এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়া প্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

জীবজগতের প্রতিটি জীবের দেহে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কোষ থাকে। এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কোষগুলির মধ্যে সমন্বয় না থাকলে জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। জীবের এই সমন্বয়ের কাজটি করে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবের দেহে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।

Table of Contents

জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়া প্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র

স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে?

স্নায়ুকোশ বা নিউরোন দিয়ে গঠিত যে তন্ত্রের সাহায্যে প্রাণীদেহ উদ্দীপনা গ্রহণ ও উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিবর্তনের সাপেক্ষে দেহের জৈবিক কার্যাবলির সামঞ্জস্য রক্ষা এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা যায়, তাকে স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভতন্ত্র বলে।

স্নায়ুতন্তু কাকে বলে?

নিউরোনের মায়েলিন আবৃত বা অনাবৃত অ্যাক্সনকে স্নায়ুতন্তু বলে। স্নায়ুগঠনকালে স্নায়ুতন্তুগুলির প্রত্যেকে পৃথকভাবে প্রথমে এন্ডোনিউরিয়াম দ্বারা ও পরে গুচ্ছরূপে পেরিনিউরিয়াম দ্বারা আবৃত হয়। এ ধরনের একাধিক গুচ্ছ পরিশেষে এপিনিউরিয়াম দ্বারা আবৃত হয়ে এক একটি স্নায়ু গঠন করে।

নার্ভ গ্যাংলিয়ন বা স্নায়ুগ্রন্থি কাকে বলে?

স্নায়ুকোশের কোশদেহগুলি মিলিত হয়ে যোগকলা পরিবৃত যে গ্রন্থির সৃষ্টি হয়, তাকে স্নায়ুগ্রন্থি বা নার্ভ গ্যাংলিয়ন বলে। অনেকগুলি কৌশদেহ একত্রিত হওয়ায় এগুলি কিছুটা স্ফীত হয়।

নিউরোগ্নিয়া কী?

স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত উদ্দীপনা প্রেরণে অক্ষম যে কোশগুলি নিউরোনকে ধারণ করে ও নিউরোনের প্রতিরক্ষা এবং মায়েলিন আবরণী গঠন প্রভৃতিতে সাহায্য করে, তাদের নিউরোগ্লিয়া বা গ্লিয়াল কোশ বলে। স্নায়ুতন্ত্রের 90% কোশই নিউরোগ্লিয়া।

স্নায়ুর কাজ কী?

1. অন্তর্বাহী স্নায়ু রিসেপটর বা গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বহন করে এবং
2. বহির্বাহী স্নায়ু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে উদ্দীপনা ইফেকটরে বা কারকে বহন করে।
 স্নায়ুর কাজ কী

প্রান্তসন্নিকর্ষ কী?

দুটি নিউরোনের মধ্যবর্তী ফাঁকযুক্ত যে সংযোগস্থলে একটি নিউরোন থেকে পরবর্তী নিউরোনে উদ্দীপনা বা স্নায়ুস্পন্দন প্রেরিত হয়, তাকে প্রান্তসন্নিকর্ষ বা সাইন্যাপস্ বা স্নায়ুসন্নিধি বলে। সাইন্যাপসের বার্তা প্রেরণকারী নিউরোনটিকে প্রিসাইন্যাপটিক নিউরোন ও বার্তা গ্রহণকারী নিউরোনটিকে পোস্টসাইন্যাপটিক নিউরোন বলে।

অ্যাফারেন্ট বা অন্তর্বাহী নার্ভ কী?

যেসব স্নায়ু বিভিন্ন গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা বহন করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরণ করে, তাদের অন্তর্বাহী স্নায়ু বা সংজ্ঞাবহ স্নায়ু বা অ্যাফারেন্ট নার্ভ বলে। যেমন — অলফ্যাক্টরি, অপটিক, অডিটরি ইত্যাদি স্নায়ু।

ইফারেন্ট বা বহির্বাহী নার্ভ কী?

যেসব স্নায়ু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে পেশি, গ্রন্থি ইত্যাদি কারক অঙ্গে প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা আজ্ঞা বহন করে, তাদের বহির্বাহী বা আজ্ঞাবহ বা চেষ্টায় বা ইফারেন্ট নার্ভ বলে। যেমন — ট্রকলিয়ার এবং হাইপোগ্লসাল নার্ভ।ইফারেন্ট বা বহির্বাহী নার্ভ কী

অন্তর্বাহী স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো এবং উদাহরণ দাও।

বৈশিষ্ট্য
1. অন্তর্বাহী স্নায়ু সেনসরি নিউরোন নিয়ে গঠিত।
2. অন্তর্বাহী স্নায়ু রিসেপটর বা গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা বহন করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে নিয়ে যায়।
উদাহরণ – অপটিক স্নায়ু, অডিটরি স্নায়ু।

মিশ্র স্নায়ু বা মিক্সড্ নার্ভ কাকে বলে?

যেসব স্নায়ু সংজ্ঞাবহ এবং আজ্ঞাবহ দুই প্রকার নিউরোন দিয়ে গঠিত এবং উভয় দিকেই স্নায়ুর উদ্দীপনা বহন করতে পারে, তাদের মিশ্র স্নায়ু বা মিক্সড্ নার্ভ বলে। যেমন — ফেসিয়াল ও ভেগাস স্নায়ু।

মিশ্র স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। এর উদাহরণ দাও।

বৈশিষ্ট্য –
1. অন্তর্বাহী এবং বহির্বাহী উভয় প্রকার স্নায়ুতন্তু দ্বারা গঠিত।
2. এটি গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা বহন করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে নিয়ে যায়, আবার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কারক অঙ্গে স্নায়ুস্পন্দন বহন করে নিয়ে যায়।
উদাহরণ – ভেগাস নার্ভ, ফেসিয়াল নার্ভ।

বহির্বাহী স্নায়ুর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। উদাহরণ দাও।

বৈশিষ্ট্য
1. বহির্বাহী স্নায়ু মোটর নিউরোন নিয়ে গঠিত।
2. বহির্বাহী স্নায়ু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে ইফেকটরে (কারকে) স্নায়ুস্পন্দন বহন করে নিয়ে যায়।
উদাহরণ – ট্রকলিয়ার ও হাইপোগ্লাসাল স্নায়ু।

কারক কাকে বলে?

দেহের যেসব অঙ্গ (যেমন — পেশি, গ্রন্থি ইত্যাদি) উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্দীপিত হয় এবং নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাদের কারক (effector) বলে।


নিউরোট্রান্সমিটার কী?

যেসব রাসায়নিক পদার্থ সাইন্যাপস্-এ বা স্নায়ু পেশি সংযোগস্থলে ক্ষরিত হয়ে স্নায়ুপ্রবাহকে এক নিউরোন থেকে অন্য নিউরোন বা পেশিতে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে, তাদের নিউরোট্রান্সমিটার বলে। যেমন — অ্যাসিটাইল কোলিন,অ্যাড্রেনালিন, ডোপামিন ইত্যাদি। 

নার্ভ ইমপালস্ বা স্নায়ুম্পন্দন কাকে বলে?

স্নায়ুকোশের ঝিল্লির উভয় পার্শ্বে আয়নের ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটিয়ে যে বিশেষ তরঙ্গ এক স্নায়ুকোশ থেকে অন্য স্নায়ুকোশে প্রবাহিত হয়, তাকে নার্ভ ইমপালস্ বা স্নায়ুস্পন্দন বলে। নার্ভ ইমপালস্ বা স্নায়ুম্পন্দন কাকে বলে

নিউরোনকে স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক কেন বলা হয়?

স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ, যেমন — মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড নিউরোন দ্বারা গঠিত হয়, তাই এটি গঠনগত একক। আবার, স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান কাজ, অর্থাৎ উদ্দীপনা প্রেরণ ও বিভিন্ন কাজের সমন্বয়সাধনও নিউরোনের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। তাই এটি কার্যগত একক।

সেরিব্রাল কর্টেক্স কী?

গুরুমস্তিষ্ক বা সেরিব্রামের মেনিনজেস-এর ঠিক নীচে অবস্থিত ধূসর বর্ণের বহিস্তর যা বুদ্ধি, স্মৃতি, ইন্দ্রিয়কার্য নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে সেরিব্রাল কর্টেক্স বলে। এটি গুরুমস্তিষ্কের সব থেকে বাইরে উপস্থিত।

থ্যালামাস কী?

মানবমস্তিষ্কের তৃতীয় ভেন্ট্রিলের দু-পাশে সেরিব্রাম (গুরুমস্তিষ্ক)-এর নীচে এবং মধ্যমস্তিষ্কের ওপরে যে দুটি ধূসর বর্ণের ডিম্বাকার অংশ লক্ষ করা যায়, তাদের থ্যালামাস বলে।

হাইপোথ্যালামাস কী?

মস্তিষ্কের তৃতীয় প্রকোষ্ঠ এবং থ্যালামাসের তলদেশে অবস্থিত অগ্রমস্তিষ্কের যে অংশ ক্ষুধা, তৃয়া, আবেগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে হাইপোথ্যালামাস বলে। এটি থ্যালামাসের নীচে অবস্থিত থাকায়, এই অংশটির এইরূপ নামকরণ হয়েছে।

মধ্যমস্তিষ্ক কী?

অগ্র ও পশ্চাদমস্তিষ্কের সংযোগকারী অংশকে মধ্যমস্তিষ্ক বা মেসেনসেফালন বলে। এটি মস্তিষ্কের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র অঞ্চল। এই অংশটি সিডব্রেন নামেও পরিচিত। এটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত টেকটাম ও সেরিব্রাল পেডাংকূল।

পনস্ বা সেতুমস্তিষ্ক কী?

পশ্চাদমস্তিষ্কের যে অংশটি মধ্যমস্তিষ্কের নীচে চতুর্থ মস্তিষ্ক নিলয়ের অঙ্কদেশে এবং মেডালা অবলংগাটার ওপরে অবস্থিত, তাকে পনস্ বা সেতুমস্তিষ্ক বলে। পনস্ একদিকে মধ্যমস্তিষ্ক এবং অন্যদিকে সুষুম্নাশীর্ষকের মধ্যে সেতুর মতো যোগাযোগ স্থাপন করে বলে একে সেতুমস্তিষ্ক বলে।

সুষুম্নাশীর্ষক বা মেডালা অবলংগাটা কী?

পস-এর নীচে সুষুম্নাকণ্ডের ওপরে অবস্থিত মস্তিষ্কের সর্বশেষ অংশকে সুষুম্নাশীর্ষক বা মেডালা অবলংগাটা বলা হয়। এই অংশটি সুষুম্নাকাণ্ডের শীর্ষে অবস্থিত বলে এই অংশের এইরূপ নামকরণ হয়েছে।

লঘুমস্তিষ্ক কী?

চতুর্থ মস্তিষ্ক নিলয়ের পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত পশ্চাদমস্তিষ্কের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ অংশকে লঘুমস্তিষ্ক বলা হয়। এই অংশটি দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সুষুম্নাকাণ্ড কী?

সুষুম্নাশীর্ষকের পশ্চাদভাগ থেকে শুরু করে প্রথম বা দ্বিতীয় লাম্বার কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত ও CSF পূর্ণ যে ফাঁপা নলাকার স্নায়ুরজ্জু মেরুদণ্ডের দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত থাকে, তাকে সুষুম্নাকাণ্ড বলে। এই অংশটি দেহের প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে।

মেনিনজেস কী?

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ দুটি (মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড) যে তিনস্তর বিশিষ্ট তন্তুময় আবরক দ্বারা আবৃত থাকে, তাকে মেনিনজেস বলে। মেনিনজেস-এর তিনটি স্তর হল — ডুরা মেটার, অ্যারায়েড মেটার এবং পিয়া মেটার।

মেনিনজেস-এর অবস্থান ও কাজ লেখো।

অবস্থান মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডের বাইরের দিকে তন্তুময় পর্দারূপে মেনিনজেস অবস্থিত।
কাজ – 1. মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডকে আঘাত ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
2. মেনিনজেস করোটি এবং মস্তিষ্কের গোলাবদ্বয়ে রক্ত সরবরাহ করে।

মানুষের স্নায়ুতন্ত্র কয়প্রকার ও কী কী?

মানুষের স্নায়ুতন্ত্র প্রধানত তিনপ্রকার। স্নায়ুতন্ত্রের ভাগগুলি হল–কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র

CSE কাকে বলে?

মস্তিষ্কের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে, সাব-অ্যারায়েড স্থানে, সাব- ডুরাল স্থানে এবং সুষুম্নাকাণ্ডের কেন্দ্রীয় নালীর মধ্যে যে স্বচ্ছ, স্বল্প ক্ষারীয় পরিবর্তিত কলারস থাকে, তাকে CSF বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বা মস্তিষ্ক-সুষুম্নারস বলে।

CSF-এর অবস্থান কোথায়?

CSF বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড মস্তিষ্কের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে, মেনিনজেস-এর সাব-অ্যারায়েড স্পেস এবং সুষুম্নাকাণ্ডের কেন্দ্রীয় নালীর ভিতরে অবস্থিত।

CSF-এর কাজ কী?

CSF-এর প্রধান কাজ হল —
1. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত স্নায়ুকোশসমূহকে পুষ্টি উপাদান এবং অক্সিজেন সরবরাহ করা।
2. কুশনের মতো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে যান্ত্রিক আঘাত থেকে রক্ষা করা।

প্রতিবর্ত ক্রিয়া কাকে বলে?

কোনো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার প্রভাবে প্রাণীদেহের তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও অনৈচ্ছিক স্নায়বিক প্রতিক্রিয়াকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মগত এবং কোনো শর্তাধীন নয়, তাদের সহজাত বা জন্মগত বা শর্তবিহীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ – শিশুর জন্মের পর স্তন্যদুগ্ধ পান করা, সুস্বাদু খাদ্যের গন্ধে লালা নিঃসৃত হওয়া ইত্যাদি।
 সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া কাকে বলে

অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মগত নয়, কেবল বারবার অভ্যাসের ফলে বা অভিজ্ঞতার দ্বারা অর্জিত হয় এবং যা শর্তসাপেক্ষ, তাদের অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে?

মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড সহযোগে গঠিত স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী অংশকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা CNS বলে।

প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে?

মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড অর্থাৎ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে সারা দেহে বিন্যস্ত সমস্ত স্নায়ুকে একত্রে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র বা পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম বা PNS বলে।

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে?

যে সকল স্নায়ু দেহের আন্তরযন্ত্র, গ্রন্থি এবং অনৈচ্ছিক পেশিতে বিন্যস্ত থেকে তাদের কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের একত্রে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র বা অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম বা ANS বলে।

করপাস ক্যালোসাম কী?

সেরিব্রাম বা গুরুমস্তিষ্কের ডান এবং বাম গোলার্ধ দুটি একটি অনুপ্রস্থ স্নায়ুতন্তুগুচ্ছ দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে, এই স্নায়ুতন্তুগুচ্ছকেই করপাস ক্যালোসাম বলে।

স্নায়ুকোশ কেন বিভাজিত হতে পারে না?

কোশ বিভাজনের একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় অঙ্গাণু হল সেন্ট্রোজোম। স্নায়ুকোশে সেন্ট্রোজোম থাকলেও তা নিষ্ক্রিয় হয়। এই কারণে স্নায়ুকোশ বা নিউরোন বিভাজিত হতে পারে না।

স্নায়বিক পথ কাকে বলে?

গ্রাহক থেকে স্নায়ুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং সেখান থেকে কারক অঙ্গে যে স্নায়ুসংযোগ গঠিত হয়, তাই হল স্নায়বিক পথ।

প্রাপ্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপাদানগুলি কী কী?

প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রধানত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে সারাদেহে বিন্যস্ত স্নায়ুগুলি নিয়ে গঠিত। মোট 12 জোড়া করোটি স্নায়ু ও 31 জোড়া সুষুম্নাস্নায়ু নিয়ে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত।

সুষুম্নাকাণ্ডের যে-কোনো দুটি কাজ লেখো।

1. সুষুম্নাকাণ্ড বিভিন্ন প্রকার প্রতিবর্ত ক্রিয়ার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
2. এটি দেহের প্রায় সমস্ত অংশের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগসূত্র স্থাপন করে।

সমবেদী স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে?

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত যে অংশ থোরাসিক ও লাম্বার সুষুম্না-খণ্ডক থেকে উৎপন্ন হয় ও দেহের আন্তরযন্ত্রীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাকে সমবেদী বা সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র বলে।

সমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের দুটি কাজ লেখো।

সমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের দুটি কাজ হল —
1. তারারন্ধ্রের প্রসারণ ঘটায়।
2. হৃৎস্পন্দন হার বৃদ্ধি করে।

পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে?

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত যে অংশ করোটি ও সুষুম্নাকাণ্ডের স্যাক্রাল অংশ থেকে উৎপন্ন হয় ও দেহের আন্তরযন্ত্রীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে পরাসমবেদী বা প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র বলে।

পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের দুটি কাজ বলো।

পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের দুটি কাজ হল —
1. তারারন্ধ্রের সংকোচন ঘটায়।
2. হৃৎস্পন্দন হার হ্রাস করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাসমবেদী ও সমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের কাজ বিপরীতমুখী হয়ে থাকে।

সেরিব্রাল কর্টেক্স-এর দুটি কাজ লেখো।

1. সেরিব্রাল কর্টেক্স স্মৃতিশক্তি, বিচারবুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি, চিন্তাশক্তি প্রভৃতি উন্নত মানসিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
2. দর্শন, স্বাদ, ঘ্রাণ, গরম, ঠান্ডা, স্পর্শ, ব্যাথা প্রভৃতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

প্রতিবর্ত পথের অংশগুলি কী কী?

প্রতিবর্ত পথের প্রধানত পাঁচটি অংশ। যথা — গ্রাহক, অন্তর্বাহী স্নায়ু, স্নায়ুকেন্দ্র, বহির্বাহী স্নায়ু এবং কারক অঙ্গ

প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি উদাহরণ দাও।

প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি উদাহরণ হল —
1. দ্রুত চোখের পলক পড়া – তীব্র আলো বা ধূলো-বালি পরলে আমরা তৎক্ষণাৎ চোখ বুজে ফেলি ও চোখের প্রতিরক্ষা অজান্তেই করে থাকি।
2. হাঁচি বাইরের ধুলো-বালি, ধোঁয়া, গ্যাস প্রভৃতির সংস্পর্শে এলে আমরা হাঁচি ও দেহের প্রতিরক্ষা করি।
প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি উদাহরণ দাও ।

মধ্যমস্তিষ্কের দুটি কাজ লেখো।

মধ্যমস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ হল —
1. অগ্রমস্তিষ্ক ও পশ্চাদমস্তিষ্কের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা।
2. এটি দেহের ভারসাম্য রক্ষায় এবং পেশিটান নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পনস্-এর দুটি কাজ লেখো।

1. পনস্ লালাক্ষরণ, মূত্রত্যাগ, শ্বাসকার্য, চোয়াল ও অক্ষিগোলকের বিচলন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
2. এটি গুরুমস্তিষ্ক ও লঘুমস্তিষ্কের মধ্যে কার্যগত সমন্বয়সাধন করে।

থ্যালামাসের দুটি কাজ লেখো।

1. থ্যালামাস তাপ, চাপ, স্পর্শ, যন্ত্রণা, টান, ঠান্ডা-গরম এবং তীব্র বেদনা প্রভৃতি অনুভূতির পুনঃসম্প্রচার স্থান বা রিলে কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
2. নিদ্রা ও জাগরণ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

হাইপোথ্যালামাস-এর দুটি কাজ লেখো।

1. হাইপোথ্যালামাস খাদ্যগ্রহণ, খিদে, তৃয়া, নিদ্রা, মানসিক উত্তেজনা, সচেতনতা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।
2. এটি স্বংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের উচ্চতম কেন্দ্র রূপেও কাজ করে।

লঘুমস্তিষ্কের দুটি কাজ লেখো।

লঘুমস্তিষ্কের কাজগুলি হল —
1. এই অংশটি দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
2. এটি দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ঐচ্ছিক সঞ্চালনে সহায়তা করে।

মস্তিষ্ক কী?

সুষুম্নাকাণ্ডের অগ্রভাগে অবস্থিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সর্বাপেক্ষা স্ফীত যে অংশটি করোটির মধ্যে সুরক্ষিত থাকে এবং প্রাণীর বিচারবুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি, স্মৃতিশক্তি প্রভৃতি স্নায়বিক আবেগসহ দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে মস্তিষ্ক বলে।

সংজ্ঞাবহ বা অন্তর্বাহী নিউরোন কাকে বলে?

যে নিউরোন গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা বা স্নায়ুস্পন্দন বহন করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে অর্থাৎ মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ডে প্রেরণ করে, তাকে সংজ্ঞাবহ বা অন্তর্বাহী নিউরোন বলে।

চেষ্টীয় নিউরোন বা বহির্বাহী নিউরোন কাকে বলে? 

যে নিউরোন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড থেকে স্নায়ু উদ্দীপনা বা স্নায়ুস্পন্দন পেশি ও গ্রন্থি, অর্থাৎ কারক অংশে প্রেরণ করে, তাকে চেষ্টীয় নিউরোন বা বহির্বাহী নিউরোন বলে।

অন্তর্বর্তী নিউরোন বা রিলে নিউরোন বা সংযোগকারী নিউরোন কাকে বলে?

যে বিশেষ প্রকার নিউরোন মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডে অবস্থিত থেকে সাধারণত সংজ্ঞাবহ ও চেষ্টীয় নিউরোনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে, তাকে অন্তর্বর্তী নিউরোন বা রিলে নিউরোন বা
সংযোগকারী নিউরোন বলে।

প্রান্তসন্নিকর্ষ বিলম্ব কী?

সাইন্যাপস্ অংশে একটি নিউরোন থেকে পরবর্তী নিউরোনে স্নায়ু উদ্দীপনা প্রবাহিত হতে যে সময় প্রয়োজন তাকে প্রান্তসন্নিকর্ষ বিলম্ব বা সাইন্যাপটিক ডিলে বলে।

সহজাত প্রতিবর্ত ক্লিয়ার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি বৈশিষ্ট্য হল
1. এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া শর্ত-নিরপেক্ষ এবং এর জন্য কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না।
2. এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মগতভাবে বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত।

অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি বৈশিষ্ট্য হল —
1. এইজাতীয় প্রতিবর্ত ক্রিয়া অভ্যাস, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
2. চর্চার অভাবে এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া পরিবর্তিত হয় বা লোপ পায়।

চক্ষুর লেন্স অংশের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ও কাজ লেখো।

বিবরণ চোখের লেন্সটি আইরিসের পিছনে অবস্থিত, স্থিতিস্থাপক ও দ্বি-উত্তল। এটি সাপেনসরি লিগামেন্টের সাহায্যে চোখের পিউপিলের পিছনে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে।
কাজ – চোখের লেন্স আলোর প্রতিসরণ ঘটিয়ে রেটিনাতে প্রতিবিম্ব গঠন করতে সাহায্য করে।

চক্ষুর স্ক্লেরা অংশের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ও কাজ লেখো।

বিবরণ – অক্ষিগোলকের বাইরের তন্তুময় আবরণটিকে ফাইব্রাস কোট বলে। এর পশ্চাদভাগের 5/6 অংশকে শ্বেতমণ্ডল বা স্ক্লেরা বলে। এই স্তরটি সাদা বর্ণের কোলাজেন তন্তু দ্বারা গঠিত।
কাজ – এটি অক্ষিগোলককে নির্দিষ্ট আকৃতি দান করে এবং চোখের অন্যান্য স্তরকে রক্ষা করে।

পীতবিন্দু কাকে বলে? এর কাজ উল্লেখ করো।

চোখে পিউপিল বা তারারন্ধ্রের বিপরীত দিকে রেটিনার ওপরে অবস্থিত যে বিন্দুতে বস্তুর প্রতিবিম্ব সর্বাপেক্ষা সুস্পষ্টভাবে গঠিত হয়, তাকে পীতবিন্দু বা ম্যাকুলা লুটিয়া বলে।

ফোডিয়া সেন্ট্রালিস কী?

রেটিনাতে পীতবিন্দুর কেন্দ্রে যে সামান্য অবতল স্থানে কেবলমাত্র কোন কোশ থাকে, সেই স্থানকে ফোভিয়া সেন্ট্রালিস বলে।

রেটিনা কোথায় অবস্থিত এবং এর কাজ কী?

অবস্থান – রেটিনা অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থি
কাজ – রেটিনা বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করে এবং পরি প্রতিবিম্বকে স্নায়ু উদ্দীপনায় পরিবর্তিত করে অপটিক স্নায়ুতে প্রেরণ করে।

রেটিনায় কী কী গ্রাহক কোশ থাকে? এদের কাজ। উল্লেখ করো।

রেটিনায় উপস্থিত গ্রাহক কোণ – রোটনায় গ্রাহক কোশরূপে রড কোশ ও কোন কোশ থাকে।
কাজ – রড কোশ মৃদু আলো শোষণ করে এবং কোন উৎপাদন করে।
 রেটিনায় কী কী গ্রাহক কোশ থাকে  এদের কাজ।

চোখের প্রতিসারক মাধ্যমগুলির নাম লেখো।

চোখে প্রধানত চারটি প্রতিসারক মাধ্যম থাকে। এগুলি হল কর্নিয়া, অ্যাকোয়াস হিউমর, লেন্স ও ভিট্রিয়াস হিউমর।

অ্যাকোয়াস হিউমর কাকে বলে? এর কাজ কী?

অ্যাকুয়াস হিউমর – লেন্স এবং কর্নিয়ার মাঝখানে অবস্থিত গহ্বরটি যে জলীয় পদার্থ দ্বারা পূর্ণ থাকে, তাকে অ্যাকোয়াস হিউমর বলে।
কাজ এটি আলোর প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং চোখের বিভিন্ন অংশের পরিপোষকরূপে কাজ করে।

ভিট্রিয়াস হিউমর কাকে বলে? এর কাজ কী?

ভিট্রিয়াস হিউমর – লেন্সের ঠিক পশ্চাৎ অংশে অবস্থিত গহ্বরটি যে স্বচ্ছ, সান্দ্র পদার্থ দ্বারা পূর্ণ থাকে তাকে ভিট্রিয়াস হিউমর বলে।
কাজ – এটি আলোর প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এবং অক্ষিগোলকের আকৃতি ও চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

চোখ কী? চোখের প্রধান অংশগুলি কী কী?

চোখ – যে জ্ঞানেন্দ্রিয় আলোক উদ্দীপনা গ্রহণ ও দর্শনে সাহায্য করে, তাকে চোখ বলে।
চোখের বিভিন্ন অংশ চোখের প্রধান অংশগুলি হল — অক্ষিগোলক, রক্ষণমূলক অংশ ও অক্ষিপেশি।

চক্ষুর কর্নিয়া অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও এবং কাজ লেখো।

বিবরণ – কর্নিয়া হল অক্ষিগোলকের সম্মুখভাগে বিন্যস্ত ও তন্তুময় বহিঃস্তরের 1/6অংশ। এটি একটি উত্তল স্বচ্ছ প্রতিসারক স্তর। 
কাজ কর্নিয়া অক্ষিগোলকে আলো প্রবেশের প্রথম প্রতিসারক মাধ্যমরূপে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে এটি আলোকরশ্মিকে প্রতিসৃত করে লেন্সে কেন্দ্রীভূত করে।

অশ্রুগ্রন্থির অবস্থান উল্লেখ করো।

প্রতিটি চোখের ওপরের দিকে এবং ঊর্ধ্ব নেত্রপল্লবের নীচে অশ্রুগ্রন্থি অবস্থিত। অশ্রুগ্রন্থি থেকে বেরিয়ে আসা সূক্ষ্ম নালী দিয়ে অক্ষিগোলকের ওপর অশ্রু ছড়িয়ে পড়ে।অশ্রুগ্রন্থির অবস্থান উল্লেখ করো।

চক্ষুর রক্ষণমূলক অংশগুলি কী কী? এদের মধ্যে কোটি অক্ষিগোলকের সাথে যুক্ত?

চক্ষুর রক্ষণূলক অংশগুলি হল কনজাংটিভা বা নেত্রবত্মকলা, অক্ষিপল্লব ও অশ্রুগ্রন্থি।
নেত্রবত্মকলা অক্ষিগোলকের সাথে যুক্ত থাকে।

অশ্রুর কাজগুলি লেখো।

1. অক্ষিগোলক সিক্ত রাখা এবং তার চলন স্বাভাবিক রাখা।
2. অক্ষিগোলকের উন্মুক্ত অংশকে ধুলোবালি থেকে মুক্ত রাখা।
3. লাইসোজাইম উৎসেচক দ্বারা জীবাণু নাশ করা

চক্ষু-সংক্রান্ত কয়েকটি রুটির নাম লেখো।

চক্ষু-সংক্রান্ত কয়েকটি ত্রুটি হল — মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া, ক্যাটার‍্যাক্ট, প্রেসবায়োপিয়া ইত্যাদি।

প্রেসবায়োপিয়া কাকে বলে?

বয়সজনিত কারণে চোখের উপযোজন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় যে রোগে নিকটের দৃষ্টি ব্যাহত হয়, তাকে প্রেসবায়োপিয়া বলা হয়। সাধারণত 40-45 বছর বয়সে এই ত্রুটি ধরা পড়ে।

ছানি (cataract) কী?

অনেক সময় মানুষের চোখের লেন্সের ওপর অস্বচ্ছ ঘোলাটে পর্দা সৃষ্টি হলে মানুষের দৃষ্টিকে ব্যাহত করে, সেই ঘোলাটে পর্দাকে ছানি বলে। সাধারণত বেশি বয়সে চোখে ছানি দেখা যায়।

একনেত্র দৃষ্টি কাকে বলে? কোন্ কোন্ প্রাণীর দৃষ্টি এই প্রকারের হয়?

একনেত্র দৃষ্টি – একই সঙ্গে দুটি চোখে দুটি পৃথক বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হলে, অর্থাৎ দুটি চোখে দুটি আলাদা বস্তুকে দেখা গেলে, সেই ধরনের দৃষ্টিকে একনেত্র দৃষ্টি বলে।
উদাহরণ ব্যাং, মাছ, গোরু প্রভৃতি প্রাণীর দৃষ্টি।

দ্বিনেত্র দৃষ্টি কাকে বলে? কোন্ কোন্ প্রাণীর দৃষ্টি এই প্রকার?

দ্বিনেত্র দৃষ্টি – একই সঙ্গে দুটি চোখে একই বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হলে, অর্থাৎ দুটি চোখের সাহায্যে একই বস্তুকে সুস্পষ্টভাবে দেখা গেলে, সেই ধরনের দৃষ্টিকে দ্বিনেত্র দৃষ্টি বলে।
উদাহরণ মানুষ, বানর, বাঘ, প্যাচা প্রভৃতি প্রাণীর দৃষ্টি হল দ্বিনেত্র দৃষ্টির উদাহরণ।
দ্বিনেত্র দৃষ্টি কাকে বলে  কোন্ কোন্ প্রাণীর দৃষ্টি এই প্রকার

মায়োপিয়া কী?

চোখের যে ত্রুটির কারণে নিকটের দৃষ্টি ঠিক থাকলেও দূরের দৃষ্টি ব্যাহত হয়, তাকে মায়োপিয়া বলে। এক্ষেত্রে, অক্ষিগোলকের আকার বড় হওয়ায় বা লেন্সের ত্রুটির জন্য দূরবর্তী বস্তু থেকে আগত আলোকরশ্মি রেটিনার সামনে প্রতিবিম্ব গঠন করে। ফলে দূরদৃষ্টি অস্পষ্ট হয়।

হাইপারমেট্রোপিয়া কাকে বলে?

চোখের যে ত্রুটির জন্য দূরের দৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও কাজের দৃষ্টি ব্যাহত হয়, তাকে হাইপারমেট্রোপিয়া বলে। এক্ষেত্রে অক্ষিগোলকের আকার স্বাভাবিকের তুলনায় ছোটো হওয়ায় বা লেন্সের ত্রুটির জন্য রেটিনার পশ্চাতে প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।

উপযোজন কাকে বলে?

যে প্রক্রিয়ায় স্থান পরিবর্তন না করে সিলিয়ারি পেশি ও সাসপেন্সারি লিগামেন্ট-এর সাহায্যে লেন্সের বক্রতার পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন দূরত্বের বস্তুকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তাকে উপযোজন (accomodation) বলা হয়।

অণুগ্রন্থির ক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেলে কী ঘটবে?

অশ্রুগ্রন্থি থেকে অশ্রু ক্ষরিত হয়। চোখকে আর্দ্র রাখা অশ্রুর প্রধান কাজ ৷ অক্ষিগোলকের উপরিভাগে ধুলোবালি পড়লে অশ্রু সঙ্গে সঙ্গে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়। এ ছাড়াও অশ্রু জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে। অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণ হঠাৎ বন্ধ হলে উপরিলিখিত কাজগুলি বন্ধ হয়ে যাবে।

কোরয়েড বা কৃষ্ণমণ্ডল কী? এর কাজ কী? 

কৃষ্ণমণ্ডল – অক্ষিগোলকের তিনস্তরবিশিষ্ট প্রাচীরে মধ্যভাগের মেলানিন সমৃদ্ধ স্তরটি হল কোরয়েড বা কৃয়মণ্ডল
কাজ – কোরয়েডের কাজ হল চোখের আবরণী স্তরগুলির পুষ্টি জোগানো এবং অক্ষিগোলকের ভিতরে আলোর প্রতিফলনে বাধা দেওয়া ও অবাঞ্ছিত আলোকে শোষণ করা।

অন্ধবিন্দু বা ব্লাইন্ড স্পট কাকে বলে?

রেটিনার যে স্থানে সমস্ত নার্ভগুলি গুচ্ছাকারে অপটিক স্নায়ুরূপে নির্গত হয়, সেইস্থানে কোনো আলোক-সুবেদী কোশ না থাকায় প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না। এই স্থানটিকে অন্ধবিন্দু (blind/spot) বলা হয়। এর অপর নাম অপটিক ডিস্ক

জ্ঞানেন্দ্রিয় কাকে বলে?

বিশেষ ধরনের কিছু গ্রাহক অঙ্গ পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরণ করে, এদের জ্ঞানেন্দ্রিয় বলা হয়। যেমন — চোখ, কান ইত্যাদি। জ্ঞানেন্দ্রিয় কাকে বলে

অক্ষিপেশি বা চকুপেশি কাকে?

বিভিন্ন অনৈচ্ছিক পেশি দ্বারা অক্ষিগোলক অক্ষিকোটরের প্রাচীরের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাদের অক্ষিপেশি বা চক্ষুপেশি বলে। যেমন — রেকটাস পেশি।

চোখের কাছের বস্তু দেখার উপযোজন কীভাবে হয়?

কাছের বস্তু দেখার ক্ষেত্রে সিলিয়ারি পেশি সংকুচিত হয় ফলে লেন্সের বক্রতা বাড়ে ও লেন্স পুরু হয়। এর ফলস্বরুপ লেক্ষে ফোকাস দৈর্ঘ্য হ্রাস পায় ও রেটিনাতে প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।

সমন্বয় বা কোঅরডিনেশন বলতে কী বোঝ?

জীবদেহের নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও বিভিন্ন তন্ত্রের পারস্পরিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশের সমতাবিধানকে সমন্বয় বা কোঅরডিনেশন বলে। প্রাণীদের ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হরমোন সমন্বয় ক্রিয়া বা কোঅরডিনেশনের কাজ করে।

গ্রাহক বা রিসেপটর কাকে বলে?

স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত যেসব কোশ বা অঙ্গসমূহ বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীন উদ্দীপক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উদ্দীপনা গ্রহণ করে, তাদের গ্রাহক বলে।

বহুকোশী উন্নত প্রাণীদের স্নায়ুতন্ত্র না থাকলে কী ঘটত?

বহুকোশী জীবের দেহ বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্র নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন অঙ্গের ও তন্ত্রের মধ্যে কার্যগত সমন্বয়সাধন নিয়ন্ত্রণ করে স্নায়ুতন্ত্র। ফলে এই তত্ত্ব পরিবেশ ও দেহের মধ্যে সমন্বয়- সাধনে সাহায্য করে। যদি স্নায়ুতন্ত্র না থাকত তাহলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ও তন্ত্রের মধ্যে কার্যগত সমন্বয়সাধন ঘটত না। এবং দেহতন্ত্র বিনষ্ট হত।

অ্যাক্সন ও ডেনড্রন-এর একটি কার্যগত পার্থক্য লেখো।

অ্যাক্সন কোশদেহ বা গ্রাহক থেকে স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করে ও পরবর্তী নিউরোন বা কারক অঙ্গে প্রেরণ করে। ডেনড্রন গ্রাহক থেকে স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করে ও কোশদেহে প্রেরণ করে।

মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান গঠনগত পার্থক্য কী?

মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান গঠনগত পার্থক্য হল – মেরুদণ্ডী প্রাণীর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ফাঁপা এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণীর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র নিরেট।

পশ্চাদমস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের অবস্থান লেখো।

পশ্চাদমস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের হল –
1. লঘুমস্তিষ্ক – চতুর্থ মস্তিষ্ক নিলয়ের পৃষ্ঠদেশে, গুরুমস্তিষ্কের নীচে অবস্থিত।
2. পনস্ – মধ্যমস্তিষ্কের নীচে চতুর্থ মস্তিষ্ক নিলয়ের অঙ্কদেশে সুষুম্নাশীর্ষকের ওপরে অবস্থিত।
3. মেডালা অবলংগাটা বা সুষুম্নাশীর্ষক – পনস্-এর সুষুম্নাকাণ্ডের ঠিক ওপরে অবস্থিত।

নিউরোন ও নিউরোগ্নিয়ার দুটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

নিউরোন ও নিউরোগ্লিয়া-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল —

বিষয়নিউরোন নিউরোগ্লিয়া
1. স্নায়ুস্পন্দন পরিবহণসক্ষম।অক্ষম।
2. কাজস্নায়ুস্পন্দনের পরিবহণ ও দেহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধন।স্নায়ুতন্ত্রের ধারক কোশ হিসেবে কাজ করে।
3. বিভাজন ক্ষমতানেই।আছে।

হরমোন ও স্নায়ুর দুটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

হরমোন ও স্নায়ু-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল —

বিষয়হরমোনস্নায়ু
1. ক্রিয়ার গতি মন্থর।দ্রুত।
2. ক্রিয়ার প্রকৃতিরাসায়নিক সমন্বয় সাধন করে।ভৌত সমন্বয় সাধন করে।

ডেনড্রন এবং অ্যাক্সন-এর মধ্যে দুটি গঠনগত এবং একটি কার্যগত পার্থক্য লেখো।

ডেনড্রন এবং অ্যাক্সন-এর মধ্যে দুটি গঠনগত এবং একটি কার্যগত পার্থক্যগুলি হল —

বিষয়অ্যাক্সনডেনড্রন
1. গঠনগত পার্থক্য1. এগুলি শাখাবিহীন, 
2. নিস্ল দানা থাকে না।
1. শাখাপ্রশাখাযুক্ত,
2. নিস্লদানা থাকে।
2. কার্যগত পার্থক্যএটি স্নায়ুস্পন্দন বহন করে।এটি স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করে।

সংজ্ঞাবহ নিউরোন এবং আজ্ঞাবহ নিউরোন-এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

সংজ্ঞাবহ নিউরোন এবং আজ্ঞাবহ নিউরোন-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল —

বিষয়সংজ্ঞাবহ নিউরোনআজ্ঞাবহ নিউরোন
1. সংবেদ পরিবহণের অভিমুখগ্রাহক থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের দিকে।কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কারকের দিকে।
2. অ্যাক্সন-এর দৈর্ঘ্যতুলনামূলকভাবে স্বল্প দীর্ঘ।তুলনামূলকভাবে অধিক দীর্ঘ।
3. ডেনড্রন-এর সংযুক্তিগ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত।কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।
4. অ্যাক্সন-এর সংযুক্তিকেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।কারকের সঙ্গে যুক্ত।

দ্বিনেত্র দৃষ্টি এবং একনেত্র দৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

দ্বিনেত্র দৃষ্টি এবং একনেত্র দৃষ্টির মধ্যে পার্থক্যগুলি হল —

বিষয়দ্বিনেত্র দৃষ্টিএকনেত্র দৃষ্টি
1. প্রতিবিম্ব গঠনের ধরনএকই সঙ্গে দুটি চোখে একই বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।একই সঙ্গে দুটি চোখে দুটি আলাদা বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। 
2. প্রতিবিম্বের সংখ্যাএকই সঙ্গে একটি।একই সঙ্গে দুটি।

গুরুমস্তিষ্ক এবং লঘুমস্তিষ্কের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

গুরুমস্তিষ্ক এবং লঘুমস্তিষ্কের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল —

বিষয়গুরুমস্তিষ্কলঘুমস্তিষ্ক
1. মস্তিষ্কের মধ্যে অবস্থানঅগ্রমস্তিষ্ক।পশ্চাদ্‌মস্তিষ্ক
2. কাজযুক্তিবদ্ধ চিন্তন, তুলনা,স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ।দেহের ভারসাম্য রক্ষা।

জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় জীবন বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাণীদের সাড়া প্রদান এবং ভৌত সমন্বয় সম্পর্কে জানা খুব জরুরী। স্নায়ুতন্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা জীবজন্তুদের আদর্শ করে। এই বিষয়গুলি জীবন বিজ্ঞানের মাধ্যমে শিখা যায়। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর মাধ্যমে এই বিষয়গুলি বুঝতে সহায়তা করে।

Share via:

মন্তব্য করুন