দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi

পান্নালাল প্যাটেলের লেখা অদল বদল গল্পটি দশম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যপুস্তকের একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প। গল্পটিতে দুইটি শিশুর বন্ধুত্ব এবং পরস্পরকে সাহায্য করার মানসিকতার কথা বর্ণিত হয়েছে।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অমৃত সত্যি তার বাবা-মাকে খুব জ্বালিয়েছিল। — অমৃত কীভাবে বাবা-মাকে জ্বালাতন করেছিল? অবশেষে অমৃতের মা কী করেছিল?

অমৃতের জ্বালাতন – অমৃত ও ইসাব দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। খেতে কাজ করতে গিয়ে ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় তার বাবা তাকে নতুন জামা কিনে দিয়েছিলেন। আর সেটা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তার জামা প্রায় নতুন থাকা সত্ত্বেও অমৃত জেদ করেছিল তার জন্য নতুন জামা কেনার। নিজের জামার একটা ছোটো ছেঁড়া জায়গা খুঁজে বের করে তাতে আঙুল ঢুকিয়ে সেই জায়গাটাকে সে আরও ছিড়ে দিয়েছিল। অমৃতের মা তাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এটাও বলেছিলেন যে, ইসাবকে জামা কিনে দেওয়ার আগে ইসাবের বাবা তাকে খুব মেরেছিলেন। এই কথা শুনে অমৃত মার খেতেও রাজি ছিল।

অমৃতের মায়ের গৃহীত পদক্ষেপ – এই সমস্ত ঝামেলা থেকে বাঁচবার জন্য অমৃতের মা অমৃতকে তার বাবার কাছে যেতে বলেছিলেন। অমৃত জানত, তার মা যদি না বলেন তাহলে তার বাবার রাজি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র সে ছিল না। সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল, রাতে বাড়ি ফিরতেও চায়নি। এমনকি একদিন রাত্রিবেলা ইসাবদের গোয়ালঘরে গিয়েও সে লুকিয়েছিল। অবশেষে অমৃতের মা হাল ছেড়ে দিয়ে অমৃতের বাবাকে রাজি করিয়েছিলেন তাকে জামা কিনে দেওয়ার জন্য।

ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। – কারা কেন ভয়ে কাঠ হয়ে গেল?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পের উল্লিখিত অংশে অমৃত আর ইসাবের কথা বলা হয়েছে।

ভয় পাওয়ার কারণ – নতুন জামা পরে অমৃত ইসাবের সঙ্গে বাইরে বেরোলে কালিয়ার দল অমৃতকে জোর করে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং অনিচ্ছুক অমৃতকে মাটিতে ফেলে দেয়। বন্ধুর এই লাঞ্ছনায় ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়। সে কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। বিষয়টা ঘোরালো হয়ে যাচ্ছে বুঝে এবং কালিয়ার বাবা-মা এসে তাদের পেটাতে পারে বুঝে সবাই এ সময় পালিয়ে যায়। অমৃত আর ইসাবও সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরেই অমৃতর নজরে আসে যে ইসাবের জামার পকেট এবং ছ-ইঞ্চি পরিমাণ কাপড় ছিঁড়ে গেছে। এতেই তারা ভয়ে কাঠ হয়ে যায়, কারণ ইসাবের বাবা হাসান পাঠান সুদখোরের কাছ থেকে টাকা ধার করে কাপড় কিনে ইসাবের জামা সেলাই করে দিয়েছিলেন। অমৃত আর ইসাব তাই ভয় পেয়েছিল যে ইসাবের বাবার দেওয়া শার্ট দেখামাত্রই তার ‘চামড়া তুলে নেবে’। এই ভয়েই তারা কাঠ হয়ে গিয়েছিল।

গ্রামপ্রধানের অমৃত ও ইসাবের নাম ‘অদল বদল’ ঘোষণা করার পেছনে যে কারণ ছিল তা বর্ণনা করো।

  • শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে কালিয়া যখন অমৃতকে কুস্তিতে হারিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তখন ইসাব বন্ধুর অপমানের প্রতিবাদ জানাতে কালিয়ার সঙ্গে আবার কুস্তি লড়ে।
  • কুস্তি লড়াই – কুস্তিতে ইসাব কালিয়াকে হারিয়েও দেয়। আর এই কুস্তি লড়তে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়।
  • জামা অদলবদলের বুদ্ধি – বাবার মারের হাত থেকে ইসাবকে বাঁচাতে অমৃত জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। সে নিজের জামা ইসাবকে দিয়ে ইসাবের জামা নিজে পরে নেয়। তাদের এই জামা অদলবদলের দৃশ্য গ্রামের একটি ছেলে ছাড়া ইসাবের বাবাও দেখেন। এই দৃশ্য দেখে তিনি অমৃতের উদারতা এবং দুই বন্ধুর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হন।
  • অদলবদলের কাহিনি বলা – ইসাবের বাবা অমৃতের বাড়ি এসে এই কাহিনি অমৃতের মাকে বলেন এবং পাড়াপড়শিরাও সেই কাহিনি শুনে মুগ্ধ হয়। এমনকি এরপর চারিদিকে ছেলেরা তাদের ‘অদল বদল’ বলেই ডাকতে শুরু করে।
  • অদল বদল নামকরণ – এই জামা অদলবদলের কাহিনি গ্রামপ্রধানের কানে পৌঁছোয় এবং তাঁরও গল্পটা পছন্দ হয়। তখন তিনি ঘোষণা করেন, অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে ডাকার কথা। আর এরপর থেকে সারা গ্রামে তাদের এই ‘অদল বদল’ নামটি প্রচলিত হয়ে যায়।

উনি ঘটনাটা জানেন, শুধু ভালোবাসার ভান করছেন – আসল ঘটনাটি কী? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ভালোবাসার ভান করেছিলেন কিনা বুঝিয়ে দাও।

প্রকৃত ঘটনা – ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অমৃত তার সঙ্গে নিজের ছেঁড়া জামাটি পালটে নেয়। কিন্তু গ্রামের ছেলেরা এই দৃশ্য দেখে ফেলে এবং তাদের পিছন পিছন চলতে চলতে ‘অদল-বদল’ বলে চিৎকার করতে থাকে। বাবারা তাদের বিষয়টি জেনে ফেলবে মনে করে তারা ভয়ে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে। ইসাবের বাবা তখন বাড়ির সামনে দাওয়ায় বসে হুঁকো টানছিলেন। তিনি ইসাব-অমৃতের কাছে জানতে চান যে তারা বন্ধুদের কাছ থেকে পালিয়ে আসছে কেন। তিনি তাঁর কাছে এসে তাদের বসতেও বলেন। ইসাবের বাবার শান্ত গলা শুনেই অমৃত-ইসাবের চিন্তা হয় যে তিনি হয়তো উল্লিখিত ঘটনাটা জানেন এবং তাদের কাছে আনার জন্য ভালোবাসার ভান করছেন।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত মনোভাব – ইসাবের বাবার ভালোবাসার কোনো ভান ছিল না। বরং বন্ধুর প্রতি অমৃতের এরকম ভালোবাসা দেখে তিনি আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরে তিনি অমৃতের মাকে বলেন, আজ থেকে আপনার ছেলে আমার। অমৃতের মতো ছেলে পেলে তিনি যে একুশ জনকেও পালন করতে রাজি এ কথাও বলেন। তিনি আরও বলেন, অমৃতের কাছ থেকেই তিনি শিখেছেন ‘খাঁটি জিনিস কাকে বলে’। অমৃতের মায়ের উদ্দেশে বলা এই কথাগুলো বুঝিয়ে দেয়, অমৃতের বন্ধুপ্রীতি জীবন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে দিয়েছিল।

অমৃতের জবাব আমাকে বদলে দিয়েছে। – অমৃতের কোন্ জবাব বক্তাকে বদলে দিয়েছিল? কীভাবে বদলে দিয়েছিল তার বর্ণনা দাও।

অমৃতের জবাব – ‘অদল বদল’ গল্পে বন্ধু অমৃতের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইসাব কালিয়াকে কুস্তি লড়তে আহ্বান করে এবং তাকে হারিয়েও দেয়। কিন্তু এতে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অমৃত নিজের জামাটি তার সঙ্গে পালটে নেয়। এই সময় ইসাব অমৃতকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তোর বাবা যদি তোকে মারে কী হবে? এর উত্তরে অমৃত বলেছিল, কিন্তু আমার তো মা আছে। অমৃতের এই জবাব প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তির বক্তা ইসাবের বাবাকে বদলে দিয়েছিল।

বক্তার ওপর অমৃতের জবাবের প্রভাব – ইসাবের বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অমৃত আর ইসাবের বন্ধুত্বের গভীরতা এবং সরলতা দেখে। অমৃত জানে, তাকে তার বাবা মারলে অমৃতকে তার মা রক্ষা করবে। কিন্তু ইসাবের মা নেই। অমৃতের অনুভবের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা। ধর্মীয় পার্থক্য কখনোই তার কাছে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসাবের বাবা নিজের চোখে বন্ধুত্বের সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখেছিলেন। দশ বছরের এই ছোটোছেলেটির নিষ্পাপ হৃদয় ও সরলতা তাঁকে বিস্মিত করেছিল। নিজের প্রতিবেশীদেরও তিনি সেই অবাক করা ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। এভাবেই অমৃতের দেওয়া জবাবে জীবন সম্পর্কে ইসাবের বাবার উপলব্ধি সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছিল।

পাড়া-পড়শি মায়ের দল পাঠানের গল্প শোনার জন্য ঘিরে দাঁড়াল। – গল্পটি নিজের ভাষায় লেখো। এই গল্পে সকলের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

গল্পটির বিবরণ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাবের বাবা বলেছিলেন দুই অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু ইসাব আর অমৃতের জামা বদলের গল্প। নতুন জামা পরে যাওয়া অমৃতকে কালিয়া কুস্তি লড়ার জন্য জোর করে মাঠে নিয়ে যায়, আর তাকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন বন্ধুর অপমানের শোধ নিতে ইসাব কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। কিন্তু এই ধস্তাধস্তিতে ইসাবের জামার পকেট এবং ছয় ইঞ্চি পরিমাণ কাপড় ছিঁড়ে যায়। ছেঁড়া শার্ট দেখে ইসাবের বাবা তাকে প্রচণ্ড মারবে- এই ভেবে ইসাব খুব ভয় পেয়ে যায়। তখনই অমৃত তার নতুন জামাটি ইসাবকে পরিয়ে তার জামাটি পরে নেয়। সে জানায় যে, বাবা তাকে মারলেও তা ঠেকানোর জন্য অমৃতের মা আছে। কিন্তু ইসাবের মা নেই।

গল্পটির প্রতিক্রিয়া – আড়াল থেকে এই দৃশ্যটি দেখে, বন্ধুত্বের এই উদার প্রকাশে ইসাবের বাবা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। তাঁর মুখে এই কথা শুনে উপস্থিত সকলেরও বুক আনন্দে ভরে যায়। গ্রামের প্রধান ঘোষণা করেন যে, অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে এখন থেকে ডাকা হবে। তাদের বন্ধুরাও এতে খুব খুশি হয়। ক্রমশ গ্রাম পেরিয়ে আকাশ-বাতাসও এই ‘অমৃত-ইসাব-অদল-বদল’ আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠে।

অমৃত ও ইসাবের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনে তাঁদেরও বুক ভরে গেল। – ‘তাঁদের’ বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে? অমৃত ও ইসাবের ভালোবাসার গল্পটি কেমন?

তাঁদের পরিচয় – ‘অদল বদল’ গল্পে ‘তাঁদের’ বলতে ইসাবের বাবা হাসান এবং অমৃতের মা বাহালির কথা বলা হয়েছে।

অমৃত ও ইসাবের ভালোবাসার গল্প – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে অমৃত আর ইসাব বেশিরভাগ সময় একসঙ্গেই থাকত। তাদের বাড়িও ছিল মুখোমুখি। গল্পে আমরা দেখি অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া তাকে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তাই দেখে ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে তাকে হারিয়ে দেয়। কালিয়া অমৃতকে আঘাত করায় ইসাব সেটা সহ্য করতে পারেনি। কিন্তু এই লড়াইয়ের ফলে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। আর তাতে সে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে, জামা ছেঁড়ার জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে। এই সময় অমৃত ইসাবকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। ইসাব আপত্তি জানালে অমৃত তাকে বলে, সে মার খেলেও তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা আছে। কিন্তু ইসাবের শুধু বাবা আছেন। তাই বাবার হাতে মার খেলে তাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না। এইসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায় তারা দুজনে দুজনকে কতটা ভালোবাসত, কত গভীর ছিল তাদের বন্ধুত্ব।

আজ থেকে আপনার ছেলে আমার – বক্তা কে? কাকে কেন এ কথা বলেছেন?

বক্তা – ‘অদল বদল’ গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশটির বক্তা ইসাবের বাবা হাসান পাঠান।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে এ কথা বলার কারণ – হোলির দিন কালিয়া নামের একটি ছেলে অমৃতকে জোর করে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং অমৃতকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে। এতে ইসাব রেগে যায়। সে কালিয়াকে লড়তে ডাকে, আর তাকে হারিয়েও দেয়। কিন্তু বন্ধুর ভালোবাসার মাশুল দিতে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। কিন্তু এর জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে ভেবে ইসাব ভয় পেলে, অমৃত তার জামাটা ইসাবের সাথে জামা অদলবদলের কথা বলে। এতে ইসাব আপত্তি জানায়, তখনই ইসাবকে আশ্বস্ত করে সে জানায়, অমৃতের বাবা তাকে মারতে এলেও বাঁচানোর জন্য অমৃতের মা আছে। ইসাবের বাবা আড়াল থেকে ঘটনাটি দেখেছিলেন। তাই বন্ধুরা ইসাবদের জামা অদলবদলের কথা ফাঁস করে দিতে গেলে তিনি তাদের দুজনকে নিজের কাছে ডেকে নেন এবং দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন। এত ছোটোছেলের মধ্যে যে অসামান্য বন্ধুপ্রীতির প্রকাশ ইসাবের বাবা লক্ষ করেছিলেন তা-ই তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি অমৃতের আচরণে জীবন-আচরণের শিক্ষা পেয়েছিলেন।

ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কাকে বলে। — বক্তার কাছে ‘খাঁটি জিনিস’টি কী ছিল? তার প্রভাবে বক্তার মানসিক অবস্থার কী বদল ঘটেছিল?

খাঁটি জিনিস-টির পরিচয় – ‘অদল বদল’ গল্পে বন্ধুকে বাঁচাতে জামা অদলবদলের পরে ইসাব অমৃতকে জিজ্ঞাসা করেছিল তোর বাবা যদি তোকে মারে কী হবে? অমৃতের উত্তর ছিল আমার তো মা রয়েছে। একদিকে মায়ের প্রতি আস্থা অন্যদিকে বন্ধুপ্রীতি-এই দুটি বিষয়কেই ইসাবের বাবা ‘খাঁটি জিনিস’ বলেছেন।

বক্তার মানসিক অবস্থা – ইসাবের বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অমৃত আর ইসাবের বন্ধুত্বের গভীরতা এবং সরলতা দেখে। অমৃত জানে, তাকে তার বাবা মারলে অমৃতকে তার মা রক্ষা করবে। কিন্তু ইসাবের মা নেই। অমৃতের অনুভবের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা। ধর্মীয় পার্থক্য কখনোই তার কাছে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসাবের বাবা নিজের চোখে বন্ধুত্বের সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখেছিলেন। দশ বছরের এই ছোটোছেলেটির নিষ্পাপ হৃদয় ও সরলতা তাঁকে বিস্মিত করেছিল। নিজের প্রতিবেশীদেরও তিনি সেই অবাক করা ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। এভাবেই অমৃতের দেওয়া জবাবে জীবন সম্পর্কে ইসাবের বাবার উপলব্ধি সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছিল।

আজ থেকে আমরা অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে ডাকব। – কে, কখন এ কথা ঘোষণা করেন? এর আড়ালে কোন্ সত্য লুকিয়ে আছে?

ঘোষক এবং ঘোষণার মুহূর্ত – ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাব আর অমৃতের জামা অদলবদলের গল্প যখন গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রামপ্রধানের কানে গেল তখন সব শুনে তিনি খুশি হয়ে প্রশ্নে উদ্ধৃত ঘোষণাটি করেছিলেন।

কথার আড়ালে লুকানো সত্য – বন্ধু অমৃতের অপমানের শোধ নেওয়ার জন্য ইসাব কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়েছিল। এই ঘটনায় ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় ইসাবকে তার বাবার হাত থেকে বাঁচাতে নিজের জামাটা খুলে পরতে দিয়েছিল অমৃত। অমৃতের যুক্তি ছিল যে, তার বাবা তাকে মারতে এলেও ঠেকানোর জন্য তার মা আছে। কিন্তু ইসাবের মা নেই, তাই তাকে বাঁচানোরও কেউ নেই। ইসাব আর অমৃতের ধর্ম ছিল আলাদা। কিন্তু শৈশব-কৈশোরের এই নিষ্পাপ বন্ধুত্বে ধর্ম কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং চারপাশ থেকে এই বন্ধুত্ব সাদর অভ্যর্থনাই পেয়েছিল। যে বাবাকে ইসাব ভয় পেয়েছিল, তিনিই তাদের – কাছে টেনে নিয়েছিলেন। ছেলেদের এরকম মানসিকতার পরিচয় পেয়ে গর্বিত হয়েছিলেন ইসাবের বাবা আর অমৃতের মা। ক্রমে চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের জামা অদলবদলের গল্প। আর সে কাহিনি স্বীকৃতি পেয়েছিল গ্রামপ্রধানের ঘোষণাতে। মানবতার কাছে ধর্মের বেড়া কোনো বাধা হতে পারে না। বন্ধুত্বের টানে, ভালোবাসার শক্তিতে মানুষ আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠতে পারে। অমৃত-ইসাবের অদল-বদল নামকরণের মধ্যে দিয়ে গ্রামপ্রধান মানবতার এই চিরসত্যকেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

অদল বদল গল্পটি একটি মানবিক গল্প। গল্পটিতে দেখা যায় যে, বন্ধুত্বের চেয়ে আর কোনও সম্পর্কই শক্তিশালী নয়। বন্ধুরা পরস্পরকে সাহায্য করার জন্য সবকিছু করতে পারে। গল্পটি আমাদেরকে বন্ধুত্বের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer