দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

অদল বদল গল্পটি পান্নালাল প্যাটেল রচিত একটি বিখ্যাত বাংলা গল্প। এটি মাধ্যমিক স্তরের বাংলা পাঠ্যপুস্তকের একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প। গল্পটিতে দুই শিশুর অদলবদলের মধ্য দিয়ে জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

অদল বদল গল্পে হোলির পড়ন্ত বিকেলে কী ঘটনা ঘটেছিল তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

  • শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পে হোলির পড়ন্ত বিকেলে দুই বন্ধু অমৃত আর ইসাব একইরকম জামা পরে ফুটপাথের শান-বাঁধানো রাস্তায় বসে ছেলেদের ধুলো ছোড়াছুড়ি খেলা দেখছিল।
  • কুস্তি লড়াই-এর ডাক – আর ঠিক সেই সময়ই, তাদের দুজনের একইরকম পোশাক দেখে ছেলেদের দঙ্গল থেকে একটি ছেলে এসে অমৃতকে কুস্তি লড়তে বলেছিল। অমৃত চায়নি কুস্তি লড়তে, কারণ সে নতুন জামা পরেছিল আর এই জামা সে অনেক কষ্টে, অনেক জেদ করে বাড়ি থেকে আদায় করেছিল। তার মাও তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন জামা যাতে সে নোংরা না করে আসে।
  • কুস্তি লড়াই – কিন্তু অমৃতের অমত সত্ত্বেও কালিয়া তাকে বাধ্য করে কুস্তি লড়তে, লড়তে গিয়ে তাকে মাটিতে ছুঁড়েও ফেলে দেয়। এই ঘটনা দেখে ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে তাকে হারিয়ে দেয়। এই কুস্তি লড়তে গিয়ে আবার ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়।
  • অদল বদল নামকরণ – বাবার কাছে এই জামা ছেঁড়ার জন্য মার খেতে হবে ভেবে ইসাব যখন ভয় পায়, তখন অমৃত তাকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। এই জামা অদলবদলের ঘটনার পর থেকে সারা গ্রামে তাদের ‘অদল বদল’ নাম প্রচলিত হয়ে যায়।

অদল বদল গল্পটিতে অমৃত-ইসাবের মধ্যে যে ভালোবাসা ও প্রকৃত বন্ধুত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

অমৃত ও ইসাবের ভালোবাসার গল্প – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে অমৃত আর ইসাব বেশিরভাগ সময় একসঙ্গেই থাকত। তাদের বাড়িও ছিল মুখোমুখি। গল্পে আমরা দেখি অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া তাকে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তাই দেখে ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে তাকে হারিয়ে দেয়। কালিয়া অমৃতকে আঘাত করায় ইসাব সেটা সহ্য করতে পারেনি। কিন্তু এই লড়াইয়ের ফলে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। আর তাতে সে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে, জামা ছেঁড়ার জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে। এই সময় অমৃত ইসাবকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। ইসাব আপত্তি জানালে অমৃত তাকে বলে, সে মার খেলেও তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা আছে। কিন্তু ইসাবের শুধু বাবা আছেন। তাই বাবার হাতে মার খেলে তাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না। এইসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায় তারা দুজনে দুজনকে কতটা ভালোবাসত, কত গভীর ছিল তাদের বন্ধুত্ব।

ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। – কারা কেন ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল? কীভাবে এই ভয় থেকে তাদের মুক্তি ঘটেছিল?

ভয় পাওয়ার কারণ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে অমৃত আর ইসাব ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। নতুন জামা পরে ঘর থেকে বেরোনো অমৃতকে কালিয়া কুস্তি লড়ার জন্য জোর করে খোলা মাঠে নিয়ে যায় এবং তাকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ইসাব বন্ধুর এই অপমান সহ্য করতে না পেরে কালিয়ার হাত ধরে তার সাথে লড়ার জন্য আহবান করে এবং কালিয়াকে হারিয়েও দেয় সে। কিন্তু এসবের মধ্যেই ইসাবের নতুন জামার পকেটটা অনেকটা ছিঁড়ে যায়। নতুন জামা ছিঁড়ে ফেলায় ইসাবকে তার বাবার কাছে ভয়ানক মার খেতে হবে- এ কথা ভেবেই দুই বন্ধু তখন ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল।

ভয় থেকে মুক্তি – এই ভয় ও ইসাবকে মার খাওয়া থেকে বাঁচতে থেকে অমৃত নিজের জামাটা খুলে ইসাবকে পরতে দেয়, নিজে ইসাবেরটা পরে। এভাবে তারা তখনকার মতো দুশ্চিন্তা ও ভয় থেকে মুক্তি পেয়েছিল। বাড়ি ফেরার পরে অমৃতের মা ছেঁড়া জামা দেখে বিব্রত হলেও সেভাবে কিছু বলেন না, ছুঁচ-সুতো দিয়ে জামাটা রিফু করে দিয়েছিলেন। এতে দুজনের ভয় আরও কেটে গিয়েছিল। গল্পের শেষে যখন ইসাবের বাবা জামা বদলের কাহিনিটি অমৃতের মাকে জানান, আর অমৃতের কাজে এবং বন্ধুপ্রীতিতে খুশি হয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তখন যাবতীয় ভয় এক অনাবিল আনন্দে বদলে গিয়েছিল।

অদল বদল গল্পে হিন্দু-মুসলিম পারস্পরিক সম্প্রীতির যে পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

অথবা, ‘অদল বদল’ গল্পের মাধ্যমে চিরন্তন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়েছে-আলোচনা করো।

  • শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে আমরা অমৃত ও ইসাব-এই দুই বন্ধুর কথা জানতে পারি।
  • সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি – এই দুই বন্ধুর প্রায় সব কিছুই ছিল একরকম। তবে তাদের ধর্ম ছিল আলাদা। অমৃত ছিল হিন্দু পরিবারের ছেলে আর ইসাব মুসলিম পরিবারের। কিন্তু এই ধর্মের পার্থক্য তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কখনোই কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তাদের দুজনের পরিবারের মধ্যেও সুসম্পর্ক ছিল।
  • পরিপূরক বন্ধুত্ব – অমৃত আর ইসাব বিপদের দিনে সবসময় একে অন্যের পাশে থাকত। অমৃতকে যখন কালিয়া জোর করে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তখন ইসাব তার প্রতিবাদ করে।
  • বন্ধুত্বের পরিচয় – বন্ধুর অপমানের শোধ নিতে ইসাব কালিয়াকে তার সঙ্গে কুস্তি লড়ার আহ্বান জানায়। সে কালিয়াকে হারিয়েও দেয়। এই কুস্তি লড়াইয়ের ফলে ইসাবের জামা ছিঁড়ে যায়। এতে ইসাব প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। তখন অমৃত সেই ছেঁড়া জামাটি পরে নিয়ে ইসাবকে নিজের নতুন জামাটি দিয়েছিল। এইভাবে সে ইসাবকে তাঁর বাবার মারের হাত থেকে বাঁচায়।
  • ইতিকথা – এই ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে, তাদের ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব সমস্ত ধর্মের ভেদাভেদকে অতিক্রম করে গিয়েছিল।

অদল বদল গল্পের নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে তা বিচার করো।

যে-কোনো সাহিত্যরচনার মূলভাব বা বিষয় পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে রচনার নামকরণের মাধ্যমে। নামকরণ প্রতিটি সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, চরিত্রকেন্দ্রিক, ভাব অনুযায়ী আবার কখনও-বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে মূলত গল্পের বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। এই গল্পে আমরা দুই বন্ধুর কাহিনি পাই যাদের সব কিছুই প্রায় একরকম ছিল। এমনকি তারা জামাও পরত একরকম। একজনের বিপদে অন্যজন সবসময় এগিয়ে আসত। ইসাব আর অমৃত দুজনেই হোলি উপলক্ষ্যে পেয়েছিল নতুন জামা আর সেই জামা যাতে না ছেঁড়ে সে ব্যাপারে দুজনেই সচেতন ছিল। কারণ তারা জানত, জামা ছিঁড়লে আর সেটা বাড়ির লোকেরা জানতে পেলে তাদের কপালে খুব দুঃখ আছে।

হোলির দিন বিকেলবেলায় কালিয়া অমৃতকে কুস্তি লড়ার নাম করে মাটিতে ফেলে দেয়, সেই ঘটনা দেখে ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়। সে অমৃতের হেনস্থার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু কুস্তি লড়তে গিয়ে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাব জানত, জামা ছেঁড়ার কথা তার বাবা জানতে পারলে তাকে বাড়ি ফিরে নিশ্চিত মার খেতে হবে। অমৃত ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জামা অদলবদল করার পরামর্শ দেয়। তাদের এই জামা অদলবদলের কাহিনি সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি গ্রামপ্রধানও তাদের নাম ‘অদল’ এবং ‘বদল’ বলে ঘোষণা করেন। গ্রামবাসীদের তাদের সেই নামে ডাকতেও বলেন। অমৃত ও ইসাবের এই জামা অদলবদল আর তাদের নতুন নামকরণ ‘অদল’ আর ‘বদল’-এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই গল্পের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। তাই বলা যায়, গল্পের বিষয়বস্তুর অনুসরণে রচিত এই ‘অদল বদল’ নামকরণটি সার্থক হয়েছে।

অদল বদল গল্প অবলম্বনে ইসাবের বাবা হাসানের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাবের বাবা হাসান পাঠান একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
  • দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই – হাসানের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাড়িতে সদস্য বলতে তিনি ও তাঁর ছেলে ইসাব-এই দুজন। কিন্তু ইসাবকেই লেখাপড়া শেখাতে হিমশিম খেতে হয় তার বাবাকে। সাময়িক বিপদ-আপদে সুদে টাকা ধারও নিতে হয় তাঁকে। সামান্য জমির আয়ে কোনোমতে তাদের দিন চলে। ইসাবের বাবা ছেলেকে জামাও কিনে দেন মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে।
  • পিতৃসত্তার বিকাশ – কুস্তির সময় ইসাবের জামা ছিঁড়ে যায়। সহপাঠী অমৃত ইসাবের ছেঁড়া জামাটা নিয়ে তাকে তার ভালো জামাটা দেয়। কারণ, তাতে ইসাব বাবার হাতে মার খাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। এ কথা আড়াল থেকে শুনে হাসানের চোখের সামনে থেকে সংকীর্ণ ধর্মের কালো মেঘ সরে যায়। তাঁর মনে হয় অমৃত যেন তাঁরও ছেলে। মুসলমান হাসান একমুহূর্তেই হয়ে ওঠেন শাশ্বত পিতা, মনুষ্যত্ব যাঁর ধর্ম।
  • মানবতা – দেশকালের সীমা অতিক্রম করে যে মানবতা, গল্পে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন হাসান। ধর্ম বা জামা অদলবদল নয়, হৃদয়ের নিখাদ ভালোবাসার বিনিময় ঘটলে আমাদের সমাজে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটবে।
  • ইতিকথা – এই চিরকালীন সত্যটি গল্পে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাসান চরিত্রটির মাধ্যমে।

অদল বদল গল্প অবলম্বনে অমৃতের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – ‘অদল বদল’ গল্পে দেশ-কাল-ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে বন্ধুত্বের এক অনবদ্য রূপ ফুটে উঠেছে। সেই চিরন্তন বন্ধুত্ব আসলে মানবতার প্রসার ঘটায়। আর সেখানে সর্বাধিক সক্রিয় চরিত্র হল অমৃত।
  • অকৃত্রিম বন্ধুপ্রীতি – অমৃত দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে। ইসাব তার বন্ধু। একই স্কুলে, একই ক্লাসে পড়ে তারা। দুজনের জামার মাপ, কাপড়, রং-এসবই ছিল এক ধরনের। অন্তরেও তারা দুজনে এক। এই অকৃত্রিম বন্ধুপ্রীতির চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে অমৃত যখন তার ভালো জামাটা দিয়ে ইসাবের ছেঁড়া জামাটা নিজের গায়ে পরে নিয়েছে।
  • বাস্তব বুদ্ধি – অমৃত ইসাবকে বলেছে, তোকে তোর বাবা পিটোবে। কিন্তু আমাকে বাঁচানোর জন্য তো আমার মা আছে। অমৃতের এই উক্তি তার বুদ্ধিমত্তা এবং বাস্তব জ্ঞানের পরিচয় দেয়। পাশাপাশি মা-হারা ইসাবের প্রতি তার এই অতিরিক্ত ভালোবাসাও পাঠককে মুগ্ধ করে।
  • মানবতা – বন্ধুত্ব যে কখনও ধর্ম-বর্ণ-আর্থিক পরিস্থিতির বাধা মানে না-তার যথার্থ প্রমাণ অমৃত। ইসাবের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় তা আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

অমৃত বয়সে নিতান্তই ছোটো। তবু তার আচার-আচরণে এবং মানসিকতায় সহৃদয়তার প্রকাশ দেখা যায়। এভাবেই অমৃত এক অনবদ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে।

অদল বদল গল্প অবলম্বনে ইসাবের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – লেখক পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পটি বন্ধুপ্রীতির এক জীবন্ত উদাহরণ। অমৃত আর ইসাব-এই দুজনের আন্তরিক সম্পর্কের স্বরূপই হল গল্পের মুখ্য বিষয়।
  • পরিচয় – ইসাব দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে। তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। সাময়িক বিপদ-আপদেও তার বাবা হাসানকে সুদে টাকা ধার নিতে হয়। তবে তার মা নেই। বাবা-ই তাদের সংসারের একমাত্র কর্তা। ইসাবকে খেতেও কাজ করতে হয়।
  • অকৃত্রিম বন্ধুপ্রীতি – অমৃতের সঙ্গে ইসাবের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। তাদের সব কিছুই একই রকমের। একই স্কুলে একই শ্রেণিতে পড়ে তারা। হোলির দিন কালিয়া বলে একটা ছেলে কুস্তি লড়ার সময় অমৃতকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিলে ইসাব স্থির থাকতে পারেনি। সে কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে কালিয়ার ঔদ্ধত্যকে চূর্ণ করে দিয়েছে।
  • সহমর্মিতা – কালিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ের সময় ইসাবের নতুন জামাটার পকেট এবং কিছুটা অংশ ছিঁড়ে গিয়েছিল। অমৃত তার ভালো জামাটা ইসাবকে পরে নিতে বললে ইসাব স্বার্থপরের মতো তা করতে চায়নি। সে বলেছে- তোর কী হবে, তুই কী পরবি? কোনোভাবেই ইসাব অমৃতের থেকে আলাদা হয়ে যায়নি।
  • ইতিকথা – বন্ধুত্বের যে নিষ্পাপ ও পবিত্র প্রকাশ এই গল্পে মানবতাকে ফুটিয়ে তুলেছে, তার একদিকে যেমন অমৃত অন্যদিকে তেমনই রয়েছে ইসাবেরও উজ্জ্বল উপস্থিতি।

অদল বদল গল্প অবলম্বনে অমৃতের মায়ের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পটি মূলত অমৃত-ইসাবের বন্ধুপ্রীতির কাহিনি। এই গল্পের খুব স্বল্প অংশজুড়ে থাকলেও অমৃতের মা-র চরিত্রটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্নেহময়ী – খুব সাধারণ পরিবারের গৃহবধূ অমৃতের মা। অমৃতের দুরন্তপনা তাঁকেই সামলাতে হয়। গল্পে আমরা দেখি, ইসাবের মতো নতুন জামা নেবে বলে অমৃত বায়না ধরে। নাছোড়বান্দা ছেলেকে বুঝিয়ে কাজ না হলেও অমৃতের মা কিন্তু তার এই একগুঁয়ে স্বভাব দেখে রেগে যাননি। তাঁর স্বামীকে বুঝিয়ে ইসাবের মতো একটা নতুন জামা অমৃতকে কিনে দিতে রাজি করিয়েছেন। মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন তিনি।
  • আদর্শময়ী – অমৃতের মা আদর্শ গৃহবধূ। সন্তানের দুরন্তপনায় যেমন তাঁকে বিচলিত হতে দেখা যায় না তেমনই বাবার পিটুনির হাত থেকে অমৃতকে বাঁচানোর দায়িত্ব তিনিই নেন। ইসাবের ছেঁড়া জামাটা নিজের গায়ে পরে নিয়ে অমৃত বাড়ি ফেরার সাহস দেখিয়েছে শুধু তার মা আছে বলেই।
  • উদারমনা – অন্য ধর্মের হলেও তিনি কখনও অমৃতকে ইসাবের সঙ্গে মিশতে বারণ করেননি। বরং ইসাবের বাবাকে ‘হাসান ভাই’ সম্বোধন করে তিনি পারস্পরিক সামাজিক বন্ধনের বিষয়টিকে দৃঢ় করে দেখিয়েছেন।
  • ইতিকথা – তবে এই গল্পে প্রধানত মাতৃমূর্তিতেই ভাস্বর হয়ে উঠেছেন অমৃতের মা।

ছোটোগল্প হিসেবে ‘অদল বদল’ কতদূর সার্থক বিচার করো।

পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ হল ধর্ম এবং জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে দুই কিশোরের নির্মল বন্ধুত্বের গল্প। আয়তনে ছোটো হওয়া যদি ছোটোগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয় তাহলে ‘অদল বদল’-এ সেই শর্ত অবশ্যই মানা হয়েছে। কাহিনির শুরুও হয়েছে আকস্মিকতা দিয়ে- হোলির দিনের পড়ন্ত বিকেল। ছোটোগল্পের কাহিনিতে শাখাপ্রশাখার বিস্তার ঘটে না। একটি মাত্র ঘটনা তার আশ্রয় হয়। এই গল্পেও দুই বন্ধুর জামাবদল এবং তাদের বাড়ি ও চারপাশে তার প্রতিক্রিয়াই কাহিনির বিষয়। চরিত্রের সংখ্যাও স্বাভাবিকভাবেই খুব কম। এখানে প্রধান দুই চরিত্র অমৃত ও ইসাব ছাড়া অমৃতের মা বাহালি, আর ইসাবের বাবা পাঠানকে পাওয়া যায়। ছেলের দল এবং কালিয়ার উপস্থিতিও অমৃত- ইসাবের বন্ধুত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তাই বলাই যায়, প্রথাগতভাবে ‘অদল বদল’ তার ছোটোগল্পের আঙ্গিক বজায় রেখেছে।

অমৃতকে অপমানিত হতে দেখে ইসাব কুস্তি লড়ে, আবার কুস্তির মাঠে ইসাবের জামা ছিঁড়ে গেলে অমৃত নিজের নতুন জামাটা ইসাবকে দিয়ে দেয়। সবমিলিয়ে যে বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি হয় সেখানে ধর্ম নেই, আছে সহমর্মিতা আর ভালোবাসা। এভাবে বিষয়গত আবেদনেও ‘অদল বদল’ অসামান্য হয়ে উঠেছে। ছোটোগল্প হিসেবে এভাবেই ‘অদল বদল’ সার্থক হয়ে উঠেছে।

অদল বদল গল্পটি আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, আমরা যে অবস্থানেই থাকি না কেন, আমাদের উচিত সবসময় ভালো মানুষ হওয়া। আমাদের উচিত পরের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সহায়ক হওয়া।

Share via:

মন্তব্য করুন