দশম শ্রেণি – বাংলা – নদীর বিদ্রোহ – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নদীর বিদ্রোহ গল্পটি মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প। এই গল্পে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নদীকে প্রকৃতির একটি জীবন্ত সত্তা হিসাবে চিত্রিত করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে নদী শুধুমাত্র একটি জলধারা নয়, এটি একটি শক্তিশালী প্রকৃতি শক্তি যা প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – নদীর বিদ্রোহ – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক। – কার প্রতি এত বেশি মায়া এবং কেন তা অস্বাভাবিক?

উদ্দিষ্টের পরিচয় – প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি মায়ার কথা বলা হয়েছে।

অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ – বেশিদিন নদীকে দেখতে না পেলে, নদীকে দেখার জন্য নদেরচাঁদ ছেলেমানুষের মতো ছটফট করত। নদেরচাঁদ ছিল একজন স্টেশন মাস্টার। এই পেশার মানুষদের অনেক বেশি বাস্তববাদী ও কাজের প্রতি মনোযোগী হতে হয়। তাই পেশায় গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে নদীর প্রতি এতটা ভালোবাসা নদেরচাঁদের পক্ষে বেশ বেমানানই ছিল। তাই নদেরচাঁদের নদীর প্রতি এত মায়া তার নিজের কাছেই যেন অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে।

নদীর জন্য এমনভাবে পাগলা হওয়া কি তার সাজে? – কে, কেন এরকম প্রশ্ন করেছে?

প্রশ্নকর্তা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে আলোচ্য প্রশ্নটি করেছে নদেরচাঁদ।

প্রশ্নের কারণ – নদেরচাঁদ নদীর জন্য পাগল হত। প্রবল বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন নদীকে না দেখে নদেরচাঁদ আকুল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পেশায় সে ছিল স্টেশন মাস্টার। স্টেশন মাস্টারের কাজ যথেষ্ট দায়িত্বপূর্ণ। দিনরাত মেল, প্যাসেঞ্জার আর মালগাড়িগুলির ছোটাছুটি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব যাদের, নদেরচাঁদও তাদের মধ্যে একজন। ঝুঁকিপূর্ণ সেই কাজ ভুলে সবসময় নদীর জন্য পাগল হওয়া তার সাজে না। তাই নদেরচাঁদ নিজেকেই এই প্রশ্ন করেছে।

নদেরচাঁদ সব বোঝে, নিজেকে কেবল বুঝাইতে পারে না। – নদেরচাঁদ কী বোঝে? সে নিজেকে বোঝাতে পারে না কেন?

নদেরচাঁদের বোধগম্য বিষয় – নদীর প্রতি নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া যে একটু অস্বাভাবিক-এই কথাটি সে নিজেই বোঝে।

নিজেকে বোঝাতে না-পারার কারণ – নদেরচাঁদ জানে নদীর প্রতি তার এরূপ ভালোবাসা সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তা ছাড়া সে যে কাজে নিযুক্ত তাতে নদী সম্পর্কে এত চিন্তা করাও নিতান্ত অস্বাভাবিক। কেন-না, সে একজন স্টেশনমাস্টার। তবুও নদেরচাঁদ তার মনকে বোঝাতে পারে না এই দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতাকে। তাই এক দুর্বোধ্য আকর্ষণে তার চঞ্চল মন বারে বারে নদীর কাছে ছুটে যায়।

নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিতে পারে। — কোন্ প্রসঙ্গে এই কথা বলা হয়েছে? কী কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিতে পারে?

উৎস – আলোচ্য অংশটি মানিক বন্দ্যোপাধায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে।

প্রসঙ্গ – নদেরচাঁদ পেশায় ছিল একজন স্টেশনমাস্টার। কিন্তু স্টেশনমাস্টারের গুরুদায়িত্ব সামলে নদীর প্রতি এরকম টান, নদীর জন্য এমনভাবে পাগল হওয়া ছিল অস্বাভাবিক। তবুও নদেরচাঁদের নদীকে এভাবে ভালোবাসার একটা কৈফিয়ত দেওয়ার কথা লেখক বলেন।

নদেরচাঁদের কৈফিয়ত – নদেরচাঁদের নদীকে ভালোবাসার কৈফিয়তটি ছিল এই যে, তার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে নদী। যেহেতু নদীর ধারেই তার জীবনের বেশিরভাগটা কেটেছে তাই চিরদিন সে নদীকে ভালোবেসেছে।

এই নদীর মতো এত বড় ছিল না। – কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে? সেই নদী কেমন ছিল?

নদীটির পরিচয় – প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের দেশের নদীর কথা বলা হয়েছে।

নদীটির বর্ণনা – স্টেশনমাস্টারের চাকরি করতে এসে নদেরচাঁদ যে নদীটিকে দেখেছিল তার দেশের নদীটি ওইটির মতো এত বড়ো ছিল না। কিন্তু নদেরচাঁদের দেশের সেই ক্ষীণস্রোতা নির্জীব নদীটি অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পেয়েছিল। অনাবৃষ্টিতে ওই নদীটি শুকিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যেত। তখন সেই নদীর জন্য নদেরচাঁদের চোখে জল চলে আসত। দুরারোগ্য অসুখে পরমাত্মীয় কেউ মারা যাওয়ার সময় মানুষ যেমন কাঁদে নদেরচাঁদের কান্নাও ছিল সেরকমই।

সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল; – কে, কী কারণে প্রায় কেঁদে ফেলেছিল?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – প্রশ্নে উল্লিখিত অংশে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।

কেঁদে ফেলার কারণ – নদেরচাঁদের কাছে নদী ছিল জীবন্ত মানুষের প্রতিমূর্তি। জলপূর্ণ নদী তার কাছে প্রাণময় মানুষ হিসেবেই ধরা দিত। এক অনাবৃষ্টির বছরে সে তার দেশের নদীটিকে শুকিয়ে যেতে দেখেছিল। জল না পেয়ে নদেরচাঁদের দেশের নদীটির ক্ষীণ স্রোতধারা প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল। নদীর শুকিয়ে যাওয়া নদেরচাঁদের কাছে মানুষের মৃত্যুর সমান ছিল। তাই সে ছোটোবেলার পরিচিত সেই নদীটির এই অবস্থা দেখে প্রায় কেঁদেই ফেলেছিল।

দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগিতে ভুগিতে পরমাত্মীয়া মরিয়া যাওয়ার উপক্রম করিলে মানুষ যেমন কাঁদে। – মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

মন্তব্যের ব্যাখ্যা – ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের মুখ্য চরিত্র স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের নদীর ধারেই জন্ম, নদীর ধারেই সে মানুষ হয়েছে। তাই নদীর প্রতি তার এক অদ্ভুত টান ছিল। দেশের ক্ষীণস্রোতা ও নির্জীব নদীটি অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পেয়েছিল। একবার অনাবৃষ্টিতে ওই ক্ষীণস্রোতা নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে নদেরচাঁদের ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। সে এমনভাবে কেঁদেছিল যেন কোনো কঠিন রোগে তার কাছের আত্মীয় মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ এই নদীকে সে পরমাত্মীয়ের মতোই ভালোবাসত।

নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে। – কার কথা বলা হয়েছে? তার পাগলামিটি কী?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – মানিক বন্দ্যোপাদ্যায় ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের উল্লিখিত অংশে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।

পাগলামির পরিচয় – নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের শৈশব থেকেই সখ্য। কর্মক্ষেত্রে এসেও তার নদীর প্রতি আকর্ষণ একটুও কমেনি। তাই প্রবল বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন নদীকে দেখতে না পেয়ে সে ‘ছেলেমানুষের মতো’ আকুল হয়ে ওঠে। বৃষ্টি একটু থামলেই নদীর দিকে যেতে শুরু করে। নদীর প্রতি এই আকুলতাই ছিল তার ‘পাগলামি’, যার অর্থ সে নিজেকে বুঝতে পারে না।

নদেরচাঁদের দেশের নদী আর স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচিত নদী – এই দুই নদীকে ভালোবাসার প্রকৃতি বা স্বরূপ কীরকম ছিল?

ভালোবাসার স্বরূপ – নদেরচাঁদের দেশের ক্ষীণস্রোতা নদী যেন অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ের মতোই তার মমতা পেয়েছিল। তাই নদীর জল শুকিয়ে এলে নদেরচাঁদ পরমাত্মীয় মারা গেলে মানুষ যেভাবে কাঁদে ঠিক সেভাবেই কেঁদেছিল।

অন্যদিকে স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচয় হওয়া গভীর, প্রশস্ত নদীটি ছিল নদেরচাঁদের পরমবন্ধু। একদিনও সে ওই নদীকে না দেখে থাকতে পারত না। নদীর স্রোতে নিজের স্ত্রীকে লেখা চিঠি ফেলে এক অদ্ভুত খেলায় নদেরচাঁদ মেতে উঠত।

আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে। — কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে? নদীর এই খেপে যাওয়ার মধ্যে নদেরচাঁদ কোন্ সত্য উপলব্ধি করেছে? 

নদীটির পরিচয় – এখানে নদেরচাঁদের কর্মক্ষেত্রের কাছের নদীটির কথা বলা হয়েছে।

নদেরচাঁদের উপলব্ধি – বর্ষায় নদীটি টইটুম্বুর হয়ে উঠেছিল। প্রবল তার জলস্রোত। পরিপূর্ণতার আনন্দে সে যেন মাতোয়ারা। কোনো বাধা সে মানতে চায় না। উত্তাল জলের ঘূর্ণিতে পঙ্কিল আবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। চার বছরের চেনা নদীকে সেদিন নদেরচাঁদের আরও বেশি ভয়ংকর এবং অপরিচিত বলে মনে হয়েছিল।

চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল। – কেন নদেরচাঁদের কাছে নদীর মূর্তি অপরিচিত বলে মনে হল আলোচনা করো।

অপরিচিত নদী – প্রশ্নে উদ্ধৃতাংশে নদেরচাঁদের স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচয় হওয়া বাঁধে বন্দি নদীটির কথা বলা হয়েছে। এই নদী ছিল গভীর, প্রশস্ত ও জলপূর্ণ। কিন্তু প্রবল বর্ষায় পাঁচ দিন সে নদীকে দেখতে যেতে পারেনি। পাঁচ দিন পরে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল, নদী যেন তার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিদ্রোহ করছে। নদীর গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলেফেঁপে উঠেছে। নদীর এই ভয়ংকর রূপ নদেরচাঁদ আগে কখনও দেখেনি। তাই নদীকে তার অপরিচিত বলে মনে হয়েছিল।

নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল। — কী কারণে নদেরচাঁদের এমন অবস্থা হয়েছিল লেখো।

আনন্দের কারণ – নদেরচাঁদ নদীকে বড়ো বেশি ভালোবাসত। বর্ষায় নদী জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সে মুগ্ধ চোখে নদীর সেই রূপ দেখছিল। নদীর উন্মত্ত জলস্রোত পাগলের মতো ছুটে চলেছিল। জলস্তর এত উঁচুতে উঠে এসেছিল যে, নদেরচাঁদ হাত বাড়িয়ে তা ছুঁতে পারত। নদী যেন তখন পূর্ণযৌবনা। কোনো কিছু দিয়েই তার সেই গতি রোধ করা অসম্ভব। নদীর এই পরিপূর্ণ রূপ দেখে নদেরচাঁদের ভারি আমোদ বোধ হয়েছিল।

নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে যে খেলায় মেতে উঠেছিল, সেই খেলাটি কীরকম ছিল?

নদীর সঙ্গে খেলা – এক বর্ষার দিনে নদীর কাছে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল নদীর জল ব্রিজের ধারকস্তম্ভে বাধা পেয়ে এক ফেনিল আবর্ত তৈরি করেছে। সে পকেট থেকে অনেকদিন আগের একটা চিঠি বার করে নদীর স্রোতে ছুঁড়ে ফেলল। চোখের পলকে তা অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপরে স্ত্রীকে লেখা চিঠির এক-একটি পাতা ছিঁড়ে দুমড়ে-মুচড়ে সে নদীর মধ্যে ফেলতে লাগল আর নদীও যেন সেগুলি নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে লাগল। এইভাবে নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছিল।

বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের – কী কারণে নদেরচাঁদের ভয় করতে লাগল?

ভয়ের কারণ – নদেরচাঁদ মুশলধারে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই নদীর পরিপূর্ণ রূপ দেখছিল। এরমধ্যেই চারিদিকে নেমে এল ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি একটু থেমে আবার প্রবল বেগে শুরু হল। নদীর কলতান আর বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিলে সংগীতের ঐকতান সৃষ্টি করল। নদেরচাঁদের মন থেকে ছেলেমানুষি আমোদ মিলিয়ে গেল। এরকম পরিবেশে তার সর্বাঙ্গ যেন অবশ, অবসন্ন হয়ে এল। নদীর রহস্যময়তা দেখে নদেরচাঁদের ভয় করতে লাগল।

নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে। – কার কথা বলা হয়েছে? নদীর বিদ্রোহের কারণ কী?

উদ্দিষ্টের পরিচয় – প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।

নদীর বিদ্রোহের কারণ – পাঁচ দিন টানা বৃষ্টির পর নদীর কাছে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল নদীর পঙ্কিল জলস্রোত যেন রোষে ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। নদীর জলস্রোত প্রায় ব্রিজের কাছাকাছি উঠে এসে ব্রিজ ও বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে যেতে চাইছে। তা দেখে নদেরচাঁদ নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারল। তার মনে হল, নদী যেন তার এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে, ফিরে পেতে চাইছে তার স্বাভাবিক গতি, আর তাই সে এভাবে বিদ্রোহ জানাচ্ছে।

নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে। – কে বুঝতে পেরেছে? নদীর বিদ্রোহ বলতে সে কী বোঝাতে চেয়েছে?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের বুঝতে পারার কথা বলা হয়ছে।

নদেরচাঁদের মতামত – প্রবল বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন অদর্শনের পরে নদীর উন্মত্ত রূপ দেখে নদেরচাঁদ চমকে ওঠে। তার মনে হয় নদী যেন খেপে গেছে। নদেরচাঁদ উপলব্ধি করে, নদীর ওপর তৈরি রং করা নতুন ব্রিজ, নদীর বাঁধ যেন নদীর প্রবাহের পথে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী সেসব ভেঙে চুরমার করে দিতে চায়। নদী যেন উদ্দামতার মধ্য দিয়ে তার বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।

পারিলেও মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে? – কার, কী পারার কথা বলা হয়েছে? মানুষ কীভাবে তাকে রেহাই দেবে না?

যার যা পারার কথা বলা হয়েছে – নদেরচাঁদ মনে করেছে যে, নদী ইচ্ছা করলে তার তীব্র জলস্রোতে মানুষের গড়া বাঁধ ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে।

মানুষের কার্যকলাপ – একইসঙ্গে নদেরচাঁদের মনে হয়েছে, মানুষ নদীকেও রেহাই দেবে না। তারা আবার নতুন করে বাঁধ তৈরি করবে, প্রবহমান জীবন্ত নদীকে বন্দি করবে নিজেদের স্বার্থে। আবার নদীকে মেনে নিতে হবে এই বন্দিদশা। গভীর প্রশস্ত জলপূর্ণ নদী পরিণত হবে ক্ষীণস্রোতা নদীতে।

নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে। — কীসের জন্য নদেরচাঁদের গর্ব অনুভব হয়েছে এবং কেন?

গর্ব অনুভবের বিষয় – স্টেশনের কাছে নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য নদেরচাঁদ দীর্ঘকাল গর্ব অনুভব করেছে।

গর্ব অনুভবের কারণ – কর্মক্ষেত্রের নদীটির সঙ্গে নদেরচাঁদের যে মনের যোগাযোগ সেখানে ব্রিজটিরও একটা ভূমিকা ছিল। ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্টে গাঁথা ধারকস্তম্ভের একেবারে শেষপ্রান্তে বসেই সে প্রতিদিন নদীকে দেখত। নদীর ওপরে নির্মিত উন্নত যন্ত্রসভ্যতার চিহ্ন ব্রিজটিকে নিয়ে নদেরচাঁদের গর্ব হয়েছিল।

কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের? – কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির তা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে কেন?

ব্রিজটির পরিচয় – নদেরচাঁদের কর্মক্ষেত্রের কাছে অবস্থিত নদীটির ওপর যে কংক্রিটের ব্রিজ ছিল, এখানে সেই ব্রিজটির কথাই বলা হয়েছে।

অপ্রয়োজনীর মনে হওয়ার কারণ – আগে নদেরচাঁদ নদীর ওপর তৈরি নতুন রং করা ব্রিজটিকে নিয়ে গর্ব অনুভব করত। কিন্তু পরে বর্ষায় নদী জলে পরিপূর্ণ হলে নদেরচাঁদের মনে হল ব্রিজটি যেন নদীর পায়ের শেকল। ব্রিজের থামগুলো যেন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দিচ্ছে। যন্ত্রসভ্যতার ফসল কংক্রিটের ব্রিজটি নদীর স্বাধীন গতিকে রুদ্ধ করছে। তাই নদেরচাঁদের নতুন করে উপলব্ধি হয়েছিল যে, ওই ব্রিজটির কোনো প্রয়োজন ছিল না।

বন্দি নদীকে ভালোবাসিয়াছে, – এখানে কার ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে? কেন নদীকে বন্দি বলা হয়েছে?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।

নদীকে বন্ধি বলার কারণ – নদেরচাঁদের স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচিত হওয়া নদীটি ছিল গভীর, প্রশস্ত ও জলপূর্ণ। তার প্রবল গতিবেগ রুদ্ধ করা হয়েছিল বাঁধ দিয়ে, আর নদীর ওপরে ছিল একটি ব্রিজ। এই বাঁধ আর ব্রিজ যেন নদীর প্রবল জলস্রোতকে আটকে নদীকে বন্দি করে রেখেছিল।

বোধহয়, এই প্রশ্নের জবাব দিবার জন্যই – কোন্ প্রশ্ন? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য কী হয়েছিল?

প্রশ্ন – নদীর কাছ থেকে ফেরার সময় নদেরচাঁদের মনে হয়েছিল – কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের? -এখানে এই প্রশ্নের কথাই বলা হয়ছে।

পরিণতি – এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্যই যেন যন্ত্র সভ্যতার প্রতীক ৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি নদেরচাঁদকে পিষে দিয়ে চলে যায় স্টেশনের দিকে। বন্দি নদীটি তথা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার খেসারত এভাবেই দিতে হয় নদেরচাঁদকে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা ও শৈলী অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। তিনি গল্পের বিভিন্ন দৃশ্যকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি নদীর সৌন্দর্য ও শক্তিকে অত্যন্ত নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।

Share via:

মন্তব্য করুন