তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

Rohit Mondal

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো -
তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো –

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য –

পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে 66½°-90° অক্ষাংশের মধ্যে তুন্দ্রা জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়। ইউরোপের নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড আইসল্যান্ড; উত্তর আমেরিকার উত্তর কানাডা, আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব-পশ্চিম অংশ; দক্ষিণ গোলার্ধের অ্যান্টার্কটিকার গ্র্যাহামল্যান্ড উপদ্বীপ ও দক্ষিণ আমেরিকার ফকল্যান্ড -এ তুন্দ্রা জলবায়ু দেখা যায়।

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য –

  • স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্মকাল – মেরু অঞ্চলে সূর্য তির্যকভাবে কিরণ দেওয়ায় এই অংশে 2-3 মাস গ্রীষ্ম ঋতু থাকে। গ্রীষ্মকালে 22-23 ঘণ্টা দিন স্থায়ী হয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী শীতকাল – সূর্যের দক্ষিণায়নের ফলে টানা কয়েকজন দীর্ঘ রাত্রি বিরাজ করে। তির্যক সূর্যরশ্মি পতিত হওয়ার কারণে বছরে 4-7 মাস বরফাবৃত শীতকাল থাকে।
  • তাপমাত্রা – গ্রীষ্মকালে সূর্য তির্যকভাবে রশ্মি দিলেও গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় 10°C। শীতকালে অতিতির্যক সূর্যরশ্মি ও প্রচুর তুষারপাতের জন্য এখানে তাপমাত্রা থাকে 35°C-45°C।
  • বায়ুচাপ – অত্যন্ত তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মি, মেরু অঞ্চলে অবস্থানের জন্য সারাবছর উষ্ণতা কম থাকায় উচ্চচাপ বিরাজ করে।
  • বায়ুপ্রবাহ – তুন্দ্রা অঞ্চলে মূলত মেরু বায়ুর প্রভাব লক্ষ করা যায়। দীর্ঘ শীতকালে প্রবল তুষারঝড়ের সৃষ্টি হয়। গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় 175 কিমি।
  • অধঃক্ষেপণ – তুন্দ্রা অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র 25-30 সেমি। এই বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই গ্রীষ্মকালে ঘটে। শীতকালে প্রবল তুষারপাতের সৃষ্টি হয়।
  • মেরুজ্যোতি – বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার থেকে চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে এই অঞ্চলে রাত্রিকালীন আলোকরশ্মির সৃষ্টি হয়। এই মেরু প্রভাকে বলে সুমেরু প্রভা বা অরোরা বোরিয়ালিস।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তুন্দ্রা জলবায়ু কোথায় দেখা যায়?

পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে 66.5°-90° অক্ষাংশের মধ্যে তুন্দ্রা জলবায়ু দেখা যায়। যেমন —
1. উত্তর গোলার্ধে – আলাস্কা, উত্তর কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড।
2. দক্ষিণ গোলার্ধে – অ্যান্টার্কটিকা, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ।

তুন্দ্রা জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

তুন্দ্রা জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো —
1. স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্মকাল (2-3 মাস)।
2. দীর্ঘস্থায়ী শীতকাল (4-7 মাস)।
3. অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রা (গ্রীষ্মে ~10°C, শীতে -35°C থেকে -45°C)।
4. অল্প বৃষ্টিপাত (বার্ষিক 25-30 সেমি, প্রধানত তুষাররূপে)।
5. মেরু বায়ুর প্রাধান্য ও তীব্র তুষারঝড়।

তুন্দ্রা অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল কেমন হয়?

1. গ্রীষ্মকাল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত (2-3 মাস)।
2. দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় 22-23 ঘণ্টা (মধ্যরাতের সূর্য দেখা যায়)।
3. গড় তাপমাত্রা 10°C -এর নিচে থাকে।
4. এই সময়ে কিছু কম উচ্চতার উদ্ভিদ (মস, লাইকেন, ছোট গুল্ম) জন্মায়।

তুন্দ্রায় বৃষ্টিপাত কেমন হয়?

1. বার্ষিক বৃষ্টিপাত মাত্র 25-30 সেমি।
2. অধিকাংশ বৃষ্টিপাত গ্রীষ্মকালে হয়।
3. শীতকালে তুষারপাত হয়, যা জমে স্থায়ী বরফে পরিণত হয়।

তুন্দ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী কীভাবে বেঁচে থাকে?

1. উদ্ভিদ – কম উচ্চতার মস, লাইকেন, ঘাস ও ছোট গুল্ম জন্মায় (কারণ মাটি স্থায়ী হিমায়িত/পার্মাফ্রস্ট)।
2. প্রাণী – মেরু ভালুক, বল্গাহরিণ, আর্কটিক শিয়াল, সীল, পেঙ্গুইন (দক্ষিণ গোলার্ধে) ইত্যাদি অভিযোজিত প্রাণী বাস করে।

মেরুজ্যোতি (অরোরা) কী?

1. মেরুজ্যোতি (Aurora Borealis/Aurora Australis) হলো আকাশে রঙিন আলোর প্রদর্শন।
2. এটি সৌরকণা ও পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মিথস্ক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।
3. উত্তর মেরুতে একে অরোরা বোরিয়ালিস, দক্ষিণ মেরুতে অরোরা অস্ট্রালিস বলে।

তুন্দ্রা অঞ্চলে মানুষের বসবাস কীভাবে সম্ভব?

1. জনবসতি অত্যন্ত কম, মূলত ইনুইট, সামি জাতির লোকেরা বাস করে।
2. তারা পশুচারণ (রিন্ডিয়ার), মাছধরা ও শিকার এর উপর নির্ভরশীল।
3. আধুনিক প্রযুক্তি (তাপিত ঘর, স্নোমোবাইল) ব্যবহার করে বসবাস করে।

জলবায়ু পরিবর্তন তুন্দ্রাকে কীভাবে প্রভাবিত করছে?

তাপমাত্রা বৃদ্ধি → পার্মাফ্রস্ট গলছে, বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন।
প্রাণীর আবাসস্থল হ্রাস (মেরু ভালুকের সংখ্যা কমছে)।
উদ্ভিদের বিস্তার ঘটছে (টুন্ড্রা থেকে নতুন গাছ জন্মাচ্ছে)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো -

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো -

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

About The Author

Rohit Mondal

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অবস্থান ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী তা আলোচনা করো।