এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – টিকিটের অ্যালবাম – বিষয়সংক্ষেপ

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ষট্‌ত্রিংশ অধ্যায়, ‘টিকিটের অ্যালবাম’-এর বিষয়বস্তু এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – টিকিটের অ্যালবাম – বিষয়সংক্ষেপ
অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – টিকিটের অ্যালবাম – বিষয়সংক্ষেপ

টিকিটের অ্যালবাম অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

সুন্দর রামস্বামী আধুনিক তামিল সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে নাগেরকয়েলের একটি গ্রাম তাজহুভিয়া মহাদেভার কোভিল-এ। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ‘থাকাজহি শিবশঙ্কর পিল্লাই’-এর মালয়ালম্ উপন্যাস অনুবাদের মধ্য দিয়ে। তিনি ‘পদুবিয়া’ ছদ্মনামে বহু গল্প, উপন্যাস রচনা করেছেন। সাহিত্যক্ষেত্রে তিনি সমধিক প্রসিদ্ধ ‘সুরা’ নামে। তাঁর উপন্যাসগুলি হল – ‘ওরু পুলিয়া মারাথিন কথাই’ (একটি তেঁতুল গাছের গল্প) এবং ‘কুঝানথৈকন, পেনকল, আনকল’ (স্ত্রী, নারী, পুরুষ)। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ওরু পুলিয়া মারাথিন কথাই’ বিষয় ও আঙ্গিকগত দিক থেকে নতুন পরীক্ষার দ্বার খুলে দেয়। উপন্যাসটি ইংরেজি, হিন্দি, মালয়ালম্ এমনকি হিব্রু ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কবিতা ‘আন কাই নাগাম’ প্রকাশিত হয়। তিনি ‘কালাচুবাড়ু’ নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। তাঁর ঝুলিতে এসেছে বহু পুরস্কারও। যেমন – ‘কুমারন আসান স্মৃতি পুরস্কার’, ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘কথা চূড়ামণি’ পুরস্কার ইত্যাদি। তিনি ইহজগৎ ছেড়ে চলে যান ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর, ৭৪ বছর বয়সে।

টিকিটের অ্যালবাম অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

সাহিত্যকে কখনও দেশকালের সীমায় আবদ্ধ করে রাখা উচিত নয়। প্রত্যেক সাহিত্যরসিকের সামনে সাহিত্যকে পৌঁছে দেওয়া উচিত। তা ছাড়া সাহিত্যিকের একটি লক্ষ হল সৃষ্টিশীল মানুষ গড়ে তোলা, তাই তিনি সৃষ্টিশীল চিন্তার জাগরণ ঘটান সাহিত্যে এবং এর মাধ্যমে চিত্তশুদ্ধি ঘটে। এই প্রসঙ্গেই আলোচ্য গল্পটির অবতারণা করেছেন লেখক।

টিকিটের অ্যালবাম অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

রাজাপ্পা নামক এক কিশোর বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ করছিল যে তাকে ছেড়ে গত তিনদিন ধরে স্কুলের সবাই নাগরাজনের চারপাশে ভিড় করছে। কারণ নাগরাজনের কাকা নাগরাজনকে সিঙ্গাপুর থেকে যে টিকিটের অ্যালবামটা পাঠিয়েছে সেটা সকলে দেখতে চায়। নাগরাজন একটুও অধৈর্য না হয়ে পরম আগ্রহে সেটি সকলকে দেখাচ্ছে। তবে তার একমাত্র শর্ত হল কেউ অ্যালবামটা ধরবে না। সে সবাইকে পাতা উলটিয়ে দেখাবে। মেয়েদের দলের পার্বতী মেয়েদের নাম করে নাগরাজনের কাছ থেকে সেটি চেয়ে আনত।

তবে একসময় রাজাপ্পার অ্যালবামও বেশ বিখ্যাত ছিল। রাজাপ্পা অনেক কষ্ট করে ওর প্রাণপ্রিয় টিকিটগুলিকে সংগ্রহ করত। অনেক সময় অন্যদের কাছ থেকে বিনিময়ের মাধ্যমেও টিকিটের সংগ্রহ বাড়াত। একবার এক রাজস্ব বিভাগের অফিসারের ছেলে সেটি পঁচিশ টাকায় কিনতে চাইলে রাজাপ্পা তাকে উচিত জবাব দেয়।

রাজাপ্পা বহুবার বন্ধুদের কাছে নাগরাজনের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছে, কিন্তু কেউ তা মেনে নেয়নি। এমনকি তার অ্যালবামটির জন্য তারা তাকে ব্যঙ্গও করেছে। রাজাপ্পা কখনোই নাগরাজনের অ্যালবামের দিকে সোজাসুজি তাকাতে রাজি নয়। তবে কৌতূহল তারও আছে। সে সেটি দেখত চোরাদৃষ্টিতে। অ্যালবামের উপর অ্যালবামহরণকারীর উদ্দেশে এক সতর্কবাণীও লেখা ছিল, যা তার বন্ধুরা নকল করত।

ঘটনাটিতে রাজাপ্পার অন্তর্দাহ শুরু হয়। স্কুলে যেতেও তার বিতৃষ্না জন্মায়। সকলের অবজ্ঞার কারণে নাগরাজনের অ্যালবামের তুলনায় নিজেরটাকে তার এক আঁটি ছেঁড়া ন্যাকড়া বলে মনে হয়। সিদ্ধান্ত নেয় সেই অপমান সে আর সহ্য করবে না। নাগরাজন অপেশাদার, শিক্ষার্থী মাত্র। রাজাপ্পা তাকে কমদামি টিকিট দিয়ে মূল্যবান টিকিটগুলি হাতিয়ে নিতে পারবে। সেই উদ্দেশ্যে সে নাগরাজনদের বাড়ি যায়। বাড়িতে তার বোন বলে যে নাগরাজন শহরে গেছে। সেও সেই অ্যালবামেরই প্রশংসা করে। রাজাপ্পা বলে সেটি শুধু বেঢপ বড়ো অ্যালবাম। এরপর হঠাৎই নিজের অবচেতনে সকলের অগোচরে ড্রয়ার থেকে অ্যালবামটা নিয়ে হাফপ্যান্টের ভিতরে রেখে শার্টটা নামিয়ে দেয়। বাড়িতে পৌঁছে ও অ্যালবামটা বই-এর র‍্যাকের পিছনে লুকিয়ে রাখে। উত্তেজনা ও ভয়ে তার মাথায় তখন রক্তের চাপ অনুভূত হচ্ছে, গলা শুকিয়ে কাঠ। রাতেও কিছু খায়ও না।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপ্পু এসে জানায় সে ও নাগরাজন শহর থেকে ফেরার পর থেকে নাগরাজনের অ্যালবামটা আর পাওয়া যাচ্ছে না। তার বোন বলেছে সেসময় রাজাপ্পাই নাকি তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। রাজাপ্পা এক সন্দেহের আঁচ খুঁজে পায়। আপ্পু জানায় নাগরাজন অ্যালবাম হারানোর কষ্টে সারারাত কেঁদে চলেছে। ওর বাবা যেহেতু পুলিশসুপারের অফিসে কাজ করেন সেহেতু ওদের ইঙ্গিতমাত্রই পুলিশবাহিনী অ্যালবাম উদ্ধারের কাজে নেমে পড়বে। একটু বেলা হলে দরজার শব্দে রাজাপ্পা ভয় পেয়ে যায়, তার মনে হয় হয়তো পুলিশ এসেছে তল্লাশি করতে। স্নানের ঘরে ঢুকে উনুনে অ্যালবামটা ফেলে দেয় ভয়ে। সঙ্গে সঙ্গে অমূল্য সব টিকিট পুড়ে যায়। এরপর ঘরে এলে নাগরাজন তাকে তার দুঃখের কথা জানায়। যা শুনে রাজাপ্পার নিজেকে অত্যন্ত দোষী বলে মনে হয়। সে নাগরাজনকে নিজের অ্যালবামটি দিয়ে দেয়। নাগরাজন অবাক হয়ে যায়। নাগরাজন সেটি নিতে প্রথমে অসম্মত হলেও পরে নেয়। সে সেটি নিয়ে দরজার কাছে এসে পৌঁছোলে রাজাপ্পা মাত্র একটি রাত্রের জন্য অ্যালবামটা তার কাছে ধার চায়। এরপর ঘরে ঢুকে সেটি জাপটে ধরে হু-হু করে কাঁদতে থাকে।

টিকিটের অ্যালবাম অধ্যায়ের নামকরণ

নামকরণ সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো নামকরণের মধ্য দিয়ে পাঠকরা সাহিত্য-বিষয়টি সম্পর্কে খানিক ধারণা পেতে পারে। নামকরণ নানা প্রকারের হতে পারে। যেমন – চরিত্রপ্রধান, বিষয়কেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। তামিল লেখক সুন্দর রামস্বামীর ‘টিকিটের অ্যালবাম’ নামক গল্পটি আবর্তিত হয়েছে দুই কিশোর রাজাপ্পা ও নাগরাজনকে কেন্দ্র করে।

রাজাপ্পার নেশা ছিল ডাকটিকিট সংগ্রহ করা। তার টিকিটের আলবামটি একসময় স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু সিঙ্গাপুর থেকে কাকা নাগরাজনকে একটি টিকিটের অ্যালবাম পাঠালে সেটিই ক্রমশ বন্ধুমহলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রাজাপ্পার অ্যালবামকে আর কেউ পাত্তা দেয় না, এমনকি ব্যঙ্গও করে। এ ঘটনায় আহত হয়ে রাজাপ্পা সিদ্ধান্ত নেয় সেই অপমান সে আর সহ্য করবে না। অপেশাদার, শিক্ষার্থী নাগরাজনের কাছ থেকে কম দামি টিকিট দিয়ে দামি টিকিট হাতিয়ে নেবে সে। সেই উদ্দেশ্যে সে নাগরাজনদের বাড়িতে যায়। সেসময় নাগরাজন বাড়িতে ছিল না। তার অনুপস্থিতির সুযোগে নিজের অবচেতনে অ্যালবামটা আত্মসাৎ করে সে। আপ্পু এসে পরে জানায় যে নাগরাজনরা পুলিশে খবর দিতে পারে অ্যালবাম উদ্ধারের জন্য। দরজায় টোকা পড়ার শব্দে ভীত রাজাপ্পা উনুনের আগুনে ভস্মীভূত করে দেয় অ্যালবামটি। পরে দেখে পুলিশ নয়, বাড়িতে এসেছে নাগরাজন। তার দুঃখের কথা শুনে রাজাপ্পার নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হয়, সে নিজের অ্যালবামটা নাগরাজনকে দিয়ে দেয়। নাগরাজন সেটি প্রথমে নিতে অসম্মত হলেও পরে নেয়। তবে সে চলে যাওয়ার সময় রাজাপ্পা তার কাছ থেকে সেটি এক রাতের জন্য চেয়ে নেয় এবং ঘরে গিয়ে সেটিকে জাপটে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

গল্পটির সম্পূর্ণ ঘটনাবৃত্ত আবর্তিত হয়েছে টিকিটের অ্যালবামকে কেন্দ্র করে। সেটিকে নিয়েই বন্ধুদের আলোচনা, উৎসাহ বা অনুৎসাহ। রাজাপ্পার মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়া আবার তার চিত্তশুদ্ধি, নীতিরাজনের আনন্দ ও দুঃখ-সবই টিকিটের অ্যালবামকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে।

তাই গল্পটির বিষয়কেন্দ্রিক নামকরণ সার্থক হয়েছে বলেই মনে করি।

টিকিটের অ্যালবাম অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

খেয়াল – চেতনা। জনপ্রিয়তা – অধিকাংশ লোকের ভালোবাসা। দাম্ভিক – অহংকারী। সিঙ্গাপুর – ভারতের পূর্বদিকে সমুদ্রবেষ্টিত একটি দেশ। টিকিট – ডাকটিকিট। অ্যালবাম – (এক্ষেত্রে) ডাকটিকিট ইত্যাদি সংরক্ষণের খাতাবিশেষ। জড় – একত্রীকৃত। ধাওয়া – ধেয়ে; বেগে যাওয়া। ডানপিটে – অসমসাহসী। মলাট – আবরণ। পাত্তা – গুরুত্ব। জোগাড় – সংগ্রহ। সংগ্রাহক – সংগ্রহকারী। বিনিময় – বদল; পরিবর্ত। রাজস্ব – রাজা বা সরকারকে দেয় খাজনা। বিভাগ – দফতর। সমুচিত – সম্পূর্ণ উচিত; উপযুক্ত। যোগ্যতা – সমকক্ষতা। অদ্বিতীয় – যার দ্বিতীয় নেই। নির্লজ্জ – লজ্জাহীন; বেহায়া। নকল-নবিশ – নকল বা অনুকরণ করতে পটু ব্যক্তি। হিংসুটে – ঈর্ষাপরায়ণ। ঠাট্টা – পরিহাস; রসিকতা। পিয়ন – পত্রবাহক; যে চিঠিপত্র বিলি করে। তফাত – পার্থক্য। ন্যাকড়া – ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো। ঠকিয়েছে – প্রতারণা করেছে। বেঢপ – বেমানান। খিল – দরজার অর্গল; হুড়কো। শেলফ – তাক। ইঙ্গিত – ইশারা; সংকেত। নিথর – নিশ্চল। অমূল্য – মূল্য দিয়ে পাওয়া যায় না এমন। হতবুদ্ধি – কিংকর্তব্যবিমূঢ়। জাপটে – আঁকড়ে।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ষট্‌ত্রিংশ অধ্যায়টিকিটের অ্যালবাম’ – এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য এই প্রশ্নগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন