দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অদল বদল’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই অধ্যায় থেকে প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়শই পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।

দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল – বিষয়সংক্ষেপ

পান্নালাল প্যাটেল -এর লেখক পরিচিতি

পান্নালাল প্যাটেলেরজন্ম –

পান্নালাল প্যাটেল 1912 খ্রিস্টাব্দের 7 মে রাজস্থানের দুঙ্গারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম পান্নালাল নানালাল প্যাটেল।

পান্নালাল প্যাটেলের কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন –

পান্নালাল গুজরাতি ভাষার একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি তাঁর মানবি নি ভাবই-এর জন্য 1985 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসম্মান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন। 1967 খ্রিস্টাব্দে কবি উমাশংকর জেঠালাল যোশীর জ্ঞানপীঠ পাওয়ার পর দ্বিতীয় গুজরাতি লেখক হিসেবে তিনি এই সম্মানে ভূষিত হন। তিনি 70-টিরও বেশি বই লিখেছেন। তবে তাঁর সবথেকে গুজরাতি গদ্য-সাহিত্যিকদের মধ্যে প্যাটেলই একমাত্র যিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর অসামান্য সৃষ্টিগুলি বর্তমান প্রজন্মের কাছে তৎকালীন গুজরাতের গ্রামজীবনের স্পষ্ট ছবি তুলে ধরে। 1950 খ্রিস্টাব্দে তিনি রঞ্জিতরাম সুবর্ণচন্দ্রক পুরস্কার পান।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ – মালেলা জিব, মানবি নি ভাবই, ব্রুনদোথি রক্ষয়িলো জলন্ধর, অনে পদ্‌ছায়া, মহাভারত্ন, প্রথম প্রণয়ঃ ভীম-হিরিম, মানবদেহে কামেদের রতি, নগধ নারায়ণ, পূরাণকথিৎ মা দুর্গা, পার্থ নে কহো চাড়য়ে বাণ, কৃষ্ণ জীবনলীলা ইত্যাদি। তিনি বহু ছোটোগল্পও লিখেছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘সুখ দুখনান সাথি’, ‘জিন্দাগিনা খেল’, ‘কোই দেশি কোই পরদেশি’ ইত্যাদি।

‘অদল বদল’ গল্পের উৎস

National Book Trust (NBT) কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ সেরা তেরো থেকে এই ‘অদল বদল’ গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

‘অদল বদল’ গল্পেরবিষয়সংক্ষেপ

পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে অমৃত ও ইসাব নামে আমরা দুই বন্ধুকে পাই। এই দুই বন্ধুর সব কিছুই একরকম। তাদের বাড়িও মুখোমুখি। তাদের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটাই—অমৃতের রয়েছে মা, বাবা আর তিন ভাই, সেখানে ইসাব থাকে শুধু তার বাবার সঙ্গে। এমনকি হোলির দিনে তাদের দুজনের পোশাকও একরকম হয়। দুজনের মধ্যে খুব বন্ধুত্ব। ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় সে নতুন জামা পেয়েছিল। কিন্তু অমৃতের নতুন জামা থাকা সত্ত্বেও সে ইসাবের মতোই জামা কেনার জেদ ধরে। অবশেষে অমৃত নতুন জামা পেয়েও যায়। এরপর নতুন জামা পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে অমৃত। নতুন জামাটা নোংরা হয়ে যায়, এটা সে কোনোভাবেই চায়নি। অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া নামে একটি ছেলে তাকে কুস্তি লড়ার জন্য বলে কিন্তু অমৃত লড়তে রাজি না হলে তাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সে। সেই দৃশ্য দেখে অমৃতর বন্ধু ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়াকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। এই ঘটনার পর যখন তারা বাড়ির পথে এগোয় তখন অমৃত লক্ষ করে ইসাবের নতুন জামাটা ছিঁড়ে গেছে। ইসাব জানত তার বাবা ছেঁড়া জামা দেখলে তার কপালে দুর্ভোগ আছে, কারণ তার বাবা অনেক কষ্টে সুদখোরের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে জামাটা তৈরি করে দিয়েছেন। ইসাবকে ভয় পেতে দেখে অমৃত ইসাবকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। তারা নিজেদের জামা বদলে নেয়। ইসাবের ছেঁড়া জামা অমৃত পরে নেয়। কারণ অমৃত জানত, বাবা তাকে বকলেও তার মা তাকে বাঁচিয়ে দেবেন। কিন্তু ইসাবের মা নেই বলে বাবার কাছে সে মার খেলে কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে না। কুস্তির ঘটনা আর জামা অদলবদলের ঘটনা থেকে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব কত গভীর ছিল। এই জামা অদলবদলের ঘটনা ইসাবের বাবা দেখলে তাঁর মন আনন্দে ভরে যায়। তিনি অমৃতের মা ও পাড়াপড়শির কাছে এই জামা অদলবদলের ঘটনা বলেন। ইসাব আর অমৃতের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনে সকলে খুশি হয়। গ্রামের প্রধান এই ঘটনা শুনে ঘোষণা করেন যে, সেদিন থেকেই অমৃত আর ইসাবকে যথাক্রমে ‘অদল’ এবং ‘বদল’ বলেই সবাই ডাকবে। আর এই ‘অদল বদল’ ডাকে তারা দুজনও অপ্রস্তুত না হয়ে বরং খুশিই হয়।

‘অদল বদল’ গল্পের নামকরণ

যে-কোনো সাহিত্যরচনার মূলভাব বা বিষয় পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে রচনার নামকরণের মাধ্যমে। নামকরণ প্রতিটি সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, চরিত্রকেন্দ্রিক, ভাব অনুযায়ী আবার কখনও-বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে মূলত গল্পের বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। এই গল্পে আমরা দুই বন্ধুর কাহিনি পাই যাদের সব কিছুই প্রায় একরকম ছিল। এমনকি তারা জামাও পরত একরকম। একজনের বিপদে অন্যজন সবসময় এগিয়ে আসত। ইসাব আর অমৃত দুজনেই হোলি উপলক্ষ্যে পেয়েছিল নতুন জামা আর সেই জামা যাতে না ছেঁড়ে সে ব্যাপারে দুজনেই সচেতন ছিল। কারণ তারা জানত, জামা ছিঁড়লে আর সেটা বাড়ির লোকেরা জানতে পেলে তাদের কপালে খুব দুঃখ আছে। হোলির দিন বিকেলবেলায় কালিয়া অমৃতকে কুস্তি লড়ার নাম করে মাটিতে ফেলে দেয়, সেই ঘটনা দেখে ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়। সে অমৃতের হেনস্থার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু কুস্তি লড়তে গিয়ে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাব জানত, জামা ছেঁড়ার কথা তার বাবা জানতে পারলে তাকে বাড়ি ফিরে নিশ্চিত মার খেতে হবে। অমৃত ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জামা অদলবদল করার পরামর্শ দেয়। তাদের এই জামা অদলবদলের কাহিনি সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি গ্রামপ্রধানও তাদের নাম ‘অদল’ এবং ‘বদল’ বলে ঘোষণা করেন। গ্রামবাসীদের তাদের সেই নামে ডাকতেও বলেন। অমৃত ও ইসাবের এই জামা অদলবদল আর তাদের নতুন নামকরণ ‘অদল’ আর ‘বদল’-এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই গল্পের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। তাই বলা যায়, গল্পের বিষয়বস্তুর অনুসরণে রচিত এই ‘অদল বদল’ নামকরণটি সার্থক হয়েছে।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অদল বদল’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অধ্যায় থেকে আসা প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এসব প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়াও, এই পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন, যাদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতকে মৃত্তিকা অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও-মাধ্যমিক ভূগোল

ভারতকে মৃত্তিকা অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য লেখো

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব উল্লেখ করো।

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণি বাংলা – আমরা – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – আমরা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – আমরা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – আমরা – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণি বাংলা – ভাঙার গান – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর