মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন – বেঁচে থাকার কৌশল – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানে অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন একটি মাধ্যমিক শিক্ষামূলক বিষয়। এই বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বেঁচে থাকার কৌশল শিখিয়ে দেয়। এটি তাদেরকে সমাজের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত করে তোলে এবং তাদের চিন্তার অভিযোজন ও সমাধানের প্রক্রিয়া স্বীকার্য করে তোলে।

Table of Contents

বেঁচে থাকার কৌশল শিখানোর মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীগণ সামাজিক ও মানসিক প্রশ্নসমূহ সমাধান করার প্রক্রিয়া শিখতে পারেন। এই বিষয়ে তারা তাদের মনের অভিযোজনগুলি সম্পর্কে স্পষ্টতা অর্জন করতে পারেন এবং সেগুলি সমাধান করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।

evolution and adaptation chapter 4 madhyamik life science

অভিযোজন কাকে বলে?

পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা ও জননের জন্য কোনো জীবের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত স্থায়ী পরিবর্তনকে সেই জীবের অভিযোজন বলে।

অভিযোজনের প্রধান উদ্দেশ্য কী?

শারীরবৃত্তীয়, অঙ্গসংস্থানগত ও আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা করাই অভিযোজনের প্রধান উদ্দেশ্য।

লবণাম্বু উদ্ভিদ (halophyte) কাকে বলে?

যে সকল উদ্ভিদ সমুদ্র উপকূলবর্তী লবণাক্ত অঞ্চলে বা নদীর মোহনায় লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় তাদের লবণাম্বু উদ্ভিদ বলে। যেমন — সুন্দরী, গরান, হেঁতাল ইত্যাদি।

জাঙ্গল উদ্ভিদ (xerophyte) কারা?

যে সকল উদ্ভিদ ভৌত শুষ্ক মৃত্তিকায় বসবাসের জন্য এবং কম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুতে বেঁচে থাকার জন্য নিজেদের অভিযোজিত করে তাদের জাঙ্গল উদ্ভিদ বলে। যেমন — ফণীমনসা (ক্যাকটাস), ত্রিশিরা, মনসা, শতমূলী, হাড়জোড়া, বাবলা ইত্যাদি।
জাঙ্গল উদ্ভিদ (xerophyte) কারা

সুন্দরী গাছের তিনটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য লেখো।

শ্বাসমূল, পুরু কিউটিক্লযুক্ত কাণ্ড এবং কম পত্ররন্ধ্রযুক্ত পাতা হল সুন্দরী গাছের তিনটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য।

শ্বাসমূল কাকে বলে?

লবণাক্ত মৃত্তিকায় বাতাবকাশ অত্যন্ত কম থাকে বলে মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ অত্যন্ত কম হয়। এই কারণে গরান, সুন্দরী প্রভৃতি লবণাম্বু উদ্ভিদে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য বিশেষ প্রকারের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন দেখা যায়। এদের শাখামূলগুলি অভিকর্ষের বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়ে মাটির ওপরে উঠে আসে। এইসব মূলের অগ্রভাগে কিছু রন্ধ্র (lenticel) থাকে যার সাহায্যে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন সরাসরি গৃহীত হয়। এইজাতীয় মূলকে শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর (pneumatophore) বলে।

সুন্দরী গাছের অভিযোজনে শ্বাসমূল কীভাবে সাহায্য করে? অথবা সুন্দরী গাছে কী প্রয়োজনে শ্বাসমূল দেখা যায়?

লবণাম্বু উদ্ভিদের অভিযোজন হিসেবে সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এরা উপকূলবর্তী অঞ্চলে জন্মায়। এখানকার মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই কম থাকায় মূলতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাওয়া যায় না। এই কারণে শ্বাসমূল গঠিত হয় যারা মাটির ওপরে উঠে আসে ও বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে। এইভাবে শ্বাসমূল লবণাক্ত পরিবেশে সুন্দরী গাছকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এটি একপ্রকার শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন।

জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গম বলতে কী বোঝ?

যে অঙ্কুরোদ্‌গমে বীজ ফল থেকে বের হওয়ার আগেই, অর্থাৎ গাছে থাকাকালীনই অঙ্কুরিত হয়, সেই অঙ্কুরোদ্‌গমকে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গম বলে। সাধারণত লবণাক্ত মাটিতে অঙ্কুরোদ্‌গমের অসুবিধা হওয়ায় লবণাম্বু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অঙ্কুরোদ্‌গম দেখা যায়। সুন্দরী বাদে অন্যান্য লবণাম্বু উদ্ভিদের যেমন — রাইজোফোরা, গরান প্রভৃতি উদ্ভিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গম। (সুন্দরী গাছে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গম ঘটে না।)

জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গমের সুবিধা কী?

লবণাক্ত অঞ্চলে বীজ মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার এবং জোয়ারের জলে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্‌গমের ফলে উদ্ভিদের বীজ ফল থেকে বের হওয়ার আগেই অঙ্কুরিত হয় এবং মাটিতে ঝরে পড়লে ভ্রূণমূল ভেজা নরম মাটিতে আটকে যায়। ফলে সহজেই অপত্য উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়।

বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য ক্যাকটাসের পাতার কী ধরনের অভিযোজন হয়েছে?

বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য ক্যাকটাসের পাতায় নিম্নলিখিত অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যথা — 1. পাতার সংখ্যা কম হয় এবং তা আকারে ছোটো হয়। 2. অধিকাংশ পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। এগুলি অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজনের উদাহরণ।

জাঙ্গল অভিযোজন কাকে বলে?

শুষ্ক পরিবেশে জন্মানোর জন্য উদ্ভিদের মধ্যে যে সকল অঙ্গসংস্থানগত ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন লক্ষিত হয়, তাদের একত্রে জাঙ্গল অভিযোজন বলে।

বেল ও ক্যাকটাসের কাঁটা কীসের রূপান্তর?

বেলগাছের কাঁটা হল কাক্ষিক মুকুলের রূপান্তর এবং ক্যাকটাসের কাঁটা হল পাতার রূপান্তর।
বেল ও ক্যাকটাসের কাঁটা কীসের রূপান্তর

পায়রার অভিযোজনে বায়ুথলির ভূমিকা কী?

পায়রা খেচর অভিযোজনকারী প্রাণী। এইপ্রকার অভিযোজনে বায়ুথলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওড়ার সময় পায়রার প্রচুর শক্তি প্রয়োজন। এই অতিরিক্ত শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রশ্বাসকার্যে অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন যা বায়ুথলি সরবরাহ করে। অর্থাৎ বায়ুথলি ফুসফুসের কার্যকারিতা বহুগুণ বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া, ওড়ার সময়, বায়ুথলিগুলি বায়ুপূর্ণ হয়ে দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস করে পায়রাকে হাওয়ায় ভেসে থাকতে সাহায্য করে।

মাছের পটকার কাজ কী?

মাছের পটকার কাজ হল প্রয়োজন মতো মাছের দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব বাড়িয়ে বা কমিয়ে মাছকে জলের মধ্যে বিভিন্ন গভীরতায় পৌঁছাতে সাহায্য করা।

মুখ্য জলজ প্রাণী কাকে বলে?

জলে বসবাসকারী যেসব প্রাণীর পূর্বসূরিরাও তাদের উদ্ভবকাল থেকে জলেই বাস করত তাদের মুখ্য বা প্রাথমিক জলজ প্রাণী বলে। উদাহরণ — মাছ।মুখ্য জলজ প্রাণী কাকে বলে

মাছের অভিযোজনে পটকার ভূমিকা কী?

পটকার সাহায্যে মাছ জলের মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে গভীরতা পরিবর্তন করতে পারে। পটকার বায়ুর পরিমাণের হ্রাস- বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিবর্তিত হয় ও মাছ জলের মধ্যে গভীরতা পরিবর্তন করে। বায়ুপূর্ণ হলে মাছের দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে। ফলে মাছ ভেসে ওঠে। আবার পটকা বায়ুশূন্য হলে আপেক্ষিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে মাছ জলে ডুবতে পারে। রিটি মিরাবিলি এই কাজে সাহায্য করে।

রিটি মিরাবিলি (rete mirabile) কী?

অধিকাংশ অস্থিবিশিষ্ট মাছের পটকার পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠে গ্যাস শোষণ করার উপযোগী যে রক্তজালকগুচ্ছ থাকে, তাকে রিটি মিরাবিলি (rete mirabile) বলে। এর দ্বারা লাল গ্রন্থি নিঃসৃত গ্যাস শোষিত হয়। এর ফলে পটকার আয়তন ছোটো হয়ে মাছের দেহ ভারী হয় ও মাছ জলের নীচে ডুবে যায়।

মাছের যে-কোনো দুটি জলজ অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

মাছের দুটি জলজ অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য হল — 1. জলের বিভিন্ন গভীরতায় গমনের জন্য পটকা এবং 2. জলে সাঁতার কাটার জন্য বিভিন্ন প্রকার পাখনার উপস্থিতি।

মাছের আকৃতি মাকুর মতো না হলে এবং তার স্পর্শেন্দ্রিয় রেখা না থাকলে কী কী অসুবিধা হত?

1. মাছের আকৃতি মাকুর মতো না হলে মাছ জলের মধ্যে গমনকালে জলের বাধা হ্রাস করার সুযোগ পেতো না। ফলে সাঁতার কাটার অসুবিধা হত। 2. স্পর্শেন্দ্রিয় রেখা না থাকলে মাছ জলজ পরিবেশের চাপ, তাপ, গভীরতা অনুভব করতে পারত না ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও পারত না ফলে নানাভাবে বিপন্ন হত।

গৌণ জলজ প্রাণী কাকে বলে?

যে সকল প্রাণীর পূর্বপুরুষ স্থলে বসবাস করত কিন্তু বর্তমানে তারা বিশেষ কোনো কারণে জলে বসবাস করে তাদের গৌণ জলজ প্রাণী বলে। যেমন — তিমি, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি।গৌণ জলজ প্রাণী কাকে বলে

ভৌত শুষ্ক মৃত্তিকা কাকে বলে?

কিছু কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটি শুষ্ক প্রকৃতির হয় এবং এর জলধারণ ক্ষমতা কম হয়। এইপ্রকার মাটিকে ভৌত শুষ্ক মৃত্তিকা বলে। ক্যাকটাসজাতীয় উদ্ভিদ এই প্রকার মৃত্তিকায় জন্মায়।

শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি কাকে বলে?

যে মাটিতে খনিজ লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় মাটিতে পর্যাপ্ত জল থাকলেও উদ্ভিদ ওই জল শোষণ করতে পারে না। সেই মাটিকে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি বলে। এই মাটিতে অতিরিক্ত খনিজ লবণ থাকায় মাটির কৈশিক জলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে উদ্ভিদের মূলরোম অভিস্রবণ পদ্ধতির মাধ্যমে ওই জল প্রয়োজনমতো শোষণ করতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে এই ধরনের মাটি দেখা যায়।

বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য ক্যাকটাসের পাতা ও কাণ্ডের কী ধরনের অভিযোজন হয়েছে?

বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য ক্যাকটাসের পাতার নিম্নলিখিত অভিযোজনগুলি দেখা যায়।
1. পাতার আকৃতি ছোটো হয় ও সংখ্যা হ্রাস পায়। 2. পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। 3. এ ছাড়া ক্যাকটাসের পর্ণকাণ্ডটি কিউটিক্ল দ্বারা আবৃত হওয়ায় তা বাষ্পমোচন প্রতিরোধ করে। এগুলি অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজনের উদাহরণ।

পায়রার দেহ হালকা করার জন্য দেহের কী কী অঙ্গের অবলুপ্তি ঘটেছে?

পায়রার দেহ উড্ডয়ন উপযোগী ও হালকা রাখার জন্য দাঁত, পাকস্থলী, পিত্তাশয়, মলাশয়, মূত্রাশয় এবং স্ত্রী পায়রার ডান দিকের ডিম্বাশয় ও ডিম্বনালী, পুরুষ পায়রার শিশু ইত্যাদি অঙ্গের অবলুপ্তি ঘটেছে।

পায়রার বায়ুথলি নষ্ট হয়ে গেলে কী অসুবিধা ঘটবে উল্লেখ করো।

পায়রার বায়ুথলি নষ্ট হলে — 1. দেহের ওজন বেড়ে যাবে। 2. দ্বি-শ্বসন ঘটবে না। 3. দেহের ভারসাম্য ও ভরকেন্দ্র সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে না। 4. মৃত্তিকা সংলগ্ন স্তরের বেশি অক্সিজেনযুক্ত বাতাস দেহের মধ্যে সঞ্চিত হবে না। সেজন্য বাতাসের উচ্চস্তরে ওড়ার সময় শ্বাসকার্যে অসুবিধা হবে।

সুন্দরী গাছকে ‘লুকিং গ্লাস ট্রি’ বলে কেন?

সুন্দরী গাছের পাতার ত্বক পুরু ও কিউটিকলযুক্ত হয়। পাতার ফলকে মোমের ন্যায় আবরণ থাকে। এ ছাড়াও সুন্দরী গাছের পাতার নীচে ছোটো ছোটো সুন্দর চকচকে আঁশজাতীয় পদার্থ থাকে। পাতাগুলিতে সূর্যের আলো পড়লে পাতাগুলি দূর থেকে চকচক করে এবং খুব সুন্দর দেখায়, এজন্য সুন্দরীকে ‘লুকিং গ্লাস ট্রি’ বলে।

উটের দুটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উটের দুটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য হল – 1. পিঠে চর্বিযুক্ত কুঁজ এবং 2. ছোটো ডিম্বাকৃতি লোহিত রক্তকণিকা।

ওড়ার জন্য পায়রার দেহাকৃতির কী পরিবর্তন ঘটেছে?

ওড়ার সময়ে দ্রুতগতি লাভ করার জন্য ও বাতাসের প্রতিরোধ কমানোর জন্য পায়রার দেহ মাকুর মতো আকৃতি লাভ করেছে।

মুখ্য খেচর প্রাণী কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে সকল খেচর প্রাণী তাদের উৎপত্তির সময় থেকেই যথার্থভাবে খেচর বৈশিষ্ট্যে অভিযোজিত, তাদের মুখ্য খেচর প্রাণী বলে। যেমন—পায়রা, বাদুড়।মুখ্য খেচর প্রাণী কাকে বলে উদাহরণ দাও ।

গৌণ খেচর প্রাণী কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে সকল প্রাণী বিশেষ প্রয়োজনের তাগিদে গৌণ অভিযোজনের মাধ্যমে খেচর বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে তাদের গৌণ খেচর প্রাণী বলে। যেমন — উড়ুক্কু মাছ, উড়ুক্কু ব্যাং।

আচরণ কাকে বলে?

পরিবেশের কোনো ইঙ্গিত বা উদ্দীপকের প্রভাবে বা অন্য কোনো জীবের ক্রিয়ার ফলে কোনো একটি জীব স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে আচরণ বলে।

আচরণ কীভাবে পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত?

1. প্রত্যেক জীব পরিবেশের সাথে সঠিক আচরণ দ্বারা সামঞ্জস্য রক্ষা করে। 2. পরিবেশের পরিবর্তনে আচরণ পরিবর্তিত হয়।

আচরণ বিজ্ঞান বা ইথোলজি (ethology) কী?

জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীবজন্তু, পোকামাকড় ইত্যাদির আচার-আচরণ সম্পর্কে অধ্যয়ন করা হয়, তাকে আচরণ বিজ্ঞান বা ইথোলজি বলে।

জেন গুডাল-এর গবেষণা থেকে শিম্পাঞ্জি সম্পর্কে কী জানা যায়?

জেন গুডাল-এর গবেষণা থেকে বন্য শিম্পাঞ্জিরা যে মানুষের মতো কয়েকটি আচরণ করে, তা জানা যায়। তিনি দেখান যে শিম্পাঞ্জিরা কাঠি দিয়ে উইঢিপি থেকে উইপোকা খুঁচিয়ে বের করে খায়। এ ছাড়া, পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হলে তারা বিভিন্ন ঔষধি গাছের পাতা খায়।

বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ কী জন্য বিখ্যাত?

বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ মৌমাছির ওপর গবেষণা করে মৌমাছির ভাষা আবিষ্কার করেন। শ্রমিক মৌমাছি কোনো স্থানে মিষ্টি ফুলের রসের সন্ধান পেলে মৌচাকে ফিরে এসে চাকের সামনে বিশেষ বিশেষ ভঙ্গিতে নেচে সঙ্গীদের খাদ্যের অবস্থান জানিয়ে দেয়। মৌমাছিদের এই ধরনের বিশেষ ভঙ্গিগুলিকে তিনি লিপিবদ্ধ করেন এবং তার অর্থ সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দেন।
বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ কী জন্য বিখ্যাত

আবহসহিষ্ণুতা বলতে কী বোঝ?

পরিবর্তিত পরিবেশে নিজেকে সঠিকভাবে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীবের দেহে যেসব শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে, তাকে আবহসহিষ্ণুতা বলে। যেমন, পাহাড়ের উচ্চস্থানে মানুষের লোহিত কণিকার সংখ্যা ও ফুসফুসের বায়ু গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজনের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।

পরিবর্তিত পরিবেশে অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য জীবদেহের যে বাহ্যিক অথবা অভ্যন্তরীণ গঠনের সুবিধাজনক, উন্নত ও স্থায়ী পরিবর্তন হয়, তাকে জীবের অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন বলে। উদাহরণ — ক্যাকটাসের পাতার কাঁটায় রূপান্তর।

শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।

পরিবর্তিত পরিবেশে অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য জীবদেহের বিবিধ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার যে সকল সুবিধাজনক উন্নত ও স্থায়ী পরিবর্তন হয়, সেই পরিবর্তনকে জীবের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন বলে। উদাহরণ — সুন্দরী গাছের সাধারণ মূলের শ্বাসমূলে রূপান্তর।

দীর্ঘদিন জলপান না করার পর অধিক জলপানে উটের লোহিত রক্তকণিকা ফেটে যায় না কেন?

উটের লোহিত রক্তকণিকা ডিম্বাকার হয় এবং প্রাথমিক আকারের প্রায় 240% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে সক্ষম। এই কারণে এদের লোহিত রক্তকণিকা আকস্মিক অভিস্রবণীয় চাপ সহ্য করতে পারে। তাই দীর্ঘদিন জলপান না করার পর অধিক জলপানেও উটের লোহিত রক্তকণিকা ফেটে যায় না।

আচরণগত অভিযোজনের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দাও।

জিনগত এবং শিক্ষানির্ভর যে সকল ক্রিয়ার সাহায্যে কোনো জীব তার অস্তিত্ব বজায় রাখে এবং জননের সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে, সেই ক্রিয়াগুলিকে আচরণগত অভিযোজন বলে। উদাহরণ — শিম্পাঞ্জির ডালের সাহায্যে উইপোকা শিকার।

আচরণ ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক কী?

কোনো জীবের আচরণই সেই জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় ও জননে সাহায্য করে। পরিবেশ পরিবর্তিত হলে জীবও নিজের প্রয়োজনমতো মানসিক আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে অভিযোজিত হয়। এই আচরণ বহু বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হলে ওই প্রজাতির সমস্ত জীবে ছড়িয়ে গিয়ে অভিব্যক্তি ঘটায়।

অধিমূল কাকে বলে?

সুন্দরী গাছ যেহেতু সমুদ্রের উপকূলবর্তী নরম মাটিতে জন্মায়, এদের কাণ্ডকে দৃঢ়তা প্রদানের জন্য গাছের গোড়া থেকে যে চ্যাপটা তক্তার মতো অংশ বেরিয়ে গাছকে খাড়াভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করে, তাকে অধিমূল বলে।অধিমূল কাকে বলে

শিম্পাঞ্জিরা বাদামের খোলা ভাঙার ক্ষেত্রে হাতুড়ি ও নেহাই-এর ব্যবহার সম্পর্কে লেখো।

শিম্পাঞ্জিরা পাথরের একটি শক্ত পাটাতনকে নেহাই হিসেবে ব্যবহার করে তার ওপর বাদাম রাখে। এরপর একটি গাছের ডাল হাতুড়ির মতো ব্যবহার করে সেটা দিয়ে বাদামের খোলা ভাঙে।

স্কাউট কর্মী মৌমাছিগুলি মৌনৃত্য দ্বারা ফোরেজারদের কী তথ্য জানায়?

স্কাউট কর্মী মৌমাছি মৌনৃত্য দ্বারা ফোরেজারদের – 1. মৌচাক থেকে খাদ্য উৎসের দূরত্ব, 2. খাদ্যের ঘ্রাণ ও মান, 3. মৌচাক থেকে খাদ্য উৎসের অভিমুখ সম্পর্কে তথ্য জানায়।

উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহনের জন্য অভিযোজনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহনের জন্য অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য — 1. গাঢ় মূত্রত্যাগের ফলে এদের দেহ থেকে জলের নির্গমন কম হয়। 2. নিশ্বাস ত্যাগের সময় উট যে জলীয় বাষ্প পরিত্যাগ করে তা নাসাপথে বিন্যস্ত মিউকাস স্তর দ্বারা পুনঃশোষিত হয়ে দেহে ফিরে যায় এবং জলক্ষয় রোধ করে।

মৌমাছির ওয়াগ্ল নৃত্য বলতে কী বোঝ?

খাদ্যের উৎস মৌচাক থেকে 50-75m-এর বেশি দূরে হলে স্কাউট মৌমাছিরা একবার ডান দিকে ও তারপর একবার বামদিকে লুপ তৈরি করে ইংরাজি ‘৪’ সংখ্যার আকৃতিতে এক বিশেষ ধরনের নৃত্য করে। লুপের মাঝে সরলরৈখিক অংশে তারা উদর অংশ আন্দোলিত বা ওয়াগ্ল করে। এই বিশেষ প্রকৃতির নৃত্যকে ওয়াগ্ল নৃত্য বলে।

পার্থক্য লেখো – অভিযোজন ও অভিব্যক্তি

অভিযোজন ও অভিব্যক্তির পার্থক্য –

বিষয়অভিযোজনঅভিব্যক্তি
ধারণাগতপরিবেশ ও বাস-স্থানে ভালভাবে বাঁচার জন্য জীবের গঠনগত, শারীর-বৃত্তীয় ও আচরণগত পরিবর্তন।কোনো জীব থেকে জিনগত ও ফিনোটাইপগত ব্যাপক পরিবর্তন দ্বারা নতুন জীবের আবির্ভাব।
সময়কালতুলনামূলক স্বল্প সময়কাল ব্যাপী কার্যকর থাকে।দীর্ঘ ও মন্থর পদ্ধতি।
কার্যকারণ সম্পর্কঅভিযোজন হল অভিব্যক্তির অন্যতম একটি কারণ।অসংখ্য অভিযোজনের সমন্বয় ও তাদের প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে অভিব্যক্তি ঘটে থাকে।

সমগ্র পর্যালোচনার পরে, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের মাধ্যমে অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন সম্পর্কিত বিষয়ে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং কৌশলের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বেঁচে থাকার কৌশল শিখিয়ে দেওয়া হল। এই বিষয়টি তাদেরকে সামাজিক ও মানসিক সমস্যাগুলির সমাধানে সক্ষম করে দেয় এবং তাদের চিন্তা বিপ্লব এবং অভিযোগ সমাধানে সাহায্য করে। মাধ্যমিক শিক্ষার্থীগণ এই বিষয়ে অনুশীলন করে তাদের মানসিক দক্ষতা ও সামাজিক দক্ষতা উন্নত করে এবং পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল বিকাশ করে যায়।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন এবং বেঁচে থাকার কৌশল এই মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সমগ্র বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Rate this post


Join WhatsApp Channel For Free Study Meterial Join Now
Join Telegram Channel Free Study Meterial Join Now

মন্তব্য করুন