নদীর গতিপথে কীভাবে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়?

এই মজার জলের ঝাঁপের সৃষ্টি কীভাবে হয়, এটি খুঁজে বের করলাম! নদীর গতিপথে যখন একটি উচ্চ স্থান থেকে নীচে পড়ে, তখন জলপ্রপাত হয়। কঠিন ও কোমল শিলাস্তরের আড়াআড়ি বা অনুভূমিক অবস্থানে, উচ্চ শিলাস্তরটি ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে নীচের কোমল শিলাস্তরের উপর পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় নদী খাড়া ঢাল তৈরি করে এবং জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। আমরা এই মজার জলের ঝাঁপকে বলি জলপ্রপাত!

কখনো কি খেয়াল করেছো, নদীর জল সব সময় একই রকম গতিতে চলে না? কখনও সে দ্রুত ছুটে চলে, কখনও বা একটু ধীরে ধীরে যায়! আর কখনও জলের রাস্তায় যেন একটা ঢাল পড়ে যায়, আর জলটা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিচে! এই মজার জলের ঝাঁপকেই আমরা বলি জলপ্রপাত।

আজ আমরা খুঁজে বের করবো, নদীর গতিপথে কীভাবে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়?

নদীর জলপ্রপাত প্রকৃতির এক অপূর্ব দৃশ্য। নদীর প্রবাহের পথে যখন উচ্চতায় পার্থক্য তৈরি হয়, তখন জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন –  গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা বদ্বীপের সক্রিয় অংশের ওপর পৃথিবীব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব কতখানি?

নদীর গতিপথে কীভাবে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়?

  • ধারণা – নদীর জলপ্রবাহ যখন হঠাৎ কোনো উচ্চ স্থান থেকে নীচের দিকে লাফিয়ে পড়ে, তখন তাকে জলপ্রপাত বলে।
  • পদ্ধতি – নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর ওপর-নীচে আড়াআড়িভাবে বা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে, প্রবল স্রোতে ওপরের কঠিন শিলাস্তর ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে নীচের কোমল শিলাস্তর বেরিয়ে পড়ে। কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয় এবং নদীস্রোত খাড়া ঢাল থেকে প্রবল বেগে নীচে পড়ে ও জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে। উদাহরণ – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত সেন্ট লরেন্স নদীর গতিপথে নায়াগ্রা একটি বিখ্যাত জলপ্রপাত।

জলপ্রপাতের সৃষ্টি সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নোত্তর

জলপ্রপাত কী?

জলপ্রপাত হল নদী বা নদীর উপরে কঠিন শিলা বা কোমল শিলা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নদীর প্রবল স্রোতের ফলে কোমল শিলা কঠিন শিলা অপেক্ষা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাঁড়া ঢাল সৃষ্টি করতে পারে। এই সংজ্ঞাটি আমরা “জলপ্রপাত” বলি।

জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণ কী?

জলপ্রপাত সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন কারণে, যেমন নদীর গতিপথে চ্যুতির সৃষ্টি, নদীর গতিপথে লাভাস্তরের অবস্থান, ভূ-আন্দোলনের ফলে উপত্যকার সৃষ্টি, ও কঠিন ও কোমল শিলাস্তর অবস্থান এর মধ্যে অন্যান্য কারণ।

জলপ্রপাতের প্রকার কোনগুলি আছে?

জলপ্রপাত তিনপ্রকার – খরস্রোত বা র‍্যাপিড (Rapid), কাসকেড (Cascade), এবং ক্যাটারাক্ট (Cataract)। খরস্রোত হল জলপ্রপাতের প্রবাহপথের ঢাল কম হলে এবং তা উপর থেকে ধাপে ধাপে নিচে নেমে আসে। কাসকেড হল র‍্যাপিড জলপ্রপাত আরও ছোট হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলপ্রপাত সৃষ্টি করতে পারে। ক্যাটারাক্ট হল উত্তাল জলপ্রপাত যখন প্রকান্ড জলধারারূপে ঢালের উর্দ্ধভাগ থেকে অনেক নীচে ঝাপিয়ে পড়ে।

বিশ্বের কোনও উচ্চতম জলপ্রপাত কোথায় অবস্থিত?

বিশ্বের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত হল আফ্রিকার জাম্বেসী নদীতে সৃষ্ট ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত (উচ্চতা প্রায় ৯৭৯ মিটার)।

ভারতের কোন নদীতে সরাবতী জলপ্রপাত অবস্থিত?

ভারতে সরাবতী নদীতে সৃষ্ট সরাসরি নিচে পড়তে থাকা সরাবতী জলপ্রপাত অবস্থিত, যা গেরসোপ্পা জলপ্রপাত বা যোগ জলপ্রপাত নামেও পরিচিত (উচ্চতা প্রায় ২৫৩ মিটার)।

আরও পড়ুন –  নদী কী কী প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্য করে?

এই মজার জলের ঝাঁপের সৃষ্টি কীভাবে হয়, এটি খুঁজে বের করলাম! নদীর গতিপথে যখন একটি উচ্চ স্থান থেকে নীচে পড়ে, তখন জলপ্রপাত হয়। কঠিন ও কোমল শিলাস্তরের আড়াআড়ি বা অনুভূমিক অবস্থানে, উচ্চ শিলাস্তরটি ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে নীচের কোমল শিলাস্তরের উপর পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় নদী খাড়া ঢাল তৈরি করে এবং জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। আমরা এই মজার জলের ঝাঁপকে বলি জলপ্রপাত!

Share via:

মন্তব্য করুন