বারুণী কী? বারুণীর দিনে গঙ্গার ঘাটে যে দৃশ্যটি ফুটে উঠেছে তা লেখো।

দশম শ্রেণি – বাংলা – কোনি (সহায়ক পাঠ) থেকে নেওয়া হয়েছে। বারুণী হলো কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি যা বরুণ দেবতার পূজার জন্য উৎসর্গীকৃত। বরুণ দেবতা জল ও বৃষ্টির দেবতা হিসেবে পরিচিত। এই দিনে, ভক্তরা গঙ্গাস্নান, পূজা-অর্চনা এবং দান করেন।

সকালবেলা গঙ্গার ঘাটে মানুষের সমাগম দেখা যায়। সকলেই পবিত্র স্নানের জন্য উন্মুখ। ঘাটের ধারে পূজার সামগ্রী বিক্রি করছে দোকানদার। নারীরা নতুন শাড়ি পরে আরতির থালা হাতে নিয়ে গঙ্গার ধারে বসে। পুরুষরা গঙ্গাস্নান করে পূজা করছেন। ব্রাহ্মণদের মন্ত্রোচ্চারণ ঘাটের পরিবেশকে আরও পবিত্র করে তোলে।

দূরে মন্দিরের ঘণ্টা বাজছে। আকাশে পায়রা উড়ছে। গঙ্গার জল স্ফটিক সমান পরিষ্কার। সূর্যের আলো জলে ঝিকিমিকি করছে। এক অপূর্ব দৃশ্য ফুটে উঠেছে।

দুপুরের দিকে গঙ্গার ঘাটে ভিড় আরও বেশি হয়। লোকজন প্রসাদ বিতরণ করছে। গরিবদের খাবার দান করা হচ্ছে। বাচ্চারা খেলাধুলা করছে। ঘাটের চারপাশে মেলা বসেছে। বিভিন্ন ধরনের খাবার ও দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে।

সন্ধ্যার সময় গঙ্গার ঘাটে আরও এক অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে আকাশে বিভিন্ন রঙের খেলা শুরু হয়। গঙ্গার জল সোনালী রঙে ঝলমল করে। ঘাটের উপরে প্রদীপ জ্বালানো হয়। ভক্তরা আরতি করে। এই দৃশ্য মনকে অনন্ত শান্তি দান করে।

বারুণী তিথি হিন্দুদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই দিনে গঙ্গাস্নান করে পূজা অর্চনা করলে পাপ ধুয়ে যায় এবং মন পরিষ্কার হয়।

বারুণী কী? বারুণীর দিনে গঙ্গার ঘাটে যে দৃশ্যটি ফুটে উঠেছে তা লেখো।

বারুণী কী? বারুণীর দিনে গঙ্গার ঘাটে যে দৃশ্যটি ফুটে উঠেছে তা লেখো।

অথবা, আজ বারুণী। গঙ্গায় আজ কাঁচা আমের ছড়াছড়ি। – বারুণী কী? গঙ্গাতীরের বর্ণনা পাঠ্যাংশে যেভাবে পড়েছ, গুছিয়ে লেখো।

বারুণীর পরিচয় – শতভিষা নক্ষত্রে কৃষ্ণাচতুর্দশী তিথিতে পুণ্যস্নান ইত্যাদির দ্বারা পালনীয় বিশেষ প্রথা হল বারুণী। এই দিন মনস্কামনা পূরণের ইচ্ছায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে কাঁচা ফল দান করা হয়।

গঙ্গাতীরের বর্ণনা –

  • গঙ্গাকে নিবেদিত কাঁচা আম – বারুণী প্রথায় সকলেই গঙ্গাকে কাঁচা আম নিবেদন করেছিলেন। ফলে, গঙ্গার ঘাটে প্রচুর কাঁচা আম ভেসে যাচ্ছিল। মহা উৎসাহের সঙ্গে একদল ছেলেমেয়ের সেই আম কুড়োচ্ছিল।
  • স্নানযাত্রী ও বামুনদের কার্যকলাপ – ভাটার ফলে জল কিছুটা দূরে সরে যাওয়ায় কাদা-মাখা পায়ে স্নান সেরে ফেরা লোকেদের মুখে ছিল বিরক্তির ছাপ। স্নান সেরে ফেরার পথে অনেকে যাচ্ছিল ঘাটের মাথায় বসে থাকা বামুনদের কাছে। এই বামুনরা, সকলের জামাকাপড় জমা রাখে, সরষের তেল বা নারকেল তেল দেয়, আর স্নান সেরে লোকেরা এলে দক্ষিণা নিয়ে কপালে চন্দনের ছাপ এঁকে দেয়।
  • বহুবিধ দোকান ও মন্দির – এ ছাড়া গঙ্গার ধারে ছিল নানারকম জিনিসের দোকান, ছোটো ছোটো একাধিক মন্দির। বারুণীর দিন বলেই হয়তো গঙ্গার পাড়ে ভিখিরিদের আনাগোনা ছিল বেশি।
  • বিষ্টুচরণের আদবকায়দা – এই গঙ্গারই ধারে সাড়ে তিন মন ওজনের বিশালাকার বিষ্টুচরণ ধর একটা ছেঁড়া মাদুরের উপর শুয়ে মালিশ করাচ্ছিলেন এবং বিরক্তি নিয়ে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সাদা লুঙ্গি, গেরুয়া পাঞ্জাবি এবং চোখে মোটা লেন্সের চশমা পরা পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছরের ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্টুচরণকে দেখে হাসছিলেন। মালিশ ওয়ালাকে ‘তানপুরা’, ‘তবলা’, ‘সারেগামা’ ইত্যাদি বিচিত্র ভঙ্গিতে মালিশ করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন বিষ্টুচরণ ধর।
  • ক্ষিতীশ সিংহের ব্যঙ্গপ্রবণতা – এই দৃশ্যে মজা পেয়ে ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্টুচরণ ধরের শরীর নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন যে, তিনি নিজে নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। নানান অঙ্গভঙ্গি করে যখন ক্ষিতীশ সিংহ মজা করতে শুরু করেন তখন বিষ্টুচরণ ধরের রাগের বদলে কৌতূহল হয়। ক্রমশ তাঁদের দুজনের মধ্যে আলাপ জমে ওঠে।

আরও পড়ুন, বিষ্টু হতভম্ভ হয়ে লোকটির জগ করা দেখতে লাগল। – বিষ্টুর এই হতভম্ব হয়ে যাওয়ার কারণ কী ছিল লেখো।

বারুণী তিথি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি। এই দিনে ভক্তরা দেবতা বরুণের পূজা করেন এবং গঙ্গাস্নান করেন। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে গঙ্গাস্নান করলে পাপ ধুয়ে যায় এবং মন শুদ্ধ হয়।

বারুণী তিথির দিন গঙ্গার ঘাটে যে ভক্তিময় পরিবেশ তৈরি হয় তা অতুলনীয়। এই দিনে সকলের মনেই থাকে এক অপূর্ব শান্তি ও আনন্দের অনুভূতি।

এই দৃশ্যটি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় ধর্মীয় বিশ্বাসের গুরুত্ব এবং গঙ্গার পবিত্রতা।

Share via:

মন্তব্য করুন