Madhyamik Geography 2019 Question Paper With Answer

Gopi

আজকে আমরা এই লেখায় মাধ্যমিক পরীক্ষার পুরাতন বছরের প্রশ্ন ও তাদের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার সাহায্যে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগের বছরের কি প্রশ্ন এসেছিল, তা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবে। এই লেখায় আমরা “মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্র ২০১৯ এবং তার উত্তর” নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক ২০১৯ এর প্রশ্নগুলি শিক্ষার্থীরা পরবর্তী বছরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তুমি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে “মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্র ২০১৯ এবং তার উত্তর” টি দেখে পরীক্ষা দিবে।

Table of Contents

Madhyamik Geography 2019 Question Paper With Answer

বিভাগ – ‘ক’

১। বিকল্পগুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো।

১.১ যে প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, তাকে বলে –

(ক) আরোহণ প্রক্রিয়া

(খ) অবরোহণ প্রক্রিয়া

(গ) আবহবিকার প্রক্রিয়া

(ঘ) নগ্নীভবন প্রক্রিয়া

উত্তরঃ (ক) আরোহণ প্রক্রিয়া

১.২ পার্বত্য হিমবাহের পৃষ্ঠদেশে সৃষ্ট গভীর ফাটলগুলিকে বলে –

(ক) নুনাটাক্

(খ) ক্রেভাস

(গ) অ্যারেট

(ঘ) সার্ক

উত্তরঃ (খ) ক্রেভাস

১.৩. বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর সবচেয়ে কম থাকে –

(ক) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে

(খ) মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে

(গ) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে

(ঘ) স্তেপ জলবায়ু অঞ্চলে

উত্তরঃ (ক) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে

১.৪ ফ্রান্সের রোন নদীর উপত্যকায় প্রবাহিত শীতল স্থানীয় বায়ুকে বলে –

(ক) চিনুক

(খ) সিরোক্কো

(গ) মিস্ট্রাল

(ঘ) বোরা

উত্তরঃ (গ) মিস্ট্রাল

১.৫ উষ্ণ সমুদ্রস্রোত এবং শীতল সমুদ্রস্রোত যে স্থানে মিলিত হয় তাকে বলে –

(ক) হিমপ্রাচীর

(খ) হিমশৈল

(গ) হিমানী সম্প্রপাত

(ঘ) হিমগুল্ম

উত্তরঃ (ক) হিমপ্রাচীর

১.৬ পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব সর্বাধিক হলে তাকে বলে –

(ক) সিজিগি

(খ) পেরিজি

(গ) অ্যাপোজি

(ঘ) অপসূর

উত্তরঃ (গ) অ্যাপোজি

১.৭ মানব শরীরে দূষিত জল থেকে সৃষ্টি হয় –

(ক) আমাশয়

(খ) হাঁপানি

(গ) ফুসফুসের ক্যান্সার

(ঘ) দৃষ্টিহীনতা

উত্তরঃ (ক) আমাশয়

১.৮ ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের মূল ভিত্তি ছিল –

(ক) ভাষা

(খ) ভূপ্রকৃতিগত সাদৃশ্য

(গ) খাদ্যের সাদৃশ্য

(ঘ) অর্থনৈতিক কাজের সাদৃশ্য

উত্তরঃ (ক) ভাষা

১.৯ গঙ্গা নদীর উৎস হল –

(ক) যমুনেত্রী হিমবাহ

(খ) জেমু হিমবাহ

(গ) সিয়াচেন হিমবাহ

(ঘ) গঙ্গোত্রী হিমবাহ

উত্তরঃ (ঘ) গঙ্গোত্রী হিমবাহ

১.১০ ভারতের বৃহত্তম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা হল –

(ক) ভাকরা-নাঙ্গাল

(খ) দামোদর

(গ) রিহান্দ

(ঘ) হিরাকুদ

উত্তরঃ (ক) ভাকরা-নাঙ্গাল

১.১১ ভারতে হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল –

(ক) পশ্চিমবঙ্গ

(খ) উত্তরপ্রদেশ

(গ) পাঞ্জাব

(ঘ) অন্ধ্রপ্রদেশ

উত্তরঃ (ক) পশ্চিমবঙ্গ

১.১২ লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হল –

(ক) আকরিক লৌহ

(খ) কয়লা

(গ) ম্যাঙ্গানিজ

(ঘ) সবগুলিই প্রযোজ্য

উত্তরঃ (ঘ) সবগুলিই প্রযোজ্য

১.১৩ ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদমসুমারি অনুসারে ভারতের মহানগরের সংখ্যা হল –

(ক) ৫৫টি

(খ) ৫৩টি

(গ) ৫১টি

(ঘ) ৪৯টি

উত্তরঃ (খ) ৫৩টি

১.১৪ মিলিয়ন শীট ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত বিস্তার –

(ক) ১৫’ × ১৫’

(খ) ৩০ × ৩০

(গ) ১° × ১°

(ঘ) ৪° × ৪°

উত্তরঃ (ঘ) ৪° × ৪°

বিভাগ – ‘খ’

২। নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখো (যে-কোনো ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও)

২.১.১ অক্ষাংশের ভিত্তিতে হিমরেখার উচ্চতা পরিবর্তিত হয়ে থাকে।

উত্তরঃ শু

২.১.২ অ্যানিমোমিটারের সাহায্যে বায়ুর গতিবেগ মাপা হয়।

উত্তরঃ শু

২.১.৩ নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রজলের লবণতা সর্বাধিক থাকে।

উত্তরঃ

২.১.৪ ভারতে সর্বোচ্চ মালভূমি হল ডেকান ট্র্যাপ।

উত্তরঃ

২.১.৫ গঙ্গা সমভূমির প্রাচীন পলিগঠিত অঞ্চলকে ভাঙ্গর বলে।

উত্তরঃ শু

২.১.৬ বিশাখাপত্তনম্ ভারতের একমাত্র শুল্কমুক্ত বন্দর।

উত্তরঃ

২.১.৭ উপগ্রহ চিত্রে লালবর্ণের রেখার সাহায্যে সড়কপথ বোঝানো হয়।

উত্তরঃ 

২.২ উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো (যে-কোনো ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও)

২.২.১ নদীগর্ভে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গর্তগুলিকে_বলে।

উত্তরঃ নদীগর্ভে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গর্তগুলিকে মন্ত্রকূপ বলে।

২.২.২ শীতকালে শিল্পাঞ্চলে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ধূলিকণর সঙ্গে মিশে তৈরি হয়_।

উত্তরঃ শীতকালে শিল্পাঞ্চলে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ধূলিকণর সঙ্গে মিশে তৈরি হয় ধোঁয়াশা।

২.২.৩ _স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ডে তুষারপাত হয়।

উত্তরঃ ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ডে তুষারপাত হয়।

২.২.৪ বর্জ্য কাগজ একটি_ধরনের বর্জ্য।

উত্তরঃ বর্জ্য কাগজ একটি জৈবভঙ্গুর ধরনের বর্জ্য।

২.২.৫ _ ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু বায়ুকে ভারতে আসতে বাধ্য করে।

উত্তরঃ মৌসুমি/দঃপঃ মৌসুমি ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু বায়ুকে ভারতে আসতে বাধ্য করে।

২.২.৬ ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম অংশ _।

উত্তরঃ ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম অংশ কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ

২.২.৭ _ ভারতের সর্বাধিক জনবহুল শহর।

উত্তরঃ মুম্বাই ভারতের সর্বাধিক জনবহুল শহর।

২.৩ একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও (যে-কোনো ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও)

২.৩.১ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে কোন্ ধরনের বৃষ্টিপাত দেখা যায়?

উত্তরঃ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বা ঘূর্ণবৃষ্টি ধরনের বৃষ্টিপাত দেখা যায়।

২.৩.২ সুন্দরবনের কোন্ দ্বীপ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে?

উত্তরঃ সুন্দরবনের নিউমুর দ্বীপ দ্বীপ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে।

২.৩.৩ ভারতের মরু অঞ্চলে কোন্ ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়?

উত্তরঃ ভারতের মরু অঞ্চলে জেরোফাইট বা জাঙ্গল উদ্ভিদ ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়।

২.৩.৪ মরা জোয়ার কোন্ তিথিতে দেখা যায়?

উত্তরঃ মরা জোয়ার শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে দেখা যায়।

২.৩.৫ গঙ্গা নদীর প্রবাহের কোন্ অংশে সর্বাধিক দূষণ দেখা যায়?

উত্তরঃ গঙ্গা নদীর প্রবাহের নিম্নপ্রবাহে বা ভাগীরথী-হুগলি অংশে অংশে সর্বাধিক দূষণ দেখা যায়।

২.৩.৬ ভারতের একটি জায়িদ ফসলের নাম লেখো।

উত্তরঃ ভারতের একটি জায়িদ ফসলের নাম হল কুমড়ো/পটল

২.৩.৭ ভারতের কোন্ রাজ্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণে সর্বাধিক অগ্রণী?

উত্তরঃ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণে সর্বাধিক অগ্রণী।

২.৩.৮ ‘ভারতের জরিপ সংস্থা’র প্রধান কার্যালয় কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ ‘ভারতের জরিপ সংস্থা’র প্রধান কার্যালয় দেরাদুন-এ অবস্থিত।

২.৪ বামদিকের সাথে ডানদিকেরগুলি মিলিয়ে লেখো :

বামদিকডানদিক
২.৪.১ ওজোন গ্যাসের প্রাধান্য(১) গুড়গাঁও
২.৪.২ ইক্ষু গবেষণাগার(২) জম্মু ও কাশ্মীর
২.৪.৩ বৃহত্তম মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকেন্দ্র(৩) স্ট্র্যটোস্ফিয়ার
২.৪.৪ কারেওয়া(৪) লক্ষ্ণৌ

উত্তরঃ

বামদিকডানদিক
২.৪.১ ওজোন গ্যাসের প্রাধান্য(৩) স্ট্র্যটোস্ফিয়ার
২.৪.২ ইক্ষু গবেষণাগার(৪) লক্ষ্ণৌ
২.৪.৩ বৃহত্তম মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকেন্দ্র(১) গুড়গাঁও
২.৪.৪ কারেওয়া(২) জম্মু ও কাশ্মীর

বিভাগ – ‘গ’

৩। নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়)

৩.১ নগ্নীভবন কাকে বলে?

উত্তরঃ

আবহবিকারের মাধ্যমে সৃষ্ট চূর্ণবিচূর্ণ শিলাসমূহ অভিকর্ষের টানে পুঞ্জিত স্খলনরূপে (Mass wasting) নীচে নামে এবং শেষে ক্ষয়ীভবনের মাধ্যমে সেখান থেকে দূরে অপসারিত হয়। সুতরাং আবহবিকার, পুঞ্জিত স্খলন এবং ক্ষয়ীভবন-এই তিনটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার সম্মিলিত কার্যে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর উন্মুক্ত বা নগ্ন হয়ে যায়। একেই বলে নগ্নীভবন, অর্থাৎ আবহবিকার + পুঞ্জিত স্বস্খলন + ক্ষয়ীভবন = নগ্নীভবন।

অথবা

বৈপরীত্য উষ্ণতা কাকে বলে?

উত্তরঃ

বায়ুমণ্ডলের নীচের অংশে ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে উচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা কমে। কিন্তু কোনো কোনো সময় উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা না কমে বেড়ে যায়। একে বলে বৈপরীত্য উষ্ণতা। সাধারণত পার্বত্য উপত্যকায় শান্ত মেঘমুক্ত রাতে পর্বতের উপর অংশের ঠান্ডা ও ভারী বায়ু ক্যাটাবেটিক বা নিকাশি বায়ুরূপে পর্বতের ঢাল বরাবর নীচের উপত্যকায় নেমে এলে এই বৈপরীত্য উষ্ণতা সৃষ্টি হয়।

৩.২ আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন অঞ্চল (ITCZ) কাকে বলে?

উত্তরঃ

উত্তর গোলার্ধের উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধের দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ে (5° উঃ থেকে 5° দঃ) মিলিত হয়। এজন্য দুই ক্রান্তীয় বায়ুর ওই মিলনস্থলকে অর্থাৎ নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়কে আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন অঞ্চল বা Inter Tropical Convergence Zone সংক্ষেপে ITCZ বলে।

অথবা

সমুদ্রস্রোতের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ

সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রজলের এই প্রবাহকেই বলে সমুদ্রস্রোত। সমুদ্রস্রোত দু-প্রকার – উষ্ণস্রোত এবং শীতলস্রোত।

৩.৩ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ

যে কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য বস্তুর সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহণ, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা হয়, তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে। প্রকৃতপক্ষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোনো একক কাজ নয়, অনেকগুলি কাজের সমষ্টি। এই ব্যবস্থাপনার প্রধান দিকগুলি হল –

  • বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস,
  • বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার এবং
  • বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ।

অথবা

তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ

যেসব বর্জ্য পদার্থ থেকে তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয় সেগুলিকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলে। এগুলি সর্বাধিক ক্ষতিকর বর্জ্যের অন্যতম। যেমন পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে সৃষ্ট ছাই এবং ব্যবহৃত ভারী জল তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একইভাবে ইউরেনিয়াম খনি, নিউক্লিয়ার রিয়াক্টার, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র প্রভৃতি থেকেও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সৃষ্টি হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলে পরিবেশে বিপুল পরিমাণে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

৩.৪ মালনাদ অঞ্চল কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ

দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত কর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমভাগে মালনাদ অঞ্চলটি অবস্থিত। কন্নড় ভাষায় মালনাদ কথার অর্থ ‘পাহাড়ি দেশ’। পশ্চিমঘাট সংলগ্ন কর্ণাটকের এই মালনাদ অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি এবং তাই খুবই বন্ধুর। স্বল্পোচ্চ বাবাবুদান পাহাড় এখানেই অবস্থিত।

অথবা

ভারতের দুটি জলবিভাজিকা অঞ্চলের নাম লেখো।

উত্তরঃ

ভারতের দুটি জলবিভাজিকা অঞ্চলের নাম –

  • পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি এবং
  • বিন্ধ্য-সাতপুরা পার্বত্যভূমি।

৩.৫ মিলেট জাতীয় শস্য বলতে কি বোঝো?

উত্তরঃ

সাধারণত পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতের উষ্ণ ও শুষ্ক অঞ্চলের অনুর্বর মাটিতে কিছুটা নিম্নমানের একপ্রকার ক্ষুদ্রাকার দানা- জাতীয় শস্য উৎপাদিত হয়, যেমন জোয়ার, বাজরা, রাগি প্রভৃতি। এগুলিকেই এক কথায় মিলেট-জাতীয় শস্য বলে। যেসব জমি ধানচাষের পক্ষে নিকৃষ্ট এবং সেচের সুবিধাও নেই, সেখানে এইসব শস্য চাষ করা হয়, অর্থাৎ এগুলি খুবই কষ্টসহিষ্ণু ফসল।

অথবা

ভারতের একটি কৃষিভিত্তিক এবং একটি বনজভিত্তিক শিল্পের নাম লেখো।

উত্তরঃ

ভারতের একটি কৃষিভিত্তিক শিল্প হল – কার্পাস বয়ন শিল্প এবং একটি বনজভিত্তিক শিল্প হল কাগজ শিল্প।

৩.৬ উপগ্রহ চিত্রের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ

পৃথিবীর চারদিকে পরিক্রমণকারী কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ক্যামেরার সাহায্যে যে সাংকেতিক তথ্যচিত্র পাওয়া যায়, তাকেই উপগ্রহ চিত্র বলে।

অথবা

ভগ্নাংশসূচক স্কেলের (R.F.) ব্যবহার উল্লেখ করো।

উত্তরঃ

মানচিত্রে দুটি স্থানের দূরত্ব এবং ভূপৃষ্ঠে ওই দুটি স্থানের প্রকৃত দূরত্বের অনুপাত যখন ভগ্নাংশে প্রকাশ করা হয়, তখন তা হয় ভগ্নাংশসূচক স্কেল (R.F.)। সাধারণত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ভগ্নাংশসূচক স্কেলের ব্যবহার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন R.F. স্কেল 1 : 10,00,000 বা 1 : 1 মিলিয়ন, এই ভিত্তিতে বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র অঙ্কন করা হয়, যাকে বলে মিলিয়ন শিট। আবার, একইভাবে R.F. 1 : 2,50,000 এবং R.F.1 : 1,50,000, এই ভিত্তিতে যথাক্রমে মাঝারি স্কেলের মানচিত্র বা ডিগ্রি শিট এবং ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র বা ইঞ্চি শিট আঁকা হয়।

বিভাগ ‘ঘ’

৪। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়)

৪.১ অনুদৈর্ঘ্য ও বার্খান বালিয়াড়ির মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ

অনুদৈর্ঘ্য ও বার্খান বালিয়াড়ির মধ্যে তিনটি পার্থক্য হল –

বিষয়অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়িবার্খান বালিয়াড়ি
বায়ুর সাথে অবস্থানএটি বায়ুর গতিপথের সাথে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠে।এটি বায়ুর গতিপথের সাথে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠে।
আকৃতিএটি দেখতে তরবারির মতো।এটি দেখতে অর্ধবৃত্তাকার।
শিরার উপস্থিতিঅনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ির প্রান্তভাগে কোনো শিরা থাকে না।বারখানের দুই প্রান্তে দুটি শিং-এর মতো শিরা অবস্থান করে।

অথবা

উষ্ণতা-বৃষ্টিপাত লেখচিত্রের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু চিহ্নিত করার তিনটি যুক্তি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ

উষ্ণতা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রে যদি দেখা যায় –

  • গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন উষ্ণতা – গ্রীষ্মকালে উন্নতা খুব বেশি বাড়ে না (গড়ে 15° সে থেকে 25° সে হয়) এবং শীতকালে উষ্ণতা খুব কমে না (গড়ে 4° সে থেকে 14° সে হয়);
  • উষ্ণতার প্রসর – উষ্ণতার বার্ষিক প্রসর কম (গড়ে 6° সে থেকে 16°সে) অর্থাৎ উষ্ণতার চরমভাব নেই; এবং
  • বৃষ্টিপাতের ঋতু – বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত হয় শীতকালে এবং গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত কম, শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে অর্থাৎ শীতকাল আর্দ্র ও গ্রীষ্মকাল শুষ্ক; এরকম হলে নিশ্চিতভাবে লেখচিত্রটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের বলে চিহ্নিত করা যায়।

৪.২ পরিবেশের উপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ

পরিবেশের উপর বর্জ্যের প্রভাবগুলি হল নিম্নরূপ-

  • বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাব – কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্য জল, মাটি ও বায়ুকে দূষিত করে। ওই সব পদার্থ পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে দেয়। বিভিন্ন শারীরিক রোগের সৃষ্টি করে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • জমির উর্বরতা হ্রাস – কৃষি, গৃহস্থালি, শিল্পকেন্দ্রের আবর্জনা কৃষিজমিতে পড়লে ওই জমি অনুর্বর হয়ে যায়। জমির চারিত্রিক পরিবর্তন হয়।
  • জলের উপর প্রভাব – বর্জ্য পদার্থ নদী, জলাশয়, সাগরে পড়লে ওই জল দূষিত হয়ে যায় এবং জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের উপর তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। মাছেদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মৃত্যু হয়।

অথবা

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের যে-কোনো তিনটি ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের তিনটি ভূমিকা হল –

  • বর্জ্য পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ – পরিবেশে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ কমানোর জন্য শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে সচেষ্ট হবে। এজন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো জিনিস ব্যবহার করবে না এবং দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক, পলিথিন, নাইলন প্রভৃতি জৈব অভঙ্গুর বস্তুসমূহের পরিবর্তে পরিবেশ অনুকূল ও জৈব ভঙ্গুর সামগ্রী ব্যবহার করবে।
  • বিদ্যালয় ও গৃহ বর্জ্য মুক্ত রাখা – শিক্ষার্থীরা নিজেদের শ্রেণিকক্ষ-সহ সমগ্র বিদ্যালয় ও তার চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বাড়িঘরও বর্জ্যমুক্ত রাখবে। এজন্য যন্ত্রতত্র খাবারের অবশিষ্টাংশ, প্যাকেট, ছেঁড়া কাগজ, পেন, পেনসিল প্রভৃতি বর্জ্য পদার্থগুলি না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় (যেমন – ডাস্টবিনে) ফেলবে।
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো – বিভিন্ন প্রকার জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থসমূহের পৃথকীকরণ এবং বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ যাতে সম্পদ হয়ে ওঠে, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেমন নিজেরা সচেতন হবে, তেমন সে সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে প্রদর্শনী, আলোচনা ও বিতর্ক সভার আয়োজন করবে এবং পোস্টার, দেয়াল পত্রিকা প্রভৃতি তৈরি করবে।

৪.৩ ভারতে ক্রান্তীয় চিরহিরৎ উদ্ভিদ এবং ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের তিনটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ

ভারতে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ এবং ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের তিনটি পার্থক্য হল –

বিষয়ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ
উদ্ভিদের প্রকৃতিক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ অধ্যুষিত অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত এবং বছরের অধিকাংশ সময় আর্দ্র আবহাওয়া থাকে বলে শুষ্ক এখানে গাছের পাতা একসঙ্গে ঝরে যায় না। তাই সারাবছরই গাছে সবুজ পাতা এবং অরণ্যও সবুজ থাকে।ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ অধ্যুষিত অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্র আবহাওয়া থাকলেও শীতকাল হওয়ায় ওই সময় গাছের অধিকাংশ পাতা ঝরে যায় এবং তার ফলে বৃক্ষসমূহ তথা অরণ্য রুক্ষ ও শুষ্ক রূপ নেয়।
বৃক্ষউষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য চিরহরিৎ বৃক্ষগুলি দ্রুত বাড়ে, তাদের শাখাপ্রশাখা ক্রমশ উপর দিকে ছড়িয়ে যায় এবং পাতাগুলি হয় খুব বড়ো। বৃক্ষগুলি খুব কাছাকাছি বা ঘনভাবে জন্মায় বলে পরস্পর যুক্ত হয়ে উপরিভাগ সবুজ চাঁদোয়ার মতো নিশ্ছিদ্র-ভাবে বিস্তৃত হয়।বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে বলে বৃক্ষগুলির উচ্চতা হয় মাঝারি, এদের শাখাপ্রশাখা এলোমেলোভাবে বাড়ে এবং পাতার নির্দিষ্ট কোনো আকার থাকে না। বৃক্ষগুলি দূরে দূরে জন্মায় বলে উপরিভাগ উঁচুনীচু হয়।
লতাগুল্মবড়ো বড়ো বৃক্ষের সঙ্গে ওখানে ভূমিভাগ বড়ো বড়ো পাতার ঝোপঝাড় ও লতাগুল্মে পূর্ণ থাকে। এজন্য ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ অধ্যুষিত অরণ্যে প্রবেশ করা প্রায় দুঃসাধ্য হয়।ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের মধ্যে লতাগুল্ম খুব কমই থাকে। তাই ভূমিভাগ বেশ ফাঁকা হয় এবং সেখানে সহজেই প্রবেশ করা যায়।

অথবা

ভারতে শিল্প গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাঁচামালের প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ

বস্তুসূচকের (বস্তুসূচক = কাঁচামালের ওজন ÷ উৎপাদিত পণ্যের ওজন) মানের উপর ভিত্তি করে শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালকে দুইভাগে ভাগ করা হয়, যথা – [i] বিশুদ্ধ কাঁচামাল এবং [ii] অবিশুদ্ধ কাঁচামাল। শিল্পের অবস্থানে এই দুই ধরনের কাঁচামালের প্রভাব খুব বেশি। যেমন –

  • বিশুদ্ধ কাঁচামালের প্রভাব – যখন নির্দিষ্ট ওজনের কাঁচামাল থেকে প্রায় একই ওজনের পণ্য উৎপাদিত হয়, অর্থাৎ বস্তুসূচকের মান ১ (এক) বা ১ – এর কাছাকাছি থাকে, তাকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে, যেমন কার্পাস বা তুলো, পাট ইত্যাদি। এইসব বিশুদ্ধ কাঁচামালনির্ভর শিল্পগুলির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কাঁচামালের ওজন ও উৎপাদিত পণ্যের ওজন প্রায় একই হয় বলে শিল্পগুলি কাঁচামালের উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা অন্য যে-কোনো সুবিধাজনক স্থানে গড়ে উঠতে পারে। এজন্য এগুলিকে শিকড় আলগা বা অস্থানু শিল্প বলে। উদাহরণ – মহারাষ্ট্র-গুজরাটে উৎপাদিত কার্পাসের উপর ভিত্তি করে শুধু ওই দুই রাজ্যেই নয়, বহু দূরের হুগলি শিল্পাঞ্চলসহ পূর্ব ও উত্তর ভারতের বহু স্থানেই কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে উঠেছে।
  • অবিশুদ্ধ কাঁচামালের প্রভাব – যে কাঁচামালের ওজন উৎপাদিত পণ্যের ওজনের চেয়ে বেশি হয়, অর্থাৎ বস্তুসূচকের মান ১(এক)-এর বেশি হয়, তাকে অবিশুদ্ধ বা ওজনহ্রাসসীল কাঁচামাল বলে, যেমন আখ, আকরিক লোহা ইত্যাদি। আখ থেকে চিনি উৎপাদন করলে তার ওজন কমে যায়। এজন্য পরিবহণ ব্যয় কমাতে অবিশুদ্ধ কাঁচামাল ব্যবহারকারী শিল্পগুলি কাঁচামালের উৎসের কাছে গড়ে ওঠে। উদাহরণ – আখ উৎপাদনকারী মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে ভারতের অধিকাংশ চিনি কল গড়ে উঠেছে।

৪.৪. উপগ্রহ চিত্রের প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ

উপগ্রহ চিত্রের তিনটি বৈশিষ্ট্য হল –

  • বিশাল অঞ্চলের চিত্র – অনেক উঁচু থেকে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে এবং ডিজিট্যাল বা সংখ্যাকারে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে উপগ্রহ চিত্র তৈরি করা হয় বলে এক-একটি উপগ্রহ চিত্রের মধ্যে বহু বর্গকিলোমিটার ব্যাপী এলাকার অর্থাৎ সুবিশাল অঞ্চলের ছবি বা চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।
  • ছদ্ম রঙে উপস্থাপিত চিত্র – উপগ্রহ চিত্রে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন উপাদানসমূহ, যেমন মাটি, জল, উদ্ভিদ, বসতি প্রভৃতিকে প্রকৃত রঙের পরিবর্তে ছদ্ম রঙে প্রকাশ করা হয়। যেমন গভীর অরণ্য গাঢ় লালে, অগভীর বন হালকা বা ঘষা লালে, সবুজ ধান খেত লালচে রঙে, হলুদ বা পাকা ধান খেত কালচে লালে, নদী ও জলাশয় গাঢ় নীলে, বসতি সবজে নীলে দেখানো হয়।
  • উপগ্রহ চিত্র কম্পিউটারে ব্যবহার ও বিশ্লেষণের উপযোগী – ডিজিট্যাল বা সংখ্যাকারে সংগৃহীত তথ্যের উপর নির্ভর করে উপগ্রহ চিত্র তৈরি করা হয় বলে এই চিত্রকে কম্পিউটারে বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রয়োজন মতো ব্যবহার ও বিশ্লেষণ এবং GIS (Geographical Information System)-সহ বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়।

অথবা

দূর সংবেদন ব্যবস্থার সুবিধা ও অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ

সুবিধাসমূহ – দূর সংবেদন ব্যবস্থার সুবিধাগুলি হল-

  • দুর্গম অঞ্চলের তথ্য – দূর সংবেদন ব্যবস্থার মাধ্যমে যে-কোনো দুর্গম অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
  • খুব অল্প সময়ে বিস্তৃত অঞ্চলের নিঁখুত তথ্য – দূর সংবেদন ব্যবস্থার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে বিস্তীর্ণ এলাকার নিখুঁত তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
  • আবহাওয়ার পরিবর্তন ও সঠিক পূর্বাভাস – এর মাধ্যমে আবহাওয়ার তাৎক্ষণিক পরিবর্তন সহজেই ধরা পড়ে বলে আবহাওয়ার সঠিক পর্বাভাস দেওয়া যায়।

এ ছাড়াও দূর সংবেদন ব্যবস্থার মাধ্যমে জলসম্পদ, অরণ্যসম্পদ, ভূমি ব্যবহারের ধরন, ভূগর্ভস্থ সম্পদ, আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিদেশি সেনার গতিবিধি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ও সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

অসুবিধাসমূহ – দূর সংবেদন ব্যবস্থার অসুবিধাগুলি হল –

  • ব্যয়বহুল – দূরসংবেদন ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরিতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এজন্য সব দেশ এটি ব্যবহার করতে পারে না।
  • উন্নত প্রযুক্তি ও সুদক্ষ কর্মী প্রয়োজন – দূর সংবেদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয় বলে এর ব্যবহার খুবই সীমিত।
  • মেঘাচ্ছন্ন আকাশ – আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তথ্য সংগ্রহ করা অসুবিধাজনক।

এ ছাড়াও দূর সংবেদন ব্যবস্থার মাধ্যমে বস্তুর উচ্চতা নির্ণয়ে অসুবিধা হয়।

বিভাগ ‘ঙ’

৫। ৫.১ যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও।

৫.১.১ নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি প্রধান ভূমিরূপ চিত্রসহ বর্ণনা করো।

উত্তরঃ

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি প্রধান ভূমিরূপ হল –

উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত নদী তার গতিপথে তিনটি কাজ করে – ক্ষয়, বহন এবং সঞ্চয়। এগুলির মধ্যে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে যেসব ভূমিরূপ গঠিত হয় সেগুলি হল –

‘I’ আকৃতির উপত্যকা ও ক্যানিয়ন – শুষ্ক ও প্রায়-শুষ্ক পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে ‘I’-আকৃতির নদী উপত্যকার সৃষ্টি হয়। কারণ, বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য নদী উপত্যকাগুলির পার্শ্বদেশের বিস্তার কম, কিন্তু ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদীগুলির নিম্নক্ষয় বেশি হয়। এজন্য নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়। শুষ্ক অঞ্চলে গভীর ‘I’-আকৃতির উপত্যকাকে ক্যানিয়ন বলা হয়। যেমন – কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (গভীরতা প্রায় 1857 মি)।

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি প্রধান ভূমিরূপ চিত্রসহ বর্ণনা করো।

‘V’-আকৃতির উপত্যকা ও গিরিখাত – আর্দ্র ও আর্দ্রপ্রায় অঞ্চলে নদীর ঊর্ধ্ব বা পার্বত্য প্রবাহে ভূমির ঢাল অধিক থাকায় নদীগুলি প্রবলভাবে নিম্নক্ষয় করে। এরূপ নিম্নক্ষয়ের কারণে নদী উপত্যকাগুলি যেমন সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ওঠে তেমনি আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ইত্যাদির প্রভাবে কিছু পরিমাণ পার্শ্বক্ষয়ও চলে। ফলে নদী উপত্যকা পূর্বাপেক্ষা চওড়া হয়ে ‘V’ আকৃতি ধারণ করে। অতিগভীর ‘V’-আকৃতির উপত্যকাকে বলা হয় গিরিখাত। যেমন – নেপালের কালী নদীর গিরিখাত।

'V'-আকৃতির উপত্যকা ও গিরিখাত

জলপ্রপাত – নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর ওপর-নীচে আড়াআড়িভাবে থাকলে প্রবল স্রোতে কঠিন ও কোমল শিলার সন্ধিস্থল উন্মুক্ত হয় এবং ওপরের কঠিন শিলাস্তর ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হলে নীচের কোমল শিলাস্তর বেরিয়ে আসে। কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয় পাওয়ার কারণে নদীস্রোত হঠাৎ খাড়া ঢাল সৃষ্টি করে প্রবল বেগে নীচে পড়ে। একেই বলা হয় জলপ্রপাত। উদাহরণ – ভেনেজুয়েলার ক্যারোনি (Caroni) নদীর উপনদী চুরান (Churun) নদীর গতিপথে সৃষ্ট অ্যাঞ্জেল প্রপাতটি পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত।

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি প্রধান ভূমিরূপ চিত্রসহ বর্ণনা করো।

৫.১.২ নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় এবং মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ

নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 5 ডিগ্রি থেকে 10 ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে যেখানে সারা বছর বায়ুর চাপ কম থাকে, সেই অঞ্চলকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ এলাকা বলা হয়।

নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ –

  • সূর্যের লম্বভাবে কিরণ – নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 5 থেকে 10 ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে সারা বছর সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে, এই অঞ্চলের বায়ু উষ্ণ ও হালকা থাকে। এই হালকা বায়ু উপরে উঠে শূন্যস্থান তৈরি করে, যার ফলে নিচে চাপ কমে যায়।
  • জলীয় বাষ্প – নিরক্ষীয় এলাকায় স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি। জলভাগ থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বায়ুতে মিশে যায়। জলীয় বাষ্প পূর্ণ বায়ু শুষ্ক বায়ুর চেয়ে হালকা হয়। ফলে, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কমে যায়।

মেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয়

পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে ৪০ থেকে ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত এলাকাকে মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলা হয়।

মেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ –

  • সূর্য রশ্মির তির্যক প্রপাত – এই অঞ্চলে সূর্য রশ্মি খুব তির্যকভাবে পড়ে। ফলে, 6 মাস ধরে সূর্য দিগন্তের কাছে থাকে। এর ফলে এই অঞ্চল খুব কম সৌরশক্তি পায় এবং তাপমাত্রা কম থাকে।
  • জলীয় বাষ্পের অভাব – এই অঞ্চলে জলভাগের পরিমাণ কম থাকায় বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে। জলীয় বাষ্প পূর্ণ বায়ু শুষ্ক বায়ুর চেয়ে হালকা হয়। ফলে, জলীয় বাষ্পের অভাব বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
  • প্রবল শীত – এই অঞ্চলে প্রবল শীতের জন্য সারা বছর ঠান্ডা ঝড় হয়। ঠান্ডা বায়ু ঘন হয়ে নিচে নেমে আসে, যার ফলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধি পায়।

৫.১.৩ শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কিভাবে সংগঠিত হয়, উপযুক্ত উদাহরণ এবং চিত্রসহ বর্ণনা করো।

উত্তরঃ

যদি জলযুক্ত বায়ু কোনও উঁচু পর্বতাকার বাধা পেতে, তবে সেই বায়ুটি উপরে উঠে যায়। পর্বতের উঁচু অংশে তুষার থাকলে, তার সংস্পর্শে বা উর্ধ্বে উঠতে সেই বায়ু শীতল হয় এবং পর্বতের প্রতিবাতে প্রবেশ করে বৃষ্টিপাত উন্মুক্ত হয়। এই ধরনের বৃষ্টিপাতকে শৈলোক্ষেপ বৃষ্টি বলে।

শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কিভাবে সংগঠিত হয়, উপযুক্ত উদাহরণ এবং চিত্রসহ বর্ণনা করো।

পর্বতের প্রতিবাতে উঁচু অংশে তুষারের সংস্পর্শের ফলে বায়ুপ্রবাহ প্রবল হয় এবং বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে পর্বতের উচ্চ প্রান্তে এক নতুন জীবন সৃষ্টি হয়। শৈলোবৃষ্টি পদ্ধতিতে বৃষ্টির পরিমাণ অধিক হয় যখন –

  • পর্বতের উচ্চ প্রান্তে বরফ সংগ্রহ থাকে,
  • সমুদ্রের নিকটে উঁচু পর্বত অবস্থিত হয়, এবং
  • বায়ুপ্রবাহ দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়।

উদাহরণস্বরূপ, মৌসুমী বৃষ্টি এসে পড়ে মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। আরব সাগরের পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের আগে প্রতিবাতে উঠে এবং হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে বা বঙ্গোপসাগরের পাশে মৌসুমী বৃষ্টি এই পদ্ধতিতে ঘটে।

৫.১.৪ জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ

জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণগুলি হল –

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর সমুদ্রের জলরাশি কোথাও ফুলে ওঠে এবং কোথাও নেমে যায়। জলরাশির এই ফুলে-ওঠা বা স্ফীতিকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রধানত দুটি কারণে জোয়ারভাটার সৃষ্টি হয় –

  • পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বল এবং
  • পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল।

পৃথিবীর ওপর চাঁদ এবং সূর্যের আকর্ষণ বল – নিউটনের গুরুত্বপূর্ণ নৈবিজ্ঞানিক সূত্র। এই সূত্র অনুযায়ী, পৃথিবীর ওপর রয়েছে একটি প্রাকৃতিক আকর্ষণ যা পৃথিবীর সাথে চাঁদ ও সূর্যকেও একে অপরের দিকে আকর্ষণ করে। এই সিদ্ধান্তের আলোকে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে। প্রত্যেক গ্রহ, উপগ্রহ, এবং সূর্য একে অপরকে আকর্ষণ করে। চাঁদ ও সূর্যও পৃথিবীকে আকর্ষণ করে, তবে চাঁদের আকর্ষণ বল সূর্যের চেয়ে বেশি। চাঁদের আকর্ষণ বল সূর্যের আকর্ষণ বলের প্রায় দ্বিগুণ। যেহেতু চাঁদের দূরত্ব সূর্যের দূরত্বের প্রায় 389 গুণ বেশি, তাই চাঁদের আকর্ষণ বল সূর্যের আকর্ষণ বলের প্রায় দ্বিগুণ। এ কারণে পৃথিবীর জলরাশি চাঁদের আকর্ষণে ফুলে ওঠে, অর্থাৎ, জোয়ার হয়। পৃথিবী, চাঁদ, এবং সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে জোয়ারের তীব্রতা বেশি হয়।

জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

ভূপৃষ্ঠের যে স্থানে চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার সৃষ্টি হয়, ঠিক তার বিপরীত দিকের স্থানটিতে অর্থাৎ প্রতিপাদ স্থানেও পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে জোয়ার হয়। আর, যে দুটি স্থানে জোয়ার হয়, ঠিক তার সমকোণে অবস্থিত স্থান দুটির জলরাশি সরে যায় বলে সেখানে তখন ভাটা হয়।

পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বল – পৃথিবী নিজের মেরুরেখার চারদিকে অনবরত আবর্তন করে চলেছে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠে একটি বিকর্ষণ শক্তি বা কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয় এবং তার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রবণতা লাভ করে। একেই কেন্দ্রাতিগ বল বলে। এই বল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করে। এইভাবে পৃথিবীর আবর্তন গতি সমুদ্রে জোয়ার সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

৫.২ যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও।

৫.২.১ উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির মধ্যে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য আলোচনা করো।

উত্তরঃ

উত্তর ভারতের নদনদীর সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের নদনদীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যগুলি হল-

বিষয়উত্তর ভারতের নদনদীদক্ষিণ ভারতের নদনদী
নিত্যবহতাসুউচ্চ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয় বলে নদীগুলি বৃষ্টির জল ও বরফগলা জলে পুষ্ট, তাই সারাবছর নদীগুলিতে জল থাকে অর্থাৎ নদীগুলি নিত্যবহ।বেশিরভাগই বৃষ্টির জলে পুষ্ট। এজন্য শুষ্ক ঋতুতে নদীতে জলের পরিমাণ যথেষ্টহ্রাস পায়। তাই নদীগুলি নিত্যবহ নয়।
গতিপথের স্পষ্টতানদীগুলির উচ্চগতি, মধ্যগতি ও নিম্নগতির অধিকাংশই সুস্পষ্ট।গতিপথের বিভিন্ন পর্যায় অস্পষ্ট এবং তার মধ্যে সমতাও নেই।
নদীর গতিপথের প্রকৃতিনদীগুলির অধিকাংশই নবীন এবং সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রায়ই গতিপথ পরিবর্তন করে। এজন্য গতিপথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়।নদীগুলি প্রাচীন এবং গতিপথ পরিবর্তন করে না। এজন্য গতিপথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি হয় না।
নদীর প্রবাহপথে নির্মিত খাতনদীগুলি অনেকটা পথ পার্বত্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে নদীর খাত খুব গভীর (সঙ্কীর্ণ ‘V’ বা ‘I’ আকৃতির)।পার্বত্য উপত্যকার দৈর্ঘ্য কম এবং পার্বত্য অঞ্চলে নদীর খাত বিশেষ গভীর নয়।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনপার্বত্য অঞ্চল ছাড়া সমভূমিতে নদীর স্রোত কম বলে নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল নয়।অধিকাংশ পথ মালভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত বলে বেশিরভাগ নদী জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী।
বদ্বীপ গঠনউত্তর ভারতের নদনদীগুলির (যেমন – গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র) যেমন বদ্বীপ রয়েছে।দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির (যেমন – কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী)-ও বদ্বীপ রয়েছে।

৫.২.২. ভারতের পলি মৃত্তিকা এবং কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ

ভারতের পলি মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • প্লাবনের ফলে নদীবাহিত বালি, পলি ও কাদা নদী উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে পলিমাটির সৃষ্টি হয়।
  • পলির উপস্থিতির কারণে এই মাটি খুবই উর্বর হয়, যদিও পলিমাটিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়।
  • পলিমাটি পটাশ ও চুনজাতীয় পদার্থে সমৃদ্ধ।
  • এই মাটি ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, ডাল, তৈলবীজ, তুলো, ইক্ষু, পাট ও সবজি উৎপাদনের উপযোগী।
  • প্রধানত সামুদ্রিক পলি সঞ্চিত হয়ে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
  • বালি ও লবণের প্রভাবে উর্বরাশক্তি মাঝারি ধরনের।
  • এই মাটিতে নারকেল ও সুপারি গাছ ভালো জন্মায়।
  • নীচু ও বদ্বীপ অঞ্চলের লবণাক্ত পলিমাটিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়।
  • এই মৃত্তিকায় পলিমাটির সঙ্গে প্রচুর তৃণজাতীয় জৈব পদার্থের অধঃক্ষেপ ঘটে।
  • মালভূমি-অধ্যুষিত বনাঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।

এবং ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • লাভা জমাট বেঁধে সৃষ্ট ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়েছে।
  • এই মাটিতে টাইটানিয়াম অক্সাইড এবং জৈব যৌগের পরিমাণ বেশি থাকে বলে এই মাটির রংও কালো হয়। এই মাটির আর-এক নাম রেগুর।
  • এর মধ্যে কাদা ও পলির ভাগ বেশি থাকে এবং বালি কম থাকে, এজন্য এই মাটির দানাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়।
  • নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকলেও এই মাটিতে ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, চুন, অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট আছে বলে এই মাটি অত্যন্ত উর্বর।
  • এই মাটির জলধারণক্ষমতা খুব বেশি।
  • এই মাটিতে তুলো চাষ খুব ভালো হয় বলে একে ‘কৃষ্ণ তুলো মৃত্তিকা’-ও বলা হয়।
  • এই মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আখ (বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলে), চিনাবাদাম (উত্তর কর্ণাটক), জোয়ার, কমলালেবু (নাগপুর), পিঁয়াজ (নাসিক) প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।

৫.২.৩ গম উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্ণনা করো।

উত্তরঃ

গম উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ –

  • জলবায়ু – গমের উন্নত জীবনধারার জন্য প্রয়োজনীয় শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া।
  • উষ্ণতা – গমের জন্য সঠিক উষ্ণতা এবং পাকার সময়ের প্রস্তুতির জন্য উষ্ণ মান গুণগত ক্ষেত্রে ১৫° সেলসিয়াস থেকে ২০° সেলসিয়াস এবং পাকার সময়ে ২৫° সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকা প্রয়োজন।
  • বৃষ্টিপাত – গমের চাষের সময়ে সামান্য বৃষ্টিপাত সহজেই গমের জন্য পরিপূর্ণ হয়, কিন্তু পাকার সময়ে বৃষ্টি অবাঞ্ছিত। সাধারণভাবে ৫০-১০০ সেমির বৃষ্টি গমের জন্য উপযুক্ত হলেও পাকার সময়ে না হওয়া ভাল।
  • আর্দ্রতা – গমের বিভিন্ন পর্বের জন্য বিভিন্ন আবহাওয়া প্রয়োজন – চাষের সময় উষ্ণ ও আর্দ্র, গাছ বাড়ার সময় শুষ্ক, গমের পুষ্টির সময় আর্দ্র, এবং ফসল পাকার সময় উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া।
  • তুষার – তুষারের অনুপাত গমের উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুত্রাধীন চাষে মিনিমাম ১১০ দিন তুষারমুক্ত রাখা প্রয়োজন।
  • মাটির ধর্ম – মৃদু, অম্লধর্মী এবং হালকা কাদামাটি মাটিতে গমের উন্নত বাঁচাই এবং ফলনের সুযোগ বৃদ্ধি দেয়।
  • জমির অবস্থা – গমের জন্য উপযুক্ত জমি পরিবেশের গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক জমির নির্ধারণে গমের প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জলনিকাশী ও সমতল জমি গমের জন্য উপযুক্ত।

৫.২.৪ ভারতে পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তরঃ

ভারতে পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব –

অর্থনৈতিক গুরুত্ব –

  • পণ্য আদানপ্রদান – একদেশের পণ্য অন্যদেশে পৌঁছে দেওয়ায় পরিবহণের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন – ভারতের চা, পাট উন্নত পরিবহণের মাধ্যমে বিশ্বের বাজারে পৌঁছে দেওয়া যায় আবার বিদেশ থেকেও নানা পণ্য আমদানি করা যায়।
  • শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ – শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির কারণেই সম্ভব হয়েছে। উন্নত পরিবহণের কারণেই কাঁচামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে শিল্পস্থাপন করা গেছে।
  • বিপর্যয় মোকাবিলা – বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সেখানে দ্রুত উদ্ধার কার্যের জন্য পরিবহণের ভূমিকা খুব বেশি।
  • কৃষির উন্নতি – পরিবহণের মাধ্যমে গ্রামের কৃষিজমি থেকে শহরের বাজারে দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় বা কৃষির প্রয়োজনীয় সার, রাসায়নিক বীজ শহর থেকে পাঠানো যায়।
  • প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ – বনজ, প্রাণীজ, খনিজ দ্রব্য সংগ্রহ করার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি বাঞ্ছনীয়। আমাজন অববাহিকায় অথবা কানাডার উত্তরে পরিবহণ ব্যবস্থা খুব ভালো না হওয়ার জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান ও সংগ্রহ পিছিয়ে রয়েছে।
  • পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা – সুপরিবহণ থাকার জন্যই বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রীর দামের মধ্যে স্থিতিশীলতা দেখা যায়। এমনকি দ্রুত পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সারাদেশে পণ্য সামগ্রীর মূল্য একই থাকে।

সামাজিক গুরুত্ব –

  • শহর ও নগরের সৃষ্টি – পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। এতে মূল শহর থেকে দূরে ছোটো বড়ো শহর ও নগরের সৃষ্টি হয়।
  • শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নতি – পরিবহণের মাধ্যমেই মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে। এতে পারস্পরিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি ঘটে।

রাজনৈতিক গুরুত্ব –

  • প্রতিরক্ষা – দুর্গম অঞ্চলে সেনা, তাদের রসদ, অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোতে পরিবহণের ভূমিকা বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থাৎ, দেশরক্ষার কাজে বা প্রতিরক্ষার কাজে পরিবহণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • জাতীয় ঐক্য স্থাপন – পরিবহণ সারাদেশের নানা সংস্কৃতি, ভাষাভাষি, ধর্মের লোকেদের একসূত্রে বেঁধে দেয়। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্রমণের মাধ্যমে, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াতের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

৬। প্রশ্নপত্রের সাথে প্রদত্ত ভারতের রেখা-মানচিত্রে নিম্নলিখিতগুলি উপযুক্ত প্রতীক ও নামসহ চিহ্নিত করে মানচিত্রটি উত্তরপত্রের সঙ্গে জুড়ে দাও

৬.১ বিন্ধ্য পর্বত ৬.২ লোকটাক্ হ্রদ ৬.৩ মহানদী নদী ৬.৪ একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল ৬.৫ একটি ম্যানগ্রোভ অরণ্য অঞ্চল ৬.৬ একটি মরু মৃত্তিকা অঞ্চল ৬.৭ উত্তর ভারতের একটি ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চল ৬.৮ পূর্ব ভারতের একটি ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকেন্দ্র ৬.৯ বিশাখাপত্তনম্ বন্দর ৬.১০ পশ্চিম উপকূলের একটি মহানগর।

উত্তরঃ

ভারতের রেখা-মানচিত্র

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer