এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?
সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও বহু আত্মত্যাগের পর স্বাধীনতা এলেও তা এলো দেশভাগের বেদনা ও উদ্বাস্তু সমস্যার অবাঞ্ছিত বিঘ্ন নিয়ে। ভারত সরকার প্রথম পাঁচ বছর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এই উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। এই কারণে 1947 খ্রিস্টাব্দে থেকে 1952 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ
আশ্রয় দান ও পুনর্বাসন –
স্বাধীন ভারত সরকার তার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে উদ্বাস্তু জনস্রোতকে আশ্রয় দানের ব্যবস্থা করেছিল। প্রথমে তাদের আশ্রয় দান করা হয়েছিল ‘সাময়িক শিবির’ বা ‘ট্রানজিট ক্যাম্পে’, পরে তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের (পি. এল. ক্যাম্প) ব্যবস্থা করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু উত্তর ও পশ্চিম ভারতে মূলত পাঞ্জাবে আশ্রয় নিয়েছিল। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে আগত উদ্বাস্তু ও শরণার্থীরা জীবন ও জীবিকার স্বার্থে আশ্রয় নিয়েছিল মূলত এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়।
ডোল বিতরণ –
সরকারি ত্রাণশিবিরে জীবন নির্বাহের জন্য তাদের যে ত্রাণ দেওয়া হত, সরকারি পরিভাষায় তাকে বলা হত ‘ডোল’। যদিও ‘ডোল’ -এর মান ও পরিমাণ – দুইই ছিল যথেষ্ট অকিঞ্চিৎকর।
নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি সম্পাদন –
উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খাঁ 1950 খ্রিস্টাব্দে একটি চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করেন। এতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান, উদ্বাস্তু সমস্যার কারণ ও পরিমাণ নির্ধারণের জন্য কমিটি গঠন প্রভৃতির কথা বলা হয়। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নামে এটি নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি নামে পরিচিত হয়। উল্লেখ্য, এই চুক্তির দ্বারা শরণার্থীর স্রোত কিছুটা কমলেও সমস্যার কোন স্থায়ী সমাধান হয়নি।
জনহস্তান্তর –
কেন্দ্রীয় সরকার পাঞ্জাবে সম্পত্তি ও জনবিনিময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উদ্বাস্তু সমস্যাকে খানিকটা লাঘব করতে চেয়েছিল
মন্তব্য –
উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে দেশের পশ্চিমাঞ্চল অপেক্ষা পূর্বাঞ্চলে ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ছিল অনেকটাই হতাশাজনক। স্বয়ং নেহরু পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু উদ্বাস্তু দের পশ্চিম-মুখী যাত্রাকে ‘নিছক কাল্পনিক ভয়’ আখ্যা দেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারত সরকার উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে কোন সময়কালকে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ বলে চিহ্নিত করে?
1947 থেকে 1952 সাল পর্যন্ত সময়কালকে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ বলা হয়, কারণ এই সময়ে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
উদ্বাস্তুদের প্রথমে কোথায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল?
প্রথমে তাদের সাময়িক শিবির (ট্রানজিট ক্যাম্প)-এ রাখা হয়েছিল, পরে স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য পি. এল. ক্যাম্প (Permanent Liability Camp)-এর ব্যবস্থা করা হয়।
পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুরা মূলত কোথায় বসতি স্থাপন করে?
1. পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুরা মূলত পাঞ্জাব, উত্তর ও পশ্চিম ভারতে বসতি স্থাপন করে।
2. পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত উদ্বাস্তুরা পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয়।
‘ডোল’ কী? উদ্বাস্তুদের জন্য এটি কতটা কার্যকর ছিল?
‘ডোল’ ছিল সরকারি ত্রাণশিবিরে উদ্বাস্তুদের দেওয়া সাহায্য। তবে এর পরিমাণ ও মান খুবই অপ্রতুল ছিল, যা তাদের সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট ছিল না।
নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি কী? এটি উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে কতটা সফল হয়েছিল?
1. নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 সাল) ছিল ভারতের জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের লিয়াকৎ আলি খানের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি।
2. এতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, উদ্বাস্তু সমস্যার কারণ ও সমাধান নিয়ে কমিটি গঠন ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
3. এই চুক্তিতে শরণার্থী প্রবাহ কিছুটা কমলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
পাঞ্জাবে উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল?
পাঞ্জাবে সম্পত্তি ও জনবিনিময় (জনহস্তান্তর) -এর ব্যবস্থা করা হয়, যা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে কিছুটা সাহায্য করেছিল।
পূর্ব ভারতে উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে ভারত সরকারের ভূমিকা কেমন ছিল?
পূর্ব ভারতে উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে ভারত সরকারের ভূমিকা ছিল –
1. পশ্চিম ভারতের তুলনায় পূর্ব ভারতে (পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা) সরকারের পদক্ষেপ হতাশাজনক ছিল।
2. নেহরু পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু উদ্বাস্তুদের পশ্চিমমুখী যাত্রাকে “নিছক কাল্পনিক ভয়” বলে উল্লেখ করেন, যা সমস্যা সমাধানে সরকারের অবহেলা নির্দেশ করে।
উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে ভারত সরকারের সাফল্য ও সীমাবদ্ধতাগুলো কী ছিল?
উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে ভারত সরকারের সাফল্য –
1. লক্ষাধিক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় ও পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল।
2. পাঞ্জাবে সম্পত্তি বিনিময়ের মাধ্যমে অনেককে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়।
উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে ভারত সরকারের সীমাবদ্ধতা –
1. ত্রাণ সহায়তা (ডোল) অপ্রতুল ছিল।
2. পূর্ব ভারতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীর ও অকার্যকর ছিল।
3. নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন