নবম শ্রেণি – বাংলা – নোঙর – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi

নোঙর কবিতায় কবি অজিত দত্ত জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। কবি বলেছেন, জীবনে একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকা জরুরি। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্থিরতা ও দৃঢ়চেতা মনোভাব থাকা প্রয়োজন। নোঙর ছাড়া নৌকা যেমন অনিশ্চিতভাবে ভেসে বেড়ায়, জীবনে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাড়া মানুষও তেমনি অনিশ্চিতভাবে জীবনের পথে ভেসে বেড়ায়। নোঙর নৌকাকে এক জায়গায় আটকে রাখে, ঠিক তেমনি, জীবনে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মানুষকে এক জায়গায় দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে।

Table of Contents

নবম শ্রেণি – বাংলা – নোঙর – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। — নোঙর এখানে কীসের প্রতীক? কবি নৌকা নিয়ে কোথায় যেতে চান? কবির আকাঙ্ক্ষা ও আক্ষেপ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?

অথবা, নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে — নোঙর বলতে কী বোঝ? নোঙর তটের কিনারে পড়ে গিয়েছে বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

প্রতীকধর্মিতা – কবি অজিত দত্ত রচিত নোঙর কবিতায় নোঙর হল জীবনের বিভিন্ন বন্ধন বা স্থিতিশীলতার প্রতীক।

গন্তব্যস্থল – কবি নৌকা নিয়ে যেতে চান সুদূর সাতসাগরের পারে। বাস্তব জীবনের বাধাবন্ধন থেকে অনেক দূরে কল্পনালোকে পাড়ি দিতে চান কবি। মধ্যযুগের সওদাগরদের মতো কবি ভাসিয়ে দিতে চান তাঁর সৃষ্টিসম্পদে ভরা নৌকা। রোজকার একঘেয়ে জীবনযাপন থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁর কল্পনাপ্রবণ মন দূর অচেনা অজানা দেশে পাড়ি দিতে চায়।
কবির আকাঙ্ক্ষা – কবির আকাঙ্ক্ষা সাতসমুদ্রপারে পাড়ি দেওয়ার। কবির ভাবুক মন সংসারের দায়িত্ব কর্তব্যের বাঁধন মানতে চায় না।
কবির আক্ষেপ – কর্মময়, সাংসারিক জীবনের বাঁধন তাঁকে কঠিনভাবে বেঁধে রাখে। স্রোতের গতি কবির এই দায়িত্বের বন্ধনকে বিদ্রুপ করে, কিন্তু কবি নিরুপায়, অসহায়। এই দাঁড় টানা বৃথা জেনেও তিনি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। তাই কবির তীব্র আক্ষেপ —

তরী ভরা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে সপ্তসিন্ধুপারে,
নোঙর কখন জানি পড়ে গেছে তটের কিনারে।
সারারাত তবু দাঁড় টানি,
তবু দাঁড় টানি।।

এভাবেই নোঙর কবিতাটি কবির আকাঙ্ক্ষার অপূর্ণতা ও আক্ষেপের বেদনায় ধূসর হয়ে উঠেছে।

এ – তরীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে। – কারা ছোটে? তারা কেন সমুদ্রের দিকে ছোটে? তরিতে তাদের মাথা ঠোকার কারণ কী?

তাদের ছুটে যাওয়া – কবি অজিত দত্তের নোঙর কবিতার অন্তর্গত উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে জোয়ারের উন্মত্ত ঢেউগুলির ছুটে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ছুটে যাওয়ার কারণ – নদীতে জোয়ারের ঢেউগুলি তটের দিকে ধেয়ে আসে, তারপর আবার তটে-বাঁধা নৌকায় ধাক্কা খেয়ে সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়। নৌকায় বাধা পেয়ে ঢেউগুলি সমুদ্রের দিকে ছোটে।

ব্যর্থতা – কবি তাঁর নৌকাখানি নিয়ে পাড়ি দিতে চান সুদূর সাতসাগরের পাড়ে — এক বাঁধনহারা জীবনের আহ্বানে। কিন্তু কবির জীবন যাকে কবিতায় নৌকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, তা আসলে সমাজ ও সংসারর একাধিক দায়দায়িত্বের বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছে। জীবনের উত্থানপতনের মতো নদীতে জোয়ারভাটার খেলা চলে। জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে আর তীরের দিকে ধেয়ে আসে ৷ তারপর নৌকার গায়ে ধাক্কা খেয়ে তারা আবার ফিরে যায় সমুদ্রের দিকে। যে সমুদ্রের দিকে এই নৌকায় কবি যাত্রা করতে চান ঢেউগুলি সেদিকেই ব্যর্থ হয়ে ছুটে চলে যায়। কবির জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নের প্রতীকরূপী এই ঢেউগুলি তাঁর মনের দুয়ারে মাথা ঠুকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। কবিকে তারা গতির জগতে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। সংসারের বন্ধনে কবি আবদ্ধ। কবির জীবন-নৌকাকে বাঁধন থেকে মুক্ত করতে চেয়েও তারা ব্যর্থ হয়ে সমুদ্রের দিকে ছুটে চলে।

আমার বাণিজ্যতরী বাঁধা পড়ে আছে – কার বাণিজ্যতরী কোথায় বাঁধা পড়ে আছে? এই বাঁধা পড়ে থাকার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ও স্থান – অজিত দত্তের নোঙর কবিতায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, জোয়ারভাটায় বাঁধা তটের কাছে কবির বাণিজ্য তরী বাঁধা পড়ে আছে।

তাৎপর্য – বাণিজ্যতরী সাধারণত পসরা নিয়ে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়। নোঙর কবিতায় তরী হল জীবনের প্রতীক। তা বাণিজ্য তরী হলে তার সঙ্গে যুক্ত হয় মানুষের সাফল্য-ব্যর্থতা, যোগ্যতা, জীবিকা ইত্যাদি। এ সব নিয়েই মানুষ তার দূরতম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সেই গন্তব্য কারও জানা নেই, তা রয়েছে সপ্তসিন্ধুপারে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে তরির চলার গতি কখনোই অনায়াস নয়। ফলে সমস্ত রাত দাঁড় টানার পরেও এগোনো সম্ভব হয় না। তটের কিনারায় নোঙর পড়ে যায়। সময়ের স্রোত কবিকে ছুয়ে যায়, কিন্তু তার গতিরোধ করতে পারে না। যত দাঁড়ই টানা হোক বা মাস্তুলে পাল বাঁধা হোক নৌকাকে চিরকাল তটের কাছে বাঁধা পড়তে হয়। মানুষ তার কর্তব্যকে দূরে সরাতে পারে না। বাস্তবজীবনের দাবিকে অস্বীকার করতে পারে না। বাণিজ্যতরীর এগোনোর পথ তাই বন্ধ হয়ে থাকে।

নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল। — কোন্ নৌকা? তবু শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী? নৌকা চিরকাল বাঁধা কেন?

উদ্দিষ্ট নৌকা – নোঙর কবিতার কবি অজিত দত্ত যে-নৌকায় সাত-সাগরের পারে পাড়ি দিতে চান, এখানে সেই নৌকার কথা বলা হয়েছে। এই নৌকাকে কবি পণ্যভরা বাণিজ্য-তরী বলে উল্লেখ করেছেন।

তবু শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য – তবু শব্দের অর্থ তা সত্ত্বেও। সারারাত দাঁড় টেনে কবি তাঁর জীবননৌকাকে তাঁর কল্পনার মায়াবী জগতে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু কবি যতই দাঁড় টানুন, যতই মাস্তুলে পাল বাঁধুন — নৌকা তবু এগোয় না। কারণ সেটি তটের কিনারে নোঙরের কাছিতে বাঁধা পড়েছে। অনেক প্রচেষ্টা, আয়োজন, সত্ত্বেও নৌকাকে লক্ষ্যের দিকে চালনা করা যায় না। তাই তবু শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

চিরকাল বাঁধা থাকার কারণ – বাস্তবে মাঝি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘাটে নৌকা বেঁধে রাখে। কিন্তু কবির জীবননৌকা চিরকালের জন্য সংসারের তটে বাঁধা পড়েছে। ইচ্ছে করলেও তিনি নোঙরের বন্ধন ছিন্ন করে তাঁর কল্পনার স্বপ্নজগতে ভেসে পড়তে পারেন না। তাঁর সামাজিক- পারিবারিক জীবন রয়েছে। সেখানে কবির ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে চেপে রাখতে হয়। বাস্তব জগতের অনেক দায়িত্ব, সংসারজীবনে সম্পর্কের প্রতি দায়বদ্ধতা ইত্যাদির দৃঢ় বাঁধনে কবির জীবননৌকা চিরকাল বাঁধা।

স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে। — স্রোতের বিদ্রুপ কবিকে কীভাবে ব্যথিত করেছে আলোচনা করো।

অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা – কবি অজিত দত্ত নোঙর কবিতায় তাঁর নৌকা নিয়ে সুদূর সাতসমুদ্রপারে পাড়ি দিতে চান। তাঁর সৃষ্টিশীল চঞ্চল মন অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে চায়। কিন্তু তাঁর অজান্তেই কখন নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। বাস্তবজগতের তট ছেড়ে তাঁর জীবন-নৌকা এগোয় না একটুও। এ-নৌকা নোঙরের কাছিতে চিরকাল বাঁধা।

সীমা ছাড়িয়ে অসীমে পাড়ি – তাঁর রোমান্টিক মন সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে অসীমে পাড়ি দিতে চায়। তাই তিনি মাস্তুলে পাল বাঁধেন, সারারাত অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। যদিও তিনি জানেন এই প্রচেষ্টা বৃথা, তবু তিনি নিজের হৃদয়কে শান্ত করতে পারেন না। তাঁর জীবনের নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি সমুদ্রের গর্জনে কেঁপে ওঠে। কবির রোমান্টিক মন চঞ্চল হয়ে ওঠে আর কবি ঘনঘন দাঁড় টানেন। কিন্তু প্রতিবার জলে দাঁড় ফেললেই কবি শোনেন স্রোতের ঠাট্টা-উপহাস।

স্থিতিকে বিদ্রুপ – কবির জীবন-নৌকা স্থির, কিন্তু স্রোত গতিশীল। তাই গতি যেন স্থিতিকে বিদ্রুপ করে। কবি আটকা পড়ে আছেন সংসারের তটভূমিতে। মন চাইলেও কখনোই সেই বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারবেন না তিনি। তাই অবিরাম জলস্রোত যেন কবিকে প্রতিনিয়ত বিদ্রুপে বিদ্ধ করে চলেছে। এভাবেই স্রোতের বিদ্রুপ নিরুপায়, অসহায় কবিকে ব্যথিত করেছে।

সারারাত তবু দাঁড় টানি — কবি সারারাত দাঁড় টানেন কেন? তবু কথাটি বলার কারণ কী? এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির কোন্ মানসিকতা ফুটে উঠেছে?

দাঁড় টানার কারণ – কবি অজিত দত্ত নোঙর কবিতায় বলেছেন যে নৌকাভরা পণ্য নিয়ে তিনি সাতসাগরের পাড়ে পাড়ি দিতে চান। তাই তিনি সারারাত দাঁড় টানেন।

তবু বলার কারণ – তবু শব্দের অর্থ তা সত্ত্বেও। পণ্যভরা নৌকা নিয়ে সাতসাগরপারে যাওয়ার বাসনা ছিল কবির। কিন্তু কখন তটের কিনারে নোঙর পড়ে গেছে তিনি বুঝতেও পারেননি। নৌকা যে আর তট ছেড়ে যাবে না কখনও, তা তিনি জানেন। তবু মন যেন এই সত্য মানতে চায় না। কঠিন সত্যটি জানা সত্ত্বেও কবি সারারাত দাঁড় টেনে চলেন। এই কারণেই তবু কথাটি বলা হয়েছে।

কবি মানসিকতার পরিচয় – এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির অদম্য মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি জানেন, সমাজ-সংসারের নানা বন্ধন তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। তবু তাঁর কল্পনাবিলাসী মন বাঁধনহারা জীবনের স্বাদ পেতে চায়। তাঁর চারপাশ বাস্তব বলে এই দাঁড় টানা বৃথা, কিন্তু তাঁর অবচেতন মন আশা-স্বপ্নের জাল বুনে চলে। তাই তিনি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। কবি জানেন, তাঁর বাসনা হয়তো কোনোদিনই পুরণ হবে না, তবু স্বপ্নময় জীবনের অনুসন্ধানে তাঁর ক্লান্তি নেই। দূর সাগরে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে।

কবি অজিত দত্তের নোঙর কবিতাটি একটি রূপকধর্মী কবিতা। এতে কবি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থিতি ও অস্থিতির রূপক হিসেবে নোঙরের কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন,

কবিতায় কবি বলেছেন, জীবনের সমুদ্রে নোঙর ছাড়া জাহাজের মতোই আমরা ভেসে চলেছি। জীবনের নানা ঝড়-ঝাপটায় আমাদের ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নোঙর থাকলে আমরা সেই ঝড়-ঝাপটায়ও স্থির থাকতে পারি। নোঙর আমাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমরা জীবনের সমুদ্রে যাত্রা করতে পারি।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer