Madhyamik Geography Question Paper 2020 With Answer

আজকে আমরা এই লেখার মাধ্যমে ২০২০ সালের মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্র এবং তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগের বছরের প্রশ্নপত্র কি ধরণের প্রশ্ন পাবে তা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাবে। এই লেখার মাধ্যমে আমরা ‘Madhyamik Geography Question Paper 2020 With Answer’ নিয়ে আলোচনা করব, যা মাধ্যমিক ২০২০ বর্ষের ভূগোল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর সহ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তোমরা মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষায় যাওয়ার আগে ‘Madhyamik Geography Question Paper 2020 With Answer’ পড়ে নিতে পারবে।

Table of Contents

Madhyamik Geography Question Paper 2020 With Answer

বিভাগ – ‘ক’

১। বিকল্পগুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো: ১×১৪=১৪

১.১ যে প্রক্রিয়ায় অভিকর্ষের টানে উচ্চভূমির ঢাল বরাবর মাটি ও শিলাস্তর নেমে আসে তাকে বলে —

(ক) আবহবিকার
(খ) পর্যায়ন প্রক্রিয়া
(গ) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া
(ঘ) পুঞ্জক্ষয় প্রক্রিয়া

উত্তরঃ পুঞ্জক্ষয় প্রক্রিয়া

১.২ মরু সমপ্রায়ভূমিতে কঠিন শিলাগঠিত কিছু অনুচ্চ পাহাড় অবশিষ্টাংশ ভূমিরূপ হিসাবে থেকে যায় —

(ক) ইয়ার্দাঙ
(খ) জুইগেন
(গ) বালিয়াড়ি
(ঘ) ইনসেলবার্গ

উত্তরঃ (ঘ) ইনসেলবার্গ

১.৩ অশ্ব অক্ষাংশ অবস্থিত —

(ক) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
(খ) উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়
(গ) মেরু বৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
(ঘ) মেরু উচ্চচাপ বলয়

উত্তরঃ (খ) উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়

১.৪ দিনরাতের তাপমাত্রার পার্থক্য সবচেয়ে বেশি দেখা যায় –

(ক) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে
(খ) উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চলে
(গ) ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে
(ঘ) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে

উত্তরঃ (খ) উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চলে

১.৫ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি নির্ভর করে —

(ক) বায়ুপ্রবাহ
(খ) পৃথিবীর পরিক্রমণ
(গ) মগ্নচড়া
(ঘ) সব কটিই প্রযোজ্য

উত্তরঃ (ক) বায়ুপ্রবাহ

১.৬ কোনো স্থানের জোয়ার ও ভাটার প্রকৃত ব্যবধান প্রায় –

(ক) দু-ঘণ্টার বেশি
(খ) ছয় ঘণ্টার বেশি
(গ) চার ঘণ্টার বেশি
(ঘ) আট ঘণ্টার বেশি

উত্তরঃ (খ) ছয় ঘণ্টার বেশি

১.৭ যানবাহনের কার্বনকণা নির্গমন রোধের জন্য ব্যবহার করা হয় –

(ক) পরিস্রাবক ঘূর্ণায়ণ
(খ) তাড়িতিক অধঃক্ষেপক
(গ) স্ক্রাবার
(ঘ) আস্তরণযুক্ত অ্যালুমিনা

উত্তরঃ (গ) স্ক্রাবার

১.৮ ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে যে অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে তা হল —

(ক) নিরক্ষরেখা
(খ) মকরক্রান্তিরেখা
(গ) মূল মধ্যরেখা
(ঘ) কর্কটক্রান্তিরেখা

উত্তরঃ (ঘ) কর্কটক্রান্তিরেখা

১.৯ গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপের মাঝে অবস্থিত হ্রদের নাম হল –

(ক) কোলেরু
(খ) পুলিকট
(গ) চিল্কা
(ঘ) ভেম্বনাদ

উত্তরঃ (ক) কোলেরু

১.১০ ভারতের সর্বাধিক জলসেচ করা হয় যে পদ্ধতিতে, সেটি হল —

(ক) কূপ ও নলকূপ
(খ) জলাশয়
(গ) খাল
(ঘ) ফোয়ারা

উত্তরঃ (ক) কূপ ও নলকূপ

১.১১ ভারতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা দেখা যায় —

(ক) গ্রীষ্মকালে
(খ) শরৎকালে
(গ) বর্ষাকালে
(ঘ) শীতকালে

উত্তরঃ (ঘ) শীতকালে

১.১২ সামুদ্রিক লবণাক্ত বাতাস প্রয়োজন হয় —

(ক) ইক্ষু চাষে
(খ) চা চাষে
(গ) পাট চাষে
(ঘ) কফি চাষে

উত্তরঃ (ক) ইক্ষু চাষে

১.১৩ পশ্চিমবঙ্গে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পকেন্দ্র অবস্থিত —

(ক) জুনপুটে
(খ) কলকাতায়
(গ) শঙ্করপুরে
(ঘ) হলদিয়ায়

উত্তরঃ (ঘ) হলদিয়ায়

১.১৪ টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্রে সমোন্নতি রেখা অঙ্কন করা হয় যে রঙ দিয়ে তা হল —

(ক) বাদামি
(খ) কালো
(গ) লাল
(ঘ) নীল

উত্তরঃ (ক) বাদামি

বিভাগ – ‘খ’

২। ২.১ নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখো (যে কোনো ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও): ১×৬=৬

২.১.১ ভাগীরথী এবং অলকানন্দা নদীর মিলনস্থল হলো দেবপ্রয়াগ।

উত্তরঃ শু

২.১.২ মিস্ট্রাল একটি উষ্ণ স্থানীয় বায়ু যা ফ্রান্সের রোন নদী উপত্যকায় প্রবাহিত হয়।

উত্তরঃ অ

২.১.৩ এল নিনোর বছরগুলিতে ভারতে বন্যার সৃষ্টি হয়।

উত্তরঃ অ

২.১.৪ সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে সিজিগি বলে।

উত্তরঃ শু

২.১.৫ পুনর্ব্যবহারের ফলে পুরানো খবরের কাগজকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে কাগজ উৎপাদন করা যায়।

উত্তরঃ শু

২.১.৬ শিবালিক পর্বতের পাদদেশে নুড়ি, পলি ও বালি গঠিত মৃত্তিকাকে বেবো বলে।

উত্তরঃ অ

২.১.৭ উপগ্রহ চিত্র ব্যাখ্যার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার আবশ্যিক।

উত্তরঃ শু

২.২ উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো (যে কোনো ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১×৬=৬

২.২.১ আবহবিকার ও ক্ষয়কার্যের যৌথ কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিভাগের পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াকে __ বলা হয়।

উত্তরঃ আবহবিকার ও ক্ষয়কার্যের যৌথ কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিভাগের পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলা হয়।

২.২.২ মরু অঞ্চলে বায়ুর __ কার্যের ফলে মরুদ্যান সৃষ্টি হয়।

উত্তরঃ মরু অঞ্চলে বায়ুর অপসারণ ও ক্ষয় কার্যের ফলে মরুদ্যান সৃষ্টি হয়।

২.২.৩ বায়ুচাপের ঢাল বৃদ্ধি পেলে, বায়ুর গতিবেগ __ পায়।

উত্তরঃ বায়ুচাপের ঢাল বৃদ্ধি পেলে, বায়ুর গতিবেগ বৃদ্ধি পায়।

২.২.৪ সমুদ্রের শীতল জল মেরু অঞ্চল থেকে __ স্রোত রূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।

উত্তরঃ সমুদ্রের শীতল জল মেরু অঞ্চল থেকে অন্তঃস্রোত রূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।

২.২.৫ ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়ক পথ হল NH __

উত্তরঃ ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়ক পথ হল NH 7।

২.২.৬ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা __ এ অবস্থিত।

উত্তরঃ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থিত।

২.২.৭ বৈদ্যুতিন বর্জকে সংক্ষেপে বলা হয় __ বর্জ্য।

উত্তরঃ বৈদ্যুতিন বর্জকে সংক্ষেপে বলা হয় E বর্জ্য।

২.৩. একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও (যে কোনো ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১×৬=৬

২.৩.১ পৃথিবীর বৃহত্তম উপত্যকা হিমবাহের নাম কী?

উত্তরঃ পৃথিবীর বৃহত্তম উপত্যকা হিমবাহের নাম – আলাস্কার হুবার্ড।

২.৩.২ ভূপৃষ্ঠের কোন অঞ্চলের উপর বায়ুমণ্ডলে প্রথম ওজোন গহ্বর আবিষ্কৃত হয়েছে?

উত্তরঃ আন্টার্টিকায় বায়ুমণ্ডলে প্রথম ওজোন গহ্বর আবিষ্কৃত হয়েছে।

২.৩.৩ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দক্ষিণতম গিরিপথটির নাম কী?

উত্তরঃ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দক্ষিণতম গিরিপথটির নাম – পালঘাট।

২.৩.৪ কেরালার উপকূলের উপহ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় কি বলে?

উত্তরঃ কেরালার উপকূলের উপহ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় বলে – কয়াল।

২.৩.৫ ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতটির নাম লেখো।

উত্তরঃ ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতটির নাম – যোগ জলপ্রপাত।

২.৩.৬ ভারতের কোন শহরে প্রথম পাতাল রেলের যাত্রা শুরু হয়?

উত্তরঃ প্রথম পাতাল রেলের যাত্রা শুরু হয় কলকাতা।

২.৩.৭ ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য কোনটি?

উত্তরঃ ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য হল – উত্তরপ্রদেশ।

২.৩.৮ উপগ্রহ চিত্র কোন রূপে প্রকাশ করা হয়?

উত্তরঃ উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করা হয় সেন্সর ব্যান্ড, পিক্সেল, অ্যানোটেশন লাইন, ছদ্ম রঙ বা FCC (False Colour Composite) রূপে।

২.৪ বামদিকের সাথে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখো : ১×৪=৪

বামদিকডানদিক
২.৪.১ রত্না১. পাইন
২.৪.২ সরলবর্গীয় অরণ্য২. মার্মাগাঁও
২.৪.৩ রেলের বগি নির্মাণ কেন্দ্র৩. উচ্চ ফলনশীল ধান বীজ
২.৪.৪ লৌহ আকরিক রপ্তানীকারক বন্দর৪. পেরাম্বুর

উত্তরঃ

বামদিকডানদিক
২.৪.১ রত্না৩. উচ্চ ফলনশীল ধান বীজ
২.৪.২ সরলবর্গীয় অরণ্য১. পাইন
২.৪.৩ রেলের বগি নির্মাণ কেন্দ্র৪. পেরাম্বুর
২.৪.৪ লৌহ আকরিক রপ্তানীকারক বন্দর২. মার্মাগাঁও

বিভাগ – ‘গ’

৩। নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : ২×৬=১২

৩.১ প্রপাতকূপ কাকে বলে?

প্রপাতকূপ – পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চলে নদীর গতিপথের ঢাল হঠাৎ পরিবর্তিত হলে নদীস্রোত সেই খাড়া ঢাল থেকে বিপুল বেগে নীচে পড়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে। যেহেতু জলপ্রপাতের নীচের অংশের গতিবেগ ও শক্তি খুব বেশি থাকে, তাই জল যেখানে নীচে পড়ে, নদীখাতের সেই অংশে জলের আঘাতে এবং নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে বেশ বড়ো গর্ত সৃষ্টি হয়। হাঁড়ির মতো দেখতে সেই গর্তকেই বলে প্রপাতকূপ বা প্লাঞ্জপুল (Plunge pool)।

৩.১ লোয়েসের সংজ্ঞা দাও।

লোয়েস – মরুভূমির খুব সূক্ষ্ম বালুকণা ও পলিকণা বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে বহুদূর পর্যন্ত উড়ে গিয়ে সঞ্চিত হলে তাকে লোয়েস বলে। এভাবে বিস্তৃত অবনত এলাকায় লোয়েস সঞ্চিত হয়ে যখন সমভূমি সৃষ্টি করে তাকে লোয়েস সমভূমি বলে।

উদাহরণ – উত্তর চিনের গোবি মরুভূমির বালি হোয়াংহো নদীর অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমি সৃষ্টি করেছে।

৩.২ আপেক্ষিক আর্দ্রতা কী?

আপেক্ষিক আর্দ্রতা – কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং ওই একই উষ্ণতায় ওই একই আয়তনের বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা-এই দুয়ের অনুপাতকেই বলা হয় আপেক্ষিক বা সাপেক্ষ আর্দ্রতা। আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরা (%) হিসেবে এবং কাছাকাছি পূর্ণমানে প্রকাশ করা হয়। সুতরাং –

আপেক্ষিক আর্দ্রতা=নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ (চরম আর্দ্রতা)ওই পরিমাণ উষ্ণতায় বায়ুকে পরিপৃক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ×100

একক – আপেক্ষিক আর্দ্রতা একটি আনুপাতিক প্রকাশ হওয়ায় এর কোনো একক হয় না।

৩.২ পেরিজি জোয়ার বলতে কি বোঝো?

পেরিজি – উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের সময় চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে (৩ লক্ষ ৫৬ হাজার কিমি) থাকে, চাঁদের সেই অবস্থানকে পেরিজি বা অনুসূর অবস্থান বলে (কাছে থাকার জন্য এই সময় চাঁদকে প্রায় ১৪ শতাংশ বড়ো এবং প্রায় ২৫ গুণ উজ্জ্বল দেখায়)। এই সময়ে সৃষ্ট জোয়ারকে পেরিজি বা অনুভূ জোয়ার বলে।

বৈশিষ্ট্য –

এই সময় কম দূরত্বের জন্য পৃথিবীর ওপর চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে জলভাগে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয়।
স্বাভাবিক সময়ের জোয়ারের তুলনায় পেরিজি জোয়ারের তীব্রতা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।
পেরিজি জোয়ারের সময় ভরা কোটাল হলে জোয়ারের জলতলের উচ্চতা সর্বাপেক্ষা বেশি হয়।

৩.৩ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ কাকে বলে?

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ – কোনো উন্মুক্ত নীচু জায়গা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা ভরাট করার পদ্ধতিকে ল্যান্ডফিল বা ভরাটকরণ বলে। সংগ্রহ করা বর্জ্য পদার্থকে নষ্ট করতে ভরাটকরণ বা স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (sanitary landfill) খুব গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।

প্রক্রিয়া –

এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনার জৈব অংশকে আলাদা করে একটি স্তরে বিছিয়ে দেওয়া হয়। ওই জৈব স্তরের উচ্চতা ২ মিটারের মতো হয়।
এর ওপর ২০-২৫ সেমি মাটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এইভাবে এক স্তর কঠিন জৈব বর্জ্য এবং এতে স্তর মাটি দিয়ে ক্রমান্বয়ে অনেকগুলি স্তর তৈরি করা হয়।
তবে সবার ওপরে থাকে একটি পুরু মাটির স্তর, যাতে ইঁদুর জাতীয় কোনো প্রাণী এতে সরাসরি গর্ত করতে না পারে।
পচন – মাটির নীচে থাকা বর্জ্যগুলি জৈব ভঙ্গুর বলে এদের পচন হয় এবং তার ফলে এগুলির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব ধর্মের পরিবর্তন ঘটে।

ল্যান্ডফিল গ্যাস সৃষ্টি – এই প্রক্রিয়া চলার সময় মিথেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাসগুলিকে ল্যান্ডফিল গ্যাস বলে।

জমি ভরাটকরণ – ৪-৬ মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হয় এবং তখন অবশিষ্ট হিসেবে যা পড়ে থাকে, সেগুলি দিয়ে নীচু জমি ভরাট করা হয়। পূর্ব কলকাতার ধাপায় এই পদ্ধতিতে নীচু জমি ভরাট করে উর্বর কৃষিজমি তৈরি হয়েছে।

সুবিধা – এই পদ্ধতিটির সুবিধা হল বর্জ্য পদার্থগুলি মাটি দিয়ে ঢাকা থাকে বলে বর্জ্যজাত দূষণে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না।

অসুবিধা – অসুবিধা হল একই জায়গায় বর্জ্যগুলি জমে থাকার ফলে বৃষ্টি হলে তা থেকে নোংরা দূষিত জল চুইয়ে চুইয়ে আশেপাশের জলাশয়েও ভূগর্ভস্থ জলন্তরে মিশে পানীয় জলের দূষণ ঘটাতে পারে। বর্জ্য ধোয়া ওই দূষিত জলকে লিচেট বলে।

৩.৩ পৌরসভার বর্জ্যের সংজ্ঞা দাও।

পৌরসভার বর্জ্য – শহরের বা পৌর এলাকার বাড়ি, অফিস, বিদ্যালয়, বাজার, রেস্টুরেন্ট, হোটেল প্রভৃতি স্থানে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থকে পৌরসভার বর্জ্য বলে।

উদাহরণ – এর মধ্যে থাকে শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, ছেঁড়া কাগজ, শিশি-বোতল, ছেঁড়া কাপড়, ডাবের খোলা, পলিথিন ব্যাগ, ভাঙা প্লাস্টিক, ধাতব টুকরো প্রভৃতি।

৩.৪ ভারতের মরু উদ্ভিদের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

ভারতের মরু উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য – উষ্ণ মরু অঞ্চলে ‘জেরোফাইট’ শ্রেণির উদ্ভিদ জন্মায়। উষ্ণ ও শুষ্ক পরিবেশে জন্ম ও বৃদ্ধির জন্য এই উদ্ভিদদেহে কতকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যেমন –

মাটির গভীর থেকে জল সংগ্রহ করার জন্য এই উদ্ভিদের শিকড় খুব দীর্ঘ হয়।
গাছে পাতা থাকে না (ক্যাকটাস) বা থাকলেও খুব কম এবং আকৃতিতে হয় ছোটো ছোটো (বাবলা)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাতাগুলি কাঁটায় পরিণত হয়।

৩.৪ দুন বলতে কি বোঝো?

দুন – পশ্চিম হিমালয়ে বিশেষত গাড়োয়াল হিমালয় অঞ্চলে মধ্য হিমালয় পর্বতশ্রেণি এবং শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অংশে যেসব দীর্ঘ কিন্তু অল্পবিস্তৃত প্রায়সমতল উপত্যকা আছে, সেগুলিকে দুন বলা হয়। যেমন – দেরাদুন (উত্তরাখণ্ড)।

৩.৫ অনুসারী শিল্প কাকে বলে?

অনুসারী শিল্প – যখন কোনো শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে পরস্পর নির্ভরশীল অনেক শিল্প গড়ে তোলা হয়, তখন প্রথমটিকে কেন্দ্রীয় শিল্প এবং বাকি শিল্পগুলিকে অনুসারী শিল্প বলে।

উদাহরণ – হলদিয়ার পেট্রোরসায়ন শিল্প হল কেন্দ্রীয় শিল্প, আর এই শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে যেসব শিল্প গড়ে উঠছে তাদের অনুসারী শিল্প বলে।

৩.৫ ভারতের প্রধান অভ্যন্তরীণ জলপথের যুক্তকারী কেন্দ্রদুটির নাম লেখো।

ভারতের প্রধান অভ্যন্তরীণ জলপথের যুক্তকারী কেন্দ্র দুটি হল – পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া এবং উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ।

৩.৬ সেন্সর বলতে কি বোঝো?

সেন্সর – সেন্সর হল একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র বা Device যেটি পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী কৃত্রিম উপগ্রহে সংযুক্ত থেকে ভূপৃষ্ঠের কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতিফলিত আলোকতরঙ্গ কাজে লাগিয়ে (ডিজিটাল পরিসংখ্যানের

আকারে) সেই বস্তুটির তথ্য সংগ্রহ করে। সেন্সর দু’রকমের হয় –

অ্যাকটিভ বা সক্রিয় সেন্সর – এগুলি সৌররশ্মির ওপর নির্ভর না করে নিজেই পাঠিয়ে তার প্রতিফলন সংগ্রহ করে। যেমন – র‍্যাডার।
প্যাসিভ বা নিষ্ক্রিয় সেন্সর – এগুলি ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন বস্তুর তথ্য সংগ্রহের জন্য সৌররশ্মির প্রতিফলনের ওপর নির্ভর করে। যেমন-ফোটোগ্রাফিক ক্যামেরা।

৩.৬ ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের দুটি ব্যবহার লেখো।

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের ব্যবহার – ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের দুটি ব্যবহার হল –

সামরিক প্রয়োজন – ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সামরিক প্রয়োজন।
ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন বা নদীর গতিপথের পরিবর্তন বোঝার জন্য – কোনো অঞ্চলের ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন বা নদীর গতিপথের পরিবর্তন বোঝার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ব্যবহার করা হয়।

বিভাগ – ‘ঘ’

৪। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়): ২×৬=১২

৪.১ নদীর বহন কার্যের তিনটি প্রক্রিয়া সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ

নদীর বহন কাজের প্রক্রিয়াসমূহ – নদী চারভাবে বহন করে, এগুলি হল –

১. দ্রবণের মাধ্যমে ২. ভাসমান প্রক্রিয়ায় ৩. লস্কনের মাধ্যমে ৪. টান বা আকর্ষণ প্রক্রিয়ায়

(i) দ্রবণের মাধ্যমে – চুনাপাথর, লবণ-জাতীয় শিলা প্রভৃতিকে জলে গুলে বা দ্রবণের মাধ্যমে নদী বয়ে নিয়ে চলে।

(ii) ভাসমান প্রক্রিয়ায় – কাদা, পলি, বালি প্রভৃতি হালকা পদার্থগুলি নদী ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নদী যে পরিমাণ পদার্থ বহন করে, তার প্রায় ৭০ শতাংশ বহন করে ভাসমান প্রক্রিয়ায়।

(iii) লস্কনের মাধ্যমে – কিছুটা বড়ো বা মাঝারি আকৃতির পাথরগুলি স্রোতের সঙ্গে বাহিত হওয়ার সময় নদীখাতে বার বার ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে অগ্রসর হয়।

অথবা

জেট বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভারতীয় মৌসুমিবায়ুর সম্পর্ক উল্লেখ করো।

উত্তরঃ

জেট বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভারতীয় মৌসুমি বায়ুর সম্পর্ক – আবহবিদেরা মনে করেন মৌসুমি বায়ুর সাথে জেট বায়ুর একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য ভারতের মৌসুমি জলবায়ুর ওপর ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু এবং উপক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর প্রভাব খুব ভালোভাবেই পড়ে।

বর্ষাকাল –

ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর প্রবাহপথ – ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু জুন মাসে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই সময় এই বায়ুস্রোত চীনের দক্ষিণ উপকূল থেকে আরম্ভ করে (১২° থেকে ১৫° উত্তর অক্ষাংশ বরাবর) থাইল্যান্ড ও ভারতীয় উপদ্বীপ পেরিয়ে আফ্রিকার পূর্ব দিকে সুদান হয়ে প্রায় সাহারায় গিয়ে শেষ হয়।

বায়ুর গতিবেগ – পূর্বে মালয়েশিয়া থেকে পশ্চিমে ভারত পর্যন্ত ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর গতিবেগ খুব বেশি (ঘণ্টায় ১০০-২০০ কিমি) থাকে এবং পশ্চিমে তা ক্রমশ হ্রাস পায়।

মৌসুমি বায়ুর ওপর প্রভাব – প্রকৃতপক্ষে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সঠিক সময়ে আগমন ও সক্রিয়তা বহুলাংশে এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। যদি এই ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বেশি উত্তরে সরে যায়, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহে ছেদ (Break of Monsoon) ঘটে। অর্থাৎ ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে বৃষ্টিহীন ও খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, বর্ষাকালে ভারতের ওপর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি এবং সেগুলির তীব্রতার হ্রাসবৃদ্ধি, এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের গতিপ্রকৃতির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।

জেট বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভারতীয় মৌসুমিবায়ুর সম্পর্ক উল্লেখ করো।

শীতকাল –

উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট বায়ু – উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট বায়ু অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ অর্থাৎ, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ফিরে যাবার সময় থেকেই ভারতের ওপর আবির্ভূত হয় এবং প্রায় মে মাস পর্যন্ত এই দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়। এই বায়ুস্রোতটি শীতকালে যতই দক্ষিণে সরে আসে, ভারতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা তথা শীতের তীব্রতা ততই বাড়ে। ফেব্রুয়ারি মাসে এটি সর্বাধিক দক্ষিণে আসে ভারতীয় উপমহাদেশের উর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে বায়ুসঞ্চালন (শীতকালীন) এবং তারপর ধীরে ধীরে উত্তরে সরে গিয়ে মে মাসে অন্তর্হিত হয়। শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই বায়ুস্রোতটি হিমালয়ে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশের উর্ধ্ব ট্রপোস্ফিরে বায়ুসঞ্চালন (শীতকালীন)

উপক্রান্তীয় জেট বায়ুর দুই শাখা – একটি শাখা হিমালয়ের উত্তর এবং অপরটি দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে আরও পূর্বে গিয়ে মিলিত হয়। হিমালয়ের দক্ষিণের শাখাটি যত শক্তিশালী হয়, ততই উত্তর ভারতে শীত তীব্র হয়, শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়।

প্রকৃতপক্ষে, মৌসুমি বায়ুর সাথে জেট বায়ুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার জন্যই ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে জেট বায়ুর প্রভাব সীমাহীন। ভারতে মৌসুমি বায়ুর স্থায়িত্ব ও তীব্রতা, বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত, ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি এই জেট বায়ুর অবস্থান ও গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।

৪.২ প্রকৃতি অনুসারে বর্জ্যের উদাহরণসহ শ্রেণিবিভাগ করো।

উত্তরঃ

প্রকৃতি অনুসারে বর্জ্যের শ্রেণিবিভাগ: প্রকৃতি অনুসারে বর্জ্য পদার্থকে দুইভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায় –

১. বর্জ্য পদার্থের অবস্থা অনুসারে ২. বর্জ্য পদার্থের বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে

(i) বর্জ্য পদার্থের অবস্থা অনুসারে: বর্জ্য পদার্থের অবস্থার ওপর নির্ভর করে বর্জ্য পদার্থকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল –

  • কঠিন বর্জ্য
  • তরল বর্জ্য
  • গ্যাসীয় বর্জ্য

(a) কঠিন বর্জ্য: দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের অযোগ্য, অপ্রয়োজনীয় বা বাতিল পদার্থসমূহের মধ্যে যেগুলি কঠিন, তাদের কঠিন বর্জ্য বলে। উদাহরণ – ভাঙা কাচ, ভাঙা প্লাস্টিক, ফেলে দেওয়া ইমারতি দ্রব্য প্রভৃতি।

(b) তরল বর্জ্য: ঘর-গৃহস্থালি, কলকারখানা, হাসপাতাল প্রভৃতি থেকে নির্গত ব্যবহারের অযোগ্য তরল পদার্থকে তরল বর্জ্য বলে। উদাহরণ – শৌচালয় থেকে নির্গত নোংরা জল, মল-মূত্র থেকে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ, গৃহস্থালি-নির্গত সাবান ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল প্রভৃতি।

(c) গ্যাসীয় বর্জ্য: বায়ুমণ্ডল তথা পরিবেশে মেশা ক্ষতিকর গ্যাসীয় পদার্থকে গ্যাসীয় বর্জ্য বলে। উদাহরণ – যানবাহনে দহনের ফলে সৃষ্ট কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, আবর্জনা-সৃষ্ট মিথেন গ্যাস প্রভৃতি।

(ii) বর্জ্য পদার্থের বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে: বিষক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে বর্জ্য পদার্থকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –

  • বিষাক্ত বর্জ্য
  • বিষহীন বর্জ্য

(a) বিষাক্ত বর্জ্য: যেসব বর্জ্য পদার্থ জীবদেহে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে, সেগুলিকে বিষাক্ত বর্জ্য বলে। এগুলি কঠিন, তরল, গ্যাসীয় এবং তেজস্ক্রিয় সবরকমই হতে পারে। উদাহরণ – অপ্রয়োজনীয় পারদ, আর্সেনিক ও বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক পদার্থ প্রভৃতি।

(b) বিষহীন বর্জ্য: যেসব বর্জ্য পদার্থ প্রাণীজগৎ তথা পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকারক, সেগুলিকে বিষহীন বর্জ্য পদার্থ বলে। উদাহরণ – ছেঁড়া কাপড়, ফলের খোসা, ছেঁড়া কাগজ প্রভৃতি।

অথবা

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তিনটি প্রয়োয়োজনীয়তা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা – বিভিন্ন কারণে বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা খুবই প্রয়োজনীয়। যেমন –

(i) পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা – জল, বায়ু, মাটি প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে দূষণমুক্ত রেখে পরিবেশকে নির্মল ও স্বচ্ছ করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজনীয়।

(ii) বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা – বনভূমি, তৃণভূমি, জলাভূমি-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি।

(iii) জীববৈচিত্র্যকে বাঁচানো – বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা না করলে পৃথিবীর জীবজগৎ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

৪.৩ ভারতের সড়কপথ ও রেলপথের প্রতিটির তিনটি করে সুবিধাগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ

সড়কপথে পরিবহণের সুবিধা:

  • দ্রুত পরিবহণ: সড়কপথে যে কোনো হালকা পণ্য অতিদ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়।
  • যে কোনো সময় পরিবহণ: সড়কপথে যে কোনো সময় পরিবহণ করা যায়। রেল বা বিমান পথের মতো কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সড়কপথ পরিবহণ ব্যবস্থা চলে না।
  • প্রতিরক্ষা: দুর্গম স্থানে অথবা প্রতিরক্ষার কাজে সেনাবাহিনীর জন্য রসদ, অস্ত্রশস্ত্র, ওষুধ প্রভৃতি সড়কপথে পাঠানো সুবিধাজনক।

রেলপথে পরিবহণের সুবিধা:

  • দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো: রেলপথের মাধ্যমে ভারী এবং প্রচুর পণ্য দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়।
  • কম খরচে পরিবহণ: রেলপথের মাধ্যমে একসাথে অনেক পণ্য কম খরচে পরিবহণ করা সম্ভব।
  • সহজেই বেশি দূরত্ব অতিক্রম: রেলপথে সহজেই ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অর্থাৎ বেশি দূরত্বে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ করা যায়।

অথবা

পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি বিপ্লবের সুফলগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ

পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি বিপ্লবের সুফলসমূহ – বিগত শতাব্দীর প্রায় তৃতীয় ভাগ থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের কৃষিকাজে উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, ভূমিসংস্কার, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষিজোতের একত্রীকরণ প্রভৃতি সফলভাবে প্রয়োগ ও ব্যবহার করা হয়। ফলে ওই দুই রাজ্যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়, যাকে কৃষিবিপ্লব নামে অভিহিত করা হয়। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে এই কৃষিবিপ্লবের কতকগুলি উল্লেখযোগ্য সুফল লক্ষ করা যায়। যেমন –

(i) কৃষিজ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি – কৃষি বিপ্লবের ফলে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সম্মিলিতভাবে ভারতের সর্বাধিক কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশের মধ্যে ধান ও গম উৎপাদনে পাঞ্জাবের স্থান তৃতীয় এবং গম উৎপাদনে হরিয়ানার স্থান চতুর্থ। এ ছাড়া এই দুই রাজ্যে বিপুল পরিমাণে কার্পাস, আখ, ভুট্টা, তৈলবীজ, ডাল প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়।

(ii) হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি – কৃষি বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে ফসলের হেক্টর প্রতি উৎপাদন অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বর্তমানে ধান ও গমের হেক্টর প্রতি উৎপাদনে পাঞ্জাব দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে। হরিয়ানাতেও এই দুই শস্যের হেক্টর প্রতি উৎপাদন খুব বেশি। কার্পাস, আখ প্রভৃতি ফসলের হেক্টর প্রতি উৎপাদনেও এই দুই রাজ্যে যথেষ্ট বেশি।

(iii) খাদ্য সমস্যার সমাধান – ভারতে একসময় ধান, গম প্রভৃতি খাদ্যশস্যের উৎপাদন কম হওয়াতে দেশে মাঝেমাঝেই খাদ্য সংকট দেখা দিত। কিন্তু কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে প্রধানত পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ধান, গমসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সমস্যার সমাধান হয়েছে।

(iv) কৃষকের সমৃদ্ধি – জমি থেকে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নয়ন ঘটেছে।

(v) শিল্পের বিকাশ – কৃষি বিপ্লবের ফলে এই দুই রাজ্যে কার্পাস বয়ন, বনস্পতি প্রভৃতি কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রকার কৃষিযন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে।

(vi) গ্রামীণ কর্মসংস্থান – কৃষিসমৃদ্ধির জন্য গ্রামীণ লোকের কাজের সুযোগ অনেক বেড়েছে।

৪.৪ ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের স্কেলের উল্লেখ ছকের মাধ্যমে করো।

উত্তরঃ

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্কেল – ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্কেলগুলিকে ছকের মাধ্যমে দেখানের হল –

শিটের নামR.F.বিবৃতিমূলক স্কেলবিস্তার (অক্ষাংশ × দ্রাঘিমা)মানচিত্রের নম্বরের উদাহরণ
মিলিয়ন শিট1:10000001 সেমিতে 10 কিমি4° × 4°73
সিকি ইঞ্চি বা ডিগ্রি শিট1:2500001 সেমিতে 2.5 কিমি30′ × 30′73M/NE
ইঞ্চি শিট1:500001 সেমিতে 500 মি15′ × 15′73M/5
বিশেষ ধরনের ম্যাপ1:250001 সেমিতে 250 মি7’30” x 7’30”73M/5/SE

অথবা

জিওষ্টেশনারী ও সানসিনক্রোনাশ উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য করো।

উত্তরঃ

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়জিওস্টেশনারি বা ভূসমলয় উপগ্রহসান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ
উচ্চতাসমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০০ কিমি উচ্চতায় থাকে।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০ – ৯০০ কিমি উচ্চতায় থাকে।
আবর্তননিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর মতো সমগতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘোরে।পৃথিবীর এক মেরু থেকে অন্য মেরুতে অর্থাৎ উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরুতে নির্দিষ্ট বেগে পৃথিবীকে আবর্তন করে।
তথ্য সংগ্রহপৃথিবীর গতিতে ঘোরে বলে একই দ্রাঘিমারেখায় স্থির থাকে, অর্থাৎ একই জায়গায় অবস্থান করে এবং এজন্য প্রতি ঘণ্টায় একই জায়গার বহু চিত্র সংগ্রহ করে।একই অক্ষাংশে একই স্থানীয় সময় ধরে এবং নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে তথ্য সংগ্রহ করে।
গুরুত্বআবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ও পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই এর নাম Environmental Monitoring Satellite।বেশি উঁচুতে থাকে না বলে এর দ্বারা সংগৃহীত চিত্র থেকে ভূপৃষ্ঠের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ মেলে ফলে সহজেই ভূসম্পদ পর্যবেক্ষণ ও তার পরিবহণ বোঝা যায়। তাই এর অপর নাম Resource Satellite Monitoring।

বিভাগ – ‘ঙ’

(দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্কন আবশ্যিক নয়)

৫। ৫.১ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি থেকে যে কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫×২=১০

৫.১.১ হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপের সচিত্র বিবরণ দাও।

উত্তরঃ

(i) U-আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি – হিমবাহ পার্বত্য অঞ্চলে সার্ক বা করির নীচের দিকে ক্রমশ যে প্রশস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়, সেখানে হিমবাহের পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় প্রায় সমানভাবে হয় বলে সেই উপত্যকাটির আকৃতি ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়। একে তাই U-আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি বলা হয়। এই জাতীয় উপত্যকায় ছোটো ছোটো হ্রদ দেখা যায়। এগুলির নাম প্যাটারনস্টার হ্রদ। হিমদ্রোণির নিম্নদিকে হিমসিঁড়ি বা হিমসোপান দেখা যায়।

হিমদ্রোগি

(ii) ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল – হিমবাহের গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা পরপর থাকলে কঠিন শিলা কোমল শিলাকে হিমবাহের ক্ষয়কার্য থেকে কিছুটা রক্ষা করে। কোমল শিলা গঠিত অংশ তখন কঠিন শিলার পিছনে লেজের মতো বিস্তৃত থাকে, একে বলা হয় ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল।

ক্র্যাগ-অ্যান্ড-টেল

(iii) রসে মতানে – হিমবাহের প্রবাহপথে ঢিপির মতো আকৃতির শিলাখণ্ড থাকলে ওই শিলাখণ্ডটির যে দিক থেকে হিমবাহ আসে সেই দিকে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় শিলাখণ্ডটি মসৃণ এবং বিপরীত দিকে উৎপাটন প্রক্রিয়ায় এবড়োখেবড়ো বা অসমৃণ হয়। এই ধরনের ঢিপির নাম রসে মতানে।

রসে-মতানে

৫.১.২ বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরগুলি আলোচনা করো৷

উত্তরঃ

ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল

অবস্থান – বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত স্তরটির নাম ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল। ইংরেজি ‘ট্রপোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ট্রপো’ (যার অর্থ ‘পরিবর্তন’ বা ‘অশান্ত’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত।

বিস্তার – নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬–১৮ কিমি ও মেরু অঞ্চলে ৮–৯ কিমি (গড় উচ্চতা ১২ কিমি) উচ্চতা এই স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্য –

(i) উষ্ণতা – এই স্তরে প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা ৬.৪°সে হারে কমতে থাকে। এই কারণে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব বা শেষ সীমায় বায়ুর উষ্ণতা কমে হয় প্রায় –৫৫°সে থেকে –৬৬°সে।

(ii) ভর – বায়ুমণ্ডলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের তিন-চতুর্থাংশ পাওয়া যায়।

(iii) আবহাওয়ার গোলযোগ – বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ও লবণের কণা থাকে। মেঘের সৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহ প্রধানত এই স্তরেই দেখা যায়। ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি ঘটনা ট্রপোস্ফিয়ারেই কেবল ঘটে। তাই ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলা হয়।

(iv) ট্রপোপজ – ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রপোপজ। এখানে উষ্ণতা কমেও না বা বাড়ে না অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল –

অবস্থান – ট্রপোস্ফিয়ারের ঠিক উর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল। ইংরেজি ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক ‘স্ট্র্যাটো’ (যার অর্থ ‘স্তর’ অথবা ‘বিস্তৃত অঞ্চল’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত।

বিস্তার – ট্রপোস্ফিয়ারের ওপর ১২ থেকে ৫০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্য –

(i) ওজোনোস্ফিয়ার – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ২৪–৪০ কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুব বেশি থাকে। এই কারণে এই অংশের নাম ওজোনোস্ফিয়ার। এই স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে জীবজগতকে ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে।

(ii) মুক্তা মেঘ – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে মেঘ ও বায়ুপ্রবাহ বিশেষ থাকে না। তবে মেরু অঞ্চলে নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বরফের কেলাস দিয়ে গঠিত মুক্তা মেঘ নামে একপ্রকার মেঘ দেখা যায়।

(iii) বিমান চলাচল – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় ঘর্ষণজনিত বাধাও খুব কম। এজন্য এই স্তর দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে।

(iv) উষ্ণতা – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা ৫০ কিমি উচ্চতায় বেড়ে হয় প্রায় ০°সে। প্রধানত ওজোনের অণুগুলি দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হওয়ার কারণে এই স্তরে উষ্ণতা বাড়ে।

(v) স্ট্র্যাটোপজ – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্র্যাটোপজ।

৫.১.৩ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান এবং এই জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু দুটি গোলার্ধের 30°-40° অক্ষাংশের মধ্যে রয়েছে। এর অন্তর্গত স্থানগুলি হল –

  • ইউরোপ: পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি, গ্রিস প্রভৃতি।
  • এশিয়া: পশ্চিম তুরস্ক, লেবানন, ইজরায়েল, সিরিয়া।
  • আফ্রিকা: মিশর, লিবিয়া, মরক্কো, উত্তর আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ উপকূল।
  • উত্তর আমেরিকা: দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া।
  • দক্ষিণ আমেরিকা: মধ্য চিলি।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান এবং এই জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • জলবায়ু: সারাবছর মাঝারি উষ্ণতা এবং সমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে।
  • উষ্ণতা: গ্রীষ্মকালে এখানে 20° সেলসিয়াস থেকে 27° সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। শীতকালে এই অঞ্চলে উষ্ণতা থাকে 5° সেলসিয়াস থেকে 10° সেলসিয়াস।
  • বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার: এখানে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার হয় 15° সেলসিয়াস থেকে 17° সেলসিয়াস।
  • আকাশের অবস্থা: গ্রীষ্মকাল এখানে শুষ্ক এবং এই সময় এখানকার আকাশ পরিষ্কার থাকে।
  • বৃষ্টিপাত: শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে এখানে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 35 থেকে 65 সেমি।
  • তুষারপাত: শীতকালে কোনো কোনো স্থানে তুষারপাত হয়।

৫.১.৪ পৃথিবীর জলবায়ুর উপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ

পৃথিবীর জলবায়ুর ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি হল –

  • উপকূলের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণ: সমুদ্রস্রোত উপকূলের জলবায়ুর ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে –
    • উষ্ণতা: সমুদ্রস্রোত যে উপকূলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেখানকার উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
      • উদাহরণ – শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে বায়ুর উষ্ণতা কমে এবং উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে জাপানের পশ্চিম উপকূলে বায়ুর উষ্ণতা বাড়ে।
    • বৃষ্টিপাত: উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে বলে ওই বায়ুর মাধ্যমে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক বলে বৃষ্টিপাত ঘটায় না।
      • উদাহরণ – আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে নামিবিয়া উপকূলে এই কারণে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
    • কুয়াশা ও অন্যান্য প্রভাব: উল্লিখিত প্রভাবগুলি ছাড়াও উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে (iii) বরফমুক্ত বন্দর, (iv) জাহাজ চলাচলে সুবিধা, (v) দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।

৫.২.১ ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রধান কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ

যেসব উপাদান ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলি হল –

(i) অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি: ভূপৃষ্ঠের তাপমণ্ডল অনুসারে ভারতের বেশিরভাগ স্থান উষ্ণমণ্ডলে অবস্থিত। এজন্য ভারতের জলবায়ু প্রধানত উষ্ণ ও আর্দ্র প্রকৃতির। আবার, অক্ষাংশগত বিস্তৃতি বিচার করলে দেখা যায়, ভারত নিরক্ষরেখার উত্তরে ৮° ৪′ উত্তর থেকে ৩৭° ৬′ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত এবং কর্কটক্রান্তিরেখা (২৩° ৩০′ উত্তর অক্ষরেখা) ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। তাই অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের দক্ষিণাংশ ক্রান্তীয় ও উত্তরাংশ উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অন্তর্গত, অর্থাৎ দক্ষিণাংশের তুলনায় উত্তরাংশের উষ্ণতা কম।

(ii) হিমালয় পর্বতের অবস্থান: উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে বাধা দেয় বলে বর্ষাকালে উত্তর ভারতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। আবার, শীতকালে মধ্য এশিয়ার কনকনে ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহকে এই হিমালয় পর্বতমালা প্রতিহত করে বলে উত্তর ভারত তীব্র ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়।

(iii) ভূপ্রকৃতি: উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে অধিক উচ্চতার জন্য গ্রীষ্মকাল মনোরম, কিন্তু উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের সমভূমি অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল খুবই কষ্টদায়ক।

(iv) সমুদ্র সান্নিধ্য: তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু অনেকটা সমভাবাপন্ন। কিন্তু সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বলে উত্তর ভারতের অভ্যন্তরভাগে শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি, অর্থাৎ জলবায়ু চরমভাবাপন্ন।

(v) মৌসুমি বায়ু: আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু-প্রধানত এই দুটি মৌসুমি বায়ু ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই ভারতে বর্ষাকালের আগমন ঘটে, সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়। আবার, শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ অংশের তাপমাত্রা হ্রাস পায়, শীতল ও শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে। এ ছাড়া, এই দুই মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করেই ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে।

(vi) জেট বায়ু: ভারতের ওপর শীতকালে উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু এবং বর্ষাকালে ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। শীতকালে উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে যতই দক্ষিণে সরে আসে ততই ভারতের শীতের তীব্রতা বাড়ে। আবার, বর্ষাকালে ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থানের তুলনায় বেশি উত্তরে সরে গেলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর ছেদ ঘটে। ফলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পায়, খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

(vii) ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ও পশ্চিমী ঝঞ্ঝা: শরৎকালে প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের ওপর যেসব ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তার মাধ্যমে দেশের উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হয়। আবার, শীতকালে মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর অঞ্চল থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত এবং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়।

(viii) এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব: ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তে পেরু-ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে, বিশেষত বড়দিনের সময় শীতল সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তে দক্ষিণমুখী একটি উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। একে এল নিনো নামে অভিহিত করা হয়। লক্ষ করে দেখা গেছে, এল নিনো আবির্ভাবের বছরগুলিতে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তার ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যায়। এজন্য তখন খরাজনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং দাবানলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। আবার বিপরীত দিকে কোনো কোনো বছর এল নিনো অন্তর্হিত হলে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে গভীর নিম্নচাপ ও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় এবং তখন পূর্ব প্রান্তে গভীর উচ্চচাপ ও শান্ত আবহাওয়া বিরাজ করে। এল নিনোর ঠিক বিপরীত এই পর্যায়টিকে লা নিনা নামে অভিহিত করা হয়। লা নিনার বছরগুলিতে ভারতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় ও বেশি সংখ্যক ঘূর্ণিঝড়ের আগমন ঘটে। ফলে বন্যা, ভূমিধসও বাড়ে এবং শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।

৫.২.২ ভারতের চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্ণনা করো।

উত্তরঃ

ভারতের প্রধান পানীয় ফসল চা। চায়ের উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। চা চাষের জন্য উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি হল –

(i) জলবায়ু – চায়ের চাষের জন্য অল্প উষ্ণ, অধিক আর্দ্র মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের উচ্চভূমি বা পর্বত সমূহ অত্যন্ত উপযুক্ত।

  • উষ্ণতা – চা চাষের জন্য ১৬°সে-৩০°সে উষ্ণতা প্রয়োজন। চা গাছ সামান্য বেশি উষ্ণতা বা অনেকটা ঠান্ডা আবহাওয়া সহ্য করতে পারলেও শীতকালে তুষারপাত এবং গ্রীষ্মকালে শিলাবৃষ্টিতে চা চাষের ক্ষতি হয়।
  • বৃষ্টিপাত – চা চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়, বছরে প্রায় ১৫০-২৫০ সেমি।
  • অন্যান্য – বৃষ্টিহীন গুমোট আবহাওয়া, ঘন কুয়াশা, শিশির বা তুহিন এবং তীব্র রোদ চা চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।

(ii) মৃত্তিকা – চারনোজেম মৃত্তিকা হলো লৌহসমৃদ্ধ উর্বর দোআঁশ মাটি এবং পার্বত্য তৃণভূমির জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি, যা চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত।

(iii) ঢালু জমি – চা গাছের গোড়ায় জল জমলে গাছের ক্ষতি হয়। এজন্য মালভূমি বা পাহাড়ের ঢালে চা চাষ করা হয়।

(iv) উচ্চতা – তুষারপাতের সম্ভাবনা মুক্ত খুব উঁচু পার্বত্য ঢালে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট চা উৎপন্ন হয়। ভারতে তরাই অঞ্চলে ৯০ মিটার থেকে শুরু করে দার্জিলিঙে ১,৯৮০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চা বাগিচা রয়েছে।

৫.২.৩ পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের অধিক উন্নতির কারণগুলি ব্যাখ্যা করুন।

উত্তরঃ

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বা পশ্চিম ভারতের কৃয় মৃত্তিকা অঞ্চলে, বিশেষত মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, পুণে, নাগপুর, সোলাপুর, আকোলা ও জলগাঁও এবং গুজরাতের আমেদাবাদ, সুরাত, ভারুচ, ভাদোদরা, রাজকোট প্রভৃতি স্থানে অসংখ্য কার্পাস বয়ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে এই কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি হল –

পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের অধিক উন্নতির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
  1. শ্রেষ্ঠ তুলো উৎপাদক অঞ্চল – মহারাষ্ট্র-গুজরাতের (ঔরঙ্গাবাদ, জলগাঁও, বুলধানা) কৃয় মৃত্তিকা অঞ্চল দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তুলো উৎপাদক অঞ্চল। এখানে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচা তুলো সুলভে পাওয়া যায়।
  2. আর্দ্র জলবায়ু – আরব সাগরসংলগ্ন মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের জলবায়ু আর্দ্র, যা সুতো কাটার পক্ষে বিশেষ উপযোগী।
  3. সুলভ বিদ্যুত শক্তি – উকাই ও কাদানা (গুজরাত); ভিবপুরী, খোপোলি ও কোয়না (মহারাষ্ট্র) জলবিদ্যুত কেন্দ্র এবং ট্রম্বে, নাসিক (মহারাষ্ট্র) তাপবিদ্যুত কেন্দ্র থেকে সুলভে বিদ্যুত শক্তি এই শিল্প স্থাপনে সহায়ক হয়েছে।
  4. বন্দরের সান্নিধ্য – ভারতের তিনটি প্রধান বন্দর – মুম্বাই, কান্ডলা, জওহরলাল নেহরু বন্দর এবং অন্যান্য অপ্রধান বন্দর – সুরাত, পোরবন্দর প্রভৃতি এই অঞ্চলে অবস্থিত। এর ফলে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উন্নতমানের তুলো আমদানি এবং কার্পাস বস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা হয়।
  5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা – পশ্চিম, মধ্য ও কোঙ্কণ রেলপথ এবং 47, 48, 64, 160 নং জাতীয় রাজপথ এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রসারিত হওয়ায় এখানকার পরিবহণ ব্যবস্থাও উন্নত।
  6. পর্যাপ্ত মূলধন বিনিয়োগ – বৃহৎ শিল্প পরিচালনায় অভিজ্ঞ পারসি, ভাটিয়া ও গুজরাতি ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতিতে বিশেষ উদ্যোগী হয় এবং এজন্য পর্যাপ্ত মূলধনও বিনিয়োগ করে। এ ছাড়া, মুম্বাই ভারতের মূলধনের রাজধানী হওয়ায় শিল্পের মূলধন পেতে অসুবিধা হয় না।
  7. সুলভ শ্রমিক – মুম্বাই ও আমেদাবাদ অঞ্চল ঘন জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এই অঞ্চলে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সুলভ শ্রমিক সহজেই পাওয়া যায়।
  8. শিল্প বিকাশের উপযুক্ত পরিকাঠামো – মহারাষ্ট্র ও গুজরাত রাজ্যের শিল্প বিকাশের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এই অঞ্চলে কার্পাস শিল্পের উন্নতির সহায়ক হয়েছে।
  9. বিপুল চাহিদা – মুম্বাই ভারতের ‘প্রবেশদ্বার’। তাই পশ্চিমের দেশগুলির নিত্যনতুন ‘ফ্যাশন’-এর ঢেউ এসে এখানেই প্রথম পৌঁছায় এবং তারই প্রভাব পড়ে এই অঞ্চলে উৎপাদিত বস্ত্র সামগ্রীর ওপর। এজন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত বস্ত্রের বিপুল চাহিদা লক্ষ্য করা যায়।

৫.২.৪ ভারতের নগরায়ণের প্রধান সমস্যাগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ

ভারতে নগরায়ণের সমস্যাসমূহ ভারতে দ্রুত বেড়ে চলা নগরায়ণের জন্য নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলি হল –

(i) অপরিকল্পিত নগরায়ণ – চন্ডীগড়ের মতো হাতেগোনা দু-একটি শহর বাদ দিয়ে ভারতের অধিকাংশ শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তাই শহরগুলির যত্রতত্র বাসস্থান, সড়কপথ, অফিস, আদালত, শিক্ষাকেন্দ্র, ধর্মস্থান প্রভৃতি লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে বেশিরভাগ শহরের পরিবেশ ঘিঞ্জি প্রকৃতির, যা শহরগুলির সামগ্রিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে।

ভারতের নগরায়ণের প্রধান সমস্যাগুলি আলোচনা করো।

(ii) মানুষের শহর-নগরমুখী প্রবৃত্তি – শহর এবং গ্রামের উন্নয়নের পার্থক্যের জন্য ভারতে গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবৃত্তি খুব বেশি। গ্রামের তুলনায় শহর-নগরে উন্নত জীবনযাত্রার সুবিধা, কর্মসংস্থান ও উন্নত পরিসেবার সুযোগ থাকার কারণে গ্রামের বহু মানুষ এখন শহর-নগরমুখী। কিন্তু এই সব মানুষদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং অদক্ষ হওয়ায় শহরগুলিতে বেকারত্ব, বাসস্থানের সমস্যা, বস্তির উদ্ভব, নানাবিধ রোগের প্রকোপ প্রভৃতি সমস্যা খুব বেশি।

(iii) পরিকাঠামোর অভাব – উন্নত বাসস্থান, প্রশস্ত রাস্তা, উন্নত শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ, নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ, জলনিকাশি ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে শহর-নগরের পরিকাঠামো। কিন্তু ভারতের অধিকাংশ শহরেরই দুর্বল পরিকাঠামোর ওপর ক্রমাগত জনসংখ্যার চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে বাসস্থান, পরিবহন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জলনিকাশির অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন –

(a) বাসস্থানের সমস্যা – ভারতের অধিকাংশ শহরে বাসস্থানের সমস্যা প্রকট। বাসস্থানের অভাবে বহু মানুষ রেললাইনের পাশে, রাস্তার ধারে, খালপাড়ে, অত্যন্ত দূষিত বিপদসংকুল পরিবেশে বসবাস করে। প্রায় প্রতিটি শহরেই অগণিত মানুষ বস্তিতে, ঝুপড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। মুম্বাই, কলকাতা প্রভৃতি শহরে বাসস্থানের সমস্যা খুব বেশি।

(b) পরিবহণের সমস্যা – শহর-নগরে রাস্তায় যানবাহন বেশি। অথচ অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য রাস্তাগুলি সংকীর্ণ। এর সাথে রালা ও ফটিপাথ বেদখল হওয়ার কারণে যানবাহনের গতি অত্যন্ত মন্থর বা যানজট একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

(c) স্বাস্থ্যের সমস্যা – শহর ও নগরে শিল্পকারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটায়। আবর্জনা, জলাভূমি, নর্দমা থেকে নানা পতঙ্গবাহিত রোগ, বস্তিতে জলবাহিত রোগ, পুষ্টি সমস্যা শহরের মানুষকে ভোগায়। সেকারণে ভারতের নগরগুলি পৃথিবীর অন্যতম দূষিত নগরে পরিণত হয়েছে।

(d) শিক্ষার সমস্যা – শহরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত। কিন্তু দরিদ্র বস্তিবাসীর পক্ষে শিক্ষার সব সুযোগসুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্যতা লক্ষ করা যায়।

(e) বিদ্যুৎ সমস্যা – অপরিকল্পিত নগরায়ণে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি করে। এতে শিক্ষা, বাণিজ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়।

(f) জলনিকাশির সমস্যা – বেশিরভাগ শহরে জলনিকাশি ব্যবস্থা অনুন্নত। এ ছাড়া, জলনিকাশি ড্রেনগুলিতে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করার জন্য ওই দুর্বল নিকাশি ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার মুখে। একটু বেশি বৃষ্টি হলে ড্রেনে জমে থাকা নোংরা জল থেকে নানাধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে।

বিভাগ – ‘চ’

৬। প্রশ্নপত্রের সাথে প্রদত্ত ভারতের রেখা-মানচিত্রে নিম্নলিখিতগুলি উপযুক্ত প্রতীক ও নামসহ চিহ্নিত করে মানচিত্রটি উত্তরপত্রের সঙ্গে জুড়ে দাও : ১×১০=১০

  • ৬.১ আরাবল্লি পর্বত
  • ৬.২ নর্মদা নদী
  • ৬.৩ উত্তর-পূর্ব ভারতের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত কেন্দ্র
  • ৬.৪ ভারতের অরণ্য গবেষণাগার
  • ৬.৫ পূর্ব ভারতের একটি লবণাক্ত মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চল
  • ৬.৬ একটি কফি উৎপাদক অঞ্চল
  • ৬.৭ ভারতের রূঢ় অঞ্চল
  • ৬.৮ ভারতের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেন্দ্র
  • ৬.৯ পশ্চিম ভারতের একটি স্বাভাবিক বন্দর।
  • ৬.১০ উত্তর ভারতের বৃহত্তম মহানগর।
ভারতের রেখা-মানচিত্র

অথবা

[শুধুমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য]

৬। যে – কোনো দশটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১×১০=১০

৬.১ বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মাঝে অবস্থিত গ্রস্থ উপত্যকার নাম লেখো।

উত্তরঃ বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মাঝে অবস্থিত গ্রস্থ উপত্যকার নাম – ইম্ফল উপত্যকা।

৬.২ ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপের নাম কি?

উত্তরঃ ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপের নাম – মাজুলি।

৬.৩ ভারতের একটি প্রবাল দ্বীপের নাম লেখো।

উত্তরঃ ভারতের একটি প্রবাল দ্বীপের নাম – লাক্ষাদ্বীপ।

৬.৪ ভারতের কোন রাজ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সর্বপ্রথম এসে পৌঁছায়?

উত্তরঃ ভারতের কেরালা রাজ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সর্বপ্রথম এসে পৌঁছায়।

৬.৫ পার্বত্য মৃত্তিকা দেখা যায় এমন একটি রাজ্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ পার্বত্য মৃত্তিকা দেখা যায় এমন একটি রাজ্যের নাম – পশ্চিমবঙ্গ।

৬.৬ ধান উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে?

উত্তরঃ ধান উৎপাদনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলা প্রথম স্থান অধিকার করে।

৬.৭ ভারতে উৎপাদিত একটি রবি শস্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ ভারতে উৎপাদিত একটি রবি শস্যের নাম – জোয়ার।

৬.৮ পশ্চিমবঙ্গের কোথায় রেলইঞ্জিন নির্মাণ শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে?

উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে রেলইঞ্জিন নির্মাণ শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

৬.৯ পূর্ব হিমালয়ের একটি গিরিপথের নাম লেখো।

উত্তরঃ পূর্ব হিমালয়ের একটি গিরিপথের নাম – নাথুলা গিরিপথ।

৬.১০ গাঙ্গেয় সমভূমিতে প্রাচীন পলিমাটি কি নামে পরিচিত?

উত্তরঃ গাঙ্গেয় সমভূমিতে প্রাচীন পলিমাটি ভাঙ্গর নামে পরিচিত।

৬.১১ ভারতের সর্বনিম্ন জনঘনত্ব পূর্ণ রাজ্য কোনটি?

উত্তরঃ ভারতের সর্বনিম্ন জনঘনত্ব পূর্ণ রাজ্যটি হল – সিকিম।

৬.১২ পূর্ব উপকূলের বৃহত্তম বন্দর এর নাম লেখো।

উত্তরঃ পূর্ব উপকূলের বৃহত্তম বন্দর এর নাম – বিশাখাপত্তনম।

৬.১৩ কফি উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম স্থানাধীকারী।

উত্তরঃ ভারতে কফি উৎপাদনে প্রথম স্থানাধীকারী রাজ্যটি হল – কর্ণাটক।

৬.১৪ ভারতের পূর্ব উপকূলের একটি স্বাভাবিক বন্দরের নাম লেখো।

উত্তরঃ ভারতের পূর্ব উপকূলের একটি স্বাভাবিক বন্দরের নাম – বিশাখাপত্তনম।

বিভাগ – ‘ছ’

[শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য]

৭.১ যে – কোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ২×৩=৬

৭.১.১ বালিয়াড়ির সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ

বালিপূর্ণ বায়ুর গতিপথে গাছপালা, প্রস্তরখণ্ড, ঝোপঝাড় বা অন্য কোনো বাধা থাকলে তাতে প্রতিহত হয়ে বায়ুবাহিত বালির কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হয়ে উঁচু ঢিপির মতো অবস্থান করে। এই ধরনের ভূমিরূপকে বালিয়াড়ি (sand dune) বলা হয়।

৭.১.২ সামুদ্রিক মগ্নচড়া কাকে বলে?

উত্তরঃ

উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল, উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায়। ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, বালি প্রভৃতি সমুদ্রবক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জমতে জমতে উঁচু হয়ে যে নিমগ্ন ভূভাগের সৃষ্টি করে তাকে মগ্নচড়া বলা হয়। যেমন — নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের অদূরে গ্র্যান্ড ব্যাংক, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের অদূরে সমুদ্রবক্ষে ডগার্স ব্যাংক প্রভৃতি বিখ্যাত মগ্নচড়ার উদাহরণ।

৭.১.৩ “শান্তবলয়” কি?

উত্তরঃ

নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর বেশি উষ্ণতা থাকে বলে বায়ু অনবরত উম্ন ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এজন্য এখানে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ুর প্রবাহ বা গতি বোঝা যায় না। ফলে সর্বদা ভূপৃষ্ঠ-সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে শান্তভাবে বিরাজ করে। তাই নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের অপর নাম নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রাম।

৭.১.৪ ড্রামলিনের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ

পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সঞয়কার্যের মাধ্যমে ড্রামলিন (drumlin) ভূমিরূপ তৈরি করে। হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে যখন বালি, কাদা ও পাথর একসাথে সঞ্চিত হয়ে টিলার মতো উঁচু হয়ে থাকে, যা দুর থেকে ওলটানো নৌকার মতো দেখতে লাগে, তাকে ড্রামলিন বলা হয়।

৭.২ যে – কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১×৪=৪

৭.২.১ যমুনা নদীর উৎসের নাম লেখ?

উত্তরঃ হরিদ্বারের উত্তরে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় মধ্য হিমালয়ের মুসৌরি পর্বতশ্রেণীর বান্দারপুচ শৃঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম পাদদেশে যমুনোত্রী হিমবাহের ৬,৩৮৭ মিটার উচ্চতায় যমুনা নদীর উৎপত্তি।

৭.২.২ একটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখ।

উত্তরঃ একটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম – কার্বন ডাইঅক্সাইড।

৭.২.৩ ভূ বৈচিত্রসূচক মানচিত্রে নিত্যবহ নদীর বর্ণ কোনটি?

উত্তরঃ ভূ বৈচিত্রসূচক মানচিত্রে নিত্যবহ নদীর নীল বর্ণের দেখানো হয়।

৭.২.৪ ভারতে কোথাকার চা সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত?

উত্তরঃ ভারতে দার্জিলিং – এর চা সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত।

৭.২.৫ পশ্চিমবঙ্গের একটি সাংস্কৃতিক শহরের নাম লেখ।

উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের একটি সাংস্কৃতিক শহরের নাম – কলকাতা।

Share via:

মন্তব্য করুন