এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে অরণ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতে অরণ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।
অথবা, ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজন হয় কেন?
ভারতে অরণ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা –
মানুষের আর্থসামাজিক জীবনে অরণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। অরণ্য বা বনভূমি থেকে মানুষ তার প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি পায়। সেই কারণে বন সংরক্ষণের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনীয়তাগুলি হল –
মাটির ক্ষয় প্রতিরোধ ও বন্যা প্রতিরোধ –
বনভূমি মাটির ক্ষয় প্রতিরোধ করে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। বিশেষত ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে যেখানে প্রায়ই বন্যা হয়, সেই সমস্ত রাজ্যে বন্যারোধের জন্য অরণ্য সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন।
কাঠের সরবরাহ অব্যাহত রাখা –
বনভূমির প্রধান সম্পদ কাঠ। ভারতের গ্রামাঞ্চলে জ্বালানিরূপে কাঠের ব্যবহারের প্রচলন খুব বেশি। জ্বালানিরূপে কাঠের ব্যবহার না করে যদি কাঠকে বিভিন্ন শিল্পকার্যে, যেমন – প্লাইউড, কাগজ, দিয়াশলাই, যানবাহনের মাধ্যম প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় তাহলে দেশের অধিক উন্নতি হবে। অরণ্য সংরক্ষণ করতে না পারলে এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যের সরবরাহ ক্ষুণ্ণ হবে। তাই অরণ্য সংরক্ষণ প্রয়োজনীয়।
পরিবেশের ভারসাম্য –
অরণ্যের বৃক্ষ বিষাক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং প্রাণীজগতের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে। সুতরাং, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভারতে অরণ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বৃষ্টিপাত –
অরণ্য জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে মাটির আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে। এই কারণে অরণ্য সংরক্ষণ একান্তভাবে প্রয়োজন।
জীববৈচিত্র্য –
বনভূমি বিভিন্ন জীবজন্তুর আবাসস্থল। সুতরাং জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে হলে অরণ্য সংরক্ষণের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
উপজাত দ্রব্য –
বনভূমি থেকে লাক্ষা, মধু, তার্পিন তেল, আঠা, ধুনা, রবার, ভেষজ ওষুধ ইত্যাদি পাওয়া যায়। বনভূমিকে সংরক্ষণ করতে না পারলে এই সমস্ত উপজাত দ্রব্য পাওয়া যাবে না। এই কারণে বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতে অরণ্য সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন?
অরণ্য সংরক্ষণ প্রয়োজন কারণ এটি —
1. মাটির ক্ষয় রোধ করে ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে।
2. পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে (অক্সিজেন সরবরাহ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে)।
3. কাঠ ও অন্যান্য বনজ সম্পদের সরবরাহ বজায় রাখে।
4. জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।
5. বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অরণ্য ধ্বংসের প্রধান কারণগুলি কী কী?
1. কৃষিজমি ও শিল্পায়নের জন্য বন উজাড়।
2. অবৈধ গাছ কাটা ও বনভূমির দূষণ।
3. জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ।
4. প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন – দাবানল)।
অরণ্য সংরক্ষণে ভারত সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
1. বন সংরক্ষণ আইন (1980) প্রণয়ন।
2. জাতীয় বন নীতি (1988) গ্রহণ।
3. সামাজিক বনায়ন প্রকল্প চালু।
4. বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (1972) ও টাইগার প্রজেক্ট।
অরণ্য সংরক্ষণে সাধারণ মানুষ কীভাবে সাহায্য করতে পারে?
1. বেশি করে গাছ লাগানো।
2. কাঠের অপচয় রোধ করা।
3. বনাঞ্চলে আগুন বা ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকা।
4. বন সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়ানো।
অরণ্য ধ্বংসের ফলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
1. মরুকরণ ও মাটির উর্বরতা হ্রাস।
2. বায়ুদূষণ বৃদ্ধি।
3. বন্যা ও খরার প্রকোপ বাড়বে।
4. জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে।
বনভূমি সংরক্ষণে স্থানীয় সম্প্রদায়ের ভূমিকা কী?
স্থানীয় জনগণ বন সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে —
1. ঐতিহ্যবাহী বন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহার করে (যেমন – জঙ্গলবাড়ি প্রথা)।
2. বন নির্ভর শিল্প (মধু, লাক্ষা, ভেষজ উদ্ভিদ) বিকাশে সহায়তা করে।
3. সরকারি উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে (যেমন – Joint Forest Management)।
ভারতে অরণ্য সংরক্ষণের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কী?
অরণ্য থেকে পাওয়া যায় —
1. কাঠ, কাগজ, রাবার, ওষুধের কাঁচামাল।
2. লাক্ষা, মধু, ফলমূলের মতো বনজ সম্পদ।
3. পর্যটন শিল্পের বিকাশ (যেমন – বন্যপ্রাণী সাফারি)।
“চিপকো আন্দোলন” কী এবং এটি কীভাবে অরণ্য রক্ষায় সাহায্য করেছিল?
চিপকো আন্দোলন (1970 -এর দশকে উত্তরাখণ্ডে) ছিল গাছ কাটা রোধে স্থানীয় মহিলাদের অহিংস প্রতিবাদ। তারা গাছকে জড়িয়ে ধরে বন উজাড় ঠেকিয়েছিল, যা পরবর্তীতে ভারতের বন সংরক্ষণ নীতিকে প্রভাবিত করে।
ভারতে বর্তমান বনভূমির পরিমাণ কত?
ভারতের বন রিপোর্ট 2021 অনুযায়ী, দেশের মোট ভৌগোলিক এলাকার 24.62% বনভূমি রয়েছে, যা 80.9 মিলিয়ন হেক্টর।
ভবিষ্যতে অরণ্য সংরক্ষণের জন্য কী করা উচিত?
1. টেকসই বন ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ।
2. জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষার প্রসার।
3. বনভূমি পুনরুদ্ধার (Reforestation) প্রকল্প জোরদার করা।
4. বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি (যেমন – সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে অরণ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন