দশম শ্রেণি – বাংলা – কোনি উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। বারুণীর দিন গঙ্গার ঘাটে বিষ্টুচরণ ধর শরীর মালিশ করিয়েছিলেন। বিচিত্র ভঙ্গিতে শরীর দলাই মলাই করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন মালিশওয়ালাকে। তাকে একজন মানুষ অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিষ্টু ধরকে তিনি তীব্র ব্যঙ্গ করে বললেন, “আপনি কি ভাবছেন, এইভাবে মালিশ করালে আপনার মোটা শরীর চিকন হয়ে যাবে? এটা তো সম্ভব নয়। আপনার হার্ট বোধহয় আর বেশিদিন এই গন্ধমাদন টানতে পারবে না।”
শুধু তা-ই নয়, লোকটি আরও বললেন, “তবে হাতি কিংবা হিপোর কখনো করোনারি অ্যাটাক হয়েছে বলে শুনিনি।”
এইসব কথা শুনে বিষ্টু ধর প্রচন্ড রেগে যান।
বিষ্টু ধরের কৌতূহলী মন
লোকটির জগিং করা, আইসোমেট্রিক, ক্যালিসথেনিক, বারবেল ইত্যাদি নানারকম এক্সারসাইজের কথা শুনে বিষ্টু ধর লোকটির প্রতি কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। যেভাবে লোকটি জগিং করতে করতে গঙ্গার ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে শেষ ধাপ পর্যন্ত অতি সহজে নামাওঠা করতে থাকেন তা দেখে বিষ্টু ধরের মনে লোকটির প্রতি রাগের বদলে কৌতূহল তৈরি হয়। মনে মনে তিনি ওই ছিপছিপে শরীরটার সঙ্গে নিজের মোটাসোটা শরীরকে বদলাবদলি করতে থাকেন। লোকটির চালচলন বিষ্টুচরণকে কৌতূহলী করে তোলে।
এই অংশে, বিষ্টু ধরের দুটি বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। প্রথমত, তিনি খুবই রাগান্বিত ব্যক্তি। একজন অপরিচিত লোকের ব্যঙ্গাত্মক কথায় তিনি প্রচন্ড রেগে যান। দ্বিতীয়ত, তিনি খুবই আত্মকেন্দ্রিক। লোকটির ছিপছিপে শরীর দেখে তিনি নিজের মোটা শরীরের কথা ভাবতে থাকেন।
এই অংশে লেখক বিষ্টু ধরের চরিত্রকে আরও গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। তার রাগান্বিত ও আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের পাশাপাশি তার কৌতূহলী মনও পাঠকদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে।
“ওর চোখে এখন রাগের বদলে কৌতূহল।” – কার কথা বলা হয়েছে? তাঁর রাগ এবং কৌতূহলের কারণ লেখো।
উদ্দিষ্টের পরিচয় – মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে বিষ্টু ধরের কথা বলা হয়েছে।
রাগ ও কৌতূহলের কারণ –
- বিষ্টু ধরের প্রতি ব্যঙ্গবাণ – বারুণীর দিন গঙ্গার ঘাটে শরীর মালিশ করাচ্ছিলেন বিষ্টুচরণ ধর। বিচিত্র ভঙ্গিতে শরীর দলাই মলাই করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন মালিশওয়ালাকে। তাঁকে একজন মানুষ অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করেছিলেন, এবং শেষ পর্যন্ত বিষ্টু ধরকে তিনি তীব্র ব্যঙ্গও করেন। শুধু তা-ই নয়, আপনার হার্টটা বোধহয় আর বেশিদিন এই গন্ধমাদন টানতে পারবে না-এ কথা বলে তিনি বিষ্টু ধরের মৃত্যুসম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করেন। তারপরে ব্যঙ্গকে আরও তীক্ষ্ণ করে লোকটি বলেন যে, তবে হাতি কিংবা হিপোর কখনো করোনারি অ্যাটাক হয়েছে বলে শুনিনি। এইসব কথা শুনে বিষ্টু ধর প্রচন্ড রেগে যান।
- বিষ্টু ধরের কৌতূহলী মন – লোকটির জগিং করা, কিংবা লোকটির মুখে আইসোমেট্রিক, ক্যালিসথেনিক, বারবেল ইত্যাদি নানারকম এক্সারসাইজের কথা শুনে বিষ্টু ধর লোকটির প্রতি কৌতূহল হয়ে ওঠেন। যেভাবে লোকটি জগিং করতে করতে গঙ্গার ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে শেষ ধাপ পর্যন্ত অতি সহজে নামাওঠা করতে থাকেন তা দেখে বিষ্টু ধরের মনে লোকটির প্রতি রাগের বদলে কৌতূহল তৈরি হয়। মনে মনে তিনি ওই ছিপছিপে শরীরটার সঙ্গে নিজের মোটাসোটা শরীরকে বদলাবদলি করতে থাকেন। লোকটির চালচলন বিষ্টুচরণকে কৌতূহলী করে তোলে।
এই গল্পটিতে, আমরা বিষ্টু ধরের দুটি ভিন্ন দিক দেখতে পাই – একদিকে তার অহংকার এবং আত্মকেন্দ্রিকতা, অন্যদিকে তার কৌতূহলী মন।
গল্পের শুরুতে, আমরা দেখি বিষ্টু ধর গঙ্গার ঘাটে শরীর মালিশ করিয়ে রীতিমত রাজার মত আচরণ করছেন। একজন লোক তার এই আচরণ দেখে তীব্র ব্যঙ্গ করে। বিষ্টু ধরের মোটা শরীর এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার উপর কটাক্ষ করে লোকটি তার মৃত্যুর সম্ভাবনাও উল্লেখ করে। এই কথা শুনে বিষ্টু ধর রেগে যান, যা তার অহংকারী মনোভাবের প্রমাণ।
কিন্তু পরে, লোকটির জগিং এবং এক্সারসাইজ সম্পর্কে শুনে বিষ্টু ধরের মনে কৌতূহল জাগে। লোকটির সুস্থ ও সতেজ শরীর দেখে বিষ্টু ধর নিজের মোটা শরীরের সাথে তুলনা করতে শুরু করেন। লোকটির সাবলীল চলাফেরা দেখে বিষ্টু ধর তার প্রতি রাগ ভুলে কৌতূহলী হয়ে পড়েন।
এই গল্পটি আমাদের শেখানোর চেষ্টা করে যে, অহংকার কখনোই কাম্য নয়। আমাদের সবসময় অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত এবং তাদের থেকে শেখার চেষ্টা করা উচিত। এছাড়াও, গল্পটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার গুরুত্বের উপরও জোর দেয়।
উপসংহারে বলা যায়, “বিষ্টু ধরের প্রতি ব্যঙ্গবাণ” গল্পটি একটি উপদেষ্টামূলক গল্প যা আমাদের অহংকার ত্যাগ করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার শিক্ষা দেয়।