এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের প্রধান জলসেচ পদ্ধতিগুলির পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের প্রধান জলসেচ পদ্ধতিগুলির পরিচয় দাও।
ভারত একটি কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এদেশের কৃষিকার্যে জলসেচের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের মোট জলসেচ যুক্ত জমির পরিমাণ প্রায় 9.30 কোটি হেক্টর। ভারতের জলসেচে গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলি হল – ভূপৃষ্ঠের সঞ্চিত জল, প্রবহমান জল ও ভৌমজল বা ভূগর্ভস্থ জল।
ভারতের উল্লেখযোগ্য জলসেচ পদ্ধতিগুলি হল –
খাল –
সংজ্ঞা – কৃত্রিম কোনো খালের মধ্য দিয়ে জলাশয়ের অথবা নদীর জল কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হলে তাকে খাল পদ্ধতিতে সেচকার্য বলে। ভারতের 38% সেচকার্য খালের সাহায্যে হয়।
শ্রেণিবিভাগ –
- নিত্যবহ খাল – যে খাল থেকে সারাবছর জল পাওয়া যায় তাকে নিত্যবহ খাল বলে।
- প্লাবন খাল – যে খাল থেকে কেবলমাত্র বর্ষাকালেই জলসেচের জল পাওয়া যায় তাকে প্লাবন খাল বলে।
বণ্টন – উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, হরিয়ানা প্রভৃতি রাজ্যে নিত্যবহ খাল এবং ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে প্লাবন খালের সাহায্যে জলসেচের আধিক্য রয়েছে।
সুবিধা –
- জলবাহিত পলি মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি বাড়ায়।
- বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলসেচ করা সম্ভব হয়।
- নিত্যবহ খালের দ্বারা সারাবছর জলসেচ করা যায়।
অসুবিধা –
- প্লাবন খাল দ্বারা সারাবছর জলসেচ করা যায় না।
- অনেক সময় খালের মধ্য দিয়ে লবণাক্ত জল প্রবেশ করে কৃষিক্ষেত্রকে অনুর্বর করে তোলে।
কূপ ও নলকূপ –
সংজ্ঞা – ভূগর্ভের জল বা ভৌমজলকে কূপ বা নলকূপের সাহায্যে সরবরাহ করলে তাকে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ পদ্ধতি বলে। ভারতের মোট সেচকার্যের 53% কূপ ও নলকূপের দ্বারা হয়।
শ্রেণিবিভাগ – কূপ দু-ধরনের।
- স্থায়ী কূপ – এর গভীরতা প্রায় 5-10 মিটার।
- অস্থায়ী কূপ – এর গভীরতা 3-4 মিটার।
নলকূপ দু-ধরনের –
- অগভীর নলকূপ – এর গভীরতা 1-4 মিটার।
- গভীর নলকূপ – এর গভীরতা 5-10 মিটার।
বণ্টন – পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে এই পদ্ধতি বেশি দেখা যায়।
সুবিধা –
- ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক চাষিদের পক্ষে সুবিধাজনক।
- স্বল্প বিনিয়োগে অল্প জমিতে সেচকার্য করা যায়।
- নদী দূরবর্তী কৃষিক্ষেত্রে অধিক কার্যকারী
- পলিগঠিত মৃত্তিকায় নলকূপ খনন সুবিধাজনক।
- প্রায় সারাবছরই জলসেচ সম্ভব।
- কূপ ও নলকূপ খননে বেশি কৃষিজমি নষ্ট হয় না।
অসুবিধা –
- কঠিন অপ্রবেশ্য শিলাস্তরে কূপ ও নলকূপ খনন অসুবিধাজনক।
- গ্রীষ্মকালে ভৌম জলস্তর নীচে নেমে গেলে অসুবিধা হয়।
- কূপ খননের কারণে জমিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যায়।
জলাশয় –
সংজ্ঞা – বর্ষার অতিরিক্ত জল জলাধারে আটকে রেখে কৃষিজমিতে সরবরাহ করার পদ্ধতিকে জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচ পদ্ধতি বলে। মোট সেচকার্যের 6% জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়।
ব্যবহৃত পদ্ধতি – সেচনি, ডোঙা প্রভৃতির সাহায্যে জলসেচ করা হয়।
বণ্টন – কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু প্রভৃতি বিভিন্ন রাজ্যে এই পদ্ধতির আধিক্য লক্ষ করা যায়।
সুবিধা –
- মৃত্তিকার নীচে অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের উপস্থিতি জলাশয় নির্মাণের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক।
- বাঁধের সাহায্যে জলাশয় নির্মাণ সুবিধাজনক।
- কঠিন শিলাস্তরে কুপ অথবা নলকূপ খনন করা যায় না বলে জলাশয় নির্মাণই সুবিধাজনক।
- জলাধারগুলি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভূমিক্ষয়কে রোধ করে।
অসুবিধা –
- শুষ্ক ঋতুতে জলাশয়ের জল শুকিয়ে যায়।
- অতি বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
- ক্রমাগত পলির সঞ্চয়ে জলাধারের গভীরতা হ্রাস পায়।
- জলাধার নির্মাণে কৃষিজমির আয়তন হ্রাস পায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জলসেচ কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জলসেচ হল কৃষিজমিতে কৃত্রিমভাবে জল সরবরাহ করার পদ্ধতি। ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও খরা প্রবণ অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য জলসেচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের প্রধান জলসেচ পদ্ধতিগুলি কী কী?
ভারতের প্রধান জলসেচ পদ্ধতিগুলি হল —
1. খাল পদ্ধতি (38% সেচ)।
2. কূপ ও নলকূপ পদ্ধতি (53% সেচ)।
3. জলাশয় পদ্ধতি (6% সেচ)।
খাল পদ্ধতিতে জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধা কী?
সুবিধা –
1. জলবাহিত পলি মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
2. বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল সরবরাহ করা যায়।
3. নিত্যবহ খালে সারাবছর জল পাওয়া যায়।
অসুবিধা –
1. প্লাবন খালে শুষ্ক মৌসুমে জল থাকে না।
2. খালের মাধ্যমে লবণাক্ত জল প্রবেশ করে জমি অনুর্বর করতে পারে।
কোন রাজ্যগুলিতে নলকূপের মাধ্যমে সেচ বেশি হয়?
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গে নলকূপের ব্যবহার বেশি।
জলাশয় পদ্ধতির প্রধান সুবিধা কী?
1. পাহাড়ি ও শুষ্ক অঞ্চলে জল সংরক্ষণ করে সেচ দেওয়া যায়।
2. বাঁধের মাধ্যমে জলাধার তৈরি করে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভূমিক্ষয় রোধ করা যায়।
জলাশয় পদ্ধতির অসুবিধাগুলি কী?
1. শুষ্ক মৌসুমে জল শুকিয়ে যেতে পারে।
2. বাঁধ ভেঙে বন্যার সম্ভাবনা থাকে।
3. পলি জমে জলাধারের আয়ু কমে যায়।
ভারতে সবচেয়ে বেশি কোন জলসেচ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়?
নলকূপ ও কূপ পদ্ধতি (53%), তারপর খাল পদ্ধতি (38%)।
প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খালের মধ্যে পার্থক্য কী?
1. নিত্যবহ খাল – সারা বছর জল সরবরাহ করে (উদাহরন — উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব)।
2. প্লাবন খাল – শুধু বর্ষাকালে জল পাওয়া যায় (উদাহরন — ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ)।
জলসেচের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক ব্যবহারের সমস্যা কী?
1. ভৌমজল স্তর নিচে নেমে যায়।
2. মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়।
3. দীর্ঘমেয়াদে জলের অভাব দেখা দেয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের প্রধান জলসেচ পদ্ধতিগুলির পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন