আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের তৃতীয় পাঠের দ্বিতীয় অধ্যায়, ‘নোঙর’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

‘নোঙর’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
ভূমিকা – কবিতার শিরোনাম তার অন্তর্নিহিত ভাব বা ব্যঞ্জনাকে আভাসিত করে। কবি অজিত দত্তের ‘শাদা মেঘ কালো পাহাড়’ কাব্যগ্রন্থের ‘নোঙর’ কবিতাটিও এর ব্যতিক্রম নয়।
রূপক – নোঙর হল লোহার তৈরি ভারী একটি বস্তু যার সাহায্যে নৌকা বা জাহাজ বাঁধা হয়। কাছি বা শিকল দিয়ে নোঙরের সঙ্গে নৌকাকে প্রয়োজন অনুযায়ী বেঁধে রাখা হয়। নোঙরের বন্ধন ছিন্ন করে নৌকা এগিয়ে যেতে পারে না। অনুরূপভাবে এই জগৎ সংসারে মানুষও বাঁধা পড়ে থাকে নানান পারিপার্শ্বিক বন্ধনে। জীবনে কোনও মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলেও যে বন্ধন উপেক্ষা করা মানুষের পক্ষে সর্বদা সম্ভব হয় না। আলোচ্য কবিতায় নোঙর হল সেই প্রতিবন্ধকতা যা মানুষকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেয় না। আর এই সূত্রেই কবিতায় অভিব্যক্ত কবির অনুভবকে ব্যঞ্জিত করে ‘নোঙর’ নামকরণটি।
কবিতার বিষয় – কবি চান তরি নিয়ে সাতসাগরের পারে যাত্রা করতে, কিন্তু সংসার সীমান্তে তিনি বাঁধা পড়ে আছেন। যতই দাঁড় টানেন, যতই চেষ্টা করেন সেই বন্ধন ছিন্ন করতে পারেন না। রোমান্টিক কবিমন চিরচঞ্চল। আজীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-সহ তাঁর সমূহ সঞ্চয় তথা বাণিজ্য তরিটিকে নিয়ে কবি পরিচিত জগতের গণ্ডি পেরিয়ে চলে যেতে চান দূর দেশে নতুনের সন্ধানে। কিন্তু পারেন না। এই ব্যর্থতা, অসহায়তা কবির হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে।
নামকরণের সার্থকতা – নোঙর স্থবিরতার প্রতীক, প্রতীক প্রতিবন্ধকতা আর বন্ধনেরও। দাঁড় টেনে, মাস্তুলে পাল বেঁধে সারারাত শত চেষ্টা করেও কবি তাঁর তরিটি চলমান রাখতে ব্যর্থ হন। নোঙরের কাছি চিরকাল বাঁধা রয়ে যায় তটের কিনারে। অর্থাৎ জীবন প্রথাগত চিন্তা-চেতনা-সংস্কারে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রতিপদক্ষেপে কবি অনুভব করেন ব্যর্থতার গ্লানি। জীবনের ধর্মে তিনি এগিয়ে চলার চেষ্টা করে যান ঠিকই, কিন্তু নোঙরের শক্তিশালী বন্ধন থেকে অর্থাৎ এই মায়াময় জগতের অবিচ্ছেদ্য আকর্ষণ থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত করতে পারেন না। কবি জীবনের এই স্তব্ধতা, গতিহীনতা ‘নোঙর’ নামকরণটিকে ব্যঞ্জনাধর্মী এবং সার্থক করে তোলে।
‘নোঙর’ কী ধরনের কবিতা? এ কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় পরিস্ফুট করো।
রূপকধর্মী কবিতা – কবি অজিত দত্তের লেখা ‘নোঙর’ রূপকধর্মী কবিতা। যে সমস্ত মানুষ জীবনে কোনো মহৎ লক্ষে পৌঁছাতে চায়, কিন্তু পারিপার্শ্বিক বন্ধন’ তার যাত্রাপথের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, ‘নোঙর’ কবিতায় বিভিন্ন প্রতীকের মাধ্যমে সেইসব মানুষের অনুভূতির কথাই ব্যক্ত হয়েছে। অতএব কবিতাটি প্রতীকধর্মী।
কবিতার মূল বক্তব্য – দূর সিন্ধুপারে যাওয়ার ইচ্ছা যে মানুষের প্রবল, সে তটের কিনারে নোঙর পড়েছে জেনেও ‘মিছে’ দাঁড় টানে। বহমান সময়-সমুদ্রে কখনও জোয়ার আসে কখনও ভাটা। সেই জোয়ার-ভাটা আলাদা-আলাদা মাত্রায় স্পর্শ করে যায় কবির আজীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা সমেত তাঁর সমূহ সঞ্চয় তথা বাণিজ্যতরিটিকে। কবির আজীবনের অভিজ্ঞতাপূর্ণ জীবন-তরিটি কিন্তু কখনোই তাঁর নোঙরের বন্ধনকে আলগা করতে পারে না। দাঁড় টেনে, মাস্তুলে পাল বেঁধেও কবির নৌকা এগোয় না এতটুকু। তাঁর সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায়। নোঙরের কাছি চিরকাল বাঁধা রয়ে যায় তটের কিনারে। কবির মুহূর্তের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দেয় সময় সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, প্রতি পদক্ষেপে তিনি অনুভব করেন ব্যর্থতার গ্লানি। তিনি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য যতই নির্ভুল এবং অব্যর্থ পথের সন্ধান করতে চান, নোঙরের শক্তিশালী বন্ধন থেকে কোনোভাবেই নিজেক মুক্ত করতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত কোনো ‘তারা’ অর্থাৎ দিকনির্দেশক তাঁকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে না। দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতায় কবি বুঝে যান সমস্ত চেষ্টাই আসলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, নোঙরের শৃঙ্খল থেকে কিছুতেই তাঁর মুক্তি নেই। কিন্তু তার পরেও জীবনের পরম গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তাঁকে দাঁড় টানতেই হয়।
‘নোঙর’ কবিতার বিষয়বস্তু অবলম্বনে কবির মানসিকতার পরিচয় দাও।
অথবা, ‘নোঙর’ কবিতায় কবির জীবনের অপূর্ণতার বেদনা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
ভূমিকা – কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নোঙর’ কবিতায় একদিকে আছে বন্ধনের ছবি অন্যদিকে সেই বন্ধন মুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্নপূরণের ব্যর্থতার বিষাদ।।
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কবি আজীবনের সঞ্চয় তথা বাণিজ্যতরিটি নিয়ে পাড়ি দিতে চেয়েছেন দূর সিন্ধুপারে। কিন্তু –
“পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে
নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।”
অবিরাম দাঁড় টানা – সমুদ্রের ঢেউগুলি কবির কাছে গতির বার্তা নিয়ে আসে। তাই কবি তাঁর জীবনতরিকে অভীষ্ট কল্পলোকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে সারারাত প্রাণপণে অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। মাস্তুলে পাল বাঁধেন, তারা দেখে দিক ঠিক করেন। কিন্তু তরিখানি তাঁর সচল হয় না।
আশা পূরণের ব্যর্থ চেষ্টা – সাংসারিক, সামাজিক মানুষ হিসেবে কবি নানারূপ কাজের মায়ামমতার বন্ধনে বাঁধা। অথচ তাঁর রোমান্টিক কবিসত্তা সুদূরের পিয়াসী। সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে তিনি চলে যেতে চান কল্পিত গন্তব্যে। কিন্তু কবির প্রত্যাশা জাগতিক প্রতিবন্ধকতাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। যে আশা পূর্ণ হবে না কখনও, তারই জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান জীবনভর। অবশেষে বন্ধনমুক্তির ব্যর্থতায় বিষণ্ণ, অসহায় হয়ে পড়েন।
উপসংহার – এই অসহায়তা, বিষণ্ণতা রোমান্টিক কবির লক্ষণ। অজিত দত্ত আদ্যন্ত রোমান্টিক কবি, চিরচঞ্চল তাঁর মন। বাস্তব ও কল্পনার সংঘর্ষে, স্থিতি ও গতির দ্বন্দ্বে কবির সেই চিরচঞ্চল, অতৃপ্ত, বিষণ্ণ, রোমান্টিক মানসিকতা আলোচ্য কবিতায় ধরা পড়েছে।
রূপকধর্মী কবিতা হিসেবে ‘নোঙর’ কবিতাটির সার্থকতা বিচার করো।
ভূমিকা – রূপক রচনায় দুটি ভাব বা বক্তব্য সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হয়। উপরের বক্তব্যটি গৌণ, মুখ্য হল নিহিত বক্তব্যটি। আপাত বক্তব্যটির মোড়কে রচনাকার অন্তর্নিহিত কথাটি বলতে চান।
কবিতার বক্তব্য – কবি অজিত দত্তের ‘নোঙর’ কবিতাটির আপাত বক্তব্য সাধারণ। কবি নৌকা নিয়ে পাড়ি দিতে চান দূর সাগরের পারে, কিন্তু তটের কিনারে নোঙর পড়ে গেছে। নোঙরের কাছিতে তাঁর নৌকা বাঁধা। তিনি সারারাত বৃথা দাঁড় টেনে চলেছেন। জোয়ারের ঢেউগুলি সমুদ্রপানে ছুটে চলেছে। ভাটার সময় সমুদ্রের স্রোত নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। কবি দাঁড় টানেন, মাস্তুলে পাল বাঁধেন; তবু নৌকা সচল হয় না। ঢেউগুলি নৌকায় মাথা ঠোকে, স্রোত তাঁকে যেন বিদ্রুপ করে। পণ্য ভরা বাণিজ্যতরি নিয়ে কবির আর সপ্তসিন্ধু পাড়ি দেওয়া হয় না –
“তরী ভরা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে সপ্তসিন্ধুপারে,
নোঙর কখন জানি পড়ে গেছে তটের কিনারে।”
অন্তর্নিহিত বক্তব্য – এই আপাত বক্তব্যের আড়ালে কবি বলতে চেয়েছেন – কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে মানুষ যখন আজীবনের সঞ্চয় তথা বাণিজ্যতরিটি নিয়ে পাড়ি দিতে চায় দূর সিন্ধুপারে, তখন নোঙর অর্থাৎ জাগতিক বন্ধন সে যাত্রাপথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। বহমান সময়-সমুদ্রে জোয়ার-ভাটার মতো আসা সুখ-দুঃখ ভিন্ন-ভিন্ন মাত্রায় স্পর্শ করে যায় তার সুদূর পিয়াসী মনকে। দাঁড় টেনে, মাস্তুলে পাল বেঁধে-জীবনভর বিরামহীন চেষ্টা চালিয়েও নোঙরের বন্ধন আলগা করতে পারে না সে। তার সব চেষ্টাই চালিয়েও নোঙরের বন্ধন আলগা করতে পারে না সে। তার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায় –
“যতই না দাঁড় টানি, যতই মাস্তুলে বাঁধি পাল,
নোঙরের কাছি বাঁধা তবু ও নৌকা চিরকাল।”
প্রতি পদক্ষেপে তাকে অনুভব করতে হয় ব্যর্থতার গ্লানি।
উপসংহার – এই ব্যর্থতা কবিকে বিষণ্ণ করে। বন্ধনমুক্তির ব্যাকুলতা নিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দেয় অসহায় মানুষ। নোঙর হল বন্ধন বা স্থিতি আর দূর সিন্ধুপার সেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দ্যোতক। এই দুয়ের মাঝে নিশ্চল জীবনতরি। এমনই দ্বিস্তরীয় ভাবনায় আলোচ্য রচনাটি রূপক কবিতা হিসেবে সার্থকতা লাভ করেছে।
‘নোঙর’ শব্দটি কীসের প্রতীক? প্রসঙ্গক্রমে মধ্যবিত্ত মানুষের চাওয়াপাওয়া বিষয়টি কীভাবে পাঠ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
নোঙর শব্দটি যার প্রতীক – কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নোঙর’ কবিতায় ‘নোঙর’ শব্দটি বন্ধন বা প্রতিবন্ধকতার প্রতীক। এই বন্ধন অদৃশ্য, উপলব্ধির যোগ্য। আক্ষরিক অর্থে নোঙর নৌকা ইত্যাদি জলযানকে নিশ্চল করে রাখে। তার সঙ্গে কাছি দিয়ে বাঁধা থাকে নৌকা। মানুষের জীবনও নৌকার মতো, তা বাঁধা থাকে জাগতিক নানা মায়াবন্ধনে। পারিবারিক, সামাজিক নানা বন্ধনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে মানুষ।
মধ্যবিত্ত মানুষের চাওয়াপাওয়া – ‘নোঙর’ কবিতায় মধ্যবিত্ত মানুষের চাওয়াপাওয়ার বিষয়টি শিল্পরূপ লাভ করেছে। মধ্যবিত্ত জীবন ও মানসিকতায় সাধ আর সাধ্যের মধ্যে চিরকাল দূরত্ব থেকে যায়। মন যা চায় তা আমরা করে উঠতে পারি না। আর্থিক, সামাজিক, মানসিক নানারূপ বাধা আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়। গতানুগতিক জীবনযাপনে মধ্যবিত্ত মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। মানুষের সৃষ্টিশীল, কল্পনাপ্রবণ মন দূর সমুদ্রপারে পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু পিছুটান আর কর্তব্যের বাঁধন সে সাধ পূরণে বাধা দেয় –
“পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে
নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।”
‘যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না’ – এই চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ্বে ক্ষত বিক্ষত হয় মধ্যবিত্ত জীবন। কাম্য বস্তু পাওয়া যাবে না জেনেও বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যায় মানুষ। অপ্রাপ্তি বা অতৃপ্তির বেদনা নিঃসঙ্গ রাতে মধ্যবিত্ত মানুষকে বিষণ্ণ করে তোলে। দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতায় একসময়ে সে বুঝে যায় সমস্ত চেষ্টাই আসলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, জাগতিক বন্ধন থেকে কিছুতেই তার মুক্তি নেই। কিন্তু তারপরেও জীবনের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানোর অভীপ্সায় সে জীবনতরির দাঁড় টেনে যায়।
‘নোঙর’ কবিতায় সমুদ্র, নদী, নৌকা ও নৌকার অনুষঙ্গগুলির সাহায্যে যে-সমস্ত চিত্রকল্প গড়ে উঠেছে সেগুলি আলোচনা করো।
ভূমিকা – ‘চিত্রকল্প’ কথাটি নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। চিত্রকল্প হল ‘চিত্রের মতো’ বা ‘কল্পনা দ্বারা রচিত চিত্র’। এর অন্য নাম বাকপ্রতিমা। ‘বাক্’ অর্থাৎ কথা দিয়ে তৈরি একটি অবয়ব।
চিত্রকল্প – ‘নোঙর’ কবিতায় কবি অজিত দত্ত কথা দিয়ে চমৎকার কিছু ছবি এঁকেছেন। নদী-সমুদ্র, স্রোত-ঢেউ, নৌকা ও নৌকার বিভিন্ন অনুষঙ্গ আলোচ্য কবিতায় বক্তব্যের সহায়ক হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এগুলির সাহায্যে গড়ে উঠেছে অসাধারণ চিত্রকল্প। যেমন – সমুদ্র-নদী-নৌকা-দাঁড়-মাস্তুল-পাল ইত্যাদি মিলে জলপথে যাত্রার একটি পরিবেশ তৈরি করেছে। পাঠকের চোখের সামনে যা একটা অপরূপ ছবি ফুটিয়ে তুলেছে। নোঙর, কাছি, তট স্থবিরতার বা স্তব্ধতার ছবি এঁকে দিয়েছে। জোয়ারের ঢেউয়ের ফুলে ফুলে ওঠা আর তরিতে মাথা ঠুকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে মানুষের ব্যর্থতাবোধের চিত্র আরোপিত হয়েছে। ফলে অপূর্ব চিত্রকল্প গড়ে উঠেছে। নিস্তব্ধ মুহূর্তে সাগরের গর্জন, দাঁড়ের নিক্ষেপে স্রোতের বিদ্রুপ আর-একটি অসাধারণ চিত্রকল্প। কবি কয়েকটি জড়প্রকৃতির মধ্যে বা বস্তুর মধ্যে প্রাণসত্তা আরোপ করে তাদের জীবন্ত করে তুলেছেন। ‘বাণিজ্য-তরী’, ‘তরী ভরা পণ্য’, ‘সপ্তসিন্ধুপারে’ প্রভৃতি কথার মধ্যে ফুটে ওঠে কালসমুদ্রে জীবনতরীর প্রবহমানতার ছবি। জলপথ, জলযান আর তার নানা অনুষঙ্গ প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে কবি ব্যঞ্জনাময় এক-একটি চিত্রকল্প অপূর্ব দক্ষতায় নির্মাণ করেছেন। কবিতাটির মর্মার্থ অনুধাবনে এই চিত্রকল্পগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
‘নোঙর’ কবিতায় স্থিতি ও গতির চিত্র কীভাবে ধরা পড়েছে বুঝিয়ে দাও।
ভূমিকা – কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নোঙর’ কবিতায় স্থিতি ও গতির চিত্র সুচারুভাবে আঁকা হয়েছে। সমগ্র কবিতায় ছড়িয়ে আছে স্থিতি ও গতির নানা অনুষঙ্গ। স্থিতি ও গতির দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত মানবহৃদয়ের চিত্র তুলে ধরা আলোচ্য কবিতার অন্যতম ভাববস্তু।
বাস্তব জগতের স্থিতিশীলতা – পরিচিত জগতের সীমানায় কবির মন আবদ্ধ থাকতে চায় না। তরি নিয়ে তিনি সাতসমুদ্রপারে যাত্রা করতে চান। কিন্তু অজান্তেই কখন যেন সেই তরি নোঙরের কাছিতে বাঁধা পড়ে গেছে –
‘নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।’
নোঙর আর তটের উল্লেখের মাধ্যমে কবি বাস্তবজগতের স্থিতিশীলতার চিত্র তুলে ধরেছেন। নিশ্চল নৌকাও স্থিতিকেই চিহ্নিত করে।
অন্যদিকে জোয়ারের ঢেউগুলি গতির বার্তা নিয়ে আসে। কবির নিশ্চল জীবনে অভিঘাত হেনে তাকে সচল করতে চায়। তরি তবু চলে না। বদ্ধ তরিতে মাথা ঠুকে অভিমানী ঢেউগুলি ফিরে যায় গতির জগতে। জোয়ারভাটা আসে যায়। নদী আর সমুদ্রের স্রোত চিরচঞ্চল, গতিশীল। কবির রোমান্টিক মনও গতিশীল। কিন্তু বাস্তবতার স্থবির পটভূমিতে কবি অসংখ্য বন্ধনে বন্দি, তাঁর জীবনতরি গতিহারা। রাতের নিস্তব্ধ নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলি কবির জীবনে গতির আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। সারারাত তিনি অবিরাম নিক্ষেপ করে চলেন দাঁড়। কিন্তু তাঁর ব্যর্থ প্রচেষ্টাকে বিদ্রুপ করে স্রোত –
“নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি সাগরগর্জনে ওঠে কেঁপে,
স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।”
গতির বার্তা – দাঁড় টেনে টেনে, পাল তুলে, তারার দিকে চেয়ে নিশানা স্থির করেও কবি দূর সমুদ্রপারে পাড়ি দিতে ব্যর্থ হন। এই ব্যর্থতার বেদনায় বিষণ্ণ কবি গতিশীল জীবনধর্মে দীক্ষিত বলেই জীবনের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছোনোর আশায় তবু দাঁড় টেনে যান। এভাবেই ‘নোঙর’ কবিতার চিরকালীন গতিময়তার কথা ব্যঞ্জিত হয়েছে।
‘নোঙর’ কবিতা অবলম্বনে কবির সমুদ্রযাত্রার উদ্যোগ এবং ব্যর্থতার পরিচয় দাও।
সমুদ্রযাত্রার উদ্যোগ – ‘নোঙর’ কবিতায় রোমান্টিক কবি অজিত দত্তের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছোনোর অভীপ্সা প্রকাশিত হয়েছে। পারিপার্শ্বিক বন্ধনের সীমানা পেরিয়ে তিনি চলে যেতে চান সপ্তসিন্ধুপারে। জলপথে কবির যাত্রা, তাই নৌকা প্রস্তুত রেখেছেন। সেই নৌকায় সারাজীবনের সঞ্চয় বোঝাই করেছেন, মাস্তুলে পাল বেঁধেছেন, হাতের মুঠোয় ধরেছেন দাঁড়। –
“পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে
নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।”
কিন্তু নিজের অজান্তে কখন তটের কিনারে নোঙর পড়ে গেছে। কবির সমদূরপিয়াসী মন বাঁধা পড়ে গেছে অদৃশ্য জাগতিক বন্ধনে। গতিশীল জীবনধর্মে দীক্ষিত আশাবাদী কবি থেমে থাকতে চান না, প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে তিনি অবিরত জীবনতরির দাঁড় টানেন।
ব্যর্থতা – যাত্রার মুহূর্তে দাঁড় বাইতে গিয়ে কবি অনুভব করেন নিজেরই অজান্তে কখন নোঙর পড়ে গেছে তটের কিনারে। কিন্তু তাঁর মন এই বন্ধনকে মেনে নিতে চায় না। তাই কবি সারারাত মিছে দাঁড় টানেন। জোয়ারভাটায় বাঁধা জীবনের এ তটে কবি নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকেন। তাঁর চোখের সামনে ঢেউগুলি দুরন্ত গতির বার্তা নিয়ে আসে আর সাড়া না পেয়ে ফিরে যায়। চঞ্চল স্রোত কবির স্থবিরতাকে বিদ্রুপ করে। নিস্তব্ধ রাতে কবি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। বারবার ব্যর্থ হয়েও তিনি গন্তব্যে পৌঁছোনোর আশা ও চেষ্টা ত্যাগ করেন না। কিন্তু তিনি জানেন এই দাঁড় টানা মিছে বা বৃথা। অসহায়, নিরুপায় কবির মন ব্যর্থতার বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।
‘পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে’ – দূর সিন্ধুপারে পাড়ি দেবার আকাঙ্ক্ষা কবিতায় কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?
কবির আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি না ঘটা – ‘নোঙর’ কবিতায় কবি অজিত দত্ত দূর সিন্ধুপারে পাড়ি দেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। গণ্ডিবদ্ধ জগতে গতানুগতিক জীবনযাপনে কবি আটকে থাকতে চান না। তিনি তাঁর নৌকা নিয়ে দূর সমুদ্রপারে যাত্রা করতে চান। কিন্তু যাত্রা করতে গিয়ে তিনি অনুভব করেন পিছুটান। অজান্তে কখন যেন বাঁধা পড়ে গেছে তাঁর তরিখানি –
“পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে
নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।”
রাধা পেয়ে কবিচিত্ত আরও ব্যাকুল হয়ে ওঠে, তাঁর আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হয়। ঢেউগুলি গতির বার্তা নিয়ে আসে। কবিকে স্থির থাকতে দেয় না। তিনি সারারাত প্রাণপণে দাঁড় টানেন। মাস্তুলে পাল বাঁধেন। তারার দিকে চেয়ে দিক স্থির করেন। কিন্তু তাঁর তরিখানি সচল হয় না। কবির আকাঙ্ক্ষারও নিবৃত্তি ঘটে না।
সুদূরে পাড়ি দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা – নিঃসঙ্গ-নিস্তব্ধ নিশিথে কবির রোমান্টিকসত্তা জেগে ওঠে। সুদূরের আহ্বান তিনি অস্বীকার করতে পারেন না। অদৃশ্য জাগতিক বন্ধন ছিন্ন করে, সমূহ প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তিনি চলে যেতে চান দূর সিন্ধুপারে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতায় একসময় কবি বুঝে যান সমস্ত চেষ্টাই আসলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, নোঙরের শৃঙ্খল থেকে তাঁর কিছুতেই মুক্তি নেই। বন্ধনমুক্তির ব্যর্থতায় তিনি অসহায় বোধ করেন, বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। কিন্তু তারপরেও সুদূরে পাড়ি দেবার আকাঙ্খায় দাঁড় টানতেই থাকেন। এভাবেই আলোচ্য কবিতায় সুদূরে পাড়ি দেওয়ার আকাঙ্ক্ষার মধ্যে দিয়ে চিরকালীন মুক্তির বাসনা প্রতিভাত হয়েছে।
‘সারারাত মিছে দাঁড় টানি’ – কবি ‘দাঁড় টানা’কে ‘মিছে’ বলেছেন কেন? মিছে জেনেও কবি কেন দাঁড় টানেন?
অথবা, ‘নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে’ – নোঙর বলতে কী বোঝো? তট শব্দের অর্থ কী? নোঙর তটের কিনারে পড়ে যাওয়ার ফলাফল কী হয়েছিল?
দাঁড় টানাকে বলার কারণ – ‘মিছে’ কবি অজিত দত্ত ‘নোঙর’ কবিতায় বলেছেন যে তিনি মিছে দাঁড় টেনে চলেছেন। নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দাঁড় টানার প্রয়োজন। কিন্তু যে নৌকা নোঙরের সঙ্গে কাছি দিয়ে বাঁধা তার দাঁড় টেনে কী লাভ! আলোচ্য কবিতায় দেখা যায় কবির নৌকাও তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়ে আছে। নোঙর শব্দের অর্থ হল অঙ্কুশের ন্যায় লোহার ফলক যা দিয়ে নৌকা বা অন্যান্য জলযানকে বেঁধে রাখা হয়। তট শব্দের অর্থ নদীর কূল। তিনি যতই দাঁড় টানুন সে নৌকা সচল হবে না। নৌকা কূলের কিনারায় স্থির হয়ে থাকবে। তাই নোঙরের কাছিতে বাঁধা নৌকার দাঁড় টানাকে মিছে অর্থাৎ বৃথা বলেছেন কবি।
দাঁড় টানার কারণ – বৃথা আশা যেমন মরতে মরতেও মরে না, তেমনই বন্ধ নৌকার দাঁড় টানা মিছে জেনেও কবি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। মানুষ নিজের পরাজয়, ব্যর্থতা বা বাসনার অপূর্ণতাকে সহজে মেনে নিতে পারে না। কবিও স্বভাবতই আশাবাদী। তাঁর রোমান্টিক ও সৃষ্টিশীল মন বাস্তবকে সহজে মানতে পারে না। সুদূর কল্পলোক তাঁকে ডাকে। তিনি সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে চলে যেতে চান দূর সমুদ্রপারে। নোঙরের মতো অদৃশ্য মায়াবন্ধন তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। কবির বাস্তব ও সচেতন সত্তার সঙ্গে রোমান্টিক সত্তার দ্বন্দ্ব বাঁধে। কঠিন বাস্তবকে উপেক্ষা করার জন্য তিনি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান। নিঃসঙ্গ-নিস্তব্ধ রাতে তাঁর কল্পনাপ্রবণ কবিসত্তা জেগে ওঠে। বাস্তব ও কল্পনার সংঘর্ষে, স্থিতি ও গতির দ্বন্দ্বে কবির চিরচঞ্চল, অতৃপ্ত মন যেন কেবলই ভাবে সেই অসীমের সন্ধান তিনি পাবেনই। মিছে জেনেও তাই কবি দাঁড় টানেন।
‘তারপর ভাঁটার শোষণ’ – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অংশটির তাৎপর্য বিচার করো।
প্রসঙ্গ – উদ্ধৃত অংশটি কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নোঙর’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। নদী ও সমুদ্রে জোয়ারভাটা নিয়মিত ঘটনা। ভাটার সময় নদী-সমুদ্রের জলসীমা অপেক্ষাকৃত নেমে যায়। ভাটা এসে শোষণ করে জলধারা। প্রাণবন্ত স্রোতের সত্তাকে নিস্তেজ করে দেয় ভাটা। দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে গিয়ে কবি টের পান নোঙরে তাঁর নৌকা বাঁধা পড়েছে। সেই নৌকাকে সচল করার চেষ্টা করেন কবি। ভাটার শোষণ কবির ব্যর্থতাকেই যেন নির্দেশ করতে চায়। এই প্রসঙ্গেই কবি উদ্ধৃত অংশটি লিখেছেন।
তাৎপর্য – চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণ-বিকর্ষণে নদীর জল বাড়ে কমে। জোয়ারের সময়ে যেমন জলস্ফীতি ঘটে, তেমনই ভাটার সময়ে সেই স্ফীতজল হ্রাস পায়। ভাটা যেন নদী-সমুদ্রের জল শোষণ করে প্রাণবন্ত স্রোতকে স্থবির করে দেয়। মানুষের জীবনেও আসে উত্থানপতন, আশানিরাশার দ্বন্দ্ব। কবি একজন সৃষ্টিশীল, ভাবুক প্রকৃতির, রোমান্টিক চেতনার মানুষ। দূর সমুদ্রপারে পাড়ি দেবার আকাঙ্ক্ষায়-উত্তেজনায় তাঁর হৃদয়ে আশা-আনন্দের জোয়ার আসে। কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারেন তাঁর নৌকা নোঙরে বাঁধা, দাঁড় টানা বৃথা-তখনই ভাটার শোষণের মতো তাঁর উচ্ছ্বাস নিষ্প্রভ হয়ে যায়। গতিময় উন্মুক্ত বহির্জগৎ তাঁকে হাতছানি দেয়, কিন্তু তিনি তাঁর সীমাবদ্ধ জগতে অসংখ্য বন্ধনে বন্দি থাকেন। ভাটার শোষণ তাঁর প্রবল আশাকে প্রতিহত করলেও সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারে না। আশায় বুক বেঁধে কবি আবার দাঁড় টানেন –
“সারারাত তবু দাঁড় টানি,
তবু দাঁড় টানি।।”
মিছে জেনেও এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে আশাবাদী কবি যেন তাঁর ব্যর্থতাকে ভুলতে চান।
‘জোয়ার-ভাঁটায় বাঁধা এ-তটের কাছে
আমার বাণিজ্য-তরী বাঁধা পড়ে আছে।’
– কার তরি, কোন্ তটে বাঁধা পড়ে আছে? জোয়ার ও ভাটায় কীভাবে তা বাঁধা আছে? এর ফলে কী ঘটছে?
যার তরি, যেখানে বাঁধা আছে – অজিত দত্তের ‘নোঙর’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশে স্বয়ং কবির তরির কথা বলা হয়েছে। সমাজ-সংসারের সীমানায় বাস্তব জগতের নদীতটে কবির তরী বাঁধা পড়ে আছে।
জোয়ার ও ভাটায় যা বাঁধা আছে – কবি দূর সমুদ্রপারে পাড়ি দিতে চান তাঁর বাণিজ্যতরি নিয়ে। কিন্তু তটের কিনারে তাঁর নৌকা নোঙরে বাঁধা পড়ে গেছে। জোয়ারের ঢেউগুলি যেন সেই নৌকাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় সমুদ্রের দিকে। অভিমানে তারা ফুলে ফুলে ওঠে আর ব্যর্থতায় তরিতে মাথা ঠোকে। কবির জীবন সমাজ-সংসারের হাজার কাজের মধ্যে আবদ্ধ। বাস্তবজীবনের উত্থানপতন, আশানিরাশার দ্বন্দ্ব জোয়ারভাটার মতোই কবিসত্তাকে আন্দোলিত করে। এভাবেই চাওয়া পাওয়া, সফলতা-বিফলতার জোয়ারভাটায় কবির জীবনতরি সংসারের তটে দোদুল্যমান।
ফলে যা ঘটেছে – জোয়ারভাটায় বাঁধা তটের কাছে কবির তরি আটকে থাকায় কবি তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারছেন না। সারারাত তিনি অবিরাম দাঁড় টানছেন, কিন্তু সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। মাস্তুলে পাল টাঙানো, তারা দেখে দিক-নিরূপণ করাও ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ –
‘নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।’
আশাবাদী কবিকে বারবার তাই নিরাশ হতে হয়েছে।
‘জোয়ার-ভাঁটায় বাঁধা এ-তটের কাছে
আমার বাণিজ্য-তরী বাঁধা পড়ে আছে।’
এ কবিতায় জীবনের পথচলা ও বাণিজ্যতরির প্রসঙ্গ কীভাবে সম্পর্কিত হয়েছে?
কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নোঙর’ কবিতায় মানবজীবনের গতিময়তা চলমান বাণিজ্যতরির ইঙ্গিতে ব্যঞ্জিত। স্থিতি ও গতির, চাওয়া ও পাওয়ার চিরন্তন দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হয় মানবহৃদয়। জীবনের পথে চলতে চলতে নানা বন্ধন পাকে পাকে জড়িয়ে ফেলে মানুষকে। পরিবার-সমাজ-কর্মজগতের নানা দায়িত্ব কর্তব্য তাঁকে বেঁধে রাখে। জীবনে নানা উত্থানপতন, আশানিরাশার দোলাচল দেখা যায়। অভ্যস্ত জীবনযাপনের পরিধি পেরিয়ে মানুষ মাঝে মাঝে চলে যেতে চায় তার প্রার্থিত গন্তব্যে। কবি একজন সংবেদনশীল, কল্পনাপ্রবণ মানুষ। তাঁর সুদূর পিয়াসী মন জাগতিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে চায় না। কিন্তু –
“পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে
নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।”
জীবনের পথচলা ও বাণিজ্যতরির একাত্মতা – মানুষ সারা জীবনে চলার পথে নানা অভিজ্ঞতা লাভ করে। সেই অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই সে সমৃদ্ধ হয়। কবিও তাঁর জীবনতরি বেয়ে নতুন গন্তব্যে পৌঁছোতে চান। সেই কল্পলোকে যাওয়ার পথে তাঁর জীবনব্যাপী সঞ্চয় করা অভিজ্ঞতা ও কীর্তিকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চান। সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে কবি এক মুক্তির আস্বাদ লাভ করতে চান। কারণ এই অভিজ্ঞতাই কবির জীবনপথের মূল পাথেয়।
‘নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।’ – কবির এইরূপ উপলব্ধির কারণ আলোচনা করো।
উপলব্ধির কারণ – ‘নোঙর’ কবিতার রচয়িতা কবি অজিত দত্ত পরিচিত জগতের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে চান না। তরি নিয়ে সাতসমুদ্র পারে পাড়ি দিতে চান পরিচিত জগতের বাইরে অনেক দূরে। অথচ তটের কাছে নোঙরে বাঁধা পড়ে আছে তাঁর নৌকা। বহমান সময়-সমুদ্রে কখনও জোয়ার আসে, কখনও ভাটা। সেই জোয়ার-ভাটা আলাদা আলাদা মাত্রায় স্পর্শ করে যায় কবির আশা-আকাঙ্ক্ষা সমেত তাঁর সমূহ সঞ্চয়-সক্ষমতা তথা বাণিজ্যতরিকে। কিন্তু কখনোই তাঁর নোঙরের বন্ধকে আলাদা করতে পারে না। তিনি সারারাত জেগে দাঁড় টানেন, মাস্তুলে পাল বাঁধেন আর তারা দেখে দিক নির্ণয় করেন। নৌকা তবু এগোয় না। কবির বিরামহীন দাঁড় টানা বৃথা হয়ে যায় –
“যতই তারার দিকে চেয়ে করি দিকের নিশানা
ততই বিরামহীন এই দাঁড় টানা।”
সাংসারিক, সামাজিক মানুষ হিসেবে কবি বাঁধা পড়ে আছেন দায়িত্ব-কর্তব্যের বাঁধনে। অথচ তাঁর সৃষ্টিশীল, কল্পনাপ্রবণ মন চাইছে সুদূরে পাড়ি দিতে, পৌঁছে যেতে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। মন যা চায় মানুষ তা পায় না। জীবনব্যাপী অন্বেষণ চলে কাম্য বস্তুর। অতৃপ্ত কবির নিঃসঙ্গ-নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি কেঁপে ওঠে সাগরগর্জনে। দাঁড়ের প্রতিটি নিক্ষেপে তিনি স্রোতের বিদ্রুপ শুনতে পান। বাস্তবজীবনের মায়াবন্ধন ছিন্ন করা সম্ভব নয় জেনেও কবি বারংবার চেষ্টা চালিয়ে যান। এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর জীবনতরি চিরকাল কঠিন বাস্তবতার নোঙরে বন্দি। বন্ধনমুক্তির ব্যর্থতায় বিষণ্ণ কবিমনে উপলব্ধ হয় –
‘নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।’
‘স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।’ – ‘স্রোতের বিদ্রুপ’ কবিকে কীভাবে ব্যথিত করেছে আলোচনা করো।
কবির আকাঙ্ক্ষা – ‘নোঙর’ কবিতায় কবি অজিত দত্ত তরি নিয়ে পাড়ি দিতে চান দূর সমুদ্রপারে। নৌকা প্রস্তুত, যাত্রা করার সময় দাঁড় বাইতে গিয়ে কবি বুঝতে পারেন ‘নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।’ কবি তাও দাঁড় টেনে চলেন অনবরত। মাস্তুলে পাল বাঁধেন, তারা দেখে দিকের নিশানা করে ফেলেন। অথচ নৌকা এগোয় না। ঢেউগুলি যেন অভিমানে ফুলে ফুলে ওঠে আর নৌকায় মাথা কুটে ফিরে যায় গতির দুনিয়ায়। জোয়ারভাটায় বাঁধা নদীতট। এভাবেই উত্থানপতনময় কবির জীবনতটে আকাঙ্ক্ষার নৌকাটি বাঁধা পড়ে থাকে।
কবির ব্যথা – জলস্রোত গতির প্রতিভূ। সে ধেয়ে আসে, ফিরে যায় জোয়ারভাটায়। সে কবির মতো বন্দি নয় – স্বাধীনভাবে বয়ে চলা তার ধর্ম। কবি অসহায়ভাবে বার বার দাঁড় টেনে নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দাঁড়ের নিক্ষেপে প্রতিবার যে শব্দ হয় তা যেন কবির প্রতি স্রোতের বিদ্রুপ। কবি যে সমাজসংসারের নানা বন্ধনে বন্দি। তাঁর বন্দিদশাকে অর্থাৎ স্তব্ধতাকে গতিময় স্রোত বিদ্রুপ করে। কবি চান সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে যেতে। যেতে পারেন না বলেই তাঁকে স্রোতের বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়। অসহায়, নিরুপায় কবি ব্যর্থতার বেদনায় বিষণ্ণ হয়ে পড়েন।
‘সারারাত তবু দাঁড় টানি’ – কবি সারারাত দাঁড় টানেন কেন? ‘তবু’ কথাটি বলার কারণ কী? এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির কোন্ মানসিকতা ফুটে উঠেছে?
দাঁড় টানার কারণ – ‘নোঙর’ কবিতার রচয়িতা কবি অজিত দত্ত সারারাত দাঁড় টানেন তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা নৌকাকে সচল করার জন্য।
‘তবু’ কথাটি বলার কারণ – তরি ভরা পণ্য নিয়ে কবি পাড়ি দিতে চান সাত সাগরের পারে। গতানুগতিক জীবনের সীমা পেরিয়ে এক স্বপ্নকল্পনাময় জগতে তিনি বিচরণ করতে চান। অথচ তাঁর তরি তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়ে গেছে। বাস্তবজীবনের মায়াবন্ধন তিনি অতিক্রম করতে পারছেন না। বৃথা জেনেও কবি চেষ্টা করে চলেছেন বন্ধনমুক্ত হওয়ার। দাঁড় টানছেন অবিরাম, মাস্তুলে পাল বাঁধছেন আর তারার পানে চেয়ে দিক নির্ণয় করছেন। এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর জীবনতরি সুদূরের পানে এগোতে পারছে না। স্থবিরতা মৃত্যুর নামান্তর, তাই গতিশীল জীবনধর্মে দীক্ষিত কবি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় দাঁড় টানতেই থাকেন। এই কারণেই কবি ‘তবু’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।
কবির মানসিকতা – প্রবাদে বলে বৃথা আশা নাকি অনিঃশেষ। আশা মরতে মরতেও মরে না। রোমান্টিক কবি অজিত দত্ত চরম আশাবাদী। ব্যর্থতার নৈরাশ্য তাঁকে গ্রাস করতে চাইলেও তিনি বিষণ্ণ মনে জীবনব্যাপী গন্তব্যে পৌঁছোনোর চেষ্টা চালিয়ে যান। কাঙ্ক্ষিতকে পাওয়ার আশা কবি ত্যাগ করতে পারেন না। তটের কিনারে নোঙর পড়ে গেছে, সপ্তসিন্ধুপারে পাড়ি দেওয়া হয়তো এ জীবনে সম্ভব হবে না। কিন্তু এই পরাজয়কে নিষ্ক্রিয়ভাবে মেনে নেওয়া রোমান্টিক মানুষের ধর্ম নয়। কবি এই অসহায়তাকে অতিক্রম করার জন্য সারারাত দাঁড় টেনে চলেছেন। এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির রোমান্টিক মানসিকতা ফুটে উঠেছে। চির-অতৃপ্ত, চিরচঞ্চল কবিমন বাস্তবের সীমানা ছাড়িয়ে এক উন্মুক্ত স্বপ্নলোকে পৌঁছোবেন বলে আশা করেন।
“নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। — নোঙর এখানে কীসের প্রতীক? কবি নৌকা নিয়ে কোথায় যেতে চান? কবির আকাঙ্ক্ষা ও আক্ষেপ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?
অথবা, নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে — নোঙর বলতে কী বোঝ? নোঙর তটের কিনারে পড়ে গিয়েছে বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
প্রতীকধর্মিতা – কবি অজিত দত্ত রচিত নোঙর কবিতায় নোঙর হল জীবনের বিভিন্ন বন্ধন বা স্থিতিশীলতার প্রতীক।
গন্তব্যস্থল – কবি নৌকা নিয়ে যেতে চান সুদূর সাতসাগরের পারে। বাস্তব জীবনের বাঁধাবন্ধন থেকে অনেক দূরে কল্পনালোকে পাড়ি দিতে চান কবি। মধ্যযুগের সওদাগরদের মতো কবি ভাসিয়ে দিতে চান তাঁর সৃষ্টিসম্পদে ভরা নৌকা। রোজকার একঘেয়ে জীবনযাপন থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁর কল্পনাপ্রবণ মন দূর অচেনা অজানা দেশে পাড়ি দিতে চায়।
কবির আকাঙ্ক্ষা – কবির আকাঙ্ক্ষা সাতসমুদ্রপারে পাড়ি দেওয়ার। কবির ভাবুক মন সংসারের দায়িত্ব-কর্তব্যের বাঁধন মানতে চায় না।
কবির আক্ষেপ – কর্মময়, সাংসারিক জীবনের বাঁধন তাঁকে কঠিনভাবে বেঁধে রাখে। স্রোতের গতি কবির এই দায়িত্বের বন্ধনকে বিদ্রূপ করে, কিন্তু কবি নিরুপায়, অসহায়। এই দাঁড় টানা বৃথা জেনেও তিনি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। তাই কবির তীব্র আক্ষেপ —
তরী ভরা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে সপ্তসিন্ধুপারে,
নোঙর কখন জানি পড়ে গেছে তটের কিনারে।
সারারাত তবু দাঁড় টানি,
তবু দাঁড় টানি।।
এভাবেই নোঙর কবিতাটি কবির আকাঙ্ক্ষার অপূর্ণতা ও আক্ষেপের বেদনায় ধূসর হয়ে উঠেছে।
এ-তরীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে। – কারা ছোটে? তারা কেন সমুদ্রের দিকে ছোটে? তরীতে তাদের মাথা ঠোকার কারণ কী?
তাদের ছুটে যাওয়া – কবি অজিত দত্তের নোঙর কবিতার অন্তর্গত উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে জোয়ারের উন্মত্ত ঢেউগুলির ছুটে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ছুটে যাওয়ার কারণ – নদীতে জোয়ারের ঢেউগুলি তটের দিকে ধেয়ে আসে, তারপর আবার তটে-বাঁধা নৌকায় ধাক্কা খেয়ে সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়। নৌকায় বাধা পেয়ে ঢেউগুলি সমুদ্রের দিকে ছোটে।
ব্যর্থতা – কবি তাঁর নৌকাখানি নিয়ে পাড়ি দিতে চান সুদূর সাতসাগরের পাড়ে — এক বাঁধনহারা জীবনের আহ্বানে। কিন্তু কবির জীবন, যাকে কবিতায় নৌকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, তা আসলে সমাজ ও সংসারের একাধিক দায়-দায়িত্বের বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছে। জীবনের উত্থানপতনের মতো নদীতে জোয়ার-ভাটার খেলা চলে। জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে আর তীরের দিকে ধেয়ে আসে। তারপর নৌকার গায়ে ধাক্কা খেয়ে তারা আবার ফিরে যায় সমুদ্রের দিকে। যে সমুদ্রের দিকে এই নৌকায় কবি যাত্রা করতে চান, ঢেউগুলি সেদিকেই ব্যর্থ হয়ে ছুটে চলে যায়। কবির জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নের প্রতীকরূপী এই ঢেউগুলি তাঁর মনের দুয়ারে মাথা ঠুকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। কবিকে তারা গতির জগতে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। সংসারের বন্ধনে কবি আবদ্ধ। কবির জীবন-নৌকাকে বাঁধন থেকে মুক্ত করতে চেয়েও তারা ব্যর্থ হয়ে সমুদ্রের দিকে ছুটে চলে।
আমার বাণিজ্যতরী বাঁধা পড়ে আছে – কার বাণিজ্যতরী কোথায় বাঁধা পড়ে আছে? এই বাঁধা পড়ে থাকার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ও স্থান – অজিত দত্তের নোঙর কবিতায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, জোয়ার-ভাটায় বাঁধা তটের কাছে কবির বাণিজ্যতরী বাঁধা পড়ে আছে।
তাৎপর্য – বাণিজ্যতরী সাধারণত পণ্য নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়। নোঙর কবিতায় তরী হল জীবনের প্রতীক। তা বাণিজ্যতরী হলে তার সঙ্গে যুক্ত হয় মানুষের সাফল্য-ব্যর্থতা, যোগ্যতা, জীবিকা ইত্যাদি। এ সব নিয়েই মানুষ তার দূরতম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সেই গন্তব্য কারও জানা নেই, তা রয়েছে সপ্তসিন্ধুপারে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে তরীর চলার গতি কখনোই অনায়াস নয়। ফলে সমস্ত রাত দাঁড় টানার পরেও এগোনো সম্ভব হয় না। তটের কিনারায় নোঙর পড়ে যায়। সময়ের স্রোত কবিকে ছুয়ে যায়, কিন্তু তার গতিরোধ করতে পারে না। যত দাঁড়ই টানা হোক বা মাস্তুলে পাল বাঁধা হোক, নৌকাকে চিরকাল তটের কাছে বাঁধা পড়তে হয়। মানুষ তার কর্তব্যকে দূরে সরাতে পারে না। বাস্তবজীবনের দাবিকে অস্বীকার করতে পারে না। বাণিজ্যতরীর এগোনোর পথ তাই বন্ধ হয়ে থাকে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের তৃতীয় পাঠের দ্বিতীয় অধ্যায়, ‘নোঙর’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন