মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

Mrinmoy Rajmalla

এ আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের পরিবেশের জন্য ভাবনা অধ্যায়ের দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর এর বেশ কিছু প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। যেগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের জন্য ভাবনা অধ্যায়ের দীর্ঘ  প্রশ্নোত্তর গুলি আপনি যদি ভালো করে দেখে মুখস্ত করে যান, তাহলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পরিবেশের জন্য ভাবনা অধ্যায়ের দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর থেকে যা প্রশ্নই আসুক না কেন আপনি সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।

Table of Contents

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরগুলির ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, উষ্ণতা ও চাপের পরিসর এবং গ্যাসীয় উপাদানগুলি উল্লেখ করো।

অঞ্চলভূ-পৃষ্ট থেকে উচ্চতাউচ্চতা পরিসর (°C)চাপের পরিসর (atm)গ্যাসীয় উপাদান
ট্রোপোস্ফিয়ার0-10km+15° থেকে -60°C1N2, O2, CO2, H2O(g)
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার11-45 km-60° থেকে 0°C10-1 থেকে 10-2N2, 02, 03
মেসোস্ফিয়ার46-85 km0° থেকে -100°C10-3 থেকে 10-4N2, 02, O2+, NO+
থার্মোস্ফিয়ার86-500 km-100 থেকে 1200°C10-5 থেকে 10-7O2+, O+, NO+
এক্সোস্ফিয়ার500-1500 km>1200°C _H2, He

ট্রোপোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

ট্রোপোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –

  1. এটি ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর যা ভূ- পৃষ্ঠ থেকে 10 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  2. এই স্তরের বায়ুতে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, মেঘ ইত্যাদির উপস্থিতির জন্য ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটে। তাই এই অঞ্চলকে ক্ষুখমণ্ডল বলা হয়।
  3. ট্রোপোস্ফিয়ার ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতা ও জলচক্র নিয়ন্ত্রণ করে। O2, CO2, N2 জলীয় বাষ্প প্রভৃতি প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি এই স্তরের বায়ুতেই বিদ্যমান।
  4. উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই স্তরের উষ্ণতা ক্রমশ হ্রাস পায় এবং এই স্তরের উপরের দিকের উষ্ণতা প্রায় – 56°C।
  5. ট্রোপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংযোগস্থলে যে অঞ্চলে উচ্চতার সঙ্গে উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটে না, তাকে ট্রোপোপজ বলে।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –

  1. স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরটি ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরিভাগ থেকে
    প্রায় 45 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  2. এই স্তরের মধ্য দিয়ে যতই ওপরের দিকে ওঠা যায় ততই উষ্ণতা বাড়তে থাকে। 25 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা বৃদ্ধির হার সামান্য হলেও এর ঊর্ধ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় এবং সর্বোচ্চ উচ্চতায় তা 0°C – এ এসে পৌঁছায়।
  3. এই স্তরের বায়ু প্রায় মেঘমুক্ত, সামান্য ধূলিকণা থাকলেও জলকণা থাকে না। ফলে এই স্তর ঝড়, বৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত। তাই এই স্তরের নাম শান্তমণ্ডল। দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটপ্লেনগুলি এই স্তরের মধ্য দিয়ে চলাচল করে।
  4. ওজোনমন্ডল বা ওজোনোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত। ওজোন গ্যাস সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। ওজোন গ্যাসের স্তর সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষা করে।
  5. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্যাটোপজ। এই অংশে বায়ুর ঘনত্ব কম এবং উষ্ণতা প্রায় স্থির থাকে।

মেসোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

মেসোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –

  1. ভূ-পৃষ্ঠের সাপেক্ষে 45 কিমি থেকে 85 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অঞ্চল জুড়ে মেসোস্ফিয়ার বিস্তৃত।
  2. উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই স্তরের উষ্ণতা কমতে কমতেপ্রায় ৪5 কিমি উচ্চতায় সর্বনিম্ন (-100°C) হয়। মেসোস্ফিয়ারই বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর।
  3. এই স্তরে কিছু জলীয় বাষ্প অনুপ্রবেশ করায় মেঘের সৃষ্টি হয়। কিন্তু অত্যধিক ঠান্ডার জন্য জলীয় বাষ্প বরফ কণায় পরিণত হয়।
  4. এই স্তরে বায়ুর চাপ খুবই কম এবং এই চাপ উষ্ণতা বৃখির সাথে ক্রমশ আরও কমতে থাকে।
  5. এই স্তরে সামান্য পরিমাণ N2, O2, O2+, NO+ উপস্থিত থাকে।
  6. মেসোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ অংশে যে অঞ্চলে উষ্ণতা স্থির থাকে তার নাম মেসোপজ। এই অংশের উষ্ণতা প্রায় -92°C।

থার্মোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

থার্মোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  1. এই স্তরটি ভূ-পৃষ্ঠের সাপেক্ষে ৪5 কিমি থেকে 500 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  2. উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায় বলে এই স্তরটিকে থার্মোস্ফিয়ার বলে। সূর্য থেকে বিকিরিত কসমিক রশ্মি এবং অন্যান্য রশ্মির প্রভাবে এই স্তরের উষ্ণতা বেড়ে প্রায় 1200°C হয়।
  3. প্রখর সূর্যতাপের কারণে এই স্তরের গ্যাসীয় উপাদানগুলি আয়নিত অবস্থায় (O2, O+, NO+) থাকে, তাই এই স্তরকে আয়নোস্ফিয়ার বলে।
  4. এই অংশে বাতাস প্রায় নেই, তাই আকাশ কালো দেখায়। থার্মোস্ফিয়ারে মেরুপ্রভা (aurora) সৃষ্টি করে।
  5. থার্মোস্ফিয়ারের নীচের অংশকে কেনেলি হেভিসাইড স্তর বলে। এই স্তর বেতার তরঙ্গকে প্রতিফলিত করে।

স্থলবায়ুর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।

সাধারণত রাত্রিবেলা জলভাগের তুলনায় উপকূল অঞ্চলের স্থলভাগ দ্রুত হারে তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। ফলে মধ্যরাত্রি থেকে ভোররাত্রি পর্যন্ত স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি উষ্ণ থাকে। এর ফলে সমুদ্রের উপরিভাগ সংলগ্ন গরম বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং স্থলভাগের ঠান্ডা ও ভারী বায়ু সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। একেই স্থলবায়ু বলে। এই বায়ু সারারাত ধরে স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে প্রবাহিত হলেও ভোরবেলা এই বায়ুর প্রাবল্য সর্বাধিক হয়। সুতরাং, স্থলবায়ু বায়ুর পরিচলন স্রোতের একটি প্রাকৃতিক দৃষ্টান্ত।

সমুদ্রবায়ুর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।

জলের আপেক্ষিক তাপ অনেক বেশি হওয়ায়, দিনের বেলা সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ অনেক তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়। ফলে স্থলভাগের বায়ু গরম ও হালকা হয়ে ওপরের দিকে ওঠে। এজন্য স্থলভাগের উপর বায়ুচাপ কমে যায়। তখন সমুদ্র-সংলগ্ন অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও ভারী বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। একেই সমুদ্রবায়ু বলে। এই বায়ু দিনের বেলা প্রবাহিত হয় এবং সন্ধ্যার দিকে এই বায়ুপ্রবাহের তীব্রতা বাড়ে।

ঝড় কীভাবে সৃষ্টি হয়?

বায়ু উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। কোনো কারণে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন কোনো অঞ্চলের বায়ু অধিক উত্তপ্ত হলে ওই অঞ্চলের বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। ফলে ওই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন আশেপাশের উচ্চচাপ অঞ্চলের বায়ু ওই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। বায়ুচাপের পার্থক্য যত বেশি হয়, বায়ুচাপ সমান করার জন্য আশেপাশের উচচ্চাপ অঞ্চল থেকে বায়ু তত বেশি গতিবেগে ওই অঞ্চলের দিকে ছুটে এসে ঝড়ের সৃষ্টি করে।

ওজোন স্তর কীভাবে সৃষ্টি হয়?

সূর্য থেকে অনবরত যে বিকিরণ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় তার সঙ্গে অতিবেগুনি বা আল্ট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মিও আসছে। এই অতিবেগুনি রশ্মিকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুসারে তিনভাগে ভাগ করা যায় যথা, UV-A (তরঙ্গদৈর্ঘ্য – 315-400 nm), UV-B (তরঙ্গদৈর্ঘ্য -280-315 nm) ও UV-C (তরঙ্গদৈর্ঘ্য – 100-280 mm)। দেখা গেছে, এই অতিবেগুনি রশ্মির মধ্যে সবচেয়ে কম যাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অর্থাৎ UV-C এবং খানিকটা UV-B স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত অক্সিজেন অণুকে ভেঙে অক্সিজেন পরমাণুতে পরিণত করে। এই পারমাণবিক অক্সিজেন আণবিক অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে ওজোন (O3) অণু গঠন করে। শেষ ধাপের বিক্রিয়াটি প্রচন্ড তাপ-উৎপাদক হওয়ায় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়বীয় তাপমাত্রা ট্রোপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশের তুলনায় বেড়ে যায়।

ওজোন স্তর কীভাবে সৃষ্টি হয়

এখানে চিহ্নটি উত্তেজিত অবস্থা বোঝাচ্ছে। M হল একটি নিরপেক্ষ সংঘর্ষকারী উপাদান (O2 বা N2), যার সঙ্গে সংঘর্ষে 03 – এর অতিরিক্ত শক্তি অপসারিত হয়।।

প্রাকৃতিকভাবে ওজোন স্তর কীভাবে বিনষ্ট হয়? ওজোন স্তরের সাম্যাবস্থা বলতে কী বোঝ?

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ওজোন অণু তৈরি হওয়ার সাথে সাথে বিশ্লিষ্ট হতেও শুরু করে। অতিবেগুনি রশ্মির যে অংশের তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব বেশি (UV-A, তরঙ্গদৈর্ঘ্য – 315-400 nm) তারা ওজোন অণুকে ভেঙে আবার অক্সিজেন অণু (O2) ও অক্সিজেন পরমাণু সৃষ্টি করে।

ওজোন স্তর কীভাবে বিনষ্ট হয়

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তরে একদিকে ওজোন অণুর উৎপাদন ও অন্যদিকে ওজোন অণুর বিয়োজন চক্রাকারে চলতে থাকে এবং একটি গতিশীল সাম্যের সৃষ্টি হয়। বায়ুমণ্ডলে প্রতিদিন প্রায় 350000 মেট্রিক টন ওজোন সৃষ্টি এবং ধ্বংস হয়। এই সাম্যাবস্থার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ স্থির থাকে।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন উপকারী কিন্তু ট্রোপোস্ফেরিক ওজোন আমাদের পক্ষে ক্ষতিকারক – ব্যাখ্যা করো।

সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির বেশিরভাগ অংশ স্ট্যাটোস্ফেরিক ওজোন স্তরে শোষিত হয়, কারণ এই রশ্মি ওজোনের উৎপাদন ও বিয়োজনে ব্যয়িত হয়। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তর না থাকলে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির সমগ্র অংশ পৃথিবীতে পৌঁছে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন বায়ুকে এত উত্তপ্ত করত যে স্থল ও জলভাগের সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ত। কিন্তু ট্রোপোস্ফিয়ারে অবস্থিত ওজোন গ্রিনহাউস গ্যাসরূপে কাজ করে (গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে অবদান প্রায় 7-8%)। গ্রিনহাউসের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন অংশের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাবে, সাইক্লোন, সুপার সাইক্লোন ও টর্নেডোর মতো ঝড়গুলি আরও বিধ্বংসী হবে। জীবকুল উচ্চ-উষ্ণতা সহ্য করতে না পেরে বিলুপ্ত হবে, ফলে ইকোসিস্টেম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ধ্বংসের পেছনে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (ফ্রেয়ন) জাতীয় যৌগগুলির ভূমিকা আলোচনা করো।

ক্লোরোফ্লুরোকার্বন যৌগগুলি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তর ধ্বংসে অনুঘটকের কাজ করে। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে CFC বিয়োজিত হয়ে সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু উৎপন্ন হয়। এই সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু ওজোন স্তরের O3, গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে অক্সিজেন ও ক্লোরিন মনোক্সাইড (CIO) উৎপন্ন করে। এই ক্লোরিন মনোক্সাইড আবার ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে O2 অণু ও সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু উৎপন্ন করে। উৎপন্ন ক্লোরিন পরমাণু পুনরায় O3, – র সাথে বিক্রিয়া করে। প্রক্রিয়াটি এইভাবে চক্রাকারে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে। এর ফলে ওজোন স্তর ক্রমশ পাতলা হতে থাকে। একটি সক্রিয় CI – পরমাণু লক্ষাধিক ওজোন অণুর বিয়োজন ঘটাতে পারে।

ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (ফ্রেয়ন)

সুপারসনিক জেটপ্লেন ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য কীভাবে দায়ী?

অথবা, ওজোন স্তরে নাইট্রোজেনের অক্সাইড যৌগগুলির উৎস কী? এগুলি কীভাবে ওজোন স্তরের ক্ষতি করে?

অতি দ্রুতগামী সুপারসনিক এরোপ্লেনগুলি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্য দিয়ে চলাচল করার সময় প্রচুর পরিমাণে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) গ্যাস নির্গত করে। NO – র সাথে ওজোন গ্যাসের বিক্রিয়ায় NO2 (নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড) ও O2 উৎপন্ন হয়। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে O3 ও O2 – র বিয়োজন ঘটে সর্বদা অক্সিজেন পরমাণু সৃষ্টি হয়। NO2 অণু এই অক্সিজেন পরমাণুর সাথে বিক্রিয়া করে পুনরায় NO – তে রূপান্তরিত হয়। এভাবে NO – র পরিমাণ কমে না, বরং O3 অণুগুলি ক্রমাগত বিয়োজিত হতে থাকে এবং ওজোন স্তরে ক্ষয় সাধিত হয়।

সুপারসনিক জেটপ্লেন ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য কীভাবে দায়ী

পরিবেশের ওপর ওজোন গহ্বর সৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাবগুলি আলোচনা করো।

জলবায়ুর ওপর প্রভাব – বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অন্তর্গত ওজোন স্তর সূর্যালোকের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে নেয়। অতিবেগুনি রশ্মি এই স্তরে শোষিত না হলে ভূপৃষ্ঠে সরাসরি আপতিত হবে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী ক্রমাগত উত্তপ্ত হবে ও মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়ে জলের তলায় নিমজ্জিত হবে।

মানুষের ওপর প্রভাব – অতিবেগুনি রশ্মি মানুষের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এর প্রভাবে ত্বকে ক্যানসার হয় ও চোখে অসময়ে ছানি পড়ে। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এই রশ্মির প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে ধোঁয়াশা সৃষ্টির প্রবণতা বাড়ে ও এর ফলে মানুষের শ্বাসকার্যে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ব্রংকাইটিস, শ্বাসনালির প্রদাহ ও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়।

উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও জীবাণুর ক্ষেত্রে প্রভাব – অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছালে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে ও শস্যের উৎপাদন হ্রাস পাবে। সমুদ্রে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের সালোকসংশ্লেষ কমে যাবে, ফলে যেসব সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন খেয়ে জীবনধারণ করে তাদেরও বিনাশ ঘটবে। অনেক সামুদ্রিক জীব এবং জীবাণু অতিবেগুনি রশ্মি সহ্য করতে পারে না, ফলে সামুদ্রিক জীব ও মাছের সংখ্যা হ্রাস পাবে। সামগ্রিকভাবে এর ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অনভিপ্রেত পরিবর্তন ঘটবে।

মন্ট্রিল প্রোটোকল কী? এই প্রোটোকলের অঙ্গীকারগুলি কী ছিল?

ওজোন স্তরের ক্ষয় হ্রাসের জন্য 1987 সালে কানাডার মন্ট্রিলে একটি বহুদেশীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি মন্ট্রিল প্রোটোকল নামে পরিচিত।

মন্ট্রিল গ্রোটোকলের অঙ্গীকারসমূহ –

  • 1995 সালের মধ্যে CFC – এর ব্যবহার 50% কমানো হবে।
  • 2000 সাল নাগাদ CFC – এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে।
  • ক্লোরিন জাতীয় গ্যাসের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমানো হবে ও 2000 সাল নাগাদ সম্পূর্ণ বন্ধ হবে।

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ও কৃষিক্ষেত্রের ওপর ওজোন স্তর ধ্বংসের কীরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হয়?

ওজোন স্তরের ধ্বংসের ফলে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে আপতিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন অংশের উষ্ণতা বৃদ্ধি করবে। এর পরিণাম হিসাবে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে শস্য উৎপাদনের হার কমে যাবে, মাটির আর্দ্রতা কমে গিয়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সমুদ্রে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া যথেষ্ট ব্যাহত হবে। ফলে যেসব সামুদ্রিক প্রাণী ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন খেয়ে জীবনধারন করে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। আবার অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে সমুদ্রের অনেক অণুজীব বা জীবের বিনাশ ঘটবে। ফলে সামুদ্রিক জীব ও মাছের উৎপাদন ক্রমশ হ্রাস পাবে, সামগ্রিকভাবে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের গঠন ও সংযুতির পরিবর্তন ঘটবে।

বায়ুমণ্ডলে CO2 গ্যাসের উৎস এবং গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে গ্যাসটির ভূমিকা সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের উৎস –

  • কলকারখানা ও মোটরগাড়িতে জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির যথেচ্ছ দহনের ফলে প্রচুর পরিমাণে CO2, বায়ুতে যুক্ত হচ্ছে। প্রতিবছর মানুষ প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন টন কার্বন জ্বালানি ব্যবহার করে ও তুল্য পরিমাণ CO2 বাতাসে মুক্ত হয়। এই CO2 সালোকসংশ্লেষের মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে বায়ুতে CO2 এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • শিল্পক্ষেত্রে বিশেষত সিমেন্ট উৎপাদন শিল্পে প্রচুর পরিমাণ CO2 উৎপন্ন হয়ে বায়ুতে মেশে।
  • ক্রমাগত অরণ্য নিধনের ফলে উদ্ভিদ দ্বারা CO2 শোষণের পরিমাণও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে CO2 এর পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে ভূমিকা –

গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মধ্যে বায়ুমণ্ডলে CO2 – এর পরিমাণ সর্বাধিক, তাই পৃথিবী দ্বারা বিকিরিত তাপকে আটকে দেওয়ার ক্ষেত্রে CO2 সর্বপ্রধান ভূমিকা পালন করে। গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে CO2 এর অবদান 50 শতাংশের বেশি।

বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের উৎস ও গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে গ্যাসটির ভূমিকা সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের উৎস –

  • ধানক্ষেত ও অন্যান্য কর্দমাক্ত জলাভূমিতে মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার (যেমন – মিথানোব্যাকটেরিয়াম, মিথানোকক্কাস ইত্যাদি) প্রভাবে গাছপালার পচনের ফলে, গবাদিপশুর মলমূত্রের পচনের ফলে এবং বায়ুর অর্বতমানে মৃত জীবজন্তুর পচনের ফলে মিথেন উৎপন্ন হয়।
  • বিভিন্ন জৈব বর্জ্য পদার্থ, তৈলখনি প্রভৃতি মিথেন গ্যাসের উৎস।

গ্রিনহাউস প্লডান সৃষ্টিতে ভূমিকা –

প্রতি অণু মিথেনের তাপ আটকে দেওয়ার ক্ষমতা, প্রতি অণু CO2 – এর তুলনায় প্রায় 25 গুণ বেশি। তবে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ CO2 এর তুলনায় অনেক কম হওয়ায় গ্রিনহাউস প্রভাবে এর অবদান প্রায় 16-20 শতাংশ।

বায়ুমণ্ডলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের উৎস এবং গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে গ্যাসটির ভূমিকা সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

বায়ুমণ্ডলে ক্লোরোফ্লোরোকার্বোনের উৎস –

  • ক্লোরোফ্লুরোকার্বন যৌগগুলি বিভিন্ন ধরনের হিমায়ক যন্ত্রে (যেমন – রেফ্রিজারেটরে) হিমায়ক দ্রব্যরূপে!
  • তরল প্রসাধনী দ্রব্যের স্প্রে করার জন্য সহায়ক দ্রব্যরূপে, ফোমজাতীয় পদার্থকে ফাঁপিয়ে তোলার কাজে ও
  • ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করার জন্য দ্রাবকরূপে ব্যবহৃত হয়। এইসব ব্যবহারিক ক্ষেত্রগুলি থেকে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন যৌগগুলি বায়ুতে মুক্ত হয়।

গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে ভূমিকা –

ক্লোরোফ্লোরোকার্বোন অণুগুলির ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা CO₂ অণুর তুলনায় 15,000-20,000 গুণ বেশি। এই যৌগগুলি অত্যন্ত স্থায়ী ও বায়ুতে দীর্ঘকাল থেকে যায়। গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এই যৌগগুলির অবদান 13-18 শতাংশ।

বায়ুমণ্ডলে নাইট্রাস অক্সাইডের উৎস এবং গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে গ্যাসটির ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করো।

বায়ুমণ্ডলে নাইট্রাস অক্সাইডের উৎস –

  • জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে যথেষ্ট পরিমাণ নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
  • দাবাগ্নির ফলেও প্রচুর পরিমাণ নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
  • কৃষিজমিতে ব্যবহৃত নাইট্রোজেন-ঘটিত কৃত্রিম সারের উপর জীবাণুর ক্রিয়াতেও নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন হয়। সার শিল্প ও নাইলন উৎপাদন কারখানাগুলি থেকে নাইট্রাস অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে মুক্ত হয়।

গ্রিনহাউস প্রডাব সৃষ্টিতে ভূমিকা –

প্রতি অণু নাইট্রাস অক্সাইডের (N2O) তাপ আটকে দেওয়ার ক্ষমতা প্রতি অণু CO2 – এর প্রায় 200 গুণ। কিন্তু এর পরিমাণ বায়ুতে CO2 – এর তুলনায় কম বলে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর অবদান 4-5

গ্রিনহাউস প্রভাবের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি আলোচনা করো।

গ্রিনহাউস প্রভাবের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি নিম্নরূপ –

  1. ট্রোপোস্ফিয়ার ও ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ পৃথিবীর উষ্ণতা অন্ততপক্ষে 2-4° সেলসিয়াসের মতো বৃদ্ধি পাবে।
  2. ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের (গ্রিনল্যান্ড ও আন্টার্কটিকা) সম্বিত বরফের স্তূপগুলি গলে যাবে এবং সমুদ্রে জলস্ফীতি ঘটবে। ফলে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ফিলিপিন্স প্রভৃতি সমুদ্রতীরবর্তী দেশের উপকূলভাগের বিরাট এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাবে। সমুদ্রের লবণাক্ত জলের প্রভাবে উর্বর কৃষিভূমিগুলি চাষের অনুপযুক্ত হবে, এর পরিণতি হিসেবে ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে।
  3. ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে উত্তর গোলার্ধের মধ্য অক্ষাংশের দেশগুলিতে গ্রীষ্মকালে ঘন ঘন খরা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকা ও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের উৎপাদনশীল অঞ্চলগুলিতে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে।
  4. উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সুপার সাইক্লোন বা টর্নেডো ইত্যাদি আরও বিধ্বংসী হবে।
  5. উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাবানলের দ্বারা বনভূমি ধ্বংসের আশঙ্কা বাড়বে।
  6. জীবকুল উচ্চ-উয়তা সহ্য করতে না পেরে বিলুপ্ত হবে, ফলে ইকোসিস্টেম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জলাভূমি অঞ্চলে উদ্ভিদের পচন বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক পরিমাণে মিথেন গ্যাস নির্গত হবে।

গ্রিনহাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উয়ায়ন কমানোর সম্ভাব্য উপায়গুলি আলোচনা করো।

সারা বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার প্রশমিত করার জন্য কিছু উপায় নীচে উল্লেখ করা হল –

  1. কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে বায়ুমণ্ডলে CO2 – এর অতিরিক্ত জোগান কমাতে হবে।
  2. চোরাই কাঠ-কাটা বন্ধ করতে হবে এবং বনভূমিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
  3. বনসৃজন করতে হবে, ফলে গাছপালা বায়ুমণ্ডল থেকে অধিক পরিমাণে CO, শোষণ করবে (তাদের খাদ্যপ্রস্তুতির জন্য)।
  4. অপ্রচলিত শক্তি, যেমন-সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
  5. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) -এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

জ্বালানির তাপনমূল্য বলতে কী বোঝ? কয়েকটি কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় জ্বালানির তাপনমূল্যের ধারণা দাও।

জ্বালানির তাপনমূল্য (Calorific value): 1 kg ভরের কোনো কঠিন বা তরল জ্বালানির সম্পূর্ণ দহনে যে পরিমাণ তাপশক্তি পাওয়া যায় সেটি হল ওই জ্বালানির তাপনমূল্য। তাপনমূল্যের SI একক ] kg1

কিছু পরিচিত জ্বালানির তাপনমূল্য নীচে উল্লেখ করা হল –

জ্বালানির প্রকারভেদজ্বালানির নামতাপনমূল্য (kj Kg-1)
কঠিন জ্বালানিগোবরের খুঁটে
কাঠ
কয়লা
6000-8000
17000-22000
25000-33000
তরল জ্বালানিকেরোসিন
পেট্রোল
45000
47000
গ্যাসীয় জ্বালানিবায়োগ্যাস
LPG (বিউটেন)
প্রাকৃতিক গ্যাস (মিথেন)
35000-40000
55000
55000

প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।

প্রচলিত শক্তির উৎসঅপ্রচলিত শক্তির উৎস
1. প্রচলিত শক্তির উৎসগুলি বর্তমানে অধিক ব্যবহৃত হলেও এগুলি অনবীকরণ যোগ্য। ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে এগুলি নিঃশেষিত হতে পারে। যেমন – কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি।1. অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলি বর্তমানে কম ব্যবহৃত হলেও এগুলি প্রবহমান সম্পদ অর্থাৎ বহুল ব্যবহারেও নিঃশেষিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা, নেই, যেমন – বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি, জোয়ারভাটার শক্তি, ভূ-তাপশক্তি ইত্যাদি।
2. প্রচলিত শক্তির উৎসগুলির ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয়।2. অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলির ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় না।
3. প্রচলিত শক্তির উৎসগুলির বণ্টন পৃথিবীব্যাপী সমান নয়।3. অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলি সমগ্র পৃথিবীতে মোটামুটি সমানভাবে বণ্টিত।
4. প্রচলিত শক্তি কেন্দ্রগুলির নির্মাণ ব্যয় কিছুটা কম, কিন্তু শক্তির ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় বেশি।4. অপ্রচলিত শক্তি কেন্দ্রগুলির নির্মাণ ব্যয় কিছুটা বেশি হলেও শক্তির ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় কম।
5. প্রচলিত শক্তির উৎসগুলি থেকে নানাবিধ উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়। (যেমন – কয়লা থেকে স্যাকারিন, বেঞ্জল, আলকাতরা প্রভৃতি)।5. অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলি থেকে তেমন প্রয়োজনীয় কোনো উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায় না।
6. প্রচলিত শক্তির উৎসগুলি ব্যবহারের প্রযুক্তি সহজলভ্য।6. অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলি ব্যবহারের প্রযুক্তি সহজলভ্য নয়।

জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলি উল্লেখ করো।

জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণ করা বিশেষ প্রয়োজন, কারণ –

  1. জীবাশ্ম জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এর ভান্ডার ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে জ্বালানির অভাবে মানব সভ্যতার সমৃদ্ধি থমকে যেতে পারে।
  2. জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়।
  3. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ হ্রাস পাবে, ফলে বিশ্ব উস্নায়নের মাত্রা কমবে।
  4. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানির সঞ্চয় করে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে তারা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির নতুন উৎস সন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাবে।

স্থিতিশীল উন্নয়নের উদ্দেশ্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

স্থিতিশীল উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ-

  1. সামাজিক বিকাশ – সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যেসব সামাজিক বিধিনিষেধ, কুসংস্কার, ভ্রান্তধারণা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেগুলিকে বিলোপ করা।
  2. অর্থনৈতিক উন্নয়ন – অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি ছাড়া জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটানো যায় না, কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হয় না, দেশের আর্থিক বুনিয়াদ সুদৃঢ় হয় না। তাই স্থিতিশীল উন্নয়নের অন্যতম লক্ষ্য হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
  3. সাংস্কৃতিক উন্নয়ন – বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম, কলা, আইন, বিচার-ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়, সভ্যতার উৎকর্ষ বাড়ায় এবং প্রাকৃতিক ও মানবিক বাধাগুলিকে দূর করে। তাই সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটানো স্থিতিশীল উন্নয়নের একটি প্রধান উদ্দেশ্য।
  4. বাস্তুতান্ত্রিক ক্রমোন্নয়ন – পৃথিবীর সজীব উপাদান (যেমন – উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষ) এবং জড় উপাদান (যেমন – জল, বায়ু, মাটি ইত্যাদি) – এর মধ্যে সম্পর্ক চিরন্তন এবং এরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। তাই স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণায় পরিবেশের এই সজীব ও জড় উপাদানগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি হলে তবেই মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে।
  5. ভৌগোলিক অবস্থার উন্নতি – পৃথিবীর যেসব স্থানে উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ রয়েছে সেখানেই মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। ভৌগোলিক অবস্থার অবনতি হলে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তাই স্থিতিশীল উন্নয়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হল মানুষের পারিপার্শ্বিক ভৌগোলিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো।

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সার্বিক উন্নতির জন্য স্থিতিশীল উন্নয়নকে একান্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে কেন?

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষের সার্বিক উন্নতির জন্য স্থিতিশীল উন্নয়ন একান্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ –

  1. স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্য হল পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতি না করেই পরিবেশের সম্পদ ব্যবহারে সক্ষম হওয়া। এর ফলে শুধু বর্তমান প্রজন্মই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও সম্পদের যোগান অটুট থাকবে এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের সুফল আগামী কয়েক প্রজন্ম ধরে ভোগ করা সম্ভব হবে।
  2. স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণায় শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিই নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বাস্তুতান্ত্রিক ও ভৌগোলিক উন্নয়নের ওপরেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
  3. স্থিতিশীল উন্নয়নে মানুষের বাস্তব অবস্থার উন্নতির জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আবার উন্নয়নের যেসব পদ্ধতি পরিবেশ দূষণ ঘটায়, পারিপার্শ্বিকের ক্ষতিসাধন করে, স্থিতিশীল উন্নয়ন সেগুলিকে পরিহার করার শিক্ষা দেয়।
  4. যে উন্নয়ন পদ্ধতি মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করে তা পরিত্যাগ করে যে উন্নয়ন সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে তার শিক্ষা দেওয়াই স্থিতিশীল উন্নয়নের ভিত্তি।
  5. দুর্লভ ও ক্রমহ্রাসমান প্রাকৃতিক সম্পদের পরিবর্তে বিকল্প উৎসের সন্ধান ও তার ব্যবহার বাড়াতে স্থিতিশীল উন্নয়নের নীতি জনগণকে উৎসাহিত করে।

সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধা কী কী?

সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি নিম্নরূপ –

  1. সৌরশক্তি অফুরন্ত ও পুনর্নবীকরণযোগ্য। সূর্যের আলো পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিকদের মতে পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা সৌরশক্তির সাহায্যে পূরণ করা সম্ভব হবে।
  2. সৌরশক্তির ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় না। জীবাশ্ম জ্বালানিগুলি (যেমন – কয়লা, খনিজ তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস) থেকে শক্তি উৎপাদনের সময় কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি নির্গত হয় যা বিশ্বব্যাপী উয়করণের মূল কারণ। তাই সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশের সংরক্ষণ ও ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে।
  3. সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য খুব কম পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হয়। তবে সৌরকোশ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য অনেকখানি জায়গার প্রয়োজন হয়।
  4. স্বল্পবসতিযুক্ত অঞ্চলে এবং যেসব অঞ্চলে সারাবছর পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া যায় সেখানে এই শক্তি উৎপাদন খুবই কার্যকারী।
সোলার সেল

সৌরশক্তিকে কী কী কাজে ব্যবহার করা যায়?

  1. শস্য, ফলমূল, কাঠ ও অন্যান্য পদার্থ শুষ্ক করতে।
  2. শীতপ্রধান অঞ্চলে ঘর গরম করতে এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনে জল গরম করতে।
  3. সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরির ক্ষেত্রে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করতে।
  4. সোলার কুকার-এর সাহায্যে রান্না করার কাজে।
  5. রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলিকে আলোকিত করতে সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয়।
  6. এছাড়া কৃত্রিম উপগ্রহে শক্তির প্রধান উৎসরূপে, বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র ও বহু দূরবর্তী রিলে স্টেশনে, ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেমে, ক্যালকুলেটর ও খেলনাতে সৌরকোশ ব্যবহৃত হয়।
সোলার কুকার

সৌরশক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

সৌরশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত অসুবিধাগুলির উল্লেখ করা যায় –

  1. সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য যে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন তার অভাবে অনুন্নত দেশগুলিতে এই শক্তি খুবই কম উৎপাদিত হয়।
  2. সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য সৌরকোশ বসানোর প্রাথমিক খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি। এই কারণে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই শক্তির উৎপাদন খুবই কম হয়।
  3. শীতল জলবায়ু অঞ্চলে এবং মেঘাচ্ছন্ন দিনে যে পরিমাণ সূর্যালোক ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়, সেই সূর্যালোকের সাহায্যে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না।
  4. সৌরশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত বলে এগুলি শুধুমাত্র স্থানীয় অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
  5. পৃথিবী গোলকাকার আকৃতির হওয়ায় পৃথিবীর সর্বত্র সূর্যের আলো সমানভাবে পৌঁছায় না। এছাড়া রাত্রে সৌরবিকিরণ অনুপস্থিত থাকে। আবার কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বছরের সবসময় সৌরবিকিরণের তীব্রতা সমান হয় না। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সৌরশক্তি উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ নেই।

ফোটো-ভোল্টায়িক সেল কী?

প্রথম ফোটো-ভোল্টায়িক কোশ 1877 সালে তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু তার কর্মদক্ষতা ছিল মাত্র 0.6%। ওই কোশে সেলেনিয়াম ধাতু ব্যবহার করা হয়েছিল। 1954 সালে আমেরিকার ‘বেল ল্যাবরেটরিস্’ প্রথম ‘সিলিকন সোলারসেল’ তৈরি করেছিল যার কর্মদক্ষতা ছিল 5%। বর্তমানে একাধিক স্তরযুক্ত সিলিকন সোলারসেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে যা দৃশ্যমান এবং অবলোহিত উভয় প্রকার সৌরকিরণ থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। এর ফলে সৌরকোশের দক্ষতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকগুলি সৌরকোশ একত্রে কাজ করলে তাকে সোলার প্যানেল (solar panel) বলে।

বায়ুশক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

বায়ুশক্তি ব্যবহারে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাওয়া যায় –

  1. বায়ুশক্তি পুনর্নবীকরণযোগ্য, প্রবহমান ও অক্ষয়ি শক্তিসম্পদ, বায়ুশক্তির ক্রমাগত ব্যবহারেও শক্তি সংকট দেখা যাবে না।
  2. বায়ুশক্তি উৎপাদনের প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি হলেও নিয়মিত ব্যবহারের খরচ অত্যন্ত কম। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় ছাড়া বায়ুকল চালানোর জন্য অন্য কোনো ব্যয় হয় না।
  3. এই শক্তির ওপর নির্ভরশীল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে খুব কম সময় লাগে।
  4. বায়ুশক্তি উৎপাদনের ফলে বায়ুমণ্ডলে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান মুক্ত হয় না।
  5. বায়ুশক্তি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি যথেষ্ট সহজলভ্য।

বায়ুশক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

বায়ুশক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি নিম্নরূপ –

  1. বায়ুশক্তি উৎপাদনের ব্যয় প্রাথমিকভাবে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় অপেক্ষা অধিক। তবে একটি বৃহৎ টারবাইনের পরিবর্তে একাধিক ক্ষুদ্র আকৃতির টারবাইনের ব্যবহার করে বায়ুশক্তি উৎপাদনের খরচ অপেক্ষাকৃত কমানো যায়। তাপবিদ্যুৎ বা জলবিদ্যুতের তুলনায় বায়ুশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম।
  2. বায়ুশক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত টারবাইনগুলি ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক সিগন্যালকে দুর্বল করে দেয় যা টেলিভিশন সম্প্রচারে বিঘ্ন ঘটায়।
  3. বায়ুশক্তি উৎপাদনের সময় যে উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ-তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তা শব্দদূষণ ঘটায়।
  4. বায়ুর গতিবেগ ও দিক পরিবর্তিত হলে বায়ুশক্তি উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
  5. কেবলমাত্র উপকূল অঞ্চল, মরুভূমি অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল প্রভৃতি সীমাবদ্ধ কয়েকটি অঞ্চলেই বায়ুশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।

জোয়ার-ভাটার শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি কী কী?

জোয়ার-ভাটার শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি নিম্নরূপ –

  1. জোয়ার-ভাটার শক্তি প্রবহমান, পুনর্ভব এবং অক্ষয়িষু সম্পদ অর্থাৎ ব্যবহার করলে নিঃশেষিত হয় না।
  2. জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদনের পৌনঃপুনিক খরচ অনেক কম।
  3. জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিবেশের দূষণ তেমন ঘটে না।
  4. জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলি পরিচালনার জন্য অধিক শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না।

জোয়ার-ভাটার শক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি কী কী?

জোয়ার-ভাটার শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূল অসুবিধাগুলি নিম্নরূপ –

  1. জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদনের জন্য বিশালায়তন কাঠামো নির্মাণ করতে হয় ও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। এজন্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের তুলনায় জোয়ার- ভাটার শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করার ব্যয় অনেক বেশি।
  2. পৃথিবীর যে-কোনো জায়গায় দিনে দুবার জোয়ার ও দুবার ভাটা হয়। তাই উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলির মোট উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র 40 শতাংশ পর্যন্ত জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদন করা যায়।
  3. লাভজনক জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জোয়ার-ভাটার সময় সমুদ্র জলের উচ্চতার পার্থক্য কমপক্ষে 5 মিটার হওয়া প্রয়োজন।
  4. জোয়ার-ভাটার শক্তি উৎপাদনের জন্য নদীর খাঁড়িতে বাঁধ তৈরি করা হয় বলে নদীবাহিত দূষিত ও পচনশীল পদার্থগুলি খাঁড়িতে সম্বিত হয়। এর ফলে জলদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

ভূ-তাপশক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

ভূ-তাপশক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি নিম্নরূপ –

  1. ভূ-তাপশক্তির যোগান অফুরন্ত।
  2. এই শক্তির জোগান অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন অর্থাৎ এই শক্তি 24 ঘণ্টা ধরে সরবরাহ করা সম্ভব।
  3. এই শক্তি সরাসরি ব্যবহার করলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি পরিবেশে মুক্ত হয় না বলে পরিবেশ দূষিত হয় না।

ভূ-স্তাপশক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

ভূ-তাপশক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি নিম্নরূপ –

  1. ভূ-তাপশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
  2. প্রচলিত শক্তিগুলির তুলনায় এই শক্তি উৎপাদনের ইউনিট প্রতি খরচ সামান্য বেশি।
  3. এই শক্তি উৎপাদনের সময় ভূ-অভ্যন্তরের খনিজ পদার্থগুলির দ্বারা ভৌম জলস্তরের দূষণ ঘটতে পারে।
  4. ভূ-তাপশক্তি যেসব অঞ্চলে উৎপাদন করা হয় সেখানকার ভূপৃষ্ঠে অনেক সময় ধস নামে।

বায়োমাস শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

বায়োমাস শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল –

  1. বায়োমাস শক্তি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস।
  2. বায়োমাস থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর পড়ে থাকা জৈব আবর্জনা উত্তম সাররূপে ব্যবহৃত হয়।
  3. বায়োগ্যাস জ্বালানিরূপে ও আলো জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
  4. বায়োমাস থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট

বায়োমাস থেকে উৎপন্ন বায়োগ্যাস ব্যবহারের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

বায়োগ্যাস ব্যবহারের অসুবিধাগুলি নিম্নরূপ –

  1. বায়োগ্যাস দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় উৎপাদন কেন্দ্রের আশেপাশে গন্ধদূষণ সৃষ্টি করে।
  2. বায়োগ্যাস সঞ্চয় করে রাখা লাভজনক নয়। তাই বায়োগ্যাস প্রয়োজন অনুসারে উৎপাদন করতে হয়।
  3. বায়োগ্যাসের সাহায্যে বিপুল পরিমাণে শক্তির যোগান দেওয়া সম্ভব নয়।

গৃহস্থালির বর্জ্য পদার্থ থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়?

1. গৃহস্থালির বর্জ্য পদার্থ থেকে প্রথমে যেসব পদার্থকে পুনর্বার ব্যবহার করা যাবে সেগুলিকে হাতে হাতে পৃথক করে নেওয়া হয়। তড়িৎচুম্বকের সাহায্যে লোহার টুকরো অপসারণ করে জমিয়ে রাখা হয় যাতে বেশি পরিমাণে জমা হলে তাকে পুর্নবার ব্যবহারের জন্য পাঠানো যায়। অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর তৈরি জিনিস, খবরের কাগজ, কার্ডবোর্ড, কাচের বোতল ইত্যাদিকে পৃথক করে নেওয়া হয়।

2. এরপর অবশিষ্ট আবর্জনা একটি চোঙের (hopper) মধ্য দিয়ে চুল্লিতে প্রবেশ করানো হয়। চুল্লির পার্শ্ববর্তী দরজা খুললেই আবর্জনাগুলি চুল্লির দহন কক্ষে প্রবেশ করে। আবর্জনাগুলিকে এরপর গ্যাসীয় জ্বালানির সাহায্যে প্রজ্বলিত করা হয় এবং এগুলির দহনের ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপে চুল্লির ওপরে থাকা ট্যাংকের জল বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্পের দ্বারা উৎপন্ন চাপের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন

বায়োফুয়েল কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকারের উদাহরণ ও ব্যবহার উল্লেখ করো।

বায়োমাস থেকে উৎপন্ন জ্বালানিকে বায়োফুয়েল বলা হয়। বায়োফুয়েল তিন প্রকার, যথা –

  1. কঠিন বায়োফুয়েল
  2. তরল বায়োফুয়েল এবং
  3. গ্যাসীয় বায়োফুয়েল।

কঠিন বায়োফুয়েল – কাঠ, বাঁশ, খড়, গৃহস্থালির আবর্জনা প্রভৃতি কঠিন বায়োফুয়েলের উদাহরণ। এগুলি মূলত গ্রামীণ এলাকায় রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তরল বায়োফুয়েল – বায়োইথানল (ভুট্টা ও আখের ছিবড়ার সন্ধান প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন), বায়োডিজেল (উদ্ভিজ্জ তেল ও ফ্যাটের ট্রান্স-এস্টারিফিকেশনে উৎপন্ন) প্রভৃতি তরল বায়োফুয়েলের উদাহরণ। বায়োইথানল সরাসরি গাড়ির জ্বালানিরূপে অথবা পেট্রোলের সঙ্গে মিশিয়ে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হয়। বায়োডিজেল মূলত শীতপ্রধান দেশে ঘর গরম রাখতে ব্যবহৃত হয়।

গ্যাসীয় বায়োফুয়েল – গোবর গ্যাস গ্যাসীয় বায়োফুয়েলের উদাহরণ। এটি মূলত জ্বালানিরূপে ও আলোক উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। বায়োগ্যাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

কয়লাখনি থেকে কীভাবে মিথেন গ্যাস উত্তোলন করা হয়?

কয়লাখনি থেকে মিথেন গ্যাস উত্তোলনের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা হয় –

কোলবেড মিথেন আহরণ
  1. কয়লা উত্তোলনের আগে লম্বভাবে বা অনুভূমিকভাবে পাথরের স্তরের মধ্যে কয়লাস্তর পর্যন্ত কূপ খনন করা হয়। কয়লাস্তর ভূগর্ভস্থ জল দ্বারা সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকে এবং জলের চাপেই মিথেন গ্যাস কয়লার মধ্যে অধিশোষিত অবস্থায় থাকে।
  2. কয়লার স্তর থেকে পাম্প করে জল তুলে নেওয়া হতে থাকলে জলের চাপ কমে যায় এবং কয়লার মধ্যে অধিশোষিত অবস্থায় থাকা মিথেন মুক্ত হয়।
  3. মুক্ত মিথেন কূপ দিয়ে ওপরে উঠে আসে এবং পাইপলাইনের সাহায্যে এটিকে সংগ্রহ ও সরবরাহ করা যায়।

কয়লাখনি থেকে উত্তোলিত মিথেন গ্যাসকে কোন্ কোন কাজে ব্যবহার করা যায়?

কয়লাখনি থেকে যে গ্যাস উত্তোলন করা হয় তার মধ্যে মিথেনের গাঢ়ত্ব 95% – এর বেশি হয়। এর ফলে এই গ্যাসকে প্রচলিত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্ত হিসেবে সরাসরি পাইপলাইনের সাহায্যে সরবরাহ করা যায়। এই গ্যাসকে নিম্নলিখিত কাজে ব্যবহার করা যায় –

  1. এই গ্যাসকে পাম্প করে পাইপলাইনের সাহায্যে গৃহস্থালিতে ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সরবরাহ করা যায় যার সাহায্যে রান্না করা এবং অন্যান্য তাপপ্রদানের কাজ করা যায়।
  2. শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে টারবাইন ও গ্যাস-ইঞ্জিন চালানোর কাজে প্রচলিত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে কয়লা খনি থেকে প্রাপ্ত মিথেন গ্যাস ব্যবহার করা যায়।
  3. চাপ প্রয়োগে এই গ্যাসকে তরলে পরিণত করে মোটরগাড়ির জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

এই আর্টিকেলটিতে, আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের “পরিবেশের জন্য ভাবনা” অধ্যায়ের দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরগুলির উপর আলোকপাত করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি এই অধ্যায়ের মূল বিষয়গুলি স্পষ্টভাবে ধারণ করে।

এই দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরগুলি ভালোভাবে অনুশীলন করা এবং মুখস্থ করা আপনাকে পরীক্ষায় যেকোনো ধরণের দীর্ঘ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে সাহায্য করবে। কারণ এই প্রশ্নোত্তরগুলিতে জ্ঞানের গভীরতা এবং বিশ্লেষণমূলক চিন্তাভাবনার প্রয়োজন হয়, যা উচ্চমানের উত্তরের জন্য অপরিহার্য।

পরিশেষে, নিয়মিত অনুশীলন এবং এই দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরগুলির উপর মনোযোগ দিলে আপনি “পরিবেশের জন্য ভাবনা” অধ্যায়ে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবেন এবং মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হতে পারবেন।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer