এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ ও ফলাফল লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের মৃত্তিকা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ ও ফলাফল লেখো।
অথবা, মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব বা ফলাফলগুলি লেখো।
অথবা, ভূমি বা মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলি লেখো।
ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ –
কৃষিপ্রধান ভারতে মৃত্তিকা বা ভূমিক্ষয় এক কলঙ্ক বা অভিশাপ স্বরূপ। এই ভূমিক্ষয়ের কারণগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা —
- প্রাকৃতিক কারণ।
- মানবিক কারণ।
প্রাকৃতিক কারণ –
- জলপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয় – বৃষ্টিপাতের জল যখন বাধাহীনভাবে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়, তখন মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। জলপ্রবাহের দ্বারা র্যাভাইন, শিট, রিল ও গালি প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।
- হিমবাহ দ্বারা ক্ষয় – হিমানী সম্প্রপাত ও হিমবাহের অবনমন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড প্রভৃতি রাজ্যে এই প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার ক্ষয়কার্য হয়।
- বায়ুপ্রবাহের দ্বারা ক্ষয় – বায়ুর অবঘর্ষ, অবনমন, অপসারণ প্রভৃতি প্রক্রিয়ার সাহায্যে ভূমিক্ষয় হয়। রাজস্থানে এই প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।
- সমুদ্রস্রোত দ্বারা ক্ষয় – প্রবল সমুদ্রস্রোত উপকূল সংলগ্ন মৃত্তিকার ক্ষয়সাধন করে।
মানবিক কারণ –
- অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ – ব্যাপক পশুচারণে ভূমির মান নষ্ট হলে মৃত্তিকা আলগা হয়ে যায়। এর ফলে প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় মৃত্তিকার উপরিস্তর জলের সঙ্গে ধুয়ে যায় এবং মৃত্তিকার ক্ষয় হয়।
- বৃক্ষছেদন – বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় ভূমিক্ষয় ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যেমন – ঝুম চাষের ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমিক্ষয়।
- অন্যান্য কারণ – এ ছাড়াও অতিরিক্ত জলসেচ ও অবৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমেও ভূমিক্ষয় হয়।

ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব –
মৃত্তিকা ক্ষয়ের উল্লেখযোগ্য প্রভাব বা ফলাফলগুলি হল –
- জলাধার, নদী ও হ্রদ ভরাট হওয়া – ক্ষয়প্রাপ্ত মৃত্তিকা ও বালি, জল এবং বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে নদী ও জলাধারে জমা হয়। এর ফলে নদী ও জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।
- উর্বরতা – মৃত্তিকা ক্ষয়ে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়।
- জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস – মৃত্তিকার স্তর পাতলা হলে মাটির জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
- বায়ুদূষণ – বায়ুপ্রবাহ দ্বারা ভূমির ক্ষয় হলে ক্ষয়প্রাপ্ত বালুকাকণা বায়ুমণ্ডলে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়।
- নাব্যতা হ্রাস – বায়ুপ্রবাহের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত ধূলিকণা, বালুকণা নদীখাতে জমা হলে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়।
- আর্থিক ক্ষতি – জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি অকেজো হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয় ফলে আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মৃত্তিকা ক্ষয় কী?
মৃত্তিকা ক্ষয় হল প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে মাটির উপরিস্তর ধীরে ধীরে অপসারিত হওয়ার প্রক্রিয়া, যা জমির উর্বরতা হ্রাস করে।
ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান প্রাকৃতিক কারণগুলি কী কী?
1. জলপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয় (বৃষ্টিপাত, নদী ও বন্যার প্রভাবে)।
2. হিমবাহ দ্বারা ক্ষয় (হিমানী সম্প্রপাতের মাধ্যমে)।
3. বায়ুপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয় (রাজস্থানের মতো শুষ্ক অঞ্চলে)।
4. সমুদ্রস্রোত দ্বারা ক্ষয় (উপকূলীয় অঞ্চলে)।
মৃত্তিকা ক্ষয়ের মানবসৃষ্ট কারণগুলি কী?
1. অতিরিক্ত পশুচারণ (মাটির উপরিস্তর নষ্ট করে)।
2. বৃক্ষনিধন (বনভূমি কাটার ফলে মাটি আলগা হয়)।
3. অবৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতি (অতিরিক্ত চাষ ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার)।
4. অপরিকল্পিত নির্মাণ ও খনন কাজ।
মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে কী কী সমস্যা দেখা দেয়?
1. জলাধার ও নদী ভরাট (বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়)।
2. মাটির উর্বরতা হ্রাস (ফসল উৎপাদন কমে যায়)।
3. জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া (ভূগর্ভস্থ জলস্তর নিচে নামে)।
4. বায়ুদূষণ (ধূলিঝড়ের মাধ্যমে)।
5. নদীর নাব্যতা হ্রাস (জাহাজ চলাচলে সমস্যা)।
মৃত্তিকা ক্ষয় রোধের উপায়গুলি কী?
1. বনায়ন ও বৃক্ষরোপণ (মাটির ক্ষয় রোধ করে)।
2. সোপান চাষ (পাহাড়ি অঞ্চলে)।
3. কন্টুর চাষ পদ্ধতি (ঢাল বরাবর চাষ)।
4. জৈব কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ (মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা)।
5. চেক ড্যাম নির্মাণ (জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ)।
ভারতে কোন অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয় সবচেয়ে বেশি?
1. রাজস্থান (বায়ুপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয়)।
2. হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল (জলপ্রবাহ ও হিমবাহ দ্বারা ক্ষয়)।
3. উত্তর-পূর্ব ভারত (ঝুম চাষের কারণে)।
4. পশ্চিমঘাট পর্বতমালা (অতিবৃষ্টির কারণে)।
মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে কৃষি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
মাটির উর্বর স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হলে পুষ্টিগুণ কমে যায়, ফলে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায় এবং কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি হয়।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব কী?
ক্ষয়প্রাপ্ত মাটি নদীতে জমা হয়ে জলাধার ভরাট করে, ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং টারবাইন নষ্ট হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ ও ফলাফল লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের মৃত্তিকা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন