আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবইয়ের সপ্তম পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ থেকে ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়শই এসব প্রশ্ন পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য বেশ উপকারী হবে।

“আমি এখন হাজার হাতে পায়ে/এগিয়ে আসি, উঠে দাঁড়াই” – কে, কেন এগিয়ে আসেন?
- উদ্দিষ্ট জন – ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় শান্তিকামী, যুদ্ধবিরোধী সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।
- এগিয়ে আসার কারণ – অস্ত্রের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। মানুষের মিলিত প্রতিরোধ যে-কোনো অস্ত্রকে আটকাতে পারে। যে মানুষেরা অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল তাদের কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, অস্ত্র আসলে মানবতার বিরোধী। অস্ত্র নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্কই এই পৃথিবীর শেষ সত্য। সেই অজস্র শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের শক্তিতেই তিনি শক্তিশালী হয়ে এগিয়ে আসেন।
“হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই” – হাত নাড়িয়ে কবি কীভাবে বুলেট তাড়ান?
যুদ্ধবাজ মানুষের নেশা মানুষকে হত্যা করা, মানবিকতাকে ধ্বংস করে ক্ষমতা দখল করা। কবি গানকে সম্বল করে সেই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। গান মানুষের শুভচেতনার বিকাশ ঘটায়, সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে, বিভেদ ভুলিয়ে একতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে। মিলিত শুভচেতনার কখনও পরাজয় হয় না। তাই কবি গানকে হাতিয়ার করে সহজেই হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়ান।
“গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে” – কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো।
- উৎস – ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার আলোচ্য অংশে বলা হয়েছে, অস্ত্রের ভয় আর পেশিশক্তির হুংকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বর্ম হয়ে উঠতে পারে মানুষের শুভবোধ এবং শুভচেতনা।
- তাৎপর্য – যে-কোনো অশুভ প্রচেষ্টার প্রতিরোধের এই কাজে সংগীত একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। গানের মধ্য দিয়ে যেমন আনন্দ আর সুন্দরের বিকাশ ঘটে, মন শুদ্ধ হয়ে ওঠে, ঠিক সেরকমই গান হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের বাহনও। তাই বুলেট অর্থাৎ যুদ্ধকে বাধা দিতে কবি গানকেই বর্মের মতো ব্যবহার করেন।
“আঁকড়ে ধরে সে-খড়কুটো” – কবি কাকে ‘খড়কুটো’ বলেছেন? তাকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন কেন?
- খড়কুটোর পরিচয় – অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গানকে কবি আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন। বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা হিংসা ও হানাহানির বিরুদ্ধে কবির সম্বল মাত্র একটি-দুটি গান। এই স্বল্পতা বোঝাতেই কবি ‘খড়কুটো’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
- আঁকড়ে ধরতে চাওয়ার কারণ – ডুবন্ত মানুষ কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। যদি সেটা খড়কুটোও হয়, তবে তাকেই সে অবলম্বন ভেবে আঁকড়ে ধরে। কবিও মনে করেছেন, গানই হল হিংস্রতার এই পৃথিবীতে মানুষের চেতনা বদলানোর মাধ্যম। এই গান আদতে জীবনের গান। কবির কাছে মাত্র একটা-দুটো গান আছে, যাদের আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চান তিনি।
“রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে” – এ কথার মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
- প্রসঙ্গ – গানের মধ্য দিয়ে অস্ত্রের আতঙ্ককে মুছে ফেলতে চেয়েছেন কবি।
- তাৎপর্য – যাবতীয় সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং হিংসা যে রক্তপাতের সৃষ্টি করে, তৈরি করে সভ্যতার সংকট, তা থেকে কবি মুক্তি খুঁজেছেন শুধু গানকে অবলম্বন করেই। তাই কবি যখন ‘গানের গায়ে’ রক্ত মোছার কথা বলেন, তখন আসলে সংগীতকে অবলম্বন করে বাস্তব জীবনের সব হিংসা এবং রক্তাক্ততাকে মুছে দিতে চান তিনি।
“মাথায় কত শকুন বা চিল” – উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
- প্রসঙ্গ – যুদ্ধবাজ আগ্রাসী মানুষদের কথা বলতে গিয়েই কবি এই মন্তব্যটি করেছেন।
- তাৎপর্য – কবি দেখেছেন, স্বার্থপর মানুষরা যুদ্ধের খেলায় মেতে উঠেছে। তারা মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে নিজের ক্ষমতা এবং স্বার্থ প্রতিষ্ঠায় সর্বদা তৎপর। লোভী শকুন ও চিলের মতো, তারা সমাজের ওপর প্রভুত্ব করতে চায়। এই চিল-শকুনের মতো যুদ্ধবাজ শক্তিগুলোর বিরুদ্ধেই কবি গানের অস্ত্র ধারণ করেছেন।
“আমার শুধু একটা কোকিল” – বক্তা কে? এ কথার মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
- বক্তা – উল্লিখিত অংশটির বক্তা ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার কবি জয় গোস্বামী স্বয়ং।
- তাৎপর্য – কবি তাঁর মাথার উপরে চিল শকুনের উড়ে চলা দেখেছেন। তার মধ্যে ‘একটা কোকিল’, যা আসলে কবির সৃজনশীল সত্তা, তা ধ্বংসের মধ্যে সৃষ্টির গান গাইতে পারে। ‘সহস্র উপায়ে’ তার গান, প্রেম বা প্রতিবাদ বা যে ধারাতেই তৈরি হোক না কেন, তা আসলে সুন্দরেরই প্রতিষ্ঠা ঘটায়।
“গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে” – কে গান বাঁধবে? সহস্র উপায়ে গান বাঁধার তাৎপর্য কী?
- যে গান বাঁধবে – কবি বলেছেন, তাঁর শুধু একটা কোকিল আছে। এই কোকিলই গান বাঁধবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
- সহস্র উপায়ে গান বাঁধার তাৎপর্য – মধুর কণ্ঠের কোকিল সৌন্দর্যের প্রতীক। কোকিলের রূপক ব্যবহার করে কবি নিজের ভিতরের সৃজনশীল সত্তাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যে গানকে তিনি জীবনযুদ্ধের বর্ম করতে চেয়েছেন, নানান উপায়ে সেই গান বাঁধবে এই কোকিল। তা হতে পারে প্রেম অথবা প্রতিবাদ – যে-কোনো ধারাতেই। যাবতীয় অস্ত্রের হুংকারকে স্তব্ধ করে তা পৃথিবীতে শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে।
“অস্ত্র রাখো, অস্ত্র ফ্যালো পায়ে” – কার উদ্দেশ্যে কবির কেন এই আবেদন?
- উদ্দিষ্ট জন – জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় যুদ্ধবাজ মানুষদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
- কবির আবেদনের কারণ – ক্ষমতার নেশায় মেতে ওঠা মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। অস্ত্র হিংস্রতার প্রতীক। মানুষের পৃথিবীতে অস্ত্র ধ্বংস ছাড়া আর কিছু কাজে আসে না। অস্ত্রই সভ্যতার শেষ কথা নয়। তার বদলে চাই গান যা সাম্যের ভালোবাসার আর সুন্দরের কথা বলে। তাই কবি অস্ত্র ফেলে গানকেই জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার করতে বলেছেন।
গান দাঁড়াল ঋষিবালক – গানের সঙ্গে ঋষিবালকের উপমাটি ব্যাখ্যা করো।
উপমা ব্যবহার – ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী গানের অসীম ক্ষমতা লক্ষ করেছেন। এই গান বুলেটকে প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু গানের কোনো নির্দিষ্ট বিষয় কিংবা ধরন নেই। নানান উপায়ে তা বাঁধা হয়। সেখানে গান কখনও হয়ে যায় ঋষিবালকের মতো স্নিগ্ধ, সতেজ, স্বতঃস্ফূর্ত এবং আন্তরিক। তা অপার শান্তি নিয়ে আসে। এই কারণেই কবি গানের সঙ্গে ঋষিবালকের উপমাটি ব্যবহার করেছেন।
মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক – কার মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা? এখানে ময়ূরপালক গোঁজা চিত্রকল্পের তাৎপর্য কী?
- উদ্দিষ্ট জন – কবির অনুভবে গানরূপী ঋষিবালকের মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা।
- ‘ময়ূরপালক’ চিত্রকল্পের তাৎপর্য – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে প্রতিবাদের হাতিয়ার করে কবি এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। গানকে কবি ঋষিবালকের চিত্রকল্পে তুলে ধরে অন্য বার্তা দিয়েছেন। ঋষিবালক পবিত্রতার প্রতীক। তার মাথায় ময়ূরপালক গোঁজার মধ্য দিয়ে কৃষ্ণের রূপকল্প নিয়ে আসা হয়েছে, যা শাশ্বত মানবপ্রেমের ইঙ্গিত দেয়। হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা নয়, হিংসাকে জয় করতে হবে হৃদয়ের পবিত্রতা দিয়ে। উক্তিটির মধ্য দিয়ে সেই সত্যই প্রকাশিত।
“তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান” – এই কথার তাৎপর্য কী?
তাৎপর্য – গান এবং সুরের হাত ধরে গোটা বিশ্বের সাথে মানুষের পরিচয় ঘটে। গান বস্তুত হৃদয়ের এক আশ্চর্য বিস্তার ঘটায়। গানের মাধ্যমেই সম্ভব হয় প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ, মানুষের কাছাকাছি পৌঁছোনো। তাই কবি যখন বলেন – “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশগাঁয়ে” – তখন আসলে গানের এই শক্তি এবং সীমাহীন বিস্তারের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়।
“অস্ত্র ফেলো, অস্ত্র রাখো” – কবি কোথায় অস্ত্র রাখতে বলেছেন? তাঁর এ কথা বলার কারণ কী?
- অস্ত্র রাখার স্থান – কবি গানের দুটি পায়ে অস্ত্র রাখতে বলেছেন।
- এ কথা বলার কারণ – জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় যুদ্ধবাজ মানুষদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষমতার নেশায় মেতে ওঠা মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। অস্ত্র হিংস্রতার প্রতীক। মানুষের পৃথিবীতে অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ অস্ত্রই সভ্যতার শেষ কথা নয়। তার বদলে চাই গান যা সাম্যের আর সুন্দরের কথা বলে। তাই কবি অস্ত্র ফেলে গানকেই জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার করতে বলেছেন। এখানে কবির মানবতাবাদী মনোভাবটিই প্রকাশিত।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার সপ্তম পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ, “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের কাজে লেগেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করব। এছাড়াও, পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করুন যাদের এই তথ্য প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ!
মন্তব্য করুন