এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন? জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন?
দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়। কারণ –
- অপ্রবেশ্য শিলার উপস্থিতি – দাক্ষিণাত্য মালভূমি অপ্রবেশ্য আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত হওয়ায় ভৌমজলের সঞ্চয় কম। ফলে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচের প্রথা কম।
- তরঙ্গায়িত ভূভাগ – অপ্রবেশ্য শিলা দ্বারা গঠিত দাক্ষিণাত্য মালভূমির তরঙ্গায়িত ভূমিতে অনেক জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে। এই জলাশয়গুলি জলসেচের প্রধান উৎস।
- নদীর উপস্থিতি – দক্ষিণভারতের সর্বত্র নদীর উপস্থিতি না থাকায় এবং ভূমিভাগ অপ্রবেশ্য শিলাস্তর দ্বারা গঠিত হওয়ায় খাল সৃষ্টি করে জলসেচ করা হয় না।
- বৃষ্টির পরিমাণ কম – দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় সারাবছর জলসেচের জন্য প্রয়োজনীয় জল পাওয়া যায় না।
জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচের সুবিধা –
- কম প্রারম্ভিক ব্যয় – জলাধার নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ব্যয় অত্যন্ত কম।
- সহজসাধ্য – বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরি অত্যন্ত সহজসাধ্য কাজ।
- বৃষ্টির জলের সুষম বণ্টন – জলাধার তৈরি করে বৃষ্টির জলকে ধরে রেখে প্রয়োজন মতো কৃষিক্ষেত্রে সরবরাহ করা যায়।
- ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ – জলাশয় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভূমিক্ষয় রোধে সাহায্য করে।
- অপ্রবেশ্য শিলাস্তর – অপ্রবেশ্য শক্ত শিলাস্তরে গঠিত অঞ্চলে যেখানে কূপ খনন করা অসুবিধাজনক সেখানে জলাশয়ই জলসেচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচের অসুবিধা –
- কৃষিজমির আয়তনের সংকোচন – জলাধার নির্মাণ করলে কৃষিজমির আয়তন অনেকাংশে হ্রাস পায়।
- জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস – দীর্ঘদিন যাবৎ জলাশয়ের নীচে পলি জমা হলে জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
- জলের অসম জোগান – জলাশয়গুলিতে সঞ্চিত জলের পরিমাণ বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভরশীল, এর ফলে অনাবৃষ্টি অথবা স্বল্প বৃষ্টির সময় জল শুকিয়ে যেতে পারে।
- বাঁধের ভাঙন – অতি বৃষ্টিতে জলাশয়ের বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ বেশি ব্যবহৃত হয় কেন?
1. অপ্রবেশ্য শিলার উপস্থিতি – দাক্ষিণাত্য মালভূমি আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত, যা ভৌমজলের সঞ্চয়ে বাধা দেয়। ফলে কূপ বা নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ সীমিত।
2. তরঙ্গায়িত ভূভাগ – এই অঞ্চলের ভূমিরূপে প্রাকৃতিক জলাশয় তৈরি হয়, যা জলসেচের সহজ উৎস।
3. নদীর অপ্রতুলতা – দক্ষিণ ভারতে নদীগুলি বৃষ্টিনির্ভর এবং অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের কারণে খাল খনন কঠিন।
4. অনিয়মিত বৃষ্টিপাত – নদীর জল সরবরাহ অনিশ্চিত হওয়ায় জলাশয়ে জল সংরক্ষণ করা হয়।
জলাশয়-ভিত্তিক জলসেচের সুবিধাগুলি কী?
1. কম প্রাথমিক ব্যয় – জলাধার নির্মাণে খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
2. জল সংরক্ষণ – বৃষ্টির জল ধরে রেখে কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়।
3. ভূমিক্ষয় রোধ – জলাশয় পার্শ্ববর্তী মাটি ক্ষয় রোধ করে।
4. অপ্রবেশ্য শিলাস্তরে উপযোগী – যেখানে নলকূপ খনন কঠিন, সেখানে জলাশয় কার্যকর।
জলাশয়-ভিত্তিক জলসেচের অসুবিধাগুলি কী?
1. কৃষিজমি হ্রাস – জলাধার নির্মাণে চাষযোগ্য জমি কমে যায়।
2. পলি জমা – সময়ের সাথে জলাশয়ের তলদেশে পলি জমে ধারণক্ষমতা কমে।
3. বৃষ্টিনির্ভরতা – অনাবৃষ্টিতে জলাশয় শুকিয়ে যেতে পারে।
4. বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকি – অতিবৃষ্টিতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দক্ষিণ ভারতে নদী-নির্ভর জলসেচ কম কেন?
1. নদীগুলি বৃষ্টিনির্ভর, তাই শুষ্ক মৌসুমে জলস্বল্পতা দেখা দেয়।
2. অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের কারণে খাল খনন করে জল সরবরাহ করা কঠিন।
জলাশয় কীভাবে দক্ষিণ ভারতের কৃষিকে সহায়তা করে?
জলাশয় বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে জল সরবরাহ করে, যা ফসলের উৎপাদন স্থিতিশীল রাখে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন? জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন