এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণি – বাংলা – আমরা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যপুস্তকের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা হল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা আমরা। এই কবিতাটিতে কবি মানবজাতির সম্মিলিত শক্তি ও সম্ভাবনার কথা বলেছেন। কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন যে, আমরা সবাই একই সত্তার অংশ। আমরা সকলেই একই গ্রহের সন্তান। আমরা সকলেই একই সূর্যের আলোয় আলোকিত। আমরা সকলেই একই আকাশের নীচে বাস করি। তাই আমরা সকলেই পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত।

আমরা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে — পঙ্ক্তি টি ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’কবিতায় ‘মুক্তবেণী’ শব্দটির অর্থ হল বাধাহীন জলপ্রবাহ। গঙ্গা নদী গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে মেশা পর্যন্ত বহু নদী তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। কিন্তু তার নিজস্ব জলধারা অন্য কোনো নদীতে হারিয়ে যায়নি। তাই সে ‘মুক্তবেণী’। হিন্দুদের বিশ্বাস গঙ্গাজল মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দেয়। তাই কবি বলেছেন মুক্তধারা গঙ্গা আমাদের পাপমোচন করে এই বাংলায় আনন্দের সাথে মুক্তি বিতরণ করে।

আমরা বাঙালি বাস করি সেই তীর্থে — বরদ বঙ্গে — এই পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

কবির বক্তব্য – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
বঙ্গভূমির বর্ণনা করতে গিয়ে কবি উক্ত কথাটি বলেছেন। আমাদের এই বাংলায় রয়েছে অজস্র তীর্থক্ষেত্র। মানুষ বিশ্বাস করে তীর্থদর্শন করলে পুণ্য অর্জন করা যায়, ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করা যায়। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য যে তারা এমন একটি দেশে বাস করে যে দেশের মাটি তাদের শত তীর্থের পুণ্য আর বর দান করে।

সাগর যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে — এ কথা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

কবির ভাবনা – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে বাংলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর রয়েছে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কল্পনায় সাগর যেন বাংলামায়ের চরণ ছুঁয়ে আছে। বাঙালির সংস্কৃতিতে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির পা ছুঁয়ে প্রণাম করার রীতি প্রচলিত আছে। তাই কবির মনে হয়েছে, তটভূমিতে আছড়ে পড়া অজস্র ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে সাগর যেন বাংলামায়ের চরণে তার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাচ্ছে আর ঢেউয়ের মধুর ধ্বনি রচনা করছে মায়ের বন্দনাগান।

বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি — কবি কেন এ কথা বলেছেন?

এরূপ বলার কারণ – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
বাংলার দক্ষিণের সুন্দরবন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত। কিন্তু এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের কারণে কাঠ, মধু, মাছ ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য জঙ্গলে যেতে হয়। আর সেই কারণে প্রতিনিয়তই তাদের এই হিংস্র প্রাণীটির আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। তাই কবি বলেছেন যে বাঙালি বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।

সিংহল নামে রেখে গেছে নিজ শৌর্যের পরিচয়। — পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

অথবা, আমাদের ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়। — ঐতিহাসিক ঘটনাটি কী ?

তাৎপর্য – পালি ভাষায় লেখা সিংহলি দীপবংশ ও মহাবংশ পুরাণ অনুসারে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম-ষষ্ঠ শতাব্দী নাগাদ প্রাচীন বাংলার রাঢ় দেশের সিংহপুরের রাজপুত্র বিজয়সিংহ তন্বপন্নি (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) দেশের লঙ্কা নামক স্থানে গিয়ে নিজের রাজ্য ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামানুসারেই লঙ্কার ‘সিংহল’ নামকরণ হয়। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই কবি বলেছেন যে সিংহল নামের মধ্যেই রয়েছে বাঙালি বিজয়সিংহের বীরত্বের পরিচয়।

চাঁদ-প্রতাপের হুকুমে হঠিতে হয়েছে দিল্লিনাথে। – এখানে কবি কোন্ ঘটনার কথা বলেছেন?

উদ্দিষ্ট ঘটনা – মোগল সম্রাট আকবর এবং জাহাঙ্গিরের রাজত্বকালে বাংলার বারো জন প্রতিপত্তিশালী ভূঁইয়া অর্থাৎ জমিদার মোগলদের শাসন অস্বীকার করে স্বাধীনভাবে শাসনকাজ চালাতে শুরু করেন। বিক্রমপুরের চাঁদ রায় এবং যশোরের প্রতাপাদিত্য এঁদের অন্যতম। এঁদের দমন করতে মোগল সম্রাটকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। প্রতাপাদিত্য শেষপর্যন্ত হেরে গেলেও প্রথমদিকে তিনি মোগল বাহিনীকে রুখতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাই কবি উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।

কপিল সাঙ্খ্যকার/ এই বাংলার মাটিতে গাঁথিল সূত্রে হীরক-হার। — পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতার উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে বৈদিক ঋষি, সাংখ্যদর্শন প্রণেতা কপিলমুনির কথা বলা হয়েছে। দর্শনশাস্ত্রে তাঁকে আদিপুরুষ বলা হয়েছে আবার ভাগবত পুরাণে তাঁকে ভগবান বিষ্ণুর অবতারও বলা হয়েছে। বাংলার দক্ষিণতম প্রান্ত গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির একটি আশ্রম আছে। তাই কবি ধরে নিয়েছেন তাঁর সাংখ্যদর্শনের রচনাভূমিও নিশ্চয়ই এই বাংলা। সত্যেন্দ্রনাথ শুধু জন্মসূত্রেই নয়, কর্মসূত্রেও যাঁরা বাংলার সান্নিধ্যে এসেছেন বা বাঙালি যাঁদের ভালোবেসেছে, তাঁদেরকেও বাংলার গৌরবগাথায় শামিল করেছেন।

পক্ষধরের পক্ষশাতন করি/বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি – পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

অথবা, কিশোর বয়সে পক্ষধরের পক্ষশাতন করি – পক্ষীয় কে? তাঁর পক্ষচ্ছেদন কীভাবে হয়েছিল?

উৎস – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যা – এখানে ‘বাঙালির ছেলে’ বলতে পঞ্চদশ শতাব্দীতে নবদ্বীপের ন্যায়শাস্ত্রের প্রখ্যাত পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমণির কথা বলা হয়েছে। ইনি মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক ছিলেন। কিশোর রঘুনাথ তৎকালীন মিথিলার প্রখ্যাত নৈয়ায়িক পক্ষধর মিশ্রকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করেন। এর ফলে নব্যন্যায়চর্চার ক্ষেত্রে নবদ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। পক্ষধর মিশ্রের পরাজয়কেই কবি ‘পক্ষধরের পক্ষশাতন’ অর্থাৎ পক্ষধরের ডানা কাটা বলেছেন। এই ঘটনায় নিঃসন্দেহে বাঙালির গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছিল।

জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালি দীপঙ্কর। পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

তাৎপর্য – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে বিখ্যাত বাঙালি বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে। শীলভদ্রের শিষ্য অতীশ দীপঙ্কর পাল যুগে বিক্রমশীলা মহাবিহারের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। পাল যুগেই তিনি হিমালয়ের বরফে ঢাকা অতি দুর্গম পথ অতিক্রম করে তিব্বতে যান মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে। সেখানে ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি তিনি শিক্ষাদান এবং গ্রন্থরচনার কাজও করেন। অতীশ দীপঙ্করের কীর্তি বাঙালি জাতির পক্ষে অত্যন্ত গৌরবের।

করেছে সুরভি সংস্কৃতের কাঞ্চন – কোকনদে। — এই পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন?

কবির ভাবনা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতার উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যটির কথা বলেছেন।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব, রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে তাঁর গীতগোবিন্দ কাব্যটি রচনা করেন। সুললিত ভাষায় রচিত তাঁর এই কাব্যটি সংস্কৃত সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। সারা ভারতবর্ষেই গীতগোবিন্দ অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাই সত্যেন্দ্রনাথ বলেছেন যে গীতগোবিন্দ সংস্কৃত সাহিত্যের সোনার পদ্মকে সুগন্ধে ভরিয়ে তুলেছে।

স্থপতি মোদের স্থাপনা করেছে বরভূধরের ভিত্তি – পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা – খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে জাভা দ্বীপে (বর্তমান ইন্দোনেশিয়া) শৈলেন্দ্র রাজবংশের রাজত্বকালে গড়ে ওঠা সুবিশাল বৌদ্ধস্তূপ হল বরভূধর। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলার বাণিজ্যিক যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। ওই অঞ্চলের স্থাপত্যে পাল-সেন যুগের প্রভাবের কথাও জানা যায়। এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করেই সম্ভবত কবি বরভূধর স্তূপকে বাঙালির তৈরি বলেছেন।

শ্যাম-কম্বোজে ওঙ্কার-ধাম – মোদেরি প্রাচীন কীর্তি। – পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
কম্বোজ (বর্তমান কম্বোডিয়া)-এ দ্বাদশ শতাব্দীতে খমের (Khmer) বংশীয় রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মণের সময়ে তৈরি প্রথমে হিন্দু এবং পরে বৌদ্ধ মন্দির হল ‘ওঙ্কার-ধাম’ বা আঙ্করভাট। প্রাচীন বাংলার সঙ্গে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক যোগাযোগের এবং ওই অঞ্চলের স্থাপত্যে পাল- সেন যুগের প্রভাবের কথা জানা যায়। সম্ভবত এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই কবি ‘ওঙ্কার-ধাম’ মন্দিরকে বাঙালির কীর্তি বলেছেন।

ধেয়ানের ধনে মূর্তি দিয়েছে আমাদের ভাস্কর — এই পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কী বলতে চেয়েছেন?

কবির ভাবনা – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ধাতু, পাথর ইত্যাদি দিয়ে মূর্তি নির্মাণকারী শিল্পীকে ভাস্কর বলা হয়। শিল্পী তাঁর ধ্যানে অর্থাৎ মনের গভীর ভাবনা ও কল্পনায় যা দেখেন তাকেই রূপ দেন মূর্তিতে অর্থাৎ ভাস্কর্যে। প্রাচীন বাংলার দুজন বিশিষ্ট ভাস্কর হলেন পাল যুগের বিট্পাল আর ধীমান। কবি বলেছেন বাঙালির কল্পনাকে মূর্তিতে রূপ দিয়েছেন আমাদের এইসব ভাস্কর।

বিট্পাল আর ধীমান — যাদের নাম অবিনশ্বর। – বিট্পাল আর ধীমানের নাম অবিনশ্বর কেন?

অবিনশ্বর হওয়ার কারণ – বাংলায় পাল বংশের সময়কার দুজন প্রখ্যাত ভাস্কর হলেন বিট্পাল এবং ধীমান।
মনের গভীর কল্পনায় দেখা ছবিই রূপ পায় ভাস্করের হাতে। ছেনি- হাতুড়ির সাহায্যে ধাতু বা পাথরের বুকে তাঁরা খোদাই করেন অপূর্ব শিল্পকীর্তি। প্রাচীন বাংলায় পালবংশীয় রাজাদের রাজত্বকালে ভাস্কর বিট্পাল এবং ধীমান বাঙালির এরকমই কল্পনাকে রূপ দান করেছিলেন। তাঁদের হাত ধরে বাংলার স্থাপত্য উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল বলেই তাঁরা অবিনশ্বর।

আমাদের পট অক্ষয় করে রেখেছে অঙ্গস্তায়। – এ কথা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

কবির বক্তব্য – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
অজন্তার সতেরো নম্বর গুহাতে হাতি ও অশ্বারোহী বাহিনীর মধ্যে রাজপুত্র বিজয়সিংহের এবং সিংহলরাজ হিসেবে বিজয়সিংহের অভিষেকের দুটি ছবি আঁকা আছে। সিংহলি দীপবংশ ও মহাবংশ পুরাণ অনুসারে এই বিজয়সিংহ রাঢ় দেশের সিংহপুরের রাজপুত্র। অনেকের মতে তিনি বাঙালি। তাই সত্যেন্দ্রনাথ বলেছেন যে কোনো এক বাঙালি পটুয়া অর্থাৎ চিত্রশিল্পী অজন্তা গুহায় বাঙালির পট অক্ষয় করে রেখেছেন।

আমরা দিয়েছি খুলি/মনের গোপনে নিভৃত ভুবনে দ্বার ছিল যতগুলি। — কবির বক্তব্য ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতার উদ্ধৃতাংশটিতে বাংলার একান্ত নিজস্ব সম্পদ কীর্তনগান ও বাউলগানের কথা বলা হয়েছে। কীর্তন হল রাধাকৃষ্ণের লীলা বিষয়ক গান আর ধর্মীয় সংস্কার ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত বাউল সম্প্রদায়ের অধ্যাত্মিক সংগীত হল বাউলগান। আবেগপ্রবণ বাঙালি জাতি তার দুঃখ-বেদনা-ভালোবাসা, সর্বধর্মের মিলনের কথা সবই এই গানগুলির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছে। তাই কবি বলেছেন কীর্তন-গান আর বাউলগানে বাঙালি তার মনের দরজা খুলে দিয়েছে।

মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি —পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

তাৎপর্য – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
বাংলার বুকে দুর্ভিক্ষ এসেছে, মারী অর্থাৎ মহামারি বা মড়ক হানা দিয়েছে। দুর্ভিক্ষে খাদ্যের অভাবে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আবার সংক্রামক রোগের মহামারিতে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে। কিন্তু বাঙালি জাতি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। সবরকম প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বাঙালি পৃথিবীর বুকে তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে।

দেবতারে মোরা আত্মীয় জানি, আকাশে প্রদীপ জ্বালি – এই পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি বাঙালির কোন্ বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন?

বাঙালির বৈশিষ্ট্য – বাংলা কার্তিক মাসের সন্ধ্যাবেলায় দেবতাদের এবং স্বর্গগত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে উঁচু স্থানে বাঁশের ডগায় প্রদীপ জ্বেলে দেওয়া বাঙালিদের মধ্যে একটি প্রচলিত রীতি। একে আকাশপ্রদীপ বলা হয়। সকলকে আপন করে নেওয়ার ঐতিহ্য অনুযায়ীই বাঙালি জাতি দেবতাদেরও আত্মার আত্মীয় করে নিয়েছে। এই পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে কবি বলতে চেয়েছেন দেবতাদের ঘরের মানুষ মনে করা হয় বলেই তাঁদের উদ্দেশ্যে আকাশপ্রদীপ জ্বালা হয়।

আমাদেরি এই কুটিরে দেখেছি মানুষের ঠাকুরালি – পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

ব্যাখ্যা – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘ঠাকুরালি’ শব্দের অর্থ হল দেবতার মতো মহিমা। বাঙালির ঘরের ছেলে, যাঁরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে দেবতার মতো মহিমা লাভ করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। তবে এঁদের মধ্যে যাঁরা জগৎ-বিখ্যাত হয়েছেন তাঁদের অন্যতম হলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব। তিনি নিজের কর্মগুণে জীবিত অবস্থাতেই দেবতাসুলভ মহিমা লাভ করেছেন। বাঙালি শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় এই রক্তমাংসের মানুষদেরও দেবত্বে উন্নীত করে পুজো করেছে।

ঘরের ছেলে চক্ষে দেখেছি বিশ্বভূপের ছায়া — এ কথা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

কবির বক্তব্য – বাঙালি তার ঘরের ছেলের মধ্যেই বিশ্বসম্রাটকে প্রত্যক্ষ করেছে। নিঃসন্দেহে কবি এখানে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যকেই বুঝিয়েছেন। শুধু জমি এবং ক্ষমতার অধিকারী হলেই রাজা হওয়া যায় না। শ্রীচৈতন্যদেব ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ না করে, উচ্চ-নীচ ভেদ না করে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে ভালোবাসা বিতরণ করে মানুষের হৃদয়ের রাজা হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর এই ভালোবাসার আদর্শ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল। তাই কবি উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।

বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া। — পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

অথবা, নিমাই ধরেছে কায়া – নিমাই কীভাবে কায়া ধরেছে লেখো।

তাৎপর্য – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
পঙ্ক্তিটির আক্ষরিক অর্থ হল বাঙালির হৃদয়ের অমৃত মন্থন করে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব দেহ ধারণ করেছেন। ‘অমিয়’ শব্দের অর্থ অমৃত বা সুধা অর্থাৎ যা পান করলে অমর হওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে অমিয় বলতে বাঙালির হৃদয়ের যাবতীয় সদ্‌গুণ যেমন দয়া-প্রেম-ভালোবাসা- ভক্তি-সততাকে বোঝানো হয়েছে। বাঙালি হৃদয়ের এই যাবতীয় গুণই মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটেছে জগৎময় — কবি কেন এই কথা বলেছেন?

মন্তব্যের কারণ – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার তরুণ সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগো শহরের ধর্মমহাসম্মেলনে প্রাচীন হিন্দুধর্মের আধ্যাত্মিকতা এবং দর্শন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্য শুধু আমেরিকাবাসীকেই নয়, সারা পৃথিবীর মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। জগৎজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিবেকানন্দের বাণী। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন তাঁর কাছে, গ্রহণ করেন তাঁর শিষ্যত্ব। এই কারণেই কবি উক্ত কথাটি বলেছেন।

বাঙালির ছেলে ব্যাঘ্রে বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়। – পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

তাৎপর্য – ব্যাঘ্রে-বৃষভে সমন্বয় অর্থাৎ বাঘ ও ষাঁড়ের মিলন ঘটানো বাস্তবে অসম্ভব। পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে কবি অসম্ভবকে সম্ভব করার কথা বোঝাতে চেয়েছেন। আমেরিকার শিকাগো শহরের ধর্মমহাসম্মেলনে বাঙালির ছেলে স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতা সারা পৃথিবীর মানুষকে মুগ্ধ করেছিল। ইউরোপীয়রা সেসময় ভারতীয়দের হেয় চোখে দেখতেন। বিবেকানন্দের বক্তৃতা শুনে তাঁরাও ছুটে এসেছিলেন তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণের জন্য। এইভাবেই বাঙালির ছেলে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন।

তপের প্রভাবে বাঙালি সাধক জড়ের পেয়েছে সাড়া – পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উৎস – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যা – যে-কোনো বিষয় নিয়ে কঠোর সাধনাকেই তপস্যা বলা যায় আর যিনি তপস্যা করেন তিনি হলেন সাধক। বাঙালি বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কঠোর সাধনার ফলে আবিষ্কার করেন যে গাছেরও প্রাণ আছে। এর আগে পর্যন্ত মানুষ গাছকে জড়পদার্থ ভাবত। জগদীশচন্দ্র সেই জড়ের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করেন। তাই কবি বলেছেন যে তপস্যার ফলে বাঙালি সাধক জড়ের সাড়া পেয়েছেন।

আমাদের এই নবীন সাধনা শব-সাধনার বাড়া। — পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উৎস – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য – সদ্যোমৃত পুরুষের শবের ওপর ঘোড়ায় চড়ার ভঙ্গিতে বসে তান্ত্রিক সাধনাকেই শবসাধনা বলে। তান্ত্রিক সাধন পদ্ধতি ভারতবর্ষে বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। জগদীশচন্দ্র বসু বা প্রফুল্লচন্দ্র রায় যে ধরনের বিজ্ঞানসাধনা বা চর্চার সূত্রপাত করেন তা মানবজীবনের পক্ষে কল্যাণকর হলেও দীর্ঘ জ্ঞানতপস্যার ফসল।

বিষম ধাতুর মিলন ঘটায়ে বাঙালি দিয়েছে বিয়া – এ কথা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উৎস – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
কবির ভাবনা – এই পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে কবি বাঙালির রসায়নচর্চার ক্ষেত্রে অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বাঙালির রসায়নচর্চার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেন। তাঁর আবিষ্কৃত মারকিউরাস নাইট্রাইট সারা পৃথিবীতে রসায়ন গবেষণার ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিষম ধাতুর বিয়ে বলতে কবি এখানে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের বিভিন্ন ধাতুর বা মৌলের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে নতুন নতুন যৌগ তৈরির পদ্ধতিকেই বুঝিয়েছেন।

মোদের নব্য রসায়ন শুধু গরমিলে মিলাইয়া। —পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উৎস – আলোচ্য পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যা – এই পঙ্ক্তিটিতে কবি বাঙালির রসায়নচর্চার কথা বলেছেন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বাঙালির রসায়নচর্চার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। রসায়ন বিজ্ঞানে বিভিন্ন ধরনের মৌলের রাসায়নিক সংযোগে তৈরি করা হয় নিত্যনতুন যৌগ। ‘গরমিলে মিলাইয়া’ বলতে কবি এখানে যেসব মৌলের মধ্যে রাসায়নিক ধর্মের ক্ষেত্রে কোনো মিল নেই তাদের রাসায়নিক সংযোগকেই বুঝিয়েছেন।

বাঙালির কবি গাহিছে জগতে মহামিলনের গান – পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উৎস – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন রবীন্দ্র অনুগামী কবি। তাই বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না যে ‘বাঙালির কবি’ বলতে লেখক এখানে রবীন্দ্রনাথের কথাই বলেছেন। মানুষে-মানুষে মিলনই রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রধান বক্তব্য। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন সভ্যতা-সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সব ধর্ম বর্ণের মানুষের মেলবন্ধন হতে পারে। তাই সত্যেন্দ্রনাথ বলেছেন যে বাঙালির কবি বিশ্বে মহামিলনের গান গেয়েছেন।

বিধাতার কাজ সাধিবে বাঙালি ধাতার আশীর্বাদে। পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উৎস – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যা – এই কবিতাটিতে কবির গভীর জাতীয়তাবাদী মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। স্বদেশ ও স্বজাতি বিশ্বের অন্য কোনো দেশ ও জাতির তুলনায় কোনো অংশে কম নয় বরং অনেক বেশি উন্নত—এই বোধই জাতীয়তাবাদের মূলকথা। ‘আমরা’ কবিতাটি হল বাংলা ও বাঙালির জয়গাথা। মানুষের বিশ্বাস হল ঈশ্বর পৃথিবীর মানুষের কল্যাণ করেন। কবি মনে করেন বিধাতার আশীর্বাদে বাঙালি তাঁর এই কল্যাণময় কাজের দায়িত্ব নেবে।

বেতালের মুখে প্রশ্ন যে ছিল আমরা নিয়েছি কেড়ে – পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উৎস – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যা – এখানে কবি বেতাল ও বিক্রমাদিত্যের কাহিনির অর্থাৎ ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি”র উল্লেখ করেছেন। বেতাল বিক্রমাদিত্যকে একটি করে গল্প বলে সেই গল্প থেকে একটি করে কঠিন প্রশ্ন করতেন। কবি বলতে চেয়েছেন যে পৃথিবীর সমস্ত কঠিন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করার আগেই বাঙালি তার উত্তর দিয়েছে। আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে কবি তাঁর জাতীয়তাবাদী মানসিকতা থেকেই বাঙালি জাতিকে শ্রেষ্ঠ স্থান দিতে চেয়েছেন।

সত্যে প্রণমি থেমেছে মনের অকারণ স্পন্দন। পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উৎস – উদ্ধৃতিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য – এই কবিতাটিতে কবির জাতীয়তাবাদী মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি জগৎ ও জীবনের সবক্ষেত্রেই বাঙালির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন বাঙালি জীবন পণ করে সত্যের পথে চলে। সত্যের পথে চলতে গেলে আসে অনেক বাধা, অনেক প্রলোভন। এই প্রলোভন মনকে চঞ্চল করে। কিন্তু সত্যকে প্রণাম করে, দৃঢ়সংকল্প হয়ে বাঙালি সর্বদা মনের চঞ্চলতাকে উপেক্ষা করে চলবে।

সাধনা ফলেছে, প্রাণ পাওয়া গেছে জগৎ-প্রাণের হাটে — পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উৎস – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য – এই কবিতাটিতে কবির জাতীয়তাবাদী মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি জগৎ ও জীবনের সবক্ষেত্রেই বাঙালিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে দেখতে চেয়েছেন। কবিতাটির শুরু থেকেই কবি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালির কৃতিত্বের উল্লেখ করে তারপর উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন বাঙালির বহুযুগের সাধনা তথা কর্মপ্রচেষ্টা এতদিনে সাফল্য পেয়েছে। তাই তারা ‘জগৎ-প্রাণের হাটে’ অর্থাৎ বিশ্বের দরবারে তার স্বীকৃতি পেয়েছে। 

সাগরের হাওয়া নিয়ে নিশ্বাসে গম্ভীরা নিশি কাটে – পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উৎস – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য – মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর জীবনের শেষ কিছু বছর পুরীধামে যে ভাবমগ্ন অবস্থায় কাটান, তাকে গম্ভীরাস্থিতি বলা হয়। এইসময় সমুদ্রের খুব কাছে একটি মঠে তিনি অবস্থান করতেন। এই ঘটনাটির সূত্র ধরেই সত্যেন্দ্রনাথ বলতে চেয়েছেন যে বঙ্গদেশের দক্ষিণেও রয়েছে সমুদ্র। তাই ভাবপ্রবণ বাঙালিও মহাপ্রভুর মতোই সমুদ্রের হাওয়ায় শ্বাস নিয়ে গম্ভীরাস্থিতি অর্থাৎ নিজস্ব ভাবনায় ডুবে থাকে।

শ্মশানের বুকে আমরা রোপণ করেছি পঞ্চবটী পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উৎস – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যা – মৃতদেহ দাহ করার স্থান হল শ্মশান আর অশ্বত্থ, বট, বেল, অশোক, আমলকী এই পাঁচটি বৃক্ষের সমাহারকে বলে পঞ্চবটী। যেখানে একদিকে জীবনের শেষ সূচিত হয়, সেখানেই পঞ্চবটীর অবস্থান জীবনের জয়গান গায়। গাছ যেন জীবনপ্রবাহের ইঙ্গিত দেয়। কবি বলেছেন যেখানে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে বলে মনে হয়, সেই শ্মশানে আমরা অর্থাৎ বাঙালিরা আবার নতুন করে জীবনের স্বপ্নকে রোপণ করেছি।

তাহারি ছায়ায় আমরা মিলাব জগতের শতকোটি। পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উৎস – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য – কবি বলেছেন যেখানে জীবনের শেষ সূচিত হয়, সেই শ্মশানে বাঙালি পঞ্চবটী অর্থাৎ নতুন জীবনের স্বপ্নকে রোপণ করেছে। বাঙালির মধ্যে রয়েছে সেই প্রাণময়তা যা জীবনকে পূর্ণ করে তোলে। বাঙালি তার হৃদয়ের শক্তিতে তাই শ্মশানকে পঞ্চবটীতেই শুধু রূপান্তরিত করে না, সব মানুষকে সে আপন করে নেয়। বাংলার ভূমিতে মিলে যায় গোটা পৃথিবীর মানুষ।

প্রতিভায় তপে সে ঘটনা হবে, লাগিবে না তার বেশি – কবি এখানে কোন্ ঘটনার কথা বলতে চেয়েছেন?

উদ্দিষ্ট ঘটনা – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই কবিতায় কবির জাতীয়তাবাদী মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি তাঁর স্বদেশ ও স্বজাতিকে বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠ আসনে দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ ভারতীয়সুলভ, তাতে কোনো উগ্রতা নেই বা অন্য কোনো দেশের প্রতি হিংসা নেই। তাই তিনি হানাহানির মাধ্যমে এই শ্রেষ্ঠত্ব চাননি। কবি আশা করেছেন, বাঙালি তার প্রতিভা এবং সাধনার জোরেই জগৎসভায় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করবে।

লাগিবে না তাহে বাহুবল কিবা জাগিবে না দ্বেষাদ্বেষি — পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উৎস – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা” কবিতা থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য – এই কবিতাটিতে কবির জাতীয়তাবাদী মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ উগ্রতাবিহীন। অন্য দেশ বা জাতির প্রতি কোনো ঘৃণার প্রকাশ আলোচ্য কবিতায় ঘটেনি। তিনি আশা করেছেন বাঙালি একদিন জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাবে। তার জন্য ঈর্ষা-বলপ্রয়োগ-হানহানির কোনো প্রয়োজন হবে না, বাঙালি তার প্রতিভা ও সাধনার মাধ্যমেই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করবে।

মুক্ত হইব দেব-ঋণে মোরা মুক্তবেণীর তীরে। — কবি কেন এ কথা বলেছেন ব্যাখ্যা করো।

এ কথা বলার কারণ – উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। বাঙালি জাতির মাতৃভূমি বাংলা শুধু একটি সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা দেশই নয়, অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও সমৃদ্ধ। এমন একটি দেশে জন্মগ্রহণ করা যে-কোনো মানুষের কাছেই অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। বাঙালি জাতি সুমহান ঐতিহ্য বহন করে আনছে। তার উত্তরসূরি হয়ে জন্মানোয় কবি ঈশ্বরের কাছে ঋণী। তাই তিনি বলেছেন সারা পৃথিবীর মানুষকে মিলনের মহামন্ত্রে দীক্ষিত করে বাঙালি জাতি দেবতার সেই ঋণ শোধ করবে।

আমরা কবিতাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এই কবিতাটি আমাদের মানবজাতির সম্মিলিত শক্তি ও সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে দেয়। এই কবিতাটি আমাদেরকে একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। তাই এই কবিতাটি আমাদের সকলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Share via:

মন্তব্য করুন