আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

উদ্দীপক ও উদ্দীপনা বলতে কী বোঝ?
উদ্দীপক – যেসব বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা বা শর্ত বা পদার্থ জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, তাদের উদ্দীপক বলে। যেমন – আলো, তাপ হরমোন ইত্যাদি।
উদ্দীপনা – উদ্দীপকের উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট একপ্রকার প্রতিক্রিয়া যা জীব অনুভব করতে পারে, তাকে উদ্দীপনা বলে।
উদ্দীপক ও উদ্দীপনার সম্পর্ক কী? উদ্দীপক কত প্রকার ও কী কী?
উদ্দীপক ও উদ্দীপনার সম্পর্ক – উদ্দীপকের উপস্থিতিতেই জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পরিবেশের সমস্ত জীবই কম-বেশি উদ্দীপকের উদ্দীপনায় সাড়া দেয়। অর্থাৎ, উদ্দীপক কারণ হলে উদ্দীপনা তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া।
উদ্দীপকের প্রকারভেদ – উৎস অনুযায়ী উদ্দীপক দুই প্রকার-বাহ্যিক উদ্দীপক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।
বাহ্যিক উদ্দীপক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক কাকে বলে?

বাহ্যিক উদ্দীপক – যে উদ্দীপক জীবদেহের বাইরে বা বাহ্যিক পরিবেশে উৎপন্ন হয়ে জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, তাকে বাহ্যিক উদ্দীপক বলে। আলো, উষ্ণতার তারতম্য, স্পর্শ প্রভৃতি বাহ্যিক উদ্দীপক।
অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক – জীবদেহের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে সৃষ্ট উদ্দীপক যা জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, তাকে অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক বলে। যেমন – হরমোন, রসস্ফীতির তারতম্য প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।
সংবেদনশীলতা বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
সংবেদনশীলতা – পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তনগুলি শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী সাড়াপ্রদানের ধর্ম বা ক্ষমতাকেই সংবেদনশীলতা (sensitivity) বলে।
উদাহরণ – লজ্জাবতীর পাতাকে স্পর্শ করলে পত্রকগুলি নুয়ে পড়ে। এটি উদ্ভিদের সংবেদশীলতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে উদ্ভিদের সাড়াপ্রদানের ঘটনাটি ব্যাখ্যা করো।
উদ্ভিদের সংবেদনশীলতার বা সাড়াপ্রদানের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল লজ্জাবতী উদ্ভিদ। লজ্জাবতী উদ্ভিদের পাতাকে স্পর্শ করলে, তার পত্রকগুলি নুয়ে পড়ে। এটি স্পর্শ উদ্দীপনায় সাড়াপ্রদানের ঘটনা।
উদ্ভিদ কীভাবে সাড়াপ্রদান করে?
উদ্ভিদ বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে সৃষ্ট উদ্দীপনায় সাড়াপ্রদান করে। সাধারণত এই সাড়াপ্রদান অত্যন্ত ধীর এবং তা মূলত বৃদ্ধিঘটিত বা রসস্ফীতিজনিত হয়ে থাকে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে দ্রুত সাড়াপ্রদানের ঘটনা প্রায় বিরল (ব্যতিক্রম – লজ্জাবতী, বনচাঁড়াল)। অধিকাংশ উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন বা চলনের মাধ্যমে সাড়াপ্রদান করে।
ক্রেসকোগ্রাফ কী ও কী কাজে ব্যবহার করা হয়?

ক্রেসকোগ্রাফ (crescograph) হল বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কৃত একপ্রকার অত্যন্ত সুবেদী যন্ত্র, যার সাহায্যে উদ্ভিদের সামান্য সাড়াপ্রদানের ঘটনাও পরিমাপ করা যায়। বিজ্ঞানী বসু এই যন্ত্রের সাহায্যে লজ্জাবতী এবং বনচাঁড়াল উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান-সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষা করেন।
চলন বলতে কী বোঝ?
যে প্রক্রিয়ায় জীব এক জায়গায় স্থির থেকে উদ্দীপকের প্রভাবে সাড়া দিয়ে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেহের কোনো অংশ সঞ্চালন করে, তাকে চলন বলে।
চলনের উদ্দেশ্য কী?
চলনের উদ্দেশ্যগুলি হল –
1. উদ্ভিদের মূলের অগ্রভাগে জলের অন্বেষণের জন্য চলন দেখা যায়।
2. সূর্যালোক, বাতাস ইত্যাদির সন্ধানে উদ্ভিদের কান্ড ও শাখাপ্রশাখার চলন ঘটে।
3. মাটি থেকে জল ছাড়াও খনিজ লবণের সন্ধানে মূলের বিভিন্ন দিকে চলন দেখা যায়।
উদ্ভিদ চলন কয়প্রকার ও কী কী?
উদ্ভিদ চলন তিনপ্রকার যথা –
1. ট্যাকটিক চলন।
2. ট্রপিক চলন।
3. ন্যাস্টিক চলন।
উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমন বলতে কী বোঝ?
স্বতঃস্ফূর্ত বা বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদ বা উদ্ভিদদেহের কোনো অংশের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন করাকে সামগ্রিক চলন বা গমন বলে। যেমন – Volvox (ভলভক্স), Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) প্রভৃতি শৈবালের চলন।
“উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন একপ্রকার গমন” – উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উদ্ভিদের সামগ্রিক চলনে স্থান পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন – ফোটোট্যাকটিক চলনে শৈবাল স্বল্প আলোর দিকে গমন করে। অঙ্গ সঞ্চালন দ্বারা স্থান পরিবর্তনকেই গমন বলে। তাই উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন হল একপ্রকারের গমন।
বক্রচলন কাকে বলে?
মাটিতে আবদ্ধ অবস্থায় একস্থানে স্থির থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার অঙ্গ সঞ্চালনকে বক্রচলন বলে। যেমন – ট্রপিক চলন, ন্যাস্টিক চলন, প্রকরণ চলন ইত্যাদি।
বৃদ্ধিজ চলন কাকে বলে?
উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অংশের অসমান বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের যে চলন হয় তাকে বৃদ্ধিজ চলন বলে। যেমন – রোহিনী জাতীয় উদ্ভিদে দেখা যায়।
প্রকরণ চলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
প্রকরণ চলন – কোশের রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য উদ্ভিদ-অঙ্গের যে স্বতঃস্ফূর্ত বক্রচলন দেখা যায়, তাকে প্রকরণ চলন বলে।
উদাহরণ – বনচাঁড়ালের যৌগপত্রের পার্শ্বীয় পত্রক দুটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পর্যায়ক্রমে ওপরে ও নীচে ওঠানামা করে। এটি একপ্রকার রসস্ফীতিজনিত প্রকরণ চলন।
স্বতঃস্ফূর্ত চলন কাকে বলে? আবিষ্ট চলন কাকে বলে?
স্বতঃস্ফূর্ত চলন – অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার প্রভাবে সংঘটিত সামগ্রিক বা বক্রচলনকে স্বতঃস্ফূর্ত চলন বলে। যেমন – প্রকরণ চলন।
আবিষ্ট চলন – বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে সংঘটিত সামগ্রিক বা বক্রচলনকে আবিষ্ট চলন বলে। যেমন – ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন।
ট্যাকটিক চলন কাকে বলে? ফোটোট্যাকটিক চলন বলতে কী বোঝ?
ট্যাকটিক চলন – বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদদেহের বা দেহাংশের স্থান পরিবর্তনকে ট্যাকটিক চলন বলে। যেমন – ভলভক্স -এর আলোর দিকে যাওয়া।
ফোটোট্যাকটিক চলন – আলোক উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদ দেহের স্থান পরিবর্তনকে ফোটোট্যাকটিক চলন বলে। যেমন – শৈবালের জুস্পোর ও জননকোশে আলোর প্রভাবে সামগ্রিক চলন বা ফোটোট্যাকটিক চলন দেখা যায়। যেমন – Volvox (ভলভক্স), Ulothrix (ইউলোথ্রিক্স), Cladophora (ক্ল্যাডোফোরা), Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) প্রভৃতি।
পজিটিভ ফোটোট্যাকটিক ও নেগেটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন কাকে বলে?
পজিটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন – যখন ট্যাকটিক চলন আলোক উদ্দীপকের গতিপথের অভিমুখে সংঘটিত হয় তখন তাকে পজিটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন বলে। যেমন – Volvox (ভলভক্স) ও অন্যান্য শৈবাল স্বল্প আলোর দিকে গমন করে, যাকে পজিটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন বলে।
নেগেটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন – যখন ট্যাকটিক চলন আলোক উদ্দীপকের গতিপথের বিপরীত অভিমুখে সংঘটিত হয় তখন তাকে নেগেটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন বলে। যেমন – Volvox (ভলভক্স) ও অন্যান্য শৈবালগুলিই এক্ষেত্রে তীব্র আলোতে আলোর বিপরীতে গমন করে। একে বলে নেগেটিভ ফোটোট্যাকটিক চলন।
কেমোট্যাকটিক চলন উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
রাসায়নিক পদার্থ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তনকে বলে কেমোট্যাকটিক চলন। যেমন – Pteris (টেরিস), Dryopteris (ড্রায়োপটেরিস) জাতীয় ফার্নের শুক্রাণু, স্ত্রীধানী নির্গত ম্যালিক অ্যাসিডের আকর্ষণে স্ত্রীধানীর দিকে গমন করে (পজিটিভ থার্মোট্যাকটিক)।
দিকনির্ণীত চলন বা ট্রপিক চলন কাকে বলে?
উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন বহিস্থ উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত বক্রচলন বলে। যেমন – কান্ডের আলোক উৎসের দিকে চলন।
ফোটোট্রপিক চলন কাকে বলে?

উদ্ভিদ অঙ্গের বক্র চলন যখন আলোক উৎসের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে ফোটোট্রপিক চলন বা আলোকবৃত্তীয় চলন বলে। যেমন – আলোক উৎসের দিকে উদ্ভিদের কাণ্ডের বৃদ্ধি, অর্থাৎ কাণ্ড আলোক অনুকূলবর্তী।
হাইড্রোট্রপিক চলন কাকে বলে?
উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন জলের উৎসের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে হাইড্রোট্রপিক চলন বা জলবৃত্তীয় চলন বলে। যেমন — উদ্ভিদের মূল সর্বদা জলের উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ মূল জল অনুকূলবর্তী।
জিওট্রপিক চলন কাকে বলে?
উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রচলন যখন অভিকর্ষ বল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে জিওট্রপিক চলন বা অভিকর্ষবৃত্তীয় চলন বলে। যেমন — উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষজ টানে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয় অর্থাৎ মূল অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী।
একটি টবের লম্বা একক বিটপযুক্ত উদ্ভিদকে ভূমির সমান্তরাল অবস্থায় সাত দিন রাখা হল। সাত দিন পর বিটপ অংশ বেঁকে ভূমির সঙ্গে লম্বভাবে সোজা হয়ে উঠেছে দেখা যাবে। এর কারণ উল্লেখ করো।
উদ্ভিদের বিটপে আলোক অনুকূলবর্তী চলন ও অভিকর্ষ প্রতিকূলবর্তী চলনের কারণে বিটপ অংশ বেঁকে ভূমির ওপরে লম্বভাবে সোজা হয়ে উঠে যাবে।
ব্যাপ্তি বা ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে?
উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্র চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে না হয়ে উদ্দীপকের তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে ব্যাপ্তি বা ন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন – সূর্যালোকের তীব্রতায় সূর্যমুখী ফুলের প্রস্ফুটন।
ফোটোন্যাস্টিক চলন কাকে বলে?

উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রচলন যখন আলোক উদ্দীপকের তীব্রতার হ্রাস-বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে হয়, তাকে ফোটোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন – দিনের বেলায় তীব্র আলোয় পদ্ম ফুলের প্রস্ফুটন ও সন্ধ্যায় কম আলোয় মুদে যাওয়া।
সিসমোন্যাস্টিক চলন উদাহরণসহ লেখো।
উদ্ভিদ অঙ্গের বক্রচলন যখন স্পর্শ, কম্পন, ঘর্ষণ বা আঘাত প্রভৃতি উদ্দীপকের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে, তখন তাকে স্পর্শ ব্যাপ্তি চলন বা সিসমোন্যাস্টিক চলন বলে। স্পর্শের কারণে লজ্জাবতীর পাতার পত্রকগুলি মুদে যাওয়া এইপ্রকার চলনের উদাহরণ।
কেমোন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কেমোন্যাস্টিক চলন – বাহ্যিক পরিবেশের কোনো রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতা বা ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদ-অঙ্গের যে বক্রচলন হয়, তাকে কেমোন্যাস্টিক চলন বলে। বিভিন্ন পতঙ্গভুক উদ্ভিদের মধ্যে এইধরনের চলন দেখা যায়।
উদাহরণ – ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ -এর পাতায় পতঙ্গ বসলে পতঙ্গের প্রোটিনের প্রভাবে উদ্ভিদের পাতার পত্রফলক দুটি বন্ধ হয়ে যায়।
নিকটিন্যাস্টি বা আলোক তাপব্যাপ্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
নিকটিন্যাস্টি – আলোক এবং তাপ উভয়ের তীব্রতার তারতম্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের বক্র চলনকে নিকটিন্যাস্টি বা আলোক তাপব্যাপ্তি বলে।
উদাহরণ – আমরুল, বাবলা, সুসনি, তেঁতুল, শিরীষ প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা দিনের বেশি আলোক ও তাপে খুলে যায়, কিন্তু সন্ধ্যেবেলার মৃদু আলো ও তাপে মুদে যায়।
থার্মোন্যাস্টিক চলন বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

থার্মোন্যাস্টিক চলন – উষ্ণতা উদ্দীপকের তীব্রতার তারতম্যের প্রভাবে উদ্ভিদ-অঙ্গের যে বক্রচলন হয়, তাকে থার্মোন্যাস্টিক চলন বা তাপব্যাপ্তি চলন বলে।
উদাহরণ – স্বাভাবিক উষ্ণতায় টিউলিপ ফুল ফোটে কিন্তু উষ্ণতা কমে গেলে মুদে যায়।
ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য হল –
বিষয় | ট্রপিক চলন | ন্যাস্টিক চলন |
---|---|---|
উদ্দীপকের ভূমিকা | উৎসের অভিমুখ। | তীব্রতা। |
চলনের প্রকৃতি | স্থায়ী, বৃদ্ধিজনিত। | অস্থায়ী, রসস্ফীতিজনিত। |
হরমোনের ভূমিকা | অক্সিন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। | অক্সিনের কোনো ভূমিকা নেই। |
ট্রপিক চলন ও ট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ট্রপিক চলন ও ট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য হল –
বিষয় | ট্রপিক চলন | ট্যাকটিক চলন |
---|---|---|
স্থান পরিবর্তন | বক্রচলন, স্থান পরিবর্তন ঘটে না। | সামগ্রিক চলন, স্থান পরিবর্তন ঘটে। |
চলনের প্রকৃতি | উদ্ভিদ-অঙ্গের স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটে। | উদ্ভিদ-অঙ্গের স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটে না, অস্থায়ী চলন। |
উদ্দীপকের ভূমিকা | বাহ্যিক উদ্দীপকের গতিপথ বা উৎস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। | উদ্দীপকের গতিপথ ও তীব্রতা উভয়ের দ্বারা প্রভাবিত। |
চলন ও গমনের পার্থক্য লেখো।
চলন ও গমনের মধ্যে পার্থক্য হল –
বিষয় | চলন | গমন |
---|---|---|
জীবের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন | ঘটে না। | ঘটে। |
সঞ্চালিত অঙ্গ | কিছু নির্দিষ্ট অঙ্গ-বিশেষে সীমিত। | সমগ্র দেহ সঞ্চালিত হয়। |
দুই পদ্ধতির সম্পর্ক | চলন হল গমন-নিরপেক্ষ। | গমন সবসময় চলন-নির্ভর। |
সংশ্লিষ্ট জীব | উদ্ভিদ ও প্রাণী সকল জীবের দেহেই ঘটে। | প্রধানত প্রাণীর দেহে ঘটে। |
ফোটোট্রপিক ও ফোটোট্যাকটিক চলনের পার্থক্য লেখো।
ফোটোট্রপিক ও ফোটোট্যাকটিক চলনের পার্থক্য হল –
বিষয় | ফোটোট্রপিক চলন | ফোটোট্যাকটিক চলন |
---|---|---|
চলনের প্রকৃতি | আলোক-নির্ভর আংশিক চলন। | আলোক-নির্ভর সামগ্রিক চলন। |
চলনের স্থান | উচ্চবর্গীয় উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু স্থান। | নিম্নবর্গীয় উদ্ভিদের সম্পূর্ণ দেহ। |
ফোটোট্রপিক ও ফোটোন্যাস্টিক চলনের পার্থক্য লেখো।
ফোটোট্রপিক ও ফোটোন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য হল –
বিষয় | ফোটোট্রপিক চলন | ফোটোন্যাস্টিক চলন |
---|---|---|
উদ্দীপকের ভূমিকা | আলোর-উৎসের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। | আলোর তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। |
হরমোনের ভূমিকা | অক্সিন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। | অক্সিন হরমোনের কোনো ভূমিকা নেই। |
চলনের প্রকৃতি | দেহাংশের বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘটে অর্থাৎ স্থায়ী প্রকৃতির। | দেহাংশের বৃদ্ধি ঘটে না অর্থাৎ অস্থায়ী প্রকৃতির। |
ন্যাস্টিক ও ট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ন্যাস্টিক চলন ও ট্যাকটিক চলনের মধ্যে পার্থক্য হল –
বিষয় | ন্যাস্টিক চলন | ট্যাকটিক চলন |
---|---|---|
স্থান পরিবর্তন | বক্রচলন, স্থান পরিবর্তন হয় না। | সামগ্রিক চলন, স্থান পরিবর্তন ঘটে। |
উদ্দীপকের ভূমিকা | উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। | উদ্দীপকের তীব্রতা ও গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। |
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন