্তির বিকাশ, হীনম্মন্যতা দূরীকরণের মাধ্যমে জাতীয় মানসিকতার জাগরণ ঘটানো ইত্যাদি।

সরলাদেবীর কর্মকাণ্ডকে বহুমুখী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বলা হয় কেন?

সরলাদেবীর বহুমুখী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মকাণ্ড –

সরলাদেবী চৌধুরাণীর জীবনপ্রবাহের পরতে পরতে যুক্ত ছিল দেশপ্রেম ও স্বাদেশিকতা। কখনও তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের অন্যতম অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন, আবার কখনও হয়ে উঠেছেন বীরাষ্টমী ব্রতের প্রবর্তক। মহিলা শিল্পমেলার উদ্যোক্তারূপে, খাদিবস্ত্রের প্রচারে গান্ধিজির সহযোগীরূপে, প্রতাপাদিত্য উৎসব ও উদয়াদিত্য উৎসবের সংগঠক হিসেবে সরলাদেবী চৌধুরাণী তাঁর জীবনীগ্রন্থে যে রামধনু সদৃশ বর্ণময়তার আভাস দিয়েছেন তার ভিত্তিতে বলা যায় যে, তাঁর কর্মকাণ্ড ছিল বহুমুখী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ।

সরলাদেবী চৌধুরাণীর জীবনের ঝরাপাতা গ্রন্থে কী ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়?

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান হিসেবে সরলাদেবী চৌধুরাণীর লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ জীবনের ঝরাপাতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সরলাদেবী চৌধুরাণীর জীবনের ঝরাপাতার ঐতিহাসিক তথ্যসমূহ –

  • ঠাকুরবাড়ির কথা – এই গ্রন্থ থেকে ঠাকুরবাড়ির শিশুদের ছেলেবেলা, নারীদের জীবনচর্চা, তাদের শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ অন্দরমহলের নানান কথা জানা যায়।
  • সরলাদেবীর কথা – জীবনের ঝরাপাতা থেকে সরলাদেবীর ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ও ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’ প্রতিষ্ঠা, স্বদেশি আন্দোলনে যোগদান, সশস্ত্র বিপ্লবে সমর্থন প্রভৃতি নানা বিষয় সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়।

Letters from a Father to His Daughter গ্রন্থটির মধ্য দিয়ে নেহরুর ইতিহাসবোধের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যক্তিগত চিঠিপত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠি ‘লেটারস ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার’ (Letters from a Father to His Daughter) -এর উল্লেখ করা যায়।

Letters from a Father to His Daughter গ্রন্থটির মধ্য দিয়ে নেহরুর ইতিহাসবোধ –

  • পৃথিবী সম্বন্ধে জানার জন্য সমস্ত দেশ ও তার জনগণের কথা জানা দরকার – এই কথার মধ্য দিয়ে নেহরুর আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে।
  • জাতিবিদ্বেষ এবং বর্ণবিদ্বেষ যে অমূলক তার প্রমাণ হিসেবে আদিম মানুষের পরিযান ও আবহাওয়ার কথা তিনি বলেন।
  • তিনি ভয় থেকে সৃষ্ট ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির বিরোধিতা করেন।
  • কৃষি, বাণিজ্য ও রাজশক্তির উত্থানের কথাও বলেন।

এই সকল বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নেহরুর ইতিহাসবোধ স্পষ্ট ও তথ্যভিত্তিক হয়ে উঠেছে।

Letters from a Father to His Daughter গ্রন্থটির মধ্য দিয়ে নেহরুর ইতিহাসবোধের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী?

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

ইতিহাসের উপাদানরূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব –

  • তৎকালীন সমাজচিত্র – সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রপত্রিকার মাধ্যমে তৎকালীন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। যেমন – ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকায় নীল কৃষকদের প্রতি ব্রিটিশ নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা প্রকাশ করা হত। বিধবাবিবাহ আন্দোলন সম্পর্কেও ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
  • জনমত গঠন – দেশে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনমত গঠন করতে সংবাদপত্র অদ্বিতীয়।

আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য কোন্ সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রগুলি তথ্যসরবরাহ করে?

আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি দৈনন্দিন বা সাপ্তাহিক ঘটনাবলির বিবরণ দেয়। এর পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হিসেবেও এই সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রগুলি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসরবরাহে সাহায্য করেছিল।

আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রসমূহ –

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রকাশিত ‘বঙ্গদর্শন’, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা ইত্যাদি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য তথ্যসরবরাহ করে।

জাতীয়তাবাদ জাগরণের ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকার অবদান লেখো।

ভারতে জাতীয়তাবাদ জাগরণে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার বিশেষ অবদান ছিল।

জাতীয়তাবাদ জাগরণের ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকার অবদান –

উনিশ শতকের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা জাতীয়তাবাদ জাগরণে অনুঘটকের কাজ করেছিল।

  • সংবাদ প্রচার – দেশে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ প্রচার করা।
  • জনমত গঠন – সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনমত গঠন করা।
  • দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা – দেশবাসীর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা ইত্যাদি।

কোন্ সময়কে কেন বঙ্গদর্শনের যুগ বলা হয়?

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রকাশিত ও সম্পাদিত বঙ্গদর্শন পত্রিকায় আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

বঙ্গদর্শনের যুগ বলার কারণ –

  • 1872 খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই কালপর্ব ‘বঙ্গদর্শনের যুগ’ নামে পরিচিত।
  • বঙ্গদর্শন পত্রিকা বাঙালি জাতির মধ্যে স্বদেশচেতনার সঞ্চার করে। এই পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি প্রথম প্রকাশিত হয়, যা পরবর্তীকালে বাঙালি তথা ভারতীয় বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূল মন্ত্রে পরিণত হয়েছিল।

বাংলার সভ্যতা-সংস্কৃতির কোন্ কোন্ ক্ষেত্রকে বঙ্গদর্শন সর্বাধিক প্রভাবিত করেছিল?

বঙ্গদর্শন -এর অবদান –

বাংলা ও বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতি ও মননশীলতার ক্ষেত্রে আধুনিকতার উদ্বোধন ঘটিয়েছিল বঙ্গদর্শন পত্রিকা। আধুনিক বাংলার ইতিহাসচর্চা, গদ্যসাহিত্যের পরিপূর্ণতা, জাতীয়তাবাদী জনমত গঠন – প্রতিটি ক্ষেত্রে পত্রিকাটির গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। বেদ-বেদান্ত ও পুরাণ সাহিত্যের পুনরাবিষ্কার করেছিল বঙ্গদর্শন।

বঙ্গদর্শনের লেখক তালিকায় কারা উল্লেখযোগ্য ছিলেন? পত্রিকাটি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী মন্তব্য করেছেন?

বঙ্গদর্শন পত্রিকার লেখক তালিকায় ছিলেন একাধিক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব, যেমন – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান –

বঙ্গদর্শন পত্রিকাটির ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আকর্ষণ ছিল ছোটোবেলা থেকেই। বস্তুত সমগ্র বাঙালি অধীর আগ্রহে এই মাসিক পত্রিকাটির জন্য অপেক্ষায় থাকত। ‘জীবনস্মৃতি’-তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “অবশেষে বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন আসিয়া বাঙালির হৃদয় একেবারে লুট করিয়া লইল।”

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় বঙ্গদর্শন পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় বঙ্গদর্শন পত্রিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

বঙ্গদর্শন পত্রিকার কারণ –

  • সমকালীন ঘটনা – বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে সমকালীন বাংলার জনগণের উপর ব্রিটিশ সরকার ও জমিদারের শোষণ, সাধারণ মানুষের অবস্থা, বিক্ষোভ, আন্দোলন প্রভৃতি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
  • স্বদেশপ্রেমের প্রসার – বঙ্গদর্শন পত্রিকা বাঙালি জাতির মধ্যে স্বদেশচেতনার সঞ্চার করে। এই পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বন্দেমাতরম’ সংগীত পরবর্তীকালে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সমার্থক হয়ে উঠেছিল।

নারীজাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে সোমপ্রকাশ পত্রিকার দুটি বিশেষ অবদান কী ছিল?

নারীজাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার অবদান –

উদারনৈতিক সামাজিক মতাদর্শভিত্তিক ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা নারীজাতির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছিল। প্রথমত, নারীশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে পত্রিকাটি প্রথম থেকেই আগ্রহী ও উদ্যোগী ছিল এবং দ্বিতীয়ত, বিধবা পুনর্বিবাহ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করা এবং আন্দোলনে সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে নারীজাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা বিশেষ অবদান রেখেছিল।

নীল বিদ্রোহের ক্ষেত্রে সোমপ্রকাশ কী ভূমিকা নিয়েছিল?

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের তীব্র বিরোধী পত্রিকা হিসেবে সোমপ্রকাশ কৃষকদের চেতনা জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

নীল বিদ্রোহের ক্ষেত্রে সোমপ্রকাশের ভূমিকা –

নীলকর সাহেব এবং জমিদারবিরোধী তীব্র জনমত গঠন করে পত্রিকাটি এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক চাহিদা পূরণ করেছিল। নীল কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে রেভারেন্ড জেমস লং পত্রিকাটির নানা সংবাদের কাটিং জমা দিয়েছিলেন। তিনি যথার্থই বলেছিলেন, ‘নীলবিদ্রোহের সময়পর্বে সোমপ্রকাশ হয়ে উঠেছিল ভারতীয় জনসমাজের মুখপত্র।’

জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাকে (1885 খ্রিস্টাব্দ) সোমপ্রকাশ পত্রিকা কীভাবে স্বাগত জানায়?

জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা বিষয়ে সোমপ্রকাশ পত্রিকা –

ভারতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয় 1885 খ্রিস্টাব্দে। এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছিল সোমপ্রকাশ পত্রিকা। ভারতের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলটির প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলায় যে ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারার প্রবর্তন হয়, এই পত্রিকাটি তাকে স্বাগত জানায় এবং প্রতিষ্ঠানটিকে এক ‘নতুন শক্তির আবির্ভাব’ বলে অভিহিত করে। এইভাবে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাঙালির জাতীয় জাগরণের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠে ‘সোমপ্রকাশ’।

ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলনে সোমপ্রকাশ পত্রিকার অবদান কী ছিল?

দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলনে সোমপ্রকাশ পত্রিকার অবদান –

  • সোমপ্রকাশ পত্রিকা ব্রিটিশ সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের আন্দোলনের নানান খবর প্রকাশ করত। এই পত্রিকা থেকে দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইনবিরোধী আন্দোলন, ‘ইলবার্ট বিল’-সহ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের আন্দোলন ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
  • 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ সংক্রান্ত নানা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদও এই পত্রিকা প্রকাশ করত।

ব্রিটিশ সরকার কেন 1898 খ্রিস্টাব্দে সোমপ্রকাশ সাময়িকপত্রের প্রকাশ বন্ধ করে দেয়?

সংবাদ পরিবেশন, জনমত গঠন এবং জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। সোমপ্রকাশ পত্রিকাও অনুরূপ ভূমিকা পালন করে।

1898 খ্রিস্টাব্দে সোমপ্রকাশ সাময়িকপত্রের প্রকাশনা স্থগিত হওয়ার কারণ –

1875 খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড লিটন দেশীয় মুদ্রণ আইন পাস করেন। এর দ্বারা সরকারের সমালোচনা প্রকাশ করে এমন দেশীয় সংবাদপত্রগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়। এই কারণে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ থাকে। পরে 1880 খ্রিস্টাব্দ থেকে এটি পুনরায় প্রকাশিত হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে এবং অবশেষে 1898 খ্রিস্টাব্দে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় সোমপ্রকাশ পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় সোমপ্রকাশ পত্রিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

সোমপ্রকাশ পত্রিকার কারণ –

  • সমকালীন ঘটনা – ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে সমকালীন বাংলার জনগণের প্রতি ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচার ও শোষণ, সাধারণ মানুষের অবস্থা, বিক্ষোভ, আন্দোলন প্রভৃতি বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়।
  • স্বদেশপ্রেমের সঞ্চার – ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা বাংলার একটি জনপ্রিয় পত্রিকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে স্বদেশপ্রেমের সঞ্চার ও প্রসার ঘটে। কারণ – ‘সোমপ্রকাশ’-এ নির্ভীকভাবে ব্রিটিশবিরোধী লেখা প্রকাশিত হত।

সোমপ্রকাশ পত্রিকা থেকে কী ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়?

সোমপ্রকাশ পত্রিকার তথ্যসমূহ – সোমপ্রকাশ পত্রিকা থেকে পাওয়া তথ্যগুলি হল –

  • সামাজিক – বিধবাবিবাহ, নারীশিক্ষা বিষয়ক সংবাদ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
  • রাজনৈতিক – 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, মহারানির ঘোষণা, ইলবার্ট বিল আন্দোলন, দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন, জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার সংবাদ প্রচারিত হয়।
  • আর্থিক – জমিদারি শোষণ ও ভূমিরাজস্ব, শিল্পায়ন বিষয়ে নানা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সুবিধা –

ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সুবিধাগুলি হল –

  • যাবতীয় বিষয়, ঘটনা, ব্যাখ্যা, ছবি, আওয়াজ ঐতিহাসিকের কাছে মুহূর্তের মধ্যে এনে হাজির করে ইন্টারনেট।
  • বিশ্বের বিভিন্ন লাইব্রেরি, মিউজিয়াম, লেখ্যাগার বা আর্কাইভ, মহাফেজখানার তথ্য সহজেই ঘরে বসে পাওয়ার সুযোগসুবিধা প্রদান করে।
  • ই-বুক -এর সহজলভ্যতা ও ব্যাপক ব্যবহার ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের বিষয়টিকে সহজতর করে তুলেছে।

ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের অসুবিধা –

ইতিহাসের তথ্য ও ছবি সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি হল –

  • সকল সময়ে সকল বিষয়ে তথ্য ও চিত্র পাওয়া যায় না।
  • প্রশিক্ষণের অভাব বা আর্থিক কারণেও অনেকে ইন্টারনেটের ব্যবহার করতে পারে না।
  • কিছু নকল ও প্রতারণামূলক তথ্যভাণ্ডার থাকে যা ব্যবহার করে ইতিহাস লেখা উচিত নয়।

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের প্রথম অধ্যায় “ইতিহাসের ধারণা” এর “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Please Share This Article

Related Posts

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য কাকে বলে

জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য কাকে বলে? জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য কাকে বলে? জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বিষাক্ত বর্জ্য ও বিষহীন বর্জ্য কাকে বলে? বিষাক্ত বর্জ্য ও বিষহীন বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য