এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতীয় মৃত্তিকায় উৎপন্ন ফসলমূহ সম্পর্কে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের মৃত্তিকা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতীয় মৃত্তিকায় উৎপন্ন ফসলমূহ সম্পর্কে লেখো।
ভারতীয় মৃত্তিকায় উৎপন্ন ফসল –
মৃত্তিকার গুণাগুণ অর্থাৎ জলধারণ ক্ষমতা জৈব ও অজৈব খনিজের উপস্থিতি প্রভৃতি বিষয়গুলি ফসল উৎপাদন বা কৃষিকার্যকে প্রভাবিত করে।
পলল মৃত্তিকা –
এই মাটি অত্যন্ত উর্বর। এতে ধান, গম, পাট, ইক্ষু, ডাল প্রভৃতি ফসল পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও লোহিত মৃত্তিকা –
কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও লোহিত মৃত্তিকা কৃষিকার্যের পক্ষে মধ্যম মানের। কৃষ্ণ মৃত্তিকায় তুলা, ইক্ষু, গম এবং লোহিত মৃত্তিকায় ধান, জোয়ার, বাজরা, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতির চাষ হয়।

ল্যাটেরাইট ও মরু মৃত্তিকা –
এই দুটি মৃত্তিকা কৃষিকার্যের পক্ষে অনুপযুক্ত। তবে উপযুক্ত জলসেচের দ্বারা ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় ধান, ডাল, তৈলবীজ, জোয়ার, বাজরা এবং মরু মৃত্তিকায় গম, যব, তুলা, জোয়ার, বাজরা, রাগি প্রভৃতি চাষ হয়।
অন্যান্য মৃত্তিকা –
এ ছাড়া পার্বত্য অরণ্য মৃত্তিকা, লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকায় আলু, চা, লেবু, মিশ্র কৃষি, পশুপালন প্রভৃতি হয়ে থাকে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতের মৃত্তিকা কত প্রকার ও কী কী?
ভারতের প্রধান মৃত্তিকা প্রকারগুলি হলো —
1. পলল মৃত্তিকা (গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা, উপকূলীয় অঞ্চল)।
2. কৃষ্ণ মৃত্তিকা (ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চল — মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ)।
3. লোহিত মৃত্তিকা (তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, ওড়িশা)।
4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা (পশ্চিমঘাট পর্বত, ছোটনাগপুর মালভূমি)।
5. মরু মৃত্তিকা (রাজস্থান, গুজরাট)।
6. পার্বত্য ও বনাঞ্চল মৃত্তিকা (হিমালয়, পশ্চিমঘাট)।
7. লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা (উত্তর-পশ্চিম ভারত, উপকূলীয় অঞ্চল)।
পলল মৃত্তিকায় কী কী ফসল উৎপন্ন হয়?
পলল মৃত্তিকা অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় এখানে প্রধান ফসলগুলি হলো —
1. ধান (প্রধান খাদ্য শস্য)।
2. গম (শীতকালীন ফসল)।
3. পাট (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম)।
4. ইক্ষু (উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব)।
5. ডাল (মসুর, মুগ, ছোলা)।
কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও লোহিত মৃত্তিকায় কী চাষ হয়?
1. কৃষ্ণ মৃত্তিকায় – তুলা, ইক্ষু, সয়াবিন, সূর্যমুখী, গম।
2. লোহিত মৃত্তিকায় – জোয়ার, বাজরা, ডাল, তৈলবীজ (চিনাবাদাম, তিল), ধান।
ল্যাটেরাইট ও মরু মৃত্তিকায় কী চাষ সম্ভব?
1. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় – বৃষ্টিনির্ভর কৃষিতে জোয়ার, বাজরা, রাগি, ডাল, কাসাভা চাষ হয়। সেচের মাধ্যমে ধান, আখও চাষ করা যায়।
2. মরু মৃত্তিকায় – সেচের সাহায্যে গম, যব, তুলা, বাজরা চাষ হয়। রাজস্থানে মরুভূমির শস্য (যেমন — মোথ বিন) জন্মায়।
কোন মৃত্তিকায় চা ও কফি চাষ হয়?
1. চা – অম্লীয় ও উর্বর পার্বত্য মৃত্তিকায় (আসাম, দার্জিলিং, নীলগিরি)।
2. কফি – লাল Laterite মৃত্তিকায় (কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু)।
লবণাক্ত মৃত্তিকায় কী চাষ করা যায়?
লবণাক্ত মাটিতে সাধারণ ফসল চাষ কঠিন, তবে কিছু বিশেষ পদ্ধতিতে নোনা-সহিষ্ণু ধান, নারিকেল, মাছ চাষ (ব্র্যাক্কিশ ওয়াটার অ্যাকুয়াকালচার) করা হয়।
মৃত্তিকার গুণাগুণ কীভাবে ফসল উৎপাদনকে প্রভাবিত করে?
1. জলধারণ ক্ষমতা – পলল মাটিতে বেশি, মরু মাটিতে কম।
2. জৈব পদার্থের পরিমাণ – কালো মাটিতে বেশি, ল্যাটেরাইটে কম।
3. খনিজ উপাদান – ফসফরাস, নাইট্রোজেন, পটাশের পরিমাণ ফসলের বৃদ্ধি নির্ধারণ করে।
ভারতে সবচেয়ে উর্বর মৃত্তিকা কোনটি?
পলল মৃত্তিকা (Alluvial Soil), কারণ এতে পটাশ, ফসফরিক অ্যাসিড ও চুন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতীয় মৃত্তিকায় উৎপন্ন ফসলমূহ সম্পর্কে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের মৃত্তিকা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন