আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের প্রথম অংশ, ‘অভিষেক,’ থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।

“কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি/এ ভবনে?” – কে, কাকে উদ্দেশ্য করে কখন মন্তব্যটি করেছিলেন? এর কোন্ উত্তর তিনি পেয়েছিলেন?
বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – মেঘনাদবধ কাব্য-র প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত ‘অভিষেক’ শীর্ষক কবিতায় রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ এই মন্তব্যটি করেছিলেন। তিনি প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশে আসা দেবী লক্ষ্মীকে উদ্দেশ্য করে এটি বলেন।
মন্তব্যকাল – বীরবাহু লঙ্কার প্রমোদ উদ্যানে অবসর কাটাচ্ছিলেন, তখনই রামচন্দ্র তাঁকে হত্যা করেন। এই দুঃসংবাদ ইন্দ্রজিতের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রভাষার ছদ্মবেশে দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিতের কাছে আসেন। সেই সময়ে, ইন্দ্রজিৎ ধাত্রীমাতার এই হঠাৎ আগমনের কারণ জানতে চান।
প্রত্যুত্তর – দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিৎকে জানান যে লঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই সংকটময়। ইন্দ্রজিতের অনুপস্থিতিতে লঙ্কার উপর ঘনিয়ে এসেছে ভয়ংকর বিপদ। রামচন্দ্রের সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছে ইন্দ্রজিতের অনুজ বীরবাহু। রাক্ষসরাজ রাবণ তাঁর প্রিয় পুত্রের মৃত্যুর কারণে শোকাহত এবং প্রতিশোধ নিতে স্বয়ং যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ কথা শুনে বিস্মিত ইন্দ্রজিৎ জানতে চান, রামচন্দ্র কীভাবে পুনর্জীবিত হলেন। তখন দেবী লক্ষ্মী রামের মায়াবী শক্তির কথা উল্লেখ করে ইন্দ্রজিৎকে শীঘ্রই যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
“এ অদ্ভুত বারতা, জননি/কোথায় পাইলে তুমি,” – কোন্ বার্তাকে কেন অদ্ভুত বলা হয়েছে? এই বার্তার পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
বার্তা – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে, প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশ ধারণ করে দেবী লক্ষ্মী প্রমোদকাননে এসে ইন্দ্রজিতকে রামচন্দ্রের দ্বারা বীরবাহুর নিহত হওয়ার সংবাদ জানান। এই দুঃসংবাদকেই ইন্দ্রজিৎ ‘অদ্ভুত’ বলে অভিহিত করেছেন।
অদ্ভুত বলার কারণ – ইন্দ্রজিতের কাছে রামচন্দ্রের হাতে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ ছিল এক বিস্ময়কর ঘটনা। কারণ, এর আগে দু’বার রামচন্দ্র তাঁর কাছে পরাজিত হয়েছেন। কিছুক্ষণ আগেই রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রামচন্দ্রকে বধ করেছেন। তির ছুঁড়ে রামচন্দ্রকে হত্যার পরেও কীভাবে সেই রামচন্দ্রই বেঁচে উঠে বীরবাহুকে হত্যা করেছিলেন, তা ইন্দ্রজিতের কাছে অত্যন্ত বিস্ময়কর মনে হয়েছে। তাই এই ঘটনাকে তিনি ‘অদ্ভুত’ বলেছেন।
বার্তার পিছনে উদ্দেশ্য – লঙ্কার চরমতম দুর্দশার সময়ে, লঙ্কার রাজলক্ষী ইন্দ্রজিৎকে লঙ্কায় ফেরত নিয়ে আসতে চান। নিয়তির বিধান কার্যকর করার জন্যই তাঁর এই উদ্যোগ। এই উদ্দেশ্য নিয়েই ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে লক্ষ্মী প্রমোদকাননে মেঘনাদের কাছে যান এবং তাঁকে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ দেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল লঙ্কার দুর্দশা এবং ছোট ভাই বীরবাহুর শোকে ইন্দ্রজিৎকে অস্থির করে তাঁকে লঙ্কায় আসতে বাধ্য করা।
“ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী” – ‘মহাবলী’ কাকে বলা হয়েছে? তিনি কী কারণে রুষ্ট হয়েছিলেন? রোষে তিনি কী কী করলেন?
‘মহাবলী’র পরিচয় – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘মহাবলী’ বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
মহাবলীর রোষের কারণ – প্রভাসা রাক্ষসীর ছদ্মবেশ ধারণ করে এসে ইন্দ্রজিতকে তাঁর ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বলেছিলেন, লঙ্কার এই বিপদের সময় শোকগ্রস্ত রাবণ সৈন্য-সহ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রমোদকাননে বিলাসমত্ত ইন্দ্রজিতের পক্ষে এ কথা সহ্য করা সম্ভব ছিল না। তাঁর বংশের দুর্দশা যেমন তাঁকে ক্ষুব্ধ করেছিল, তার থেকেও বেশি ক্রোধ জন্মেছিল নিজের প্রতি। লঙ্কার বিপদের দিনে নিজের দায়িত্ব পালন না করতে পারাই ইন্দ্রজিতকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
রুষ্ট ইন্দ্রজিতের আচরণ – নিজের ঔদাসীন্যে ক্রুদ্ধ হয়ে ইন্দ্রজিৎ ফুলের মালা ছিঁড়ে ফেলেন। হাতে থাকা সোনার বালা দূরে ছুঁড়ে দেন। তাঁর কুণ্ডল পায়ের কাছে পড়ে থাকে। নিজেকে ধিক্কার দিয়ে ইন্দ্রজিৎ বলেন, শত্রুসৈন্য যখন স্বর্ণলঙ্কা ঘিরে রেখেছে, তখন তিনি রমণীর সান্নিধ্যে রয়েছেন – এ দৃশ্য তাঁর মতো বীরের জন্য উপযুক্ত নয়। তিনি রাবণের পুত্র। তাই শীঘ্র রথ আনার নির্দেশ দিয়ে ইন্দ্রজিৎ বলেন – “ঘুচাব এ অপবাদ বধি রিপুকুলে।” অর্থাৎ, শত্রুকে বধ করেই ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার এবং নিজের কলঙ্ক দূর করার সংকল্প করেন।
“এই কি সাজে আমারে, দশাননাত্মজ/আমি ইন্দ্রজিৎ?” – কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা কথাটি বলেছেন? উদ্ধৃত কথায় বক্তার চারিত্রিক কোন্ গুণের পরিচয় পাওয়া যায়?
প্রসঙ্গ – লঙ্কার প্রমোদ-কাননে উপস্থিত দেবী লক্ষ্মীর কাছ থেকে ইন্দ্রজিৎ জানতে পারেন যে রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর ভাই বীরবাহু নিহত হয়েছে এবং শোকার্ত পিতা রাবণ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রমোদ-উদ্যানে বিলাসিতায় নিমগ্ন ইন্দ্রজিতের মনে এই ঘটনার কারণে গভীর ক্ষোভ ও অনুশোচনা জন্ম নেয়। যখন শত্রু-সৈন্য লঙ্কাপুরীকে ঘিরে ফেলেছে, তখন তিনি বিলাসে সময় কাটাচ্ছিলেন — এটাই ছিল তাঁর অনুশোচনার কারণ। রাজা রাবণের পুত্র হিসেবে তাঁর এই আচরণ মোটেও মানানসই নয় — এটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন।
বক্তার চারিত্রিক গুণাবলি – ইন্দ্রজিতের উপলব্ধি এবং আচরণের মাধ্যমে তাঁর আদর্শবোধ ও দায়িত্ববোধের প্রকাশ ঘটে। নিজের ভুলের জন্য নিজেকে ধিক্কার জানাতে তিনি মোটেও দ্বিধা করেননি। আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ইন্দ্রজিৎ একজন মহান চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। শত্রু-সৈন্যদের পরাজিত করে সমস্ত ‘অপবাদ’ মুছে ফেলার আকাঙ্ক্ষা তাঁর বীরোচিত মনোবলের প্রতিফলন। নিজেকে ‘দশাননাত্মজ’ বা রাবণের পুত্র বলে উল্লেখের মাধ্যমে পিতার প্রতি এবং নিজ রাজবংশের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধার প্রকাশ পায়।
“ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।” – এখানে কোন্ অপবাদের কথা বলা হয়েছে? এই অপবাদ ঘোচানোর জন্য বক্তা কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
উল্লিখিত অপবাদ – মেঘনাদবধ কাব্য -এর প্রথম সর্গ ‘অভিষেক’-এ ইন্দ্রজিৎ যখন প্রমোদকাননে বিলাসে মত্ত, তখন লক্ষ্মী সেখানে আসেন এবং তাঁকে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ দেন। ইন্দ্রজিৎ অনুভব করেন যে, রাক্ষসবংশের গৌরব বিনষ্ট করে রামচন্দ্রের সৈন্যরা যখন লঙ্কাকে ঘিরে রেখেছে, তখন তাঁর বিলাসে সময় কাটানো ধিক্কারজনক। উপরন্তু, তিনি লক্ষ্মীর কাছ থেকে জানতে পারেন যে, তিনি প্রমোদকাননে মত্ত থাকায় তাঁর পিতা রাবণ নিজে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইন্দ্রজিতের মতো বীর পুত্র জীবিত থাকতেও যদি রাবণকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হয়, তবে তা অত্যন্ত অপমানের। ইন্দ্রজিৎ এই আচরণকে রাক্ষস রাজবংশের ‘অপবাদ’ হিসেবে দেখেছেন।
অপবাদ ঘোচাতে বক্তার প্রস্তুতি – শত্রুসৈন্যদের বধ করে ইন্দ্রজিৎ এই অপবাদ দূর করার জন্য বীরবেশে সজ্জিত হন। তাঁর মেঘবর্ণ রথ, চক্রে বিজলির দীপ্তি, ইন্দ্রধনুর মতো উজ্জ্বল পতাকা, দ্রুতগতির অশ্ববাহিনী সব নিয়ে তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। যখন তিনি তীব্র রাগে ধনুকে টংকার দেন, তখন মনে হয় যেন মেঘের মধ্যে গরুড় পাখি চিৎকার করছে। ইন্দ্রজিতের এই বীরোচিত প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই তাঁর অপবাদ ঘোচানোর প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
“সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর-আভরণে,” – এই সজ্জার বর্ণনায় কবি যে দুটি পৌরাণিক প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন সেগুলির বর্ণনা দাও।
প্রাককথন – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ নামক কাব্যাংশে বীরবাহুর মৃত্যুর পরে লঙ্কার মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য ইন্দ্রজিৎ বীরের সাজে সজ্জিত হন। ইন্দ্রজিতের যুদ্ধসজ্জার বর্ণনা দিতে গিয়ে দুটি পৌরাণিক প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন কবি –
- পৌরাণিক প্রসঙ্গ – কার্তিকেয় কর্তৃক তারকাসুর বধের প্রসঙ্গ। তারকাসুরের অত্যাচারে বিপন্ন দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে, ব্রহ্মা বিধান দেন যে শিবের ঔরসজাত সন্তানই তারকাসুরকে বধ করতে পারবে। ছ-জন কৃত্তিকার গর্ভে শিবের ছয় সন্তানের জন্ম হলেও, তাঁদের মিলিত করে এক পুত্র সৃষ্ট হয়, যার নাম হয় কার্তিকেয়। দেবী বসুন্ধরা তাঁকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তিনি দেবসেনাপতির পদে নিযুক্ত হন ও তারকাসুরকে নিহত করেন।
- পৌরাণিক প্রসঙ্গ – অর্জুনের গোধন উদ্ধারের প্রসঙ্গ। পাণ্ডবেরা যখন বিরাট রাজার গৃহে অজ্ঞাতবাসে ছিলেন, তখন কৌরবরা বিরাটের গোধন হরণের জন্য তাঁর রাজ্য আক্রমণ করে। বিরাট যুদ্ধে পরাজিত ও বন্দী হলে, বৃহন্নলা রূপী অর্জুন গোধন রক্ষা করতে যান। কুরুসেনার সংখ্যা দেখে ভীত উত্তর পালাতে চাইলে, অর্জুন শমিবৃক্ষে লুকিয়ে রাখা তাঁর অস্ত্রাদি গ্রহণ করেন এবং বীরবেশে সজ্জিত হয়ে কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে মেঘনাদের যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে কবি এই দুটি প্রসঙ্গ এনেছেন।
“তবে কেন তুমি, গুণনিধি,/ত্যজ কিঙ্করীরে আজি?” – কে কখন কথাটি বলেছেন? তাঁকে কী সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছিল?
বক্তা এবং সময়কাল – ছদ্মবেশী লক্ষ্মীর কাছে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে ইন্দ্রজিৎ ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে লঙ্কার রাজসভার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ইন্দ্রজিৎ যখন রথে আরোহণ করছেন তখনই সেখানে তাঁর স্ত্রী প্রমীলার আবির্ভাব ঘটে। তাঁকে ছেড়ে না যাওয়ার জন্য তিনি ইন্দ্রজিতকে অনুরোধ করেন। ইন্দ্রজিৎ-কে ছাড়া তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকাই যে সম্ভব নয়, তাও বলেন। গভীর অরণ্যে হাতির পায়ে লতা জড়িয়ে গেলে তাতে হাতি মন না দিলেও লতাকে ত্যাগ করে না। তুচ্ছ হলেও হাতি তাকে পা থেকে সরিয়ে ফেলে না। তার পায়ে সেই লতার বন্ধন জড়িয়েই থাকে। অথচ ইন্দ্রজিৎ আপন স্ত্রীকে একা ফেলে রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে চলেছেন। ইন্দ্রজিতের তাঁকে ছেড়ে যাওয়াকে অনুচিত কর্ম বলে বোঝাতে চেয়েছিলেন প্রমীলা।
প্রমীলাকে দেওয়া সান্ত্বনা – প্রমীলাকে সান্ত্বনা দিয়ে ইন্দ্রজিৎ বলেন, “প্রমীলা, তুমি আমাকে যে প্রেমের দৃঢ় বন্ধনে বেঁধেছ, তা খোলার ক্ষমতা কারও নেই। তোমার কল্যাণেই আমি অতি সহজে রাঘবকে হত্যা করতে পারব। যুদ্ধ শেষ হলেই আমি তোমার কাছে ফিরে আসব।” এই বলে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলার কাছে বিদায় নেন।
“বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী।” – ‘বিধুমুখী’ কাকে বলা হয়েছে? তিনি বক্তাকে কী বলেছিলেন? প্রত্যুত্তরে বক্তা কী বলেছিলেন?
বিধুমুখীর পরিচয় – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কাব্যের উল্লিখিত অংশে ‘বিধুমুখী’ বলতে ইন্দ্রজিতের পত্নী প্রমীলাকে বোঝানো হয়েছে।
বক্তব্য বিষয় – সহোদর বীরবাহুর হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ইন্দ্রজিৎ রথে আরোহণ করছিলেন। সেই মুহূর্তে প্রমীলা তাঁর কাছে আসেন এবং ইন্দ্রজিতের হাত ধরে তাঁকে ছেড়ে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। প্রমীলা জানান, ইন্দ্রজিৎ ছাড়া তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব। প্রমীলা উদাহরণ দিয়ে বলেন, গভীর অরণ্যে লতা যদি হাতির পা বেষ্টন করে, তবে হাতি তা লক্ষ্য না করলেও লতাকে ফেলে দেয় না। ইন্দ্রজিৎ তাঁকে ত্যাগ করে কীভাবে চলে যেতে পারেন এই প্রশ্ন তুলে প্রমীলা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
বক্তার প্রত্যুত্তর – প্রমীলার কথা শুনে ইন্দ্রজিৎ হাস্য করে উত্তর দেন যে প্রমীলা তাঁকে যে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছেন, তা ছিন্ন করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। এরপর ইন্দ্রজিৎ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন যে রামচন্দ্রকে বধ করে তিনি দ্রুত ফিরে আসবেন। এই বলে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলার কাছ থেকে বিদায় নেন।
“নমি পুত্র পিতার চরণে,/করজোড়ে কহিলা;” – পুত্র কে? তিনি পিতার চরণে প্রণাম করে কী বলেছিলেন? পিতা কী প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন?
পুত্রের পরিচয় – ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘পুত্র’ বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
পুত্রের বক্তব্য – প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে উত্তেজিত ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন ত্যাগ করে পিতা রাবণের কাছে পৌঁছন। শোকগ্রস্ত রাবণ তখন যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পিতার চরণে প্রণাম করে ইন্দ্রজিৎ প্রথমেই মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভের বিষয়টি জানতে চান। রামচন্দ্রের এই মায়া যে তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি তা-ও তিনি বলেন। তারপরেই তিনি রামচন্দ্রকে সমূলে নির্মূল করার জন্য পিতার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তীব্র ক্রোধে বলেন যে শরানলে রামচন্দ্রকে ভস্ম করে বায়ু-অস্ত্রে তাঁকে উড়িয়ে দেবেন, অথবা বেঁধে এনে রাজপদে উপহার দেবেন। এইভাবে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা আর বীরের মতো মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে ইন্দ্রজিতের উচ্চারণে।
পিতার প্রত্যুত্তর – ইন্দ্রজিতের শিরচুম্বন করে রাবণ তাঁকে ‘রাক্ষসকুল-শেখর’ এবং ‘রাক্ষসকুল-ভরসা’ বলে উল্লেখ করেন এবং তারপরে গভীর বিষাদের সঙ্গে জানান যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে তাঁকে বারবার পাঠাতে রাবণের ভয় হয়। নিয়তি তাঁর প্রতি নিষ্ঠুর। তা না হলে মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভ ঘটত না। শিলা জলে ভাসার মতোই এ অসম্ভব কাজ। এইভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাবণের উচ্চারণে অসহায়তা এবং পিতার স্নেহকাতরতাই যেন লক্ষ করা যায়।
“নমি পুত্র পিতার চরণে, করজোড় কহিলা;” – পিতা ও পুত্রের পরিচয় দাও। পাঠ্যাংশ অবলম্বনে পিতা ও পুত্রের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখো।
পিতা ও পুত্রের পরিচয় – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে ‘পিতা’ হলেন রাবণ এবং ‘পুত্র’ হলেন তাঁর পুত্র ইন্দ্রজিৎ।
পিতা ও পুত্রের কথোপকথন –
- পুত্রের বক্তব্য – প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে উত্তেজিত ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন ত্যাগ করে পিতা রাবণের কাছে পৌঁছান। শোকগ্রস্ত রাবণ তখন যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পিতার চরণে প্রণাম করে ইন্দ্রজিৎ প্রথমেই মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভের বিষয়টি জানতে চান। রামচন্দ্রের এই মায়া যে তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি, তা-ও তিনি বলেন। এরপরেই তিনি রামচন্দ্রকে সমূলে নির্মূল করার জন্য পিতার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তীব্র ক্রোধে বলেন যে, শরানলে রামচন্দ্রকে ভস্ম করে বায়ু-অস্ত্রে তাঁকে উড়িয়ে দেবেন, অথবা বেঁধে এনে রাজপদে উপহার দেবেন। এইভাবে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা এবং বীরের মতো মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে ইন্দ্রজিতের উচ্চারণে।
- পিতার প্রত্যুত্তর – ইন্দ্রজিতের শিরচুম্বন করে রাবণ তাঁকে ‘রাক্ষসকুল-শেখর’ এবং ‘রাক্ষসকুল-ভরসা’ বলে উল্লেখ করেন। এরপর গভীর বিষাদের সঙ্গে জানান যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে তাঁকে বারবার পাঠাতে রাবণের ভয় হয়। নিয়তি তাঁর প্রতি নিষ্ঠুর। তা না হলে মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভ ঘটত না। শিলা জলে ভাসার মতোই এ অসম্ভব কাজ। এইভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাবণের উচ্চারণে অসহায়তা এবং পিতার স্নেহকাতরতাই যেন লক্ষ করা যায়।
“আলিঙ্গি কুমারে, চুম্বি শিরঃ, মৃদুস্বরে/উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ-লঙ্কাপতি;” – কে কাকে আলিঙ্গন করেছে? আলিঙ্গন করে বক্তা যা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
আলিঙ্গনরত ব্যক্তিদ্বয় – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে রাবণ ইন্দ্রজিৎকে আলিঙ্গন করেছেন।
বক্তব্য –
- অনুমতি গ্রহণ – সহোদর বীরবাহুর মৃত্যুর পরে রামচন্দ্রের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইন্দ্রজিৎ এসেছিলেন পিতার অনুমতি নিতে। যুদ্ধ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রাবণ প্রিয় পুত্রকে আলিঙ্গন করেন।
- পিতার দ্বিধা – রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎকে ‘রাক্ষস-কুল-শেখর’ ও ‘রাক্ষস-কুল-ভরসা’ বলে উল্লেখ করে বলেন যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে প্রিয় পুত্রকে পাঠাতে তাঁর প্রাণ চায় না। কারণ, নিয়তি তাঁর প্রতি বিরূপ, “হায়, বিধি বাম মম প্রতি”। এই বিরূপতার দৃষ্টান্ত হিসেবে রাবণ বলেন, শিলা যেমন জলে ভাসা অসম্ভব, তেমনি মরে গিয়ে পুনর্জীবন লাভও অসম্ভব। এখানে রাবণ ইন্দ্রজিতের দ্বারা নিহত রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভ করে বীরবাহুকে হত্যার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। নিয়তির ভূমিকা ছাড়া এমন অসম্ভব ঘটনা ঘটতে পারে না, এটাই রাবণের বলার উদ্দেশ্য ছিল। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রিয় পুত্রকে যুদ্ধে পাঠাতে রাবণের ইচ্ছা ছিল না। পুত্র-স্নেহে ভরা একজন পিতার মানসিক অবস্থাই এখানে রাবণের মন্তব্যে প্রকাশিত হয়েছে।
“হায়, বিধি বাম মম প্রতি।” – কখন বক্তা এ কথা বলেছেন? বক্তার এ কথা বলার কারণ কী?
মন্তব্যকাল – মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য-র প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে রাক্ষসরাজ রাবণ এই মন্তব্যটি করেছেন। বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে শোকে বিহ্বল রাবণ রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। সেজে ওঠে তাঁর চতুরঙ্গ বাহিনী। এই সময় সেখানে এসে উপস্থিত হন পুত্র ইন্দ্রজিৎ। রামচন্দ্রকে ‘সমূলে নির্মূল’ করার জন্য ইন্দ্রজিৎ পিতা রাবণের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন – “ঘোর শরানলে/করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে;/নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে।” পুত্রকে আলিঙ্গন করে রাবণ জানান যে, সেই ‘কাল-সমরে’ ইন্দ্রজিৎকে পাঠাতে তাঁর মন সায় দেয় না। এই সময়েই রাক্ষসরাজ তাঁর প্রতি নিয়তির নিষ্ঠুরতার প্রসঙ্গে আলোচ্য উক্তিটি করেন।
বক্তার এ কথা বলার কারণ – নিয়তির নিষ্ঠুরতা রাবণ তাঁর জীবনে বারবার অনুভব করেছেন। কুম্ভকর্ণের মৃত্যু ছিল তাঁর জন্য একটি বিশাল আঘাত। একইভাবে বীরবাহুর মৃত্যু রাবণের জীবনে আরও একটি ধাক্কা হিসেবে আসে। মেঘনাদের হাতে যুদ্ধে নিহত হওয়ার পরেও যেভাবে রামচন্দ্র পুনর্জীবিত হয়েছেন এবং বীরবাহুকে যুদ্ধে হত্যা করেছেন, তা রাবণকে হতাশ ও অবাক করে। তিনি বলেন – “কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে/কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে?” এই কথা বলার সময় রাবণকে গভীরভাবে হতাশ মনে হয়।
“তারে ডরাও আপনি,” – কে, কাকে ভয় পান? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির ভয় পাওয়ার কারণ কী? বক্তা কীভাবে সেই ভয় দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন?
কর্তা ও কর্ম – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য পঙক্তিতে লঙ্কেশ্বর রাবণের রামচন্দ্রকে ভয় পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভয় পাওয়ার কারণ – রামচন্দ্র মায়াবী এবং দেবতারা তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করে চলেছেন। নিশাচরণে মারা গিয়েও রামচন্দ্র পুনরায় বেঁচে উঠেছেন। স্বয়ং বিধাতাই রাবণের প্রতি বিরূপ। রামচন্দ্র সামান্য মানুষ হলেও রাবণ তাঁকে ভয় পান। রাক্ষসকুলের প্রধান ভরসা প্রিয়পুত্র ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠাতে রাবণের মন শঙ্কিত হয়ে ওঠে – “এ কাল সমরে,/নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা/বারংবার।”
ভয় দূর করার প্রয়াস – পিতা রাবণের মনে উদ্ভূত ভয় দূর করতে ইন্দ্রজিৎ সচেষ্ট হন। প্রথমেই তিনি বলেন, রামচন্দ্র রাবণের পক্ষে ভয় করার মতো মানুষ নন। তা ছাড়া, বীরপুত্র থাকতে পিতার যুদ্ধযাত্রা করা উচিত নয়। তাতে ইন্দ্রজিতের কলঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে জগতে। ইতিমধ্যেই দুবার ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে পরাজিত করেছেন। ইন্দ্রজিৎ নিজের এই সাফল্যের কথা উল্লেখ করে পিতার মনে তৈরি হওয়া ভয় দূর করতে সচেষ্ট হন। অর্থাৎ, একদিকে রামচন্দ্র সম্পর্কে তাচ্ছিল্য এবং অন্যদিকে তীব্র মানসিক জোর দিয়ে ইন্দ্রজিৎ রাবণের যাবতীয় ভয় ও দ্বিধা দূর করতে চান।
“আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে;” – বক্তা কার কাছে, কোন্ আজ্ঞা প্রার্থনা করেছেন? এমন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিক ধরা পড়েছে লেখো।
কর্তা ও কর্ম – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘রাক্ষস-কুল-ভরসা’ ইন্দ্রজিৎ, পিতা রাবণের কাছে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন।
বক্তার চরিত্র – অন্যায় যুদ্ধে মেঘনাদের অনুজ বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে। রামচন্দ্র তাকে ছলনার মাধ্যমে হত্যা করেছে।
- আত্মধিক্কার – ইন্দ্রজিৎ এই সময় প্রমোদকাননে ছিলেন। ধাত্রীরূপী লক্ষ্মীর কাছে ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে প্রথমে তিনি নিজের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানান। শত্রুশৈন্য যখন লঙ্কাপুরীকে বেষ্টন করেছে তখন তিনি আনন্দ-বিলাসে মত্ত-এ ঘটনা ইন্দ্রজিতের মধ্যে অনুশোচনা জাগায়।
- বীরসত্তা – এরপরই তাঁর মধ্যে বীরসত্তা জেগে ওঠে। পিতা রাবণের কাছে এই বলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন – “সমূলে নির্মূল করিব পামরে আজি।” এর জন্য ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতিও নিয়েছেন। পিতার যাবতীয় ভয় ও শঙ্কা দূর করে তিনি বলেছেন – “আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে।” পিতার কাছে আজ্ঞা চাওয়ার মধ্যে দিয়ে ইন্দ্রজিতের বীরভাবের প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
- প্রতিশোধস্পৃহা – স্বদেশ ও স্বজনের গৌরব রক্ষায় তিনি শত্রুকে বধ করবেনই। এই ভাবনায় ইন্দ্রজিতের প্রতিশোধস্পৃহারই প্রকাশ ঘটেছে।
- আত্মবিশ্বাস – নিজের যুদ্ধবিদ্যায় দক্ষতার ওপর ইন্দ্রজিতের অগাধ বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের প্রতিফলনই এখানে দেখতে পাওয়া যায়।
“আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে;” – কোন আদেশের কথা বলা হয়েছে? ‘আর একবার’ কথাটির তাৎপর্য কী? কোন্ আদেশ সে লাভ করেছিল?
যে আদেশ প্রত্যাশা করেছিল – পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পরে রাক্ষসরাজ রাবণ নিয়তির বিরূপতায় হতাশ হয়ে পড়েন। তখন ইন্দ্রজিৎ রাবণকে তুচ্ছ মানব রামচন্দ্রকে ভয় না পেতে বলেন। একই সঙ্গে নিজে লঙ্কার সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে চান। ইন্দ্রজিতের কথায়, তিনি থাকতে রাবণ যদি যুদ্ধক্ষেত্রে যান তাহলে তা লঙ্কার কলঙ্ক বলে সমগ্র জগতে প্রচারিত হবে। তখনই ইন্দ্রজিৎ পিতার কাছে আরও একবার রামচন্দ্রকে পরাজিত করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন।
‘আর একবার’ কথাটির তাৎপর্য – ‘আর একবার’ কথাটির দ্বারা ইন্দ্রজিৎ বোঝাতে চেয়েছেন যে এর আগেও তিনি রামচন্দ্রকে ভয়ংকর যুদ্ধে দু-বার পরাজিত করেছেন। একবার রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রাম-লক্ষ্মণকে নাগপাশে বেঁধে ফেলেন (যদিও কাব্যাংশে শরবিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে), দ্বিতীয়বারে মেঘনাদ মেঘের আড়াল থেকে লড়াই করে রাম-লক্ষ্মণকে এতটাই বিপর্যস্ত করেন যে মৃতের মতো পড়ে থেকে তাঁরা নিজেদের রক্ষা করেন।
লব্ধ আদেশ – রাবণ বলেছিলেন যে, যদি ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধে যাবেন বলে একান্তই স্থির করেন, তাহলে আগে যেন তিনি ইষ্টদেবতা অগ্নিকে পুজো করে নিকুম্ভিলা যজ্ঞগৃহে যজ্ঞ সমাপ্ত করেন এবং পরদিন প্রভাতে যুদ্ধক্ষেত্রে যান।
“অভিষেক করিলা কুমারে।” – ‘কুমার’ কে? তাঁর অভিষেক কে করালেন? অভিষেকের কারণ কী?
কুমারের পরিচয় – ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে ‘কুমার’ বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
তাঁর অভিষেক করিয়েছিলেন পিতা রাবণ।
অভিষেকের কারণ – রামচন্দ্র অন্যায় যুদ্ধে বীরবাহুকে হত্যা করলে, রাবণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ ও পিতার যুদ্ধে যাত্রার প্রস্তুতির কথা জানতে পারেন ইন্দ্রজিৎ। তিনি তখনই যুদ্ধে যাবেন বলে প্রয়োজনীয় সাজসজ্জা করে নেন। এই উদ্দেশ্য সাধনে পিতার অনুমতি চাইতে ইন্দ্রজিৎ রাবণের রাজসভায় উপস্থিত হয়ে জানান – “অনুমতি দিন; সমূলে নির্মূল করব শত্রুকে আজই!” রাবণ বিধির বিরূপতার কথা বলেন এবং বারবার ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠানোর বিষয়ে নিজের অনিচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পুত্র থাকতে পিতা যুদ্ধযাত্রা করলে যে লঙ্কার কলঙ্কের শেষ থাকবে না, সে কথাও ইন্দ্রজিৎ রাবণকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কুম্ভকর্ণের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে রাবণ নিজের দুর্ভাগ্যের কথা বলেন। তবে, তারপরেও ইন্দ্রজিতের ইচ্ছাকে তিনি মর্যাদা দেন। তিনি তাঁকে গঙ্গাজল দিয়ে নিয়মমতো অভিষেক করান এবং নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে যজ্ঞ করে পরদিন সকালে যুদ্ধযাত্রা করতে বলেন।
‘অভিষেক’ কাব্যাংশে ইন্দ্রজিতের চরিত্রবৈশিষ্ট্য যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা আলোচনা করো।
চরিত্র বৈশিষ্ট্য – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রধান চরিত্র ইন্দ্রজিৎ। তাঁকে আশ্রয় করেই কাহিনির বিকাশ ঘটে। সেখানে ইন্দ্রজিতের বেশ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় –
- বীরত্ব ও আত্মবিশ্বাস – ছদ্মবেশী দেবী লক্ষ্মীর কাছে লঙ্কার সর্বনাশ এবং বীরবাহুর মৃত্যুর খবর শুনে ইন্দ্রজিৎ বলেন, “ঘুচাব ও অপবাদ, বধি রিপুকুলে।” দু-দুবার রামচন্দ্রকে যুদ্ধে হারিয়েছেন ইন্দ্রজিৎ। তৃতীয় বারও পরাজিত করতে আত্মবিশ্বাসী ইন্দ্রজিৎ রাবণকে বলেছেন, “সমূলে নির্মূল করিব পামরে আজ।”
- কর্তব্য সচেতনতা – ইন্দ্রজিৎ শুধু পিতৃভক্তই নন, নিজের কর্তব্য সম্পর্কেও তিনি অত্যন্ত সচেতন। তাই তিনি বলেন, “থাকিতে দাস, যদি যাও রণে/তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।”
- স্বদেশপ্রেম – ইন্দ্রজিৎ স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি একনিষ্ঠ। তাই তিনি বলে ওঠেন, “হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা।”
- আত্মমূল্যায়নের মানসিকতা – লঙ্কার দুর্দশা এবং বীরবাহুর মৃত্যুর পরে তিনি নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন – “হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে/স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে?” এই আত্মসমালোচনা চরিত্রটিকে মহান করে তুলেছে।
- পত্নীর প্রতি গভীর অনুরাগ – প্রমীলার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের দাম্পত্য সম্পর্কটি ছিল অত্যন্ত মধুর। প্রমীলা ইন্দ্রজিতকে যুদ্ধে ছাড়তে না চাইলে ইন্দ্রজিৎ বলেছেন যে, তাঁকে প্রমীলার ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধন থেকে আলাদা করার ক্ষমতা কারোরই নেই।
- উপসংহার – মধুসূদনের কাছে ইন্দ্রজিৎ ছিলেন ‘favourite Indrajit’। সেই পক্ষপাত এবং সহানুভূতিই এখানে ইন্দ্রজিৎ চরিত্রে দেখা যায়।
‘অভিষেক’ কাব্যাংশে যে বীরভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
- কথামুখ – মেঘনাদবধ কাব্য-এর প্রথম সর্গের সূচনাতেই মধুসুদন লিখেছেন – “গাইব, মা বীররসে ভাসি, মহাগীত।” ‘অভিষেক’ কাব্যাংশেও এই বীররসের প্রকাশই প্রধান হয়ে উঠেছে।
- ইন্দ্রজিতের বীরভাব – ছোট ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শোনার পরে ইন্দ্রজিত ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং রাক্ষস বংশের অমর্যাদাকে ঘোচানোর শপথ নিয়েছেন – “ঘুচাব অপবাদ, বধি রিপুকূলে।” তারপরেই মেঘনাদকে যুদ্ধের সাজে সেজে উঠতে দেখা গেছে। মেঘবর্ণ রথ, চক্রে বিজলির ছটা, ইন্দ্রধনুর মতো ধ্বজা, দ্রুতগতি অশ্ব-সব মিলিয়েই বীরত্বের যেন অনবদ্য আয়োজন। স্বদেশের সম্মান রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইন্দ্রজিতকে স্ত্রীর ভালোবাসা ও করুণ মিনতিও টলাতে পারেনি। পিতার কাছে গিয়ে ইন্দ্রজিত রামচন্দ্রকে ‘সমূলে নির্মূল’ করার জন্য অনুমতি চেয়েছেন।
- রাবণের বীরভাব – রাবণও পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে বীরভাবে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছেন। চতুরঙ্গ সেনায় সজ্জিত হয়ে রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কুম্ভকর্ণের মৃত্যু, বীরবাহুর অকালমৃত্যু প্রতিটি ঘটনাতেই নিয়তির বিরূপতাকে তিনি উপলব্ধি করেছেন। তবুও পিতৃহৃদয়ের শঙ্কাকে দূরে সরিয়ে রেখে ইন্দ্রজিতের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েছেন এবং তাঁকেই সেনাপতি পদে তিনি বরণ করে নিয়েছেন। এইভাবে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি ও শত্রুবধের মানসিকতার মধ্য দিয়ে পিতা ও পুত্রের বীরভাবের আদর্শেরই প্রকাশ ঘটেছে।
‘অভিষেক’ কাব্যাংশে কবির রচনারীতির দক্ষতা আলোচনা করো।
মহাকাব্যিক রচনারীতির দক্ষতা – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত মেঘনাদবধ কাব্য-র প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত ‘অভিষেক’ নামক কাব্যাংশে কবি এক মহাকাব্যিক রচনারীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
- শব্দের ব্যবহার – তৎসম এবং যুক্তব্যঞ্জনবহুল শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষায় ধ্বনিময়তা সৃষ্টি কবির প্রিয় চর্চা ছিল। এখানে তার যথেষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যেমন —কুণ্ডল, তুরঙ্গম, কর্বুরদল ইত্যাদি।
- শব্দগুচ্ছ প্রয়োগ – দুই বা ততোধিক শব্দকে যুক্ত করে ভাবপ্রকাশক শব্দগুচ্ছ তৈরি করাও মধুসূদনের আর একটি প্রিয় কৌশল, যেমন — কনক-আসন, রত্নাকর-রত্নোত্তমা, পতি-কর-যুগ ইত্যাদি।
- সন্ধিবদ্ধ ও সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহার – সমগ্র কাব্যে সন্ধিবদ্ধ এবং সমাসবদ্ধ পদের অনায়াস ও স্বচ্ছন্দ ব্যবহার করেছেন কবি।
- অলংকার প্রয়োগ – অনুপ্রাস, উপমা, রূপক ইত্যাদি অলংকারের ব্যবহারেও কবির সহজাত দক্ষতা প্রকাশিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, “শিঞ্জিনী আকর্ষি রোষে, টঙ্কারিলা ধনুঃ/বীরেন্দ্র, পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে/ভৈরবে।” অলংকার সৃষ্টির এই দক্ষতা নিঃসন্দেহে কাব্যসৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
- ছন্দে নতুনত্ব – অমিত্রাক্ষর ছন্দের অন্ত্যমিলহীনতা ভাষাকে করে তুলেছে বীরভাব প্রকাশের উপযুক্ত।
- শেষের কথা – সব মিলিয়ে ভাষা, ছন্দ, অলংকার এবং রসসৃষ্টির দক্ষতায় ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি মধুসূদনের কবি প্রতিভার এক সার্থক প্রকাশ।
‘অভিষেক’ কাব্যাংশ অবলম্বনে রাবণ চরিত্রটির পরিচয় দাও।
- কথামুখ – ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে মেঘনাদ প্রধান চরিত্র হলেও পার্শ্বচরিত্র হিসেবে রাবণের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
- সম্রাটসত্তা – কাব্যে রাবণ চরিত্রের দুটি সত্তা লক্ষণীয় — সম্রাটসত্তা ও পিতৃসত্তা। সম্রাট রাবণ তেজস্বী, মহাক্ষত্রিয়। বীরত্বের উচ্চ শিখরে তাঁর স্থান। অন্যদিকে পিতা রাবণ সন্তানস্নেহে কোমল মনের অধিকারী। প্রিয় পুত্র বীরবাহুর মৃত্যু পিতা রাবণকে শোকাহত করেছে। কিন্তু দুর্জয় সম্রাট রাবণ শোকে ভেসে না গিয়ে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠেছেন। মধুকবির বর্ণনায় — “সাজিছে রাবণ রাজা, বীরমদে মাতি।” আবার, ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধে যেতে চাইলে তিনি বলেছেন, “নাহি চাহে প্রাণ মন পাঠাইতে তোমা বারম্বার।”
- পিতৃসত্তা ও বাৎসল্য রস – রাবণের পিতৃসত্তা ও বাৎসল্য এখানে সক্রিয়। ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধ থেকে বিরত করা যাবে না জেনে তিনি বলেছেন, “তবে যদি একান্ত সমরে/ইচ্ছা তব, বৎস,/পূজ ইষ্টদেবে।” এই উপদেশ পুত্রের কল্যাণ কামনায় পিতার আত্মতুষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়।
- নিয়তি লাঞ্ছনা – রাবণ এখানে নিয়তিলাঞ্ছিত, ভাগ্যবিপর্যস্ত এক নায়ক। তাঁর উক্তিতেও তা ধরা পড়েছে — “হায়, বিধি বাম মম প্রতি।” কাব্যে কখনো-কখনো তাঁর শূন্যহৃদয়ের হাহাকারও ধ্বনিত হয়েছে। ‘মায়ার মায়া’ রাবণও বুঝতে অক্ষম। তাই তাঁকে বলতে শুনি — “কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে,/কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে?”
- শেষের কথা – সম্রাট ও পিতৃসত্তার টানাপোড়েনে রাবণ চরিত্রটি ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
‘অভিষেক’ কাব্যাংশটির নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে লেখো।
কোনো সাহিত্যের অন্দরমহলে প্রবেশের চাবিকাঠি হলো নামকরণ। নামকরণের মাধ্যমেই লেখক তাঁর বক্তব্যকে প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠা দেন। পাঠকদের জন্যও বিষয়বস্তু বোঝার ক্ষেত্রে নামকরণ অত্যন্ত জরুরি ও সহায়ক। সাহিত্যে নামকরণ বিভিন্ন দিক থেকে হতে পারে — চরিত্রধর্মী, বিষয়ধর্মী অথবা ব্যঞ্জনাধর্মী, যে কোনো মাধ্যমেই সাহিত্যের নামকরণ করা সম্ভব। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য –এর প্রথম সর্গের নাম ‘অভিষেক’। পাঠ্য অংশটি প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত হয়েছে, তাই প্রথম সর্গের নাম অনুসরণে এই কাব্যাংশের নাম হয়েছে ‘অভিষেক’। লঙ্কার প্রমোদকাননে ইন্দ্রজিৎ তখন বিলাসে মত্ত। এমন সময় ছদ্মবেশী লক্ষ্মী তাঁকে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ দেন। ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদের আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে যান ইন্দ্রজিৎ। ক্রোধে ও আত্মধিক্কারে তিনি নিজের পরে থাকা কুসুমদাম, কনকবলয় ও কুণ্ডল ছুড়ে ফেলেন। তারপর মহাতেজে জ্বলে ওঠেন বীরশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রজিৎ। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন — “ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।” যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন তিনি। তখন তাঁর মেঘবর্ণ রথ ও তার চাকায় বিজলির ছটা দেখা যায়। আকাশে উড়ন্ত ইন্দ্রধনুর মতো রাক্ষস পতাকা উড়ছিল। অন্যদিকে, তখন পুত্রশোকে বিহ্বল লঙ্কারাজ রাবণও যুদ্ধোন্মত্ত। মেঘনাদ উপস্থিত হন সেখানে এবং পিতার কাছে রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু রাবণ তাঁর একমাত্র জীবিত পুত্রকে যুদ্ধে পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। তিনি রামের মায়াবী ছলনা সম্পর্কে জানেন। মরেও যে রামচন্দ্র বেঁচে উঠতে পারেন, তার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের আসন্ন যুদ্ধ কতটা ফলপ্রসূ হবে — এই চিন্তায় বিচলিত হয়ে পড়েন লঙ্কেশ্বর রাবণ। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ — “দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে।” অবশেষে রাবণ পবিত্র গঙ্গাজল দিয়ে পুত্রের অভিষেক করেন। অর্থাৎ, কাব্যের বিষয়বস্তু যে অভিমুখে পরিচালিত হয়েছে বা যে পরিণতি লাভ করেছে, তা হলো ইন্দ্রজিতের সেনাপতি পদে অভিষেক। সুতরাং বিষয়বস্তুর নিরিখে নামকরণটি সার্থক ও যথাযথ।
যে-কোনো চারটি উপমার দৃষ্টান্ত দিয়ে উপমা সৃষ্টিতে মধুসূদনের দক্ষতা আলোচনা করো।
উপমা সৃষ্টিতে দক্ষতা – মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য রচনারীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো উপমার অসাধারণ প্রয়োগ। ‘অভিষেক’ কাব্যাংশেও এরকম অসংখ্য উপমার ব্যবহার দেখা যায়। যেমন –
- সহোদর বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন ইন্দ্রজিৎ। সেই যুদ্ধসাজের তুলনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে – “হৈমবতীসূত যথা নাশিতে তারকে/মহাসুর; কিম্বা যথা বৃহন্নলারূপী/কিরীটি, বিরাটপুত্র সহ, উদ্ধারিতে/গোধন, সাজিলা শুর, শমীবৃক্ষ মূলে।” তারকাসুরকে বধের সময় কার্তিকের যুদ্ধসজ্জা কিংবা বিরাট রাজার গোধন উদ্ধারের সময় অর্জুনের যুদ্ধসজ্জার তুলনার মাধ্যমে ইন্দ্রজিতের যুদ্ধসজ্জার গরিমাকেই তুলে ধরা হয়েছে।
- ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত হলে প্রমীলা তাঁর গতি রোধ করে দাঁড়ান। ইন্দ্রজিতের প্রতি অভিমানে তিনি হাতি ও লতার উপমা ব্যবহার করেন। প্রমীলার কথা অনুযায়ী – “বনের মাঝে হাতির পা যদি লতা বেষ্টন করে, সেক্ষেত্রে হাতি লতার প্রতি মনোযোগী না হলেও তাকে পা থেকে ফেলেও দেয় না।” তবে ইন্দ্রজিৎ কেন প্রমীলাকে ছেড়ে যাচ্ছেন? এভাবে উপমার সাহায্যে প্রমীলা ইন্দ্রজিতের এই নিষ্ঠুর আচরণের ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
- ইন্দ্রজিতের রথের উড়ে যাওয়াকে উপমিত করা হয়েছে – “হৈমপাখা বিস্তারিয়া যেন উড়িলা মৈনাক-শৈল।”
- কুম্ভকর্ণের মৃতদেহের উপমা হিসেবে রাবণ বলেছেন – “গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা বজ্রাঘাতে।” এইভাবে বিষয়বর্ণনাকে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর করে তোলার প্রয়োজনে মধুসূদন ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে উপমার সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের প্রথম অংশ, ‘অভিষেক,’ থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষায় আসতে পারে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া, এই পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন