ভারত একটি বিশাল দেশ। এর আয়তন প্রায় 32,87,263 বর্গকিলোমিটার। এর উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পূর্বে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার, পশ্চিমে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবস্থিত। এই বিশাল ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারতের জলবায়ু অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়।
![ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ - ভারতের জলবায়ু - ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর 1 ভারতের জলবায়ু – ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/12/ভারতের-জলবায়ু-–-ব্যাখ্যামূলক-উত্তরভিত্তিক-প্রশ্ন-ও-উত্তর.webp)
ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ বড়োই অদ্ভুত। ভারত একটি অসাধারণ দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্পূর্ণ প্রমান পাওয়া যায়। এটি মূলত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত। ভারতে পরিবেশের বহুল সমৃদ্ধ স্বরূপ রয়েছে। এখানে পর্বতমালা, নদী, নদীর উপকূল, নদীর তীর, বন, উপবন, বৃক্ষজনিত ইত্যাদি অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যায়।
আজকের এই প্রবন্ধে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ – ভারতের জলবায়ু – ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। নিচের এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের জলবায়ুকে কী কী ঋতুতে ভাগ করা যায়?
মৌসুমি বায়ুর আগমন এবং প্রত্যাগমন, সারাবছরের বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা, বায়ুর চাপ প্রভৃতি লক্ষ করে ভারত সরকারের আবহাওয়া বিভাগ ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করেছে। এগুলি হল —
ঋতুর নাম | মাসের নাম |
শীতকাল | ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি |
গ্রীষ্মকাল | মার্চ থেকে মে |
বর্ষাকাল বা মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল | জুন থেকে সেপ্টেম্বর |
শরৎকাল বা মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনকাল | অক্টোবর থেকে নভেম্বর |
ভারতে মোট কয়টি বৃষ্টিপাত অঞ্চল ও কী কী? এই অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও।
বৃষ্টিপাত অঞ্চল বলতে এমন একটি অঞ্চলকে বোঝায় যার সর্বত্র বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মোটামুটি একই রকম। বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাতের তারতম্য অনুসারে ভারতকে পাঁচটি বৃষ্টিপাত অঞ্চলে ভাগ করা যায় সংক্ষেপে ওই ভাগগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
বৃষ্টিপাত অঞ্চল | প্রভাবিত এলাকা | বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ |
অত্যধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চল | পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, পূর্ব হিমালয়, মিজোরাম পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। | 200 সেমি-র বেশি |
অধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চল | বিহার, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশের পার্বত্য অংশ, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশ। | 100 সেমি থেকে 200 সেমি |
মাঝারি বৃষ্টিপাত অঞ্চল | পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পূর্ব রাজস্থান, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র। | 60 সেমি থেকে 100 সেমি |
স্বল্প বৃষ্টিপাত অঞ্চল | পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার পশ্চিমাংশ, মধ্য রাজস্থান। | 20 সেমি থেকে 60 সেমি |
অতি স্বল্প বৃষ্টিপাত অঞ্চল | রাজস্থানের মরু অঞ্চল, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখ মালভূমি। | 20 সেমি-র কম। |
লু ও আঁধি বায়ুর মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।
লু ও আঁধির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হল —
তুলনার বিষয় | লু | আঁধি |
প্রভাবিত অঞ্চল | লু নামক বায়ু উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজস্থান রাজ্যের মরু অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন স্থানে দেখা যায়। | আঁধি নামক বায়ু শতদ্রু-গঙ্গা সমভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশে দেখা যায়। |
প্রকৃতি | লু একটি শক্তিশালী, উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু। | আঁধি একটি তীব্র, ঝোড়ো ও ধূলিপূর্ণ বায়ু। |
আগমনকাল | লু বায়ুর আগমনকাল হল গ্রীষ্মঋতু। | আঁধি বায়ুর আগমন হয় বসন্তের শেষ দিকে। |
উষ্ণতা | লু বায়ুর উষ্ণতা 45 °সে. থেকে 50 °সে. পর্যন্ত হয়। | আঁধি বায়ুর উয়তা 32 °সে. থেকে 35 °সে. পর্যন্ত হয়। |
প্রবাহকাল | উষ্ণ মরু অঞ্চলে ও মরুপ্রায় অঞ্চলে দিনের বেলায় বিশেষত দুপুরবেলায় লু বায়ু প্রবাহিত হয়। | আঁধি বায়ু মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য বিকেলবেলায় প্রবাহিত হয়। |
আকাশের অবস্থা | লু বায়ুর আগমনে আকাশ কালো হয় না। | আঁধি বায়ুর আগমনে আকাশ কালো হয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। |
প্রভাব | শুষ্ক ও উত্তপ্ত লু বায়ু অনেকসময় গাছপালাকে পুড়িয়ে বাদামি রঙের করে তোলে। | আঁধি বায়ুর ফলে গাছের পাতায় ধুলো জমে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। |
ভারতের জলবায়ু অঞ্চলগুলি আলোচনা করো।
ভারতের জলবায়ু অঞ্চলসমূহ – জলবায়ু অঞ্চল বলতে এমন একটি এলাকাকে বোঝায় যার সর্বত্র জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদান, বিশেষত উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি মোটামুটি একই রকম। কোপেন (Koppen) – এর মত অনুসরণ করে ট্রেওয়ার্থা (Trewartha) ভারতকে আটটি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করেছেন। এগুলি হল —
জলবায়ু অঞ্চল | প্রভাবিত এলাকা | বৈশিষ্ট্য |
ক্রান্তীয় অতি আৰ্দ্ৰ মৌসুমি অঞ্চল | মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গোয়া ও কেরল রাজ্যের উপকূল, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিমঢাল, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর এবং অসমের কাছাড় জেলা, লাক্ষাদ্বীপ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ | 1. বার্ষিক তাপমাত্রা 18 °সে. থেকে 29 °সে. থাকে। 2. বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 300 সেমি। |
ক্রান্তীয় সাভানা অঞ্চল | গুজরাত, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওডিশা রাজ্য | 1. বার্ষিক তাপমাত্রা 15°সে. থেকে 30 °সে থাকে। 2. বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 50 থেকে 100 সেমি। 3. গ্রীষ্মকাল অতি উষ্ণ এবং শীতকাল শুষ্ক প্রকৃতির। |
ক্রান্তীয় শুষ্ক গ্রীষ্ম ও শীতকালীন বৃষ্টিপাত অঞ্চল | দক্ষিণ ভারতের করমণ্ডল উপকূল | 1. বার্ষিক তাপমাত্রা 20°সে. থেকে 30 °সে থাকে। 2. বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100 থেকে 150 সেমি। 3. গ্রীষ্মকাল প্রায় শুষ্ক (যেমন—তামিলনাড়ুর পূর্বাংশ) এবং সাধারণত শীতকালেই বেশি বৃষ্টিপাত হয়। |
ক্রান্তীয় মরুপ্রায় এবং উপক্রান্তীয় স্তেপ অঞ্চল | পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, পূর্ব রাজস্থান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম পাঞ্জাব | 1. বার্ষিক তাপমাত্রা 10 °সে. থেকে 40 °সে. পর্যন্ত হয়ে থাকে। 2. বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 50 থেকে 75 সেমি। |
উষ্ণ মরু অঞ্চল | পশ্চিম রাজস্থান | 1. বার্ষিক তাপমাত্রা 5 °সে. থেকে 48 °সে. পর্যন্ত পৌঁছে যায়। 2. বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 12.5 সেমি থেকে 30 সেমি। 3. জলবায়ু চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির, দৈনিক ও বার্ষিক তাপমাত্রার প্রসর খুব বেশি। |
নাতিশীতোয় মৃদু গ্রীষ্ম ও আর্দ্র শীতল অঞ্চল | সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব অসম | 1. বার্ষিক তাপমাত্রা 20 °সে. থেকে 35 °সে. থাকে। 2. বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 300 সেমি। |
আৰ্দ্ৰ উপক্রান্তীয় মৌসুমি (শুষ্ক শীত) অঞ্চল | উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল | 1. বার্ষিক তাপমাত্রা 5 °সে. থেকে 30 °সে. পর্যন্ত পাওয়া যায়। 2. বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পূর্বদিকে 200 সেমি থেকে পশ্চিমদিকে 50 সেমি পর্যন্ত হয়। 3. বৃষ্টিপাত প্রধানত গ্রীষ্মকালে হয়। |
শীতল পার্বত্য অঞ্চল | পশ্চিম হিমালয়ের উচ্চ অংশ | 1. বার্ষিক তাপমাত্রা শীতকালে প্রায় হিমাঙ্কের কাছে এবং গ্রীষ্মকালে 15 ° সে.-এর মতো থাকে। 2. বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 50 সেমি থেকে 75 সেমি। 3. প্রায় সারাবছর তীব্র ঠান্ডা থাকে এবং শীতকালে তুষারপাত হয়। |
ভারতের জলবায়ু একটি জটিল ব্যবস্থা। এর বৈচিত্র্যের কারণগুলি বিভিন্ন এবং এগুলিকে এককভাবে বোঝা সম্ভব নয়। তবে, ভারতের জলবায়ুর বৈচিত্র্যকে বুঝতে হলে এর উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন কারণগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কগুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন