মাধ্যমিক ভূগোল – বারিমন্ডল – সমুদ্রস্রোত – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর

Gopi

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায়ের বারিমণ্ডলের “সমুদ্রস্রোত” বিভাগের কিছু রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

Table of Contents

মাধ্যমিক ভূগোল বিষয়ের তৃতীয় অধ্যায় হলো বারিমন্ডল, ছাত্র/ছাত্রীরা যারা মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ তাদের জন্য নিচে এই অধ্যায় সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো। প্রতিটি প্রশ্নের মান 3.

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - সমুদ্রস্রোত - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর

সমুদ্রস্রোত কয় প্রকার ও কী কী?

সমুদ্রস্রোত সাধারণত দুই প্রকারের —

  1. উষ্ণস্রোত
  2. শীতল স্রোত

উষ্ণস্রোত: উষ্ণমণ্ডলের মহাসাগরগুলির অন্তর্গত উষ্ণ ও হালকা জল পৃষ্ঠপ্রবাহরূপে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরের অংশ দিয়ে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। একে বলা হয় উষ্ণস্রোত। সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে উষ্ণস্রোতের আর-এক নাম হল পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোত (surface current)। উদাহরণ – উপসাগরীয় স্রোত।

শীতল স্রোত: উষ্ণমণ্ডলের জল যখন শীতল অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়, তখন সেই জলের শূন্যতা পূরণের জন্য মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল সমুদ্রের নিম্নাংশ দিয়ে অন্তঃপ্রবাহরূপে উষ্ণমণ্ডলের দিকে বয়ে যায়, একে বলা হয় শীতল স্রোত। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে শীতল স্রোতের আর এক নাম অন্তঃস্রোত। উদাহরণ – ল্যাব্রাডর স্রোত।

নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে কেন?

অবস্থান: কানাডার উপকূলের অদূরে নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপ অবস্থিত। এই দ্বীপটির কাছে পূর্ব আটলান্টিকের অগভীর অংশে অনেকগুলি মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে। এগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হল গ্র্যান্ড ব্যাংক।

সৃষ্টির কারণ: নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত দুটি বিপরীতধর্মী স্রোত অর্থাৎ দক্ষিণমুখী শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত এবং উত্তরমুখী উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের মিলনের ফলেই মগ্নচড়ার উৎপত্তি হয়েছে। সুমেরু মহাসাগরের ভাসমান হিমশৈলসমূহ শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। নিউফাউন্ডল্যান্ডের অদূরে এগুলি যখন উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সংস্পর্শে আসে, তখন গলে যায়। এর ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা নুড়ি, কাদা, বালি, পাথর প্রভৃতি সমুদ্রবক্ষে জমা হতে থাকে। যুগ যুগ ধরে এইভাবে জমা হওয়ার ফলে এখানকার সমুদ্রবক্ষে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন, মাধ্যমিক ভূগোল – বারিমন্ডল – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূল মৎস্যক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত কেন?

অথবা, গ্র্যান্ড ব্যাংক মৎস্যচাষের জন্য অনুকূল কেন?

অবস্থান: কানাডার পূর্ব উপকূলের অদূরে নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপ অবস্থিত। এই দ্বীপটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দুটি বিপরীতধর্মী স্রোত—শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত ও উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত। এই দুই স্রোতের মিলনের ফলে নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে আটলান্টিক মহাসাগরের অগভীর অংশে সৃষ্টি হয়েছে গ্র্যান্ড ব্যাংক নামে একটি বিশাল মাচড়া, যা মৎস্যচাষের জন্য বিখ্যাত। এই মাচড়া মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে বিখ্যাত হওয়ার কারণগুলি হল:

  • গ্র্যান্ড ব্যাংক মগ্ন চড়াটির আয়তন প্রায় 96000 বর্গকিমি এবং এখানে জলের গভীরতা 90 মিটারের কম।নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে সারাবছর মাছের বসবাসের উপযোগী অনুকূল তাপমাত্রা পাওয়া যায়। উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনের ফলে এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাঙ্কটনও প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।
নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে সৃষ্ট গ্র্যান্ড ব্যাংক

এজন্য গ্র্যান্ড ব্যাংককে কেন্দ্র করে নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ (যেমন—কড, হেরিং, ম্যাকারেল, হ্যাডক, হ্যালিবাট প্রভৃতি) ভিড় করে। এর ফলে সমগ্র এলাকাটি মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে সারাবছর কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে কেন?

সাধারণত যেসব অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন হয়, সেখানে উষ্ণ স্রোতের ওপর সৃষ্ট প্রচুর পরিমাণ জলীয়বাষ্প শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে জমে যায়। ফলে ওই অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়। নিউফাউন্ডল্যান্ডের পাশ দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত বয়ে যায়। এই দুই ভিন্নধর্মী স্রোতের মিলনে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল সারাবছর কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে।

কুয়াশাচ্ছন্ন নিউন্ডফাউন্ডল্যান্ড উপকূল

জাপানের উপকূলের কাছে মৎস্যক্ষেত্র দেখা যায় কেন?

উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে জাপান অবস্থিত এবং এই দেশটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে উষ্ণ কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত এবং শীতল কিউরাইল স্রোত। সুমেরু মহাসাগর থেকে আগত শীতল কিউরাইল বা কামচাটকা স্রোতের সঙ্গে বড়ো বড়ো হিমশৈলও থাকে, যেগুলি জাপানের উপকূলের কাছাকাছি উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। এর ফলে হিমশৈলবাহিত বিভিন্ন পদার্থ, যেমন—শৈবাল, নুড়ি-পাথর ইত্যাদি এখানকার মহীসোপানে সঞ্চিত হতে থাকে। এইভাবে দীর্ঘকাল জমা হতে হতে জাপানের উপকূলের অদূরে অনেক অগভীর মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলিকে কেন্দ্র করে এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এজন্য জাপানের উপকূলের কাছে বিভিন্ন ধরনের মাছের ব্যাপক সমাবেশ ঘটে এবং সমগ্র এলাকাটি মৎস্যক্ষেত্র হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

জাপানের পূর্ব উপকূলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় কেন?

সাগর-মহাসাগরের যেসব অংশে উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন হয়, সেখানে উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে জমে যায়। ফলে ওই অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়। জাপানের পূর্ব উপকূল দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে উষ্ণ কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে শীতল কিউরাইল স্রোত বয়ে যায়। এই দুই ভিন্নধর্মী স্রোতের মিলনের ফলে জাপানের পূর্ব উপকূলে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয়।

উত্তর ভারত মহাসাগরে গ্রীষ্মকালীন স্রোতের বর্ণনা দাও।

উত্তর ভারত মহাসাগরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে সম্পূর্ণ বিপরীত দিক থেকে সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের যে শাখাটি উত্তরদিকে বেঁকে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে সেটি মৌসুমি বায়ুর গতি ও দিক অনুসারে প্রবাহিত হয়। তাই এর নাম মৌসুমি স্রোত। গ্রীষ্মকালে এই স্রোতটি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ডানদিকে বেঁকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে সোমালি স্রোত নামে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এরপর, এই স্রোতটি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোত নামে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে সুমাত্রা দ্বীপ পর্যন্ত চলে যায়।

বারিমণ্ডল আসলে কী?

ভূপৃষ্ঠের মোট আয়তনের প্রায় 71 শতাংশ জলরাশি দ্বারা আবৃত। এই জলভাগের ভৌগোলিক নাম বারিমণ্ডল। ছোটো-বড়ো পুকুর, খাল, বিল, জলাশয়, সাগর, মহাসাগর – সবই বারিমণ্ডলের অন্তর্গত। সমুদ্রের জল সর্বদা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এগিয়ে যায়। সমুদ্র স্রোত সমুদ্রজলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। সমুদ্র স্রোতের জন্যই পৃথিবীর জলবায়ুর অনেকটা অংশ নিয়ন্ত্রিত হয়।

সমুদ্রস্রোতের নামকরণ কীভাবে হয়?

সমুদ্রস্রোতের নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বায়ুর ক্ষেত্রে যেদিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় সেদিক অনুযায়ী নামকরণ করা হয়। কিন্তু সমুদ্রস্রোতের ক্ষেত্রে সেই ধারণাটি সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থাৎ, সমুদ্রস্রোত যে স্থলভাগের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় বা যেদিকে প্রবাহিত হয় বা যে সাগর বা মহাসাগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অনুযায়ী নামকরণ করা হয়। যেমন—ক্যারিবিয়ান উপসাগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত স্রোতকে ক্যারিবিয়ান স্রোত নামে ডাকা হয় আবার ব্রাজিলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত স্রোতকে ব্রাজিল স্রোত নামে আখ্যায়িত করা হয়।

লন্ডন অপেক্ষা নিউইয়র্ক নিম্ন অক্ষাংশে অবস্থিত, অথচ নিউইয়র্কে শীত বেশি – এর কারণ কী?

লন্ডনের অক্ষাংশ প্রায় 51°30’26” উত্তর এবং নিউইয়র্কের অক্ষাংশ প্রায় 40°30 উত্তর। স্বাভাবিকভাবেই লন্ডনের তুলনায় নিউইয়র্কের উষ্ণতা বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু নিউইয়র্কে লন্ডনের থেকে শীতের তীব্রতা বেশি। এর কারণ সমুদ্রস্রোত। নিউইয়র্কের পাশ দিয়ে সুমেরু থেকে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয় বলে এই স্রোত নিউইয়র্কের পাশাপাশি অঞ্চলকে শীতার্ত করে তোলে। অন্যদিকে লন্ডনের পাশ দিয়ে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোত প্রবাহিত হয় বলে লন্ডনের তাপমাত্রা বেশি হয়।

সমুদ্রস্রোত কীভাবে উপকূলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে?

উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ:

  • উষ্ণ সমুদ্রস্রোত শীতল অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হলে সেখানকার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যেমন – উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলকে উষ্ণ রাখে।
  • শীতল সমুদ্রস্রোত উষ্ণ অঞ্চলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলে সেখানকার তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। যেমন – শীতল পেরু স্রোত পেরুর তাপমাত্রাকে খুব বাড়তে দেয় না।

বৃষ্টি, বন্যা, খরা: উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু বেশি জলীয় বাষ্প শোষণ করে বলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বাড়ে। অন্যদিকে শীতল স্রোতযুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়। এলনিনো এবং লা-নিনার প্রভাবে সন্নিহিত অংশে খরা ও বন্যা দেখা যায়।

কুয়াশা: শীতল এবং উষ্ণ স্রোত যেখানে মিলিত হয় সেখানে কুয়াশা, ঝড়-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয়। যেমন—নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল।

তুষারপাত: শীতল স্রোত শীতকালে বহু জায়গায় তুষারপাত ঘটায়।

সমুদ্রস্রোত কীভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়?

সমুদ্রস্রোত পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়:

  • পৃথিবীর তাপের সাম্য: উষ্ণ স্রোত মেরুর দিকে এবং মেরুর শীতল স্রোত নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রবাহিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মধ্যে তাপের আদান প্রদান ঘটে।
  • বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত: উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী অংশে বৃষ্টিপাত বাড়ে এবং শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী অংশে তুষারপাত এবং বৃষ্টিহীনতা দেখা যায়।
  • এলনিনো ও লা নিনা: এল নিনোর বছরগুলিতে দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, ইকুয়েডর উপকূলে উত্তর দিক থেকে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয়। এর প্রভাবে ওই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এমনকী ভারতে খরা প্রবণতা বাড়ে। লা নিনার বছরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টি, ভারতে স্বাভাবিক বর্ষা এবং পেরু ইকুয়েডরে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা যায়।

আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোতগুলির নাম লেখো।

আটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক, যা পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ এবং পশ্চিমে আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা আবদ্ধ। এই বিশাল আটলান্টিক মহাসাগরে দুটি ভিন্নধর্মী সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়, যথা উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত। এখানে এই আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্র স্রোতগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ স্রোতসমূহ

নিরক্ষীয় স্রোত: আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন গতি ও উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দুটি উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি হয়।

উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত: উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতটি উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে।

দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত: এই স্রোতটি দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে ব্রাজিলের শাও রোক অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে।

নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত: উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী একটি উষ্ণ স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলে।

ব্রাজিল স্রোত: দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের দক্ষিণের শাখাটি উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।

ক্যারিবিয়ান স্রোত: দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তরের শাখাটি ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে ক্যারিবিয়ান স্রোত নামে পরিচিত হয়।

ফ্লোরিডা স্রোত: ক্যারিবিয়ান স্রোত ইউকাটান প্রণালী দিয়ে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে ফ্লোরিডা স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।

উপসাগরীয় স্রোত: ফ্লোরিডা স্রোত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয় এবং মেক্সিকো উপসাগরে উপসাগরীয় স্রোত নামে পরিচিত।

উপসাগরীয় স্রোত উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়:

ক) ইরমিঙ্গার স্রোত: উপসাগরীয় স্রোতের উত্তর শাখা আইসল্যান্ডের দক্ষিণে ইরমিঙ্গার স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম দিকে ল্যাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

খ) উত্তর আটলান্টিক স্রোত: দ্বিতীয় শাখাটি আটলান্টিক স্রোত নামে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে বয়ে যায়।

গ) ক্যানারি স্রোত (শীতল স্রোত): তৃতীয় শাখাটি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের নিকট বাঁধা পেয়ে ক্যানারি স্রোত রূপে দক্ষিণে বেঁকে যায় এবং অবশেষে নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।

আটলান্টিক মহাসাগরের শীতল স্রোত

ফকল্যান্ড স্রোত: দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে কুমেরু স্রোতের একটি শাখা দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর সামান্য উত্তরে অগ্রসর হয় এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট এই স্রোত ফকল্যান্ড স্রোত নামে পরিচিত।

বেঙ্গুয়েলা স্রোত: কুমেরু স্রোতের প্রধান শাখাটি পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তরে বেঁকে যায় এবং বেঙ্গুয়েলার নিকট বেঙ্গুয়েলা স্রোত রূপে প্রবাহিত হয়।

গ্রীনল্যান্ড স্রোত: সুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল স্রোতের একটি শাখা গ্রীনল্যান্ডের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এর নাম গ্রীনল্যান্ড স্রোত।

ল্যাব্রাডর স্রোত: সুমেরু মহাসাগরের শীতল স্রোতের অপর একটি শাখা গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়ে গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিণে গ্রীনল্যান্ড স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। এই স্রোত কানাডার পূর্বে ল্যাব্রাডর উপদ্বীপের নিকট ল্যাব্রাডর স্রোত নামে পরিচিত।

আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ ও শীতল স্রোত

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতের নাম লেখো।

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোত –

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলি হল –

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন স্রোতের নাম লেখো।

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলি হল –

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোত

উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন স্রোতের নাম লেখো।

উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলি হল –

উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোত

প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন সমুদ্রস্রোতের নাম লেখো।

প্রশান্ত মহাসাগরের দুই প্রকার স্রোত প্রবাহিত হয় – (i) উষ্ণ স্রোত এবং (ii) শীতল স্রোত।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত
প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ ও শীতল স্রোত

ভারত মহাসাগরের উষ্ণ ও শীতল স্রোতগুলির নাম লেখো।

ভারত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোত –

ভারত মহাসাগরে দুই প্রকার স্রোত প্রবাহিত হয় – (i) উষ্ণ স্রোত এবং (ii) শীতল স্রোত।

ভারত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্রস্রোত
ভারত মহাসাগরের উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোত

সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গ – এর মধ্যে কী কী পার্থক্য আছে?

সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়সমুদ্রস্রোতসমুদ্রতরঙ্গ
চলনসমুদ্রস্রোত সমুদ্রজলের পৃষ্ঠদেশ বরাবর একমুখী চলন।সমুদ্রতরঙ্গ সমুদ্রপৃষ্ঠের জলরাশির পর্যায়ক্রমিক ওঠানামা।
স্থায়িত্বসমুদ্রস্রোত স্থায়ী এবং নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়।এটি সাময়িক এবং অনিয়মিত। কেবল বায়ুপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল।
তাপমাত্রাতাপমাত্রা অনুযায়ী সমুদ্রস্রোত দু-রকমের হয়। যথা – উষ্ণ এবং শীতলস্রোত।তাপমাত্রার ভিত্তিতে সমুদ্রতরঙ্গের আলাদা কোনো বিভাজন নেই।
নিয়ন্ত্রণসমুদ্রস্রোত যে অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে।সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলের ভূমিরূপকে নিয়ন্ত্রণ করে।

আরও পড়ুন – মাধ্যমিক ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ারভাটা – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায়ের বারিমণ্ডলের ‘সমুদ্রস্রোত’ বিভাগের কিছু রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer