আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবইয়ের সপ্তম পাঠের তৃতীয় বিভাগ “নদীর বিদ্রোহ” থেকে ব্যাখ্যামূলক ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।
নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক। – কার প্রতি এত বেশি মায়া এবং কেন তা অস্বাভাবিক?
উদ্দিষ্টের পরিচয় – প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি মায়ার কথা বলা হয়েছে।
অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ – অনেকদিন নদীকে দেখতে না পেলে, নদীকে দেখার জন্য নদেরচাঁদ শিশুর মতো ছটফট করত। নদেরচাঁদ ছিলেন একজন স্টেশনমাস্টার। এই পেশার মানুষদের বাস্তববাদী এবং কাজের প্রতি মনোযোগী হতে হয়। তাই পেশার বাইরে গিয়ে নদীর প্রতি এতটা ভালোবাসা নদেরচাঁদের পক্ষে বেমানান ছিল। নদেরচাঁদের নিজের কাছেও তার নদীর প্রতি এত মায়া অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে।
নদীর জন্য এমনভাবে পাগলা হওয়া কি তার সাজে? – কে, কেন এরকম প্রশ্ন করেছে?
প্রশ্নকর্তা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে এই প্রশ্নটি করেছেন নদেরচাঁদ।
প্রশ্নের কারণ – নদেরচাঁদ নদীর জন্য পাগল হয়ে যেত। প্রবল বৃষ্টির কারণে ৫ দিন নদীকে না দেখে সে খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিল। তবে পেশায় সে ছিল একজন স্টেশন মাস্টার, যেটি একটি অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কাজ। দিনরাত মেল, প্যাসেঞ্জার এবং মালগাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ছিল তার দায়িত্ব। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ভুলে সবসময় নদীর জন্য পাগল হওয়া তার পেশার সঙ্গে মানানসই নয়। তাই নদেরচাঁদ নিজেকেই এই প্রশ্ন করেছে।
নদেরচাঁদ সব বোঝে, নিজেকে কেবল বুঝাইতে পারে না। – নদেরচাঁদ কী বোঝে? সে নিজেকে বোঝাতে পারে না কেন?
নদেরচাঁদের বোধগম্য বিষয় হলো – নদীর প্রতি নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া যে সেটি কিছুটা অস্বাভাবিক, এ কথাটি সে নিজেই জানে।
নিজেকে বোঝাতে না পারার কারণ – নদেরচাঁদ জানে, নদীর প্রতি তার এই ভালোবাসা সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাছাড়া, সে যে কাজে নিযুক্ত, তাতে নদী সম্পর্কে এত চিন্তা করাও নিতান্ত অস্বাভাবিক। কেননা, সে একজন স্টেশনমাস্টার। তবুও নদেরচাঁদ তার মনকে বোঝাতে পারে না এই দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতাকে। তাই এক দুর্বোধ্য আকর্ষণে তার চঞ্চল মন বারবার নদীর কাছে ছুটে যায়।
নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিতে পারে। — কোন্ প্রসঙ্গে এই কথা বলা হয়েছে? কী কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিতে পারে?
উৎস – আলোচ্য অংশটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ – নদেরচাঁদ পেশায় একজন স্টেশনমাস্টার ছিলেন। তবে স্টেশনমাস্টারের গুরুদায়িত্ব পালন করার পরেও নদীর প্রতি তার এমন গভীর ভালোবাসা এবং পাগলামি ছিল অস্বাভাবিক। লেখক এখানে নদেরচাঁদের এই ভালোবাসার পেছনে একটি কৈফিয়ত দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
নদেরচাঁদের কৈফিয়ত – নদেরচাঁদের নদীকে ভালোবাসার কৈফিয়তটি ছিল এই যে, তার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের প্রতিটি অধ্যায় নদীর সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। তার জীবনের অধিকাংশ সময় নদীর আশেপাশেই কেটেছে। তাই তিনি চিরকাল নদীকে ভালোবেসেছেন।
এই নদীর মতো এত বড় ছিল না। – কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে? সেই নদী কেমন ছিল?
নদীটির পরিচয় – প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের দেশের নদীর কথা বলা হয়েছে।
নদীটির বর্ণনা – স্টেশনমাস্টারের চাকরি করতে এসে নদেরচাঁদ যে নদীটিকে দেখেছিল, তার দেশের নদীটি ওই নদীর মতো এত বড় ছিল না। কিন্তু নদেরচাঁদের দেশের সেই ক্ষীণস্রোতা, নির্জীব নদীটি অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পেয়েছিল। অনাবৃষ্টিতে সেই নদীটি শুকিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যেত। তখন সেই নদীর জন্য নদেরচাঁদের চোখে জল আসত। দুরারোগ্য অসুখে পরম আত্মীয় কেউ মারা যাওয়ার সময় মানুষ যেমন কাঁদে, নদেরচাঁদের কান্নাও সেরকম ছিল।
সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল; – কে, কী কারণে প্রায় কেঁদে ফেলেছিল?
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – প্রশ্নে উল্লিখিত অংশে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।
কেঁদে ফেলার কারণ – নদেরচাঁদের কাছে নদী ছিল জীবন্ত মানুষের প্রতিমূর্তি। জলপূর্ণ নদী তার কাছে প্রাণময় মানুষ হিসেবেই ধরা দিত। এক অনাবৃষ্টির বছরে সে তার দেশের নদীটিকে শুকিয়ে যেতে দেখেছিল। জল না পেয়ে নদেরচাঁদের দেশের নদীটির ক্ষীণ স্রোতধারা প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল। নদীর শুকিয়ে যাওয়া নদেরচাঁদের কাছে মানুষের মৃত্যুর সমান ছিল। তাই সে ছোটবেলার পরিচিত সেই নদীটির এই অবস্থা দেখে প্রায় কেঁদে ফেলেছিল।
দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগিতে ভুগিতে পরমাত্মীয়া মরিয়া যাওয়ার উপক্রম করিলে মানুষ যেমন কাঁদে। – মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
মূল মন্তব্য – দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগতে ভুগতে পরমাত্মীয়া মারা যাওয়ার উপক্রম হলে মানুষ যেমন কাঁদে।
ব্যাখ্যা – নদীর বিদ্রোহ গল্পের মুখ্য চরিত্র স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের জন্ম নদীর ধারেই, আর সেখানেই সে বেড়ে উঠেছে। তাই নদীর প্রতি তার এক অদ্ভুত টান ছিল। দেশের ক্ষীণস্রোতা ও নির্জীব নদীটি যেন অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার কাছ থেকে মমতা পেয়েছিল। একবার অনাবৃষ্টির কারণে সেই ক্ষীণস্রোতা নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে, নদেরচাঁদের ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। সে এমনভাবে কেঁদেছিল যেন কোনো দুরারোগ্য ব্যাধিতে তার প্রিয় আত্মীয় মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ, এই নদীকে সে পরমাত্মীয়ের মতোই ভালোবাসত।
নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে। – কার কথা বলা হয়েছে? তার পাগলামিটি কী?
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।
পাগলামির পরিচয় – নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের শৈশব থেকেই সখ্য ছিল। কর্মজীবনেও তার নদীর প্রতি আকর্ষণ একটুও কমেনি। প্রবল বৃষ্টির কারণে ৫ দিন নদীকে দেখতে না পেয়ে সে ‘ছেলেমানুষের মতো’ আকুল হয়ে ওঠে। বৃষ্টি একটু থামলেই সে নদীর দিকে যেতে শুরু করে। নদীর প্রতি এই আকুলতাই ছিল তার ‘পাগলামি,’ যার অর্থ সে নিজেকে পুরোপুরি বুঝতে পারে না।
নদেরচাঁদের দেশের নদী আর স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচিত নদী – এই দুই নদীকে ভালোবাসার প্রকৃতি বা স্বরূপ কীরকম ছিল?
ভালোবাসার স্বরূপ – নদেরচাঁদের দেশের ক্ষীণস্রোতা নদী যেন অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ের মতোই তার মমতা পেয়েছিল। তাই নদীর জল শুকিয়ে গেলে, নদেরচাঁদ যেভাবে পরম আত্মীয়ের মৃত্যুতে মানুষ কাঁদে, ঠিক সেভাবেই কেঁদেছিল।
অন্যদিকে, স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচিত হওয়া গভীর, প্রশস্ত নদীটি ছিল নদেরচাঁদের পরম বন্ধু। সে একদিনও ওই নদীকে না দেখে থাকতে পারত না। নদীর স্রোতে নিজের স্ত্রীকে লেখা চিঠি ভাসিয়ে, এক অদ্ভুত খেলায় নদেরচাঁদ মেতে উঠত।
আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে। — কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে? নদীর এই খেপে যাওয়ার মধ্যে নদেরচাঁদ কোন্ সত্য উপলব্ধি করেছে?
নদীটির পরিচয় – এখানে নদেরচাঁদের কর্মক্ষেত্রের কাছের নদীর কথা বলা হয়েছে।
নদেরচাঁদের উপলব্ধি – বর্ষায় নদীটি টইটুম্বুর হয়ে উঠেছিল। প্রবল তার জলস্রোত। পরিপূর্ণতার আনন্দে সে যেন মাতোয়ারা। কোনো বাধা সে মানতে চায় না। উত্তাল জলের ঘূর্ণিতে পঙ্কিল আবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। 4 বছরের চেনা নদীকে সেদিন নদেরচাঁদের আরও বেশি ভয়ংকর এবং অপরিচিত মনে হয়েছিল।
চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল। – কেন নদেরচাঁদের কাছে নদীর মূর্তি অপরিচিত বলে মনে হল আলোচনা করো।
অপরিচিত নদী – প্রশ্নে উদ্ধৃতাংশে নদেরচাঁদের স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচয় হওয়া বাঁধে বন্দি নদীটির কথা বলা হয়েছে। এই নদী ছিল গভীর, প্রশস্ত ও জলপূর্ণ। কিন্তু প্রবল বর্ষায় পাঁচ দিন সে নদীকে দেখতে যেতে পারেনি। পাঁচ দিন পরে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল, নদী যেন তার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিদ্রোহ করছে। নদীর গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। নদীর এই ভয়ঙ্কর রূপ নদেরচাঁদ আগে কখনও দেখেনি। তাই নদীকে তার অপরিচিত বলে মনে হয়েছিল।
নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল। — কী কারণে নদেরচাঁদের এমন অবস্থা হয়েছিল লেখো।
আনন্দের কারণ ছিল — নদেরচাঁদ নদীকে খুব ভালোবাসত। বর্ষাকালে নদী জলে পূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সে মুগ্ধ চোখে নদীর সেই রূপ দেখছিল। নদীর উন্মত্ত জলস্রোত পাগলের মতো ছুটে চলছিল। জলস্তর এত উঁচুতে উঠে এসেছিল যে, নদেরচাঁদ হাত বাড়িয়ে তা ছুঁতে পারত। নদী তখন যেন পূর্ণযৌবনা। কোনো কিছু দিয়েই তার সেই গতি রোধ করা অসম্ভব ছিল। নদীর এই পরিপূর্ণ রূপ দেখে নদেরচাঁদের ভারী আনন্দ হচ্ছিল।
নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে যে খেলায় মেতে উঠেছিল, সেই খেলাটি কীরকম ছিল?
নদীর সঙ্গে খেলা – এক বর্ষার দিনে নদীর কাছে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল, নদীর জল ব্রিজের ধারকস্তম্ভে বাধা পেয়ে এক ফেনিল আবর্ত তৈরি করেছে। সে পকেট থেকে অনেকদিন আগের একটা চিঠি বের করে নদীর স্রোতে ছুঁড়ে ফেলল। চোখের পলকে তা অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপর স্ত্রীকে লেখা চিঠির এক-একটি পাতা ছিঁড়ে, দুমড়ে-মুচড়ে সে নদীর মধ্যে ফেলতে লাগল, আর নদীও যেন সেগুলো নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে লাগল। এইভাবে নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছিল।
বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের – কী কারণে নদেরচাঁদের ভয় করতে লাগল?
ভয়ের কারণ – নদেরচাঁদ মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজে নদীর পূর্ণ রূপ দেখিতেছিল। এরই মধ্যে চারদিকে নেমে এলো ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি একটু থামিয়েই আবার প্রবল বেগে শুরু হইল। নদীর কলতান আর বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিলে সংগীতের ঐকতান সৃষ্টি করিল। নদেরচাঁদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল। এরূপ পরিবেশে তাহার সর্বাঙ্গ যেন অবশ, অবসন্ন হইয়া গেল। নদীর রহস্যময়তা দেখিয়া নদেরচাঁদের ভয় করিতে লাগিল।
নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে। – কার কথা বলা হয়েছে? নদীর বিদ্রোহের কারণ কী?
উদ্দিষ্টের পরিচয় – প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।
নদীর বিদ্রোহের কারণ – ৫ দিন টানা বৃষ্টির পর, নদীর কাছে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল, নদীর পঙ্কিল জলস্রোত যেন রোষ ও ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। নদীর জলস্রোত প্রায় ব্রিজের কাছাকাছি উঠে এসে ব্রিজ ও বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে যেতে চাইছে। তা দেখে নদেরচাঁদ নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারল। তার মনে হল, নদী যেন তার এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে, ফিরে পেতে চাইছে তার স্বাভাবিক গতি। আর তাই সে এভাবে বিদ্রোহ করছে।
নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে। – কে বুঝতে পেরেছে? নদীর বিদ্রোহ বলতে সে কী বোঝাতে চেয়েছে?
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের বুঝতে পারার কথা বলা হয়েছে।
নদেরচাঁদের মতামত – প্রবল বৃষ্টির কারণে ৫ দিন অদর্শনের পরে নদীর উন্মত্ত রূপ দেখে নদেরচাঁদ চমকে ওঠে। তার মনে হয়, নদী যেন খেপে গেছে। নদেরচাঁদ উপলব্ধি করে, নদীর ওপর তৈরি রং করা নতুন ব্রিজ, নদীর বাঁধ যেন নদীর প্রবাহের পথে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী সেসব ভেঙে চুরমার করে দিতে চায়। নদী যেন উদ্দামতার মধ্য দিয়ে তার বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।
পারিলেও মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে? – কার, কী পারার কথা বলা হয়েছে? মানুষ কীভাবে তাকে রেহাই দেবে না?
যার যা পারার কথা বলা হয়েছে – নদেরচাঁদ মনে করেছে, নদী ইচ্ছা করলে তার তীব্র জলস্রোতে মানুষের তৈরি বাঁধ ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে।
মানুষের কার্যকলাপ – একইসঙ্গে নদেরচাঁদের মনে হয়েছে, মানুষ নদীকেও রেহাই দেবে না। তারা আবার নতুন করে বাঁধ তৈরি করবে, প্রবহমান জীবন্ত নদীকে বন্দি করবে নিজেদের স্বার্থে। আবারও নদীকে মেনে নিতে হবে এই বন্দিদশা। গভীর প্রশস্ত জলপূর্ণ নদী পরিণত হবে ক্ষীণস্রোতা নদীতে।
নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে। — কীসের জন্য নদেরচাঁদের গর্ব অনুভব হয়েছে এবং কেন?
গর্ব অনুভবের বিষয় – স্টেশনের কাছে নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য নদেরচাঁদ দীর্ঘকাল গর্ব অনুভব করেছে।
গর্ব অনুভবের কারণ – কর্মক্ষেত্রের নদীটির সঙ্গে নদেরচাঁদের যে মানসিক যোগাযোগ, সেখানে ব্রিজটিরও একটা ভূমিকা ছিল। ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্টে গাঁথা ধারক স্তম্ভের একেবারে শেষপ্রান্তে বসেই সে প্রতিদিন নদীকে দেখত। নদীর ওপরে নির্মিত উন্নত যন্ত্রসভ্যতার চিহ্ন ব্রিজটিকে নিয়ে নদেরচাঁদের গর্ব হয়েছিল।
কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের? – কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির তা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে কেন?
ব্রিজটির পরিচয় – নদেরচাঁদের কর্মক্ষেত্রের কাছে অবস্থিত নদীর উপর যে কংক্রিটের ব্রিজ ছিল, এখানে সেই ব্রিজটির কথাই বলা হয়েছে।
অপ্রয়োজনীয় মনে হওয়ার কারণ – আগে নদেরচাঁদ নদীর উপর তৈরি নতুন রং করা ব্রিজটিকে নিয়ে গর্ব অনুভব করত। কিন্তু পরে বর্ষায় নদী জলে পরিপূর্ণ হলে নদেরচাঁদের মনে হলো ব্রিজটি যেন নদীর পায়ের শেকল। ব্রিজের থামগুলো যেন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দিচ্ছে। যন্ত্রসভ্যতার ফসল কংক্রিটের ব্রিজটি নদীর স্বাধীন গতিকে রুদ্ধ করছে। তাই নদেরচাঁদের নতুন করে উপলব্ধি হলো যে, ওই ব্রিজটির কোনো প্রয়োজন ছিল না।
বন্দি নদীকে ভালোবাসিয়াছে, – এখানে কার ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে? কেন নদীকে বন্দি বলা হয়েছে?
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।
নদীকে বন্দি বলার কারণ – নদেরচাঁদের স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচিত হওয়া নদীটি ছিল গভীর, প্রশস্ত ও জলপূর্ণ। তার প্রবল গতিবেগ রুদ্ধ করা হয়েছিল বাঁধ দিয়ে, আর নদীর ওপরে ছিল একটি ব্রিজ। এই বাঁধ আর ব্রিজ যেন নদীর প্রবল জলস্রোতকে আটকে নদীকে বন্দি করে রেখেছিল।
বোধহয়, এই প্রশ্নের জবাব দিবার জন্যই – কোন্ প্রশ্ন? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য কী হয়েছিল?
প্রশ্ন – নদীর কাছ থেকে ফেরার সময় নদের চাঁদের মনে হয়েছিল – কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের? এখানে এই প্রশ্নের কথাই বলা হয়েছে।
পরিণতি – এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্যই যেন যন্ত্র সভ্যতার প্রতীক 7 নম্বর ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি নদের চাঁদকে পিষে দিয়ে চলে যায় স্টেশনের দিকে। বন্দি নদী তথা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার খেসারত এভাবেই দিতে হয় নদের চাঁদকে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার সপ্তম পাঠের তৃতীয় বিভাগ ‘নদীর বিদ্রোহ’ এর উপর ভিত্তি করে কিছু ব্যাখ্যামূলক ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থেকে থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় আমার সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি সহায়তা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এছাড়া, এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।