এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

দশম শ্রেণি – বাংলা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান – বিষয়সংক্ষেপ

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক বাংলার ত্রয়োদশ অধ্যায় “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়শই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

দশম শ্রেণি – বাংলা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান – বিষয়সংক্ষেপ
দশম শ্রেণি – বাংলা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান – বিষয়সংক্ষেপ

কবি পরিচিতি

ভূমিকা –

আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম সেরা কবি হলেন জয় গোস্বামী। তাঁর কবিতাগুলি ভাষা, শব্দ ও ছন্দের অপূর্ব ব্যবহার এবং গভীরতা দিয়ে অনন্য হয়ে উঠেছে।

জন্ম এবং শৈশব –

1954 খ্রিস্টাব্দের 10 নভেম্বর কলকাতায় জয় গোস্বামীর জন্ম। পাঁচ বছর বয়সে তাঁরা সপরিবারে রানাঘাটে চলে যান। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। জয় গোস্বামীর মা ছিলেন শিক্ষিকা।

সাহিত্যকীর্তি –

জয় গোস্বামীর প্রথম কবিতা লেখা হয় তেরো বছর বয়সে, বাড়ির পুরোনো সিলিং পাখা নিয়ে। উনিশ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। 1976 খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘দেশ’ পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। 1977 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতা-সংকলন ‘ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’। এরপর একে একে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রত্নজীব’ (1978), ‘আলেয়াহ্রদ’ (1981), ‘উন্মাদের পাঠক্রম’ (1986), ‘ভুতুমভগবান’ (1988), ‘ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা?’ (1989), ‘আজ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো’ (1991), ‘গোল্লা’ (1991), ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে’ (1994), ‘বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা’ (1995), ‘পাখি, হুশ’ (1995), ‘ওঃ স্বপ্ন’ (1996) ইত্যাদি কবিতার বই। 1990-তে ‘ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা?’ কাব্যগ্রন্থের জন্য এবং 1998-তে ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ কাব্যোপন্যাসের জন্য কবি দু-বার ‘আনন্দ পুরস্কার’ পেয়েছেন। 1997 খ্রিস্টাব্দে জয় গোস্বামী তাঁর ‘বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পান। 2000 খ্রিস্টাব্দে ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। এছাড়াও তিনি বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

লিখনশৈলী –

বাস্তব জীবনের নানা ঘটনা এবং অভিজ্ঞতার ছোঁয়া জয় গোস্বামীর কবিতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি বাস্তব জীবন থেকে তাঁর কবিতার উপকরণ সংগ্রহ করেন। তাই কখনও লালগোলা-বনগাঁর ট্রেনের চাল-তোলা মাসিপিসি, কখনও বিয়ে না হওয়া সেলাই দিদিমণি তাঁর কবিতার বিষয় হয়ে ওঠে। প্রেম ও নিঃসঙ্গতাও তাঁর কবিতায় বারবার ফিরে আসে। জয় গোস্বামীর কবিতা উচ্চকণ্ঠের নয়, বরং তীব্রতার সঙ্গে কোমলতা মিশিয়ে একটি নিজস্ব কাব্যভাষা তৈরি করেছেন। তাঁর কবিতায় ছন্দের বৈচিত্র্য এবং প্রতীকের ব্যবহারের মাধ্যমে গভীরতা প্রকাশিত হয়। তাই তিনি বলতে পারেন – “কলম একমাত্র সত্য। বায়ু অগ্নি জল/প্রবাহিত তার মধ্যে। জগৎ নিশ্চল” (কলম, লেখনক্রিয়া)।

উৎস

1997 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জয় গোস্বামীর পাতার পোশাক কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি সংকলিত হয়েছে।

সারসংক্ষেপ

গানের শক্তিতে বলীয়ান কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই গানকে সঙ্গে নিয়েই তিনি যে – কোনো প্রতিবাদের মিছিলে হাজার মানুষের সঙ্গে হেঁটেছেন এবং এগিয়ে যাওয়ার শক্তি খুঁজে পেয়েছেন। গানকে বর্মের মতো ব্যবহার করে তিনি বুলেটও প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থাৎ, গানের মধ্যেই কবি খুঁজে পেয়েছেন সেই আশ্চর্য শক্তি, যার মাধ্যমে যুদ্ধ থেমে যায় এবং সৃষ্টি হয় শান্তির বাতাবরণ। মাথার ওপর শকুন বা চিল উড়ে চললেও কবি তাঁর অন্তরের কোকিল অর্থাৎ গানের ক্ষমতার উপরেই ভরসা রেখেছেন। বর্ম খুলে ফেললে যখন যুদ্ধের মানসিকতা সরে যায়, তখন এই গানকেই তাঁর ঋষিবালকের মতো শান্ত ও সমাহিত মনে হয়। গানের স্রোতে ভেসে কবি পৌঁছে যান লোকজীবনের গভীরে। গান মানুষকে নদীতে বা গ্রামে নিয়ে যায়। গানের হাত ধরেই কবি সর্বত্র মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যান। গানের বিপুল ক্ষমতা উপলব্ধি করে কবি যুদ্ধবাজদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে তারা যেন গানের কাছে সমস্ত অস্ত্র সমর্পণ করে।

নামকরণ

সাহিত্যে নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই নামকরণ বিভিন্ন দিক থেকে হতে পারে — কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, কখনও প্রতীকী বা চরিত্রধর্মী, আবার কখনও তা ব্যঞ্জনাধর্মী। আমাদের আলোচ্য বিষয় জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার নামকরণ কতটা সার্থক তা পর্যালোচনা করা।

‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার শিরোনামটি ব্যঞ্জনাধর্মী। কারণ, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র’ — এই সাধারণ স্লোগানটি পরিবর্তন করে কবি একটি বিশেষ বার্তা প্রদান করেছেন। কবিতার বিষয়বস্তু অবশ্যই যুদ্ধবিরোধী, তবে এই বিরোধিতার পদ্ধতি আলাদা। কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন, “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে।” অস্ত্র ফেলার মাধ্যমে কবি সাধারণ শান্তিকামী মানুষের মতোই শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। পায়ের কাছে অস্ত্র রাখার আহ্বান যুদ্ধবাজদের আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে। কবি গানকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান গাইতে গাইতেই তিনি হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। অর্থাৎ, গানের শান্তি দিয়ে তিনি অনায়াসে যুদ্ধ ও ধ্বংসকে প্রতিহত করতে পারেন।

সমাজে যখন লোভী চিল-শকুন রূপী যুদ্ধবাজদের আনাগোনা, তখন কবির সম্বল মাত্র একটি কোকিল, যা আসলে মানুষের সৃজনশীল সত্তার প্রতীক। এই কোকিলই কবিকে নানা উপায়ে গান বেঁধে দেবে। গান ঋষিবালকের মতো পবিত্রতার প্রতীক হয়ে কবি তথা সমাজকে মনুষ্যত্বের পথে নিয়ে যাবে। তাই হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা বা অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয় — কবি যাবতীয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গানকে বর্ম করে সত্য ও শান্তির পথে এগোতে চান। এই মূলভাবকে সামনে রেখে দেওয়া কবিতাটির নাম গভীর ব্যঞ্জনার ইঙ্গিত দেয়। তাই কবিতার নামকরণটি সম্পূর্ণরূপে সংগত এবং যথাযথ।


আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ত্রয়োদশ অধ্যায় ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়শই পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়াও, এই পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যারা এটি থেকে উপকৃত হতে পারেন। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন