নবম শ্রেণি – বাংলা – চিঠি – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

স্বামী বিবেকানন্দ রচিত চিঠি প্রবন্ধটি একটি অসাধারণ রচনা। এটি একটি চিঠির মাধ্যমে স্বদেশের প্রতি লেখকের গভীর মমত্ববোধ ও আবেগ প্রকাশিত হয়েছে। চিঠির বক্তা একজন তরুণ লেখক, যিনি দেশ থেকে দূরে বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি তার বন্ধুকে লিখছেন যে, তিনি দেশকে কতটা মিস করেন। তিনি দেশের প্রকৃতি, মানুষ, সংস্কৃতি, ইতিহাস সবকিছুর কথা মনে করে আপ্লুত হন। তিনি দেশের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখেন।

Table of Contents

নবম শ্রেণি – বাংলা – চিঠি

এদেশের দুঃখ, কুসংস্কার, দাসত্ব প্রভৃতি কী ধরনের, তা তুমি ধারণা করতে পারো না। — স্বামীজির এই উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে তাঁর স্বদেশপ্রীতির কী পরিচয় পাও?

স্বামীজির স্বদেশপ্রীতি – মিস নোব্‌ল্‌কে লেখা পাঠ্য চিঠি – তে স্বামী বিবেকানন্দ প্রশ্নোদ্ধৃত কথাগুলি জানিয়েছিলেন। মানবসেবায় আত্মনিয়োগ – মিস নোব্‌ল্‌ ভারতে মানবসেবার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, মি. স্টার্ডির চিঠিতে সে-কথা জানতে পেরেই স্বামীজি এদেশের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে মিস নোব্‌কে আগাম ধারণা দিতে এই কথাগুলি লিখেছেন। দেশকে সংকীর্ণতা ও দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত করার আকাঙক্ষা – উনিশ শতকের শেষ দশকের ভারত ছিল শ্বেতাঙ্গ ইংরেজদের কুশাসনে জর্জরিত। অজ্ঞতা, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, নারীজাতির প্রতি অসম্মান সব মিলিয়ে ভারতীয় সমাজজীবন ছিল চরম দুর্দশাগ্রস্ত। স্বামীজি সমস্ত রকমের সংকীর্ণতা ও দাসত্ব থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখেছেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতে পারেন মিস নোব্‌ল্‌। চিঠিতে তিনি নোব্‌ল্‌কে বলেছেন, এদেশে এলে তুমি নিজেকে অর্ধ- উলঙ্গ অসংখ্য নরনারীতে পরিবেষ্টিত দেখতে পাবে। শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যমে দেশের উন্নতিসাধন – অস্পৃশ্যতা, জাতি বর্ণভেদ আর কুসংস্কার ভারতবাসীকে বিচ্ছিন্ন, বিভাজিত করে রেখেছে। মিস নোব্‌লের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় নারীসমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত ও আত্মনির্ভর করে তুলতে চেয়েছেন। এইভাবে পাঠ্য চিঠি – তে স্বামীজির গভীর স্বদেশপ্রীতি ব্যক্ত হয়েছে।

এদেশে এলে তুমি নিজেকে অর্ধ-উলঙ্গ অসংখ্য নরনারীতে পরিবেষ্টিত দেখতে পাবে। — তুমি কে? বক্তা এমন কথা বলেছেন কেন? এই প্রসঙ্গে বক্তার সমাজভাবনার পরিচয় দাও।

তুমি-র পরিচয় – স্বামী বিবেকানন্দ রচিত পাঠ্য চিঠি – তে তুমি বলতে মিস মার্গারেট নোব্‌কে বোঝানো হয়েছে।
বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ – উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি মি. স্টার্ডির চিঠি পেয়ে জেনেছেন যে, মিস নোব্‌ল্‌ ভারতে আসতে এবং সব কিছু নিজের চোখে দেখতে দৃঢ়সংকল্প ছিলেন। মিস মুলারের চিঠিতে তিনি নোব্‌লের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে জেনেছেন। কিন্তু ভারতের পরিস্থিতি ইউরোপের মতো নয়। এখানে মানুষেরা দুঃখদারিদ্র্যে জীবন কাটায়। অভাবগ্রস্ত অর্ধনগ্ন দুঃখী মানুষগুলির মধ্যে মিস নোব্‌ল্‌কে কাজ করতে হবে। তার জন্য তিনি মানসিকভাবে যথেষ্ট প্রস্তুত কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতেই এবং এদেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কে ধারণা দিতেই স্বামীজি এ কথা বলেছেন।
বক্তার সমাজভাবনা – আলোচ্য উক্তির মধ্য দিয়ে বক্তা স্বামীজির গভীর সমাজভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি দারিদ্র্যপীড়িত ভারতবর্ষকে আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করেছেন। এদেশের মানুষের শিরায় শিরায় রয়েছে কুসংস্কার। তারা অন্নবস্ত্রের অভাবে, জাতি-বর্ণ ভেদাভেদে, অস্পৃশ্যতায়, ইংরেজদের কুশাসনে আর ঘৃণায় জর্জরিত। ভয়ে বা ঘৃণায় তারা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে। নারীসমাজ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। অশিক্ষা-অজ্ঞতা আর পরাধীনতায় বন্দি এদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন স্বামীজি। আর সেই স্বপ্নকে সফল করতে মিস নোব্‌লের মতো সেবাপরায়ণা, শিক্ষিতা, দৃঢ়চেতা নারীর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছেন স্বামীজি।

শ্বেতাঙ্গেরা তোমাকে খামখেয়ালি মনে করবে এবং প্রত্যেকটি গতিবিধি সন্দেহের চক্ষে দেখবে। — মিস নোব্‌ল্‌কে স্বামীজির এমন সতর্কবার্তা পাঠানোর কারণ কী? কেন শ্বেতাঙ্গরা তাঁকে খামখেয়ালি মনে করবে এবং তাঁর প্রত্যেকটি গতিবিধি সন্দেহের চোখে দেখবে বলে তিনি মনে করেন?

মিস নোব্‌লকে স্বামীজির সতর্কবার্তা পাঠানোর কারণ – ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই মিস নোব্‌ল্‌কে লেখা চিঠিতে স্বামীজি উল্লিখিত সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলেন কারণ তিনি মিস্টার স্টার্ডির চিঠি থেকে জেনেছেন মিস নোব্‌ল্‌ ভারতবর্ষে আসতে এবং এদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখতে অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি এদেশে আসার আগে স্বামীজি তাঁকে এদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে চেয়েছেন। সে কারণেই সরাসরি তাঁকে চিঠি লিখে স্বামীজি ভারতীয়দের অবস্থার কথা খোলাখুলি জানিয়েছেন।
স্বামীজির ধারণা – জাতি ও স্পর্শ সম্পর্কে কুসংস্কারের কারণেই ভারতীয়রা শ্বেতাঙ্গদের ভয় কিংবা ঘৃণার চোখে দেখে থাকে এবং একইভাবে শ্বেতাঙ্গরাও ভারতীয়দের অত্যন্ত ঘৃণা করে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের উন্নতির জন্য মিস নোব্‌ল্‌ কাজ করলে তাঁর প্রত্যেকটি গতিবিধি শ্বেতাঙ্গদের কাছে সন্দেহজনক হয়ে উঠবে বলে স্বামীজি মনে করেন। একজন শ্বেতাঙ্গ নারী হয়ে কেন মিস নোব্‌ল্ এদেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োগ করেছেন, তা যেমন একদিকে শ্বেতাঙ্গদের মনে সন্দেহের জন্ম দেবে, অন্যদিকে তাঁরা মিস নোব্‌ল্‌কে খামখেয়ালি মনে করবেন।

কর্মে ঝাঁপ দেবার পূর্বে বিশেষভাবে চিন্তা করো – কে, কোন্ কর্মে ঝাঁপ দিতে চান? ঝাঁপ দেবার পূর্বে কেন বিশেষভাবে চিন্তা করা দরকার?

কর্মে ঝাঁপ দেওয়া – মিস নোব্‌ল্‌ ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে জনসেবামূলক কাজে, বিশেষত পিছিয়ে থাকা ভারতীয় নারীসমাজের উন্নতির কর্মে ঝাঁপ দিতে চান।
বিশেষভাবে চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা – প্রেক্ষাপট – মানবসেবায় জীবন উৎসর্গ করা সহজ কথা নয়। মিস নোব্‌লের বয়স অল্প বলে তাঁর মধ্যে আবেগ-উচ্ছ্বাস বেশি থাকা স্বাভাবিক। ভারতবর্ষ সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই বৃহত্তর ও মহত্তর কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে স্বামীজি তাঁকে বিশেষভাবে চিন্তা করতে পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের মানুষের দুঃখ- কুসংস্কার দাসত্ব – এদেশে এসে মানবসেবার কাজে যোগ দেওয়ার পূর্বে মিস নোব্‌ল্‌কে এদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ধারণা দিতে চেয়েছেন স্বামীজি। এদেশের দুঃখ, কুসংস্কার, দাসত্ব প্রভৃতি কী ধরনের সে সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন স্বামীজি। তিনি জানিয়েছেন, এদেশে এসে মিস নোব্‌ল্‌কে অর্ধ-উলঙ্গ নরনারী পরিবেষ্টিত হয়ে কাজ করতে হবে। শ্বেতাঙ্গদের দৃষ্টিভঙ্গী – ভারতীয় সমাজে জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা প্রবল। এদেশীয়রা শ্বেতাঙ্গদের ভয়ে বা ঘৃণার কারণে এড়িয়ে চলে। শ্বেতাঙ্গরাও ভারতীয়দের ঘৃণা করে। শাসক ইংরেজরা মিস নোব্‌ল্‌কে খামখেয়ালি মনে করবে, তাঁর প্রতিটি কাজকে তারা সন্দেহের চোখে দেখবে। জলবায়ুর বিরূপতা – ভারতবর্ষ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। এদেশের জলবায়ু ইউরোপ- আমেরিকার তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। এইসব বিপত্তি অতিক্রম করার মানসিক শক্তি অর্জনের জন্যই কাজে নামার আগে বিশেষভাবে চিন্তার প্রয়োজন আছে বলে স্বামীজি মিস নোব্‌ল্‌কে পরামর্শ দিয়েছেন।

কিন্তু বিঘ্নও আছে বহু। — স্বামীজি কোন্ কোন্ বিঘ্নের কথা বলেছেন আলোচনা করো।

প্রেক্ষাপট – স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর চিঠি রচনায় মিস নোব্‌ল্‌কে ভারতে আগমনের আগে কিছু নির্দেশ ও পরামর্শ দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। নোব্‌লের ভারতে আগমন যে এদেশের জনসমাজ, বিশেষত নারীসমাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় — সেই মতামত তিনি জানিয়েছেন। তাঁর ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, ভালোবাসা এবং দৃঢ়তা যে এ দেশের মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজন তা দ্বিধাহীনভাবে বিবেকানন্দ বলেছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে বিবেকানন্দ মিস নোব্‌ল্‌কে কিছু বিষয়ে সতর্কও করে দিয়েছেন।ভারতীয় সমাজের সীমাবদ্ধতা – এদেশের মানুষের দুঃখ, কুসংস্কার ও দাসত্বের মনোভাব নোবলের ধারণার অতীত। এদেশের মানুষের জাতি এবং স্পর্শ সম্বন্ধেও নোবলের স্বচ্ছ ধারণা নেই। শ্বেতাঙ্গদের বিরূপতা – ভয় কিংবা ঘৃণা — যে-কোনো কারণেই হোক, তারা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে। অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গরা নোব্‌ল্‌কে খামখেয়ালি মনে করতে পারে বা তাঁর গতিবিধিকে সন্দেহের চোখে দেখতে পারে। জলবায়ু ও অন্যান্য প্রতিকূলতা – এ দেশের গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ুও তাঁর পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া শহরের বাইরে ইউরোপীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্য এখানে কোথাও নেই। এইসব বিঘ্নকে মাথায় রেখেই বিবেকানন্দ মিস নোব্‌ল্‌কে ভারতে আসার কথা বলেছেন।

তোমাকে একটু সাবধান করা দরকার – কাকে, কেন সাবধান করা দরকার? কী বিষয়ে সাবধান করা দরকার?

সাবধান করার প্রয়োজনীয়তা – মিস নোব্‌ল্‌ ভারতবর্ষে এসে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে কিছু বিষয়ে সাবধান করা দরকার বলে মনে করেছেন। এর কারণ হল, ভারতে এসে যে বৃহৎ কর্মযজ্ঞে মিস নোব্‌ল্ নামতে চলেছেন, তাতে তাঁকে অবশ্যই স্বনির্ভর হতে হবে। মিস মুলারের মতো কোনো ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে মার্গারেটের জনসেবার কাজটি বিঘ্নিত হবে। প্রধানত এ বিষয়েই স্বামীজি মিস নোব্‌ল্‌কে সাবধান করেছিলেন।
সাবধান করার বিষয় – ভারতের জন্য, বিশেষত ভারতীয় নারীসমাজের উন্নতির জন্য মিস নোব্‌ল্‌কে অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে তাঁকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, অন্যের ওপর নির্ভর করা চলবে না বলে স্বামীজি পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে মিস মুলার বা অন্য কারও ছত্রছায়ায় আশ্রয় না নিয়ে মিস নোব্‌ল্‌কে আত্মনির্ভর হতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়ালে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব বলে স্বামীজি তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন। মিস মুলার ভালো মহিলা হলেও পৃথিবীকে বদলে দিতে একমাত্র টাকারই প্রয়োজন আছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি নিজেকে আজন্ম নেত্রী বলে মনে করেন। তাঁর মেজাজ রুক্ষ, চিত্ত অস্থির। তাই তাঁর সঙ্গে মিস নোব্‌ল্‌ বেশিদিন মানিয়ে চলতে পারবেন না। এইসব বিষয়েই স্বামীজি মিস নোব্‌ল্‌কে সাবধান করে দিতে চেয়েছেন।

যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তার সবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। — প্রসঙ্গ উল্লেখ করো এবং উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।

প্রসঙ্গ – স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর চিঠি রচনায় মিস নোব্‌লের ভারতে আগমনের পূর্বে তাঁর জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দিতে চেয়েছেন। সেখানে এদেশের জনসমাজ, আবহাওয়া ইত্যাদির প্রতিকূলতার কথা তিনি যেমন বলেছেন, তেমনই শ্বেতাঙ্গদের বিরূপতার – বিষয়েও সাবধান করে দিয়েছেন। বিশেষ কিছু ব্যক্তিত্ব বিষয়ে নোব্‌ল্‌কে সতর্ক থাকার কথাও বলেছেন বিবেকানন্দ। এক্ষেত্রে আত্মশক্তি এবং আত্মনির্ভরতাই যে সাফল্যের একমাত্র পথ তা উল্লেখ করতে গিয়ে বিবেকানন্দ আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
তাৎপর্য – আত্মনির্ভরতা – বিবেকানন্দ নোব্‌ল্‌কে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন যে, মিস মুলার বা অন্য কারও কাছে আশ্রয় নিলে বা তাদের কথামতো চললে তাঁর কর্মপন্থা পণ্ড হয়ে যেতে পারে। তাই নোব্‌ল্‌কে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে। মিস মুলার বিষয়ে সতর্কতা – মিস মুলারের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে গিয়ে বিবেকানন্দ বলেছেন যে, ছেলেবেলা থেকেই তিনি নিজেকে আজন্ম নেত্রী ভাবেন আর মনে করেন যে, দুনিয়াকে ওলট-পালট করে দিতে টাকা ছাড়া অন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই কলকাতায় তিনি একটি বাড়ি ভাড়া নিতে চেয়েছেন মিস নোব্‌ল্‌, বিদেশ থেকে আসা অন্যান্য বন্ধুরা এবং তাঁর নিজের জন্য। কিন্তু তাঁর রুক্ষ মেজাজ এবং অদ্ভুত অস্থির চিত্ততার কারণে কোনো সংকল্পই সফল হবে না। সিদ্ধান্ত – তাই বিবেকানন্দ বলেছেন যে, কারও কারও সঙ্গে দূর থেকে বন্ধুত্ব করাই ভালো। আত্মনির্ভরতা থাকলে জীবনে সাফল্য নিশ্চিত হয়। অন্যের ওপরে নির্ভরতা সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

মিসেস সেভিয়ার নারীকুলের রত্নবিশেষ – এই উক্তির আলোকে নারীজাতির প্রতি স্বামী বিবেকানন্দের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দাও।

মিসেস সেভিয়ার সম্পর্কে শ্রদ্ধা – স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্‌ল্‌কে যে চিঠি লিখেছিলেন তাতে উল্লেখ করেছেন যে, মিসেস সেভিয়ার অত্যন্ত ভালো মহিলা এবং স্নেহময়ী, তিনি নারীজাতির রত্নস্বরূপা। তিনি ও তাঁর স্বামী ইংরেজ হলেও অন্য ইংরেজদের মতো ভারতীয়দের ঘৃণার চোখে দেখেন না। তাঁরা এদেশের মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করতে আসেননি।অন্যান্যদের সম্পর্কে মনোভাব – স্বামীজি তাঁর চিঠিতে মিস ম্যাকলাউড ও মিসেস বুলের কথাও অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, মিস মুলারের নেতিবাচক গুণাবলি থাকলেও তাঁকে তাঁর নিজের ভাবে চমৎকার মহিলা বলেছেন স্বামীজি। বিদেশ থেকে আগত বন্ধুদের আশ্রয়ের জন্য মিস মুলার যে কলকাতায় একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন, সেটি তাঁর সহৃদয়তা ও অমায়িকতার পরিচায়ক বলে স্বামীজি স্বীকার করেছেন।
মিস নোব্‌ল্‌-এর প্রতি মনোভাব – আলোচ্য চিঠির বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ব্যক্ত হয়েছে মিস নোব্‌লের প্রতি স্বামীজির স্নেহ ও সুপরামর্শ। তিনি ভারতীয় নারীজাতির উন্নতির জন্য, শিক্ষা ও সম্মানের জন্য যে গভীরভাবে চিন্তা করেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় মিস নোব্‌ল্‌কে এদেশে আহ্বানের মধ্য দিয়ে। তিনি মনে করেন, ভারতের জন্য, বিশেষত এদেশে ভারতের নারীসমাজের জন্য, পুরুষের চেয়ে নারীর- – একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন। মিস নোব্‌ল্‌ ঠিক সেই রকমের নারী। কেবল বিদেশিনিদের নয়, স্বদেশের তথা সমগ্র বিশ্বের নারীকুলের প্রতি ছিল স্বামীজির একইরকম উদার দৃষ্টিভঙ্গি।

এত ভালো, এত স্নেহময়ী তিনি। — যাঁর সম্বন্ধে এই উক্তি লেখক তাঁকে কোন্ অভিধায় ভূষিত করেছেন? তাঁর সম্পর্কে লেখক আর যা যা বলেছেন তা থেকে লেখকের মানসিকতার কী পরিচয় পাও?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ও তাঁর প্রাপ্ত অভিধা – মিস নোব্‌ল্‌কে লেখা স্বামী বিবেকানন্দের চিঠি পাঠ্যাংশ থেকে উদ্ধৃত এই উক্তিটিতে উল্লিখিত তিনি হলেন মিসেস সেভিয়ার। লেখক স্বামী বিবেকানন্দ মিসেস সেভিয়ারকে নারীকুলের রত্নবিশেষ অভিধায় ভূষিত করেছেন।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে লেখকের মানসিকতা – তাঁর সম্পর্কে লেখক আরও বলেছেন যে, মিসেস সেভিয়ার ও তাঁর স্বামী ইংরেজ হয়েও অন্য শ্বেতাঙ্গদের মতো ভারতীয়দের ঘৃণা করেন না এবং তাঁরা এদেশের মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করতে আসেননি। তাঁরা সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করতে চান। যদিও তাঁদের এখনও নির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী নেই, মিস নোব্‌ল্‌ এখানে এসে সেভিয়ারদের সহকর্মীরূপে পেলে উভয়েরই কাজের সুবিধা হবে। এইসব কথা থেকে নারীজাতির প্রতি তাঁর সম্মানবোধ, ভদ্রতা, বিনয় ও উদারতার পরিচয় পাওয়া যায়।

যাঁরা এদেশীয়দের ঘৃণা করেন না — যাঁরা কারা? তাদের সম্পর্কে যা জান লেখো।

যাঁরা-র পরিচয় – স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর চিঠি রচনার উল্লিখিত অংশে যাঁরা বলতে সেভিয়ার দম্পতির কথা বলেছেন।
তাদের পরিচয় – মিস নোব্‌লের ভারতে আসার আগে বিবেকানন্দ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তাঁকে এদেশে আগত ইউরোপীয় বা অন্য বিদেশি যাঁরা ভারতের জন্য কাজে উদ্যোগী তাঁদের সম্পর্কেও ধারণা দিতে চেয়েছেন। সেখানে মিস মুলারের মতো নিজেকে আজন্ম নেত্রী ভাবা এবং বদমেজাজি মানুষের পাশাপাশিই উল্লেখ করেছেন মিসেস সেভিয়ারের কথা। বিবেকানন্দের কাছে তিনি হলেন নারীকুলের রত্নবিশেষ। মিসেস সেভিয়ার এবং তাঁর স্বামী ক্যাপটেন জে এইচ সেভিয়ার বেদান্ত প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং স্বামীজির ইচ্ছাতেই তাঁরা মায়াবতী অদ্বৈত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ইউরোপীয় হওয়া সত্ত্বেও এদেশের মানুষদের প্রতি তাঁদের কোনো ঘৃণার ভাব ছিল না। এদেশের মানুষদের ওপরে প্রভুত্ব করার কোনো চেষ্টাও তাঁরা করতেন না। তবে সেভিয়ার দম্পতির যে কোনো নির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী নেই, বিবেকানন্দ তা-ও বলেছেন। তবুও সহকর্মী হিসেবে তাঁরাই বেশি গ্রহণযোগ্য হবেন বলে বিবেকানন্দ নোব্‌ল্‌কে মত দিয়েছেন।

চিঠি প্রবন্ধটি স্বামী বিবেকানন্দের দেশপ্রেমের অন্তরতম অনুভূতি প্রকাশ করে। তিনি তার চিঠির মাধ্যমে আমাদের দেশপ্রেমের মহিমা ও গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রবন্ধটি আমাদের দেশকে ভালোবাসতে ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।

Share via:

মন্তব্য করুন