উত্তর ভারতে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা অধিক প্রচলিত কেন? কূপ ও নলকূপের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উত্তর ভারতে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা অধিক প্রচলিত কেন? কূপ ও নলকূপের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কূপ ও নলকূপের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো-মাধ্যমিক ভূগোল
কূপ ও নলকূপের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো-মাধ্যমিক ভূগোল
Contents Show

উত্তর ভারতে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা অধিক প্রচলিত কেন?

উত্তর ভারতের উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার প্রভৃতি রাজ্যে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা অধিক প্রচলিত হয়। এর কারণগুলি হল –

  1. নরম মাটি – উত্তরের সমভূমিতে কোমল পাললিক শিলাস্তর বর্তমান। ফলে গভীর নলকূপ খননে সুবিধা হয়।
  2. প্রবেশ্য শিলাস্তর – উত্তরপ্রদেশের সমভূমি অঞ্চল প্রবেশ্য পাললিক শিলাস্তর দ্বারা গঠিত হওয়ায় বৃষ্টির জল সহজে শিলার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। ফলে ভৌমজলের ভান্ডার পূর্ণ থাকে।
  3. ঘন জনবসতি – উত্তর ভারত ঘনজনবসতিপূর্ণ হওয়ায় সেচখাল সর্বত্র গড়ে ওঠেনি। ফলে নলকূপ দ্বারা জলসেচ, বেশি পরিমাণে ঘটে।
  4. বিদ্যুতের জোগান – উত্তর ভারতে বিদ্যুতের যথেষ্ট জোগান থাকায় বৈদ্যুতিক উপায়ে নলকূপের সাহায্যে জল তুলে জলসেচ করা হয়।

কূপ ও নলকূপের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।

কূপ ও নলকূপের সুবিধা –

  1. সুনিশ্চিত জলের জোগান – জলাশয় অথবা খালের সাহায্যে জলসেচ করা হলে কৃষিজমির অনেকটা অংশ নষ্ট হয়, কিন্তু কূপ ও নলকূপের ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কা থাকে না।
  2. সুবিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলসেচের প্রসার – নলকূপের দ্বারা কৃষিক্ষেত্রের বিস্তীর্ণ অংশে জলসেচ করা যায়।
  3. স্বল্প জলসঞ্চয় – কূপ ও নলকূপ থেকে জলসেচ করা হলে কৃষিজমিতে কম পরিমাণে জল জমে।
  4. খরা পরিস্থিতির মোকাবিলা – খরা মরশুমের সময় কূপ ও নলকূপ থেকে জল পাওয়ার সুবিধা আছে।
  5. স্বল্প আবর্ত ব্যয় – এই পদ্ধতিতে আবর্ত ব্যয়ের পরিমাণ কম।
কূপের সাহায্যে জলসেচ ব্যবস্থা
কূপের সাহায্যে জলসেচ ব্যবস্থা

কূপ ও নলকূপের অসুবিধা –

  1. লবণাক্ততা – কূপ সেচনে লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়।
  2. শিলা গঠনে অসমতা – কঠিন অপ্রবেশ্য শিলাস্তরে কূপ খনন অসুবিধাজনক।
  3. ভৌমজল স্তরের অবনমন – দীর্ঘ সময়ব্যাপী নলকূপের সাহায্যে জল তুললে ভৌমজল স্তর নীচে নেমে যায়। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে যখন জলের প্রয়োজন তখন কূপগুলি শুকিয়ে যায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

উত্তর ভারতে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা কেন বেশি প্রচলিত?

উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে নরম পাললিক মাটি, ভৌমজলের পর্যাপ্ত মজুদ, বিদ্যুতের সহজলভ্যতা এবং ঘন জনবসতির কারণে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ বেশি ব্যবহৃত হয়।

উত্তর ভারতের কোন রাজ্যগুলিতে নলকূপ সেচ বেশি দেখা যায়?

উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার প্রভৃতি রাজ্যে নলকূপ সেচ বেশি প্রচলিত।

উত্তর ভারতে নলকূপ খনন করা সহজ কেন?

এখানকার মাটি নরম ও প্রবেশ্য পাললিক শিলাস্তর দ্বারা গঠিত, যার ফলে গভীর নলকূপ খনন করা সহজ হয়।

নলকূপ সেচের জন্য বিদ্যুৎ কীভাবে সহায়ক?

উত্তর ভারতে বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় বৈদ্যুতিক পাম্পের মাধ্যমে সহজেই ভৌমজল তুলে সেচ দেওয়া যায়।

নলকূপ সেচের প্রধান সুবিধা কী?

1. সুনিশ্চিত জলের সরবরাহ।
2. বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সেচ দেওয়া সম্ভব।
3. খরা মৌসুমেও জলের ব্যবহার নিশ্চিত করা।

নলকূপ সেচের কী কী অসুবিধা রয়েছে?

1. ভৌমজলের স্তর নিচে নেমে যাওয়া।
2. মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি।
3. শুষ্ক মৌসুমে কূপ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

নলকূপের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে কী সমস্যা দেখা দেয়?

ভৌমজলের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে জলস্তর নিচে নেমে যায় এবং ভবিষ্যতে জলের সংকট দেখা দিতে পারে।

নলকূপ ও খালের সেচের মধ্যে পার্থক্য কী?

1. নলকূপে ভৌমজল ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে খালে নদী বা জলাশয়ের জল ব্যবহার করা হয়।
2. নলকূপ সেচে জমির কম ক্ষতি হয়, কিন্তু খাল সেচে বেশি জমি নষ্ট হতে পারে।

নলকূপ সেচ কৃষকের জন্য কতটা ব্যয়সাপেক্ষ?

প্রাথমিকভাবে নলকূপ স্থাপন ব্যয়বহুল হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি সাশ্রয়ী, কারণ এতে কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হয়।

ভৌমজলের অত্যধিক ব্যবহার রোধে কী করা উচিত?

1. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ (রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং)।
2. ড্রিপ ইরিগেশন বা ফোঁটায় সেচ পদ্ধতি ব্যবহার।
3. নলকূপের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উত্তর ভারতে নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা অধিক প্রচলিত কেন? কূপ ও নলকূপের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতকে মৃত্তিকা অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও-মাধ্যমিক ভূগোল

ভারতকে মৃত্তিকা অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য লেখো

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য

মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখার মধ্যে পার্থক্য লেখো

মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখা কী? মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখার মধ্যে পার্থক্য

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতকে মৃত্তিকা অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব

মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখা কী? মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখার মধ্যে পার্থক্য

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার