ভারতে প্রায়ই বন্যা হয় কেন? ভারতের বন্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে প্রায়ই বন্যা হয় কেন? ভারতের বন্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের বন্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
ভারতের বন্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়

ভারতে প্রায়ই বন্যা হয় কেন?

ভারতে প্রায়ই বন্যা হয়, কারণ –

  1. অগ্রিম আগমন – নির্ধারিত সময়ের বহু পূর্বেই যদি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে তবে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও বন্যার সৃষ্টি হয়।
  2. বিরামহীন বৃষ্টি – বছরের কোনো কোনো সময়ে বিরামহীন বৃষ্টি হলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
  3. বর্ষাকালের অধিক স্থায়িত্ব – কোনো কোনো বছরে বর্ষাকালের স্থায়িত্ব বেশি হলে ভারী বর্ষণের ফলে বন্যা দেখা দেয়।
  4. নিম্নচাপের স্থায়িত্ব – কোনো কোনো স্থানে দীর্ঘক্ষণ নিম্নচাপ অবস্থান করলে সেদিকে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।
  5. নদীর গভীরতা হ্রাস – পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে ক্ষয়ীভূত পলি, বালি নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়ে নদীর গভীরতা হ্রাস করে। ফলে অধিক বৃষ্টিতে দুকুল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।

ভারতের বন্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

ভারতের বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় –

  1. ভূমিক্ষয় রোধ – ভূমিক্ষয়ের ফলে নদীতে পলি সঞ্চিত হয়। ফলে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়। তাই বনসৃজন করে ভূমিক্ষয় রোধ করলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
  2. নদীকে পলিমুক্ত করা – নদীতে অবাধে জল প্রবাহিত হওয়ার জন্য নদীকে পলিমুক্ত রাখা প্রয়োজন।
  3. ড্রেজিং – বাঁধের পিছনে জলাধারে পলি সঞ্চয় রোধ করার জন্য নিয়মিত পলিকাটা বা ড্রেজিং করা প্রয়োজন।
  4. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জমির ব্যবহার – বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জমির ব্যবহার করলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
  5. জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা – সাধারণ মানুষের জনসচেতনতা বৃদ্ধি করলে বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে মানুষ সহজে মোকাবিলা করতে পারবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারতে বন্যা হওয়ার প্রধান কারণ কী?

ভারতে বন্যার প্রধান কারণগুলি হলো –
1. অগ্রিম মৌসুমি বায়ুর আগমন – সময়ের আগে মৌসুমি বায়ু আসলে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
2. অবিরাম বৃষ্টিপাত – দীর্ঘ সময় ধরে টানা বৃষ্টি হলে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পায়।
3. বর্ষাকালের দীর্ঘস্থায়িত্ব – কোনো কোনো বছর বর্ষাকাল দীর্ঘ হলে বন্যার সম্ভাবনা বাড়ে।
4. দীর্ঘস্থায়ী নিম্নচাপ – নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও বন্যা হয়।
5. নদীর গভীরতা হ্রাস – পলি জমে নদী তলদেশ ভরাট হলে সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যা হয়।

ভারতের কোন অঞ্চলগুলি সবচেয়ে বেশি বন্যা প্রবণ?

1. গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা (বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম)।
2. উত্তর-পূর্ব ভারত (অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়)।
3. কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ ভারত (মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ)।

নদীতে পলি জমা বন্যার জন্য কতটা দায়ী?

নদীতে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হলে জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই নদী উপচে বন্যা হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন কি ভারতের বন্যা বাড়াচ্ছে?

হ্যাঁ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে –
1. অতিবৃষ্টি (Extreme Rainfall) এর ঘটনা বাড়ছে।
2. মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিততা দেখা দিচ্ছে।
3. হিমবাহ গলন থেকে নদীতে জল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারত কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?

1. বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ (যেমন – ফারাক্কা বাঁধ, হীরাকুদ বাঁধ)।
2. নদী সংযোগ প্রকল্প (Interlinking of Rivers)।
3. ভূমিক্ষয় রোধ (বনসৃজন, টেরেস ফার্মিং)।
4. ড্রেজিং (নদী থেকে পলি অপসারণ)।
5. আধুনিক পূর্বাভাস ব্যবস্থা (IMD ও NDMA দ্বারা সতর্কতা)।

সাধারণ মানুষ কীভাবে বন্যা মোকাবিলা করতে পারে?

1. বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কে সচেতন থাকা।
2. উঁচু ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া।
3. খাবার জল ও জরুরি সরঞ্জাম মজুত রাখা।
4. বন্যা প্রতিরোধী বাড়ি নির্মাণ।

ভবিষ্যতে বন্যা প্রতিরোধে কী করা প্রয়োজন?

1. নদী ব্যবস্থাপনার উন্নতি।
2. শহরাঞ্চলে জল নিষ্কাশনের উন্নতি।
3. জলাধার ও বনভূমি সংরক্ষণ।
4. জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে প্রায়ই বন্যা হয় কেন? ভারতের বন্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রিজমের মধ্য দিয়ে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তল লেন্স কীভাবে সদ্‌, অবশীর্ষ ও খর্বাকার প্রতিবিম্ব গঠন করে তা রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও।

অবতল লেন্সকে কিছু প্রিজমের সমন্বয়রূপে কল্পনা করে অপসারী ক্রিয়ার ব্যাখ্যা করো।

স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কাকে বলে? কীভাবে স্বল্পদৃষ্টিজনিত ত্রুটি দূর করা যায়?

দীর্ঘদৃষ্টিজনিত ত্রুটি কী? এই ত্রুটি কীভাবে দূর করা যায়?