নবম শ্রেণী – ইতিহাস – বিংশ শতকে ইউরোপ – ভার্সাই সন্ধি – বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

Sourav Das

বিংশ শতক ইউরোপের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শতাব্দী। এই শতাব্দীতে ইউরোপে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে রয়েছে দুটি বিশ্বযুদ্ধ, সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের গঠন।

ভার্সাই সন্ধি Treaty of Versailles, ১৯১৯ খ্রি. – টীকা লেখো।

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর বিজয়ী মিত্রপক্ষ ও পরাজিত জার্মানির মধ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। ভার্সাই সন্ধির শর্তগুলি ১৫ ভাগে ভাগ করে ২৩০ পৃষ্ঠায় ৪৪০টি ধারায় রচনা করে জার্মানির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।

ভার্সাই সন্ধির উদ্দেশ্য ছিল —

  • জার্মানিকে চিরতরে পঙ্গু করে রাখা।
  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি জার্মানির কাছ থেকে আদায় করা। 

ভার্সাই সন্ধির শর্তগুলিকে –

  • ভূখণ্ড সম্পর্কিত,
  • অর্থনৈতিক,
  • সামরিক ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।

ভূখণ্ড-সম্পর্কিত শর্ত

ভার্সাই সন্ধির ভূখণ্ড-সম্পর্কিত শর্তাবলি হল —

  • ফ্রান্সকে আলসাস ও লোরেন; বেলজিয়ামকে ইউপেন, মেলমেডি, মরেসনেট; লিথুয়ানিয়াকে মেমেল বন্দর দিতে হবে।
  • নবগঠিত স্বাধীন পোল্যান্ডকে পোজেন – পশ্চিম প্রাশিয়া এবং জার্মানির মধ্যে ২৬০x৪০ মাইল ভূখণ্ড(পোলিশ করিডোর) পোল্যান্ডকে সমুদ্রপথে যোগাযোগের জন্য ছেড়ে দিতে হবে।

অর্থনৈতিক শর্ত – জার্মানির উপর ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক শর্তাবলি ছিল —

  1. ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১ মে-র মধ্যে জার্মানিকে ১০০ কোটি পাউন্ড মূল্যের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে; যদিও পরবর্তীকালে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৬৬০ কোটি পাউন্ড ধার্য করা হয়।
  2. জার্মানির খনিজ সম্পদ ও শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি, যথা — রূঢ়, সার প্রভৃতি অঞ্চল অধিগ্রহণ করা হবে।

সামরিক শর্ত – ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির উপর আরোপিত সামরিক শর্তগুলি হল —

  1. জার্মানির সামরিক ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে কেবল অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১লক্ষ সৈন্য রাখা হবে।
  2. জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা বাতিল করতে হবে।

বিশ্ব ইতিহাসে বহু সমালোচিত ও নিন্দিত সন্ধি হল ভার্সাই সন্ধি। একে জবরদস্তিমূলক সন্ধি (Dictated Peace) বলে অভিহিত করা হয়। ঐতিহাসিক ই এইচ কার (E H Carr) বলেছেন, ভার্সাই সন্ধির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল (The Treaty of Versailles sowed the seeds of World War II) |

ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক শর্তগুলি কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদের মিরর হলে মিত্রপক্ষের সঙ্গে পরাজিত জার্মানির যে সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়, তাকে ‘ভার্সাই সন্ধি বলা হয়। এই সন্ধিতে জার্মানিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অপরাধী বলে গণ্য করা হয় এবং জার্মানির উপর বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়।

ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক শর্ত

ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির উপর যেসব কঠোর অর্থনৈতিক শর্ত আরোপ করা হয়েছিল, সেগুলি হল –

  1. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে অপরাধী বলে ঘোষণা করে তার উপর ৬৬০ কোটি পাউন্ড মূল্যের ক্ষতিপূরণ চাপিয়ে দেওয়া হয়।
  2. ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নীতি নির্ধারণ করার জন্য একটি ক্ষতিপূরণ কমিশন গঠন করা হয়।
  3. জার্মানির অধিকাংশ বাণিজ্যবন্দরগুলি ফ্রান্সকে এবং যুদ্ধ – জাহাজগুলি ব্রিটেনের হাতে তুলে দেবার কথা বলা হয়।
  4. ফ্রান্সের কয়লাখনিগুলি ধ্বংস করার অপরাধে জার্মানির কয়লা সমৃদ্ধ সার অঞ্চল ১৫ বছর ফ্রান্সের অধীনে থাকবে বলে ঠিক করা হয়। ১৫ বছর পর গণভোটের মাধ্যমে ঠিক হবে তারা কোন রাষ্ট্রের অধীনে থাকবে।
  5. জার্মানির বাজার মিত্রপক্ষের শিল্পদ্রব্য বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
  6. জার্মানির বাইরের জার্মান নাগরিকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার মিত্রপক্ষের হাতে থাকবে।
  7. জার্মানি মিত্রপক্ষকে লোহা, কাঠ, কয়লা, রাবার, অন্যান্য খনিজ দ্রব্য, ৫ হাজার রেলইঞ্জিন ও দেড় লক্ষ মোটরগাড়ি দিতে বাধ্য থাকবে।

ভার্সাই সন্ধির ফলাফল –

  1. ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির উপর কঠোর অর্থনৈতিক শর্ত আরোপিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক ল্যাংসাম (Langsom) বলেন যে, এই সন্ধির ফলে জার্মানিকে ২৫ হাজার বর্গমাইল এলাকা, ৬৫% লৌহ খনি, ৪০% কয়লা খনি, ১৫% কৃষিজমি, ১২% পশুসম্পত্তি ও ১০% বৃহদায়তন শিল্প হারাতে হয়। এর ফলে জার্মানির অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল।
  2. ভার্সাই সন্ধি সমস্যার সমাধান করেনি বরং নতুন সমস্যার জন্ম দিয়েছিল।

ভার্সাই সন্ধির ভৌগোলিক শর্তাবলি আলোচনা করো।

ভার্সাই সন্ধির বহুবিধ শর্তাবলির মধ্যে ভৌগোলিক শর্তাবলির উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠন।

ভার্সাই সন্ধির ভৌগোলিক শর্তাবলি আলোচনা করো

ভার্সাই সন্ধির ভৌগোলিক শর্তসমূহ –

  1. জার্মানি বেলজিয়ামকে ইউপেন, ম্যালমেডি ও মরেসনেট দেবে।
  2. ফ্রান্সকে আলসাস ও লোরেন প্রদেশ ফিরিয়ে দেবে।
  3. স্লেজউইগ প্রদেশ ডেনমার্ককে ফিরিয়ে দেবে।
  4. জার্মানির মেমেল বন্দর লিথুয়ানিয়াকে হস্তান্তরিত করতে হবে।
  5. জার্মানির পূর্ব সীমান্তে পোল্যান্ড নামে এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠিত হয়। পশ্চিম প্রাশিয়া ও পোজেন পোল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়।
  6. স্বাধীন পোল্যান্ড যাতে সমুদ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, এইজন্য জার্মানির মধ্যে দিয়ে পোলিশ করিডর (Polis Corridor) তৈরি করা হয়।
  7. ডানজিগ বন্দরকে উন্মুক্ত বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
  8. উত্তর সাইলেশিয়া ও পূর্ব প্রাশিয়া গণভোটের দ্বারা পোল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে জার্মানিকে তাতে সম্মতি দিতে হয়।
  9. জার্মানির চেক অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে চেকোশ্লোভাকিয়া নামে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়।
  10. জার্মানির রাইন অঞ্চলকে বেসামরিক অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়।

ভার্সাই সন্ধির ফলাফল – এইভাবে জার্মানির প্রায় ১০ লক্ষ ২৭ হাজার বর্গমাইল এলাকা ভার্সাই সন্ধির মারফত মিত্রপক্ষের রাষ্ট্রগুলির দখলে আসে। ফলে জার্মানি তার পূর্বের আয়তন হারিয়ে অনেক ছোটো হয়ে যায়।

ভার্সাই চুক্তিকে কেন অপমানজনক এবং জবরদস্তিমূলক চুক্তি বলা হয়?

জার্মান জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকেরা ভার্সাই সন্ধিকে অপমানজনক এবং জবরদস্তিমূলক চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন।

ভার্সাই চুক্তি – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন ফ্রান্সের ভার্সাই শহরে এক বিশেষ বৈঠকে জার্মানি বিজয়ী মিত্রপক্ষের দ্বারা নির্ধারিত শান্তিচুক্তির শর্তাদি গ্রহণ করে। ভার্সাই শহরে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বলে একে ‘ভার্সাই চুক্তি’ বলা হয়।

ভার্সাই চুক্তিকে কেন অপমানজনক এবং জবরদস্তিমূলক চুক্তি বলা হয়

জবরদস্তিমূলক সন্ধি – ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের প্রথমদিকে মিত্রশক্তিবর্গ ভার্সাই চুক্তির শর্তাবলি রচনার কাজ সম্পূর্ণ করেছিল।

  1. এসময় জার্মান প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিত্রশক্তিবর্গ কোনোরকম আলোচনা করেননি।
  2. যেসকল জার্মান প্রতিনিধি এই চুক্তি গ্রহণ করতে প্যারিসে এসেছিলেন তাঁদের সঙ্গে ঘৃণ্য অপরাধীর মতো ব্যবহার করা হয়েছিল।
  3. জার্মানি এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে খসড়া চুক্তি সম্পর্কে নানা আপত্তি জানালে বিজয়ী শক্তিবর্গ খসড়া চুক্তিতে সামান্য পরিবর্তন করে জার্মানিকে তা গ্রহণ করতে বাধ্য করে।
  4. জার্মানিকে ভয় দেখানো হয় যে, জার্মানি যদি এই চুক্তি গ্রহণ না করে তাহলে পুনরায় তাকে আক্রমণ করা হবে।
  5. ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জের ভাষায় জার্মানি যদি ভার্সাই শহরে চুক্তি গ্রহণ না করে, তাহলে বার্লিনে বসে এই চুক্তি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
  6. ইচ্ছামতো বিভক্ত করে জার্মানিকে দুর্বল করে দেওয়া হয়।
  7. জার্মানিকে এই যুদ্ধের জন্য দায়ী করে বিশাল পরিমাণ (৬৬০ কোটি পাউন্ড) ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয়।
  8. জার্মানির বিশাল সামরিক শক্তির সংকোচন করা হয়। সৈন্য ও পুলিশ মিলে মাত্র ১ লক্ষে তা সীমিত থাকে।

এই সকল কারণে প্রতিটি জার্মান নাগরিকের কাছে ভার্সাই সন্ধি প্রথম থেকেই অন্যায়, অপমানজনক ও জবরদস্তিমূলক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

জার্মানিতে হিটলারের উত্থানে ভার্সাই সন্ধির ভূমিকা সংক্ষেপে লেখো।

অতি সাধারণভাবে জীবন শুরু করে হিটলার যেভাবে জার্মানির সর্বোচ্চ শাসকে পরিণত হয়েছিলেন তা চমকপ্রদ হলেও অস্বাভাবিক ছিল না। জার্মানিতে হিটলারের সাফল্যের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন মত পোষণ করেন। ঐতিহাসিক বুমন্ট (Beaumont), ব্যারাক্ল (Barraclough), ই এইচ কার (E H Carr) প্রমুখ মনে করেন, হিটলারের উত্থানের পিছনে ভার্সাই সন্ধির ভূমিকা ছিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য।

জার্মানিতে হিটলারের উত্থানে ভার্সাই সন্ধির ভূমিকা সংক্ষেপে লেখো।

ভার্সাই সন্ধির ভূমিকা – উপরোক্ত তিনজন ঐতিহাসিকের মতে, জার্মানির উপর আরোপিত অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি হিটলারের উত্থানের পথ মসৃণ করেছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় এবং ভার্সাই সন্ধির গ্লানি জার্মান জাতিকে গভীরভাবে আহত করেছিল। তারা এই জাতীয় অপমানের অবসানের অপেক্ষায় ছিল। এমতাবস্থায় হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দল ভার্সাই সন্ধির বিরোধিতা করে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

ভার্সাই সন্ধির সামরিক বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে হিটলার জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা চালু করেন। এইভাবে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি, কামান, ডুবোজাহাজ প্রভৃতি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের সমন্বয়ে জার্মানবাহিনীকে তিনি শক্তিশালী করে তোলেন।

এইভাবে যুদ্ধ এবং অপমানে বিধ্বস্ত এবং হতাশ জার্মানিবাসী নাৎসি দল ও হিটলারকে ভিত্তি করে বিশ্বে তাদের লুপ্ত মর্যাদা পুনরুদ্ধারে আশাবাদী হয়ে ওঠে। জার্মানিবাসীর এই আশাই হিটলারকে জার্মানির ‘ফ্যুয়েরার’ (Führer) বা সর্বেসর্বায় পরিণত করেছিল।

ভার্সাই চুক্তির দ্বারা জার্মানির শিল্পসমৃদ্ধ সার উপত্যকা ফ্রান্সকে দেওয়া হয় এবং ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে গণভোটের দ্বারা এই স্থানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের আগেই হিটলার এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ এবং ভোটদাতাদের ভয় দেখানো শুরু করেন। ফলে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে গণভোটের দ্বারা হিটলার এই অঞ্চল জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন।

এইভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানির হতাশাগ্রস্ত জনগণের কাছে হিটলার ও তাঁর নাৎসি দল জার্মানির হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধারের আশা জাগিয়েছিল।

নবম শ্রেণীর ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিশ শতকে ইউরোপ” এই শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীকে তুলে ধরে। এই অধ্যায় পড়ে শিক্ষার্থীরা বিংশ শতকের ইউরোপের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer