আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় ‘ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ’ এর ভারতের জনসংখ্যা বিভাগের কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পড়াশোনায় সহায়ক হবে।
আদমশুমারি কাকে বলে?
জনগণনা এবং জনগণনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজকে আদমশুমারি বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয়। 1872 সালে ভারতে প্রথম জনগণনা করা হলেও 1881 সাল থেকে নিয়মিতভাবে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হচ্ছে। এই হিসেবে ভারতে সর্বশেষ জনগণনা করা হয় 2011 সালে। পরবর্তী জনগণনা হবে 2021 সালে।
মোট জনসংখ্যার বিচারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্যের নাম লেখো।
মোট জনসংখ্যা (2011) অনুসারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্য হল — 1. উত্তরপ্রদেশ (19 কোটি 96 লক্ষ), 2. মহারাষ্ট্র (11 কোটি 24 লক্ষ), 3. বিহার (10 কোটি 38 লক্ষ) এবং 4. পশ্চিমবঙ্গ (9 কোটি 13 লক্ষ)।
জনঘনত্ব অনুসারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্যের নাম লেখো।
জনঘনত্ব অনুসারে ভারতের প্রথম চারটি রাজ্য হল — 1. বিহার (প্রতি বর্গকিলোমিটারে 1102 জন), 2. পশ্চিমবঙ্গ (প্রতি বর্গকিলোমিটারে 1029 জন), 3. কেরল (প্রতি বর্গকিলোমিটারে 859 জন) এবং 4. উত্তরপ্রদেশ (প্রতি বর্গকিলোমিটারে 828 জন)।
ভারতের নিবিড় বসতিপূর্ণ রাজ্যগুলির নাম লেখো।
ভারতে যেসব রাজ্যে জনবসতির ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে 400 জনের বেশি, সেগুলিকে নিবিড় বসতিপূর্ণ রাজ্য বলা হয়। ভারতের নিবিড় বসতিপূর্ণ রাজ্যগুলি হল — 1. বিহার (1102 জন), 2. পশ্চিমবঙ্গ (1029 জন), 3. কেরল (859 জন) এবং 4. উত্তরপ্রদেশ (828 জন)।
ভারতে জনবিস্ফোরণের কারণ কী?
বিগত কয়েক দশকে ভারতের জনসংখ্যা এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে একে জনবিস্ফোরণ বলা হয়। জনবিস্ফোরণের প্রধান কারণগুলি হল — 1. ভারতীয় সমাজে দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা এবং বাল্যবিবাহের কারণে উচ্চ জন্মহার; 2. চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে কম বা ক্রমহ্রাসমান মৃত্যুহার; 3. প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থীদের আগমন; 4. খাদ্য ও শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি (যার ফলে রোগব্যাধি হ্রাস পেয়েছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে)। এসব কারণে বিগত কয়েক দশকে ভারতের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটেছে, যা পরোক্ষভাবে জনবিস্ফোরণে অবদান রেখেছে।
সাম্প্রতিক আদমশুমারি অনুসারে ভারতের কোন রাজ্যের জনবসতির ঘনত্ব সবচেয়ে কম এবং কেন?
ভারতের সব রাজ্যগুলির মধ্যে (জাতীয় রাজধানী অঞ্চল ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বাদে) অরুণাচল প্রদেশের জনবসতির ঘনত্ব সবচেয়ে কম। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে মাত্র 17 জন লোক বসবাস করে। কম জনঘনত্বের প্রধান কারণগুলি হল — দুর্গম ভূপ্রকৃতি, প্রতিকূল জলবায়ু, গভীর অরণ্য এবং অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কত বছর অন্তর ভারতে জনগণনা হয় এবং 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্ব কত?
ভারতে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয় এবং 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে 382 জন।
জনসংখ্যার বৃদ্ধি বলতে কী বোঝায়?
জনসংখ্যার বৃদ্ধি বলতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার ধনাত্মক পরিবর্তনকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, 2001 সালের তুলনায় 2011 সালে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ধারণযোগ্য উন্নয়ন কী?
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সেই প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর জন্য যে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলা হয়। এটি এমন এক ধরনের উন্নয়ন চিন্তাধারা যা পৃথিবীর সব মানুষের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে কীভাবে শহর গড়ে ওঠে?
কোনো স্থানে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে মানুষের সমাগম হয়। ধীরে ধীরে সেই অঞ্চলটি শহর এবং পরে নগরে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লি, কলকাতা এমনভাবেই গড়ে ওঠা প্রশাসনিক শহর।
যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে কীভাবে শহর গড়ে ওঠে?
যেখানে সড়ক, রেল বা অন্যান্য পরিবহণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, সেখানে মানুষের সুবিধা হয় বলে শহর গড়ে ওঠে। যেমন — উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের যে-কোনো রাজ্যে, এমনকি নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশে যাওয়া যায়, তাই শিলিগুড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে উঠেছে।
শিল্পকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে কীভাবে শহর গড়ে ওঠে?
শিল্পের প্রসার ঘটলে জীবিকার জন্য সেখানে বহু মানুষের সমাগম হয়। ধীরে ধীরে ওই শিল্পকেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল শহরে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ, জামশেদপুর, দুর্গাপুর, আমদাবাদ।
ভারতের নগরায়ণের দুটি সমস্যা বলো।
ভারতের নগরায়ণের দুটি সমস্যা হল —
1. স্বাস্থ্য সমস্যা — শহরে শিল্পকারখানা ও যানবাহন থেকে প্রচুর ধোঁয়া নির্গত হওয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়।
2. পরিবহণের সমস্যা — শহরগুলিতে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, ফুটপাত বেদখল ইত্যাদির কারণে পরিবহণ ধীর গতিতে চলে। যার ফলে যানজট নগরায়ণের অন্যতম সমস্যা হয়ে উঠেছে।
জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি বলতে কী বোঝায়?
1951 থেকে 1981 সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত হারে (2.16%-2.47%/বছর হারে) বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে জনসংখ্যার এই অতিবৃদ্ধিকে জনবিস্ফোরণ বলা হয়। শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, কৃষি ও শিল্পের অগ্রগতি এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতির কারণে মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় জনসংখ্যার এই দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিশ্চল অবস্থা বলতে কী বোঝায়?
যখন কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে, তখন সেই পরিস্থিতিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিশ্চল অবস্থা বলা হয়। এক্ষেত্রে,
মোট জন্মহার + অভিবাসন = মোট মৃত্যুহার + পরিব্রাজন।
নিশ্চল জনসংখ্যার বৃদ্ধির অবস্থায় রয়েছে এমন দুটি দেশের উদাহরণ হল— সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড।
জনবিস্ফোরণ কী?
যখন কোনো অঞ্চলে বা দেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঘটে এবং সেই বৃদ্ধি হঠাৎ করে জনসংখ্যার বিশাল বৃদ্ধিতে রূপান্তরিত হয়, তখন তাকে জনবিস্ফোরণ বলা হয়। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 2 শতাংশের বেশি হলে জনবিস্ফোরণ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে 1951 থেকে 1981 সালের মধ্যে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 2.16 শতাংশ থেকে 2.47 শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা দেশে জনবিস্ফোরণ ঘটায়। জনবিস্ফোরণের ফলে খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং জীবিকার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়।
নগরায়ণ বলতে কী বোঝায়?
নগরায়ণ হল কোনো গ্রামের এলাকাকে ধীরে ধীরে শহর বা নগরে পরিণত করার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, কোনো স্থানে শহর বা নগরের সৃষ্টি ও উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে নগরায়ণ বলা হয়। নগরায়ণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল— 1. জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে এবং 2. অকৃষিকাজে যুক্ত অধিবাসীদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
শহর বলতে কী বোঝায়?
ভারতের জনগণনা বিভাগের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যে বসতির— 1. মোট জনসংখ্যা 5000 জন বা তার বেশি, 2. জনবসতির ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ন্যূনতম 400 জন, 3. মোট কর্মীর 75 শতাংশ বা তার বেশি অকৃষিকাজে (non-agricultural activities) নিযুক্ত, এবং 4. বসতিটি কোনো মিউনিসিপ্যালিটি, কর্পোরেশন, নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি (প্রজ্ঞাপিত অঞ্চল কর্তৃপক্ষ), অথবা ক্যানটনমেন্ট (সেনানিবাস এলাকা) এর অন্তর্গত হলে, তাকে শহর বলা হয়।
ভারতের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক কিছু প্রাথমিক তথ্য
- মোট জনসংখ্যা – 1,210,193,422 জন
- পুরুষ – 623,724,248 জন (51.54%)
- মহিলা – 586,469,174 জন (48.46%)
- জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার – (a) বার্ষিক = 1.76%, (b) দশকীয় (2001-2011) = 17.64%
- মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি (2001-2011) – 181,455,986 জন
- প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা (15-64 বছর) – 78.78 কোটি (65.20%)
- অপ্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা (0-14 বছর) – 35.58 কোটি (29.50%)
- নির্ভরশীল জনসংখ্যা (65 বছরের বেশি) – 6.20 কোটি (5.30%)
- সাক্ষরতার হার – 74.04% (পুরুষ 82.14%, মহিলা 65.46%)
- কর্মে অনিযুক্ত জনসংখ্যা – 72.85 কোটি
- কর্মে নিযুক্ত জনসংখ্যা – 48.17 কোটি
- প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল – 68.4 বছর (পুরুষ 67.3 বছর, মহিলা 69.6 বছর)
- শিশু মৃত্যুর হার – প্রতি হাজারে 44 জন
- ভারতের জনঘনত্ব – 382 জন/বর্গকিমি
- রাজ্য –
- সর্বাধিক জনঘনত্ব – বিহার (1102 জন/বর্গকিমি)
- সর্বনিম্ন জনঘনত্ব – অরুণাচল প্রদেশ (17 জন/বর্গকিমি)
- কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল –
- সর্বাধিক জনঘনত্ব – দিল্লি (11,297 জন/বর্গকিমি)
- সর্বনিম্ন জনঘনত্ব – আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (46 জন/বর্গকিমি)
- নারী ও পুরুষের জনসংখ্যার অনুপাত (প্রতি হাজার পুরুষ জনসংখ্যায় মহিলার সংখ্যা) – 940 জন
- রাজ্য –
- সর্বাধিক নারী-পুরুষ অনুপাত – কেরল (1084 জন)
- সর্বনিম্ন নারী-পুরুষ অনুপাত – হরিয়ানা (877 জন)
- কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল –
- সর্বাধিক নারী-পুরুষ অনুপাত – পুদুচেরি (1038 জন)
- সর্বনিম্ন নারী-পুরুষ অনুপাত – দমন-দিউ (618 জন)
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় ‘ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ’ এর ‘ভারতের জনসংখ্যা’ বিভাগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়শই আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনারা উপকারী মনে করেছেন। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থেকে থাকে, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়াও, এই পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন যাদের এটি কাজে লাগতে পারে। ধন্যবাদ!