তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে উপরের ধাতুগুলিকে কেন শুধু লবণের তড়িৎবিশ্লেষণের মাধ্যমে নিষ্কাশন করা হয়?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে ওপরের দিকে অবস্থিত ধাতুসমূহকে কেবলমাত্র তাদের লবণের তড়িদবিশ্লেষণের সাহায্যেই নিষ্কাশন করা হয় কীভাবে?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে ওপরের দিকে অবস্থিত ধাতুসমূহকে কেবলমাত্র তাদের লবণের তড়িদবিশ্লেষণের সাহায্যেই নিষ্কাশন করা হয় কীভাবে?
Contents Show

তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে ওপরের দিকে অবস্থিত ধাতুসমূহকে কেবলমাত্র তাদের লবণের তড়িদবিশ্লেষণের সাহায্যেই নিষ্কাশন করা হয় কীভাবে?

তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণির ওপরের দিকে যেসব ধাতুর অবস্থান সেগুলি অধিক তড়িৎ-ধনাত্মক হওয়ায়, তাদের সহজেই জারিত হয়ে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা বেশি। অর্থাৎ, এসব ধাতু নিজেরা শক্তিশালী বিজারক পদার্থ এবং রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে এদের ধনাত্মক আয়ন থেকে বিজারিত করে ধাতুতে পরিণত করা যায় না। তড়িদবিশ্লেষণের মাধ্যমে মুক্ত ইলেকট্রন দ্বারাই এদের ধনাত্মক আয়নসমূহকে বিজারণ করা সম্ভব। সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম প্রভৃতি ধাতুর ক্লোরাইড বা হাইড্রাইডের গলিত অবস্থায় তড়িদবিশ্লেষণের দ্বারা ধাতু নিষ্কাশন করা হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণি কী?

তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণি হলো ধাতুগুলিকে তাদের বিজারণ ক্ষমতা বা তড়িৎ-ধনাত্মকতার ক্রমানুসারে সাজানো একটি তালিকা। এই শ্রেণির সবচেয়ে ওপরে (যেমন – Li, K, Ba, Ca, Na) থাকে সবচেয়ে তড়িৎ-ধনাত্মক ও শক্তিশালী বিজারক ধাতুগুলি এবং নিচের দিকে (যেমন – Cu, Ag, Au) থাকে কম তড়িৎ-ধনাত্মক ও দুর্বল বিজারক ধাতুগুলি।

সোডিয়াম, ক্যালশিয়ামের মতো ধাতু রাসায়নিকভাবে বিজারণ করা যায় না কেন?

সোডিয়াম ও ক্যালশিয়ামের মতো ধাতু অত্যন্ত শক্তিশালী বিজারক। অর্থাৎ, তারা খুব সহজেই ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। অন্য কোনো রাসায়নিক বিজারক (যেমন – কার্বন) এতটা শক্তিশালী নয় যে এদের আয়নগুলিকে ইলেকট্রন দান করে ধাতুতে পরিণত করতে পারে। তাই, এদের নিষ্কাশনের জন্য শক্তিশালী তড়িৎ শক্তির (বিদ্যুৎ) ব্যবহার করে জারণ প্রবণতা অতিক্রম করতে হয়।

তড়িদবিশ্লেষণে “গলিত” অবস্থার প্রয়োজন কেন? জলের দ্রবণ ব্যবহার করা যায় না কেন?

জলের দ্রবণ ব্যবহার করা যায় না, কারণ জল নিজেই এই শক্তিশালী ধাতুগুলির চেয়ে সহজে বিজারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলের দ্রবণে তড়িৎ প্রবাহ চালালে ক্যাথোডে সোডিয়াম ধাতু নয়, বরং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় (জলের বিজারণ ঘটে)। তাই, ধাতুটিকে নিষ্কাশন করতে হলে এর লবণকে গলিয়ে নিতে হয়, যেখানে ক্যাথোডে কেবলমাত্র ধাতব আয়নই বিজারিত হতে পারে।

তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণির নিচের দিকের ধাতু (যেমন – তামা, রূপা) নিষ্কাশনে কি তড়িদবিশ্লেষণ ব্যবহার হয়?

হ্যাঁ, হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় জলের দ্রবণ থেকেই তড়িদবিশ্লেষণ করা সম্ভব, কারণ এগুলো জলের চেয়ে কম সক্রিয়। উদাহরণস্বরূপ, তামার সালফেট দ্রবণের তড়িদবিশ্লেষণে ক্যাথোডে বিশুদ্ধ তামা জমা হয়। আবার দুর্বল বিজারক ধাতু হওয়ায় এদেরকে কার্বনের মতো রাসায়নিক বিজারক দিয়েও আকরিক থেকে নিষ্কাশন করা যায় (যেমন – লোহার আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাশন)।

তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণির মাঝামাঝি অবস্থানকারী ধাতু (যেমন – জিঙ্ক, আয়রন) কীভাবে নিষ্কাশন করা হয়?

তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণির মাঝামাঝি অবস্থানকারী ধাতুগুলি (যেমন – Zn, Fe, Sn, Pb) সাধারণত তাদের অক্সাইড আকরিককে কোক (কার্বন) দিয়ে বিজারণ করে নিষ্কাশন করা হয়। এরা কার্বনের চেয়ে বেশি সক্রিয়, কিন্তু এতটা নয় যে শুধুমাত্র তড়িদবিশ্লেষণের মাধ্যমেই নিষ্কাশন করতে হবে। উচ্চ তাপমাত্রায় কার্বন এদের অক্সাইড থেকে অক্সিজেন সরিয়ে দিয়ে ধাতু প্রদান করে।

তড়িদবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কী কী ব্যয়বহুল বিষয় জড়িত?

তড়িদবিশ্লেষণ একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া, কারণ —
1. বিদ্যুৎ শক্তির উচ্চ খরচ – বড় আকারের তড়িদবিশ্লেষণ কোষ চালাতে প্রচুর তড়িৎ শক্তির প্রয়োজন হয়।
2. উপকরণের দাম – ইলেকট্রোড (বিশেষ করে অ্যানোড) তৈরি করতে প্রায়ই দামি ধাতু ব্যবহার করতে হয়।
3. রক্ষণাবেক্ষণ – উচ্চ তাপমাত্রায় গলিত লবণ বা অক্সাইড ধরে রাখার জন্য বিশেষ ধরনের ভাটি (furnace) এবং প্রতিরোধক পাত্রের প্রয়োজন হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে ওপরের দিকে অবস্থিত ধাতুসমূহকে কেবলমাত্র তাদের লবণের তড়িদবিশ্লেষণের সাহায্যেই নিষ্কাশন করা হয় কীভাবে?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026

Madhyamik Life Science Suggestion 2026

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা