আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশসমূহের বর্ণনা দাও ও প্রত্যেকের কাজ লেখো।
আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ –
যে ফুলে পুষ্পাক্ষের ওপর চারটি স্তবক অর্থাৎ বৃতি, দলমণ্ডল, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক বর্তমান, তাকে আদর্শ ফুল বলে। যেমন – জবা ফুল। আদর্শ ফুলের এই চারটি স্তবকের মধ্যে পুংস্তবক বা পুংকেশর চক্র এবং স্ত্রীস্তবক বা গর্ভকেশর চক্র জননে সাহায্য করে বলে এদের অত্যাবশ্যকীয় স্তবক বা জনন স্তবক বলে। আবার বৃতি ও দলমণ্ডল জননে অংশ নেয় না বলে এদের সাহায্যকারী স্তবক বলে। আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশগুলির বর্ণনা নিম্নরূপ।
বৃতি –
ফুলের একেবারে বাইরের দিকের স্তবককে বৃতি বলে। বৃতি সবুজ রঙের হয়। বৃতির এক একটি ছোটো পাতার মতো অংশকে বৃত্যংশ বলে। অনেকক্ষেত্রে বৃতির নীচের দিকে সবুজ বর্ণের উপবৃতি থাকে।
কাজ –
- বৃতি কুঁড়ি অবস্থায় ফুলের অন্যান্য স্তবককে উষ্ণতা, ঠান্ডা, বৃষ্টি ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রভৃতি থেকে রক্ষা করে।
- সবুজ বৃতি সালোকসংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে।

দলমণ্ডল –
বৃতির পরবর্তী অংশ বা ফুলের দ্বিতীয় স্তবককে দলমণ্ডল বলে। দলমণ্ডলের প্রতিটি অংশকে দলাংশ বা পাপড়ি বলে। এই দলাংশ বা পাপড়ি সাদা বা বিভিন্ন বর্ণের ও গন্ধহীন বা সুগন্ধযুক্ত হয়।
কাজ –
- কুঁড়ি অবস্থায় দলমণ্ডল ফুলের ভিতরের দিকের অপরিহার্য দুটি স্তবককে উষ্ণতা, ঠান্ডা, বৃষ্টি ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- ফুলের এই অংশ বর্ণময় ও সুগন্ধযুক্ত হওয়ায় কীটপতঙ্গকে পরাগযোগের জন্য আকৃষ্ট করে।
পুংকেশর চক্র বা পুংস্তবক –
ফুলের তৃতীয় স্তবককে পুংকেশর চক্র বা পুংস্তবক বলে। এর প্রতিটি অংশকে বলে পুংকেশর। প্রতিটি পুংকেশরের দুটি অংশ বর্তমান – পুংদণ্ড ও পরাগধানী। পুংদণ্ডের মাথায় অবস্থিত থলির মতো অংশকে পরাগধানী এবং পরাগধানীর নীচের দণ্ডাকার অংশকে পুংদণ্ড বলে। পরাগধানীর ভিতরে অসংখ্য পরাগরেণু থাকে।
কাজ – পুংস্তবকের পরাগধানী পরাগরেণু উৎপন্ন করে যৌন জননে সাহায্য করে।
গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রীস্তবক –
ফুলের চতুর্থ স্তবককে গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রীস্তবক বলে। এটি একটি বা একাধিক গর্ভপত্র বা গর্ভকেশর নিয়ে গঠিত। প্রতিটি গর্ভপত্রের আবার তিনটি অংশ – ডিম্বাশয় বা গর্ভাশয়, গর্ভদণ্ড এবং গর্ভমুণ্ড। গর্ভপত্রের অপেক্ষাকৃত স্ফীত অংশটি গর্ভাশয়। গর্ভাশয়ের পরবর্তী সরু দন্ডাকার অংশকে গর্ভদণ্ড ও গর্ভদণ্ডের মাথায় অবস্থিত গোলাকার অংশকে গর্ভমুণ্ড বলে।
কাজ –
- স্ত্রীস্তবক ডিম্বাণু উৎপন্ন করে নিষেকে সাহায্য করে।
- ফল ও বীজ উৎপাদন করে।
ফুলকে পরিবর্তিত বিটপ বলা হয় কেন? সহকারী ও অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবকের পার্থক্য লেখো।
ফুল একটি পরিবর্তিত বিটপ –
ফুলকে পরিবর্তিত বিটপ বলার কারণগুলি হল –
- পত্রমুকুলের মতো পুষ্পমুকুলও পাতার কক্ষ থেকে বা কান্ডের শীর্ষ অংশে উৎপন্ন হয়।
- পুষ্পাক্ষের ওপর ফুলের স্তবকগুলির সজ্জারীতি কাণ্ডের ওপরে পত্রবিন্যাসের মতো।
- কান্ডের মতো পুষ্পাক্ষেও পর্ব ও পর্বমধ্য উপস্থিত।
- বৃত্যংশ ও দলাংশ পাতার মতো শিরা উপশিরাযুক্ত হয়।
সহকারী ও অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবকের পার্থক্য –
বিষয় | সহকারী স্তবক | অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবক |
জননকোশ উৎপন্ন করার ক্ষমতা | জননকোশ উৎপন্ন করে না। | পরাগরেণু এবং স্ত্রী-জননকোশ বা ডিম্বাণু উৎপন্ন করে। |
কাজ | পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবককে সুরক্ষা দেয় ও পরাগমিলনে সাহায্য করে। | জননে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। |
উদাহরণ | বৃতি ও দলমণ্ডল। | পুংকেশর চক্র ও গর্ভকেশর চক্র। |
স্বপরাগযোগ কাকে বলে? উদাহরণসহ লেখো। স্বপরাগযোগের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
স্বপরাগযোগ –
কোনো ফুলের পুংকেশরের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু সেই ফুলের বা সেই গাছের অন্য কোনো ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার পদ্ধতিকে স্বপরাগযোগ বলে। শিম, ধুতরো, মটর ইত্যাদি উদ্ভিদে স্বপরাগযোগ ঘটে।
স্বপরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য –
স্বপরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- এইজাতীয় পরাগযোগ সহবাসী উদ্ভিদে সম্পন্ন হয়।
- এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফুলের পরাগধানী ও গর্ভদণ্ড একই সময়ে পরিণত হয়।
- এইজাতীয় পরাগযোগ একই ফুলেও ঘটে (অটোগ্যামি), আবার একই উদ্ভিদের দুটি ফুলের মধ্যেও সম্পন্ন হতে পারে (গেইটোনোগ্যামি)।
- সাধারণত উভলিঙ্গ ফুলের ক্ষেত্রে স্বপরাগযোগ ঘটে।
- এক্ষেত্রে ফুলের পরাগরেণুর অপচয় অনেক কম হয়।
- এইজাতীয় পরাগযোগের ফলে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ পাওয়া যায় না।
- অপত্য উদ্ভিদের গুণগত মান একই থাকে অথবা কমতে থাকে।
- এই প্রকার পরাগযোগে বাহকের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক নয়।

ইতর পরাগযোগ কাকে বলে? উদাহরণসহ লেখো। ইতর পরাগযোগের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
ইতর পরাগযোগ –
কোনো একটি ফুলের পুংকেশরের পরাগধানী থেকে উৎপন্ন পরাগরেণু একই প্রজাতিভুক্ত বা অন্য প্রজাতিভুক্ত অপর একটি গাছে উৎপন্ন ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার পদ্ধতিকে ইতর বা বিপরীত পরাগযোগ বলে। যেমন – তাল, পেঁপে, আম, পটল, কুমড়ো ইত্যাদি উদ্ভিদে ইতর পরাগযোগ ঘটে।

ইতর পরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য –
ইতর পরাগযোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যথা –
- একলিঙ্গ ফুলের ক্ষেত্রেই কেবল ইতর পরাগযোগ হয়।
- এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফুলগুলির বিষম পরিণতি দেখা যায়। অর্থাৎ, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক একসাথে পরিণত না হয়ে ভিন্ন সময়ে পরিণত হয়।
- ফুলের গঠনগত প্রতিবন্ধকতার বা বাধার জন্য অনেকক্ষেত্রে স্বপরাগযোগ সম্ভব হয় না।
- এক ফুল থেকে অন্য ফুলে পরাগরেণুর স্থানান্তরণের জন্য বিভিন্ন বাহকের (বায়ু, জল, পতঙ্গ) প্রয়োজন হয়।
- একই প্রজাতির বা অন্য প্রজাতির দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদের দুটি ভিন্ন ফুলের মধ্যে পরাগযোগ সম্পন্ন হয় বলে অপত্য উদ্ভিদে প্রকরণের সৃষ্টি হয়।
স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
অংশ প্রশ্ন, স্বপরাগযোগের সুবিধা ও অসুবিধা লেখো।
স্বপরাগযোগের সুবিধা ও অসুবিধা –
সুবিধা –
- এক্ষেত্রে বাহকের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় পরাগযোগের নিশ্চয়তা বেশি। এক্ষেত্রে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়।
- স্বপরাগযোগে উৎপন্ন বীজ তথা অপত্য উদ্ভিদ একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ায় প্রজাতির বিশুদ্ধতা বজায় থাকে।
অসুবিধা –
- নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ উৎপন্ন হতে পারে না। অর্থাৎ, প্রকরণ ঘটে না ফলে অবলুপ্তির সম্ভবনা থাকে।
- স্বপরাগযোগে উৎপন্ন বীজ নিম্নমানের হয় ও অঙ্কুরণের হার কম হয়।
ইতর পরাগযোগ সুবিধা ও অসুবিধা –
সুবিধা –
- এক্ষেত্রে উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, প্রকরণ ঘটে যা প্রতিকূল পরিবেশে উদ্ভিদকে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে।
- ইতর পরাগযোগে উৎপন্ন বীজ তথা অপত্য উদ্ভিদ উন্নতমানের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় ও এদের বীজের অঙ্কুরণের হার বেশি হয়।
অসুবিধা –
- ইতর পরাগযোগ বাহক নির্ভর হওয়ায় এদের ক্ষেত্রে পরাগযোগের নিশ্চয়তা কম।
- ইতর পরাগযোগের ক্ষেত্রে পরাগরেণুর অপচয়ের মাত্রা অনেক বেশি হয়।
বিভিন্ন প্রকার বাহকের মাধ্যমে ইতর পরাগযোগ উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যা দাও।
অংশ প্রশ্ন, কোন্ কোন্ বাহক নীচের উদ্ভিদগুলিতে পরাগযোগ সম্পন্ন করে? (ক) ধান, (খ) পাতাঝাঁঝি, (গ) শিমুল, (ঘ) আম
ইতর পরাগযোগের বিভিন্ন বাহক এবং উদাহরণ –
বাহক | ব্যাখ্যা | উদাহরণ |
বায়ুর মাধ্যমে | বায়ুর মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে বায়ু দ্বারা পরাগযোগ বা অ্যানিমোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ বায়ুর মাধ্যমে ঘটে, তাদের বায়ুপরাগী ফুল বা অ্যানিমোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি বর্ণহীন, গন্ধহীন, অনুজ্জ্বল ও ক্ষুদ্র হয়। ফুলে মকরন্দ থাকে না। | ধান, ঘাস, গম, বাঁশ, নারকেল |
জলের মাধ্যমে | জলের মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে জলের দ্বারা পরাগযোগ বা হাইড্রোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ জলের মাধ্যমে ঘটে, তাদের জলপরাগী ফুল বা হাইড্রোফিলাস ফুল বলে। ফুলুগুলি বর্ণহীন, গন্ধহীন, অনুজ্জ্বল ও ক্ষুদ্র হয়। পরাগযোগ জলের ওপরে ঘটলে পরাগরেণু হালকা এবং মোম আবৃত হয়। | পাতাঝাঁঝি, পাতা শ্যাওলা |
পতঙ্গের মাধ্যমে | পতঙ্গের মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে পতঙ্গের দ্বারা পরাগযোগ বা এন্টোমোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ পতঙ্গের মাধ্যমে ঘটে, তাদের পতঙ্গপরাগী ফুল বা এন্টোমোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি উজ্জ্বল বর্ণের, মকরন্দযুক্ত ও সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত হয়। | আম, বেল, জুঁই, জবা, পদ্ম ও গোলাপ |
পাখির মাধ্যমে | পাখির মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে পাখির দ্বারা পরাগযোগ বা অরনিথোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ পাখির মাধ্যমে ঘটে, তাদের পক্ষীপরাগী ফুল বা অরনিথোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি আকারে বড়ো, উজ্জ্বল এবং মকরন্দযুক্ত হয়। অনেকক্ষেত্রে পরাগধানীগুলি পাখির খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয়। তার ফলে পরাগযোগ ঘটে থাকে। | শিমুল, পলাশ, পেয়ারা |
ডিম্বক বলতে তুমি কী বোঝ? লম্বচ্ছেদে ডিম্বকের চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন করে তার গঠন বর্ণনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, লম্বচ্ছেদে ডিম্বকের নানা অংশগুলির চিহ্নিত চিত্র আঁকো।
ডিম্বক –
ত্বকবেষ্টিত গর্ভকেশরের যে অংশ থেকে বীজ গঠিত হয় ও যা স্ত্রীরেণুকে ধারণ করে, তাকে ডিম্বক বলে।
ডিম্বকের গঠন –
ডিম্বকের বিভিন্ন অংশগুলি নীচে উল্লেখ করা হল।
- ডিম্বকবৃত্ত – পরিণত ডিম্বকের একটি ছোটো বৃত্ত থাকে, যা ডিম্বককে অমরার সাথে সংযুক্ত রাখে। একে ডিম্বকবৃন্ত বলে।
- ডিম্বকমূল – ডিম্বকের যে অংশ থেকে ডিম্বকত্বক উৎপন্ন হয়, তাকে ডিম্বকমূল বলে।
- ডিম্বকনাভি – ডিম্বকবৃন্তের সঙ্গে ডিম্বকমূলের সংযোগস্থলকে ডিম্বকনাভি বলে।
- ডিম্বকত্বক – ডিম্বকের আবরণীকে ডিম্বকত্বক বলে।
- ভ্রূণপোষক কলা – ডিম্বকত্বকের নীচে অবস্থিত যে কলা ডিম্বকের ভ্রূণস্থলীকে ঘিরে রাখে, সেই কলাগুচ্ছকে ভ্রূণপোষক কলা বলে।
- ডিম্বকরন্ধ্র – ডিম্বকত্বক ভ্রূণপোষক কলাকে সম্পূর্ণভাবে আবৃত রাখে না। এই অনাবৃত অংশকে ডিম্বকরন্ধ্র বলে।
- ভ্রূণস্থলী – ভ্রূণপোষক কলার ভিতরে একটি বৃহৎ থলির মতো কোশ থাকে, যাকে ভ্রুণস্থলী বা ভ্রূণাধার বলে। এটি ডিম্বকের প্রধান কোশ। প্রতিটি ভ্রূণস্থলীতে 8টি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস বিশেষভাবে বিন্যস্ত থাকে, যার মধ্যে 3টি ডিম্বকরন্ধ্রের দিকে অবস্থিত। এদের একত্রে গর্ভযন্ত্র বলে। এই তিনটির মধ্যে একটিকে ডিম্বাণু ও বাকি দুটিকে সহকারী কোশ বলে। ভ্রূণস্থলীর মাঝে দুটি নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) ক্রোমোজোম-বিশিষ্ট নির্ণীত নিউক্লিয়াস গঠন করে। ডিম্বকরন্ধ্রের বিপরীত দিকে বর্তমান 3টি নিউক্লিয়াসকে একত্রে প্রতিপাদ কোশসমষ্টি বলে।

চিত্রসহ একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক এবং নতুন উদ্ভিদ গঠন পদ্ধতি বর্ণনা করো।
অনুরূপ প্রশ্ন, সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জননে নিম্নলিখিত ঘটনা দুটি বিবৃত করো – নিষেক, ভ্রুণ সৃষ্টি ও নতুন উদ্ভিদ গঠন।
অংশ প্রশ্ন, স্বপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জননের নিম্নলিখিত পর্যায়ের ঘটনাগুলি বিবৃত করো। (1) জনন কোশ বা গ্যামেট উৎপাদন, (2) নিষেক, (3) ভ্রুণসৃষ্টি ও নতুন উদ্ভিদ উৎপাদন।
অংশ প্রশ্ন, সপুষ্পক উদ্ভিদের দ্বিনিষেক প্রক্রিয়া চিহ্নিত চিত্রসহ বর্ণনা করো।
অংশ প্রশ্ন, সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক বা দ্বিনিষেক পদ্ধতির চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন করো।
সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক ও নতুন উদ্ভিদ গঠন –
সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া উন্নতমানের হয়। সপুষ্পক গুপ্তবীজী উদ্ভিদের নিষেক পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপগুলি নীচে বিশদে বর্ণনা করা হল।
পরাগরেণু সৃষ্টি –
ফুলের পুংকেশরের পরাগধানীর মধ্যে অবস্থিত পরাগরেণু মাতৃকোশ ডিপ্লয়েড (2n) প্রকৃতির হয়। এই পরাগরেণু মাতৃকোশের মিয়োসিস বিভাজনের ফলে অসংখ্য পরাগরেণু উৎপন্ন হয়, যেগুলি হ্যাপ্লয়েড (n) প্রকৃতির হয়ে থাকে। পরাগরেণুর হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে দুটি নিউক্লিয়াস গঠন করে। এগুলি হল নালিকা নিউক্লিয়াস এবং জেনেরেটিভ বা জনন নিউক্লিয়াস।
ডিম্বাণু বা স্ত্রীগ্যামেট সৃষ্টি –
উদ্ভিদের ফুলের ডিম্বাশয়ের মধ্যে এক বা একাধিক ডিম্বক বর্তমান। এই ডিম্বকের ভ্রূণস্থলীর মধ্যে পরিস্ফুটনের মাধ্যমে স্ত্রীগ্যামেট উৎপন্ন হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ভ্রূণস্থলীর মধ্যে একটি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস অবস্থান করে। এই নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দ্বারা বারবার বিভাজিত হয় এবং 8টি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস গঠন করে। এদের মধ্যে 3টি নিউক্লিয়াস ভ্রূণস্থলীর এক মেরুতে একত্রে অবস্থান করে। এদের প্রতিপাদ কোশ (antipodal cells) বলে। অপর 3টি নিউক্লিয়াস ভ্রূণস্থলীর বিপরীত মেরুতে আসে। এদের মধ্যে দুটি নিউক্লিয়াস সহকারী কোশ (synergids) রূপে এবং একটি নিউক্লিয়াস ডিম্বাণু (egg) বা স্ত্রীগ্যামেট রূপে অবস্থান করে। অবশিষ্ট যে 2টি নিউক্লিয়াস থাকে, তারা পরস্পর মিলিত হয়ে একটি নির্ণীত নিউক্লিয়াস (definitive nucleus, 2n) গঠন করে, যা ভ্রূণস্থলীর কেন্দ্রে অবস্থান করে।
পরাগযোগ –
এই পর্যায়ে স্বপরাগযোগ বা বাহক দ্বারা ইতর পরাগযোগের মাধ্যমে পুংকেশরের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু, গর্ভকেশরের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয়। পরাগরেণু ফুলের গর্ভমুণ্ডে আবদ্ধ হওয়ার পর তা থেকে একটি পরাগনালী সৃষ্টি হয়।
নিষেক ও জাইগোট গঠন –
জেনেরেটিভ নিউক্লিয়াসটির বিভাজন ও পরিস্ফুরণ ঘটে এবং 2টি হ্যাপ্লয়েড (n) পুংগ্যামেট উৎপন্ন হয়। নালিকা নিউক্লিয়াসটি এবং পুংগ্যামেট দুটি পরাগনালীতে প্রবেশ করে। নালিকা নিউক্লিয়াসটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় ও পুংগ্যামেট দুটি পরাগনালীর অগ্রভাগে অবস্থান করে। পরাগনালী ক্রমশ দীর্ঘ হয় এবং তার অগ্রপ্রান্ত ডিম্বকরন্ধ্র বা ডিম্বকমূল বা ডিম্বকত্বক ভেদ করে ডিম্বকে প্রবেশ করে। পরাগনালী ভ্রুণস্থলীর প্রাচীর ভেদ করে ভ্রুণস্থলীতে প্রবেশ করে। ক্রমে পরাগনালীর অগ্রপ্রান্ত বিদীর্ণ হয়ে 2টি পুংগ্যামেট ভ্রুণস্থলীতে মুক্ত হয়। অবশেষে একটি পুংগ্যামেট ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেক ঘটায়, যার ফলস্বরূপ ডিপ্লয়েড (2n) ভ্রূণাণু বা জাইগোট গঠিত হয়। অপর পুংগ্যামেটটি (n) নির্ণীত নিউক্লিয়াসকে (2n) নিষিক্ত করে সস্য নিউক্লিয়াস (3n) তৈরি করে। এই ঘটনাকেই দ্বিনিষেক বলা হয়।
ভ্রূণ গঠন –
নিষিক্ত এককোশী ভ্রুণাণু বা জাইগোটটি বারবার বিভাজিত হয়ে বহুকোশী ভ্রুণ গঠন করে।
ফল ও বীজ গঠন –
নিষেকের পরে ভ্রুণসহ ডিম্বক বীজে ও বীজসহ সমগ্র ডিম্বাশয় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে ফলে রূপান্তরিত হয়।
বীজের অঙ্কুরোদগম এবং নতুন উদ্ভিদ গঠন –
বীজের মধ্যে ভবিষ্যতের গাছ বা ভ্রুণ অবস্থান করে। অনুকূল পরিবেশ, অর্থাৎ যথাযথ আলো, উষ্ণতা, আর্দ্রতা, অক্সিজেন ও অভ্যন্তরীণ শর্তের উপস্থিতিতে বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে। এর ফলে বীজ থেকে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। ভ্রূণমুকুল নামক অংশ থেকে অপত্য উদ্ভিদের বিটপ এবং ভ্রূণমূল থেকে মূলতন্ত্র গঠিত হয়।

নিষেকের পরে ফুলের নানা অংশগুলির পরিবর্তন লিপিবদ্ধ করো।
নিষেকের পরে ফুলের নানা অংশের পরিবর্তনগুলি নীচে সারণি আকারে দেওয়া হল।
নিষেকের পূর্বে ফুলের অংশ | নিষেকের পরে পরিবর্তিত গঠন |
বৃতি | সাধারণত ঝরে যায়। ব্যতিক্রম – স্থায়ী বৃতি (উদাহরণ – বেগুন) |
পাপড়ি | ফুল থেকে ঝরে যায় |
পুংদণ্ড | ফুল থেকে ঝরে যায় |
গর্ভদণ্ড | ফুল থেকে ঝরে যায় |
ডিম্বাশয় | ফল |
ডিম্বক | বীজ |
সহকারী কোশ, প্রতিপাদ কোশ সমষ্টি | বিনষ্ট হয় |
ডিম্বাণু | প্রথমে জাইগোট ও পরে ভ্রূণ তৈরি হয় |
নির্ণীত নিউক্লিয়াস | সস্য |
পুংস্তবক বা অ্যান্ড্রোসিয়াম ও স্ত্রীস্তবক বা গাইনোসিয়াম -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
পুংস্তবক বা অ্যান্ড্রোসিয়াম ও স্ত্রীস্তবক বা গাইনোসিয়াম -এর মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | পুংস্তবক বা অ্যান্ড্রোসিয়াম | স্ত্রীস্তবক বা গাইনোসিয়াম |
অবস্থান | বাইরে থেকে ফুলের তৃতীয় স্তবক। | ফুলের কেন্দ্রীয়, চতুর্থ স্তবক। |
গঠনগত একক | এক বা একাধিক পুংকেশর নিয়ে গঠিত। | এক বা একাধিক গর্ভকেশর নিয়ে গঠিত। |
গঠনগত অংশ | পুংদণ্ড ও পুংকেশর নিয়ে প্রতিটি পুংকেশর গঠিত। | গর্ভমুণ্ড, গর্ভদণ্ড ও গর্ভাশয় দ্বারা প্রতিটি গর্ভকেশর গঠিত। |
কাজ | পরাগরেণু উৎপাদন দ্বারা জননে পুংগ্যামেটের জোগান দেওয়া। | ডিম্বাণু উৎপাদন করা। |
পরিণতি | নিষেকের পর অংশটি বিনষ্ট হয়। | নিষেকের পর ডিম্বক বীজে ও গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয়। |
স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগ – পার্থক্য লেখো।
স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগের পার্থক্য –
বিষয় | স্বপরাগযোগ | ইতর পরাগযোগ |
পরাগযোগের প্রকৃতি | একই ফুলে বা একই উদ্ভিদের দুটি ফুলের মধ্যে পরাগযোগের ঘটনা। | একই বা ভিন্ন প্রজাতির দুটি পৃথক উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে পরাগযোগের ঘটনা। |
উদ্ভিদের প্রকৃতি | অবশ্যই সহবাসী। | ভিন্নবাসী বা সহবাসী। |
বাহকের প্রয়োজনীয়তা | বাহকের প্রয়োজন হয় না। | বাহকের উপস্থিতি আবশ্যক। |
কার্যকারিতা | পরাগরেণুর কম অপচয় হয়। | পরাগরেণুর বেশি অপচয় হয়। |
পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ড পরিণত হওয়ার সময় | ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ড একই সময়ে পরিণত হয়। | ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ড ভিন্ন সময়ে পরিণত হয়। |
প্রকরণ | নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির সম্ভাবনা কম। | নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়, তাই উদ্ভিদের গুণগত মান, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। |
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন