1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

দেশ বিভাজনের ফলে সৃষ্ট সমস্যাসমূহ

1947 খ্রিস্টাব্দের 15 আগস্ট ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’ দ্বারা ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে ভারত কতকগুলি সমস্যার সম্মুখীন হয়। যথা –

  • উদ্‌বাস্তু সমস্যা – দেশভাগের ফলে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখ প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের জীবন, ধর্ম ও সম্পত্তির সুরক্ষার অভাব, দাঙ্গা প্রভৃতি কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছিন্নমূল হয়ে ভারতে শরণার্থী হিসেবে চলে আসে। এই প্রচুর সংখ্যক মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে নজর দিতে গিয়ে ভারতসরকার নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে গড়ে। পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, আসাম, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যে শরণার্থীদের ভিড় ভয়াবহ সমস্যার সামনে সরকারকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
  • সম্পদের পরিমাণ হ্রাস – দেশভাগের ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পদের একটা বড়ো অংশ চলে যাওয়ায় ভারতের সম্পদের পরিমাণ কমে যায় এবং এর ফলে ভারতে দেখা দেয় নানারকমের অর্থনৈতিক সমস্যা।
  • শিল্পের ক্ষেত্রে সমস্যা – পাট, তুলো প্রভৃতি শিল্পের কাঁচামালের একটা বড়ো অংশ পাকিস্তান ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ভারতে এইসব শিল্পের কাঁচামালের অভাব দেখা দেয় এবং ভারতে শিল্প-সমস্যা অর্থনৈতিক দিকটিকে দুর্বল করে দেয়।
  • কৃষি সমস্যা – কৃষিজমিরও একটা বড়ো অংশ পাকিস্তানে অন্তর্গত হওয়ার ফলে ভারতে কৃষি-সমস্যা খাদ্যাভাবের সৃষ্টি করে।

মন্তব্য –

স্বাধীনতার পরবর্তীকালে সর্বাধিক মর্মান্তিক ঘটনা হল উদ্‌বাস্তু সমস্যা ও দাঙ্গা যা স্বাধীনতার আগে থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নাশ করে, ছিন্নমূল করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজনের প্রধান কারণ কী ছিল?

দেশ বিভাজনের মূল কারণ ছিল ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন এবং হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। মুসলিম লীগের দ্বিজাতি তত্ত্ব অনুযায়ী, আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র (পাকিস্তান) গঠনের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজনের ফলে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী ছিল?

সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল উদ্‌বাস্তু সমস্যা। লক্ষ লক্ষ হিন্দু, শিখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ পাকিস্তান থেকে ভারতে এবং ভারতে থাকা মুসলিমরা পাকিস্তানে চলে যেতে বাধ্য হয়। এই বাস্তুচ্যুতি সহিংস দাঙ্গা, সম্পত্তি হারানো ও মানবিক সংকট তৈরি করেছিল।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের অর্থনৈতিক প্রভাব কী ছিল?

1947 সালে দেশভাগের অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল –
1. সম্পদ হ্রাস – পাকিস্তানে চলে যাওয়া অঞ্চলগুলিতে (পাঞ্জাব, সিন্ধু, বাংলা) কৃষিজমি ও শিল্পের উল্লেখযোগ্য অংশ হারায় ভারত।
2. শিল্প সমস্যা – পাট ও তুলো শিল্পের কাঁচামালের উৎস পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় ভারতে শিল্প সংকট দেখা দেয়।
3. কৃষি সমস্যা – সেচভূমি ও উর্বর জমি হারানোর ফলে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পায়।

উদ্‌বাস্তু সমস্যা কীভাবে ভারতকে প্রভাবিত করেছিল?

1. লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর বাসস্থান, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারকে সংগ্রাম করতে হয়েছিল।
2. পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, দিল্লি ও ত্রিপুরায় শরণার্থীদের চাপ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছিল।
3. নতুন করে পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান তৈরি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সাম্প্রদায়িক প্রভাব কী ছিল?

দেশভাগের সময় ভয়াবহ দাঙ্গা হয়, যাতে প্রায় 10-15 লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি ভেঙে যায় এবং ধর্মীয় বিভেদ আরও গভীর হয়।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী ছিল?

1947 সালে দেশভাগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ছিল –
1. ধর্মীয় বিভাজন আরও সুস্পষ্ট হয় এবং ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে।
2. উদ্‌বাস্তু সমস্যা পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে।
3. অর্থনৈতিক পুনর্গঠন প্রয়োজন হয়, বিশেষত শিল্প ও কৃষি খাতে।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের ইতিবাচক দিক কী ছিল?

যদিও দেশভাগ একটি বেদনাদায়ক ঘটনা ছিল, তবুও এর কিছু ইতিবাচক দিক ছিল –
1. ব্রিটিশ শাসন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ।
2. ভারত একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের পথে এগোয়।
3. শরণার্থীদের পুনর্বাসন ও অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ভারত দ্রুত উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?

উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব লেখো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?