দশম শ্রেণি – বাংলা – অসুখী একজন – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

এই কবিতাটিতে কবি পাবলো নেরুদা একজন অসুখী ব্যক্তির কথা বলেছেন। এই ব্যক্তিটি তার চারপাশের জগৎকে ভালোভাবে বুঝতে পারছে না। সে মানুষের আচরণ, প্রকৃতির সৌন্দর্য, এবং জীবনের অর্থ সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত। সে নিজেকে অসহায় এবং বিচ্ছিন্ন বোধ করছে।

দশম শ্রেণি – বাংলা – অসুখী একজন – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

অসুখী একজন কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।

কথামুখ – পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির মূল বিষয় হয়ে উঠেছে যুদ্ধের পটভূমিকায় শাশ্বত ভালোবাসার কথা।

  • কবির চলে যাওয়া – একজন বিপ্লবীর যথার্থ জায়গা যুদ্ধক্ষেত্র। কিন্তু যে প্রিয়জনকে ছেড়ে তিনি মুক্তিসন্ধানে যান তার পক্ষে বিচ্ছেদকে মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই চলতে থাকে অনন্ত প্রতীক্ষার দিন গোনা। সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে যায়, চলে যায় বছরের পর বছর। বৃষ্টি ধুয়ে দেয় বিপ্লবীর পায়ের ছাপ। কিন্তু অপেক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকে তাঁর প্রিয়তমা নারীটি।
  • ধ্বংসলীলা – যুদ্ধের প্রস্তুতি শেষ করে যখন যথার্থই যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ধ্বংসের তাণ্ডবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় পৃথিবী। যুদ্ধের তাণ্ডবে হত্যা, রক্তাক্ততা আর আশ্রয়হীনতা তৈরি হয়। পৃথিবীজুড়ে যেন আগুন ধরে যায়।
  • ধ্বংসস্তূপ – মন্দিরের প্রতিমা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় বিপ্লবীর ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিও। চেনা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। যেখানে আগে ছিল শহর, সেখানে ছড়িয়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর ‘মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা’। রক্তের কালো দাগ স্পষ্ট করে দেয় ধ্বংসলীলার তীব্রতাকে।
  • তবুও – কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও জেগে থাকে ভালোবাসা। বিপ্লবীর জন্য অনন্ত অপেক্ষায় থাকে তাঁর প্রিয়তমা। কারণ ভালোবাসার মৃত্যু নেই।

অসুখী একজন কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে বিচার করো।

নামকরণের মধ্য দিয়ে কোনো সাহিত্যের ভাববস্তু বা মর্মার্থের পরিচয় পাওয়া যায়। কবিতাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। এখানে পাঠ্য কবিতাটির ‘অসুখী একজন’ নামকরণ তার অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনাকেই প্রকাশ করেছে। ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক তাঁর প্রিয়জনকে দরজায় অপেক্ষায় রেখে চলে যান দূরে। প্রিয় মানুষটির ফিরে আসার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং একসময় বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়। বিপ্লবী যে পথে তাঁর স্বভূমি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সেই পথে জন্মায় ঘাস। কবির স্মৃতি চিরকালের জন্য বিবর্ণ হয়ে যায়। তারপর আসে ভয়ানক যুদ্ধ। ধ্বংস হয়ে যায় সবকিছু। শুধু মৃত্যু হয় না অপেক্ষারত মেয়েটির। এত বিপর্যয়ের পরও সে কবির প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। যুদ্ধ সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে, কিন্তু স্বজন ও স্বদেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে না। যুদ্ধের আগুনে বাড়িঘর পোড়ে, ছাই হয়ে যায় প্রাসাদ, উদ্যান, সবকিছু। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে থাকে ভালোবাসা। দীর্ঘ অপেক্ষা তার হৃদয়কে বেদনায় ভারী করে রেখেছে বলে মেয়েটি অসুখী। আর এইজন্যই কবিতার শিরোনাম ‘অসুখী একজন’ সার্থকতা লাভ করেছে।

এই কবিতাটি পাঠককে জীবনের অনিশ্চয়তা এবং মানুষের অস্তিত্বের অসারতা সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে। কবিতাটি আমাদেরকে জীবনের প্রতি আরও সচেতন হতে এবং এর মূল্য বুঝতে সাহায্য করে।

Share via:

মন্তব্য করুন