এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হওয়া প্রধান তিনটি নদী – সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এদের একাধিক উপনদী ও শাখানদীর দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে উত্তর ভারতের নদী ব্যবস্থা। মালভূমি থেকেও উৎপন্ন বেশ কয়েকটি নদী উত্তর ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সিন্ধু নদ (মোট দৈর্ঘ্য 2880 কিমি, ভারতে 709 কিমি) –
- উৎস – তিব্বতের মানস সরোবরের 100 কিমি উত্তরে সিঙ্গি খাবাব বা সিন-কা-বাব হিমবাহ থেকে সিন্ধু নদের উৎপত্তি।
- প্রবাহপথ – উৎপত্তি লাভের পর এটি উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ভারতের নবগঠিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (2019 খ্রিস্টাব্দ) লাদাখে প্রবেশ করে জাস্কর ও লাদাখ পর্বত অতিক্রম করে বুঞ্জির কাছে 5 কিমি গভীর গিরিখাত সৃষ্টি করেছে। লাদাখের (নবগঠিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল) মধ্য দিয়ে 709 কিমি পথ অতিক্রম করে সিন্ধু নদ পাকিস্তানে প্রবেশ করে এদেশের মধ্যভাগ দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
- মোহানা – পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরবসাগরে পতিত হয়েছে।
- উপনদী – সিন্ধুর বামতীরের পাঁচটি উপনদী, যথা – শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা পঞ্চনদ নামে পরিচিত। অন্যদিকে ডানতীরের কয়েকটি উপনদী হল – গিলগিট, শিগার, শায়ক প্রভৃতি।
গঙ্গা (মোট দৈর্ঘ্য 2510 কিমি, ভারতে 2071 কিমি) –
- উৎস – গঙ্গার উৎস হল উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের গোমুখ গুহার গঙ্গোত্রী হিমবাহ।
- প্রবাহপথ – সর্বপ্রথম গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথী নামে একটি সংকীর্ণ জলধারা গিরিখাতের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগের নিকট অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মূলত পিন্ডার, মন্দাকিনি ও ধৌলিগঙ্গার মিলিত প্রবাহই হল অলকানন্দা। দেবপ্রয়াগের পর ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলিত প্রবাহই গঙ্গা নামে পরিচিত।
- গতিপথ –
- উচ্চগতি – উৎপত্তি স্থল বা দেবপ্রয়াগ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি।
- মধ্যগতি – হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতি।
- নিম্নগতি – রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগর হল গঙ্গার নিম্নগতি।
- উপনদী –
- বামতীরস্থ উপনদী – গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, বুড়িগণ্ডক, রামগঙ্গা, বাগমতী, কোশী প্রভৃতি।
- ডানতীরস্থ উপনদী – যমুনা, শোন প্রভৃতি।
- শাখানদী – গঙ্গার প্রধান শাখানদী হল ভাগীরথী ও হুগলি নদী।
ব্রহ্মপুত্র নদ (মোট দৈর্ঘ্য 2980 কিমি, ভারতে 916 কিমি) –
- উৎস – তিব্বতের মানস সরোবর ও কৈলাস পর্বতের মধ্যবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি।
- প্রবাহপথ –
- সর্বপ্রথম ব্রহ্মপুত্র নদ সাংপো নামে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়েছে।
- এরপর ভারতের উত্তর পূর্বাংশে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের নিকট দক্ষিণমুখী হয়ে ডিহং নামে অরুণাচলপ্রদেশ রাজ্যে প্রবেশ করেছে।
- সাদিয়া অঞ্চলে ব্রহ্মকুণ্ডের উত্তরদিক থেকে ডিবং, এর পূর্বদিক থেকে লোহিত নদী ডিহং নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নাম ধারণ করেছে।
- এই তিনটি নদীর মিলিত জলধারা ব্রহ্মপুত্র নাম নিয়ে অসমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ধুবড়ির নিকট যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এবং যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা একসঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বাংলাদেশের উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
- উপনদী –
- বামতীরস্থ উপনদী – বুড়িডিহং, ডিমাং, ধানসিরি, কোপিলি প্রভৃতি।
- ডানতীরস্থ উপনদী – মানস, কামেং, সুবর্ণসিরি, তিস্তা, সংকোশ প্রভৃতি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
উত্তর ভারতের প্রধান নদীগুলি কী কী?
উত্তর ভারতের প্রধান নদীগুলি হল —
1. সিন্ধু।
2. গঙ্গা।
3. ব্রহ্মপুত্র।
এছাড়াও এদের অসংখ্য উপনদী ও শাখানদী উত্তর ভারতের নদী ব্যবস্থা গঠন করেছে।
সিন্ধু নদের উৎস ও প্রবাহপথ বর্ণনা করো।
উৎস – তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে সিঙ্গি খাবাব বা সিন-কা-বাব হিমবাহ থেকে সিন্ধু নদের উৎপত্তি।
প্রবাহপথ –
1. লাদাখের মধ্য দিয়ে 709 কিমি প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে।
2. পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পতিত হয়েছে।
উপনদী –
1. বামতীরস্থ – শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা, বিতস্তা (পঞ্চনদ নামে পরিচিত)।
2. ডানতীরস্থ – গিলগিট, শিগার, শায়ক প্রভৃতি।
গঙ্গা নদের উৎস ও প্রধান শাখানদীগুলি কী কী?
উৎস – উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথী নদী হিসেবে উৎপত্তি। দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার সাথে মিলিত হয়ে গঙ্গা নাম ধারণ করে।
প্রবাহপথ –
1. উচ্চগতি – গঙ্গোত্রী থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত।
2. মধ্যগতি – হরিদ্বার থেকে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত।
3. নিম্নগতি – রাজমহল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত।
উপনদী –
1. বামতীরস্থ – গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, বুড়িগণ্ডক, কোশী।
2. ডানতীরস্থ – যমুনা, শোন।
3. শাখানদী – ভাগীরথী ও হুগলি।
ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহপথ বর্ণনা করো।
উৎস – তিব্বতের চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপত্তি।
প্রবাহপথ –
1. তিব্বতে সাংপো নামে প্রবাহিত হয়।
2. অরুণাচলপ্রদেশে ডিহং নামে প্রবেশ করে।
3. সাদিয়া অঞ্চলে ডিবং, লোহিত ও ডিহং মিলিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নাম নেয়।
4. অসমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে যমুনা নামে প্রবেশ করে।
5. শেষে পদ্মা ও মেঘনার সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
উপনদী –
1. বামতীরস্থ – বুড়িডিহং, ধানসিরি, কোপিলি।
2. ডানতীরস্থ – মানস, তিস্তা, সংকোশ।
উত্তর ভারতের নদীগুলির অর্থনৈতিক গুরুত্ব কী?
1. কৃষি – সেচের জন্য ব্যবহৃত হয় (উদা: গঙ্গা অববাহিকায় ধান ও গম চাষ)।
2. জলবিদ্যুৎ – হিমালয়ের নদীগুলিতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন (উদাহরন – ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধ)।
3. পরিবহন – ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গায় নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
4. ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব – গঙ্গা নদী হিন্দু ধর্মে পবিত্র বলে বিবেচিত।
সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদ কোন কোন দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে?
সিন্ধু নদ – ভারত (লাদাখ) → পাকিস্তান → আরব সাগর।
ব্রহ্মপুত্র নদ – তিব্বত (সাংপো) → ভারত (অরুণাচলপ্রদেশ ও অসম) → বাংলাদেশ (যমুনা নামে) → বঙ্গোপসাগর।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন