মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – তাপের ঘটনাসমূহ – সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

Mrinmoy Rajmalla

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের তাপের ঘটনাসমূহ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব। যেগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাপের ঘটনাসমূহ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর গুলি আপনি যদি ভালো করে দেখে মুখস্ত করে যান, তাহলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাপের ঘটনাসমূহ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর থেকে যা প্রশ্ন আসবে না কেন আপনি সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।

Table of Contents

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – তাপের ঘটনাসমূহ

কঠিনের তাপীয় প্রসারণ কাকে বলে?

কোনো কঠিন পদার্থের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে পদার্থটির আকার ও আয়তন প্রসারিত হয়। উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য কঠিন পদার্থের এই প্রসারণকেই কঠিনের তাপীয় প্রসারণ বলা হয়।

গ্যাসের আয়তন গুণাঙ্কের মান কত?

গ্যাসের আয়তন গুণাঙ্কের মান হল, \(\gamma_p=\frac1{273}^\circ C^{-1}\)

কঠিনের তাপীয় সংকোচন কাকে বলে?

কোনো কঠিন পদার্থের উষ্ণতা হ্রাস করলে পদার্থটি আকার ও আয়তনে সংকুচিত হয়। উষ্ণতা হ্রাসের জন্য কঠিন পদার্থের এই সংকোচনকেই কঠিনের তাপীয় সংকোচন বলা হয়।

একটি পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে কঠিন পদার্থের প্রসারণ হয়।

পরীক্ষা – একটি স্ট্যান্ড (S), একটি হুক (H), একটি বল (B) ও একটি আংটা (R) নেওয়া হল। আংটা (R)- টিকে হুকের (H) নীচে স্ট্যান্ডের মাঝখানে ভালোভাবে আটকানো হল। এবারে একটি সুতোর সাহায্যে বলটিকে (B) হুক (H) থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হল। বল ও আংটা আলাদা ধাতুর তৈরি। আংটার মাপ এমন নেওয়া হল যাতে সাধারণ তাপমাত্রায় বলটি আংটার মধ্যে কোনোরকমে গলে যায়। এবার বলটিকে কিছুক্ষণ গরম করে আংটার মধ্য দিয়ে গলানোর চেষ্টা করলে দেখা গেল বলটি আংটার মধ্য দিয়ে আর গলছে না। বলটিকে আবার ঠান্ডা করে আংটার মধ্য দিয়ে গলানোর চেষ্টা করলে দেখা যাবে বলটি আংটার মধ্য দিয়ে গলে যাচ্ছে।

একটি পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে কঠিন পদার্থের প্রসারণ হয়।

সিদ্ধান্ত – এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে কঠিন পদার্থের প্রসারণ হয় ও তাপমাত্রা হ্রাস করলে কঠিন পদার্থ সংকুচিত হয়। এখানে বলটিকে উত্তপ্ত করার ফলে বলের আয়তন বেড়ে যায়, কিন্তু আংটার তাপমাত্রা একই থাকায় তার কোনোরকম প্রসারণ হয়নি। ফলে উত্তপ্ত অবস্থায় বলটি আংটার মধ্যে দিয়ে গলেনি। আবার বলটিকে ঠান্ডা করে ঘরের তাপমাত্রায় আনা হলে প্রসারিত বলটি সংকুচিত হয়ে পূর্বের আয়তন ফিরে পায় তাই বলটি আংটার মধ্য দিয়ে গলে যায়।

কঠিনের তাপীয় প্রসারণ কয় প্রকার ও কী কী?

কঠিনের তাপীয় প্রসারণ তিনপ্রকার –

  • দৈর্ঘ্য প্রসারণ।
  • ক্ষেত্র প্রসারণ।
  • আয়তন প্রসারণ।

কঠিনের সমদৈশিক প্রসারণ কাকে বলে?

তাপ প্রয়োগে বেশিরভাগ কঠিন পদার্থের সমস্তদিকে সুষমভাবে প্রসারণ হয়, এই ধরনের প্রসারণকে সমদৈশিক প্রসারণ বলা হয়।

কঠিনের অসমদৈশিক প্রসারণ কাকে বলে?

তাপ প্রয়োগে কিছু কঠিন পদার্থের সমস্তদিকে সুষমভাবে প্রসারণ হয় না, এই ধরনের প্রসারণকে অসমদৈশিক প্রসারণ বলা হয়।

কঠিনের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক কাকে বলে?

কোনো কঠিন পদার্থের প্রতি একক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে প্রতি একক দৈর্ঘ্যে যে দৈর্ঘ্য প্রসারণ হয়, তাকে ওই কঠিন পদারে দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক বলা হয়।

কঠিনের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের রাশিমালাটি লেখো।

মনে করা যাক, t1 উয়তায় কোনো কঠিন পদার্থের দৈর্ঘ্য l1 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে t2 করা হলে দৈর্ঘ্য হয় l2; কঠিন পদার্থটির দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক α হলে, α -এর সংজ্ঞানুসারে লেখা যায়, a=l2l1l1(t2t1)

কঠিন পদার্থের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক কিভাবে নির্ণয় করবে?

মনে করি, t1 উষ্ণতায় কোনো কঠিনের দন্ডের দৈর্ঘ্য l1 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে t2 করা হলে দন্ডটির দৈর্ঘ্য হয় l2

∴ দন্ডটির দৈর্ঘ্য প্রসারণ = l2 – l1, তাপমাত্রা বৃদ্ধি = t2 – t1

দৈর্ঘ্য প্রসারণ দন্ডের প্রাথমিক দৈর্ঘ্য ও উষ্ণতা বৃদ্ধির সমানুপাতিক, অর্থাৎ

(l2 – l1) ∝ l1 [যখন (t2 – t1) স্থির]

এবং (l2 – l1) ∝ (t2 – t1) [যখন l1 স্থির]

∴ (l2 – l1) ∝ l1(t2 – t1) [যখন l1 ও (t2 – t1) উভয়েই পরিবর্তনশীল]

বা, (l2 – l1) = αl1 (t2 – t1)

যেখানে α একটি ধ্রুবক, একে পদার্থের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক বলে।

বা, \(a=\frac{l_2-l_1}{l_1\left(t_2-t_1\right)}\) বা, \(l_2-l_1=l_1a\left(t_2-t_1\right)\)

এখানে, দৈর্ঘ্য প্রসারণ = প্রাথমিক দৈর্ঘ্য × দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক × উষ্ণতা বৃদ্ধি বা, \(l_2=l_1\left[l+a\left(t_2-t_1\right)\right]\)

বিভিন্ন কঠিন পদার্থের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের তালিকা

পদার্থα (°C-1 এককে)পদার্থα (°C-1 এককে)পদার্থα (°C-1 এককে)
কোয়ার্টস0.5 × 10-6ক্লাউন কাচ9 × 10-6রুপো18.8 × 10-6
ইনভার0.7 × 10-6ইস্পাত11 × 10-6পিতল19 × 10-6
হিরে8.9 × 10-6লোহা12 × 10-6অ্যালুমিনিয়াম22.9 × 10-6
পাইরেক্স কাচ3.2 × 10-6সোনা14 × 10-6দস্তা26.8 × 10-6
প্ল্যাটিনাম8.9 × 10-6তামা16.7 × 10-6সিসা29 × 10-6

দেখাও যে, দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের একক দৈর্ঘ্যের এককের ওপর নির্ভর করে না, শুধুমাত্র তাপমাত্রার এককের ওপর নির্ভরশীল।

মনে করি, l1 দৈর্ঘ্যের কোনো দণ্ডের তাপমাত্রা t1 থেকে বৃদ্ধি করে t2 করা হলে দণ্ডটির অন্তিম দৈর্ঘ্য হয় l2

∴ দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক,

\(\alpha=\frac{l_2-l_1}{l_1\left(t_2-t_1\right)}\) ; \(\alpha=\frac{l_2-l_1}{l_1}\)

হল দুটি সমজাতীয় রাশির অনুপাত, তাই এককহীন। সুতরাং, দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের একক শুধুমাত্র (t2 – t1) -এর একক বা উষ্ণতার এককের ওপর নির্ভরশীল।

লোহার দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক 12 × 10-6/°C বলতে কী বোঝ?

লোহার দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক 12 × 10-6/°C বলতে বোঝায়, কোনো লৌহদন্ডের উষ্ণতা 1°C বৃদ্ধি করলে দণ্ডটির প্রাথমিক দৈর্ঘ্যের 12 × 10-6 অংশ দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয়।

সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলে দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

মনে করি, কোনো কঠিন পদার্থের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক, α = x/°C

আবার, 1°C -এর পরিবর্তন =95°F -এর পরিবর্তন

a=x95°F=95x/°F

∴ সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলে দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক যথাক্রমে aCaF হলে, a F=59ac

ইস্পাতের তৈরি একটি ছিপি পিতলের তৈরি একটি বোতলে আটকে গেছে। ছিপিটি খোলার জন্য কী করবে?

পিতলের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক ইস্পাতের তুলনায় বেশি। সংস্থাটিকে উত্তপ্ত করলে পিতলের প্রসারণ ইস্পাতের তুলনায় বেশি হবে ফলে ছিপিটি আরও আটকে যাবে। কিন্তু সংস্থাটিকে ঠান্ডা করলে পিতলের সংকোচন ইস্পাতের তুলনায় বেশি হবে ফলে ছিপিটি আলগা হয়ে খুলে যাবে। সুতরাং, এক্ষেত্রে ছিপি খোলার জন্য সংস্থাটিকে ঠান্ডা করতে হবে।

দুটি দণ্ডের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য সকল উষ্ণতায় সমান থাকার শর্ত নির্ণয় করো।

মনে করি, t1 উষ্ণতায় দুটি দণ্ডের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে l1 ও l2(l1 > l2) এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে t2 করা হলে দণ্ড দুটির দৈর্ঘ্য হবে যথাক্রমে l’1 ও l’2 ; দণ্ড দুটির দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক যথাক্রমে a1 ও a2 হলে,

শর্তানুসারে,

l1l2 = l1l2

বা, l1l1=l2l2

বা, l1a1(t2t1)=l2a2(t2t1)

বা, l1a1=l2a2

বা, l1l2=a2a1

অর্থাৎ দণ্ড দুটির দৈর্ঘ্য, তাদের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের ব্যস্তানুপাতে থাকলে যে-কোনো উষ্ণতায় দণ্ড দুটির দৈর্ঘ্যের পার্থক্য একই থাকবে।

একটি লোহার দণ্ড একটি বৃত্তাকার লোহার বলয়ের ব্যাস বরাবর যুক্ত। সংস্থাটিকে সমভাবে উত্তপ্ত করলে বলয়টি বৃত্তাকার থাকবে কি? ব্যাখ্যা করো।

মনে করি, লোহার দণ্ডের দৈর্ঘ্য, l1 = 1

∴ বৃত্তের ব্যাস =। এবং লোহার বলয়ের দৈর্ঘ্য, l2=πl

l2l1=πll=π

মনে করি, সংস্থাটির উষ্ণতা বৃদ্ধি = t

এখন লোহার দণ্ডের দৈর্ঘ্য, l’1= (l + at) (যেখানে α হল লোহার দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক)

এবং লোহার বলয়ের দৈর্ঘ্য, l2=πl(l+at)

l2l1=πl(l+at)l(l+at)=π

যেহেতু উভয়ক্ষেত্রেই বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত অপরিবর্তিত থাকে, তাই বলয়টি বৃত্তাকারই থাকবে।

জেনে রাখো – কঠিন পদার্থের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক পরিমাপের সময় যে-কোনো উষ্ণতাকে প্রাথমিক উষ্ণতা ধরা যেতে পারে, তবে সূক্ষ্ম পরিমাপের ক্ষেত্রে ০°C উষ্ণতাকে প্রাথমিক উষ্ণতা ধরা হয়। যে সমস্ত কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক কম তাদের দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের মান কম।

একই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে একই দৈর্ঘ্যের সকল কঠিন পদার্থের কি একই প্রসারণ হয়? একটি পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও।

না, সমদৈর্ঘ্যের বিভিন্ন কঠিন পদার্থের একই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রসারণ হয়।

পরীক্ষা – একই দৈর্ঘ্যের লোহা, তামা ও পিতলের দণ্ড নেওয়া হল। একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে তিনটি দণ্ডের প্রাথমিক দৈর্ঘ্য মেপে দেখে নেওয়া হল যে দণ্ড তিনটির দৈর্ঘ্য সমান। এবার দন্ড তিনটির তাপমাত্রা একই পরিমাণ বৃদ্ধি করা হল। মনে করা যাক, প্রতিটির তাপমাত্রা 100°C বৃদ্ধি করা হল। এরপর প্রতিটি দণ্ডের অন্তিম দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হল। অন্তিম দৈর্ঘ্য থেকে প্রাথমিক দৈর্ঘ্য বিয়োগ করে দৈর্ঘ্য প্রসারণ পরিমাপ করে দেখা গেল তামার চেয়ে পিতলের দৈর্ঘ্য প্রসারণ বেশি কিন্তু লোহার দৈর্ঘ্য প্রসারণ কম।

সিদ্ধান্ত – এই পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় যে, সমদৈর্ঘ্যের বিভিন্ন কঠিন পদার্থের তাপমাত্রা একই পরিমাণ বৃদ্ধি করলে দৈর্ঘ্য প্রসারণ বিভিন্ন হয়।

দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের মাত্রীয় সংকেত নির্ণয় করো ও মাত্রা লেখো।

দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক, α = দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিপ্রাথমিক দৈর্ঘ্য×তাপমাত্রা বৃদ্ধি

∴ α -এর মাত্রীয় সংকেত = LL×Θ=Θ1

∴ দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের মাত্রা হল তাপমাত্রায় –1

কঠিনের ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্ক কাকে বলে?

কোনো কঠিন পদার্থের একক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে, প্রতি একক ক্ষেত্রফলে যে ক্ষেত্র প্রসারণ হয় তাকে ওই কঠিন পদার্থের ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্ক বলা হয়।

কঠিনের ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্কের রাশিমালাটি লেখো।

মনে করা যাক, 𝑡1 উষ্ণতায় কোনো কঠিন পদার্থে পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল 𝑆1 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে 𝑡2 করা হলে পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল হয় 𝑆2 ; কঠিন পদার্থটির ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্ক 𝛽 হলে, 𝛽 -এর সংজ্ঞানুসারে লেখা যায়, 

β=S2S1S1(t2t1)

কঠিন পদার্থের ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্ক কিভাবে নির্ণয় করবে?

মনে করি, t1 উন্নতায় কোনো কঠিন পদার্থের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল S1 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে t2 করা হলে ক্ষেত্রফল হয় S2 ;

∴ পদার্থটির ক্ষেত্র প্রসারণ = S2 – S1 ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি = (t2 – t1)

ক্ষেত্র প্রসারণ কঠিনের প্রাথমিক ক্ষেত্রফল ও উষ্ণতা বৃদ্ধির সমানুপাতিক।

(S2 – S1) S₁ [যখন (t2 – t1) স্থির]

এবং (S2 – S1) ∝ (t2 – t1) [যখন S1 স্থির]

∴ S2 – S1 = S1(t2 – t1) [যখন S1 ও (t2 – t1) উভয়েই পরিবর্তনশীল]

বা, S2 – S= S1β (t2 – t1) [যেখানে β একটি ধ্রুবক, যাকে কঠিন পদার্থটির ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্ক বলে।]

বা, S2 = S1 {1+β(t2 – t1)}

দেখাও যে, ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্কের একক ক্ষেত্রফলের এককের ওপর নির্ভর করে না, শুধুমাত্র উষ্ণতার এককের ওপর নির্ভরশীল।

মনে করি, 𝑡1 উষ্ণতায় কোনো কঠিন পদার্থের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল 𝑆1 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে 𝑡2 করা হলে ক্ষেত্রফল হয় 𝑆2

∴ ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্ক, β=S2S1S1(t2t1)এবং, β=S2S1S1

হল দুটি সমজাতীয় রাশির অনুপাত তাই এককহীন। সুতরাং, ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্কের একক শুধুমাত্র (t2 – 𝑡1) -এর একক বা উষ্ণতার এককের ওপর নির্ভরশীল।

ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্কের মাত্রীয় সংকেত নির্ণয় করো ও মাত্রা লেখো।

ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্ক, β=ক্ষেত্র প্রসারণ প্রাথমিক ক্ষেত্রফল×তাপমাত্রা বৃদ্ধি

∴ β -এর মাত্রীয় সংকেত =L2L2×Θ=Θ1

∴ দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের মাত্রা হল তাপমাত্রায় –1

কঠিন পদার্থের আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক কাকে বলে?

কোনো কঠিন পদার্থের প্রতি একক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে, প্রতি একক আয়তনে যে আয়তন প্রসারণ হয়, তাকে ওই পদার্থের আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক বলা হয়।

জেনে রাখো – বিশুদ্ধ সিলিকনের তাপমাত্রা 18 K থেকে 120 K পর্যন্ত বৃদ্ধি করলে আয়তন কমে যায়।

কঠিনের আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্কের রাশিমালাটি লেখো।

মনে করা যাক, t1 উষ্ণতায় কোনো কঠিন পদার্থের আয়তন V1 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে  t2 করা হলে আয়তন হয়  V2। কঠিন পদার্থটির আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক γ হলে, γ -এর সংজ্ঞানুসারে লেখা যায়,

γ=V2V1V1(t2t1)

দেখাও যে, আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্কের একক আয়তনের এককের ওপর নির্ভর করে না, শুধুমাত্র তাপমাত্রার এককের ওপর নির্ভরশীল।

মনে করি, V1 আয়তনের কোনো কঠিন পদার্থের তাপমাত্রা t1 থেকে বৃদ্ধি করে t2 করা হলে অন্তিম আয়তন হয় V

∴ আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক, γ=আয়তন প্রসারণপ্রাথমিক আয়তন×উষ্ণতা বৃদ্ধি

∴ আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্কের একক=আয়তনের এককআয়তনের একক×উষ্ণতার একক=1উষ্ণতার একক

∴ আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্কের একক শুধুমাত্র উষ্ণতার এককের ওপর নির্ভরশীল।

আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্কের মাত্রীয় সংকেত নির্ণয় করো ও মাত্রা লেখো।

আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক, γ=আয়তন প্রসারণপ্রাথমিক আয়তন×উষ্ণতা বৃদ্ধি

∴ γ এর মাত্রীয় সংকেত =L3L3×Θ=Θ1

∴ দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্কের মাত্রা হল তাপমাত্রায় –1

লোহার আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক 36 × 10⁻⁶/°C বলতে কী বোঝা যায়?

লোহার আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক 36 × 10⁻⁶/°C বলতে বোঝায়, লোহার তাপমাত্রা ১°C বৃদ্ধি করলে প্রাথমিক আয়তনের 36 × 10⁻⁶ অংশ বৃদ্ধি পায়।

বিকল্প উত্তর: লোহার আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক 36 × 10⁻⁶/°C বলতে বোঝায়, ১ cm³ বা ১ m³ লোহার তাপমাত্রা ১°C বৃদ্ধি করলে লোহার আয়তন যথাক্রমে 36 × 10⁻⁶ cm³ বা 36 × 10⁻⁶ m³ বৃদ্ধি পাবে।

ধাতব স্কেল যে উষ্ণতায় তৈরি সেই উষ্ণতা ছাড়া সঠিক পাঠ দেয় না কেন?

একটি ধাতব স্কেলের উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে স্কেলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। ফলে অংশাঙ্কিত দুটি দাগের ব্যবধানও বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। অর্থাৎ, ধাতব স্কেলটি যে উষ্ণতায় অংশাঙ্কিত শুধুমাত্র সেই উষ্ণতাতেই সঠিক পাঠ দেয়। উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে প্রকৃত পাঠ, স্কেল প্রদর্শিত পাঠ অপেক্ষা বেশি হয় এবং উষ্ণতা হ্রাস পেলে প্রকৃত পাঠ, স্কেল প্রদর্শিত পাঠ অপেক্ষা কম হয়।

ঢালাইয়ের সময় কেন লোহার রডই ব্যবহার করা হয়, অন্য ধাতুর রড নেওয়া হয় না কেন?

ঢালাইয়ের সময় লোহাকে কংক্রিটের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। গরমকালে তাপমাত্রা বেশি, তাই কংক্রিট এবং রড দুটিরই তাপীয় প্রসারণ হবে। আবার শীতকালে তাপমাত্রা কম হলে দুটোই সংকুচিত হবে। দেখা গেছে, লোহা ও কংক্রিট উভয়েরই প্রসারণ গুণাঙ্ক প্রায় সমান। তাই ঢালাইয়ের সময় শুধুমাত্র লোহার রডই নেওয়া হয়। অন্য ধাতুর রড নিলে ওই ধাতু ও কংক্রিটের প্রসারণ ও সংকোচন আলাদা হবে, ফলে ঢালাই ফেটে যেতে পারে।

অভিন্ন আকারের একটি তামার পাত এবং একটি লোহার পাতকে রিভেট করে যুক্ত করা হল। এই সংস্থাটিকে উত্তপ্ত করলে কী ঘটবে?

তামার দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক লোহার চেয়ে বেশি। তাই একই তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে তামার দৈর্ঘ্য প্রসারণ লোহার চেয়ে বেশি হবে। যেহেতু পাত দুটি রিভেট করে আটকানো, তাই পাতযুগ্মটি বেঁকে যাবে। তামার প্রসারণ বেশি হওয়ার জন্য এটি বাঁকের বাইরের দিকে থাকবে।

একটি-তামার-পাত-এবং-একটি-লোহার-পাত

অভিন্ন আকারের একটি তামার পাত এবং একটি লোহার পাতকে রিভেট করে যুক্ত করা হলো। এই সংস্থাটির তাপমাত্রা হ্রাস করলে কী ঘটবে?

তামার দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক লোহার চেয়ে বেশি, তাই একই তাপমাত্রা হ্রাস করলে তামার দৈর্ঘ্য সংকোচন লোহার চেয়ে বেশি হবে। যেহেতু পাত দুটি রিভেট করে আটকানো, তাই পাতযুগ্মটি বেঁকে যাবে। তামার সংকোচন বেশি হওয়ার জন্য এটি বাঁকের ভেতরের দিকে থাকবে।

একটি তামার পাত এবং একটি লোহার পাত

একটি সহজ পরীক্ষার সাহায্যে তরলের আপাত প্রসারণ ও প্রকৃত প্রসারণ বোঝাও।

পরীক্ষা – প্রথমে ছিপিযুক্ত একটি কাচের ফ্লাস্ক নেওয়া হলো। ছিপির মধ্য দিয়ে একটি সরু কাচনল প্রবেশ করানো হলো এবং নলের গায়ে একটি স্কেল যুক্ত করা হলো। কাচের ফ্লাস্ক ও নলের কিছুটা অংশ পর্যন্ত কোনো রঙিন তরল দিয়ে পূর্ণ করা হলো। নলে তরলের প্রাথমিক লেভেল হলো A। এখন ফ্লাস্কটিকে গরম জলপূর্ণ কোনো পাত্রে ডোবানো হলো। দেখা যাবে যে, নলে তরলের লেভেল A থেকে নেমে B-তে এল। এরপর তরলের লেভেল ধীরে ধীরে উঠতে থাকল এবং কিছুক্ষণ পরে C-তে এসে স্থির হলো।

সিদ্ধান্ত – ফ্লাস্কটিকে গরম জলে ডোবালে কাচ গরম জল থেকে তাপ সংগ্রহ করে নিজে প্রসারিত হয় বলে, নলে তরলের লেভেল A থেকে নেমে B-তে আসে। এরপর কাচের মাধ্যমে তাপ তরলে সঞ্চালিত হয় এবং তরল প্রসারিত হতে শুরু করে, তাই নলে তরলের লেভেল ওপরের দিকে উঠতে থাকে। কাচ তাপের কুপরিবাহী বলে এত তাড়াতাড়ি কাচ, তাপকে ফ্লাস্কের ভিতরের তরলে সঞ্চালিত করতে পারে না। ফলে প্রথমে কাচের পাত্রের প্রসারণের জন্য তরলের লেভেল নিচের দিকে নামে এবং পরে তরল প্রসারিত হওয়ার জন্য তরলের লেভেল ওপরদিকে উঠতে শুরু করে। যখন তরল একটি স্থির তাপমাত্রায় উপনীত হয় তখন নলে তরলের লেভেল C-তে স্থির হয়। এই পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় যে, AB দৈর্ঘ্যের আয়তন হলো পাত্রের প্রসারণ এবং BC দৈর্ঘ্যের আয়তন হলো তরলের প্রকৃত প্রসারণ। পাত্রের প্রসারণকে অগ্রাহ্য করলে তরলের যে প্রসারণ হয় তা হলো আপাত প্রসারণ। তাই নলের AC দৈর্ঘ্যের আয়তন হলো তরলের আপাত প্রসারণ। যেহেতু BC = AB + AC

∴ তরলের প্রকৃত প্রসারণ = পাত্রের আয়তন প্রসারণ + তরলের আপাত প্রসারণ

তরলের আপাত প্রসারণ ও প্রকৃত প্রসারণ

তরলের আপাত প্রসারণ ও প্রকৃত প্রসারণ কাকে বলে?

তরলের আপাত প্রসারণ – কোনো তরল পদার্থকে যে পাত্রে রেখে উত্তপ্ত করা হয় সেই পাত্রের প্রসারণকে অগ্রাহ্য করলে, তরলের যে প্রসারণ পাওয়া যায় তাকে ওই তরলের আপাত প্রসারণ বলা হয়।

তরলের প্রকৃত প্রসারণ – কোনো তরল পদার্থকে যে পাত্রে রেখে উত্তপ্ত করা হয় সেই পাত্রের প্রসারণকে তরলের আপাত প্রসারণের সাথে যুক্ত করলে তরলের যে প্রসারণ পাওয়া যায় তাকে ওই তরলের প্রকৃত প্রসারণ বলা হয়।

তরলের আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক ও প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্ক কাকে বলে?

তরলের আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক – কোনো তরল পদার্থের প্রতি একক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে, প্রতি একক আয়তনে যে আপাত প্রসারণ হয় তাকে তরলের আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক বলা হয়।

তরলের প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্ক – কোনো তরল পদার্থের প্রতি একক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে, প্রতি একক আয়তনে যে প্রকৃত প্রসারণ হয়, তাকে ওই তরলের প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্ক বলা হয়।

তরলের আপাত প্রসারণ গুণাঙ্কের রাশিমালাটি লেখো।

মনে করি, t1 উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো তরল পদার্থের আয়তন V1 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে t2 করা হলে তরলটির আপাত আয়তন হয় V’2

∴ তরলের আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক, γa= V2V1V1(t2t1)

তরলের প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্কের রাশিমালাটি লেখো।

মনে করি, t1 উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো তরল পদার্থের আয়তন V1 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে t2 করা হলে তরলটির প্রকৃত আয়তন হয় V2।

∴ তরলের প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্ক, γr= V2V1V1(t2t1)

জেনে রাখো – সাধারণত তরলের প্রসারণ গুণাঙ্ক উষ্ণতার বিভিন্ন পাল্লায় একই ধরে নেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন উষ্ণতায় তরলের প্রসারণ গুণাঙ্ক একই হয় না। তাই সূক্ষ্ম পরিমাপের ক্ষেত্রে, 0°C উষ্ণতার আয়তনকে প্রাথমিক আয়তন ধরে নেওয়া হয়।

তরলের প্রকৃত প্রসারণ কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল?

তরলের প্রকৃত প্রসারণ নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভরশীল –

  • তরলের প্রাথমিক আয়তন।
  • উষ্ণতা বৃদ্ধি।
  • তরলের প্রকৃতি।

তরলের আপাত প্রসারণ কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল?

তরলের আপাত প্রসারণ নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভরশীল –

  • তরলের প্রাথমিক আয়তন।
  • উষ্ণতা বৃদ্ধি।
  • তরলের প্রকৃতি।
  • পাত্রের উপাদান।

কোনো তরলের আপাত ও প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্কের মধ্যে কোনটি তরলের নিজস্ব ধর্ম?

কোনো তরলের আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক, পাত্রের আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্কের ওপর নির্ভরশীল। কোনো নির্দিষ্ট তরলকে বিভিন্ন উপাদানের পাত্রে রাখলে আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক বিভিন্ন হয়, কিন্তু প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্ক অপরিবর্তিত থাকে। তাই কোনো তরলের আপাত ও প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্কের মধ্যে প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্ক হল তরলের নিজস্ব ধর্ম।

লম্ব-বৃত্তাকার চোঙাকৃতি একটি পাত্রে তরল আছে। পাত্রটিকে উত্তপ্ত করলে পাত্রে তরলের স্তরের কোনো পরিবর্তন হয় না। এটি কীভাবে সম্ভব?

নির্দিষ্ট উষ্ণতা বৃদ্ধিতে পাত্র ও তরল উভয়েরই আয়তন প্রসারণ যদি একই হয় তাহলে পাত্রে তরলের স্তরের কোনো পরিবর্তন হয় না। এক্ষেত্রে তরলের আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক শূন্য হয়।

জেনে রাখো – কোনো তরলের আপাত ও প্রকৃত প্রসারণ গুণাঙ্ক যথাক্রমে γa ও γr, এবং তরলকে যে পাত্রে রাখা হয়েছে তার আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক γg হলে, γr = γa + γg

একটি থার্মোমিটারে ভুল করে পারদের পরিবর্তে জল দেওয়া হয়েছে। 0°C থেকে ৪°C পর্যন্ত উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কী লক্ষ্য করবে?

0°C থেকে উষ্ণতা বাড়তে থাকলে দেখা যাবে থার্মোমিটার নলে জলের পাঠ হ্রাস পাচ্ছে এবং 4°C-এ তা সর্বনিম্ন হল। এরপর পাঠ বাড়তে থাকল এবং ৪°C উষ্ণতায় পাঠ 0°C উষ্ণতায় পাঠের প্রায় সমান হল। এর কারণ হল জলের ব্যতিক্রমী প্রসারণ। নির্দিষ্ট ভরের জলের উষ্ণতা 0°C থেকে বৃদ্ধি করতে থাকলে 4°C পর্যন্ত জলের আয়তন হ্রাস পায়, এরপর অন্যান্য তরলের মতো উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে আয়তন বাড়ে। ৪°C উষ্ণতায় জলের আয়তন 0°C উষ্ণতায় আয়তনের প্রায় সমান হয়।

থার্মোমিটার

গ্যাসের তাপীয় প্রসারণের কয়েকটি উদাহরণ দাও।

গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা সাইকেলের টায়ার অনেক সময় ফেটে যায়। এর কারণ হল স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা একটু বেশিই থাকে। এর ফলে সাইকেলের টায়ার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং টায়ারের ভিতরে অবস্থিত বায়ু এই তাপ গ্রহণ করে প্রসারিত হয়। সাইকেলের টায়ার যদি সম্পূর্ণ বায়ুপূর্ণ থাকে তাহলে সেটি আর প্রসারিত না হতে পেরে প্রবল চাপ প্রয়োগে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। ফলে টায়ারটি ফেটে যায়। আবার, একটি বেলুন ফুলিয়ে জ্বলন্ত উনুনের একটু ওপরে ধরলে বেলুনটি একই কারণে ফেটে যায়।

গ্যাসের আয়তন গুণাঙ্ক (γp) কাকে বলে?

চাপ স্থির রেখে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের উষ্ণতা 0°C থেকে 1°C বৃদ্ধি করলে গ্যাসের প্রতি একক আয়তনে যে আয়তন প্রসারণ হয়, তাকে ওই গ্যাসের আয়তন গুণাঙ্ক বলা হয়।

গ্যাসের আয়তন গুণাঙ্কের রাশিমালাটি লেখো এবং চার্লসের সূত্রের সাহায্যে এর মান নির্ণয় করো।

মনে করা যাক, স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের 0°C উষ্ণতায় আয়তন V0 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে t°C করা হলে গ্যাসের আয়তন হয় Vt। আয়তন গুণাঙ্কের সংজ্ঞানুসারে লেখা যায়,

γp=VtV0V0t ——(1)

(1) নং সমীকরণ থেকে পাই, VtV0=V0γp·t

বা, Vt=V0+V0γpt

বা, Vt=V0(1+γpt)——(2)

আবার, চার্লসের সূত্র থেকে পাই, স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের 0°C উষ্ণতায় আয়তন V0 এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে 1°C করা হলে আয়তন হবে,

Vt=V0+(1+t273)——(3)

(2) নং ও (3) নং সমীকরণ তুলনা করে পাই, গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন গুণাঙ্ক,

γp=1273°C1=3.663×103°C1

গ্যাসের আয়তন প্রসারণ গণনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক আয়তনের জন্য 0°C উষ্ণতাকে নির্দিষ্ট ধরা হয় কেন?

কঠিন ও তরলের তুলনায় গ্যাসের প্রসারণ গুণাঙ্কের মান অনেক বেশি। কঠিন ও তরলের ক্ষেত্রে যে-কোনো আয়তনকে প্রাথমিক আয়তন হিসাবে বিবেচনা করলে যে ত্রুটি হয় তা নগণ্য। কিন্তু গ্যাসের ক্ষেত্রে যে-কোনো উষ্ণতার আয়তনকে প্রাথমিক আয়তন হিসেবে বিবেচনা করলে ত্রুটি হয় অনেক বেশি। তাই গ্যাসের ক্ষেত্রে প্রাথমিক আয়তনের জন্য 0°C উষ্ণতাকে নির্দিষ্ট উষ্ণতা হিসাবে ধরা হয়।

তরলের আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক আছে, কিন্তু গ্যাসের ক্ষেত্রে আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক ধরা হয় না কেন?

তরল বা গ্যাস উভয় পদার্থকে কোনো পাত্রে রেখে উত্তপ্ত করতে হয়, ফলে তরল বা গ্যাসের প্রসারণের সঙ্গেই পাত্রেরও প্রসারণ হয়। তরলের প্রসারণের তুলনায় কঠিনের প্রসারণ কম হলেও উপেক্ষা করা যায় না। কিন্তু গ্যাসের প্রসারণের তুলনায় কঠিনের প্রসারণ প্রায় 1/100 অংশ, তাই এক্ষেত্রে পাত্রের প্রসারণ বিবেচনা করা হয় না। এই কারণে তরলের আপাত প্রসারণ আছে কিন্তু গ্যাসের ক্ষেত্রে আপাত প্রসারণ গুণাঙ্ক ধরা হয় না।

পরিবহণ কাকে বলে?

তাপ সঞ্চালনের যে পদ্ধতিতে কোনো পদার্থের উষ্ণতর স্থান থেকে শীতলতর স্থানে অণুগুলির কম্পনের দ্বারা তাপ সঞ্চালিত হয় কিন্তু অণুগুলির কোনো স্থানচ্যুতি হয় না তাকে পরিবহণ বলা হয়।

পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্য –

১. পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ পদার্থের উষ্ণতর স্থান থেকে শীতলতর স্থানে অণুগুলির কম্পনের দ্বারা সঞ্চালিত হয়। ২. পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন।
৩. পরিবহণ মন্থর পদ্ধতি।
৪. পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের সময় মাধ্যম উত্তপ্ত হয়।
৫. পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের সময় সেই মাধ্যমের অণুগুলির স্থানচ্যুতি হয় না।
৬. পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সরল বা বক্রপথে সঞ্চালিত হতে পারে।

তাপ পরিবহণের ক্ষেত্রে স্থিতপূর্ব অবস্থা ও স্থিতাবস্থা কাকে বলে?

স্থিতপূর্ব অবস্থা – কোনো দণ্ডের মধ্য দিয়ে যখন তাপের পরিবহণ হয় তখন দণ্ডের বিভিন্ন স্তরে যদি তাপের পরিবহণ ও শোষণ একই সঙ্গে চলতে থাকে, তাহলে দণ্ডের এই তাপীয় অবস্থাকে স্থিতপূর্ব অবস্থা বলা হয়।

স্থিতাবস্থা – কোনো দণ্ডের মধ্য দিয়ে যখন তাপের পরিবহণ হয় তখন দণ্ডের বিভিন্ন স্তরে যদি তাপের শুধুমাত্র পরিবহণ হয়, কোনো রকম শোষণ না হয় ফলে প্রতিটি স্তরের উষ্ণতা স্থির থাকে, তাহলে দণ্ডের এই তাপীয় অবস্থাকে স্থিতাবস্থা বলা হয়।

তাপের সুপরিবাহী ও কুপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?

তাপের সুপরিবাহী পদার্থ – যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে পরিবাহিত হয় তাদের তাপের সুপরিবাহী পদার্থ বলা হয়।

তাপের কুপরিবাহী পদার্থ – যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে পরিবাহিত হয় না তাদের তাপের কুপরিবাহী পদার্থ বলা হয়।

একটি পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও যে, বিভিন্ন পদার্থের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা বিভিন্ন।

পরীক্ষা – একটি আয়তক্ষেত্রাকার ধাতব পাত্রের একটি বৃহত্তর উল্লম্ব তলে তিনটি ছিদ্র করে একই দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদের তিনটি ভিন্ন ধাতব দণ্ড (যেমন – তামা, অ্যালুমিনিয়াম, ও লোহাকে) রবারের ছিপির সাহায্যে ছিদ্রের মধ্য দিয়ে সমান দূরত্ব পর্যন্ত প্রবেশ করিয়ে দণ্ডগুলির বাইরের অংশে সমান বেধের মোমের প্রলেপ লাগানো হল। এবার ধাতব পাত্রে জল নিয়ে বুনসেন বার্নারের সাহায্যে পাত্রটিকে উত্তপ্ত করা হল যাতে জল ফুটতে শুরু করে। এই অবস্থায় দণ্ড বরাবর তাপের পরিবহণ হবে। কোনো নির্দিষ্ট দণ্ডের যে অংশের উষ্ণতা মোমের গলনাঙ্কের সমান বা বেশি হবে সেখানে মোম গলে যাবে। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে, বিভিন্ন দণ্ডে বিভিন্ন দৈর্ঘ্য পর্যন্ত মোম গলেছে।

একটি পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও যে, বিভিন্ন পদার্থের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা বিভিন্ন।

সিদ্ধান্ত – এই পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় যে, বিভিন্ন পদার্থের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা বিভিন্ন। তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার দণ্ডে যথাক্রমে l1, l2 ও l3 দূরত্ব পর্যন্ত মোম গললে দেখা যায় l1 > l2 > l3

কোনো আয়তাকার ফলকের বেধ, ক্ষেত্রফল ও দুই পৃষ্ঠের উষ্ণতার পার্থক্য দ্বারা তাপ পরিবাহিতাঙ্কের রাশিমালাটি প্রতিষ্ঠা করো।

মনে করি, কোনো পদার্থের একটি আয়তাকার ফলকের বেধ d, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A এবং দুই বিপরীত পৃষ্ঠের উষ্ণতা যথাক্রমে θ1θ2 (যেখানে θ1>θ2)

স্থিতাবস্থায় t সময়ে উষ্ণতর পৃষ্ঠ থেকে শীতলতর পৃষ্ঠের দিকে লম্বভাবে Q পরিমাণ তাপ পরিবাহিত হলে,

(i) QA

(ii) Qθ1θ2

(iii) Q1d

(iv) Qt

যৌগিক ভেদের সূত্র থেকে পাই,

Q(Aθ1θ2)td

বা, Q=KA(θ1θ2)td

K=Q·dA(θ1θ2)t

যেখানে k একটি ধ্রুবক, যাকে ওই পদার্থের তাপ পরিবাহিতাঙ্ক বলা হয়।

তাপ পরিবাহিতাঙ্কের রাশিমালাটি প্রতিষ্ঠা

তাপ পরিবাহিতাঙ্ক কাকে বলে?

একক বেধ ও একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলযুক্ত কোনো পদার্থের দুই বিপরীত পৃষ্ঠের উষ্ণতার পার্থক্য একক হলে তলের সঙ্গে লম্বভাবে একক সময়ে যে তাপ পরিবাহিত হয় তাকে ওই পদার্থের তাপ পরিবাহিতাঙ্ক বলা হয়।

তাপ পরিবাহিতাঙ্কের মাত্রীয় সংকেত নির্ণয় করো।

কোনো পদার্থের একটি আয়তাকার ফলকের বেধ d, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A ও দুই বিপরীত পৃষ্ঠের উষ্ণতা যথাক্রমে θ1θ2(θ1>θ2) হলে যদি স্থিতাবস্থায় t সময়ে তলের সঙ্গে লম্বভাবে Q পরিমাণ তাপ পরিবাহিত হয় তাহলে,

Q=kA(θ1θ2)td বা, k=QdA(θ1θ2t

তাপ পরিবাহিতাঙ্কের মাত্রীয় সংকেত

= \(\frac{\left[Q\right]\cdot\left[d\right]}{\left[A\right]\cdot\left[\left(\theta_1-\theta_2\right)\right]\cdot t}\)

= \(\frac{ML^2T^{-2}\times L}{L^2\times\Theta\times T}\)

= \(MLT^{-3}\Theta^{-1}\)

তাপ পরিবাহিতাঙ্কের CGS পদ্ধতি ও SI -তে এককের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

তাপ পরিবাহিতাঙ্কের CGS পদ্ধতি ও SI -তে একক হল যথাক্রমে

∴ 1 cal . cm-1 C-1 . s-1

= 4.2 J . (10-2 m)-1 . K-1 . s-1

= 4.2 W . m-1 K-1 [∵ 1 J . s-1 = 1W]

বিভিন্ন পদার্থের তাপ পরিবাহিতাঙ্কের তালিকা

বিভিন্ন পদার্থের তাপ পরিবাহিতাঙ্কের তালিকা [18 °C তাপমাত্রার]

পদার্থতাপ পরিবাহিতাঙ্ক k(cal.cm-1. °C-1. s-1)পদার্থতাপ পরিবাহিতাঙ্ক k(cal.cm-1. °C-1. s-1)পদার্থতাপ পরিবাহিতাঙ্ক k(cal.cm-1. °C-1. s-1)
হিরে2.13অ্যালুমিনিয়াম0.48কাঠ0.0003
রুপো0.97পিতল0.26কর্ক0.0001
তামা0.92লোহা0.16জল0.0015
সোনা0.72কাচ0.0025বায়ু0.00006

যে কাঠ থেকে কাঠের গুঁড়ো নির্গত হয়, সেই কাঠ অপেক্ষা কাঠের গুঁড়োর তাপ পরিবাহিতা কম কেন?

কাঠ থেকে নির্গত কাঠের গুঁড়োর মধ্যে বায়ু আবদ্ধ থাকে। কাঠের তাপ পরিবাহিতা কম এবং কাঠ অপেক্ষা বায়ুর তাপ পরিবাহিতা অনেক কম। ফলে কাঠের গুঁড়োর তাপ পরিবাহিতা কাঠ অপেক্ষা কম হয়।

বায়ুর তাপ পরিবাহিতাঙ্ক ফেল্ট অপেক্ষা কম হওয়া সত্ত্বেও তাপ অন্তরক হিসেবে বায়ু অপেক্ষা ফেল্টের ব্যবহার বেশি। কারণ কী?

বায়ুর তাপ পরিবাহিতাঙ্ক ফেল্ট অপেক্ষা কম কিন্তু উত্তপ্ত বস্তুর সংস্পর্শে বায়ু থাকলে বায়ুতে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয় ফলে উত্তপ্ত বস্তু থেকে তাপক্ষয় হতে থাকে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে উত্তপ্ত বস্তুর তাপমাত্রা ঘরের উষ্ণতার সমান হয়। কিন্তু বস্তুটিকে ফেল্ট দিয়ে ঢেকে রাখলে ফেল্টের তাপ পরিবাহিতাঙ্ক কম হওয়ার জন্য পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপক্ষয় হয় না এবং উত্তপ্ত বস্তু বায়ুতে উন্মুক্ত না হওয়ার জন্য পরিচলন পদ্ধতিতেও তাপক্ষয় হয় না। এই কারণে বায়ুর তাপ পরিবাহিতাঙ্ক ফেল্ট অপেক্ষা কম হওয়া সত্ত্বেও তাপ অন্তরক হিসেবে বায়ু অপেক্ষা ফেল্টের ব্যবহার বেশি।

তাপীয় রোধ কাকে বলে?

যে ধর্মের জন্য কোনো পদার্থ তার মধ্য দিয়ে তাপের পরিবহণকে বাধা দেয় তাকে তাপীয় রোধ বলা হয়।

তড়িৎ রোধের সঙ্গে সাদৃশ্য দেখিয়ে তাপীয় রোধের রাশিমালাটি প্রতিষ্ঠা করো।

মনে করা যাক, কোনো কঠিন পদার্থের তৈরি একটি আয়তাকার ফলকের বেধ d, দুই বিপরীত পৃষ্ঠের উষ্ণতা যথাক্রমে 𝜃1ও 𝜃2 (𝜃1>𝜃2) এবং প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A, স্থিতাবস্থায় t সময়ে তলের সঙ্গে লম্বভাবে Q পরিমাণ তাপ পরিবাহিত হলে, তাপ প্রবাহের হার,

\(\frac Qt=\frac{kA(\theta_1-\theta_{2)}}d\\\)

বা, \(\frac Qt=\frac{\left(\theta_1-\theta_2\right)}{\displaystyle\frac d{kA}}\)——(1)

আবার, কোনো পরিবাহীর দুটি বিন্দুতে তড়িৎবিভব যথাক্রমে V1 ও V2 (V1> V2) হলে যদি পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহ হয়, তাহলে ওহমের সূত্র থেকে পাই,

I=V1V2R

সুতরাং, আধান প্রবাহের হার, qt= V1V2R——(2)

যেখানে R হল পরিবাহীর রোধ। কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভবপ্রভেদ না থাকলে যেমন তড়িৎপ্রবাহ হয় না তেমনই কোনো ফলকের দুই বিপরীত পৃষ্ঠের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য না থাকলে তাপের পরিবহণ হয় না। তাই (1) ও (2) নং সমীকরণ তুলনা করে পাই, dkA রাশিটি পরিবাহীর রোধের সমতুল্য। এই কারণে dkA রাশিটিকে তাপীয় রোধ বলা হয়।

∴ তাপীয় রোধ, RT=dkA

তাপীয় রোধের মাত্রীয় সংকেত নির্ণয় করো।

কোনো কঠিন পদার্থের একটি আয়তাকার ফলকের বেধ d, দুই বিপরীত পৃষ্ঠের উষ্ণতা যথাক্রমে θ1θ2(θ1>θ2) এবং দুই বিপরীত পৃষ্ঠের প্রতিটির ক্ষেত্রফল A হলে যদি স্থিতাবস্থায় t সময়ে তলের সঙ্গে লম্বভাবে Q পরিমাণ তাপ পরিবাহিত হয় তাহলে,

Q=kA(θ1θ2)td বা, dkA=1θ2)tQ

∴ তাপীয় রোধ, RT=dkA=1θ2)tQ

∴ তাপীয় রোধের মাত্রীয় সংকেত = \(\frac{\left[\left(\theta_1-\theta_2\right)\right].\left[t\right]}{\left[Q\right]}\)

= \(\frac{\Theta.T}{ML^2T^{-2}}\)

= \(M^{-1}L^{-2}T^{-3}\Theta\\\)

কেটলির হাতলে বেত জড়ানো থাকে কেন?

কেটলি সাধারণত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হয়। অ্যালুমিনিয়াম তাপের সুপরিবাহী। কেটলিতে জল বা অন্য তরল নিয়ে যখন গরম করা হয় তখন কেটলিও উত্তপ্ত হয়। এই অবস্থায় কেটলির হাতল ধরে তোলা খুবই অসুবিধাজনক। বেত তাপের কুপরিবাহী। তাই কেটলির হাতলে বেত জড়িয়ে দিলে তা থেকে হাতে তাপ আসে না, ফলে সহজেই হাতল ধরা যায়। এই কারণে কেটলির হাতলে বেত জড়ানো থাকে।

শীতকালে পাখিরা পালক ফুলিয়ে রাখে কেন?

পাখিরা পালক ফুলিয়ে রাখলে পালকের ফাঁকে বায়ু আবদ্ধ থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় পাখিদের শরীরের তাপ বাইরে পরিবাহিত হয় না ফলে শরীর গরম থাকে। এই কারণে শীতকালে পাখিরা পালক ফুলিয়ে রাখে।

বরফকে কাঠের গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে রাখলে সহজে গলে যায় না কেন?

কাঠ ও কাঠের গুঁড়ো উভয়ই তাপের কুপরিবাহী। কাঠের গুঁড়োর মাঝে বায়ু আবদ্ধ থাকায় পরিবাহিতা আরও কমে যায়, তাই বাইরের থেকে তাপ সহজে বরফের মধ্যে সঞ্চালিত হতে পারে না, ফলে বরফ সহজে গলে যায় না।

শীতকালে একই উষ্ণতায় থাকা একটি কাঠের চেয়ার এবং একটি লোহার চেয়ারে হাত দিলে লোহার চেয়ারটি বেশি ঠান্ডা মনে হয় কেন?

শীতকালে আমাদের শরীরের উষ্ণতা সাধারণত চেয়ারের উষ্ণতার চেয়ে বেশি থাকে। কাঠ তাপের কুপরিবাহী কিন্তু লোহা তাপের সুপরিবাহী। লোহার চেয়ারে হাত দিলে শরীর থেকে তাপ চেয়ারে দ্রুত পরিবাহিত হয়, কিন্তু কাঠের চেয়ারে হাত দিলে তাপের পরিবহণ অত্যন্ত ধীর গতিতে হয়। তাই লোহার চেয়ারটি বেশি ঠান্ডা মনে বলে হয়।

একটি যুগ্মদন্ডের অর্ধেক তামার ও অর্ধেক কাঠের। একটি পাতলা কাগজকে ওই দণ্ডে একপাক জড়িয়ে বার্নারের শিখার কাছে ধরলে কী দেখা যাবে তা উপযুক্ত কারণসহ লেখো।

কাগজ জড়ানো যুগ্ম দন্ডটিকে কিছুক্ষণ বার্নারের শিখায় ধরলে দেখা যাবে কাঠের ওপরের কাগজ পুড়ে গেল কিন্তু তামার ওপরের কাগজ পুড়ল না। তামা তাপের সুপরিবাহী বলে বার্নারের তাপ দণ্ডের সর্বত্র পরিবাহিত করে দেয় তাই কাগজের তাপমাত্রা জ্বলনাঙ্কে পৌঁছোয় না, কিন্তু কাঠ তাপের কুপরিবাহী বলে তাপ পরিবাহিত করতে পারে না তাই কাগজের তাপমাত্রা জ্বলনাঙ্কে পৌঁছোয় ও কাগজ পুড়ে যায়। তবে অনেকক্ষণ ধরে রাখলে তামার ওপরের কাগজটিও পুড়ে যাবে।

তামা কাঠ বার্নার এবং কাগজের টুকরো

সিলিকনের আয়তন কখন কমে যায়?

সিলিকনের তাপমাত্রা 18 K থেকে 20 K পর্যন্ত বৃদ্ধি করলে আয়তন কমে যায়।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের তাপের ঘটনাসমূহ অধ্যায়ের কিছু সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন, যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

“মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – তাপের ঘটনাসমূহ – সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর” এ একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer