মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – গ্যাসের আচরণ – সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

Mrinmoy Rajmalla

এ আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের গ্যাসের আচরণ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর  নিয়ে আলোচনা করব। যেগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাসের আচরণ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর গুলি আপনি যদি ভালো করে দেখে মুখস্ত করে যান, তাহলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় গ্যাসের আচরণ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর থেকে যা প্রশ্নই আসুক না কেন আপনি সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।

Table of Contents

আন্তরাণবিক আকর্ষণ বলের ভিত্তিতে কঠিন, তরল ও গ্যাসের মধ্যে পার্থক্য করো।

কঠিন, তরল ও গ্যাস – সকল পদার্থই অসংখ্য অণুর সমষ্টি। কঠিন পদার্থের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ খুব বেশি, ফলে অণুগুলির মধ্যে ব্যবধান খুব কম হয়। তাই কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে। কঠিনের অণুগুলি গতিশীল হয় না, শুধুমাত্র একটি অবস্থান সাপেক্ষে কম্পিত হয়। তরলের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ কঠিনের তুলনায় অনেক কম ফলে তরলের কোনো নির্দিষ্ট আকার থাকে না, কিন্তু নির্দিষ্ট আয়তন থাকে। পারস্পরিক আকর্ষণ বল কম বলে তরলের অণুগুলি গতিশীল হয়। আবার গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ খুবই নগণ্য, তাই গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই, যে পাত্রে থাকে সেই পাত্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

আণবিক গতি ও পাত্রের দেয়ালের সঙ্গে অণুর সংঘর্ষের ধারণার ভিত্তিতে গ্যাসের চাপের ব্যাখ্যা করো।

গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ খুবই নগণ্য। তাই গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই, যে পাত্রে থাকে সেই পাত্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাসের অণুগুলি সর্বদা গতিশীল, এই গতি সম্পূর্ণ এলোমেলো। অণুগুলি সর্বদা নিজেদের মধ্যে ও পাত্রের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং অণুগুলির ভরবেগের পরিবর্তন হয়। ভরবেগের পরিবর্তনের হারই হল বল অর্থাৎ দেয়াল অণুগুলির ওপর বল প্রয়োগ করে। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গ্যাসের অণুগুলিও দেয়ালের ওপর বল প্রয়োগ করে। পাত্রের দেয়ালের একক ক্ষেত্রফলের ওপর লম্বভাবে প্রযুক্ত এই ধাক্কাজনিত বলই হল গ্যাসের চাপ।

গ্যাসের চাপ কাকে বলে? CGS পদ্ধতি ও SI – তে চাপের একক কী? এই একক দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

গ্যাসের অণুগুলি দ্বারা পাত্রের দেয়ালের একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে প্রযুক্ত ধাক্কাজনিত বলই হল গ্যাসের চাপ। CGS পদ্ধতি ও SI – তে চাপের একক যথাক্রমে dyn/cm2 N/m2

একক দুটির মধ্যে সম্পর্কটি হল – 1n/m2=105dyn104cm210dyn/cm2

CGS পদ্ধতি ও SI – তে ক্ষেত্রফলের একক কী? এই একক দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

CGS পদ্ধতি ও SI – তে ক্ষেত্রফলের একক যথাক্রমে cm2 ও m2

একক দুটির মধ্যে সম্পর্কটি হল – 1 m2 (100 cm)2 = 104 cm2

CGS পদ্ধতি ও SI – তে আয়তনের একক কী? এই একক দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

CGS পদ্ধতি ও SI – তে আয়তনের একক যথাক্রমে cm3 ও m3

একক দুটির মধ্যে সম্পর্কটি হল – 1 m3 (100 cm)3 = 106 cm3

m3 ও L – এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

1 L 103 cm3

1 m3 106 cm3 = 103.103 cm3 = 103 L

ম্যানোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে কীভাবে আবদ্ধ বায়ু বা গ্যাসের চাপ নির্ণয় করবে – যখন 1. আবন্ধ বায়ু বা গ্যাসের চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের চেয়ে বেশি, 2. আবদ্ধ বায়ু বা গ্যাসের চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের চেয়ে কম।

ম্যানোমিটার যন্ত্রটি হল দু-মুখ খোলা অসম বাহুবিশিষ্ট U – আকৃতির একটি নল। নলটির মধ্যে তরল হিসেবে সাধারণত পারদ নেওয়া হয়, তবে অন্য তরলও নেওয়া যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় দুই বাহুতে পারদের লেভেল একই উচ্চতায় থাকে। এবার যে আবদ্ধ বায়ু বা গ্যাসের চাপ পরিমাপ করতে হবে সেই পাত্রের সঙ্গে U – নলের ছোটো বাহু যুক্ত করা হয়। ফলে ছোটো বাহুতে পারদের ওপরের চাপ গ্যাসের চাপের সমান হবে।

  • আবদ্ধ বায়ুর চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের চেয়ে বেশি হলে ম্যানোমিটারের ডানদিকের খোলা বাহুতে পারদের লেভেল, বামদিকের বাহুর তুলনায় উঁচুতে থাকবে। মনে করি, দুই বাহুতে পারদের উচ্চতার পার্থক্য। ডানবাহুতে B বিন্দু বামবাহুতে পারদের উপরিতলে অবস্থিত A বিন্দুর সঙ্গে একই অনুভূমিক তলে আছে। স্থির তরলের মধ্যে কোনো অনুভূমিক তলের ওপর যে – কোনো বিন্দুতে চাপ সমান। তাই A ও B বিন্দুতে চাপ সমান হবে। A বিন্দুতে চাপ বলতে আবদ্ধ বায়ুর চাপকে বোঝায়। আবদ্ধ বায়ুর চাপ = p1 এবং ওই স্থানে ওই মুহূর্তে বায়ুমণ্ডলের চাপ = p0 হলে, P1 = Po+h উচ্চতার পারদস্তম্ভের চাপ বা, P1 = Po+hdg (যেখানে, পারদের ঘনত্ব = d ও ওই স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ = g)
ম্যানোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে কীভাবে আবদ্ধ বায়ু বা গ্যাসের চাপ নির্ণয় করবে
  • আবদ্ধ বায়ুর চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের চেয়ে কম হলে, ম্যানোমিটারের ডানদিকের খোলা বাহুতে পারদের লেভেল, বামদিকের বাহুর তুলনায় নীচুতে থাকবে। মনে করি, দুই বাহুতে পারদের উচ্চতার পার্থক্য । বামবাহুতে A বিন্দু ডানবাহুতে পারদের উপরিতলে অবস্থিত B বিন্দুর সঙ্গে একই অনুভূমিক তলে আছে অর্থাৎ A ও B বিন্দুতে চাপ সমান হবে। আবদ্ধ বায়ু বা গ্যাসের চাপ = p2 হলে, P2+hdg = P0 বা, P2 = Po-hdg যেখানে, বায়ুমণ্ডলের চাপ = p0, পারদের ঘনত্ব = d এবং ওই স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ = g
ম্যানোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে কীভাবে আবদ্ধ বায়ু বা গ্যাসের চাপ নির্ণয় করবে 2

বয়েলের সূত্রটি লেখো।

বয়েলের সূত্র – উষ্ণতা স্থির থাকলে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন, ওই গ্যাসের চাপের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়।

বয়েলের সূত্রের গাণিতিক রূপটি লেখো।

নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন ও চাপ হলে, বয়েলের সূত্রানুযায়ী –

বয়েলের সূত্রের গাণিতিক রূপ

যেখানে K1 একটি ধ্রুবক যার মান গ্যাসের ভর ও উষ্ণতার ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকলে, গ্যাসের চাপ ও আয়তনের গুণফল ধ্রুবক। নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের উষ্ণতা স্থির থাকলে, p₁ চাপে গ্যাসের আয়তন V1, P2 চাপে গ্যাসের আয়তন V2 বা P3 চাপে গ্যাসের আয়তন V3 হলে বয়েলের সূত্রানুযায়ী, P1V1 = P2V2 P3V3 = … = K1 (ধ্রুবক)

বয়েলের সূত্র বিবৃত করার সময় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের কথা উল্লেখ করা হয় কেন?

বয়েলের সূত্র বিবৃত করার সময় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের কথা উল্লেখ করা হয়, কারণ গ্যাসের চাপ ও আয়তন গ্যাসের ভরের ওপর নির্ভরশীল। গ্যাসের ভর পরিবর্তিত হলে চাপ ও আয়তন পরিবর্তিত হবে।

বয়েলের সূত্রের p-V লেখচিত্র আঁকো।

স্থির উয়তায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন (V) – কে ভুজ ও চাপ (p) – কে কোটি ধরে যে লেখচিত্র পাওয়া যায় তা 2.3 নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। এটি হল বয়েলের সূত্রের p-V লেখচিত্র। লেখচিত্রের প্রকৃতি সমপরাবৃত্ত।

বয়েলের সূত্রের p-V লেখচিত্র

বয়েলের সূত্রের PV-P লেখচিত্র আঁকো।

স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের চাপ p – কে ভুজ এবং চাপ ও আয়তনের গুণফল (PV) – কে কোটি ধরে যে লেখচিত্র পাওয়া যায় তা 2.4 নং চিত্রে দেখানো হয়েছে। এটি হল –

বয়েলের সূত্রের pV-p লেখচিত্র। লেখচিত্রের প্রকৃতি হল সরলরেখা।

বয়েলের সূত্রের PV-P লেখচিত্র

বয়েলের সূত্রে সমানুপাতিক ধ্রুবকটির মান কীসের ওপর নির্ভরশীল?

বয়েলের সূত্রের সমানুপাতিক ধ্রুবকটির মান গ্যাসের ভর, গ্যাসের প্রকৃতি এবং উষ্ণতার ওপর নির্ভরশীল।

বেলুন ফোলানোর সময় বেলুনের চাপ ও আয়তন উভয়ই বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে বয়েলের সূত্র কি লঙ্ঘিত হয়?

বেলুন ফোলানোর সময় বেলুনের ভিতরের বায়ুর ভর স্থির থাকে না, আরও বায়ু প্রবেশ করানোর জন্য বেলুনের ভিতরের বায়ুর ভর বাড়তে থাকে। বয়েলের সূত্রে দুটি ধ্রুবক হল – গ্যাসের ভর ও উয়তা। এক্ষেত্রে গ্যাসের ভর স্থির না থাকার জন্য বয়েলের সূত্র প্রযোজ্য হয় না। তাই যেখানে বয়েলের সূত্র প্রযোজ্যই নয়, সেক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হওয়ার প্রশ্নও নেই।

বেলুন ফোলানোর সময় বেলুনের চাপ ও আয়তন উভয়ই বৃদ্ধি পায়।

গভীর জলের তলদেশ থেকে বায়ুর বুদ্বুদ যখন ওপরের দিকে ওঠে তখন আয়তন বাড়ে না কমে?

গভীর জলের তলদেশ অপেক্ষা ওপরের দিকে জলের চাপ কমতে থাকে, কারণ তরলের মধ্যে তরলের জন্য চাপ গভীরতার সমানুপাতিক। বায়ুর বুদ্বুদ গভীর জলের তলদেশ থেকে ওপরদিকে উঠলে বুদ্বুদের ওপর চাপ হ্রাস পায়; আবার বয়েলের সূত্রানুযায়ী স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের চাপ কমলে আয়তন বাড়ে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে, জলের সর্বত্র উষ্ণতা সমান তাহলে বয়েলের সূত্রানুযায়ী বলা যায় যে, বায়ুর বুদ্বুদ গভীর জলের তলদেশ থেকে ওপরের দিকে উঠলে আয়তনে বাড়বে।

গভীর জলের তলদেশ থেকে বায়ুর বুদ্বুদ যখন ওপরের দিকে ওঠে তখন আয়তন বাড়ে না কমে

চার্লসের সূত্রটি লেখো ও ব্যাখ্যা করো।

চার্লসের সূত্র – চাপ স্থির থাকলে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের উষ্ণতা 1°C বৃদ্ধি বা হ্রাস করলে 0°C উষ্ণতায় ওই গ্যাসের যা আয়তন তার1 1/273 অংশ বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়।

মনে করি, স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের 0°C উষ্ণতায় আয়তন V0। চাপ স্থির রেখে গ্যাসের উষ্ণতা 1°C বৃদ্ধি করলে আয়তন বৃদ্ধি হবে V0 – এর 1/273 অংশ বা V0/273

চার্লসের সূত্র ব্যাখ্যা

আবার, চাপ স্থির রেখে গ্যাসের উষ্ণতা 2°C বৃদ্ধি করলে আয়তন বৃদ্ধি হবে 2V0/273

চার্লসের সূত্রটি লেখো ও ব্যাখ্যা করো।

চার্লসের সূত্রের V-t লেখচিত্র আঁকো এবং লেখচিত্র থেকে পরম শূন্য উষ্ণতার ধারণা দাও।

স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের উষ্ণতা (t) – কে ভুজ ও ওই উয়তায় গ্যাসের আয়তন (V) – কে কোটি ধরে যদি লেখচিত্র অঙ্কন করা যায় তাহলে লেখচিত্রটি হবে একটি সরলরেখা (চিত্র 2.9)

সরলরেখাটিকে পিছনদিকে বাড়ালে উষ্ণতা অক্ষকে -273 °C উষ্ণতায় ছেদ করে অর্থাৎ স্থির চাপে -273°C উষ্ণতায় গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায়। এই উষ্ণতাকে পরম শূন্য উষ্ণতা বলা হয়।

চার্লসের সূত্রের V-t লেখচিত্র

চার্লসের সূত্র থেকে পরম শূন্য উষ্ণতার মান নির্ণয় করো।

0°C উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন V0 হলে চার্লসের সূত্রানুযায়ী, স্থির চাপে °C উষ্ণতায় গ্যাসটির আয়তন হবে –

চার্লসের সূত্র থেকে পরম শূন্য উষ্ণতার মান নির্ণয়

সুতরাং চার্লসের সূত্রানুযায়ী, স্থির চাপে -273°C উষ্ণতায় কোনো গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায়। এর চেয়ে কম উষ্ণতায় গ্যাসের আয়তন ঋণাত্মক হয় যা বাস্তবে সম্ভব নয়। এই উষ্ণতাকে পরম শূন্য উষ্ণতা বলা হয়।

পরম শূন্য উষ্ণতা কাকে বলে? এই উষ্ণতাকে পরম বলা হয় কেন?

চার্লসের সূত্রানুযায়ী, যে উষ্ণতায় কোনো গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায়, তাকে পরম শূন্য উষ্ণতা বলা হয়।

চার্লসের সূত্র থেকে পরম শূন্য উষ্ণতার যে ধারণা পাওয়া যায়, তা গ্যাসের প্রকৃতি, ভর, আয়তন, চাপ বা অন্য কোনো ভৌত অবস্থার ওপর নির্ভরশীল নয়। যে – কোনো গ্যাসের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। এর চেয়ে কম উষ্ণতা বাস্তবে পাওয়া সম্ভব নয়। পরম শূন্য উষ্ণতার ধারণা অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত ও সর্বজনীন। এইসব কারণে পরম শূন্য উষ্ণতাকে পরম বলা হয়।

উষ্ণতার পরম স্কেল কাকে বলে?

বিজ্ঞানী কেলভিন উষ্ণতার একটি নতুন স্কেল প্রবর্তন করেন যার শূন্য বিন্দু (0) ধরা হয় -273 °C – কে এবং প্রতি ডিগ্রির মান ধরা হয় সেলসিয়াস স্কেলের প্রতি ডিগ্রির সমান। উষ্ণতার এই স্কেলকে বলা হয় পরম স্কেল।

উষ্ণতার পরম স্কেল

উষ্ণতার পরম স্কেল অনুযায়ী চার্লসের সূত্রটি লেখো।

0°C উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন V0 হলে চার্লসের সূত্রানুযায়ী, স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের t1°C উষ্ণতায় গ্যাসটির আয়তন,

উষ্ণতার পরম স্কেল অনুযায়ী চার্লসের সূত্রটি

যেখানে T1 হল t1°C উষ্ণতার পরম স্কেলে পাঠ। অনুরূপে স্থির চাপে একই গ্যাসের t2°C উষ্ণতার আয়তন,

উষ্ণতার পরম স্কেল অনুযায়ী চার্লসের সূত্র

যেখানে V হল TK উষ্ণতায় গ্যাসের আয়তন। (3) নং সমীকরণ থেকে বলা যায় যে, স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন, গ্যাসটির পরম উষ্ণতার সমানুপাতিক। এটি হল চার্লসের সূত্রের বিকল্প রূপ।

চার্লসের সূত্রের V-T লেখচিত্র আঁকো।

স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের TK উষ্ণতায় আয়তন ৮ হলে, চার্লসের সূত্রানুযায়ী, V = K2T, যেখানে K2 হল ধ্রুবক। এই গ্যাসের পরম উষ্ণতা T – কে ভুজ ও ওই উষ্ণতায় গ্যাসের আয়তন V – কে কোটি ধরে যদি লেখচিত্র অঙ্কন করা যায় তাহলে লেখচিত্রটি হবে একটি সরলরেখা (চিত্র 2.11)। সরলরেখাটিকে পিছন দিকে বাড়ালে তা মূলবিন্দুকে স্পর্শ করে। অর্থাৎ চার্লসের সূত্রানুযায়ী, 0K উষ্ণতায় গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায় যা বাস্তবে সম্ভব নয়।

চার্লসের সূত্রের V-T লেখচিত্র

পরম শূন্য উষ্ণতায় কোনো গ্যাসের আয়তন বাস্তবে কি শূন্য হয়ে যায়?

চার্লসের সূত্রানুযায়ী, -273 °C উষ্ণতায় কোনো গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায়। যদিও প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে এরূপ ঘটে না কারণ ওই উষ্ণতায় পৌঁছোনোর অনেক আগেই গ্যাস তরলে রূপান্তরিত হয় আর তরলের ক্ষেত্রে চার্লসের সূত্রটি প্রযোজ্য নয়।

ফারেনহাইট স্কেলে পরম শূন্য উষ্ণতার মান নির্ণয় করো।

সেলসিয়াস স্কেলে পরম শূন্য উয়তা (C) = -273°C। মনে করি, ফারেনহাইট স্কেলে পরমশূন্য উষ্ণতার পাঠ = F

ফারেনহাইট স্কেলে পরম শূন্য উষ্ণতার মান নির্ণয়

একটি বেলুনকে বায়ুপূর্ণ করে চন্দ্রপৃষ্ঠে নিয়ে গেলে কী হবে?

চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই, তাই বেলুনের বাইরের চাপ অত্যন্ত নগণ্য। ভিতরের বায়ুর চাপের জন্য বেলুনের আয়তন বাড়তে থাকবে এবং বেলুনটি একসময় ফেটে যাবে।

বয়েল ও চার্লসের সূত্রের সমন্বিত রূপটি প্রতিষ্ঠা করো।

মনে করি, নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের T পরম উষ্ণতায় চাপ P ও আয়তন V

বয়েল ও চার্লসের সূত্রের সমন্বিত রূপ

যেখানে K একটি ধ্রুবক। K ধ্রুবকের মান গ্যাসের ভর, চাপ, আয়তন ও তাপমাত্রার এককের ওপর নির্ভরশীল। (1) নং সমীকরণটি হল বয়েল ও চার্লসের সূত্রের সমন্বিত রূপ। এই সমীকরণকে আদর্শ গ্যাসের অবস্থার সমীকরণও বলা হয়। কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের প্রাথমিক চাপ, আয়তন ও পরম তাপমাত্রা যথাক্রমে P1, V1, T1 এবং অন্তিম চাপ, আয়তন ও পরম তাপমাত্রা যথাক্রমে P2, V2 ও T2 হলে (1) নং সমীকরণ থেকে পাই,

বয়েল ও চার্লসের সূত্রের সমন্বিত রূপটি প্রতিষ্ঠা করো

আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস কাকে বলে?

আদর্শ গ্যাস – যে সমস্ত গ্যাস সব অবস্থাতেই আদর্শ গ্যাসের অবস্থার সমীকরণ pV = KT মেনে চলে তাদের আদর্শ গ্যাস বলা হয়।

বাস্তব গ্যাস – যে সমস্ত গ্যাস নিম্নচাপ ও উচ্চ উষ্ণতা ছাড়া PV = KT সমীকরণ মেনে চলে না তাদের বাস্তব গ্যাস বলা হয়।

দেখাও নিম্ন উষ্ণতা ও উচ্চচাপে PV = KT সমীকরণটি প্রযোজ্য হয় না।

আদর্শ গ্যাসের অবস্থার সমীকরণ pV = KT থেকে পাই, চাপ স্থির থাকলে, VcT। চাপ স্থির রেখে কোনো গ্যাসের উষ্ণতা T = 0 K করলে আয়তন হবে, V = 0। কিন্তু বাস্তবে চাপ স্থির রেখে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের উষ্ণতা কমাতে থাকলে গ্যাসের আয়তন কমতে থাকে তবে 0 K উষ্ণতায় পৌঁছোনোর অনেক আগেই গ্যাস তরলে রুপান্তরিত হয়। সুতরাং খুব নিম্ন উষ্ণতায় এই সমীকরণ প্রযোজ্য নয়।

আবার, PV = KT সমীকরণ থেকে পাই, V = KT/P । গ্যাসের

উষ্ণতা স্থির রেখে চাপ অসীম (∞) করা হলে, V = 0 হবে। কিন্তু বাস্তবে উষ্ণতা অপরিবর্তিত রেখে চাপ বাড়াতে থাকলে গ্যাসের আয়তন কমতে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট চাপে গ্যাস তরলে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং, উচ্চচাপেও pV = KT সমীকরণ প্রযোজ্য হয় না।

একটি গ্যাস pv2 = ধ্রুবক সমীকরণটি মেনে চলে। দেখাও যে, গ্যাসটি প্রসারিত হলে শীতল হবে।

মনে করি, গ্যাসটি pV2 = K1 সমীকরণ মেনে চলে, যেখানে K1 হল ধ্রুবক।

pV. V = K1 বা, KT. V = K1 (যেহেতু, pV = KT)

বা, TV=K1K বা, TV=K2যেখানে K2=K1K হল ধ্রুবক।অতয়েব, T1V

কটি আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে দেখা গেল গ্যাসটি Vp2 = ধ্রুবক সূত্রটি মেনে চলে। গ্যাসটির প্রাথমিক আয়তন ও তাপমাত্রা যথাক্রমে V ও T গ্যাসটির আয়তন 2V হলে তাপমাত্রা কত হবে?

গ্যাসটির অন্তিম আয়তন (V1) = 2V মনে করি, অন্তিম তাপমাত্রা = T1 ও অন্তিম চাপ = P1

গ্যাসটি Vp2 = ধ্রুবক সূত্র মেনে চলে।

অতয়েব, VP2=V1P12 বা, P2P12=V1V

আদর্শ গ্যাস সমীকরণ থেকে পাই,

PVT=P1V1T1 বা, PP1=V1TT1V বা, P2P12=V12T12T12V2

(1) নং ও (2) নং সমীকরণ তুলনা করে পাই,

V1V=V12T2T12V2 বা, V1T2=T12Vবা, 2V.T2=T12.Vবা, T12=2T2বা, T1=2Tগ্যাসটির আয়তন 2V হলে তাপমাত্রা 2T হবে।

আভ্যোগার্ড প্রকল্পটি লেখো ও ব্যাখ্যা করো।

একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তনবিশিষ্ট সকল গ্যাসেই (মৌলিক বা যৌগিক) সমান সংখ্যক অণু বর্তমান। মনে করি, একই চাপ p ও তাপমাত্রা T – তে V আয়তনের তিনটি পৃথক পাত্রে তিনটি গ্যাস, যেমন – হাইড্রোজেন (H₂), অক্সিজেন (O2) ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) আছে। V আয়তন হাইড্রোজেন গ্যাসে যদি টি অণু থাকে তাহলে আয়তন অক্সিজেন ও আয়তন কার্বন ডাইঅক্সাইডেও x টি করেই অণু থাকবে। নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে V আয়তন কোনো গ্যাসে n সংখ্যক অণু বর্তমান থাকলে Vn  বা, V=Kn যেখানে K একটি ধ্রুবক।

অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের অবদান কী?

অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের অবদান-

  • অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পেই প্রথম অণু ও পরমাণুর পার্থক্য করা হয়।
  • অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের সাহায্যে গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র ব্যাখ্যা করা যায়।
  • এই প্রকল্পের সাহায্যে ডালটনের পরমাণুবাদ ও গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা যায়।

একটি উদাহরণের সাহায্যে দেখাও অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পে উল্লিখিত আয়তন হল গ্যাস দ্বারা অধিকৃত অঞ্চলের আয়তন যার সঙ্গে অণুগুলির আয়তনের কোনো সম্পর্ক নেই।

N2+3H2=2NH3

একই চাপ ও উষ্ণতায় । আয়তন নাইট্রোজেন ও আয়তন হাইড্রোজেনের বিক্রিয়ায় 2 আয়তন অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয়। এখানে নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাসের আয়তনের অনুপাত 1:3:2, যা সরল অনুপাতে আছে। এখন নাইট্রোজেনের আয়তন ৮ ও তাতে অণুর সংখ্যা x হলে হাইড্রোজেন গ্যাসের আয়তন 3V এবং তাতে অণু থাকবে 3x টি এবং উৎপন্ন অ্যামোনিয়ার আয়তন হবে 2V ও তাতে অণু থাকবে 2xটি। যদি x টি নাইট্রোজেন অণুর আয়তন V এবং 3x টি হাইড্রোজেন অণুর আয়তন 3V হত তাহলে উৎপন্ন অ্যামোনিয়ার 2x টি অণুর আয়তন হত = V+3V = 4V, যা অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের সঙ্গে মেলে না। সুতরাং, অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পে উল্লিখিত আয়তন হল গ্যাস দ্বারা অধিকৃত অঞ্চলের আয়তন যার সঙ্গে অণুগুলির আয়তনের কোনো সম্পর্ক নেই।

গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্রটি লেখো এবং এই সূত্রের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অ্যাভোগাড্রো কী বলেন?

গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র – গ্যাসীয় বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়ক গ্যাসগুলি সমচাপ ও উষ্ণতায় তাদের আয়তনের সরল অনুপাতে বিক্রিয়া করে এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থ যদি গ্যাসীয় হয় তাহলে একই চাপ ও উষ্ণতায় বিক্রিয়াজাত পদার্থের আয়তন বিক্রিয়কগুলির আয়তনের সঙ্গে সরল অনুপাতে থাকবে।

গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্রটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজ্ঞানী অ্যাভোগাড্রো বলেন যে, পরমাণু ছাড়া পদার্থের গঠনে আরও একপ্রকার ক্ষুদ্র কণার অস্তিত্ব আছে, যাকে অণু বলা হয়। অণুর ধারণা প্রয়োগ করে তিনি যে অণুবাদ তত্ত্ব (molecular theory) প্রবর্তন করেন তাতে তিনি অণু ও পরমাণুর পার্থক্য স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন। তবে অ্যাভোগাড্রোর সময়ে অণু ও পরমাণুর সম্পূর্ণ ধারণাটাই পরীক্ষালব্ধ প্রমাণের অভাবে কল্পনামাত্র ছিল।

যেন কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে বাস্তব গ্যাসগুলির মোলার আয়তন প্রায় সমান ও STP – তে এর সীমাস্থ মান 22.4L·mol1 – এই পরীক্ষালম্ব তথ্য থেকে অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের অবতারণা করো।

কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে যে-কোনো গ্যাসীয় পদার্থের (মৌলিক বা যৌগিক) 1 মোল অণুর আয়তনকে মোলার আয়তন বলে। মোলার আয়তনের মান গ্যাসীয় পদার্থের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না। উষ্ণতা ও চাপ নির্দিষ্ট থাকলে বিভিন্ন বাস্তব গ্যাসের মোলার আয়তনের মান প্রায় সমান হয়। n মোল কোনো গ্যাসের আয়তন V হলে মোলার আয়তন হবে VN যেহেতু উষ্ণতা ও চাপের পরিবর্তনের ফলে গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন পরিবর্তিত হয়, তাই উষ্ণতা ও চাপের পরিবর্তনের ফলে মোলার আয়তনও পরিবর্তিত হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, প্রমাণ উষ্ণতা ও চাপে অর্থাৎ STP – তে যে – কোনো গ্যাসীয় পদার্থের মোলার আয়তনের মান প্রায় সমান এবং এর সীমাস্থ মান 22.4L বা 22400 mL। এই আয়তনকে STP – তে গ্যাসের মোলার আয়তন বলে। সুতরাং, STP – তে 22.4 L আয়তনের সকল গ্যাসে অণুর সংখ্যা সমান। পরীক্ষালব্ধ এই ফল থেকে বিজ্ঞানী অ্যাভোগাড্রো গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন ও অণু সংক্রান্ত তাঁর বিখ্যাত মতবাদ জানান। এই মতবাদ অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প নামে পরিচিত।

অ্যাডোগাড়ো প্রকল্প – একই চাপ ও উষ্ণতায় সমআয়তনবিশিষ্ট সকল গ্যাসেই (মৌলিক বা যৌগিক) সমান সংখ্যক অণু বর্তমান।

অ্যামেদিও অ্যাভোগাড্রো (1776-1856)

অ্যাভোগাড্রোর মত অনুসারে, অণু কয় ধরনের ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার অণুর সংজ্ঞা লেখো ও উদাহরণ দাও।

অ্যাভোগাড্রোর মত অনুসারে অণু দু-প্রকার –

  • মৌলিক অণু ও
  • যৌগিক অণু।

মৌলিক অণু – একই মৌলিক পদার্থের এক বা একাধিক পরমাণু নিয়ে গঠিত অণুকে মৌলিক অণু বলা হয়। যেমন – H2 হল হাইড্রোজেন অণু, O2 হল অক্সিজেন অণু, N2 হল নাইট্রোজেন অণু।

যৌগিক অণু – দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থের পরমাণু নির্দিষ্ট নিয়মে যুক্ত হয়ে যে অণু গঠন করে, তাকে যৌগিক অণু বলা হয়। যেমন-একটি কার্বন পরমাণু ও দুটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) – এর অণু গঠন করে, যা একটি যৌগিক অণু।

অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের অনুসিদ্ধান্তগুলি লেখো।

অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের অনুসিদ্ধান্তগুলি হল-

  • কোনো গ্যাসীয় পদার্থের আণবিক গুরুত্ব, বাষ্প ঘনত্বের দ্বিগুণ।
  • নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যতীত অন্য মৌলিক গ্যাসের অণু দ্বিপরমাণুক।
  • STP – তে যে – কোনো গ্যাসের গ্রাম আণবিক আয়তন 22.4 L

প্রকল্প ও সূত্রের মধ্যে পার্থক্য কী?

প্রকল্প – কোনো বৈজ্ঞানিক বিবৃতি যদি সরাসরি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত না হয় কিন্তু ওই বিবৃতি থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত যদি অভ্রান্ত হয়, তখন ওই বিবৃতিকে প্রকল্প বলা হয়।

সূত্র – কোনো বৈজ্ঞানিক বিবৃতি যদি সরাসরি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়, তবে তাকে সূত্র বলা হয়।

অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পকে সূত্রের মর্যাদা দেওয়া হয় কেন?

অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প সরাসরি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের সাহায্যে গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র বা ডালটনের পরমাণুবাদ বা আরও অনেক সূত্রকে সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে। এমন কিছু আজ অবধি প্রমাণিত হয়নি যা দ্বারা বোঝা যায় অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পটি ভুল। এ ছাড়া এই প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলি অভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই সব কারণে অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পকে সূত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

মোল কাকে বলে?

কোনো পদার্থের (মৌলিক বা যৌগিক) এক মোল বলতে ওই পদার্থের সেই পরিমাণকে বোঝায় যাতে পদার্থটির 6.022 × 1023 টি উপাদান কণিকা (যেমন- অণু,পরমাণু,আয়ন) থাকে।

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা কাকে বলে? এর মান কত?

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা কোনো পদার্থের (মৌলিক বা যৌগিক) 1 g অণুর মধ্যে যত সংখ্যক অণু বর্তমান থাকে, তাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলা হয়। অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান, N = 6.022 × 1023

জল, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের মোলার ভর ব্যবহার করে দেখাও শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা আর্দ্র বায়ু হালকা।

শুষ্ক বায়ুতে অন্যান্য অনেক গ্যাস থাকলেও মূলত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের প্রাধান্য বেশি থাকে। মোটামুটিভাবে শুষ্ক বায়ুতে 4 ভাগ নাইট্রোজেন ও 1 ভাগ অক্সিজেন আছে। (প্রকৃত অর্থে শুষ্ক বায়ুতে নাইট্রোজেন থাকে 78%, অক্সিজেন থাকে 20.90%, আর্গন থাকে 0.90%, কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে 0.03% ও অন্যান্য গ্যাস থাকে 0.17%)| নাইট্রোজেনের মোলার ভর 28g ও অক্সিজেনের মোলার ভর 32g হলে, শুষ্ক বায়ুর গড় আণবিক ভর,

=28×4+32×14+1=28.8g

আবার, জলের (H2O) মোলার ভর = 1×2 + 16 = 18 g সুতরাং, জলীয় বাষ্প, শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা হালকা তাই বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলে অর্থাৎ বায়ু আর্দ্র হলে তার গড় আণবিক ভর, শুষ্ক বায়ুর গড় আণবিক ভরের চেয়ে কম হয় তাই শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা আর্দ্র বায়ু লঘু বা হালকা।

বয়েল, চার্লস ও অ্যাভোগাড্রো সূত্রের সমন্বয়ে আদর্শ গ্যাস সমীকরণটি প্রতিষ্ঠা করো।

মনে করি, p চাপ ও T তাপমাত্রায় n মোল কোনো গ্যাসের আয়তন V

বয়েলের সূত্রানুযায়ী, V1p (যখন T ও n স্থির)চার্লসের সূত্রানুযায়ী, VT (যখন p ও n স্থির)

অ্যাভোগাড্রো সূত্রানুযায়ী, একই চাপ ও উষ্ণতায় সমআয়তন যে – কোনো গ্যাসে সমসংখ্যক অণু থাকে। তাই 1 মোল কোনো গ্যাসে যত সংখ্যক অণু থাকে, একই চাপ ও উষ্ণতায় n মোল গ্যাসে n গুণ অণু বর্তমান। তাই 1 মোল গ্যাসের যা আয়তন হয়, একই চাপ ও উষ্ণতায় n মোল গ্যাসের আয়তন তার n গুণ হয়। সুতরাং, অ্যাভোগাড্রো সূত্রানুযায়ী লেখা যায়,

Vn (যখন p ও T স্থির)

(1), (2) ও (3) নং সমীকরণ থেকে যৌগিক ভেদের সূত্রানুযায়ী পাই,

VnTP (যখন p, T ও n পরিবর্তনশীল)VnRTP বা, PVT=nR বা, PV=nRTযেখানে R একটি ধ্রুবক। (4) নং সমীকরণে n = 1 বসিয়ে পাই, PVT=R অর্থাৎ 1 মোল গ্যাসের ক্ষেত্রে PVT এর মান বা R সকল গ্যাসের ক্ষেত্রে সমান, এই মান গ্যাসের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না। তাই R ধ্রুবককে মোলার গ্যাস ধ্রুবক বা সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক বলা হয়। (5) নং সমীকরণ হল n মোল গ্যাসের জন্য আদর্শ গ্যাস সমীকরণ।

সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক কাকে বলে?

1 মোল আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে PVT এর মান বা R সকল গ্যাসের ক্ষেত্রে সমান, এই মান গ্যাসের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না। এই R ধ্রুবককে মোলার গ্যাস ধ্রুবক বা সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক বলা হয়।

আদর্শ গ্যাস সমীকরণের মাত্রিক বিশ্লেষণ থেকে R – এর একক নির্ণয় করো।

n মোল গ্যাসের জন্য আদর্শ গ্যাস সমীকরণ, pV = nRT থেকে পাই, R=pVnT

অতয়েব, R-এর মাত্রীয় সংকেত

আদর্শ গ্যাস সমীকরণের মাত্রিক বিশ্লেষণ থেকে R - এর একক নির্ণয় করো।
সুতরাং, SI – তে R – এর একক হল J·mol1·K1 এবং CGS পদ্ধতিতে R – এর একক হল erg·mol1·K1 এখানে উষ্ণতা হল পরম উষ্ণতা। তাই এর একক K (kelvin) এককেই প্রকাশ করা হয়।

সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক, R – এর মান নির্ণয় করো।

STP – তে 1 মোল কোনো গ্যাসের ক্ষেত্রে আদর্শ গ্যাস সমীকরণটি হল –

P0V0=RT0 যেখানে P0 হল প্রমাণ চাপ, T0 হল প্রমাণ উষ্ণতা ও V0 হল STP – তে 1 মোল গ্যাসের আয়তন।

অতয়েব, P0 = 76 cm পারদস্তম্ভের চাপ

= 76×13.6×980 dyn/cm2V0=22400cm2T0=273Kএখন P0V0=RT0 থেকে পাই, R=P0V0T0বা, R=76×13.6×980×22400273বা, R=8.31×107erg·mol1·K1=8.31 J·mol1·k1

\(pV=nRT\) সমীকরণকে \(pV=\left(\frac WM\right)RT\) রূপে প্রকাশ করো, যেখানে গ্যাসের ভর = Wg, মোলার ভর \(=Mg\cdot mol^{-1}\)

মনে করি, n মোল কোনো আদর্শ গ্যাসের ভর Wg। গ্যাসের মোলার ভর \(=Mg\cdot mol^{-1}\) হলে \(n=\frac WM\) । সুতরাং, pV = nRT সমীকরণ থেকে পাই, \(pV=\left(\frac WM\right)RT\) ।

সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবকের মাত্রীয় সংকেত নির্ণয় করো।

n মোল গ্যাসের ক্ষেত্রে আদর্শ গ্যাস সমীকরণ হল, pV = nRT; যেখানে P হল চাপ, V হল আয়তন, T হল পরম উষ্ণতা এবং R হল সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক।

অতয়েব, R=pVnTR -এর মাত্রীয় সংকেত =ML1T2×L3N×0=ML2T2N101

গ্যাসের গতীয় তত্ত্বের স্বীকার্য বিষয়গুলি লেখো।

গ্যাসের গতীয় তত্ত্বের স্বীকার্য বিষয় –

  1. সকল গ্যাসই অসংখ্য অণুর সমষ্টি। একই গ্যাসের অণুগুলি একইরকম কিন্তু বিভিন্ন গ্যাসের অণুগুলি পরস্পর আলাদা।
  2. গ্যাসের অণুগুলি বিন্দুভর তাই পাত্রের আয়তনের তুলনায় অণুগুলির আয়তন নগণ্য।
  3. গ্যাসের অণুগুলি সর্বদা গতিশীল, এদের গতি এলোমেলো এবং এদের বেগের মান শূন্য থেকে অসীম পর্যন্ত হতে পারে। অণুগুলির বেগের মান এতই এলোমেলো যে, কোনো এক মুহূর্তে একটি গ্যাস অণুর বেগ বা গতিশক্তি নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
  4. গ্যাসের অণুগুলি সর্বদা নিজেদের মধ্যে ও পাত্রের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়। কিন্তু পাত্রের সর্বত্র উষ্ণতা স্থির থাকলে (বা তাপীয় সাম্যাবস্থায়) একক আয়তনে অণুর সংখ্যা (বা আণবিক ঘনত্ব) যে – কোনো স্থানে অপরিবর্তিত থাকে।
  5. পরপর দুটি ধাক্কার মাঝের পথ একটি অণু সমবেগে যায়। পরপর দুটি ধাক্কার মাঝের এই পথকে মুক্তপথ বলা হয়। মুক্তপথ অতিক্রম করতে একটি অণুর যে সময় লাগে তার তুলনায় ধাক্কার সময়কাল নগণ্য।
  6. দুটি ধাক্কার ক্ষেত্রে ধাক্কার পূর্বে ও পরে মোট রৈখিক ভরবেগ ও গতিশক্তি অপরিবর্তিত থাকে।
  7. গ্যাসের অণুগুলি নিজেদের মধ্যে কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল অনুভব করে না, অর্থাৎ গ্যাস অণুগুলির কোনো স্থিতিশক্তি নেই, সম্পূর্ণ শক্তিই গতিশক্তি।

গ্যাসের অণুগুলির গতিশীলতার সপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।

গ্যাসের চাপ ও ব্যাপন ক্রিয়া – এই দুটি ঘটনা প্রমাণ করে গ্যাসের অণুগুলি গতিশীল। গ্যাসের অণুগুলি সর্বদা নিজেদের মধ্যে ও পাত্রের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়। গ্যাসের অণুগুলি দেয়ালে ধাক্কা মারার জন্য দেয়ালের ওপর একটি বল প্রযুক্ত হয়। পাত্রের দেয়ালের একক ক্ষেত্রফলের ওপর লম্বভাবে প্রযুক্ত এই ধাক্কাজনিত বলই হল গ্যাসের চাপ। আবার দুই বা ততোধিক গ্যাস হালকা বা ভারী যাই হোক না কেন, বাহ্যিক সাহায্য ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিশে যায়। এটি হল ব্যাপন। সুতরাং গ্যাসের চাপ ও ব্যাপন দুটোই গ্যাসের অণুগুলোর গতিশীলতার জন্য ঘটে।

গ্যাসের অণুগুলির বেগ প্রায় বুলেটের বেগের সমান কিন্তু ধূপের গন্ধ ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগে কেন?

গ্যাসের অণুগুলির বেগ প্রায় বুলেটের বেগের সমান হলেও গ্যাসের অণুগুলি সর্বদা নিজেদের মধ্যে ও দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়, ফলে এদের গতিপথ খুবই এলোমেলো। তাই ধূপের গন্ধ ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগে।

গ্যাসের আয়তনের ওপর চাপের প্রভাব আলোচনা করো।

কোনো আবদ্ধ গ্যাসের ওপর চাপ বৃদ্ধি করলে গ্যাসের আয়তন হ্রাস পায়। বাহ্যিক চাপ বৃদ্ধি করলে গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে ব্যবধান হ্রাস পায় ফলে আয়তন কমে। আয়তন কমার জন্য দেয়ালের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে প্রতি সেকেন্ডে ধাক্কার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, ফলে গ্যাসের চাপও বৃদ্ধি পায় এবং বাহ্যিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ চাপ সমান ও বিপরীতমুখী হয়। একইভাবে বাহ্যিক চাপ হ্রাস করা হলে গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি পায়, ফলে আয়তন বাড়ে। আয়তন বাড়ার জন্য পাত্রের দেয়ালের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে প্রতি সেকেন্ডে ধাক্কার সংখ্যা হ্রাস পায় ফলে গ্যাসের চাপও হ্রাস পায় এবং বাহ্যিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ চাপ সমান ও বিপরীতমুখী হয়।

গ্যাসের অণুগুলির বেগ ও গ্যাসের চাপের ওপর উষ্ণতার প্রভাব আলোচনা করো।

কোনো আবদ্ধ গ্যাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে গ্যাস অণুগুলির গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, কারণ গ্যাসের গতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, আদর্শ গ্যাসের অণুর গড় গতিশক্তি পরম উষ্ণতার সমানুপাতিক। গ্যাস অণুর গতিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ অণুগুলির গড় বেগ বৃদ্ধি পায়, ফলে গ্যাস অণুগুলি দেয়ালে পূর্বাপেক্ষা আরও জোরে ধাক্কা মারে এবং দেয়ালের একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে প্রযুক্ত বল বৃদ্ধি পায় তাই চাপ বাড়ে। একইভাবে বলা যায় ওই গ্যাসের উষ্ণতা হ্রাস করলে অণুগুলির গড় বেগ ও গ্যাসের চাপ কমে।

ব্যাপন কাকে বলে? ব্যাখ্যা করো।

যে ধর্মের জন্য পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না এমন দুই বা ততোধিক গ্যাস (হালকা বা ভারী যাই হোক না কেন), বাহ্যিক সাহায্য ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিশে যায় এবং সমসত্ত্ব মিশ্রণ গঠন করে, তাকে ব্যাপন বলা হয়।

ঘরের কোনো প্রান্তে ধূপ জ্বালানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ধূপের গন্ধ সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে বা পরীক্ষাগারের একপ্রান্তে H₂S গ্যাস উৎপন্ন হলে কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য প্রান্তেও ওই গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়। এই ঘটনাগুলি ঘটে ব্যাপনের জন্য। গ্যাসের ব্যাপনের জন্য মূলত দায়ী গ্যাসের অণুগুলির বিশৃঙ্খল গতি। যে-কোনো গ্যাসের অণুগুলির আয়তনের তুলনায় তাদের আন্তরাণবিক ব্যবধান অনেক বেশি। তাই দুটি গ্যাসকে পাশাপাশি রাখা হলে এলোমেলো গতির জন্য গ্যাসের অণুগুলি ওই আন্তরাণবিক ফাঁকের মধ্য দিয়ে অনায়াসে অন্য গ্যাসের মধ্যে প্রবেশ করে ও কিছুক্ষণের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া পাত্রের সচ্ছিদ্রতার জন্যও ব্যাপন হয়।

হাইড্রোজেন গ্যাসপূর্ণ একটি বেলুনকে 2-3 দিন রেখে দিলে বেলুন চুপসে যায় কেন?

এই ঘটনা ঘটে গ্যাসের ব্যাপনের জন্য। বেলুন যে পদার্থের তৈরি তার অণুগুলির মধ্যে ফাঁক এমন হয় যে হাইড্রোজেন গ্যাসের অণু ওই ফাঁক দিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যেতে পারে, তাই 2-3 দিন পর বেলুন চুপসে যায়।

একটি পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও অভিকর্ষের বিপরীতেও গ্যাসের ব্যাপন হয়।

দুটো অভিন্ন গ্যাস বাল্ব নিয়ে একটিতে বর্ণহীন N2 গ্যাস ও অন্যটিতে বাদামি বর্ণের Br2গ্যাস নেওয়া হল। এবার N2 গ্যাসপূর্ণ গ্যাস বাল্বকে Br2 গ্যাসপূর্ণ গ্যাস বাল্বের ওপর বসিয়ে একটি নল দ্বারা দুটি গ্যাস বাল্বকে যুক্ত করা হল। দেখা যাবে, গ্যাস দুটি মিশ্রিত হয়ে হালকা বাদামি বর্ণের একটি মিশ্রণ উৎপন্ন করেছে।

সিদ্ধান্ত – Br2, N2 অপেক্ষা ভারী হওয়া সত্ত্বেও নীচের গ্যাস বাল্বে থাকা Br2 গ্যাস ওপরের N2 গ্যাসের মধ্যে ব্যাপিত হয়। এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে, অভিকর্ষের বিপরীতেও গ্যাসের ব্যাপন হয়।

একটি পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও অভিকর্ষের বিপরীতেও গ্যাসের ব্যাপন হয়।

গ্যাসের ব্যাপনের কারণগুলি লেখো।

গ্যাসের ব্যাপনের কারণ –

  • গ্যাসের অণুগুলির বিশৃঙ্খল গতি।
  • গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে বেশি আন্তরাণবিক ফাঁক।
  • পাত্রের সচ্ছিদ্রতা।

ব্যাপন হার কাকে বলে?

কোনো সচ্ছিদ্র পাত্রে গ্যাস আবদ্ধ থাকলে একক সময়ে যতটা আয়তনের গ্যাস পাত্র থেকে বেরিয়ে যায়, তাকে ব্যাপন হার বলে।

আদর্শ আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসগুলির বিচ্যুতির কারণগুলি লেখো।

আদর্শ আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসগুলির বিচ্যুতির কারণ –

  • অণুদের ক্ষুদ্র কিন্তু সসীম আয়তনের জন্য ও
  • আন্তরাণবিক বলের উপস্থিতির জন্য।

অণুদের ক্ষুদ্র কিন্তু সসীম আয়তনের জন্য ও আন্তরাণবিক বলের উপস্থিতিতে আদর্শ আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসের বিচ্যুতি আলোচনা করো।

মোল আদর্শ গ্যাসের জন্য গ্যাস সমীকরণ হল, PV = nRT। এই সমীকরণটি বয়েল, চার্লস ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকে পাওয়া যায়। বয়েল ও চার্লস, চাপ ও উষ্ণতার ক্ষুদ্র পাল্লার মধ্যে পরীক্ষা করে তাঁদের সূত্র দেন এবং তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন চাপ ও উষ্ণতার সমস্ত মানে সূত্রগুলি প্রযোজ্য হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, শুধুমাত্র নিম্নচাপ ও উচ্চ উষ্ণতায় বাস্তব গ্যাসগুলি আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে। অন্যান্য ক্ষেত্রে বাস্তব গ্যাসগুলির আচরণে, আদর্শ গ্যাস সমীকরণের বিচ্যুতি দেখা যায়। এই বিচ্যুতির কারণ হল –

অণুদের ক্ষুদ্র কিন্তু সসীম আয়তনের জন্য – গ্যাসের গতীয় তত্ত্বের স্বীকার্য বিষয়ে ধরা হয়েছে গ্যাসের অণুগুলি বিন্দুভর তাই পাত্রের আয়তনের তুলনায় অণুগুলির আয়তন নগণ্য। কিন্তু কম হলেও গ্যাসের অণুগুলির আয়তনকে উপেক্ষা বা আগ্রাহ্য করা যায় না। গ্যাসের অণুগুলির আয়তনকে অগ্রাহ্য করলে গ্যাসের অণুগুলির অবাধ সঞ্চরণের জন্য আয়তন পাত্রের আয়তনের সমান হয়। কিন্তু বাস্তবে অণুগুলির আয়তন থাকার জন্য, গ্যাসের অণুগুলির অবাধ সঞ্চরণের জন্য আয়তন পাত্রের আয়তন অপেক্ষা কিছুটা কম হয়। এই অবস্থা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয় যখন নিম্ন উষ্ণতা ও উচ্চচাপে গ্যাসের আয়তন খুবই কম হয়। গ্যাস অণুগুলির যে নির্দিষ্ট আয়তন আছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন কোনো গ্যাসকে উচ্চ চাপে বা তাপমাত্রা কমিয়ে তরল বা কঠিনে রূপান্তরিত করা হয়। গ্যাস থেকে ঘনীভূত তরল বা গ্যাসের যেহেতু নির্দিষ্ট আয়তন আছে তাই গ্যাস অণুগুলিরও নির্দিষ্ট আয়তন আছে।

আন্তরাণবিক বলের উপস্থিতির জন্য – গ্যাসের গতীয় তত্ত্বের একটি স্বীকার্য বিষয়ে বলা হয়েছে, গ্যাস অণুগুলি নিজেদের মধ্যে কোনো আকর্ষণ বল অনুভব করে না, কিন্তু বাস্তবে এমন হয় না। বাস্তব গ্যাস অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। একটি গ্যাস অণু যখন পাত্রের ভিতরে, পাত্রের দেয়াল থেকে একটু দূরে থাকে তখন তার চারিদিকে থাকা অণুগুলি দ্বারা সবদিকে সমানভাবে আকর্ষণ বল অনুভব করে। ফলে ওই অণুর ওপর লব্ধি আকর্ষণ বল শূন্য হয়। কিন্তু যখন একটি অণু পাত্রের দেয়ালের খুব নিকটবর্তী হয় তখন পাত্রের ভিতরের অণুগুলি ওই অণুর ওপর ভিতরের দিকে একটি লধি আকর্ষণ বল প্রয়োগ করে। ফলে অণুটি মন্দীভূত হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম বেগে দেয়ালে ধাক্কা মারে। তাই আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে আন্তরাণবিক আকর্ষণ বল না থাকার জন্য পাত্রের দেয়ালে যে চাপ প্রযুক্ত হত, বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে আন্তরাণবিক আকর্ষণ বল থাকায় তুলনামূলকভাবে পাত্রের দেয়ালে কম চাপ প্রযুক্ত হয়।

আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাসের মধ্যে পার্থক্য –

আদর্শ গ্যাসবাস্তব গ্যাস
1. আদর্শ গ্যাস যে – কোনো চাপ ও উষ্ণতায় PV = nRT সমীকরণ মেনে চলে।1. বাস্তব গ্যাস নিম্নচাপ বা উচ্চ উষ্ণতায় ব্যতীত PV = nRT সমীকরণ মেনে চলেন না
2. আদর্শ গ্যাসের অণুগুলির আয়তনকে অগ্রাহ্য করা হয়।2. বাস্তব গ্যাসের অণুগুলির আয়তন ক্ষুদ্র হলেও তা গ্রাহ্য করা হয়।
3. আদর্শ গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে কোনো আকর্ষণ বল নেই।3. বাস্তব গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ বল আছে।
4. আদর্শ গ্যাসের অণুগুলির শক্তি বলতে শুধুমাত্র গতিশক্তিকে বোঝায়।4. বাস্তব গ্যাসের অণুগুলির শক্তি বলতে গতিশক্তি ও স্থিতি-শক্তির সমষ্টিকে বোঝায়।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের গ্যাসের আচরণ অধ্যায়ে, আমরা গ্যাসের চাপ, আয়তন, এবং তাপমাত্রার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র, এবং গে-লিউস্যাকের সূত্র এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এই সম্পর্কগুলোকে ব্যাখ্যা করে।

এই অধ্যায়ে সংক্ষিপ্ত এবং দীর্ঘ উভয় ধরণের প্রশ্নই থাকে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলোতে সাধারণত সংজ্ঞা, সূত্র, বা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। দীর্ঘ প্রশ্নগুলোতে তত্ত্বের প্রয়োগ, সমস্যা সমাধান, এবং বিশ্লেষণात्मक চিন্তাভাবনার দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য, এই অধ্যায়ের সকল ধারণা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া এবং সূত্রগুলো মুখস্ত করে রাখা জরুরি। নিয়মিত অনুশীলন এবং বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধানের মাধ্যমে আপনি আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন। মনে রাখবেন, নিয়মিত পরিশ্রমের মাধ্যমেই আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer