দশম শ্রেণি – বাংলা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

Gopi

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র প্রতিবাদ জানাইছেন। কবি বিশ্বাস করেন যে, অস্ত্র শুধুমাত্র ধ্বংসের হাতিয়ার। এটি কখনোই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। কবিতাটিতে কবি অস্ত্রের ক্ষতিকর প্রভাবগুলির কথা তুলে ধরেছেন।

দশম শ্রেণি – বাংলা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটিতে কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় বিবৃত করো

  • শুরুর কথা – জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় অস্ত্রশক্তি এবং পেশিশক্তির বিরুদ্ধে মানুষের সুস্থ রুচি ও নান্দনিকতার প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেছেন।
  • হাতিয়াররূপে গান – অস্ত্রকে প্রতিহত করতে গানকে হাতিয়ার করে তুলেছে মানুষ। গানকে অবলম্বন করে কবি সেই বিপুল শক্তির অধিকারী হয়েছেন যা তাঁকে বুলেট প্রতিহত করার ক্ষমতা দিয়েছে।
  • ঐক্যের বন্ধন – গান তাঁকে এক আশ্চর্য ঐক্যবোধে বেঁধেছে। তাই তাঁর হাতে হাত মিলিয়েছে আরও হাজার মানুষ, পায়ে পা মিলিয়েছে হাজার পা। দৃঢ় ভঙ্গিতে কবি বলতে পেরেছেন- অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে।
  • প্রতীকরূপে এর গান – পৃথিবীর ইতিহাসে অস্ত্র কখনও শেষকথা বলেনি। জয়ী হয়েছে মানুষের শুভবুদ্ধি, একতা ও সৃজনশীলতা। গান এই কবিতায় এসবেরই প্রতীক। গানই কবিকে মানুষের সঙ্গে মিলিয়েছে, রক্ত মুছিয়ে সুন্দরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। গানের নানা রূপ, নানা বিষয়, তার সুরের নানা বৈচিত্র্য। কখনও সে হয়ে ওঠে ঋষিবালকের মতো স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ, কখনও-বা তার ছোঁয়ায় লেগে থাকে কোকিলের মোহময় সুরেলা সৃষ্টি।
  • অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান – যুদ্ধবাজ মানুষ অস্ত্র হাতে মনুষ্যত্বের বিপক্ষে গিয়ে যখন দাঁড়ায়, তখন গানের বর্ম পরে কবি অস্ত্রকে সহজেই প্রতিহত করেন।

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটিতে কবির রচনারীতির দক্ষতা আলোচনা করো।

  • শুরুর কথা – জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটিতে গানকে আশ্রয় করে কবি প্রতিবাদের নিজস্ব ধরন খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার গানের মধ্যে কবির নিজস্ব অনুভূতির আবেগময় প্রকাশ ঘটিয়ে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছেন।
  • স্তবক বিন্যাস – তিনটি স্তবকের প্রথমটিতে গানকে আশ্রয় করে কবির প্রতিবাদ, দ্বিতীয়টিতে কন্ঠস্বর কিছুটা নরম করে গানের সঙ্গে কবির সংযোগ এবং শেষ স্তবকটিতে নিজস্ব অনুভবে গানের বিস্তারকে বোঝার চেষ্টা।
  • বিষয়ের পার্থক্য – বিষয়ের সূক্ষ্ম পার্থক্যে কন্ঠস্বরের তীব্রতার তারতম্য ঘটিয়েছেন কবি।
  • পঙ্ক্তিসজ্জা – লক্ষ করার বিষয় যে, ১৮ পঙ্ক্তির কবিতাটি তিনটি স্তবকে বিন্যস্ত হলেও পঙ্ক্তিসজ্জা সমান নয়। প্রথম স্তবকে ৫টি পঙ্ক্তি, দ্বিতীয় স্তবকে ৬টি পঙ্ক্তি, তৃতীয় স্তবকে ৭টি পঙ্ক্তি স্থান পেয়েছে।
  • মিল – কবিতায় অন্ত্যমিল থাকলেও তার রীতিও একরকম নয়। অন্ত্যমিল নেই এমন পঙ্ক্তিও শেষ স্তবকে আছে।
  • শেষের কথা – গানের মধ্যে যেমন তৈরি হয় এক স্বচ্ছন্দ চলা, এই কবিতাও তেমনই সাবলীলভাবে এগিয়ে চলেছে। অত্যন্ত সহজভাষায় বিষয়ের বিস্তার ঘটিয়েছেন কবি – গান তো জানি একটা দুটো/ আঁকড়ে ধরে সে খড়কুটো / রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে। সহজ ভাষায় এই কবিতায় গভীরভাবকে ছুঁয়ে গেছেন কবি।

গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে – গানের বর্ম পরার প্রয়োজনীয়তা কী তা ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি অবলম্বনে আলোচনা করো।

অথবা, গান কীভাবে অস্ত্রের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে তা ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা অবলম্বনে লেখো।
অথবা, অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে কবি কীভাবে প্রতিষ্ঠা করছেন?

  • শুরুর কথা – ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সৃষ্টিকেই প্রতিরোধের একমাত্র উপায় করে তুলতে চেয়েছেন কবি জয় গোস্বামী।
  • প্রতিবাদের হাতিয়ার – সংগীতের সুরেই মিলে যায় সহস্র কন্ঠ। কখনও তা হৃদয়কে শুদ্ধ করার অবলম্বন, কখনও-বা প্রতিবাদের হাতিয়ার। প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে গানই মানুষকে জোগায় অসীম মনোবল, জোট বাঁধার সাহস।
  • অস্ত্রের বিরোধিতা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে এই গানকে আঁকড়ে ধরেই কবি অনায়াসে হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। গানই সেই আশ্রয়, যা হিংসার অবসান ঘটাতে পারে। অজস্র হিংসার বিপরীতে একটা গানই হতে পারে কবির বা সৃজনশীল মানুষের নিজস্ব জবাব। গান কবির কাছে বর্ম, যা পরে বিরুদ্ধ শক্তির আক্রমণকে প্রতিহত করার শক্তি অর্জন করেন কবি।
  • নান্দনিক প্রতিরোধ – রক্তাক্ততার পথ ধরে অশুভ অকল্যাণকারী শক্তিকে প্রতিরোধ নয়, পরিবর্তে কবি তৈরি করতে চেয়েছেন এক নান্দনিক প্রতিরোধ। আত্মশক্তির জাগরণ – হিংসা ও হানাহানির এই পৃথিবীতে গানের অসীম শক্তিই মানুষকে একত্রিত করে, আত্মশক্তিতে জাগিয়ে তোলে। এই শক্তিই কবিকে অনুপ্রাণিত করেছে গানের সামনে নতজানু হতে।
  • ইতিকথা – তাই কবি গানের বর্ম পরেই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে চেয়েছেন।

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

সাহিত্যে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই নামকরণ নানান দিক থেকে হতে পারে, কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, কখনও প্রতীকী বা চরিত্রধর্মী, কখনও-বা তা ব্যঞ্জনাধর্মী। আমাদের বিচার্য বিষয় জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক তা দেখা।

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার শিরোনামটি ব্যঞ্জনাধর্মী। কেন-না, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র’ এই স্বাভাবিক স্লোগানকে কবি বদলে দিয়ে এক বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছেন। কবিতার বিষয়বস্তু অবশ্যই যুদ্ধবিরোধী কিন্তু এই বিরোধিতার কৌশল আলাদা। কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন, অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে। অস্ত্র ফেলার মধ্য দিয়ে আর পাঁচ জন শান্তিকামী মানুষের মতোই কবি শান্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। পায়ের কাছে অস্ত্র রাখার আহ্বান যুদ্ধবাজদের আত্মসমর্পণের দিকটিকেই বড়ো করে তোলে। গানকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে কবি সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান গাইতে গাইতেই কবি হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। অর্থাৎ গানের শান্তি দিয়ে তিনি অনায়াসে যুদ্ধ আর ধ্বংসকে রুখে দিতে পারেন। সমাজে যখন লোভী চিল-শকুন রূপ যুদ্ধবাজদের আনাগোনা, কবির সম্বল তখন শুধু একটা কোকিল যা আসলে মানুষের সৃজনশীল সত্তা। এই কোকিলই কবিকে হাজার উপায়ে গান বেঁধে দেবে। গানই ঋষিবালকের মতো পবিত্রতার প্রতীক হয়ে কবিকে তথা সমাজকে মনুষ্যত্বের পথ দেখাবে। তাই হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা বা অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয়-যাবতীয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গানকে বর্ম করে কবি সত্যে ও শান্তিতে পৌঁছোতে চান। এই মূলভাবকে সামনে রেখে দেওয়া কবিতাটির নাম গভীর ব্যঞ্জনার ইঙ্গিত দেয়। তাই কবিতাটির নামকরণ সম্পূর্ণরূপে সংগত এবং যথাযথ।

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কীভাবে কবি জয় গোস্বামীকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কবিতা অবলম্বনে লেখো।

  • শুরুর কথা – যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা / যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা। -এ হল আধুনিক সভ্য পৃথিবীর বিবেকের কণ্ঠস্বর। যুদ্ধ মানবতার শত্রু। যুদ্ধই মানুষের ঐক্যবদ্ধ জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে, হিংসার বিষে বিষাক্ত করে তোলে সমাজসভ্যতাকে। এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পথে হেঁটে কবি জয় গোস্বামী পৃথিবীকে হিংসামুক্ত করতে চেয়েছেন।
  • অস্ত্রের বিরোধিতা – ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী গানকে যুদ্ধ বিরোধিতার এক নতুন উপায়রূপে দাঁড় করিয়েছেন। সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ একসময় অস্ত্র দিয়েই অস্ত্রকে প্রতিরোধের পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু এই পথও রক্তাক্ত, হিংস্রতায় ভরা। অন্যদিকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে গান শান্তির বার্তা বয়ে আনে। জয় গোস্বামী তাই গানের বর্ম পরেই অস্ত্রবিরোধী হতে চান।
  • সৃজনশীলতার জাগরণ – সৃজনশীলতাকে অবলম্বন করে মানবতাকে সুরক্ষিত করতে পারে গান। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে শুভবুদ্ধি ও সৃজনশীলতা জাগলে এই যুদ্ধের রক্তে ভরা পৃথিবী আবার শান্ত ও সুন্দর হয়ে উঠবে। আমাদের রক্তভেজা সমাজে যদি গান এসে ঋষিবালক হয়ে দাঁড়ায়, তবে পৃথিবীর সব যুদ্ধবাজরা স্তব্ধ হয়ে যাবে।
  • ইতিকথা – এভাবেই কবি গানকে হাতিয়ার করে উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন।

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার মাধ্যমে কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র প্রতিবাদের কথা ব্যক্ত করেছেন। কবির এই প্রতিবাদের মধ্যে মানবতার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। কবিতাটি আমাদেরকে অস্ত্রের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং অস্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার প্রেরণা দেয়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer