দশম শ্রেণি – বাংলা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান

Gopi

কবিতাটি শুরুতেই কবি যুদ্ধের ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে যুদ্ধে মানুষ মারা যায়, ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়, এবং প্রকৃতি বিনষ্ট হয়। যুদ্ধ মানুষের জীবনে শুধুমাত্র দুঃখ-কষ্টই নিয়ে আসে।

তারপর কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে অস্ত্র মানুষের শত্রু। অস্ত্র মানুষের জীবনে শুধুমাত্র মৃত্যু ও ধ্বংসই নিয়ে আসে।

কবিতাটির শেষে কবি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধুমাত্র ভালোবাসা ও সহযোগিতার।

দশম শ্রেণি – বাংলা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান

কবি পরিচিতি

ভূমিকা – আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম সেরা কবি হলেন জয় গোস্বামী। তাঁর কবিতাগুলি ভাষা, শব্দ ও ছন্দের অপূর্ব কাজে অনন্য হয়ে উঠেছে।

জন্ম এবং শৈশব – ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর কলকাতায় জয় গোস্বামীর জন্ম। পাঁচ বছর বয়সে তাঁরা সপরিবারে রানাঘাটে চলে যান। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। জয় গোস্বামীর মা ছিলেন শিক্ষিকা।

সাহিত্যকীর্তি – জয় গোস্বামীর প্রথম কবিতা লেখা তেরো বছর বয়সে বাড়ির পুরোনো সিলিং পাখা নিয়ে। উনিশ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেশ পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতা-সংকলন ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ। এরপর একে-একে প্রকাশিত হয়েছে প্রত্নজীব (১৯৭৮), আলেয়াহ্রদ (১৯৮১), উন্মাদের পাঠক্রম (১৯৮৬), ভুতুমভগবান (১৯৮৮), ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা? (১৯৮৯), আজ যদি আমাকে জিগগেস করো (১৯৯১), গোল্লা (১৯৯১), পাগলী, তোমার সঙ্গে (১৯৯৪), বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা (১৯৯৫), পাখি, হুস (১৯৯৫), ওঃ স্বপ্ন (১৯৯৬) ইত্যাদি কবিতার বই। ১৯৯০-তে ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা? কাব্যগ্রন্থের জন্য এবং ১৯৯৮-তে যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল কাব্যোপন্যাসের জন্য কবি দু- বার ‘আনন্দ পুরস্কার’ পেয়েছেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে জয় গোস্বামী তাঁর বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পান। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে পাগলী, তোমার সঙ্গে কাব্যগ্রন্থের জন্য পান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। এ ছাড়াও তিনি বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

লিখনশৈলী – বাস্তব জীবনের নানা ঘটনা, আর তার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় আমাদের জীবন। কবি জয় গোস্বামী এই বাস্তব জীবন থেকেই সংগ্রহ করে নেন তাঁর কবিতার উপকরণ। তাই কখনও লালগোলা-বনগাঁর ট্রেনে চাল-তোলা মাসিপিসি, কখনও বিয়ে না হওয়া সেলাই দিদিমণি তাঁর কবিতার বিষয় হয়ে ওঠে। আবার প্রেম ও নিঃসঙ্গতা তাঁর কবিতায় বারে বারে ফিরে আসে। জয় গোস্বামীর কবিতা উচ্চকণ্ঠের প্রকাশ নয়। তীব্রতার সঙ্গে কোমলতা মিশিয়ে নিজস্ব কাব্যভাষা তৈরি করেছেন কবি। তাঁর কবিতায় ছন্দের বৈচিত্র্য আছে, প্রতীকের ব্যবহার আছে। তাই তিনি বলতে পারেন- কলম একমাত্র সত্য। বায়ু অগ্নি জল/প্রবাহিত তার মধ্যে। জগৎ নিশ্চল (কলম, লেখনক্রিয়া)।

উৎস

১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জয় গোস্বামীর পাতার পোশাক কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি সংকলিত হয়েছে।

সারসংক্ষেপ

গানের শক্তিতে শক্তিশালী কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই গানকে সঙ্গে নিয়েই যে-কোনো প্রতিবাদের মিছিলে তিনি হাজার মানুষের সঙ্গে হেঁটেছেন, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি খুঁজে পেয়েছেন। গানকে বর্মের মতো ব্যবহার করে তিনি বুলেটকেও আটকাতে পেরেছেন। অর্থাৎ গানের মধ্যেই কবি খুঁজে পেয়েছেন সেই আশ্চর্য শক্তি, যার মাধ্যমে যুদ্ধ থেমে যায়, সৃষ্টি হয় শান্তির বাতাবরণ। মাথার কাছে শকুন বা চিল উড়ে চললেও কবি তাঁর ভেতরে থাকা কোকিলের ওপরেই অর্থাৎ গানের ক্ষমতার উপরেই ভরসা রেখেছেন। বর্ম খুলে ফেললে যখন যুদ্ধ-যুদ্ধ মানসিকতা সরে যায়, তখন এই গানকেই তাঁর মনে হয় ঋষিবালকের মতো শান্ত, সমাহিত। গানদরিয়ায় ভেসেই কবি পৌঁছে যান লোকজীবনের ভেতরে। গান মানুষকে নিয়ে যায় নদীতে কিংবা গ্রামে। গানের হাত ধরেই কবি সর্বত্র মানুষের কাছে পৌঁছে যান। গানের বিপুল ক্ষমতাকে উপলব্ধি করে কবি যুদ্ধবাজদের বলেন গানের কাছে যাবতীয় অস্ত্র সমর্পন করতে।

নামকরণ

সাহিত্যে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই নামকরণ নানান দিক থেকে হতে পারে, কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, কখনও প্রতীকী বা চরিত্রধর্মী, কখনও-বা তা ব্যঞ্জনাধর্মী। আমাদের বিচার্য বিষয় জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক তা দেখা।

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার শিরোনামটি ব্যঞ্জনাধর্মী। কেন-না, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র’ এই স্বাভাবিক স্লোগানকে কবি বদলে দিয়ে এক বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছেন। কবিতার বিষয়বস্তু অবশ্যই যুদ্ধবিরোধী কিন্তু এই বিরোধিতার কৌশল আলাদা। কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন, অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে। অস্ত্র ফেলার মধ্য দিয়ে আর পাঁচ জন শান্তিকামী মানুষের মতোই কবি শান্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। পায়ের কাছে অস্ত্র রাখার আহ্বান যুদ্ধবাজদের আত্মসমর্পণের দিকটিকেই বড়ো করে তোলে। গানকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে কবি সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান গাইতে গাইতেই কবি হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। অর্থাৎ গানের শান্তি দিয়ে তিনি অনায়াসে যুদ্ধ আর ধ্বংসকে রুখে দিতে পারেন। সমাজে যখন লোভী চিল-শকুন রূপ যুদ্ধবাজদের আনাগোনা, কবির সম্বল তখন শুধু একটা কোকিল যা আসলে মানুষের সৃজনশীল সত্তা। এই কোকিলই কবিকে হাজার উপায়ে গান বেঁধে দেবে। গানই ঋষিবালকের মতো পবিত্রতার প্রতীক হয়ে কবিকে তথা সমাজকে মনুষ্যত্বের পথ দেখাবে। তাই হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা বা অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয়-যাবতীয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গানকে বর্ম করে কবি সত্যে ও শান্তিতে পৌঁছোতে চান। এই মূলভাবকে সামনে রেখে দেওয়া কবিতাটির নাম গভীর ব্যঞ্জনার ইঙ্গিত দেয়। তাই কবিতাটির নামকরণ সম্পূর্ণরূপে সংগত এবং যথাযথ।

জয় গোস্বামীর “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতাটি একটি শান্তিবাদী কবিতা। কবি এখানে অস্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, অস্ত্রের মাধ্যমে শান্তি অর্জন সম্ভব নয়। বরং, অস্ত্রের ব্যবহার আরও বেশি হিংসা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। কবি তাই মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তারা যেন অস্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং শান্তির পথে এগিয়ে যায়।

কবিতাটিতে কবি অস্ত্রের ক্ষতিকর প্রভাবগুলির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, অস্ত্র মানুষের জীবনে অশান্তি, মৃত্যু ও ধ্বংস ডেকে আনে। অস্ত্রের ব্যবহারে মানুষ পরস্পরের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয়। কবি তাই মনে করেন, অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করা অপরিহার্য।

কবিতাটিতে কবি শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত করতে হবে। মানুষকে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কবি তাই মনে করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

“অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এটি আমাদেরকে অস্ত্রের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে এবং শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer