দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল (গল্প) পান্নালাল প্যাটেল

Gopi

পান্নালাল প্যাটেলের লেখা “অদল বদল” গল্পটি দশম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত একটি জনপ্রিয় গল্প। গল্পটিতে দুইজন বালকের, অমৃত এবং ইসাবের, একদিনের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।

অমৃত এবং ইসাব একই গ্রামের দুটি ভিন্ন পরিবারের সন্তান। অমৃতের পরিবার ধনী, অন্যদিকে ইসাবের পরিবার দরিদ্র। অমৃতের বাবা-মা দুজনেই চাকরি করেন, অন্যদিকে ইসাবের বাবা একা ক্ষেতে কাজ করেন।

একদিন হোলির দিন অমৃত এবং ইসাব একসাথে খেলা করছিল। তারা দুজনেই নতুন জামা পরেছিল। অমৃতের জামা ছিল নতুনের মতো, অন্যদিকে ইসাবের জামা ছিল ছেঁড়াফাঁড়া।

হঠাৎ, একদল ছেলে এসে অমৃতকে বিরক্ত করতে শুরু করে। তারা অমৃতকে মারতে চায়। অমৃত ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। ইসাব অমৃতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। সে কালিয়া নামে একজন ছেলেকে মারতে শুরু করে।

কালিয়া ইসাবের বাবার কাছে গিয়ে অভিযোগ করে। ইসাবের বাবা অমৃতের বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চায়। অমৃতের বাবা ইসাবের বাবার ক্ষমা করে দেয়।

অমৃত ইসাবের সাহসিকতা দেখে মুগ্ধ হয়। সে ইসাবের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা দুজনে একসাথে খেলা করে।

গল্পের মাধ্যমে লেখক সমাজের শ্রেণীভেদ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। গল্পটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান।

দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল

লেখক পরিচিতি

জন্ম – পান্নালাল প্যাটেল ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে রাজস্থানের দুঙ্গারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম পান্নালাল নানালাল প্যাটেল।

কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন – পান্নালাল গুজরাতি ভাষার একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি তাঁর মানবি নি ভাবই এর জন্য ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসম্মান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে কবি উমাশংকর জেঠালাল যোশীর জ্ঞানপীঠ পাওয়ার পর দ্বিতীয় গুজরাতি লেখক হিসেবে তিনি এই সম্মানে ভূষিত হন। তিনি ৭০-টিরও বেশি বই লিখেছেন। তবে তাঁর সবথেকে গুজরাতি গদ্য-সাহিত্যিকদের মধ্যে প্যাটেলই একমাত্র যিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর অসামান্য সৃষ্টিগুলি বর্তমান প্রজন্মের কাছে তৎকালীন গুজরাতের গ্রামজীবনের স্পষ্ট ছবি তুলে ধরে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি রঞ্জিতরাম সুবর্ণচন্দ্রক পুরস্কার পান।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ- মালেলা জিব, মানবি নি ভাবই, ব্রুনদোথি রক্ষয়িলো জলন্ধর, অনে পদছায়া, মহাভারত্ন, প্রথম প্রণয়ঃ ভীম-হিরিম, মানবদেহে কামেদের রতি, নগধ নারায়ণ, পুরাণকথিৎ মা দুর্গা, পার্থ নে কহো চাড়য়ে বাণ, কৃষ্ণ জীবনলীলা ইত্যাদি। তিনি বহু ছোটোগল্পও লিখেছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘সুখ দুখনান সাথি’, ‘জিন্দাগিনা খেল’, ‘কোই দেশি কোই পরদেশি’ ইত্যাদি।

উৎস

National Book Trust (NBT) কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ সেরা তেরো থেকে এই ‘অদল বদল’ গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

বিষয়সংক্ষেপ

পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে অমৃত ও ইসাব নামে আমরা দুই বন্ধুকে পাই। এই দুই বন্ধুর সব কিছুই একরকম। তাদের বাড়িও মুখোমুখি। তাদের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটাই—অমৃতের রয়েছে মা, বাবা আর তিন ভাই, সেখানে ইসাব থাকে শুধু তার বাবার সঙ্গে। এমনকি হোলির দিনে তাদের দুজনের পোশাকও একরকম হয়। দুজনের মধ্যে খুব বন্ধুত্ব। ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় সে নতুন জামা পেয়েছিল। কিন্তু অমৃতের নতুন জামা থাকা সত্ত্বেও সে ইসাবের মতোই জামা কেনার জেদ ধরে। অবশেষে অমৃত নতুন জামা পেয়েও যায়। এরপর নতুন জামা পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে অমৃত। নতুন জামাটা নোংরা হয়ে যায়, এটা সে কোনোভাবেই চায়নি। অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া নামে একটি ছেলে তাকে কুস্তি লড়ার জন্য বলে কিন্তু অমৃত লড়তে রাজি না হলে তাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সে। সেই দৃশ্য দেখে অমৃতর বন্ধু ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়াকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। এই ঘটনার পর যখন তারা বাড়ির পথে এগোয় তখন অমৃত লক্ষ করে ইসাবের নতুন জামাটা ছিঁড়ে গেছে।

ইসাব জানত তার বাবা ছেঁড়া জামা দেখলে তার কপালে দুর্ভোগ আছে, কারণ তার বাবা অনেক কষ্টে সুদখোরের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে জামাটা তৈরি করে দিয়েছেন। ইসাবকে ভয় পেতে দেখে অমৃত ইসাবকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। তারা নিজেদের জামা বদলে নেয়। ইসাবের ছেঁড়া জামা অমৃত পরে নেয়। কারণ অমৃত জানত, বাবা তাকে বকলেও তার মা তাকে বাঁচিয়ে দেবেন। কিন্তু ইসাবের মা নেই বলে বাবার কাছে সে মার খেলে কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে না। কুস্তির ঘটনা আর জামা অদলবদলের ঘটনা থেকে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব কত গভীর ছিল। এই জামা অদলবদলের ঘটনা ইসাবের বাবা দেখলে তাঁর মন আনন্দে ভরে যায়। তিনি অমৃতের মা ও পাড়াপড়শির কাছে এই জামা অদলবদলের ঘটনা বলেন। ইসাব আর অমৃতের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনে সকলে খুশি হয়। গ্রামের প্রধান এই ঘটনা শুনে ঘোষণা করেন যে, সেদিন থেকেই অমৃত আর ইসাবকে যথাক্রমে ‘অদল’ এবং ‘বদল’ বলেই সবাই ডাকবে। আর এই ‘অদল বদল’ ডাকে তারা দুজনও অপ্রস্তুত না হয়ে বরং খুশিই হয়।

নামকরণ

যে-কোনো সাহিত্যরচনার মূলভাব বা বিষয় পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে রচনার নামকরণের মাধ্যমে। নামকরণ প্রতিটি সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, চরিত্রকেন্দ্রিক, ভাব অনুযায়ী আবার কখনও-বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে মূলত গল্পের বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। এই গল্পে আমরা দুই বন্ধুর কাহিনি পাই যাদের সব কিছুই প্রায় একরকম ছিল। এমনকি তারা জামাও পরত একরকম। একজনের বিপদে অন্যজন সবসময় এগিয়ে আসত। ইসাব আর অমৃত দুজনেই হোলি উপলক্ষ্যে পেয়েছিল নতুন জামা আর সেই জামা যাতে না ছেঁড়ে সে ব্যাপারে দুজনেই সচেতন ছিল। কারণ তারা জানত, জামা ছিঁড়লে আর সেটা বাড়ির লোকেরা জানতে পেলে তাদের কপালে খুব দুঃখ আছে। হোলির দিন বিকেলবেলায় কালিয়া অমৃতকে কুস্তি লড়ার নাম করে মাটিতে ফেলে দেয়, সেই ঘটনা দেখে ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়।

সে অমৃতের হেনস্থার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু কুস্তি লড়তে গিয়ে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাব জানত, জামা ছেঁড়ার কথা তার বাবা জানতে পারলে তাকে বাড়ি ফিরে নিশ্চিত মার খেতে হবে। অমৃত ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জামা অদলবদল করার পরামর্শ দেয়। তাদের এই জামা অদলবদলের কাহিনি সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি গ্রামপ্রধানও তাদের নাম ‘অদল’ এবং ‘বদল’ বলে ঘোষণা করেন। গ্রামবাসীদের তাদের সেই নামে ডাকতেও বলেন। অমৃত ও ইসাবের এই জামা অদলবদল আর তাদের নতুন নামকরণ ‘অদল’ আর ‘বদল’-এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই গল্পের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। তাই বলা যায়, গল্পের বিষয়বস্তুর অনুসরণে রচিত এই ‘অদল বদল’ নামকরণটি সার্থক হয়েছে।

পান্নালাল প্যাটেলের লেখা “অদল বদল” গল্পটি একটি শিক্ষামূলক গল্প। এই গল্পের মাধ্যমে লেখক আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে, আমাদেরকে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, প্রত্যেকেরই নিজস্ব সমস্যা থাকে। অন্যের সমস্যাকে নিজের মতো করে বুঝতে পারলে, আমরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারি।

গল্পের শুরুতে, অমৃত এবং ইসাব দুজনেই হোলির দিনে নতুন জামা পরে। কিন্তু দুজনের জামার অবস্থা ভিন্ন। অমৃতের জামা প্রায় নতুনের মতো, কিন্তু ইসাবের জামা ছিঁড়ে গেছে। এতে অমৃতের মা ইসাবের প্রতি খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু অমৃতের বাবা ইসাবের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে শাসন করে।

পরে, অদল বদলের খেলায় অমৃত এবং ইসাবের জামা বদল হয়ে যায়। এতে অমৃত ইসাবের ছিঁড়ে যাওয়া জামা পরে এবং ইসাব অমৃতের প্রায় নতুন জামা পরে। এই অবস্থায় অমৃত ইসাবের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় এবং ইসাবের অবস্থার কথা চিন্তা করে।

শেষে, অমৃত এবং ইসাবের জামা আবার আগের মতো বদলে যায়। কিন্তু এই অবস্থায় অমৃত এবং ইসাব একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। তারা বুঝতে পারে যে, প্রত্যেকেরই নিজস্ব সমস্যা থাকে। অন্যের সমস্যাকে নিজের মতো করে বুঝতে পারলে, আমরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারি।

এই গল্পটি আমাদেরকে শিখিয়ে যে, আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। অন্যের সমস্যাকে নিজের মতো করে বুঝতে পারলে, আমরা তাদের প্রতি সহায়তা করতে পারি।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer