সত্যজিৎ রায় রচিত ব্যোমযাত্রীর ডায়রি একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী। এই গল্পে, একজন বিজ্ঞানী, তার সহকারী, এবং একজন বাঁদর একটি মহাকাশযানে করে পৃথিবীর চারপাশে ভ্রমণ করেন। তারা বিভিন্ন গ্রহ এবং উপগ্রহ পরিদর্শন করেন এবং সেখানে অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর জিনিস দেখেন।
এই গল্পটি ১৯৫৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এটি সত্যজিৎ রায়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পগুলির মধ্যে একটি। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ।
লেখক কার কাছ থেকে প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটি পেয়েছিলেন? ডায়রিটির বিশেষত্ব কী ছিল?
- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – সত্যজিৎ রায় রচিত ব্যোমযাত্রীর ডায়রি গল্পে প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর বিচিত্র ডায়রিটি লেখক পেয়েছিলেন তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে।
- ডায়রিটির বিশেষত্ব-রহস্যময় কালি – বিজ্ঞানী প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটা প্রথমবার লেখকের কাছে যখন পৌঁছোয় তখন তিনি দেখেছিলেন ডায়রিতে ব্যবহৃত কালির রং ছিল সবুজ। কিন্তু পুজোর পর খাতাটি আলমারি থেকে বের করার পরই লেখকের খটকা লাগে কারণ তিনি দেখেন কালির রং লাল। মনের ভুল ভেবে খাতাটা পকেটে রাখেন। বাড়ি ফিরে আবার খাতাটা খুলতেই লেখকের বুক ধড়াস করে ওঠে কারণ কালির রং তখন ছিল নীল। তারপর এক আশ্চর্য অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। লেখকের চোখের সামনেই ডায়রির কালি নীল থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ডায়রির কালির রঙের পরিবর্তন এক রহস্য গড়ে তোলে।
- বিস্ময়কর পৃষ্ঠা – এমনকি ডায়রিটি লেখকের হাত থেকে পড়ে যাওয়ার পর লেখকের কুকুর ভুলো তাতে দাঁত বসালেও ওই খাতার কাগজ তার কামড়ে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। লেখক বিস্মিত হয়ে যান।
- আশ্চর্যের বিষয় – দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়েও এবং পাঁচ ঘণ্টা উনুনের মধ্যে ডায়রিটা ফেলে রাখলেও কালির রং বদলেই চলে কিন্তু ডায়রি পোড়ে না। আশ্চর্যের কথা, যে ডায়রিকে লেখকের একসময় অক্ষয়, অবিনশ্বর মনে হয়েছিল, তা শেষপর্যন্ত, ডেয়োপিঁপড়ের পেটে যায়, বিস্ময়ে হতভম্ব লেখক এই আশ্চর্য ডায়রির কাহিনির সত্য-মিথ্যা বিচারের ভার পাঠকদের হাতেই ছেড়ে দেন।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি কাহিনিতে উল্লিখিত তারিখগুলির ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
ঘটনার বিবরণ – সত্যজিৎ রায় রচিত ব্যোমযাত্রীর ডায়রি কাহিনিতে তারিখ-সহ মোট দশ দিনের ঘটনার কথা লেখা হয়েছে।
১ জানুয়ারি প্রোফেসর শঙ্কু আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে যান। তিনি এর জন্য দায়ী ভৃত্য প্রহ্লাদের ওপর নস্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন।
২ জানুয়ারি প্রহ্লাদের জন্য শঙ্কুর প্রথম রকেটযাত্রা পণ্ড হয়ে যাওয়া ও অবিনাশবাবুকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
৫ জানুয়ারি শঙ্কু তাঁর বোকা কিন্তু সাহসী ভৃত্য প্রহ্লাদকে দ্বিতীয় রকেটযাত্রায় সঙ্গে নেওয়ার কথা লিখেছেন।
৬ জানুয়ারি অবিনাশবাবুর রসিকতার জবাবে তাঁর চায়ের মধ্যে শঙ্কু যে বড়ি দিয়েছেন তাতে হাই উঠে গভীর ঘুম হবে এবং ভয়ংকর স্বপ্ন দেখবেন।
৮ জানুয়ারি নিউটনকে সঙ্গী করার জন্য Fish pill ব্যবহারের কথা দিয়েছেন শঙ্কু।
১০ জানুয়ারি নিজের আবিষ্কৃত রোবট বিধুশেখরের চিন্তাশক্তির পরিচয় দিয়েছেন শঙ্কু।
১১ জানুয়ারি শঙ্কু আশ্বিন মাসের এক রাত্রে একটি আশ্চর্য উল্কাপাতের কথা লিখেছেন এবং এর ফলেই তাঁর মহাকাশযাত্রায় আগ্রহ জন্মায়।
১২ জানুয়ারি পর দিন মহাকাশযাত্রার কথা জানিয়ে শঙ্কু তাঁর সঙ্গীদের পোশাকের কথা লিখেছেন।
২১ জানুয়ারি মহাকাশযাত্রার জন্য নেওয়া জিনিসপত্রের কথা এবং মহাকাশযানের মধ্যে নানা ঘটনার কথা লিখেছেন।
২৫ জানুয়ারি মঙ্গলগ্রহের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন শঙ্কু। এরপর ডায়রিতে টাফা গ্রহ ও মহাকাশযাত্রার অন্য কথা তারিখ ছাড়াই লেখা হয়েছে কারণ, আর সময়ের হিসাব নেই।
এসব সত্যি কি মিথ্যে সম্ভব কি অসম্ভব, তা তোমরা বুঝে নিও। — এসব বলতে কী বলা হয়েছে? সেগুলিতে কী বলা হয়েছে?
এসব-এর অর্থ – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি গল্পের লেখক তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে যে ডায়রিটি পেয়েছিলেন, আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে তার কথাই বলা হয়েছে।
উল্লিখিত বক্তব্য – সত্যজিৎ রায় রচিত ব্যোমযাত্রীর ডায়রি কাহিনিতে তারিখ-সহ মোট দশ দিনের ঘটনার কথা লেখা হয়েছে।
১ জানুয়ারি প্রোফেসর শঙ্কু আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে যান। তিনি এর জন্য দায়ী ভৃত্য প্রহ্লাদের ওপর নস্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন।
২ জানুয়ারি প্রহ্লাদের জন্য শঙ্কুর প্রথম রকেটযাত্রা পণ্ড হয়ে যাওয়া ও অবিনাশবাবুকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
৫ জানুয়ারি শঙ্কু তাঁর বোকা কিন্তু সাহসী ভৃত্য প্রহ্লাদকে দ্বিতীয় রকেটযাত্রায় সঙ্গে নেওয়ার কথা লিখেছেন।
৬ জানুয়ারি অবিনাশবাবুর রসিকতার জবাবে তাঁর চায়ের মধ্যে শঙ্কু যে বড়ি দিয়েছেন তাতে হাই উঠে গভীর ঘুম হবে এবং ভয়ংকর স্বপ্ন দেখবেন।
৮ জানুয়ারি নিউটনকে সঙ্গী করার জন্য Fish pill ব্যবহারের কথা দিয়েছেন শঙ্কু।
১০ জানুয়ারি নিজের আবিষ্কৃত রোবট বিধুশেখরের চিন্তাশক্তির পরিচয় দিয়েছেন শঙ্কু।
১১ জানুয়ারি শঙ্কু আশ্বিন মাসের এক রাত্রে একটি আশ্চর্য উল্কাপাতের কথা লিখেছেন এবং এর ফলেই তাঁর মহাকাশযাত্রায় আগ্রহ জন্মায়।
১২ জানুয়ারি পর দিন মহাকাশযাত্রার কথা জানিয়ে শঙ্কু তাঁর সঙ্গীদের পোশাকের কথা লিখেছেন।
২১ জানুয়ারি মহাকাশযাত্রার জন্য নেওয়া জিনিসপত্রের কথা এবং মহাকাশযানের মধ্যে নানা ঘটনার কথা লিখেছেন।
২৫ জানুয়ারি মঙ্গলগ্রহের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন শঙ্কু। এরপর ডায়রিতে টাফা গ্রহ ও মহাকাশযাত্রার অন্য কথা তারিখ ছাড়াই লেখা হয়েছে কারণ, আর সময়ের হিসাব নেই।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি কাহিনিতে তোমরা প্রোফেসর শঙ্কুর মঙ্গলযাত্রার সঙ্গী প্রহ্লাদের যে পরিচয় পেয়েছ তা সংক্ষেপে লেখো।
প্রহ্লাদের পরিচয় – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি কল্পবিজ্ঞান কাহিনিতে প্রোফেসর শঙ্কুর মঙ্গলযাত্রায় তিনজন সঙ্গী ছিল। তারা হল প্রোফেসর শঙ্কুর ভৃত্য প্রহ্লাদ, প্রোফেসর শঙ্কুর বেড়াল নিউটন এবং প্রোফেসর শঙ্কু আবিষ্কৃত রোবট বিধুশেখর।
সাদাসিধে অথচ সাহসী – প্রহ্লাদ ছিল সহজসরল বোকা প্রকৃতির কিন্তু সাহসী মানুষ। তার বোকামির জন্যই প্রোফেসর শঙ্কু একবার তার ওপর নস্যাস্ত্র প্রয়োগ করে তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। আর-একবার ঘড়িতে দম দিতে গিয়ে ভুল করে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে ফেলেছিল প্রহ্লাদ। তাই সেবার প্রোফেসর শঙ্কুর রকেটযাত্রা পণ্ড হয়ে গিয়েছিল। আবার অন্যদিকে প্রহ্লাদের সরলতা প্রোফেসর শঙ্কুকে বিরাট বিপদের হাত থেকেও বাঁচিয়েছে। প্রোফেসর শঙ্কুর সাতাশ বছরের পুরোনো চাকর প্রহ্লাদের ওজন ছিল দুই মন সাত সের, যা শঙ্কুর মহাকাশযানের পক্ষে এমন কিছু ভারী নয়। সাহসী প্রহ্লাদকে তাই মঙ্গলযাত্রার সঙ্গী করেছিলেন প্রোফেসর শঙ্কু। সরল মনের প্রহ্লাদের বিশ্বাস ছিল গ্রহের নাম যখন মঙ্গল তখন সেখানে কোনো অনিষ্ট হবে না। অথচ সেই প্রহ্লাদকেই মঙ্গলে নেমে সর্বপ্রথম মঙ্গলীয় জন্তুটির তাড়া খেয়ে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছিল।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি কাহিনিতে তোমরা প্রোফেসর শঙ্কুর মঙ্গলযাত্রার সঙ্গী বিধুশেখরের যে পরিচয় পেয়েছ তা সংক্ষেপে লেখো।
- বিধুশেখরের পরিচয় – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি কল্পবিজ্ঞান কাহিনিতে প্রোফেসর শঙ্কুর মঙ্গলযাত্রায় তিনজন সঙ্গী ছিল। তারা হল প্রোফেসর শঙ্কুর ভৃত্য প্রহ্লাদ, প্রোফেসর শঙ্কুর বেড়াল নিউটন ও প্রোফেসর শঙ্কু আবিষ্কৃত রোবট বিধুশেখর।
- বুদ্ধিমান রোবট – বিধুশেখর প্রোফেসর শঙ্কুর আবিষ্কৃত রোবট। শুধু যন্ত্রের মতো কাজ করা ছাড়াও মাঝেমধ্যেই বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির প্রয়োগে বিধুশেখর চমকে দিত প্রোফেসর শঙ্কুকেই। রকেট তৈরির পরিকল্পনায় সঠিক ধাতু ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিল বিধুশেখর।
- লেখাপড়ায় পারদর্শী – প্রোফেসর শঙ্কুর কাছে বাংলা লেখার পর তাকে কেমন আছো বলে পরীক্ষা করলে সে বলে গাগোঃ অর্থাৎ ভালো।
- অবাক করা স্মৃতিশক্তি – বিধুশেখর যেভাবে গান করেছিল তাতে তার স্মরণশক্তি দেখে প্রোফেসর শঙ্কু অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। মঙ্গলগ্রহে নামার আগে বিধুশেখর বিপদ বুঝে রকেট উলটো দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। মঙ্গলগ্রহে নামার পর বিধুশেখরই প্রোফেসর শঙ্কুকে সাবধান করে দিয়েছিল।
- সাহসী প্রকৃতি – আবার মঙ্গলীয় জন্তুর সামনে সবাই যখন অসহায় তখন বিধুশেখরই তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। মঙ্গল গ্রহ থেকে রকেট অন্য গ্রহপথে যাওয়ার সময় যখন আকাশ ভরতি বিশাল গোলাকার পাথরের সামনে পড়ে, সেই সময় বিধুশেখরই প্রথম টাফা নামক গ্রহটির কথা জানায়। তবে সে বলেছিল টাফা গ্রহে উন্নত প্রাণী আছে, তার সে-কথা যদিও মেলেনি। মিথ্যা বলার লজ্জায় সে প্রোফেসর শঙ্কুর সামনে থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। বিধুশেখর রোবট হলেও যেভাবে লেখক তাকে এই গল্পে উপস্থিত করেছেন তা সত্যিই চমকপ্রদ। ব্যোমযাত্রীর ডায়রি গল্পে তার বুদ্ধি, চিন্তা, রসিকতার প্রচুর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি কাহিনিতে তোমরা প্রোফেসর শঙ্কুর মঙ্গলযাত্রার সঙ্গী নিউটনের যে পরিচয় পেয়েছ তা সংক্ষেপে লেখো।
নিউটনের পরিচয় – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি নামক কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিতে প্রোফেসর শঙ্কুর মঙ্গলযাত্রায় তিনজন সঙ্গী ছিল। তারা হল প্রোফেসর শঙ্কুর ভৃত্য প্রহ্লাদ, প্রোফেসর শঙ্কুর বেড়াল নিউটন এবং প্রোফেসর শঙ্কু আবিষ্কৃত রোবট বিধুশেখর।
প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর বেড়াল নিউটনকে সঙ্গী করেছিলেন। নিউটনের জন্য তিনি Fish Pill-এর ব্যবস্থা করেছিলেন, যার একটাতেই তার সাত দিনের খাওয়া হয়ে যেত। মঙ্গলযাত্রার পোশাক ও হেলমেট নিয়ে নিউটন প্রথমে আপত্তি জানালেও যাত্রাকালে অসংখ্য জ্বলন্ত গ্রহনক্ষত্র দেখে সে শুধু ল্যাজ নেড়েছিল। মঙ্গলগ্রহে পৌঁছোনোর পর মঙ্গলের জল খেয়ে সে প্রোফেসর শঙ্কুকে ভরসা জুগিয়েছিল। একটা মঙ্গলীয় জন্তুকে দেখে নিউটন তার হাঁটুতে কামড়ে দিলে সেটা চিৎকার করে পালায়।
ব্যোমযাত্রীর ডায়রি উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। উপন্যাসটি আমাদের মহাকাশ গবেষণা এবং মহাকাশের অন্যান্য সভ্যতার সাথে যোগাযোগের বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।