এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সমুদ্রস্রোত কাকে বলে? সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “সমুদ্রস্রোত কাকে বলে? সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

সমুদ্রস্রোত কাকে বলে? সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
সমুদ্রস্রোত – বায়ুপ্রবাহ, পৃথিবীর আবর্তন সমুদ্রজলের উষ্ণতা, ঘনত্ব, লবণতা ইত্যাদির তারতম্যে সমুদ্রের কতকগুলি নিদিষ্ট অংশের জল প্রতিনিয়ত নিদিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রজলের এই প্রবাহ বা গতিকেই সমুদ্রস্রোত বলে।
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ –
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় –
- উৎপত্তির কারণ।
- দিক পরিবর্তনের কারণ।
সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ –
নিয়ত বায়ুপ্রবাহ –
- সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ হল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ। নিয়ত বায়ুপ্রবাহগুলি (আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু, মেরূ বায়ু) সমুদ্রের ওপরদিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রের ওপরের জলরাশিকে নিজের প্রবাহের দিকে চালিত করে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করে।
- বায়ুর মোট শক্তির 2-4% সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটায়।
- উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ু উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, পশ্চিমা বায়ু উত্তর আটলান্টিক স্রাত এবং মেরু বায়ু সুমেরু ও কুমেরু স্রোত সৃষ্টি করেছে।
পৃথিবীর আবর্তন গতি –
- পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর আবর্তন করায় যে কোরিলিস বলের উৎপত্তি হয় তার প্রভাবে সমুদ্রস্রোতও সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না।
- ফেরেলের সূত্র অনুসরণ করে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়।
- পৃথিবীর অবর্তনের কারণেই নিরক্ষরেখার উভয়পাশে পশ্চিমগামী উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি ঘটে।
সমুদ্রজলের উষ্ণতার পার্থক্য –
- নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে সমুদ্রজলের উষ্ণতা হ্রাস পায়।
- নিরক্ষীয় অঞ্চলে লম্ব সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল অধিক উত্তপ্ত, প্রসারিত ও হালকা হয়ে বহিঃস্রোত রূপে মেরূ অভিমুখী হয়।
- মেরু অঞ্চলে তির্যক সূযকিরণে সমুদ্রের জল শীতল, ঘন ও ভারী হয়ে অন্তঃস্রোতরূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তনের কারণ –
উপকূলের আকৃতি –
- প্রবহমান সমুদ্রস্রোত মহাদেশের যে প্রান্তে বা দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায়, সেখানকার গঠন বা আকৃতি অনুসারে সমুদ্রস্রোতের গতিপথ পরিবর্তিত হয় বা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়। এভাবেও নতুন নতুন স্রোতের উৎপত্তি হয়।
- দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়।
- আটলান্টিকে বেঙ্গুয়েলা স্রোত গিনি উপকূলে বাঁধা পেয়ে পশ্চিমে বাঁকে।
ঋতু পরিবর্তন –
ঋতু অনুসারে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন হলে, সেই পরিবর্তন অনুযায়ী সমুদ্রস্রোতেরও গতিপথ পরিবর্তিত হয়। যেমন – ভারত মহাসাগরে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোত এবং শীতকালে উত্তরপূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর পূর্ব মৌসুমি স্রোত প্রবাহিত হয়।
সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্য –
- সমুদ্রস্রোত একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ একমুখী। তবে ভারত মহাসাগরে মৌসুমি স্রোত ঋতু অনুসারে বিপরীতমুখী।
- সাধারণত বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সমুদ্রের জলরাশি একস্থানে থেকে অন্যস্থানে তাড়িত হয়। বায়ুশক্তির কেবলমাত্র 2-4% ঘর্ষণের মাধ্যমে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয়। ফলে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয়। ফলে সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ কম, ঘণ্টায় 3–10 কিমি।
- গভীর সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ 3-3.5 কিমি/ঘণ্টা।
- অগভীর সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ 7-9 কিমি/ঘণ্টা।
- মোট সমুদ্রজলের কেবলমাত্র 10% বহিঃস্রোত এবং 90% অন্তঃস্রোত।
- কোরিওসিল বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
- সমুদ্রস্রোত সারাবছর নিয়মিত ভাবে প্রবাহিত হয়।
- উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝা সৃষ্টি হয়।
- মহাসাগরগুলির উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বিভিন্ন স্রোত চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে স্রোতের কুণ্ডলী বা গায়র সৃষ্টি করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সমুদ্রস্রোত কাকে বলে?
সমুদ্রের নির্দিষ্ট অংশের জল যখন একটি নির্দিষ্ট দিকে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্রস্রোত বলে। বায়ুপ্রবাহ, পৃথিবীর আবর্তন, সমুদ্রজলের উষ্ণতা, ঘনত্ব ও লবণতার তারতম্য ইত্যাদি কারণে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয়।
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ কী?
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণগুলি হলো –
1. নিয়ত বায়ুপ্রবাহ (যেমন – আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু)।
2. পৃথিবীর আবর্তন গতি (কোরিওলিস বলের প্রভাব)।
3. সমুদ্রজলের উষ্ণতা ও ঘনত্বের পার্থক্য।
4. লবণাক্ততার তারতম্য।
কোরিওলিস বল সমুদ্রস্রোতকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
পৃথিবীর আবর্তনের কারণে কোরিওলিস বলের প্রভাবে –
1. উত্তর গোলার্ধে সমুদ্রস্রোত ডানদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
2. দক্ষিণ গোলার্ধে সমুদ্রস্রোত বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।
3. এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত সৃষ্টির জন্য দায়ী।
সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ কত?
1. গভীর সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ – 3-3.5 কিমি/ঘণ্টা।
2. অগভীর সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ – 7-9 কিমি/ঘণ্টা।
সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তনের কারণ কী?
1. উপকূলের আকৃতি (যেমন – ব্রাজিল অন্তরীপে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত বিভক্ত হয়)।
2. ঋতু পরিবর্তন (ভারত মহাসাগরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে স্রোতের দিক পরিবর্তন)।
3. মহাদেশীয় বাধা (স্রোত মহাদেশ বা দ্বীপপুঞ্জে বাধাপ্রাপ্ত হলে নতুন শাখা সৃষ্টি হয়)।
গায়র (Gyres) বা স্রোতের কুণ্ডলী কী?
মহাসাগরের উপক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল স্রোতগুলি চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে যে বৃত্তাকার প্রবাহ সৃষ্টি করে, তাকে গায়র বলে। যেমন – উত্তর আটলান্টিক গায়র।
ভারত মহাসাগরে মৌসুমি স্রোত কী?
1. গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোত প্রবাহিত হয়।
2. শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি স্রোত প্রবাহিত হয়।
সমুদ্রস্রোতের প্রভাব কী?
1. জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ (উষ্ণ স্রোত উপকূলকে উষ্ণ রাখে, শীতল স্রোত শীতল করে)।
2. মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্য (শীতল স্রোত প্ল্যাঙ্কটন বৃদ্ধি করে মাছের খাদ্য সরবরাহ করে)।
3. নাবিকদের সহায়তা (জাহাজ চলাচলে গতিবেগ বৃদ্ধি করে)।
4. কুয়াশা ও ঝড় সৃষ্টি (উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে)।
বিশ্বের কয়েকটি প্রধান সমুদ্রস্রোতের নাম বলুন।
1. উষ্ণ স্রোত – গালফ স্ট্রিম, কুরোশিও স্রোত, ব্রাজিল স্রোত।
2. শীতল স্রোত – ল্যাব্রাডর স্রোত, পেরু স্রোত, বেঙ্গুয়েলা স্রোত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “সমুদ্রস্রোত কাকে বলে? সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “সমুদ্রস্রোত কাকে বলে? সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন