এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ’ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ’ ব্যাখ্যা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
আধুনিক ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। বাহ্যিক আড়ম্বর, লোকাচার ও অনুষ্ঠানের চোরাস্রোতে আবদ্ধ হিন্দুধর্মকে তিনি পুনর্জীবন দান করেন।
প্রকৃত পরিচয় –
হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রামের ব্রাহ্মণ সন্তান গদাধর চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণেশ্বরে রানি রাসমণি প্রতিষ্ঠিত কালীমন্দিরের উপাসকের কাজে ব্রতী হন। এখানে তিনি নিবিড়ভাবে ঈশ্বর সাধনায় মগ্ন হন এবং সিদ্ধিলাভ করে পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণরূপে পরিচিত হন।
সর্বধর্ম সমন্বয় –
তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা এবং পাণ্ডিত্যের অধিকারী না হলেও অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষা ও উপমার সাহায্যে তিনি তাঁর ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচার করেন এবং তা সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে প্রবল ভাবে আকৃষ্ট করে। তিনি ঘোষণা করেন, সব ধর্ম সত্য এবং সব ধর্মমত অনুসরণেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায়। ধর্মে ধর্মে ভেদাভেদের কোনো কারণ নেই, ঈশ্বর আসলে এক ও অভিন্ন। ঈশ্বরের অধিষ্ঠান রয়েছে মানুষের অন্তরে, ‘শিব জ্ঞানে জীব সেবা’ করলেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ সম্ভব। তাঁর মতে ‘যত মত তত পথ’ এবং ‘যত্র জীব তত্র শিব।’

মন্তব্য –
স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দের কাছে শ্রীরামকৃষ্ণই প্রথম অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। আর ঋষি অরবিন্দের পরিভাষায় – ‘বাংলার পুনর্জাগরণে শ্রীরামকৃষ্ণের অবদানই শ্রেষ্ঠ।’
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ কী?
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মতে, সব ধর্মই সত্য এবং সব ধর্মই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর বিভিন্ন পথ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, এবং বিভিন্ন ধর্ম শুধু ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সেই একই সত্যকে প্রকাশ করে। তাঁর এই আদর্শকে ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ বলা হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মতে ধর্মের উদ্দেশ্য কী?
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মতে, ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা। তিনি বলতেন, ‘শিব জ্ঞানে জীব সেবা’ অর্থাৎ প্রতিটি জীবেই ঈশ্বরের উপস্থিতি রয়েছে। তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা যায়।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ‘যত মত তত পথ’ বক্তব্য কী বোঝায়?
যত মত তত পথ – এই বক্তব্যের মাধ্যমে শ্রীরামকৃষ্ণদেব বোঝাতে চেয়েছেন যে, ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর অসংখ্য পথ রয়েছে। প্রতিটি ধর্মই ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি পথ। তাই ধর্মে ধর্মে কোনো ভেদাভেদ নেই।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ধর্মীয় মতাদর্শ কীভাবে সমাজকে প্রভাবিত করেছিল?
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সহজ-সরল ভাষা ও উপমার মাধ্যমে প্রকাশিত ধর্মীয় মতাদর্শ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন এবং সব ধর্মের সমন্বয়ের মাধ্যমে সামাজিক ঐক্য ও শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ‘যত্র জীব তত্র শিব’ বক্তব্য কী অর্থ বহন করে?
যত্র জীব তত্র শিব – এই বক্তব্যের অর্থ হলো, যেখানে জীব সেখানে শিব। অর্থাৎ প্রতিটি জীবেই ঈশ্বরের উপস্থিতি রয়েছে। তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আদর্শ কীভাবে আধুনিক ভারতকে প্রভাবিত করেছে?
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের আদর্শ আধুনিক ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের মাধ্যমে এই আদর্শকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ঋষি অরবিন্দের মতে, বাংলার পুনর্জাগরণে শ্রীরামকৃষ্ণের অবদানই শ্রেষ্ঠ।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মতে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়?
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মতে, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সব ধর্মের মূল সত্যকে বুঝতে হবে এবং সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলতেন, ঈশ্বর এক, কিন্তু তাঁর প্রকাশ বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্নভাবে হয়েছে।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জীবন ও শিক্ষা কীভাবে সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে?
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জীবন ও শিক্ষা সাধারণ মানুষকে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, এবং মানবসেবার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ দেখায়। তাঁর সরলতা ও গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞান মানুষকে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ’ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ’ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।