আজকে আমরা এই আর্টিকেলে সমাস ও তার প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করব। সমাস বলতে একাধিক পদের সমন্বয়ে নতুন শব্দ গঠনকে বোঝায়। সমাসবদ্ধ পদে সমস্ত পদের অর্থ পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ না পেয়ে, নতুন অর্থ প্রকাশিত হয়। সমাস ও তার প্রকারভেদ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই সংলাপ রচনা গুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে গেলে, তোমরা অবশই মাধ্যমিক পরীক্ষায় সমাস ও তার প্রকারভেদ লিখে আস্তে পারবে।
সমাস শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করলে হয় সম্-অস্ + ঘঞ্। এখন, সমাস-সংক্রান্ত যে পরিভাষাগুলি পাওয়া গেল, তাদের ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা তৈরি করা হল।
ব্যাসবাক্য
- মনমাঝি – মন রূপ মাঝি
- বীণাপাণি – বীণা পাণিতে যাঁর
এখানে ‘মনমাঝি’ এবং ‘বীণাপাণি’ হল সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদ। এই পদগুলি কীভাবে সংযুক্ত হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করার জন্য যে বাক্য বা বাক্যাংশটি প্রয়োজন হয়, সেটিই হল ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য। যেমন, উপরোক্ত ক্ষেত্রে মন রূপ মাঝি এবং বীণা পাণিতে যাঁর হল যথাক্রমে মনমাঝি এবং বীণাপাণি পদ দুটির ব্যাসবাক্য। কারণ, ‘মন’ এবং ‘মাঝি’ পদ দুটি কোন্ যুক্তিতে সংযোজিত হচ্ছে এবং ‘মনমাঝি’ পদটি তৈরি করছে, তা বোঝা যায় ‘মন রূপ মাঝি’ বাক্যাংশটির দ্বারা। একই যুক্তিতে ব্যাসবাক্য হয় ‘বীণা পাণিতে যাঁর’।
সমাসবদ্ধ পদ এবং ব্যাসবাক্যকে দু-ভাবে লেখা যায়। আগে সমাসবদ্ধ পদ, পরে ব্যাসবাক্য অথবা আগে ব্যাসবাক্য, পরে সমাসবদ্ধ পদ।
সমাসবদ্ধ পদ | ব্যাসবাক্য |
গাড়িঘোড়া | গাড়ি ও ঘোড়া |
বদমেজাজি | বদ মেজাজ যার |
অথবা,
ব্যাসবাক্য | সমাসবদ্ধ পদ |
গাড়ি ও ঘোড়া | গাড়িঘোড়া |
বদ মেজাজ যার | বদমেজাজি |
সমস্যমান পদ
- দশ, আনন – দশটি আনন যার – দশানন
- লেখা, পড়া – লেখা ও পড়া – লেখাপড়া
এখানে দশ এবং আনন এই পদ দুটি যুক্ত হয়ে দশানন পদটি তৈরি হয়েছে। আবার, লেখাপড়া পদটির মূলে আছে যে দুটি পদ, তা হল লেখা ও পড়া। এই মূলগত পদগুলিকে বলা হয় সমস্যমান পদ। অর্থাৎ, যে পদগুলোর মধ্যে সমাস হয় তাদের বলে সমস্যমান পদ।
সমস্যমান পদ | সমাসবদ্ধ পদ |
মহান, দেব | মহাদেব |
দিন, রাত | দিনরাত |
রাজা, ঋষি | রাজর্ষি |
হাতে, গরম | হাতেগরম |
পূর্বপদ ও উত্তরপদ
সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যেটি আগে আসে, তাকে পূর্বপদ বলা হয়। পূর্বপদের পরে ব্যাসবাক্যে যে সমস্যমান পদটি আসে, তাকে উত্তরপদ বলা হয়।
সমস্যমান পদ | ব্যাসবাক্য | সমস্ত পদ | পূর্বপদ | উত্তরপদ |
ভিক্ষা, অন্ন | ভিক্ষা লব্ধ অন্ন | ভিক্ষান্ন | ভিক্ষা | অন্ন |
গঙ্গা, জল | গঙ্গার জল | গঙ্গাজল | গঙ্গা | জল |
মনে রাখতে হবে যে, ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ এবং উত্তরপদ ছাড়া আর যে পদগুলির অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাদের বলা হয় সাহায্যকারী পদ।
সমাসের শ্রেণিবিভাগ
সমস্যমান পদগুলি মিলিত হওয়ার অর্থগত যুক্তিটি নানা প্রকারের হতে পারে। এই অর্থগত যুক্তির প্রকারভেদ অনুযায়ী সমাসকে নয়টি ভাগে। বিভক্ত করা যায়। –
- দ্বন্দ্ব সমাস,
- তৎপুরুষ সমাস,
- কর্মধারয় সমাস,
- বহুব্রীহি সমাস,
- দ্বিগু সমাস,
- অব্যয়ীভাব সমাস,
- নিত্য সমাস,
- অলোপ সমাস,
- বাক্যাশ্রয়ী সমাস।
দ্বন্দ্ব সমাস
দ্বন্দ্ব শব্দের অর্থ ‘যুক্ত’। যদি ব্যাসবাক্যের দুটি সমস্যমান পদ থাকে, দুটি পদের অর্থই প্রধান হয় এবং সমস্যমান পদ দুটি একটি সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত থাকে, তবে এ রকম সমাসকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
যেমন –
জন্মমৃত্যু – জন্ম ও মৃত্যু
এই সমাসটি যে-দুটি সমস্যমান পদ দিয়ে গঠিত, সমাসবদ্ধ পদটিতে তাদের উভয়েরই অর্থ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ‘জন্ম’ এবং ‘মৃত্যু’ উভয়েরই সমান গুরুত্ব আছে। এই সমস্যমান পদগুলি ‘ও’ সংযোজক অব্যয় দিয়ে যুক্ত। এরকম আর কয়েকটি উদাহরণ হল –
- জলকাদা – জল ও কাদা
- দেনাপাওনা – দেনা ও পাওনা
দ্বন্দ্ব সমাসে দুইয়ের বেশি সমস্যমান পদও পাওয়া যায়। যেমন —
- চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয় – চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য ও পেয়
- স্বর্গমর্ত্যপাতাল – স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল
- কায়মনোবাক্য – কায়, মন ও বাক্য
দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদ দুটির বিভিন্ন প্রকৃতি ও তার উদাহরণগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
দ্বন্দ্ব সমাসের বিভিন্ন প্রকৃতি –
তৎপুরুষ সমাস
তৎপুরুষ কথাটির সাধারণ অর্থ ‘তার পুরুষ’। যে সমাসের ব্যাসবাক্যে সমস্যমান পদদুটির মধ্যে পরপদটি প্রধান হয় এবং পূর্বপদের কারকবোধক ও সম্বন্ধবোধক বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন – রান্নাঘর রান্নার জন্য ঘর। এই ব্যাসবাক্যে ‘রান্না’ ও ‘ঘর’-এর মধ্যে ‘ঘর’-এর প্রাধান্য আছে। ব্যাসবাক্যে ‘জন্য’ অনুসর্গটি সমাসনিষ্পন্ন পদে লোপ পেয়েছে। কারকের অর্থের দিক থেকে এটি নিমিত্ত তৎপুরুষ।
কারক ও সম্বন্ধসূচক বিভক্তি/অনুসর্গ অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ –
বিভিন্ন ধরনের তৎপুরুষ সমাসের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
কর্মা তৎপুরুষ – এই সমাসে পূর্বপদের কর্মকারকবোধক বিভক্তি লোপ পায়। যেমন –
- লোকদেখানো – লোককে দেখানো
- ছেলেভুলানো – ছেলেকে ভুলানো
একইভাবে রথদেখা, বইপড়া, কলাবেচা, লুচিভাজা, দেশোদ্ধার, ঘাসকাটা, বীজবোনা, লোকঠকানো, বাসনধোয়া, বধূবরণ, নবীনবরণ, সাপখেলানো ইত্যাদি।
গত, প্রাপ্ত, আপন্ন, আশ্রিত, আরুঢ়, অতীত প্রভৃতি শব্দযোগেও পূর্বপদের ‘কে’ বিভক্তিচিহ্ন লোপ হয়। যেমন –
- ব্যক্তিগত – ব্যক্তিকে গত
- অশ্বারূঢ় – অশ্বকে আরুঢ়
- বিস্ময়াপন্ন – বিস্ময়কে আপন্ন
- শরণাগত – শরণকে আগত
- কল্পনাতীত – কল্পনার অতীত
- বয়ঃপ্রাপ্ত – বয়ঃ (বয়স)-কে প্রাপ্ত
করণ তৎপুরুষ – এই সমাসে পূর্বপদের করণকারকবোধক বিভক্তি ও অনুসর্গ লোপ পায়। যেমন –
- হাতধরা – হাত দিয়ে ধরা
- পত্রাবৃত – পত্র দিয়ে আবৃত
একইভাবে শোকাকুল, জ্ঞানহীন, নজরবন্দি, যন্ত্রচালিত, শ্রমলব্ধ, নামাঙ্কিত, আশাহত, গোঁজামিল, দর্শকঠাসা, বজ্রাহত, মধুমাখা, দুগ্ধপোষ্য ইত্যাদি।
হীন, রহিত, শূন্য প্রভৃতি ঊনার্থক শব্দ যোগে পূর্বপদে করণকারকের বিভক্তি ও অনুসর্গ লোপ পায়। যেমন –
- জ্ঞানশূন্য – জ্ঞানের দ্বারা শূন্য
- শ্রীহীন – শ্রীর দ্বারা হীন
- বুদ্ধিরহিত – বুদ্ধি দ্বারা রহিত
- পিতৃহীন – পিতৃ (পিতা)-র দ্বারা হীন
নিমিত্ত তৎপুরুষ – এই সমাসে পূর্বপদের নিমিত্তকারকবোধক বিভক্তি ও অনুসর্গ লোপ পায়। যেমন –
একইভাবে মালগাড়ি, বিয়েপাগলা, নাট্যমঞ্চ, খেয়াঘাট, দেবদত্ত, সত্যাগ্রহ, তপোবন, লোকালয়, শিশুসাহিত্য, ফাঁসিকাঠ, স্মৃতিমন্দির, স্বদেশপ্রেম ইত্যাদি।
অপাদান তৎপুরুষ – এই সমাসে পূর্বপদে অপাদানকারকবোধক বিভক্তি ও অনুসর্গ লোপ পায়। যেমন –
- আদ্যন্ত – আদি হতে অন্ত
- মায়ামুক্ত – মায়া থেকে মুক্ত
- ঋণমুক্তি – ঋণ থেকে মুক্তি
- দুগ্ধজাত – দুগ্ধ থেকে জাত
- চাকভাঙা – চাক থেকে ভাঙা
- শতাধিক – শত থেকে অধিক
- জলাতঙ্ক – জল থেকে আতঙ্ক
- লোকভয় – লোকের থেকে ভয়
- বামেতর – বাম হইতে ইতর (অন্য)
একইভাবে বিদেশাগত, বৃন্তচ্যুত, শতমুক্তাধিক, বিলেতফেরত, পাপমুক্ত, স্কুলপালানো, ঋণমুক্ত ইত্যাদি।
অধিকরণ তৎপুরুষ – এই সমাসে পূর্বপদে অধিকরণকারকবোধক বিভক্তি লোপ পায়। যেমন –
- গঙ্গাস্নান – গঙ্গায় স্নান
- অকালমৃত্যু – অকালে মৃত্যু
- কোণঠাসা – কোণে ঠাসা
- বাক্সবন্দি – বাক্সে বন্দি
- গাছপাকা – গাছে পাকা
- মৃৎপ্রোথিত – মৃৎ-এ প্রোথিত
একইভাবে মর্মাহত, সভাসীন, রাতকানা, বনবাস, ক্ষমতাসীন, পাড়াবেড়ানো, গলাধাক্কা, বিশ্ববিখ্যাত, পুথিগত, আকাশভ্রমণ ইত্যাদি।
সম্বন্ধ তৎপুরুষ – এই সমাসে পূর্বপদে সম্বন্ধবোধক বিভক্তি লোপ পায়। যেমন –
- মাতৃভাষা – মাতার ভাষা
- রাজহংস – হংসের রাজা
- বীরপূজা – বীরের পূজা
- কালিদাস – কালীর দাস
- স্বাধীন – স্ব-এর অধীন
- হস্তীশাবক – হস্তীর শাবক
একইভাবে নদীতীর, বিশ্বামিত্র, দানসামগ্রী, শ্বশুরবাড়ি, ধানখেত, রাজপুত্র, গাছতলা, জগদীশ্বর, সমুদ্রতট, রাজমাতা ইত্যাদি।
মনে রেখো
দাস শব্দ পরে থাকলে কালী, দেবী, চণ্ডী, ষষ্ঠী প্রভৃতি স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে থাকা ‘ঈ’-কার পরিবর্তিত হয়ে ‘ই’-কারে পরিণত হয়।
না-তৎপুরুষ – এই সমাসে পূর্বপদ না-বাচক অব্যয় হয় এবং পরপদের অর্থপ্রাধান্য থাকে।
উপপদ তৎপুরুষ – ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যোগে কৃদন্ত পদ হয়। কৃদন্ত পদের পূর্বে যে পদ বসে, তাকে উপপদ বলে। যেমন – ‘জলজ’ শব্দটির ক্ষেত্রে ‘জল’ পদটির পরে রয়েছে ‘জন’ ধাতু, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ড’ কৃৎপ্রত্যয়। সুতরাং, এক্ষেত্রে ‘জল’ পদটি হল একটি উপপদ। এভাবে, উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাস ঘটলে তাকে উপপদ তৎপুরুষ বলে। যেমন –
- পঙ্কজ – পঙ্কে জন্মায় যা
- শাস্ত্রজ্ঞ – শাস্ত্র জানেন যিনি
- নিশাকর – নিশা করে যে
- ঘুষখোর – ঘুষ খায় যে
- ছেলেধরা – ছেলেকে ধরে যে
- অরিন্দম – অরিকে দমন করে যে
একইভাবে বসুন্ধরা, গোপ, জলজ, মধুকর, উরগ, আত্মজ, অগ্রজ, ইন্দ্রজিৎ, দিশাহারা, জাদুকর, প্রজাপালক ইত্যাদি।
ব্যাপ্তি তৎপুরুষ – যে তৎপুরুষ সমাসে স্থান ও কালের ব্যাপ্তি বা বিস্তার বোঝায় এবং পূর্বপদে ব্যাপ্তার্থক শব্দটি লোপ পায়, তাকে ব্যাপ্তি তৎপুরুষ বলে। সংস্কৃতে ব্যাপ্তি বোঝাতে নির্দিষ্ট বিভক্তি চিহ্ন থাকলেও বাংলায় তা নেই। যেমন –
- বিশ্বযুদ্ধ – বিশ্ব ব্যাপী যুদ্ধ
- চিরসুখী – চিরকাল ব্যাপী সুখী
- ক্ষণস্থায়ী – ক্ষণকাল ব্যাপী স্থায়ী
- আসমুদ্রহিমাচল – সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত
ক্রিয়াবিশেষণ তৎপুরুষ – যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদটি ক্রিয়াবিশেষণ হয় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে ক্রিয়াবিশেষণ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন –
- দৃঢ়নিবদ্ধ – দৃঢ় ভাবে নিবন্ধ
- ঘনসন্নিবিষ্ট – ঘন ভাবে সন্নিবিষ্ট
- নিমরাজি – নিম (অর্ধ) ভাবে রাজি
একইভাবে দ্রুতগামী, আধময়লা, অর্ধমৃত, ঘনপিনদ্ধ, অর্ধসমাপ্ত ইত্যাদি।
উপসর্গ তৎপুরুষ – এই তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদ উপসর্গের কাজ করে এবং তার সঙ্গে বিশেষ্য কিংবা বিশেষণের মতো আচরণকারী পরপদের সমাস হয়। যেমন –
- প্রপৌত্র – প্র যে পৌত্র
- অতিমানব – অতি যে মানব
- রামদা – রাম (বড়ো) যে দা
- ফিবছর – ফি (প্রতি) বছর
- প্রতিধ্বনি – প্রতি রূপ ধ্বনি
কর্মধারয় সমাস
এই সমাসটির নাম থেকেই এর স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। সংস্কৃতে ‘কর্মধারয়’ পদটির ব্যাসবাক্য হল ‘কর্মা চাসৌ ধারয়শ্চ’। অর্থাৎ, যে করে সে-ই ধরে। কর্মকে ধারণ করে বলে, এখানে এই সমাসটির নাম কর্মধারয়। এই সমাসে সমস্যমান পদগুলি বিশেষ্য-বিশেষণ হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান হয়। তৎপুরুষের ক্ষেত্রেও পরপদের প্রাধান্য থাকে বলে এবং শূন্য বিভক্তির চিহ্ন পূর্বপদে যুক্ত থাকে বলে অনেকে কর্মধারয়কে তৎপুরুষের অন্তর্গত করতে চান।
বিশেষ্য ও বিশেষণ বা বিশেষণ ও বিশেষ্য, অথবা দুটি বিশেষ্য কিংবা দুটি বিশেষণ পদের সমাস হলে এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেলে, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন – নীলোৎপল – নীল যে উৎপল এক্ষেত্রে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য এবং বিশেষ্যেরই অর্থপ্রাধান্য প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং এটি কর্মধারয় সমাস। অনুরূপে, খাসমহল – খাস যে মহল।
কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ
সাধারণ কর্মধারয় – বিশেষণ-বিশেষ্যে বা বিশেষ্যে-বিশেষ্যে বা বিশেষণ-বিশেষণে যে কর্মধারয় সমাস হয়, তাকে সাধারণ কর্মধারয় সমাস বলে। বিশেষ্য ও বিশেষণের উপস্থিতির দিক থেকে সাধারণ কর্মধারয় চার ধরনের –
- মধ্যপদলোপী কর্মধারয় – যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদ বা পদগুলি লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় বলে।
সমাসবদ্ধ পদ | পূর্বপদ | মধ্যপদ | পরপদ |
সিংহাসন | সিংহ | চিহ্নিত | আসন |
মৌমাছি | মৌ | সঞ্চয়কারী | মাছি |
অর্থমন্ত্রী | অর্থ | বিষয়ক | মন্ত্রী |
এ ছাড়া ছায়াতরু, বরযাত্রী, ঘরজামাই, হাতঘড়ি, শাখামৃগ, বৌদ্ধধর্ম, স্মৃতিসৌধ, অষ্টাদশ, জয়ধ্বনি, মধ্যাহ্নভোজন, পল্লীসাহিত্য, গঙ্গানদী ইত্যাদি।
আমরা অনেক সময় দুটি ভিন্ন জাতীয় বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে তুলনা করি। এই দুটি বস্তুর মধ্যে যেটি প্রধান, অর্থাৎ যার সঙ্গে অন্য বস্তুটির তুলনা করা হয়, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যাকে দিয়ে তুলনা করি, তাকে বলা হয় উপমান। যে কারণে তুলনা করি, সেই কারণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। কারণ, এই ধর্ম বা গুণ বা বৈশিষ্ট্য ওই দুটি বস্তুর মধ্যেই আছে। তুলনা করার সময় ন্যায়, মতো, সম প্রভৃতি সাদৃশ্যবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়।
উপমান কর্মধারয় – উপমান পদের সঙ্গে সাধারণ-ধর্মবাচক পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় বলা হয়। দুটি পদের একটি বিশেষ্য এবং অন্যটি বিশেষণ হয়।
সমাসবদ্ধ পদ | উপমান | সাদৃশ্যবাচক শব্দ | সাধারণ ধর্ম |
ফুটিফাটা | ফুটির | মতো | ফাটা |
গোবেচারা | গো-র | মতো | বেচারা |
চন্দনস্নিগ্ধ | চন্দনের | মতো | স্নিগ্ধ |
এ ছাড়াও জলদগম্ভীর, হস্তীমূর্খ, চিঁড়েচ্যাপটা, মিশকালো, ঘনশ্যাম, শালপ্রাংশু, পল্লবপেলব, শশব্যস্ত, বজ্রকঠিন, লৌহদৃঢ়, মিশকালো, সিঁদুররাঙা ইত্যাদি উপমান কর্মধারয়ের উদাহরণ।
উপমিত কর্মধারয় – যে সমাসে পূর্বপদ উপমেয় এবং পরপদ উপমান হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় বলা হয়। সাধারণ ধর্মের উল্লেখ এক্ষেত্রে করা হয় না। এই সমাসে উভয় পদই বিশেষ্য হয়।
সমাসবদ্ধ পদ | উপমেয় | উপমান | সাদৃশ্যবাচক শব্দ |
চরণপদ্ম | চরণ | পদ্মের | মতো |
আমসন্দেশ | সন্দেশ | আমের | মতো |
এ ছাড়াও কথামৃত, চাঁদবদন, সোনামুখ, করপল্লব, পুরুষসিংহ, আঁখিপদ্ম, নয়নকমল, মুখচন্দ্র, ফুলকপি ইত্যাদি উপমিত কর্মধারয়ের উদাহরণ।
রূপক কর্মধারয় – যে কর্মধারয় সমাসে উপমেয় এবং উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় বলা হয়।
সমাসবদ্ধ পদ | উপমেয় | সাদৃশ্যবাচক শব্দ | উপমান |
রোষানল | রোষ | রূপ | অনল |
দেশমাতৃকা | দেশ | রূপ | মাতৃকা |
একইভাবে হৃদয়ারণ্য, দেহপিঞ্জর, হৃদয়াকাশ, প্রাণপাখি, ক্রোধানল, মনমাঝি, হৃদয়কুসুম, ভবসিন্ধু, স্নেহসমুদ্র, বিষাদসিন্ধু, ভক্তিসুধা ইত্যাদি।
উপমান, উপমিত ও রূপক কর্মধারয়ের মধ্যে তুলনা
উপমান কর্মধারয় | উপমিত কর্মধারয় | রূপক কর্মধারয় |
এটি উপমান ও সাধারণ ধর্মের মধ্যে সমাস। | এটি উপমিত ও উপমেয়র মধ্যে সমাস। | এটি উপমিত ও উপমেয়র মধ্যে সমাস। |
সাধারণ ধর্ম থাকে, উপমেয় থাকে না। | সাধারণ ধর্ম থাকে না। | সাধারণ ধর্ম থাকে না। |
পূর্বপদ উপমান এবং পরপদ সাধারণ ধর্ম। | পূর্বপদ উপমেয়, পরপদ উপমান। | পূর্বপদ উপমেয়, পরপদ উপমান। |
বহুব্রীহি সমাস
বহুব্রীহি-সমাসের এই নামকরণটিই বহুব্রীহি সমাসের আদর্শ উদাহরণ। ‘বহু ব্রীহি (ধান) যার’ – এই হল বহুব্রীহির ব্যাসবাক্য। ‘দশানন’ শব্দটির মধ্যে দুটি অর্থ আছে। একটি অর্থ শব্দটিকে ভাঙলেই পাওয়া যায় – দশ আনন অর্থাৎ দশটি মাথা। আবার ‘দশানন’ বললে শুধু ‘দশটি মাথা’-ই বোঝায় না, বোঝায় রামায়ণের রাবণকেও। অর্থাৎ ‘দশানন’-এই সমাসবদ্ধ শব্দটিকে ভাঙলে আমরা ব্যাসবাক্য পাব – দশ আনন যাঁর। এটি বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ। কারণ, সমাসবদ্ধ পদটি সম্পূর্ণ নতুন এক অর্থকে প্রকাশ করছে, যা যে দুটি পদের মধ্যে সমাস হয়েছে তার থেকে আলাদা।
ব্যাকরণের ভাষায়, যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির কোনোটিরই অর্থ প্রধানভাবে না বুঝিয়ে তাদের মাধ্যমে অন্য কোনো অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন – ঘৃতান্ন-ঘৃত অন্ন যার (অগ্নি)। এক্ষেত্রে ঘৃত যার অন্ন অর্থে বোঝাচ্ছে আগুন বা অগ্নিকে।
বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ –
সমানাধিকরণ বহুব্রীহি – বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলে। উভয় পদেই শূন্য বিভক্তি হয় বলে একে ‘সমানাধিকরণ’ বলা হয়। যেমন –
- সুগন্ধ – সু গন্ধ যার
- মধ্যবিত্ত – মধ্য বিত্ত যার
- মূঢ়মতি – মূঢ় মতি যার
- বিলোচন – বিশিষ্ট লোচন যার
- পক্ককেশ – পক্ক কেশ যার
- গৌরাঙ্গ – গৌর অঙ্গ যার
- হীনশক্তি – হীন শক্তি যার
- দৃঢ়প্রতিজ্ঞ – দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যার
- বিশালাকার – বিশাল আকার যার
একইভাবে কদাকার, সতীর্থ, শ্যামাঙ্গ, নীলাম্বর, সিদ্ধার্থ, সুধী, কুবের ইত্যাদি।
ব্যধিকরণ বহুব্রীহি – যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের বিভক্তিচিহ্ন আলাদা হয়, তাকে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি বলা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত পূর্বপদে শূন্য বিভক্তি এবং পরপদে ‘এ’ বা ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন –
- মধুকণ্ঠ – মধু কণ্ঠে যার
- শূলপাণি – শূল পাণিতে যার
- জ্ঞানগর্ভ – জ্ঞান গর্ভে যার
- হাসিমুখ – হাসি মুখে যার
- ইত্যাদি – ইতি আদিতে যার
- পদ্মনাভ – পদ্ম নাভিতে যার
- রত্নগর্ভা – রত্ন গর্ভে যার
- খড়গহস্ত – খড়গ হস্তে যার
- বীণাপাণি – বীণা পাণিতে যার
একইভাবে কলকণ্ঠ, পাদপদ্ম, মিলনান্তক, শশাঙ্ক, তুলনামূলক ইত্যাদি।
নাঞর্থক বহুব্রীহি – না-বোধক বা নঞর্থক পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে বহুব্রীহি সমাস, তাকেই নঞর্থক বহুব্রীহি বলে। যেমন –
- অনন্ত – নেই অন্ত যার
- নির্বিকল্প – নেই বিকল্প যার
- অথই – নেই থই যার
- বেইমান – বে (নেই) ইমান যার
- নিঃশঙ্ক – নিঃ (নেই) শঙ্কা যার
- বিশ্রী – (বি) বিগত হয়েছে শ্রী যার
একইভাবে বিশৃঙ্খল, বীতশোক, অপয়া, নির্জলা, অপ্রতিভ, অনর্থক, অনাদি ইত্যাদি।
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি – বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত পদ লোপ পেলে, তাকে বলা হয় মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি।
এই সমাসে প্রায় ক্ষেত্রেই উপমানের সঙ্গে সমাস হয় (উপমান = যার সঙ্গে তুলনা করা হয়)। তাই একে উপমাত্মক বহুব্রীহিও বলা হয়। তা ছাড়া, ব্যাসবাক্যটি অনেক সময় ব্যাখ্যামূলক হয় বলে একে ব্যাখ্যাত্মক বহুব্রীহিও বলে। যেমন –
- মৃগনয়না – মৃগের নয়নের ন্যায় চঞ্চল নয়ন যার
- বিড়ালাক্ষী – বিড়ালের অক্ষির বর্ণের ন্যায় অক্ষি যার
একইভাবে মীনাক্ষী, ডাকাবুকো, চিরুণদাঁতি, ক্ষুরধার, বাঁদরমুখো, সোনামুখী, ভাইফোঁটা, একবুক, কপোতাক্ষ ইত্যাদি।
সহার্থকবহুব্রীহি – এই প্রকার বহুব্রীহি সমাসে সমাসবদ্ধ পদটির আদিতে ‘সহিত’-বাচক ‘স’ যুক্ত হয়। পূর্বপদটি সাধারণত বিশেষ্য হয়। অর্থাৎ, পূর্বপদের বিশেষ্যের সঙ্গে সহার্থক পরপদের বহুব্রীহি সমাস হলে তা সহার্থক বহুব্রীহি হয়ে থাকে। যেমন –
- সশ্রদ্ধ – শ্রদ্ধার সঙ্গে বর্তমান
- সবেগ – বেগের সঙ্গে বর্তমান
- সাবধান – অবধানের সঙ্গে বিদ্যমান
- সক্রিয় – ক্রিয়ার সঙ্গে বর্তমান
একইভাবে সপুত্র, সবান্ধব, সদয়, সাবলীল, সফল, সস্ত্রীক, সতর্ক সাবধান, সার্থক, সলজ্জ ইত্যাদি।
ব্যতিহার বহুব্রীহি – পরস্পর একজাতীয় ক্রিয়ার বিনিময় বোঝাতে একই বিশেষ্যের দুবার ব্যবহারের মাধ্যমে যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকে বলে ব্যতিহার বহুব্রীহি। যেমন –
- চুলোচুলি – চুলে চুলে আকর্ষণ করে যে যুদ্ধ
- গলাগলি – গলায় গলায় যে মিল
- হাতাহাতি – হাতে হাতে যে যুদ্ধ
- জানাজানি – পরস্পরকে জানা
একইভাবে হাসাহাসি, কোলাকুলি, বাঁধাবাঁধি, রাতারাতি, আড়াআড়ি, তর্কাতর্কি, টানাটানি, লাঠালাঠি ইত্যাদি।
সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি – যে বহুব্রীহি সমাসে সংখ্যার প্রসঙ্গ থাকলেও তা বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় তাকে সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি বলে। যেমন –
- দশানন (রাবণ) – দশ আনন যার
- চতুর্ভুজ – চতুঃ (চার) ভুজ (হাত) যার
একইভাবে ষড়ানন, দ্বীপ, একচোখো, চতুর্মুখ, ত্রিলোচন, সহস্রলোচন ইত্যাদি।
দ্বিগু সমাস
দ্বিগু শব্দটির অর্থ হল দ্বি (দুইটি) গো (গরু) যার। ব্যাকরণে সংখ্যাবাচক সমাস অর্থে ‘দ্বিগু’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যে সমাসে পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ, পরপদটি বিশেষ্য এবং সমাসবদ্ধ পদটির মাধ্যমে সমাহার বোঝায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন, ত্রিফলা – ত্রি (তিন) ফলের সমাহার। এখানে পূর্বপদ ‘ত্রি’ একটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ ও পরপদ ‘ফলা’ (ফল) বিশেষ্য। সমাসবদ্ধ হওয়ার পর ‘ত্রিফলা’ শব্দটি তিনটি ফলের সমষ্টি বোঝাছে। একইভাবে চৌদিক – চারটি দিকের সমাহার ইত্যাদি।
দ্বিগু সমাসের প্রকারভেদ
তদ্ধিতার্থক দ্বিগু – যে সমাসের সাহায্যে মূল অর্থ থেকে নতুন অর্থ নির্মাণ করা হয়, তাকে তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস বলে। যেমন –
এককড়ি – এক কড়ির বিনিময়ে কেনা
এখানে একটা কড়ি নয়, এর বিনিময়ে যেটি কেনা সেটিকে বোঝাচ্ছে। একইভাবে তিনকড়ি, পাঁচকড়ি ইত্যাদি।
সমাহার দ্বিগু – যে দ্বিগু সমাসের মাধ্যমে একাধিক বস্তু বা বিষয়ের সমাহার বা সমষ্টি বোঝায়, তাকে সমাহার দ্বিগু বলা হয়। যেমন –
- পঞ্চবটী – পঞ্চ বটের সমাহার
- অষ্টধাতু – অষ্ট ধাতুর সমাহার
- তেপায়া – তে (তিন) পায়ের সমাহার
- ত্রিতল – ত্রি (তিন) তলের সমাহার
- শতাব্দী – শত অব্দের সমাহার
- চৌরাস্তা – চৌ (চার) রাস্তার সমাহার
একইভাবে নবগ্রহ, নবরত্ন, দশচক্র, শতবার্ষিকী, সপ্তরথী, দোতারা, সাতসমুদ্র, অষ্টপ্রহর, তেপান্তর, ত্রিভুবন, পাঁচফোড়ন ইত্যাদি।
অব্যয়ীভাব সমাস
পূর্বপদ যদি কোনো অব্যয় হয়, তাহলে সেই অব্যয়ের সঙ্গে পরপদ বিশেষ্যের যে সমাস হয়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন – গরমিল – মিলের অভাব। এক্ষেত্রে ‘গরমিল’ শব্দের ‘গর’ পূর্বপদটি অব্যয় এবং ‘মিল’ পরপদটি বিশেষ্য। এদের সমাস ঘটেছে। অব্যয়ীভাব সমাসে সবসময় পূর্বপদের অর্থপ্রাধান্য থাকে।
বিভিন্ন অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস –
কাছে বা নৈকট্য বা সামীপ্য বোঝাতে –
একইভাবে উপগ্রহ, সন্ধ্যানাগাদ ইত্যাদি।
অভাব বোঝাতে –
একইভাবে দুর্ভিক্ষ, বেহায়া, নির্বিঘ্ন ইত্যাদি।
কোনো শব্দের বারংবার প্রয়োগ বা বীপ্সা বোঝাতে –
একইভাবে প্রতিদিন, ফি-বছর, হরদম, প্রতিবার ইত্যাদি।
সাদৃশ্য বা মিল বোঝাতে –
একইভাবে উপাচার্য, উপরাষ্ট্রপতি, উপদ্বীপ, অনুদান ইত্যাদি।
বিরুদ্ধ বা বিপরীত বোঝাতে –
একইভাবে প্রতিশোধ, প্রতিদান, প্রতিবাদ ইত্যাদি।
সম্মুখ বা পক্ষে বোঝাতে –
ক্ষুদ্র বা ছোটো বোঝাতে –
একইভাবে উপপদ, প্রশাখা ইত্যাদি।
সীমা ও ব্যাপ্তি বোঝাতে –
একইভাবে আজানু, আমরণ, আশৈশব, আমূল ইত্যাদি।
নিত্য সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলি নিত্য বা সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে, কোনো ব্যাসবাক্য হয় না, অথবা ব্যাসবাক্য করতে গেলে নতুন কোনো পদের প্রয়োজন হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন – ‘কাঁচকলা’ সমাসবদ্ধ পদটিকে ভাঙা যায় না; কাঁচকলা – কাঁচা যে কলা-হয় না। কারণ কাঁচকলা একটি বিশেষ ধরনের কলা। সুতরাং ‘কাঁচকলা’ নিত্য সমাসের উদাহরণ।
নিত্য সমাসের প্রকারভেদ
ব্যাসবাক্যের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুযায়ী নিত্য সমাস দু-ধরনের হতে পারে।
সর্বদাই সমাসবদ্ধ, ব্যাসবাক্য হয় না এমন নিত্য সমাস –
অন্যপদের সাহায্যে গঠিত ব্যাসবাক্য-সহ নিত্য সমাস –
বাক্যাশ্রয়ী সমাস
কোনো বাক্যকে বা বাক্যখণ্ডকে সুসংহত রূপে একটিমাত্র শব্দে পরিণত করে, তাকে বিশেষ্য বা বিশেষণের রূপ দিলে বা কোনো সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশিত হলে তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। যেমন –
- রক্তদানশিবির – রক্তকে দান (কর্মতৎ), তার জন্য শিবির (নিমিত্ত তৎ)
- সবুজ-বাঁচাও-কমিটি – সবুজকে বাঁচাও (কর্ম তৎ), তার জন্য কমিটি (নিমিত্ত তৎ)
- চক্ষু-অপারেশন-শিবির – চক্ষুর অপারেশন (সম্বন্ধ তৎ), তার জন্য শিবির (নিমিত্ত তৎ)
- গল্পবলা-প্রতিযোগিতা – গল্পকে বলা (কর্ম তৎ), তার প্রতিযোগিতা (সম্বন্ধ তৎ)
অলোপ সমাস
সাধারণভাবে সমস্যমান পদ যখন সমাসবদ্ধ পদে পরিণত হয়, তখন পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায়। যেমন, রাজপথ – পথের রাজা। পূর্বপদের ‘-এর’ বিভক্তি এখানে লোপ পেয়েছে। গাছপাকা – গাছে পাকা। পূর্বপদের ‘-এ’ বিভক্তি এখানে লোপ পেয়েছে। কিন্তু সমাসবদ্ধ হওয়ার পরেও যদি বিভক্তিচিহ্ন থেকে যায়, তাহলে তাকে অলোপ সমাস বলে।
সমাসনিষ্পন্ন হওয়ার পরেও পূর্বপদের বিভক্তিচিহ্ন লোপ না পেয়ে, সমস্যমান পদের মতো থেকে গেলে, তাকে অলোপ সমাস বলে। যেমন –
মনের মানুষ – মনের মানুষ (মনমানুষ নয়)।
অর্থাৎ পূর্বপদ ‘মন’-এর সঙ্গে যে ‘এর’ বিভক্তিটি আছে তা সমাসবদ্ধ হওয়ার পরও থেকে গেছে।
অলোপ সমাসের প্রকারভেদ –
অলোপ সমাস নানাধরনের হয়।
অলোপ দ্বন্দ্ব –
অলোপ তৎপুরুষ –
অলোপ উপপদ
অলোপ বহুব্রীহি
এক নজরে
- দুই বা দুইয়ের বেশি পদের একপদীকরণই হল সমাস।
- সমাসকে নয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় – দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, কর্মধারয়, বহুব্রীহি, দ্বিগু, অব্যয়ীভাব, নিত্য, অলোপ, বাক্যাশ্রয়ী।
- যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির প্রত্যেকটির অর্থই প্রাধান্য পায়, সেটি হল দ্বন্দ্ব সমাস।
- দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্যে সমস্যমান পদগুলি ‘ও’ ‘এবং’ ‘আর’ প্রভৃতি সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত থাকে।
- যে সমাসে পরপদ প্রধান হয় এবং পূর্বপদের কারকবোধক অথবা সম্বন্ধবোধক বিভক্তি লোপ পায়, সেটি হল তৎপুরুষ সমাস।
- যে সমাস কর্মকে ধারণ করে এবং সমস্যমান পদগুলি বিশেষ্য ও বিশেষণ হয়, সেটি হল কর্মধারয় সমাস।
- কর্মধারয় সমাসের উভয় পদে কর্তৃকারকের একই বিভক্তি (শূন্য) হয়। এই জন্য সংস্কৃতে এই সমাসটি তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত।
- দুটি বিশেষ্য বা বিশেষণ বিভিন্ন বস্তু বা ব্যক্তিকে বোঝালে দ্বন্দ্ব সমাস হয়। কিন্তু একই ব্যক্তিকে বোঝালে কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন – রামকৃষ্ণ = রাম ও কৃষ্ণ (বিভিন্ন ব্যক্তি) [দ্বন্দ্ব সমাস], রামকৃষ্ণ = যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ (একই ব্যক্তি) [কর্মধারয় সমাস]।
- রূপক কর্মধারয়ে উপমান-উপমেয়র তুলনাটি যেমন নিবিড়, উপমিত কর্মধারয়ে সেরূপ নিবিড় নয়।
- যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির কোনোটির অর্থই প্রধান হয় না, বরং তাদের মাধ্যমে অন্য কোনো অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
- পরস্পর একজাতীয় ক্রিয়ার বিনিময় বোঝালে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস হয়। কিন্তু তাড়াতাড়ি, বেলাবেলি, রাতারাতি, সোজাসুজি প্রভৃতি শব্দে পারস্পরিক ক্রিয়াবিনিময় বোঝায় না বলে এই শব্দগুলি বহুব্রীহি সমাসজাত নয়, কেবল শব্দদ্বৈত।
- যে সমাসে পূর্বশব্দটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ, পরপদটি বিশেষ্য এবং সমাসবদ্ধ পদটির মাধ্যমে কোনো কিছুর সমাহার বোঝায় তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
- যদি পূর্বপদ কোনো অব্যয় হয় এবং পরপদ বিশেষ্য হয় তবে তাদের মধ্যে যে সমাস হয় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।
- যে সমাসে সমস্যমান পদগুলি সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে, কোনো ব্যাসবাক্য হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে।
- যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তিচিহ্ন লোপ পায় না, তাকে অলোপ সমাস বলে।
- অনেক সময় বাক্যাংশ বা বাক্যকে আশ্রয় করে সমাসপ্রতিম একটি পদের অর্থকে বোঝানো হয়। তখন তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে।
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
সমাস শব্দটির ব্যুৎপত্তি কী?
সমাস শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করলে পাওয়া যাবে – সম্-অস্ + ঘঞ্।
সমাস কাকে বলে?
পরস্পরের মধ্যে অর্থগত সম্পর্ক রয়েছে এমন দুই বা ততোধিক পদের একপদীকরণকেই ব্যাকরণে সমাস বলা হয়।
কর্মধারয় শব্দটির অর্থ কী? ব্যাকরণের কোন্ প্রসঙ্গে শব্দটির ব্যবহার করা হয়?
কর্মকে যে ধারণ করে থাকে, তাকেই কর্মধারয় বলে।
যে সমাসের সমস্যমান পদগুলি বিশেষ্য ও বিশেষণ হয় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকেই কর্মধারয় সমাস বলে।
তৎপুরুষ শব্দটির সাধারণ অর্থ ও একটি বিশিষ্টতা লেখো।
তৎপুরুষ শব্দটির সাধারণ অর্থ ‘তার পুরুষ’।
এই সমাসের ব্যাসবাক্যে সমস্যমান পদদুটির মধ্যে পরপদটি প্রধান হয় এবং পূর্বপদের কারকবোধক ও সম্বন্ধবোধক বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায়।
দ্বন্দ্ব শব্দটির সাধারণ অর্থ কী? একশেষ দ্বন্দ্ব কাকে বলে?
দ্বন্দ্ব শব্দের অর্থ হল ‘যুক্ত’।
সমস্যমান পদগুলির কোনো একটির বহুবচনান্ত একটিমাত্র পদ অবশিষ্ট থাকলে তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব বলে। যেমন – আমরা।
বহুব্রীহি শব্দটির সাধারণ অর্থ কী? ব্যাকরণের কোন্ প্রসঙ্গে শব্দটি ব্যবহৃত হয়?
বহুব্রীহি শব্দটির সাধারণ অর্থ হল বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার।
ব্যাকরণে সমাসের আলোচনায় সমাসের প্রকার হিসেবে শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
দ্বিগু সমাসের সঙ্গে ‘সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি’ সমাসের পার্থক্য কী?
দ্বিগু সমাস ও সংখ্যাপূর্বক বহুব্রীহি সমাসের পার্থক্য –
অলোপ সমাস কী?
সমাসনিষ্পন্ন হওয়ার পরেও পূর্বপদের বিভত্তিচিহ্ন লোপ না পেয়ে, সমস্যমান পদের মতো থেকে গেলে, তাকে অলোপ সমাস বলে। যেমন – মনের মানুষ-মনের মানুষ (মনমানুষ নয়)।
বাক্যাশ্রয়ী সমাসের সঙ্গে অন্য সমাসের মূল পার্থক্য কী?
বাক্যাশ্রয়ী সমাসের ব্যাসবাক্যে সর্বদাই একটি বাক্যখণ্ড সমস্যমান পদ হয়ে থাকে এবং সেই বাক্যখণ্ডে নিহিত সমাস মূল সমাসের সঙ্গে যুক্ত হয়।
অলোপ সমাস কত প্রকারের হয় এবং কী কী?
অলোপ সমাস মূলত চার প্রকার – অলোপ দ্বন্দ্ব, অলোপ তৎপুরুষ, অলোপ উপপদ এবং অলোপ বহুব্রীহি। অলোপ তৎপুরুষ আবার কারকভেদে পাঁচ প্রকার – অলোপ করণ, অলোপ নিমিত্ত, অলোপ অপাদান, অলোপ অধিকরণ ও অলোপ সম্বন্ধ।
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
যে বহুব্রীহি সমাসে সংখ্যার প্রসঙ্গ থাকলেও তা বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলে। যেমন – ত্রিলোচন।
উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের মধ্যে পার্থক্য কী?
উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের মধ্যে পার্থক্য –
উপপদ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন – পঙ্কজ, অরিন্দম।
অলোপ সমাসের ‘অলোপ’ নামকরণের কারণ কী?
অলোপ সমাসে সমাসবদ্ধ পদটিতে সমাসনিষ্পন্ন হওয়ার পরেও পূর্বপদ বিভক্তিলুপ্ত না হয়ে সমস্যমান পদের মতো থেকে যায়। তাই একে অলোপ সমাস বলা হয়।
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শব্দটির ব্যাসবাক্য লিখে দেখাও।
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শব্দটির ব্যাসবাক্য – দৃঢ় হয়েছে প্রতিজ্ঞা যার।
কর্ম তৎপুরুষ ও নিমিত্ত তৎপুরুষের একটি করে উদাহরণ দাও।
কর্ম তৎপুরুষের উদাহরণ – সমাতবর পদ – লোকঠকানো; ব্যাসবাক্য – লোককে ঠকানো।
নিমিত্ত তৎপুরুষের উদাহরণ – সমাসবদ্ধ পদ – শিশুসাহিত্য; ব্যাসবাক্য – শিশুদের জন্য সাহিত্য।
ব্যতিহার বহুব্রীহি ও মধ্যপদলোপী বহুব্রীহির একটি করে উদাহরণ দাও।
ব্যতিহার বহুব্রীহির উদাহরণ – সমাসবদ্ধ পদ – লাঠালাঠি; ব্যাসবাক্য – লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ।
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহির উদাহরণ – সমাসবদ্ধ পদ – মীনাক্ষী; ব্যাসবাক্য – মীনের অক্ষির ন্যায় অক্ষি যার।
ব্যাকরণের কোন্ প্রসঙ্গে ‘বাক্যাশ্রয়ী’ শব্দটির ব্যবহার করা হয়?
ব্যাকরণে সমাসের আলোচনা প্রসঙ্গে ‘বাক্যাশ্রয়ী’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কারণ, এখানে সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশিত হয়।
আকাশগাঙ ও ‘ওষ্ঠাগত’ এই শব্দদুটির ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করে দেখাও।
আকাশগাঙ ও ‘ওষ্ঠাগত’ শব্দদুটির ব্যাসবাক্য-সহ সমাস –
নঞবহুব্রীহি ও নঞতৎপুরুষ সমাসের পার্থক্য লেখো।
নঞবহুব্রীহি ও নঞন্তৎপুরুষ সমাসের পার্থক্য –
সমস্যমান পদ এবং সমস্ত পদের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।
সমস্যমান পদ এবং সমস্ত পদের পার্থক্য –
দ্বন্দ্ব সমাস এবং কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য লেখো।
দ্বন্দ্ব সমাস এবং কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য –
লাভ-লোকসান এবং ‘ব্যাবসাবাণিজ্য’ দুটিই দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ হলেও এদের মধ্যে পার্থক্য কী?
লাভ-লোকসান এবং ‘ব্যাবসাবাণিজ্য’ – এই দুটিই দ্বন্দ্ব সমাস। কিন্তু ‘লাভ-লোকসান’-এর ক্ষেত্রে সমস্যমান পদ দুটি পরস্পর বিপরীতার্থক। অথচ ‘ব্যাবসাবাণিজ্য’-এর ক্ষেত্রে সমস্যমান পদ দুটি পরস্পর সমার্থক।
ইন্দ্রজিৎ পদটির ব্যাসবাক্য নির্ণয় করে এখানে উপপদ কী আছে উল্লেখ করো।
ইন্দ্রজিৎ পদটির ব্যাসবাক্য ও উপপদ – সমস্ত পদ – ইন্দ্রজিৎ, ব্যাসবাক্য – ইন্দ্রকে জয় করে যে; উপপদ – ইন্দ্র।
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় এবং মধ্যপদলোপী বহুব্রীহির মধ্যে পার্থক্য কী?
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় এবং মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি-র মধ্যে পার্থক্য –
নিত্য সমাসের মধ্যে কী কী শ্রেণিবিভাগ দেখা যায়?
ব্যাসবাক্যের উপস্থিতিভেদে নিত্য সমাস দুই প্রকার। 1. সর্বদাই সমাসবদ্ধ, ব্যাসবাক্য হয় না এমন নিত্য সমাস (যেমন – দাঁড়কাক)। 2. অন্য পদের সাহায্যে গঠিত ব্যাসবাক্য-সহ নিত্য সমাস। এর আবার তিনটি গঠনভেদ আছে। 1. ‘অন্য’ যোগে – মতান্তর (অন্য মত) 2. ‘কেবল’/’শুধু’ যোগে – দর্শনমাত্র, চিহ্নমাত্র, 3. ‘তুল্য’ যোগে – মাতৃতুল্য।
কর্মধারয় সমাসের সঙ্গে অব্যয়ীভাব সমাসের গঠনে কী পার্থক্য আছে?
কর্মধারয় সমাসের সঙ্গে অব্যয়ীভাব সমাসের পার্থক্য –
সমানাধিকরণ বহুব্রীহির এরকম নামকরণের কারণ কী?
এই বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয়। কিন্তু পূর্বপদ ও উত্তরপদ – উভয়পদেই শূন্য বিভক্তি হওয়ায়, একে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলা হয়।
ব্যাসবাক্যের ‘ব্যাস’ শব্দটির অর্থ লেখো এবং এর অন্য নাম উল্লেখ করো।
ব্যাসবাক্যের ‘ব্যাস’ শব্দটির অর্থ হল ‘বিস্তার’ এবং এর অন্য নাম হল বিগ্রহবাক্য বা বিস্তারবাক্য।
তৃতীয় বা অন্য পদের অর্থ প্রধান হয় কোন্ সমাসে?
বহুব্রীহি সমাসে তৃতীয় বা অন্যপদের অর্থ প্রধান হয়।
একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্য-সহ একটি উদাহরণ দাও।
একশেষ দ্বন্দ্ব সমাসের একটি উদাহরণ হল – আমরা > তুমি ও আমি।
অলোপ বহুব্রীহি সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
অলোপ বহুব্রীহি সমাসের একটি উদাহরণ হল – গায়েহলুদ > গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।
বাক্যাশ্রয়ী সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো বাক্যকে বা বাক্যখণ্ডকে সুসংহতরূপে একটিমাত্র শব্দে পরিণত করে, তাকে বিশেষ্য বা বিশেষণের রূপ দিলে বা কোনো সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশিত হলে তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। যেমন – রক্তদানশিবির – রক্তের দান (সম্বন্দ্ব তৎ), তার জন্য শিবির (নিমিত্ত তৎ)।
নিত্য সমাসের বিশিষ্টতা কী?
অথবা, নিত্য সমাস কাকে বলে?
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলি নিত্য বা সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে, কোনো ব্যাসবাক্য হয় না, অথবা ব্যাসবাক্য করতে গেলে নতুন কোনো পদের প্রয়োজন হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন – ‘কাঁচকলা’ সমাসবদ্ধ পদটিকে ভাঙা যায় না, কাঁচকলা – কাঁচা যে কলা-হয় না। কারণ কাঁচকলা একটি বিশেষ ধরনের কলা। সুতরাং ‘কাঁচকলা’ একটি নিত্য সমাসের উদাহরণ।
ব্যাসবাক্য আর কী নামে পরিচিত?
ব্যাসবাক্য বিগ্রহবাক্য নামে পরিচিত।
পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় এমন সমাসগুলির নাম লেখো।
তৎপুরুষ এবং কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।
উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য পায় কোন্ সমাসে?
দ্বন্দ্ব সমাসে উভয় পদের অর্থপ্রাধান্য ঘটে।
নঞ্তৎপুরুষ ও নঞবহুব্রীহি সমাসের একটি পার্থক্য লেখো।
নঞবহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও উত্তরপদের বাইরে তৃতীয় অর্থ প্রধান হয়। যেমন – অনাদি – নেই আদি। কিন্তু নঞতৎপুরুষ সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান হয়। যেমন – অরাজি – নয় রাজি।
তেমাথা দ্বিগু সমাসের উদাহরণ কিন্তু ‘দশানন’ বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ কেন?
তেমাথা শব্দটির ব্যাসবাক্য ‘তিন মাথার সমাহার’ বোঝায়। কিন্তু ‘দশানন’-এর ব্যাসবাক্য হল ‘দশ আনন আছে যার’ যা বুঝিয়ে দেয় তৃতীয় অর্থকে। যেখানে ‘দশ’ বা ‘আনন’-এর থেকে ‘রাবণ’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি তাই বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ।
উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য কী?
উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য –
বহুব্রীহি শব্দটির অর্থ কী?
বহু ব্রীহি যার অর্থাৎ অনেক ধান আছে যার।
সে ও তুমি ব্যাসবাক্যটিকে সমাসবদ্ধ করে তার শ্রেণি নির্ণয় করো।
সে ও তুমি > তোমরা – এটি একশেষ দ্বন্দ্বের উদাহরণ।
সমস্তপদ বা সমাসনিষ্পন্ন পদ কাকে বলে?
পূর্ব ও উত্তর পদ মিলে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন পদ গঠন করে তাকে বলে সমস্তপদ।
সমস্তপদের অন্য নাম কী?
সমস্তপদের অন্য নাম সমাসবদ্ধ পদ।
যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লুপ্ত হয় তাকে কী বলে?
যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লুপ্ত হয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাসের উদাহরণ দাও।
একটি তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাসের উদাহরণ হল পাঁচকড়ির বিনিময়ে কেনা > পাঁচকড়ি।
চরণ কমলের ন্যায় – ব্যাসবাক্যটি সমাসবদ্ধ করে সমাসের নাম লেখো।
চরণ কমলের ন্যায় – ব্যাসবাক্যটির সমাসবদ্ধ পদ হল চরণকমল। এটি উপমিত কর্মধারয়ের উদাহরণ।
গৌর অঙ্গ যাহার – ব্যাসবাক্যটি সমাসবদ্ধ করে সমাসের নাম লেখো।
গৌরাঙ্গ – সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস।
ব্যাসবাক্য-সহ একটি দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ দাও।
ভালো ও মন্দ – ভালোমন্দ
মেঘে ঢাকা শব্দটির ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম উল্লেখ করো।
মেঘে ঢাকা – অলোপ তৎপুরুষ সমাস।
নীচে উদ্ধৃত্ব বাক্যগুলিতে যেসব সমাসবদ্ধ পদ আছে তাদের ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম লেখো।
প্রশ্ন | উত্তর |
ওই আমাদের পুণ্যফল। | পুণ্যফল – পুণ্যের ফল; সম্বন্ধ তৎপুরুষ |
দান করয়ে জগজনে। | জগজনে – জগের (জগতের) জনে; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
সন্ধ্যার সীমান্তজোড়া পাহাড় ডিঙিয়ে চলে গেছি। | সীমান্তজোড়া – সীমান্ত ব্যাপিয়া জোড়া; ব্যাপ্তি তৎপুরুষ। |
আমার পথপ্রদর্শক বলিল। | পথপ্রদর্শক – পথ প্রদর্শন করেন যিনি; উপপদ তৎপুরুষ। |
বক্তার স্বর অত্যন্ত ভয়কাতর। | ভয়কাতর – ভয় থেকে কাতর; অপাদান তৎপুরুষ। |
এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে। | অরিন্দম – অরিকে দমন করেন যিনি; উপপদ তৎপুরুষ। |
সে প্রকৃত মহাসমুদ্র নয়। | মহাসমুদ্র – মহা যে সমুদ্র; সাধারণ কর্মধারয়। |
আমার চতুর্দিকে পর্বতমালা, তাহার পার্শ্বদেশে নিবিড় অরণ্য। | চতুর্দিকে – চারটি দিকের সমাহারে; সমাহার দ্বিগু। |
সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেন শ্রাবণ-অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে। | শ্রাবণ-অরণ্যের – শ্রাবণ মাসের অরণ্যের; মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। |
তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প। | অসমাপ্ত – নয় সমাপ্ত; না-তৎপুরুষ বা নতৎপুরুষ। চির-অসমাপ্ত – চিরকাল ব্যাপিয়া অসমাপ্ত; ব্যাপ্তি তৎপুরুষ। |
জীবনের কলরব নেই। | কলরব – কল মুখরিত রব; মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি। |
মাতৃহীন শিশুটি থেকে গেল কাকির কাছে। | মাতৃহীন – মাতৃ (মায়ের) দ্বারা হীন; করণ তৎপুরুষ। |
সম্মুখের দিগন্তজোড়া মাঠখানা জ্বলিয়া পুড়িয়া ফুটিফাটা হইয়া আছে। | দিগন্তজোড়া – দিগন্ত ব্যাপিয়া জোড়া; ব্যাপ্তি তৎপুরুষ। ফুটিফাটা – ফুটির মতো ফাটা; উপমান কর্মধারয়। |
অনাবৃষ্টির আকাশ হইতে আগুন ঝরিয়া পড়িতেছে। | অনাবৃষ্টি – নেই বৃষ্টি; না-তৎপুরুষ বা নঞতৎপুরুষ। |
তার মুখখানা রাগে ও রৌদ্রের ঝাঁঝে রক্তবর্ণ। | রক্তবর্ণ – রক্তের ন্যায় বর্ণ; উপমান কর্মধারয়। |
নিষ্ঠুর অভিযোগে গফুরের বাকরোধ হয়ে গেল। | বাকরোধ – বাককে রোধ; কর্মতৎপুরুষ। |
ঠাকুরের হাতে ফলমূল ও ভিজা চালের পুঁটুলি ছিল। | ফলমূল – ফল ও মূল; দ্বন্দ্ব। |
মহারানির রাজত্বে কেউ কারোর গোলাম নয়। | মহারানি – মহান যে রানি; সাধারণ কর্মধারয়। |
কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ। | অগ্রগামী – অগ্রে গমন করে যে; উপপদ তৎপুরুষ। |
ত্রিশ বছর ধরে এর সঙ্গে আমার চেনাশোনা। | চেনাশোনা – চেনা ও শোনা; দ্বন্দ্ব। |
নতুন লেখক খালাসিদের সম্বন্ধে এক দরদভরা লেখা লিখেছে। | দরদভরা – দরদ দিয়ে ভরা; করণ তৎপুরুষ। |
বড়ো ভাই বিদেশে লাখ টাকা কামায়। | বিদেশে – অন্য দেশে; অব্যয়ীভাব। |
ত্রিসংসারে তার আর কেউ ছিল না। | ত্রিসংসার – ত্রি (তিন) সংসারের সমাহার; সমাহার দ্বিগু। |
খাদ্য ছাড়াও জীবকুল তথা মানুষ বাঁচতে পারে। | জীবকুল – জীবের কুল; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
একটি উড়োজাহাজ কলকাতা থেকে বোম্বাই যেতে ৭০/৮০ টন অক্সিজেন খরচ করে। | উড়োজাহাজ – উড়ো যে জাহাজ; সাধারণ কর্মধারয়। |
বায়ুর কার্বন-ডাইঅক্সাইড শুষে নিয়ে উদ্ভিদজগৎ অক্সিজেন জোগান দেয়। | উদ্ভিদজগৎ – উদ্ভিদদের জগৎ; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
সে আমার বড়ই প্রিয়পাত্র। | প্রিয়পাত্র – প্রিয় যে পাত্র; সাধারণ কর্মধারয়। |
কী প্রকারে তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব। | বিপক্ষ – পক্ষের বিপরীত; অব্যয়ীভাব। |
জনম তব কোন্ মহাকুলে? | মহাকুল – মহান যে কুল; সাধারণ কর্মধারয়। |
তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে। | মহারাজ – মহান যে রাজা; সাধারণ কর্মধারয়। |
শ্যামবর্ণ দোহারা বালক। | শ্যামবর্ণ – শ্যাম বর্ণ যার; সাধারণ বহুব্রীহি। |
জানালার নীচেই একটা ঘাটবাঁধানো পুকুর ছিল। | ঘাটবাঁধানো – ঘাটকে বাঁধানো; কর্ম তৎপুরুষ। |
কাহারও বা ব্যস্ততার লেশমাত্র নাই। | লেশমাত্র – কেবল লেশ; নিত্য সমাস। |
মাঝরাতে শংকরের ঘুম ভেঙে গেল। | মাঝরাতে -রাতের মাঝ; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
মুখখানা বেশ পানপাতার মতো হরতনী ছাঁদের। | পানপাতা – পানের পাতা; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
হারার মা-র সাতকুলে কেউ নেই। | সাতকুল – সাতটি কুলের সমাহার; সমাহার দ্বিগু। |
হারাণ বাসরাস্তায় বসে ছিল। | বাসরাস্তা – বাস চলাচলের রাস্তা; মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। |
জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না। | জন্মান্তর – অন্য জন্ম; নিত্য সমাস। |
চতুর্দিকে অতি গাঢ় কুজ্ঝটিকা। | চতুর্দিক – চতুঃ (চার) দিকের সমাহার; সমাহার দ্বিগু। |
সে ছিল সত্যবাদী, সরল, সাহসী একটি শিশু। | সত্যবাদী – সত্য বলে যে; উপপদ তৎপুরুষ। |
নিস্তরঙ্গ এই জীবন কেমন যেন নেশা ধরায়। | নিস্তরঙ্গ – নেই তরঙ্গ যার; নঞর্থক বহুব্রীহি। |
গল্পবলিয়ে ঠাকুমাও আজ আর নেই। | গল্পবলিয়ে – গল্প বলে যে; উপপদ তৎপুরুষ। |
পুরুরাজ হাতির পিঠে চড়ে আলেকজান্ডারের গ্রিক বাহিনীর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। | পুরুরাজ – পুরু দেশের রাজা; মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। |
অনর্থক এ কাজ করাই বা কেন? | অনর্থক – নেই অর্থ যার; নঞর্থক বহুব্রীহি। |
এ পাড়ায় নবাগতরা এমনই বলে থাকে। | নবাগত – নব আগত যে; উপপদ তৎপুরুষ। |
অনুপস্থিত সইয়ের উদ্দেশ্যে হাবুলের মা আপনার মনে অনেক গল্প করিয়া গেল। | অনুপস্থিত – নয় উপস্থিত; না-তৎপুরুষ বা নঞতৎপুরুষ। |
কথায় কথায় এদের খালি মারামারি। | মারামারি – মেরে মেরে যে যুদ্ধ; ব্যতিহার বহুব্রীহি। |
সমুদ্র উপকূলে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। | উপকূলে – কূলের সমীপে; অব্যয়ীভাব। |
মা-মরা ছেলেটাকে তুমি দেখো! | মা-মরা – মা মরে গেছে যার; সাধারণ বহুব্রীহি। |
এই সময়েই ওর ভগ্নীপতি এসে ওকে নিয়ে গেলেন। | ভগ্নীপতি – ভগ্নীর পতি; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
সুতরাং তার আর লেখাপড়া হল না। | লেখাপড়া – লেখা ও পড়া; দ্বন্দ্ব। |
হেডমাস্টার সকলকে ডেকেছেন। | হেডমাস্টার – হেড যে মাস্টার; সাধারণ কর্মধারয়। |
নতুন-ওঠা পাতায় গাছটা ভরে গেছে। | নতুন-ওঠা – নতুন উঠেছে যা; উপপদ তৎপুরুষ। |
নাতিদীর্ঘ বক্তৃতার পর অনুষ্ঠান শুরু হল। | নাতিদীর্ঘ – নয় অতি দীর্ঘ; নঞতৎপুরুষ বা না-তৎপুরুষ। |
বাড়িতে রাজমিস্ত্রি খাটছে বুঝি, বৃন্দাবন? | রাজমিস্ত্রি – মিস্ত্রির রাজা; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
খরস্রোতা নদীর কোনো কিনারাই দেখা যায় না। | খরস্রোতা – খর স্রোত যার; বহুব্রীহি। |
খুব মৃদু করাঘাতের শব্দ যেন! | করাঘাতের – কর দ্বারা আঘাত; করণ তৎপুরুষ, তার। |
আমি যেন ভয়ানক বিপদগ্রস্ত! | বিপদগ্রস্ত – বিপদের দ্বারা গ্রস্ত; করণ তৎপুরুষ। |
আষাঢ় মাসে তিনি জ্বরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। | শয্যাশায়ী – শয্যায় শায়ী; অধিকরণ তৎপুরুষ। |
এখন তো একেবারে ত্রিসীমানায় ঘেঁষি নে। | ত্রিসীমানা – ত্রি (তিন) সীমানার সমাহার; সমাহার দ্বিগু। |
এই শত্রুপুরীতে কে বাস করবে? | শত্রুপুরী – শত্রুপূর্ণ পুরী; মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। |
এত অসহায় মুখ খুব কম দেখেছি। | অসহায় – নেই সহায় যার; নঞবহুব্রীহি। |
নিরুত্তর হাবুল করুণ নয়নে তাকিয়ে থাকে। | নিরুত্তর – নেই উত্তর যার; নঞবহুব্রীহি। |
বনশীর্ষে সবেমাত্র শুকতারাটি উঠল। | বনশীর্ষে – বনের শীর্ষে; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। শুকতারাটি – শুক নামক তারাটি; মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। |
তোমাকেই সব দেখাশোনা করতে হবে। | দেখাশোনা – দেখা ও শোনা; দ্বন্দ্ব। |
এমন সুব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়। | সুব্যবস্থা – সু (ভালো) যে ব্যবস্থা; উপসর্গ তৎপুরুষ। |
সিংহাসনে বসল রাজা বাজল কাঁসরঘণ্টা। | সিংহাসনে – সিংহ চিহ্নিত আসন; মধ্যপদলোপী কর্মধারয়, সেখানে। কাঁসরঘণ্টা – কাঁসর ও ঘণ্টা; দ্বন্দ্ব। |
এই বনবেষ্টিত অঞ্চলে কীভাবে থাকা যাবে? | বনবেষ্টিত – বন দ্বারা বেষ্টিত; করণ তৎপুরুষ। |
পোপের ভয়ে দেশান্তরী হয়েছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। | দেশান্তরী – দেশান্তরে আছে যে, সাধারণ কর্মধারায়। |
মন বলে এ অসম্ভব, এ অসম্ভব। | অসম্ভব – নয় সম্ভব; না-তৎপুরুষবা নঞতৎপুরুষ। |
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া। | কাঠফাটা – কাঠকে ফাটানো; কর্ম তৎপুরুষ। |
নির্বাক, নীল, নির্মম মহাকাশ। | নির্বাক – নেই বাক (বাক্য) যার; নঞবহুব্রীহি। নির্মম – নেই মমতা যার; নঞবহুব্রীহি। |
স্বপ্নবিহীন ঘুমের আড়ালে তুমি দেখা দাও আসি। | স্বপ্নবিহীন – স্বপ্ন নেই যার; নঞবহুব্রীহি। |
এই অবাধ আকাশ আমায় মুগ্ধ করে। | অবাধ – নেই বাধা যার; নঞবহুব্রীহি। |
সেতারের সুরটা এখনও কানে বাজছে। | সেতার – সে (তিন) তারের সমাহার; দ্বিগু। |
ছোটোগল্প সাহিত্যের রত্নবিশেষ। | ছোটোগল্প – ছোটো যে গল্প; সাধারণ কর্মধারয়। |
এই ভারবহন কীসের আশায়? | ভারবহন – ভারকে বহন; কর্ম তৎপুরুষ। |
ছেলে-মেয়ে দুটোকে নিয়ে মাসি পালায়। | ছেলে-মেয়ে – ছেলে ও মেয়ে; দ্বন্দ্ব। |
অভাবে ও আতঙ্কে সমস্ত তাঁতিপাড়া থমথম করছে। | তাঁতিপাড়া – তাঁতিদের পাড়া; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
ধর্মযুদ্ধ কথাটাই একটা স্ববিরোধী উক্তি। | ধর্মযুদ্ধ – ধর্মের নিমিত্ত যুদ্ধ; নিমিত্ত তৎপুরুষ। স্ববিরোধী – স্ব-এর বিরোধী; সম্বন্ধ তৎপুরুষ। |
এসব আমার কাছে অপরিহার্য নয়। | অপরিহার্য – নয় পরিহার্য; না তৎপুরুষ বা নঞর্থৎপুরুষ। |
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা। | পদাঘাতে – পদের দ্বারা আঘাত; করণ তৎপুরুষ, তার দ্বারা। |
এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, সমাস হল একাধিক পদের সমন্বয়ে নতুন শব্দ গঠন। সমাসবদ্ধ পদে সমস্ত পদের অর্থ পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ না পেয়ে, নতুন অর্থ প্রকাশিত হয়।
সমাস ও তার প্রকারভেদ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে আমরা সমাসের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই আলোচনা মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়ক হবে।
আমরা আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।